বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্তত একজন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবস্থান করছেন। তিনি যে আসবেন, এ সংবাদ তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রে ছাপা হয়নি। অবশ্য তাতে কোনও অসুবিধা হয়নি তাঁর, যাঁদের কাছে তিনি এসেছিলেন এবং যাঁদের জন্যে এসেছিলেন, তাঁরা ঠিকই জানতেন তাঁর আসার খবর। ঢাকায় তিনি এসেছিলেন গত ১২ অগ্রহায়ণ (২৬ নভেম্বর) শনিবার। ১৩ অগ্রহায়ণ (২৭ নভেম্বর) রবিবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পর্যবেক্ষণ করার পর তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি মন্তব্যও করেছেন, বিচারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দফাওয়ারি যেসব প্রস্তাব তাঁদের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল, তার অনেক কিছু গ্রহণ করা হয়নি। তবে যাওয়ার আগে তিনি যা বলে গেছেন তার সোজা মানে হলো, আমরা না কি আন্তর্জাতিক অপরাধের সংজ্ঞা কী তা ঠিকমতো বুঝি না এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে এর সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। তা ছাড়া বিদেশি আইনজীবীদের কেন আসতে দেয়া হচ্ছে না, তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন তিনি।
এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন র্যাপ। কোনো কোনো আইনজীবী মনে করেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকে যদি আন্তর্জাতিক মানসম্মত হতে হয়, তা হলে অবশ্যই স্টিফেন র্যাপের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
র্যাপকে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কে? মনে করছেন লন্ডনের আইনজীবী টোবি ক্যাডম্যান। মনে করছেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল, টোবি ক্যাডম্যানকে অভিযুক্ত পাঁচ যুদ্ধাপরাধীর আইনজীবী হিসাবে নিয়ে আসার। শুধু টোবিই নন, জামায়াতে ইসলামীর এই তালিকায় ছিলেন আরও দুজন বিদেশি আইনজীবী স্টিভেন কে কিউসি ও জন ক্যামেহ। কিন্তু বাংলাদেশে আইনজীবীদের পেশাগত অনুমতি নিয়ন্ত্রণ আইনের কারণে তাঁরা কেউই আসতে পারেননি।
এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির আইনজীবীরা হইচই করছেন, মিডিয়ায় অনেক কথাই বলে বেড়াচ্ছেন; কিন্তু এঁদের কেউই বলছেন না, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই আইনজীবীদের পেশাগত অনুমতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে বার কাউন্সিল জাতীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমনকি টোবি ক্যাডম্যানদের দেশেও একই ধরণের বিধিনিষেধ রয়েছে। চাইলেই কোনো আইনজীবী বাংলাদেশ বা অন্য কোনও দেশ থেকে গিয়ে ইংল্যান্ডের আদালতে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়াতে পারেন না। টোবি ক্যাডম্যানরা কি বাংলাদেশের আইন ও আইনগত সংস্কৃতি জানেন? জানেন না, জানলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি চিঠি পাঠিয়ে, একইসঙ্গে সেই চিঠি প্রচারমাধ্যমে প্রকাশ করে আদালত অবমাননা করতে পারতেন না।
বাংলাদেশের সব আইনজীবীই এটি বোঝেন, জানেন; এমনকি অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাকও বিচারককে সরাসরি এমন চিঠি পাঠানোর বিষয়টির সঙ্গে আদালতে দ্বিমত পোষণ করতে বাধ্য হয়েছেন। তা ছাড়া ভিজিটিং ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আইনচর্চা করতে আসার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিলেন টোবি — এটাও জানেন র্যাপ-রাজ্জাকরা। জানার পরও তাঁরা ভেজা বেড়ালের মতোপ্রশ্ন করে বেড়াচ্ছেন, টোবিকে কেন বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি!
এমন অনেক কিছু জানার পরও শুধু র্যাপ-রাজ্জাকই নন, আরও বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা আইনজীবীও বাংলাদেশের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন নীতিনির্ধারণমূলক প্রতিষ্ঠানে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিলে তাঁদের জাতকুলমান সব কিছুই যায় — অতএব তাঁরা কথাগুলো বলছেন অন্য ভাষায়। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে যেমন এ বিচার শুরুর প্রথম দিকে ইনিয়ে-বিনিয়ে ভালোমানুষী দেখিয়ে বলা হচ্ছিল, আমরাও চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হোক, ঠিক তেমনি তাঁরাও বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হোক, তবে…
এই ‘তবে’র মানে আসলে তবে রে···। তাঁরা ইনিয়েবিনিয়ে অভিযুক্তদের অধিকার সংরক্ষণের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আইনের এমন সব ভাঙা বেড়া বানাতে চাইছেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় এমন সব দুর্বলতার ফাঁক তৈরি করতে চাইছেন, যাতে সেইসব ভাঙা বেড়া ও ফাঁকফোকর দিয়ে বীরদর্পে বেরিয়ে আসতে পারেন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীরা। এদের কেউ প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, কেউ যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন — অতএব তাঁদের বিভিন্ন যুক্তিতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। ফলে, বিচারকাজ পিছিয়ে পড়ছে। বিভ্রান্তির জাল সরিয়ে বিচারকাজ এগিয়ে নিতে দেরি হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের। সেই সুযোগে নতুন বিভ্রান্তির জাল বিছানোর সুযোগ পাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের চক্র।
গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এই প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারকাজ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আর এই বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করতে হঠাৎ করেই গত ২৭ অক্টোবর অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাকের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হক নাসিমের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করা হয়। আদালত থেকে ওয়াক আউটের মত নাটকীয় ঘটনারও জন্ম দেন সাঈদীর আইনজীবীরা।
এই অপতৎপরতার অংশ হিসাবেই এখন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ডিফেন্স টিমের প্রধান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রাজ্জাককে বলতে শোনা যাচ্ছে, পাঁচটি মহাদেশ থেকে তিনজন করে মোট ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনালটি গঠন করা হোক। শুনতে যত ভালোই লাগুক, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার নিয়ে যে ভয়ানক আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে, এ প্রস্তাব তারই অংশবিশেষ। তা ছাড়া, মওদুদ আহমদ, আবদুর রাজ্জাকরা কথায় কথায় রোম সংবিধির কথা বলেন; তারা কি জানেন না যে, রোম সংবিধির মুখবন্ধেই বলা হয়েছে, এ ধরণের অপরাধের বিচার করার প্রথম দায় অপরাধ যে দেশে সংঘটিত হয়েছে সেই দেশের? রাষ্ট্র যখন বিচার করতে ব্যর্থ, অসম্মত কিংবা অপারগ হবে, কেবল সে ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে? এবং এ ধরণের হস্তক্ষেপও আন্তর্জাতিক আইন আদালতের পক্ষে কেবল রোম সংবিধি অনুমোদনের পরবর্তী সময়ের অপরাধ বা অপরাধসমূহের জন্যে প্রযোজ্য হবে, অতীতের কোনও অপরাধের জন্যে নয়। রোম সংবিধির এই মুখবন্ধ থেকে সুস্পষ্ট, বাংলাদেশে আবদুর রাজ্জাকদের প্রস্তাবিত ট্রাইব্যুনাল গঠনের কোনও সুযোগ নেই।
কিন্তু চক্রান্ত থেমে নেই। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের কাছে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার আলোচনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের উদ্যোগের চলমান উদ্যোগের বিরোধিতা, বিএনপির রোড মার্চের জনসভা ও পথসভাগুলোতে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্যে জনমত গঠনের অপচেষ্টা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত দুটি ইংরেজি পত্রিকায় সম্প্রতি লেখা জন ক্যামেহের একটি নিবন্ধ প্রকাশ, পাকিস্তানের ডেইলি ডন পত্রিকার উদ্যোগে সম্প্রতি উর্দুভাষী বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর অত্যাচারের বিচার দাবি করে সম্পাদকীয় লেখা, প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক ইকনোমিস্ট-এর চলতি সপ্তাহের নিবন্ধ এবং স্টিফেন র্যাপের এই অনালোচিত ভ্রমণও তাই তাৎপর্যপূর্ণ।
র্যাপ বাংলাদেশে প্রথম এসেছিলেন বাংলাদেশ সরকারেরই আমন্ত্রণে এ বছরের ১০ জানুয়ারিতে। তারপর ২১ মার্চ তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এবং আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছে এক চিঠি লিখে আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের ট্রাইব্যুনাল আইসিটি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশ করেছিলেন।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে র্যাপের ওই উদ্যোগ ও সুপারিশ ছিল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কেননা র্যাপ ২১ মার্চের ওই চিঠিতে নিজেই স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) একটি ‘ডমেস্টিক কোর্ট’। তার মানে এটির কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব বিষয়। র্যাপের নিজস্ব ওই স্বীকৃতির পরও এ ধরণের সুপারিশ করার মানে দাঁড়ায়, দ্য ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপেস্নাম্যাটিক রিলেশনসের ৪১(১) অনুচ্ছেদের সরাসরি লংঘন। কিন্তু কথায় বলে, ‘গরীবের বউ, সকলের ভাবী’! যুদ্ধাপরাধী চক্র এখানে রাজনৈতিকভাবে এত সংঘবদ্ধ যে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের উদ্যোগকে তারা নসাৎ করে দেয়ার রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। স্টিফেন র্যাপদের পক্ষেও তাই সম্ভব হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে নানা উপদেশ দেয়া।
ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকরা বার বার বলার চেষ্টা করছেন, সিয়েরা লিওন, রুয়ান্ডা, প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়া কিংবা হেগে যেভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গড়ে উঠেছিল, বাংলাদেশেও ঠিক একই প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘকে সম্পৃক্ত করে বিচার কাজ চালাতে হবে! কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কাছে তাঁরা এটা আর বলছেন না যে, আইসিটিওয়াই, আইসিটিআর, আইসিসির মত বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালগুলো গড়ে উঠেছিল একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে আইসিটি গঠনের প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা — এটি সম্পূর্ণই বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধের ও বাংলাদেশের ভুক্তভোগীদের জন্যে একটি বিচারপ্রক্রিয়া। স্টিফেন র্যাপ ও আবদুর রাজ্জাকরা কি তা হলে বলতে চান, এখনও বাংলাদেশের মধ্যে পাকিস্তান টিকে আছে? তাঁরা তাই চান, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে অস্তিত্বমান পাকিস্তান এই দুই রাষ্ট্রের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি আদালত গঠন করে রুয়ান্ডা ও সিয়েরা লিওনের কায়দায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে? আরও একটি ব্যাপার, স্টিফেন র্যাপ বলছেন (এবং আবদুর রাজ্জাকরাও বটে!), আইসিটি একটি ‘ডোমেস্টিক কোর্ট’ হলেও একে অন্যান্য দেশের জন্যে একটি মডেল হয়ে উঠতে হবে — কিন্তু যুক্তি দিয়ে বলতে পারছেন না, আইসিটির ম্যানডেট এবং প্রায়োরিটিই যেখানে সীমিত এবং ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের (১৯৭১-এর অপরাধসমূহের বিচার ও ভুক্তভোগীদের ন্যায় বিচারপ্রদান), সেখানে কোন উদ্দেশ্যে অন্য দেশের জন্য একটি মডেল হয়ে ওঠার দায়ভার পূরণ করতে হবে! আমাদের দেশে কি শান্তি বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘের শান্তি মিশনকে ডেকে আনতে হয়েছে এবং তাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অপরাধের বিচার করতে হবে? এ রকম দাবি করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা প্রকারান্তরে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বেরই বিরোধিতা করছেন। এবং তাঁরা এখন যেরকম অপতৎপরতা শুরু করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জাতিসংঘের শান্তি মিশন নিয়ে আসাই তাদের উদ্দেশ্য, যাতে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত পথে এ বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া যায়।
স্টিফেন র্যাপ, স্টিভেন কে কিউসি, টোবি ক্যাডম্যান, জন ক্যামেহ ও আবদুর রাজ্জাকরা বার বার রোম সংবিধির কথা বলে থাকেন। কিন্তু তাঁরা কি রোম সংবিধিতে এমন কোনও একটি ধারাও দেখাতে পারবেন, যেখানে রাষ্ট্রপক্ষ হিসাবে বাংলাদেশের ওপর দেশটির একেবারেই অভ্যন্তরীণ বিচারকার্যের ক্ষেত্রে আইসিসির প্রোভিশন ও প্রোসিডিউরসমূহ হুবহু নকল করে জুড়ে দেয়ার শর্ত চাপানো হয়েছে? রোম সংবিধির ৬, ৭(১) অনুচ্ছেদকে ব্যাখ্যা করে আইনবিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রোম সংবিধিভুক্ত অপরাধসমূহের সংজ্ঞাসমূহ কেবলমাত্র রোম সংবিধির উদ্দেশ্যাবলী ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না। একইভাবে রোম সংবিধির অনুচ্ছেদ ১২ এবং অনুচ্ছেদ ১০ ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, এটি ন্যুরেমবার্গ কোর্ট অথবা আইসিটিওয়াই এবং আইসিটিআর-এর মত বিভিন্ন ট্রাইবুনালের গভর্নিং সংবিধিসমূহের লিগাল প্রিন্সিপালসমূহকে অকার্যকর করে না, উল্টে ফেলে না। তার মানে, রোম সংবিধি আইসিটিকেও (যে আইন দিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে) অস্বীকার করে না, ছুড়ে ফেলে না।
র্যাপ-রাজ্জাকরা আইসিটিওয়াই এবং আইসিটিআর-এর দোহাই দিচ্ছেন। তাঁরা হয়তো ভুলে গেছেন, খুব বেশি দিন আগে নয়, এই ২০০৯ সালের ডিসেম্বরেই আইসিসির চেয়ারম্যান জাস্টিস স্যাং-হাইয়ুন সং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আওতায় চিহ্নিত অপরাধসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার সামর্থ্যের ওপর তার পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। র্যাপ-রাজ্জাকরা বলছেন না, জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থা ও আইনের ওপর এসব ট্রাইব্যুনালের সংবিধিসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট রুলস অব প্রসিডিউর অ্যান্ড এভিডেন্সের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার দায়বদ্ধতা ছাড়া অন্য কোনো প্রভাব নেই। সত্যি কথা বলতে গেলে, র্যাপ-রাজ্জাকরা সারাদেশে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের নাম উচ্চারণ করে শুধুমাত্র ধ্রুম্রজালই সৃষ্টি করছেন, বিচারের পথে নানা বাধা তৈরি করছেন। র্যাপ-রাজ্জাকরা বুঝে গেছেন, সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা গেলেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের মানকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না; আইসিটি আন্তর্জাতিক অপরাধের আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা মেনে নিয়েই অপরাধসমূহ সনাক্ত করেছে। কিন্তু এটি যেহেতু ডোমেস্টিক কোর্ট সেহেতু দেশের সংবিধান অনুমোদিত আইন অনুযায়ীই সে বিচারকাজ পরিচালনা করবে। আর এ কারণেই আবদুর রাজ্জাকদের মুখ থেকে এখন নতুন দাবি — বিদেশি আইনজীবীদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করার দাবি শোনা যাচ্ছে।
২১ মার্চে স্টিফেন র্যাপ তার চিঠিতে যেসব সুপারিশ করেছিলেন, সেসব অযৌক্তিক দাবিদাওয়ার একটি যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম ‘স্টিফেন র্যাপ : অফ মিসকনসেপশানস, আনরিয়ালিস্টিক এপেকটেশান্স অ্যান্ড ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ শিরোনামে । আন্তর্জাতিক আইনজীবী মহলে র্যাপ-রাজ্জাকদের মুখ এরপর বলা যায় বন্ধ হয়ে গেছে। এবং তারপর থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকচক্র আরও মরিয়া হয়ে বাংলাদেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন, অনাবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে গুজব ছড়াচ্ছেন এবং অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে আইসিটির প্রকৃত কাজকে ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুল] সবসময়েই চায় বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে মৌলবাদী রাজনীতির ধারা টিকিয়ে রাখতে, যাতে প্রয়োজনে এরকম দেশগুলোকে আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তান বানানো যায়। বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির ধারা গড়ে তুলেছে যুদ্ধাপরাধীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাই মুখে যা-ই বলুক না কেন, এই মৌলবাদী রাজনীতির ধারাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার পক্ষপাতী। নিজেদের বাঁচাতে যুদ্ধাপরাধী মৌলবাদীরাও যে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান অথবা পাকিস্তান বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পায়ের নিচে নৈবেদ্য হিসাবে তুলে দিতে রাজি আছে, তা এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। র্যাপের ঘন ঘন আসা-যাওয়ার মধ্যে দিয়ে বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটছে।
তা হলে ন্যায় বিচার পাওয়ার যে আবেগ নিয়ে জনগণ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে উদ্দীপ্ত হয়েছিল, তা কি মিথ্যা হয়ে যাবে? যুদ্ধাপরাধী বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগ জনমনে যে আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করেছিল, তা কি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে? সরকারের কি উচিত হবে র্যাপ মিশনে সাড়া দিয়ে প্রকারান্তরে শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়ার?
রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটলে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের আর কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। বিএনপি মুখে যাই বলুক না কেন, খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিভিন্ন নেতারা তাঁদের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা আমাদের সকাল-বিকেল নানাভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমরা চাই, আইসিটি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের কোনো কথায় কান না দিয়ে স্বাধীনভাবে দ্রুত এগিয়ে যাক। র্যাপ-রাজ্জাকদের সুপারিশ নিয়ে দেনদরবার না করে বিচার প্রক্রিয়ায় আইসিটিকে সর্বতোভাবে সাহায্য করাই হবে সরকারের এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি এবং প্রধান কাজ।
১৪ অগ্রহায়ণ ১৪১৮
Have your say
You must be logged in to post a comment.
২২ comments
মাসুদ করিম - ১ ডিসেম্বর ২০১১ (২:২৪ অপরাহ্ণ)
‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ মানে তো ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’-এর বিচার করার ট্রাইবুনাল, ‘অপরাধ’-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল নয়। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’-এর সমস্ত দিক বিবেচনায় রেখে এই ট্রাইবুনাল যদি দেশের ভেতরের এই ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’-এ অভিযুক্তদের বিচার করতে পারে তাহলে তো এই ট্রাইবুনালকে সবারই সহযোগিতা করা উচিত। ‘আন্তর্জাতিক’ শুনেই একেবারে র্যাপ, জাতিসংঘ, বিদেশি বিচারক নিয়ে ব্যস্ত হওয়া মানেই কিছু মানুষের উদ্দেশ্যমূলক আচরণ জনগণের মধ্যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দেয়া। এখানেই বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ — এইসব উদ্দেশ্যমূলক আন্তর্জাতিক বাধা পেরিয়ে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’কে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করাই হবে এখন সরকারের মহত্তম কাজ।
রায়হান রশিদ - ১ ডিসেম্বর ২০১১ (৪:৩২ অপরাহ্ণ)
মাসুদ ভাইয়ের চমৎকার মন্তব্যের সূত্র ধরে লিখছি –
বাংলদেশের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ (ICT) কথাটার অর্থ হল: “১৯৭১ এ যে সব ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ সংঘটিত হয়েছে সেগুলো বিচারের জন্য দেশীয় আইনে প্রতিষ্ঠিত পুরোপুরি আভ্যন্তরীন দেশীয় আদালত।”
বাংলাদেশের “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল” এর প্রকৃতি সংক্রান্ত নীচের ৭টি বিবরণের কোনোটিই প্রযোজ্য হবে না:
১ – আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় গঠিত আন্তর্জাতিক আদালত;
২ – আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক আদালত;
৩ – আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের জন্য দেশীয় আদালত;
৪ – আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক আদালত;
৫ – সাধারণ অপরাধ বিচারের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক আদালত;
৬ – সাধারণ অপরাধ বিচারের নিমিত্তে দেশীয় আদালত;
৭ – আন্তর্জাতিক কমিউনিটির হস্তক্ষেপে, সহায়তায়, সমঝোতায় তৈরী আদালত।
বাংলাদেশের ICT-র প্রকৃতি নিয়ে এই পার্থক্যকে পূঁজি করেই আসামী পক্ষ আর তাদের দোসররা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে দেশে বিদেশে, আর সে বিভ্রান্তির জালে বুঝে না বুঝে অনেকেই ধরা দিচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের কথা শুনে মনে হয় না এমনকি তারাও আমাদের “আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত” এর প্রকৃতি আসলে কি সেটা বোঝেন।
রায়হান রশিদ - ১ ডিসেম্বর ২০১১ (৪:২০ অপরাহ্ণ)
অনেক ধন্যবাদ ইমতিয়ার ভাই এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখাটার জন্য। এই লেখাটাকে যতভাবে সম্ভব ছড়িয়ে দেয়া দরকার। শুধু একটা ছোট বিষয়: র্যাপের এই সফর এবং তার বক্তব্য কিন্তু খুব কম মিডিয়া কাভারেজও পায়নি, এমনকি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও। আইসিএসএফ এর মিডিয়া-আর্কাইভে সেগুলোর (প্রায় ৩০ এর বেশী মিডিয়া আইটেম) কিছু কিছু ইতোমধ্যেই আর্কাইভ করা হয়েছে, বাকিগুলোও খুব শিগগিরই আর্কাইভ করে ফেলা হবে আশা করা যায়।
Ashis Majumder - ১ ডিসেম্বর ২০১১ (৯:৫৫ অপরাহ্ণ)
ICT is capable enough to handle the trial. As a general people i do believe on the International Crime Tribunal(ICT) and the Judicial System.
ডাঃ আতিকুল হক - ১ ডিসেম্বর ২০১১ (১০:০৫ অপরাহ্ণ)
অসংখ্য ধন্যবাদ ইমতিয়ার আপনাকে। দারুন ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর আর কোন বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ কুচক্রি মহলের হাতে নেই।
আপনার কাছে এবং মুক্তাঙ্গন এডমিনের কাছে একটা আবেদন, এই লেখাটি যাতে আরও বেশী মানুষ পড়তে পারে সেই লক্ষ্যে সুত্র এবং লেখকের নাম উল্ল্যেখ করে অন্য ব্লগে প্রকাশের অনুমতি পেতে পারি কি?
মুক্তাঙ্গন - ৫ ডিসেম্বর ২০১১ (৭:২৩ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ ডাঃ আতিকুল হক আপনার প্রস্তাবের জন্য। নাগরিক ব্লগে লেখাটার পূনঃপ্রকাশ বিষয়ে লেখক এবং মডারেশন টিমের সদস্যবৃন্দ সকলেই একমত, কারণ এই খবরগুলো এখন যতো বেশী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় ততো ভাল। মুক্তাঙ্গন এর পক্ষ থেকে কেবল অনুরোধ থাকবে মূল সূত্র (লিন্কসহ) এবং মূল লেখকের নাম সম্ভব হলে পূনঃপ্রকাশিত লেখার শুরুতেই উল্লেখের।
এই উদ্যোগের জন্য আবারও ধন্যবাদ।
manirul Islam - ২ ডিসেম্বর ২০১১ (৩:২১ পূর্বাহ্ণ)
স্টিফেন রাপ অথবা তাবৎ মার্কিন শাসনযন্ত্র তাদের ৭১এর মিত্রদের সমর্থন করবে, সাকার আদালতে এসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বসে থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ ইত্যাদি প্রশ্নে মার্কিন শাসনযন্ত্র এবং জনগণের ন্যক্কারজনক ভণ্ডামি পৃথিবীর সকল প্রান্তের ন্যুনতম বিবেক ও জ্ঞানসম্পন্ন মানুষেরই জানা আছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ থেকে অদ্যাবধি প্রতিটি যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে যুদ্ধাপরাধী। বর্তমানে মার্কিনীদের হাতে বন্দী ১৫ বছরের কিশোর ওমর সহ যুদ্ধাপরাধীদের গুয়ান্তানামোতে বিনা বিচারে প্রায় এক দশক অবর্ণনীয় অমানবিক পরিবেশে পশুর মত বেঁধে রেখেছে কোন আইনের বলে! সেই দেশের একজন যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ দূত যখন বাংলাদেশে এসে তাদের হুকুমের চাকর ৭১এর যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করে তখন তার মুখে একটিও পাদুকা নিক্ষিপ্ত হয়নি ভেবে আমি হতাশ হয়ে যাই। ধন্যবাদ ইমতিয়ার শামীম।
মোহাম্মদ মুনিম - ৪ ডিসেম্বর ২০১১ (২:৩২ পূর্বাহ্ণ)
র্যাপ সাহেবের জানুয়ারির প্রেস কনফারেন্সের transcript পাওয়া গেল। শুরুতে বেশ ভাল ভাল কথা বলেছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকারের একাত্তরের ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন। কিন্তু ICTর যেসব সংস্কার তিনি চাইছেন সেগুলো বিচারকার্যকে জটিল এবং দীর্ঘায়িত করে তুলবে তাতে সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিনের ওকালতি এবং রাজনীতির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন র্যাপ সাহেব আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার যে কতটা জটিল হতে পারে তা ভালভাবেই জানেন। টাইম পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন কেন যুক্তরাষ্ট্র নিজে ICC কে ratify করেনি (রাজনৈতিক কারণে মার্কিন নাগরিক এবং সৈনিকদের হয়রানী করা হতে পারে এই কারণে)। তিনি আরও বলেছেন “..international court has jurisdiction that is secondary to the national court..”. যেসব দেশের নিজের মুরোদে বিচার করার সামর্থ্য নেই সেসব দেশের ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার হবে। সিয়েরা লিওনের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি দুঃখ করে বলছেন, জঘন্য চরিত্রের যুদ্ধাপরাধীরা যেখানে আরামদায়ক আন্তর্জাতিক আদালত কক্ষে নামী উকিলদের সহযোগিতায় বিচারের সুযোগ পাচ্ছে, সাধারণ আসামীরা সেখানে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে পচে মরছে। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের জন্য ব্যয়বহুল আন্তর্জাতিক আদালতের বদলে চলনসই জাতীয় আদালতই সুপারিশ করেছেন।
সবই তো ভাল কথা, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে উল্টো হিসাব কেন, বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আছে, নিজের মুরোদেই বিচার করছে, অন্য কোন দেশের নাগরিক নয়, নিজের দেশের নাগরিকদেরই বিচার করছে। র্যাপ সাহেব বলছেন জামাতের সদস্য হলেই যুদ্ধাপরাধী হবে এমন কোন কথা নেই। এমন কথা কেউ বলছে কি? যাদের বিচার হচ্ছে এদের সবার নামেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তারপর এই অন্তর্বর্তীকালীন আপিলের সুযোগ, এই ঢংয়ের মানে কি? মানে আলতু ফালতু ছুতো ধরে বিচারকে স্থবির করে ফেলা। কোনভাবে আর বছর দুয়েক টানতে পারলেই হল, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গেলেই তো মুক্তি।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীরা চল্লিশ বছর ধরে বিচার এড়িয়ে গেছে, রাজনীতি করেছে, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে প্রতিপক্ষের কবজি আর রগ কেটেছে। ব্রিটেন আর আমেরিকা গিয়ে কাড়ি কাড়ি ইসলামী চাঁদা এনে আরও রগ কাটার ব্যবস্থা হয়েছে। লর্ড এভবারী আর স্টিফেন র্যাপরা আর কিছু না করুন, নিজেদের দেশে এই যুদ্ধাপরাধীদের ভিসা নাকচের ব্যবস্থা করতে পারতেন, বাংলাদেশের সরকারকে এদের বিচার করার জন্য চাপ দিতে পারতেন। এঁরা কিছুই করেননি, এখন চল্লিশ বছর পরে এদের বিচার হচ্ছে, এই বিচারকে তাঁরা যতটা পারা যায় discredit করছেন, বিচার প্রক্রিয়ার মানকে উঁচু, আরও উঁচু, একেবারে আকাশের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে, যাতে আগামী হাজার বছরেও এই বিচার নিয়ে কেউ প্রশ্ন না তুলে। যেন বাংলাদেশ বিচার প্রক্রিয়ার কোন অলিম্পিকে যোগ দিয়েছে, তাকে স্বর্ণপদক পেতেই হবে।
বিন লাদেনের ‘বিচারের’ রায় হয়েছে তিন সেকেন্ডে, কপালে ছোট্ট একটা ফুটো আর সমুদ্র সমাধি। বিন লাদেনের চেয়ে হাজার গুন বেশি অপরাধী নিজামী আর সাকার বিচার হবে কিনা জানি না, সর্বোচ্চ শাস্তি হলেও সেটা হবে ফাঁসী। সেই ফাঁসীর আগে নফল নামাজের সুযোগ থাকবে, তওবা থাকবে, ফাঁসীর পরে নিজের গ্রামে বাঁধানো কবর। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ যেমন বলতেন “Whether we bring our enemies to justice or bring justice to our enemies, justice will be done” সেই সুরেই র্যাপ সাহেবকে বলা যায় “Justice, fair or not so fair, justice will be done”.
মাহমুদ - ৫ ডিসেম্বর ২০১১ (১১:২১ পূর্বাহ্ণ)
ইমতিয়ার শামীম,
আমি পাক্ষিক একপক্ষ থেকে মাহমুদ বলছিলাম ! আমাদের পত্রিকার আপনার এই লেখাটি আমরা ছাপতে চাই ! আপনার অনুমতির অপেক্ষায় রইলাম….
আমার মেইল আইডিতে কনফর্মেশন জানাবানে প্লীজ-
ag_amo@yahoo.com
ইমতিয়ার - ৫ ডিসেম্বর ২০১১ (১:৩২ অপরাহ্ণ)
আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক মত রাখার জন্যে, আপনাদের অনুভূতি জানানোর জন্যে। আমরা এই মুহূর্তে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে এবং এর পরপরই জামায়াতে ইসলামীও একই দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে।
# মাসুদ করিম
আন্তর্জাতিক অপরাধের এই ব্যাপারটা র্যাপ থেকে শুরু করে মওদুদ-রাজ্জাক সকলেই না বোঝার ভান করছেন। দেশিয় আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার হয় না, এরকম একটি ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার কাজে তারা অনেকটাই সফল হয়েছেন।
# রায়হান রশিদ
অসংখ্য ধন্যবাদ, আইনগত দিকগুলি স্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্যে। গরিবকে সবাই হাইকোর্ট দেখায়, কেননা গরিবের আইনকানুন ভালো করে জানা নেই, এমনকি শিক্ষিত মানুষের পক্ষেও অনেক সময় আর্গুমেন্টগুলি বোঝা সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধী বিচারের ইস্যুকে যারা (বিএনপি-জামাত) রাজনৈতিক করে তুলছেন, তারা এই দুর্বলতাটুকুই ব্যবহার করছেন, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে আপনারা যত এগিয়ে আসবেন, বিভ্রান্তি ততই কেটে যাবে। মানুষ জানবে, আইন তাদের পক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে।
# আশিষ মজুমদার
অসংখ্য ধন্যবাদ, আইসিটির পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্যে।
# আতিকুল হক
এ ব্যাপারে মুক্তাঙ্গন ব্লগের অ্যাডমিনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে আপনাকে। এ লেখা আপনাদের কাজে লাগলে যারপরনাই ভালো লাগবে। তবে দ্রুত লেখার কারণে ছোটখাটো কিছু ভুল রয়ে গেছে, দেখছি। ২/১ দিনের মধ্যে ভুলগুলি শুধরে দেয়ার আশা রাখি।
# মোহাম্মদ মুনিম
আপনার লিংকগুলি এত কাজের! অনেকে আলসেমি করে লিংকগুলি যদি ফলো না করে, এই আশঙ্কায় আমি র্যাপের বক্তব্যের একটি অংশ তুলে দিতে চাই
এরকম বক্তব্য দেয়ার পর এবং অবস্থান নেয়ার পর র্যাপ যদি আমাদের এইসব আবোলতাবোল বাণী শোনায়, তা হলে তা কি মামাবাড়ির আবদারের মতোই শোনায় না?
# মাহমুদ
লেখাটি আসলে সাপ্তাহিক ২০০০-এ ছাপা হয়েছে। এবং পরিস্থিতিও আরও একটু বদলেছে, দেখতেই পাচ্ছেন। এ নিয়ে পরিবর্ধিত লেখা ছাপাই বাঞ্ছনীয়। এরপরও যদি আপনাদের ছাপা আগ্রহ থাকে, আমার পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি নেই।
সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।
আমিন আহম্মদ - ৯ ডিসেম্বর ২০১১ (৬:৩৮ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ইমতিয়ার শামীম। আপনার লেখা পড়ছি আর ভাবছি আমরা বাঙালী জাতী আজও কত বোকা ও অন্ধকারে বাস করি।
গত কয়েক মাস যাবত জামাত-রাজাকার জোট মানে বিএনপি-জামাত জোট, জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া, বিদেশী মিশন (এর মধ্যে আমেরিকা যারা আমাদের মুক্তিযু্দ্ধের প্রধান বিরোধীতাকারী, সৌদি সরকার সহ কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী, চীন সহ আরোও অনকে দেশ ও ব্যাক্তি যারা কোন না কোন ভাবে আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল), দেশী কতগুলো গোলাম আইনজীবি (যেমন: মওদুদ, রাজ্কাক, মাহবুক ও তাদের সকল চামচার দল) যেভাবে অপ-প্রচার চালিয়ে চলছে কোন প্রতিবাদ না করে খালেদার জনসভায় হাত-তালি ও শ্লোগান দিচ্ছে তাতে জাতী হিসাবে লজ্জা ও আফসোস ছাড়া আর কিইবা থাকতে পারে ?
৭১ এর মত খালেদা-নিজামী গং দের ষড়যন্ত্র না রুখে আমরা একের এক নতুন ইস্যুতে ওদের সমর্থন দিচ্ছি। আর এই সমর্থনে যুক্ত হয়েছে কতগুলো অন-পেমেন্ট বুদ্ধিব্যবসায়ীরা। যারা গত ঢাকা সিটির প্রসাশন বিভক্তির হরতালে সমর্থন দিয়েছিল। ওদের সকলের চিনে রাখা উচিত।
আমাদের দেশে এখন যতগুলো আন্দোলনের ইস্যুই তৈরী হচ্ছেনা কেন, সব গুলোর মূলে দুটি কারন: এক. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ও তাদের মুক্ত করা এবং দুই. তারেক জিয়া ও জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক পুনর্বাসন।
লেখককে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবনা। তাকে আমার স্যালুট। আমি একটি অনুরোধ করব, আমি এ লেখাটি কি অন্য ব্লগে শেয়ার কতে পারি ? যদি পারি তার হলে অনুমতি দিন। ধন্যবাদ । সকলের জন্য শুভ কামনা।
ইমতিয়ার - ১১ ডিসেম্বর ২০১১ (৫:৫১ অপরাহ্ণ)
# আমিন আহম্মদ
আপনাকে লেখা পড়ার জন্য এবং আপনার অনুভূতি জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ লেখাটি শেয়ার করতে চাওয়ার জন্য।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, লেখাটি অনুমতির জন্য অপেক্ষা না করেই দুটি সাইটে শেয়ার করেছেন। শুধু তাই নয়, লেখাটিতে আপনি নিজের নাম ব্যবহার করেছেন।
এ ঘটনায় আমি বিস্মিত। লেখাটির বিষয়বস্তুর সঙ্গে আপনি একমত হওয়ায় আমি যারপরনাই আনন্দিত। কিন্তু তার মানে এই নয়, আপনি লেখাটি নিজের নামে চালিয়ে দেবেন।
আমিন আহম্মদ - ১২ ডিসেম্বর ২০১১ (১০:৪১ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ ভাই। আমি আসলে বিস্মিত আমাকে যেভাবে আপনারা দোষী সাব্যস্ত করলেন। আমি এ জন্য খুবই দুঃখিত।
লেখাটা আমার ভালো লেগেছিল। আর অত্যন্ত সুন্দর ও যুক্তিনর্ভর লেখা। আর লেখার একটি অক্ষরও আমি পরিবর্তন করিনাই। শুধু আমার অনুভুতির প্রকাশটিকে শিরোনামে পরিবর্তন করে প্রকাশ করেছি। এটা আমার অপরাধ হয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আর হ্যা আমি অনুমতি চয়েছি। কোন উত্তর পাইনি। যাইহোক। আমি উপড়ে দেখেছি একজন মন্তব্য কারীকে বলেছিলেন যত পারে তারা যেন লেখাটা শেয়ার করেন। তাই আমি ঐ উৎসাহ হতে আপনার জ্ঞাতার্থে অনুমতির জন্য একটা মন্তব্য করেছিলাম। তবে এটা নিয়ে এভাবে আমাকে মূল্যায়ন হবে তা আমি সত্যিই বিশ্ময় প্রকাশ করছি।
আমি অতিশয় দুঃখ প্রকাশ করছি। এবং আমার সকল পোষ্ট আমি মুছে ফেলব কথা দিলাম। ভালো থাকুন।
সৈকত আচার্য - ১২ ডিসেম্বর ২০১১ (৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ)
@আমিন আহমদঃ আপনার বিষয়টা কি আসলে?? লেখাটা ছাপানোর অনুমতি চেয়ে গেলেন দেখলাম, কিন্ত ঠিক তার আধঘন্টা পরেই আপনার ব্লগে এই লেখাটা দিয়েছেন দেখতে পেলাম।। কিন্ত শুরুতে তো লেখক হিসেবে ইমতিয়ার শামীমের নামই নেই !! শুধু তাই-ই নয়, বরং নীচে এক জায়গায় দেখলাম যে, লিখাটা আপনার নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন!! এই ব্লগের একজন পুরোনো পাঠক হিসেবে এই ধরনের ন্যাক্কারজনক অপচেষ্টা এবং ভন্ডামির নিন্দা জানাই। চরম ধিক্কার জানাই আপনার এই অসাধু আচরনকে!! আমি ভুল হলে শুধরে দিবেন। মাপ চেয়ে নেবো। যদি আমি ঠিক হই, এই ব্লগে এবং আপনার ব্লগে গিয়ে পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন।
মুক্তাঙ্গন মডারেশন টিমকে এই জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাই।
আমিন আহম্মদ - ১২ ডিসেম্বর ২০১১ (১১:০৬ পূর্বাহ্ণ)
@ সৈকত আচার্য আপনি যে লিংক দিয়েছেন সেটা আমার ব্লগ নয়। ওখানে লেখাটা আমি শেয়ার করেছি। তার মানে আমার ব্লগ হয়ে যায়নাই।
আমি লেখকের অনুমতি ফরমাল চেয়েছি। কারন আপনি এ লেখার পুরো মন্তব্য পড়লে দেখবেন :
ডাঃ আতিকুল হক লিখেছেন:
১ ডিসেম্বর ২০১১, বৃহস্পতিবার সময়: ১০:০৫ অপরাহ্ণ
[মন্তব্য-লিন্ক]
অসংখ্য ধন্যবাদ ইমতিয়ার আপনাকে। দারুন ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর আর কোন বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ কুচক্রি মহলের হাতে নেই।
আপনার কাছে এবং মুক্তাঙ্গন এডমিনের কাছে একটা আবেদন, এই লেখাটি যাতে আরও বেশী মানুষ পড়তে পারে সেই লক্ষ্যে সুত্র এবং লেখকের নাম উল্ল্যেখ করে অন্য ব্লগে প্রকাশের অনুমতি পেতে পারি কি?
উত্তরে মুক্তাঙ্গন বলেছেন:
মুক্তাঙ্গন লিখেছেন:
৫ ডিসেম্বর ২০১১, সোমবার সময়: ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ
[মন্তব্য-লিন্ক]
ধন্যবাদ ডাঃ আতিকুল হক আপনার প্রস্তাবের জন্য। নাগরিক ব্লগে লেখাটার পূনঃপ্রকাশ বিষয়ে লেখক এবং মডারেশন টিমের সদস্যবৃন্দ সকলেই একমত, কারণ এই খবরগুলো এখন যতো বেশী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় ততো ভাল। মুক্তাঙ্গন এর পক্ষ থেকে কেবল অনুরোধ থাকবে মূল সূত্র (লিন্কসহ) এবং মূল লেখকের নাম সম্ভব হলে পূনঃপ্রকাশিত লেখার শুরুতেই উল্লেখের।
এই উদ্যোগের জন্য আবারও ধন্যবাদ।
লেখক নিজে বলেছিলেন:
উপরোক্ত মন্তব্য ও জবাব হতে ইতিমধ্যে অন্যরা অনুমতি ছাড়াও কিন্তু লেখাটা প্রকাশ করাতে পারেন। কারন ব্লগ কর্তৃপক্ষ কোথাও বলেন নাই যে শুধু সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারী ব্যাতিত অন্যদের জন্য এ অনুমোদন প্রযোজ্য নয়।
আমার নিজের ব্লগে বা অন্য কোন ব্লগে বা ফেসবুকে কোথাও আমি মূল সূত্র ছাড়া লেখাটা পোষ্ট করেছি কিনা তার প্রমাণ করুন।
আর লেখা ব্লগে প্রকাশের রীতি আমার মনে হয় আপনি অনেক বেশী ও ভালো জানেন। সেখানে লেখক তথা সংশ্লিষ্ট ব্লগারের নামেই লেখা প্রকাশ হয়। আর সুত্র থাকলে তা লিংক আকারে দেখানো হয়। তাই এটা আপনাকে প্রমাণ করতে হবে কোথায় আমি লেখকের মূল লেখার লিংক দেখাই নাই। আপনি কিভাবে বললেন যে আমি লেখা নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছি ? যারা ব্লগে পুরাতন তাদের কাছে এ ধরনের মন্তব্য আশা করিনাই।
আপনি আমাকে ভন্ড ও অসদাচরনের দলভুক্ত করার আগে সব কিছু ভালোভাবে দেখে নেয়া উচিত ছিল।
আমি আমার সকল পোষ্ট ডিলেট করব। আমি লেখকের উত্তরের অপেক্ষায় আছি। এর পর আমি মুছে ফেলব।
পরিশেষে এটুকই বলতে চাই যে, ” আমরা যারা স্বাধীনতার স্ব-পক্ষ বলে গলা চেচিয়ে আদা-চা খেয়ে গলা পরিস্কার করি, তাদের অনেক আছেন যারা এখনও সংকির্ন মন হতে বের হতে পারিনাই। আর এ সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী শিবির এগিয়ে গেছে বহুদুর।”
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা।
মাসুদ করিম - ১২ ডিসেম্বর ২০১১ (১:১৩ অপরাহ্ণ)
@আমিন আহম্মদ
আপনি শেয়ার করতে চেয়েছেন, এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। কিন্তু আপনি আপনার পোস্টের শুরুতেই যদি বলে দিতেন আপনি এই ব্লগ থেকে এই লেখকের এই পোস্টটি পড়ে সবার সাথে শেয়ারের উদ্দেশ্যে এখন আপনার ব্লগে পোস্ট হিসাবে তুলে দিচ্ছেন তাহলে কোনো সমস্যাই হত না, বলতে গেলে লেখকের অনুমতি ছাড়াই আপনি এটা করতে পারেন, ঠিক যেরকম কারো অনুমতি ছাড়াই আপনি ফেসবুকে শেয়ার করেন, টুইটারে রিটুইট করেন। মূলত ব্লগের এটা একটা অসাধারণ দিক, যে এর শেয়ার করার ক্ষমতা অসীম। ‘মুক্তাঙ্গন’এর ব্লগাররা আমরা আজকের লিন্কে কত কিছু শেয়ার করি কারো কোনো অনুমতি ছাড়াই। এমনকি কখনো কখনো গুরুত্ব বিবেচনায় নিজের পোস্টে অন্যের লেখাও তুলে দিই, যেমন দেখুন আসাম : ডি-ভোটার নির্দেশের কোনও আইনি বৈধতা নেই।
আশা করি শেয়ার করার ব্লগের অপার ক্ষমতাকে সচেতনভাবে ব্যবহার করবেন, এই ঘটনার পর আপনি আশা করি বুঝতে পারছেন আপনার ভুলটা কোথায় হয়েছিল, এবং ভবিষ্যতে যথাযথভাবে আপনি আরো মুখর শেয়ারে প্রবৃত্ত হবেন।
আমিন আহম্মদ - ১২ ডিসেম্বর ২০১১ (১:৫০ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ @ মাসুদ করিম। আপনার মন্তব্যের জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।
না আমি আর কোন লেখা শেয়ার করব না। এটা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চেষ্টা করব। বিশেষ করে কোন ব্লগের বা ব্লগারের লেখা।
আমি প্রতিটি লেখায় এমনটি আমার ব্যাক্তিগত ব্লগের লেখায়ও লেখকের নাম ব্যবহার করেছিলাম। কিন্ত দুঃখজনক ভাবে আমাকে যে পর্যায়ে নীচু ভাবে হাইলাইটস করা হয়েছে তা সত্যিই অপমানজনক।
আমার নিয়মিত ব্লগ “শব্দনীড়ে” মেসেজ দিয়ে আমার নামে অভিযোগ করা হয়েছে “মুক্তাঙ্গন” ব্লগটিমের পক্ষ হতে। কিন্তু তারা একটি বারও আমার লেখার লিংকগুলো চেক করেন নাই ! আমি কোথাও আমার নাম ব্যবহার করিনাই। অথচ আমাকে দোষী করা হলো ? শব্দনীড় হতে আমাকে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে। আমি অপমানিত বোধ করছি।
লেখা যে আমরা লিখতে জানিনা তা নয়। আমার বিভিন্ন ব্লগ বিশেষ করে শব্দনীড়, বিডিব্লগ ও প্রথম আলো ব্লগে ঢুকে বা গুগুল সার্চ দিয়ে দেখুন আমি কয়টি কপি-পেষ্ট করেছি !
লেখক এবং সৈকত সাহেব আমাকে দোষী করলেন। অথচ পোষ্ট প্রকাশ হতে পুরো দিন আমি ব্লগে এসে তাদের মন্তব্য দেখিনাই। আজ আমি ঢুকে মন্তব্য দেখে হতাশ হয়েছি।
যাই হোক আমি এ জন্য সত্যিই দুঃখিত। ধন্যবাদ।
Pingback: যুদ্ধাপরাধ বিচারে র্যাপ মিশন | শব্দনীড়
Pingback: যুদ্ধাপরাধ বিচারে র্যাপ মিশন | সবার ব্লগ
মাসুদ করিম - ১৪ ডিসেম্বর ২০১১ (১০:০৯ পূর্বাহ্ণ)
পাকিস্তানি কলামিস্টরা যখন বাংলাদেশ নিয়ে ‘বুঝদার’ কিছু লিখতে যায় তখন এরকম লেখাই সবসময় বের হয়। এই মিহির আলি তো লেখার শিরোনাম দিয়েছেন second partition, দ্বিতীয় দেশভাগ। যুদ্ধাপরাধের বিচার দলীয় বিবেচনায় হচ্ছে, বিহারি নিধনের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে গেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘mere’ 200,000 মানুষ মারা গেছে। জেনারেল মোশারফ তার শেষ ঢাকা সফরে প্রায় ক্ষমা চেয়ে এসেছে। একটি পুরোপুরি ‘বুঝদার’ পাকিস্তানি প্যাকেজ।
লিন্ক : The second partition।
মোহাম্মদ মুনিম - ১৫ ডিসেম্বর ২০১১ (৮:১০ পূর্বাহ্ণ)
লেখাটি আমার খুব খারাপ লাগেনি। ‘mere’ 200000 তিনি sarcastic টোনেই বলেছেন । নিহতের সংখ্যা ত্রিশ লক্ষ হলে গণহত্যা, দু লক্ষ হলে গণহত্যা নয়, ব্যাপারটা তো এমন নয়। বিশ্বের অন্যসব গণহত্যায় ঠিক কত লোক মারা গিয়েছিল, সে নিয়ে একাডেমিক বিতর্ক চলে, কিন্তু গণহত্যা যে হয়েছিল, সে নিয়ে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করে না।
লেখাটির মুল বিষয় হচ্ছে ৭১ নিয়ে পাকিস্তানীরা state of denial এ আছে, তাদের উচিত মাফ চেয়ে তওবা করে ‘দিল’পরিষ্কার করে ফেলা। ৭১ নিয়ে পাকিস্তানীদের মাফ চাওয়া উচিত, এই ধরনের কথা কিছু কিছু পাকিস্তানী নিয়মিতই বলেন, আমরাও খুশি হয়ে যাই, যেন ৭১ নিয়ে পাকিস্তানিরা ক্ষমা চাইলেই বেহেশতের দরজা খুলে যাবে। বস্তুত তাদের ক্ষমা চাওয়া না চাওয়ায় আমাদের কিছুই যায় আসে না। পাকিস্তান হাজার মাইল দুরের একটি marginalized রাষ্ট্র, আমাদের কাছে এই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কোন গুরুত্বই নেই।
বিএনপির পাতি নেতা থেকে শুরু করে স্টিফেন র্যাপ একটা কুযুক্তি বার বার দিয়ে যাচ্ছেন যে, জামাতের সদস্য হলেই যে যুদ্ধাপরাধী, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে party affiliation খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, নূর্যেমবার্গ থেকে শুরু করে আজকের কম্বোডিয়া, সর্বত্রই নাৎসি পার্টি বা খেমার রুজের নেতৃস্থানীয়দেরই বিচার হয়েছে, যুদ্ধের ডামাডোলে ডজন দুয়েক নিরীহ লোককে হত্যাকারী নাৎসি বা খেমাররুজের কোন সৈনিকের নয়। মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় রাজাকার হিসাবে সাঈদী যেসব অপরাধ করেছে সেই ধরনের অপরাধ অনেক রাজাকারই করেছে। কিন্তু একজন স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীকে কেন্দ্রীয় নেতা বানিয়ে, এম পি বানিয়ে জামাত দল হিসাবে আরও অনেক বড় যুদ্ধাপরাধ করেছে। এই দলটির যুদ্ধাপরাধ ৭১ এই থেমে যায়নি, যে idiologyর কারণে তারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, সেই ideology থেকে তারা ৭১ এর পরে একচুলও সরে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পরেও যে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধিকাংশই ৭১ এর যুদ্ধাপরাধী, সেই দলটির একজন স্থানীয় নেতাও যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে পারে না।
বিশ্বের সর্বত্রই ঘটা করে যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে কয়েকজন বৃদ্ধ অপরাধীকে ফাঁসীতে ঝুলাতে বা দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত করতে নয়, যুদ্ধাপরাধের পিছনে যে অসুস্থ ideology আছে, সে ideology কে চির বিদায় জানাতে। কম্বোডিয়াতে, সিয়েরালিউনে সামরিক এবং রাজনৈতিক ভাবে পরাস্ত কিছু পরাজিত এবং ক্লান্ত যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে। সেসব বিচার কত মন ঘি পুড়িয়ে আর কত রকমের ঢং করে করতে হবে, সেই সবক দিতে র্যাপ সাহেব দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছেন। তাঁর আইনী সবকে আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই। এত ঢংয়ের বিচার আমাদের সাজে না। হারম্যান গোরিংদের বিচারের সময় নাৎসিরা বিচারের ন্যায্যতা নিয়ে সেমিনার করেনি, আন্দোলন করেনি, বরং যে যেভাবে পেরেছে, গা ঢাকা দিয়েছে। আজকে যখন স্টিফেন র্যাপ জামাতিদের সাথে বৈঠক করেন, তিনি কি বুঝে করেন, তিনিই জানেন। ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে’ বিচার হবে, সেই বিচারে নিজামীর ফাঁসী হবে, বিএনপি জামাত সহ সকলেই এই বিচারে সন্তুষ্ট হবে, এটাই কি তাঁর প্রত্যাশা? এই প্রত্যাশাতো কাঁঠালের আমসত্ত্বের চেয়েও অসম্ভব।
মাসুদ করিম - ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ (৩:০৬ অপরাহ্ণ)
নাদিম এফ. পারাচা ১৯৭১ সালের পাকিস্তান আর্মি ও জামায়াতে ইসলামি নিয়ে লিখছেন
লিন্ক : Violent ghosts।