গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়েরের সাথে সাথে দু'টো বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে: (১) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধের বিষয়টি নাকি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক মীমাংসিত একটি ইস্যু; (২) এমন বয়স্ক একজন মানুষকে বিনা জামিনে গ্রেফতার করে হেফাজতে রাখা বা বিচার করা ঠিক না। এই দু'টো বিষয়ের ওপরই আলোকপাত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই পোস্টে।

গত ৫ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে আসামী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়। এই অভিযোগপত্র দায়েরের সাথে সাথে শুরু হল আসামীর বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়া, এবং সেইসাথে অবসান ঘটলো ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধসমূহের দায়ে এক অভিযুক্ত শিরোমণির প্রায় চার দশক বিস্তৃত বিচারহীনতার অধ্যায়ের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার শুরু হয়েছে এখন, এবং আইন তার নিজের গতিতে চলবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যেটা লক্ষণীয় তা হল, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের এবং তাঁর গ্রেফতারের পর থেকেই মিডিয়ায়, উইকিপিডিয়ার মতো উম্মুক্ত বিশ্বকোষগুলোতে (যে বিষয়ে পরে একসময় লেখার ইচ্ছে আছে), এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু কিছু প্রচারণা চালানো হচ্ছে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে যে দু'টো বিষয় বারবার সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে গোলাম আযমের অনুসারী এবং নিযুক্ত আইনজীবীরা সেগুলো হল: (ক) গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধের বিষয়টি একটি মীমাংসিত ইস্যু, কারণ ১৯৯৪ সালে তাঁর নাগরিকত্ব মামলার সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে তেমনটিই নাকি বলা হয়েছে; (খ) গোলাম আযমের বয়স এখন ৮৯ বছর, এবং এমন বয়স্ক একজন মানুষকে বিনা জামিনে গ্রেফতার করে হেফাজতে রাখা বা বিচার করা ঠিক না। দুই ভাগে ভাগ করে নেয়া এই পোস্টটিতে এই দু'টো বিষয়ের ওপরই আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। কিন্তু তার আগে পাঠক এক নজরে দেখে নিন গোলাম আযমের মামলার বিষয়ে এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত ঠিক কী কী ঘটেছে: ১৫ জুলাই ২০১০: আসামী গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্য শুরু করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্তের উদ্দেশ্য -- আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ধারা ৩(২)-এর আওতায় উল্লেখিত অপরাধসমূহে অভিযুক্তের সংশ্লিষ্টতা যাচাই। ৩১ অক্টোবর ২০১১: তদন্ত শেষে আসামীর বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট, অন্যান্য তথ্য প্রমাণ, এবং আলামত তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন অফিসে দাখিল করা হয়। ১২ ডিসেম্বর ২০১১: প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইবুনালের কাছে আসামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (formal charge) দাখিল করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর ২০১১: অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অভিযোগসমূহ আমল গ্রহণের (cognizance) জন্য ধার্য এই দিনে ট্রাইবুনাল অভিযোসমূহ আমলে নেয়ার পরিবর্তে তা আবার প্রসিকিউশনের কাছে ফেরত পাঠান। কারণ, দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি সঠিক বিন্যাসে (not in form) উপস্থাপিত হয়নি। ৫…

মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল যে-সব গোষ্ঠী তাদের সবার ক্ষেত্রেই অবস্থানগত মিলটি হল - এরা সবাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে সবসময়ই হয় "গৃহযুদ্ধ" (civil war), না-হয় "অভ্যন্তরীণ সংঘাত" (internal conflict), নয়তো "ইন্দো-পাক যুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করে এসেছে। ঠিক কেন? ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে "সিভিল ওয়ার" বলে চালিয়ে দিতে পারলে ১৯৭১-এর "অপরাধীপক্ষ" আইনগত বা কৌশলগত কোনো সুবিধা পায় কি না, এবং পক্ষান্তরে তা ১৯৭১-এ সংঘটিত অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের অসুবিধা বয়ে আনে কিনা, সে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই লেখা।

ব্রিটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা দি সানডে টাইমস-এর সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটির একটি বিশেষ ক্রোড়পত্রে ফটোগ্রাফার ডন ম্যাককালিন-এর তোলা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন একটি আলোকচিত্র নিয়ে সম্প্রতি ফেসবুক এবং ব্লগসহ বেশ কিছু প্লাটফর্মে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে ((দেখুন: The Sunday Times-এর ক্রোড়পত্র Spectrum-এর ৫০ নম্বর পৃষ্ঠায় ছাপানো আলোকচিত্রটি ও তার ক্যাপশন))। ছবিটিতে কলেরা-আক্রান্ত স্ত্রীকে বহনকারী জনৈক উদ্বাস্তু শরণার্থীকে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির ক্যাপশনে বাসস্থানচ্যুতি বা displacement-এর প্রেক্ষাপট বর্ণনায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে "civil war" বা "গৃহযুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই নিয়েই বিতর্ক। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই "গৃহযুদ্ধ তত্ত্বকে" ব্যবহার করার মতো একটি শ্রেণী রয়েছে যারা দেশে এবং বিদেশে যথেষ্ট সক্রিয়। তবে, এই ক্ষেত্রে দি সানডে টাইমস-এর ক্যাপশনটিকে আমার কাছে সচেতনতার অভাবজনিত একটি ত্রুটি বলে মনে হয়েছে, যা একটি দায়িত্বশীল পত্রিকার (যদিও অনেকেই সানডে টাইমসকে "দায়িত্বশীল"-দের কাতারে ফেলেন না) পক্ষ থেকে হওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু এই ক্যাপশনটিকে কেন্দ্র করে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানা কারণেই প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে যাঁরা "সিভিল ওয়ার" হিসেবে বর্ণনা করেছেন বা এখনো করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন -- সাম্প্রতিকদের মধ্যে শর্মিলা বোস, ইয়াসমিন সাইকিয়া; একটু পুরনোদের মধ্যে হামুদুর রহমান কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (ICJ)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও রয়েছে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তীকালের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়া, যারা অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে "সিভিল ওয়ার" হিসেবেই বর্ণনা করে এসেছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল যে-সব গোষ্ঠী (যেমন: তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী), কিংবা অপরাধীচক্রের সহায়তাকারী বা সহযোগী হিসেবে যারা যুক্ত ছিল (যেমন: জামায়াতে ইসলামী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি), কিংবা যারা এযুগেও তাদের সমর্থক -- তাদের সবার ক্ষেত্রেই একটা বিষয়ে অবস্থানগত একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায় - আর তা হল, এরা সবাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে সবসময়ই হয় "গৃহযুদ্ধ" (civil war), না-হয় "অভ্যন্তরীণ সংঘাত" (internal conflict), নয়তো "ইন্দো-পাক যুদ্ধ" হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করে এসেছে। মনে প্রশ্ন জাগে, কেন? মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে -- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে যদি নিছক একটি "অভ্যন্তরীণ সংঘাত" হিসেবে, কিংবা বাংলাদেশের কথা পুরোপুরি বাদ দিয়ে একে "পাক-ভারত যুদ্ধ" হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তার একটা…

আমাদের দেশে জাতীয় উদ্যোগে চলচ্চিত্র শিক্ষার কোন প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র নেই। কিন্তু চলচ্চিত্র শিক্ষা একেবারেই নেই বলা যাবে না। কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি সাবজেক্ট হিসেবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কোর্স হিসেবে চলচ্চিত্র পড়ানো হয়। আবার চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সাথে যুক্ত সংগঠনগুলোও নিয়মিত/অনিয়মিতভাবে চলচ্চিত্র নির্মানের কোর্স,ওয়ার্কশপ এবং সেমিনার-এর আয়োজন করে থাকে। তা সত্ত্বেও চলচ্চিত্রের শিক্ষার বিষয়টি আমাদের দেশে বরাবরই অনানুষ্ঠানিক এবং আবহেলিত। কোর্স বা অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে চলচ্চিত্র কোন না কোনোভাবে অন্যান্য মাধ্যমগুলোর উপর নির্ভরশীল। যেমন টেলিভিশন মিডিয়া, গনমাধ্যাম ও সাংবাদিকতা কিংবা ভিস্যূয়াল আর্ট। চলচ্চিত্র শিক্ষা এদের উপর ভর করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগুতে থাকে। অথচ, চলচ্চিত্র বিষয়টি নিজেই অনেক বিশাল এবং বিস্তৃত। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র শিক্ষার কেন্দ্রের সিলেবাসগুলো দেখলেই তা বোঝা যায়। ফলে, ভর করে বা নির্ভরশীল হয়ে ফিল্ম শেখা ছাত্রছাত্রীরা শেষপর্যন্ত আর ফিল্ম নিয়ে পড়ে থাকতে পারেন না। প্রচুর লোকজন টিভি-মিডিয়াতে চাকরী করছে , কাজ করছে। কেউ বা নিজের চেষ্টায় আর নিয়ন্ত্রিত সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে কিছু সার্থকতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু খুব কম মানুষই চলচ্চিত্র পরিমণ্ডলে নিজেকে সন্নিবিষ্ট রাখতে পারেন জীবিকা নির্বাহ করার নিমিত্তে । ফলে, সত্যিকার একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তৈরী হতে পারা খুব কঠিন। আমাদের দেশে বলার মতো যে কয়েকজন চলচ্চিত্রকার আছেন এবং যারা নতুন ডিজিটাল চলচ্চিত্রের হাতে খড়ি নিয়ে পূর্নাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মান করে দেশে-বিদেশে প্রদর্শন করছে, তাদের আসলেই ধন্যাবাদ। কারন, এই দেশের মতো চলচ্চিত্রের অবক্ষয় সম্ভবত আর কোথাও হয়নি, যেখানে গত বিশবছর (২০০৭ সালের ১/১১ প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে) ধরে গনতান্ত্রিক দলগুলোই সরকার পরিচালনা করে আসছেন । কোন সামরিক জুন্তা বা দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রেক্ষাপট ছিল না, অথচ স্বাভাবিক চলচ্চিত্রের পরিবেশের সাথে সাথে চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রতি মানুষের উৎসাহ নষ্ট হয়ে গেল । ফলে, চলচ্চিত্র একাডেমিক লোকজন ও শিক্ষকও তৈরী হলো না। বিকল্প ধারা বা মুক্ত পর্যায়ের ওয়ার্কশপগুলিতে চলচ্চিত্রের যে তত্ত্বগত ও কারিগরী শিক্ষা দেয়া হয় তাও অনেকাংশে অপরিকল্পিত। বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদ, ফিল্ম সেন্টার, বা ফিল্ম স্কুলগুলোতে বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে যে চলচ্চিত্র শেখানো ও পড়ানো হয় তা পর্যাপ্ত নয়। এ ক্ষেত্রে তাদের সীমাবদ্ধতা অপরিসীম। যেসব নির্মাতা, কলা - কুশলী ক্লাস যেন তাতে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকপাত থাকে বেশি , মূল শিক্ষার…

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত একজন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবস্থান করছেন। তিনি যে আসবেন, এ সংবাদ তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রে ছাপা হয়নি। অবশ্য তাতে কোনও অসুবিধা হয় নি তাঁর, যাঁদের কাছে তিনি এসেছিলেন এবং যাঁদের জন্যে এসেছিলেন, তাঁরা ঠিকই জানতেন তাঁর আসার খবর। [...]

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত একজন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবস্থান করছেন। তিনি যে আসবেন, এ সংবাদ তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রে ছাপা হয়নি। অবশ্য তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি তাঁর, যাঁদের কাছে তিনি এসেছিলেন এবং যাঁদের জন্যে এসেছিলেন, তাঁরা ঠিকই জানতেন তাঁর আসার খবর। ঢাকায় তিনি এসেছিলেন গত ১২ অগ্রহায়ণ (২৬ নভেম্বর) শনিবার। ১৩ অগ্রহায়ণ (২৭ নভেম্বর) রবিবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করার পর তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি মন্তব্যও করেছেন, বিচারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দফাওয়ারি যেসব প্রস্তাব তাঁদের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল, তার অনেক কিছু গ্রহণ করা হয়নি। তবে যাওয়ার আগে তিনি যা বলে গেছেন তার সোজা মানে হলো, আমরা না কি আন্তর্জাতিক অপরাধের সংজ্ঞা কী তা ঠিকমতো বুঝি না এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে এর সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। তা ছাড়া বিদেশি আইনজীবীদের কেন আসতে দেয়া হচ্ছে না, তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন তিনি। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন র‌্যাপ। কোনো কোনো আইনজীবী মনে করেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকে যদি আন্তর্জাতিক মানসম্মত হতে হয়, তা হলে অবশ্যই স্টিফেন র‌্যাপের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। র‌্যাপকে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কে? মনে করছেন লন্ডনের আইনজীবী টোবি ক্যাডম্যান। মনে করছেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল, টোবি ক্যাডম্যানকে অভিযুক্ত পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর আইনজীবী হিসাবে নিয়ে আসার। শুধু টোবিই নন, জামায়াতে ইসলামীর এই তালিকায় ছিলেন আরও দুজন বিদেশি আইনজীবী স্টিভেন কে কিউসি ও জন ক্যামেহ। কিন্তু বাংলাদেশে আইনজীবীদের পেশাগত অনুমতি নিয়ন্ত্রণ আইনের কারণে তাঁরা কেউই আসতে পারেননি। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির আইনজীবীরা হইচই করছেন, মিডিয়ায় অনেক কথাই বলে বেড়াচ্ছেন; কিন্তু এঁদের কেউই বলছেন না, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আইনজীবীদের পেশাগত অনুমতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে বার কাউন্সিল জাতীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমনকি টোবি ক্যাডম্যানদের দেশেও একই ধরণের বিধিনিষেধ রয়েছে। চাইলেই কোনো আইনজীবী বাংলাদেশ বা অন্য কোনও দেশ থেকে গিয়ে ইংল্যান্ডের আদালতে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়াতে পারেন না। টোবি ক্যাডম্যানরা কি বাংলাদেশের আইন ও আইনগত সংস্কৃতি জানেন? জানেন না, জানলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি চিঠি পাঠিয়ে, একইসঙ্গে সেই চিঠি প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ করে আদালত অবমাননা…

ইদানীংকালে বিভিন্ন মহলে ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের আমদানি নিয়ে বেশ তর্কবিতর্ক শোনা যায়। পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই তেমন ধারণা ছিল না; যেমন, কী ধরনের ছবি আসছে, কারা আনছে, এক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট নীতি মালা কী, ইত্যাদি ইত্যাদি। [...]

ইদানীংকালে বিভিন্ন মহলে ভারতীয় বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের আমদানি নিয়ে বেশ তর্কবিতর্ক শোনা যায়। পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই তেমন ধারণা ছিল না; যেমন, কী ধরনের ছবি আসছে, কারা আনছে, এক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট নীতি মালা কী, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি অনেক স্পষ্ট এবং সর্বসাধারণ পর্যায়ে সাড়া জাগিয়েছে। বিষয়টি অনুধাবন মাত্রই আমার ঈশপ-এর একটি গল্প মনে পড়ে গেল। স্যামোসের লোকসভায় এক অত্যাচরী শোষকের বিচারে শাস্তি প্রসঙ্গে ঈশপ ((ঈশপ -- প্রাচীন গ্রীসের কথাশিল্পী ও মেষপালক )) এই গল্পটি বলেছিলেন: এক শেয়াল নদী পার হতে গিয়ে স্রোতের টানে এক খাদে গিয়ে পড়ল। তা থেকে উঠতে অনেক চেষ্টা করেও সে পেরে উঠল না। সুযোগ পেয়ে এক ঝাঁক রক্তচোষা পোকা এসে তার গায়ে লেগে রইল এবং তার রক্ত পান করতে লাগল। এই সময় এক শজারুকে সে পথ দিয়ে যেতে দেখে শেয়াল তার সাহায্য প্রার্থনা করল। শজারু করুণার স্বরে বললে, ‘আমি তোমায় এই খাদ থেকে তুলতে পারবো না সত্যি, কিন্তু তোমার গা থেকে ঐ পোকাগুলি তুলে নিতে পারি আমি, কেমন?’ শেয়াল বললে, ‘না, না, ভাই, তা করতে যেয়ো না।' ‘কেন, না বলছ কেন?’ ‘না বলছি এই জন্যে যে এগুলি আমার রক্ত এতক্ষণ অনেক খেয়েছে, আর বেশি এরা টানতে পারবে না। এদের সরিয়ে দিলে আর এক নতুন ঝাঁক এসে আমার গায়ে লাগবে, তখন যে রক্তটুকু আমার শরীরে অবশিষ্ট আছে, তাও আর থাকবে না। চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এই বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনায় অংশ নেয়ার সুযোগ ঘটেছে এর মধ্যে। বিভিন্ন আলাপচারিতায় এই বিষয়ে যেটুকু জানা গেল তা হলো: মধ্যবিত্ত তথা আপামর জনসাধারণকে সিনেমাহলমুখী করার জন্য বাংলাদেশের মৃতপ্রায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিযোগিতায় এনে সুস্থ বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করাই হলো ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির উদ্দেশ্য। ব্যাপারটা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। কারণ, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী ও আরো অনেকের এই বিষয়ে বিরোধিতা। প্রথম প্রথম আলোচনায় গিয়ে বক্তাদের বিভিন্ন মতামত শুনতে শুনতে ভাবছিলাম আমি এই বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহণে যোগ্য ব্যক্তি কিনা। বা আরো যারা বুদ্ধিজীবী, বিদগ্ধ শুদ্ধ চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি-কর্মী কিংবা নতুন প্রজন্মের টেলিভিশন ডিজিটাল চলচ্চিত্রের নির্মাতা বা কুশলী -- আমাদের কারোরই কি এই বিষয়ে সুস্পষ্ট…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.