কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিসংগ্রামের সেই মূলনীতিগুলো কেমন করে বাস্তবায়িত হবে সেটাই হয়ে উঠলো নতুন সংগ্রাম। রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে সে সব মূলনীতির বাস্তবায়নই শুধু নয়, এবারের এই সংগ্রামের আসল পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ালো সেই চেতনায় পরের প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তোলা [..]

দৈনিক বাংলা, ২১ জানুয়ারী ১৯৭২

বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে একত্র হয়ে একটা পুরো জাতি মুক্তিযুদ্ধ তো করলো। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বিজয়ও অর্জন করলো। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিসংগ্রামের সেই মূলনীতিগুলো কেমন করে বাস্তবায়িত হবে সেটাই হয়ে উঠলো নতুন সংগ্রাম। রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে সে সব মূলনীতির বাস্তবায়নই শুধু নয়, এবারের এই সংগ্রামের আসল পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ালো সেই চেতনায় পরের প্রজন্মকে দীক্ষিত করে তোলা। তারই চেষ্টায় কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন দেশের লেখক বুদ্ধিজীবিরা। 'নতুন করে গড়ব এদেশ' শিরোনামে ছোটোদের উদ্দেশ্যে নিচের এই লেখাটি লিখেছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ছাপা হয়েছিল দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ছোটোদের 'সাত ভাই চম্পা' পাতায়। তাত্ত্বিকভাবে 'ধর্মনিরপেক্ষতা', 'গণতন্ত্র', কিংবা 'সমাজতন্ত্র' কথাগুলো এখানে যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা কারও কারও কাছে হয়তো কিছুটা সরলীকৃত বা খন্ডিত মনে হবে। হতেই পারে, আমারও মনে  হয়েছে। তবে শুরুর ভাবনাগুলো জানার আগ্রহ থেকেই লেখাটি হুবহু (তখনকার বানান রীতি ও মুদ্রণপ্রমাদসহ) উপস্থাপন করা হল নিচে।   নতুন করে গড়ব এদেশ - মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ছোট বন্ধুরা, আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তোমরা এর মধ্যেই বড়দের কাছে শুনেছ, নিজেরাও জেনেছ : কিভাবে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। তোমরা শুনেছ, এই স্বাধীনতা লাভের জন্য লক্ষ লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছেন, মুক্তি বাহিনীর অসীম সাহসী বীর ভাইরা মরণপণ লড়েছেন; আমাদের নেতারা কত বিপদের ঝুকি নিয়ে দেশ দেশান্ত পাড়ি দিয়েছেন; আমাদের জ্ঞানীগুণিরা দেশে দেশে জনমত গড়েছেন, বিদেশী কত বন্ধু আমাদের কথা সবাইকে জানিয়েছেন এবং দেশের সকল মানুষ শত অত্যাচারেও হার মানেনি। এসো আজ আমরা আমাদের লক্ষ লক্ষ শহীদের উদ্দেশে আমাদের শ্রদ্ধা জানাই, কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই আমাদের মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের; কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই মিত্রবাহিনী--ভারতীয় বীর সেনানীদের, অভিনন্দিত করি আমাদের নেতাদের, জ্ঞানীগুণিদের ও বীর দেশবাসী সকলকে। আজ আমাদের এ দেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ, নতুন করে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমরা কেউ আলসেমি করব না, বসে থাকবো না - আমরা সব কিছু নতুন করে গড়ব। এই গড়ার ব্যাপারে আমাদের বাংলাদেশ সরকার যে মূলনীতি ঘোষণা করেছেন সেটা খুবই চমৎকার। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত আমাদের সরকার ঘোষণা করেছেন যে আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে তিনটি : ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। কথাগুলো তোমাদের জন্যে বেশ কঠিন কিন্তু আস্তে আস্তে যদি বুঝতে…

আইসিটির পুরো ইতিহাসে সংঘবদ্ধভাবে সবচেয়ে বেশী আইনগত এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার যে ব্যক্তিটি হয়েছেন তিনি হলেন বিচারপতি নিজামুল হক। তাঁকে সরানোর সব ধরণের চেষ্টা চালিয়েছে ওরা শুরুর দিন থেকেই। যাকে ভয় দেখানো যায় না, যাকে কিনে নেয়া যায় না, তাকে সরিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় কি? সে জন্য তারা ষড়যন্ত্রে নামে [..]

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে আজ শপথ গ্রহণ করেছেন। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে গতকাল থেকেই যথারীতি বাঁশেরকেল্লা ঘরানার জামাত-শিবিরের পেইজগুলোতে এবং 'আমার দেশ' গোষ্ঠীর সাংবাদিক-দুর্বৃত্তদের কলমে প্রবল আহাজারি, মাতম, আর অপপ্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, দুঃখজনক হলেও সত্যি, প্রগতিশীল ৭১ এর পক্ষের মানুষরা এই গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের খবরটি হয় লক্ষ্য করেননি, কিংবা এই নিয়োগের তাৎপর্য অনুধাবন করেননি, কিংবা করলেও একে অভিনন্দন জানানোর, কিংবা প্রচার করবার প্রয়োজনীয়তাটুকু অনুভব করেননি। এটা আমাকে অত্যন্ত ব্যাথিত করেছে। আমরা নিশ্চুপ বিস্মৃতিতে নিমজ্জিত থাকলেও বাঁশেরকেল্লারা কিন্তু নিশ্চুপ থাকে না। আমরা আমাদের ইতিহাসের প্রকৃত হিরোদের কথা ভুলে গেলেও ইতিহাসবিরোধী জামায়াত-শিবির আর ওদের সাঙ্গাতরা কখনো তাদের প্রকৃত শত্রুদের কথা ভোলে না। তাই কিছু কথা মনে করিয়ে দেয়ার তাগিদ থেকে এই পোস্টটি লেখা। এ প্রসঙ্গে দু'বছর আগে যা লিখেছিলাম তা থেকেও কিছু অংশ পূনরাবৃত্তি করছি নিচে। বিচারপতি নিজামুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (এবং পরবর্তীতে ট্রাইবুনাল-১) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে পুরো বিচারিক প্রতিষ্ঠানটিরই নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০১২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত, স্কাইপ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে বিতর্কিত করে তাঁর পদত্যাগ নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত। যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সংক্রান্ত আইনটি পড়ানো পর্যন্ত হয়নি কোনদিন [এই ব্লগটি পড়ুন], যে দেশে আইনজীবি, আইনের শিক্ষক থেকে শুরু করে এমনকি বিচারকদের মধ্যেও এই সুনির্দিষ্ট আইনটির ক্ষেত্রে (অর্থাৎ: গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ) পেশাগতভাবে অবগত/দক্ষ একজনকেও খুঁজে পাওয়া কঠিন - সেই দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিনতম এবং সবচাইতে তাৎপর্যপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়াটি এবং প্রতিষ্ঠানটি তিল তিল করে গড়ে তোলার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব জাস্টিস নিজামুল হক-এর। এই আইনটির এবং এই পুরো বিচার প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি বাঁকের অনুসরণীয় মাইলফলকগুলি, প্রতিটি ব্যাখ্যার আইনগত রোডম্যাপ তাঁর নিজের হাতে গড়া - যে তাত্ত্বিক এবং সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর ভর করে পরবর্তীতে এতগুলো রায় আজ ঘোষিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এই বিচারক প্রায় পুরো পেশাগত জীবনটাই সক্রিয়ভাবে কাটিয়েছেন একজন নির্ভীক মানবাধিকার আইনজীবি হিসেবে। সে পুরো সময়টাতে যাঁর একার হাত দিয়েই পেশ করা অন্তত কয়েক শতাধিক রীট আবেদনের সুবিধা পেয়েছেন বিশেষ ক্ষমতা আইনে অবরুদ্ধ শত শত রাজনৈতিক বন্দী ও…

গত ২১শে ডিসেম্বর বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে ৭১ এর শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন ঠিক কত লাখ শহীদ হয়েছে সেই নিয়ে বিতর্ক আছে। [..]

গত ২১শে ডিসেম্বর বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে ৭১-এর শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন ঠিক কত লাখ শহীদ হয়েছে সেই নিয়ে বিতর্ক আছে। খালেদা জিয়া যে মতাদর্শের রাজনীতি করেন তাতে ৭১- এর শহীদের সংখ্যা তো বটেই, শহীদের 'সংজ্ঞা' নিয়েও তাঁর মনে সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। যেমন আমাদের বড় ভাই শৈবাল চৌধূরী (চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের পরিচালক)। একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল সাত আট বছর। সে সময়ে শৈবালদার বাবা মা ছয় ছেলেমেয়ে নিয়ে ভারতে চলে যান। যুদ্ধ শেষে তাঁরা নিজেদের বসত বাটিতে ফেরত আসেন বটে, তবে আটজনের বদলে ফেরত আসেন তিনজন। শৈবালদার পাঁচ ভাই বোনই ভারতের শরণার্থী শিবিরে কলেরায় মারা যায়। এই ৫টি হিন্দু শিশুকে কি খালেদা জিয়া 'শহীদ' বলে স্বীকার করবেন? আমার তো মনে হয় না। বছর চারেক আগে এক ভারতীয় ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হয়েছিল (তিনি ৬৫ সালে ফরিদপুর থেকে ভারতে চলে যান)। ৭১ সালে ফরিদপুরে থেকে যাওয়া তাঁর বড় ভাই গ্রামের অন্যান্য লোকজনের সাথে পালাতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে যান এবং পলায়নপর জনতার পায়ের চাপে পিষ্ট হয়ে মারা যান। এই হিন্দু কৃষককে খালেদা জিয়া শহিদ বলে মানবেন? আমার তা মনে হয় না। আমার স্ত্রীর মেঝ মামা, ৭১-এ কিশোর বয়সী ছিলেন। এপ্রিলের শুরুতে হারিয়ে যান। সেই সাথে তাদের বাড়ির বিহারী দারোয়ানও লাপাত্তা হয়ে যায়। সেই কিশোর আর কখনোই ফিরে আসেনি। এই হারিয়ে যাওয়া কিশোরকে খালেদা জিয়া শহীদ বলে মানবেন? আমার সন্দেহ আছে। তবে শুধু খালেদা জিয়াও নন, ৭১ এর নিহতের সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের নানা সুধী জনও বেশ 'একাডেমিক' আগ্রহ দেখাচ্ছেন (যেমন আফসান চৌধুরী বা অধ্যাপক আমেনা মহসীন)। ডেভিড বার্গম্যানও তাঁর ব্লগে একাত্তরের নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা 'পণ্ডিতের' বিভিন্ন লেখার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। কেউ বলছেন ৫৮ হাজার, কেউ বলছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার, কেউ বলছেন ৫ লাখ। এইসব বিভিন্ন সংখ্যার সবই 'বৈজ্ঞানিক' সত্য, শুধু ৩০ লাখ সংখ্যাটিই 'বাড়িয়ে' বলা। তবে সবশেষে এও বলেছেন যে, ৭১ সালে 'বিপুল' সংখ্যায় মানুষের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের কোনই অবকাশ নেই। সন্দেহ যখন নেই, তবে নিহতের 'প্রকৃত' সংখ্যা নিয়ে এত বিতং করার কি মানে আছে? মানে হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কের বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলা। বাংলাদেশে অনেক বিষয়েই…

আমার কোনো খেদ নেই, আমার কোনো অভিমান নেই – আপনাদেরও যা আছে ঝেড়ে ফেলুন। আমার কাজ যদি কোনো আগ্রহ তৈরি করে আপনাদের মধ্যে চেষ্টা করুন দেখুন আমার কাজ, আর যদি না করে অন্য কোনো আগ্রহের জায়গায় সময় দিন [...]

জীবনেরও দেয়ার সীমাবদ্ধতা আছে, আমি জানি। জন্ম না হলে হয়তো জানা হত না, কিন্তু জন্ম হয়ে যা জানা হল তাতে আমি প্রতিটি দিন কালো থেকেছি – মৃত্যু আমি বয়ে বেড়িয়েছি, বুদ্ধের চোখের মতো : প্রণত পাপড়ির রেখার মাঝে, তারা, যা ধ্যান খচিত – সংখ্যা মনে রাখতে হয় শুধু, চারটি পাপড়ি, দুটি তারা, কে আনত কেউ জানে না, সবাই জানে আমরা দেখছি দুটি চোখ, আর সবার মতো, বুদ্ধেরও। আমাকে কাজ করতে না দেয়ার অনেক যুক্তি থাকতে পারে, আমাকে অবজ্ঞা করার অনেক উপায় থাকতে পারে, আমাকে বসবাস করতে না দেয়ার অনেক উপলক্ষ থাকতে পারে, আমাকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবার অনেক প্রকল্প থাকতে পারে, আমাকে যৌনবস্তু ভাবার অনেক প্রস্তাব থাকতে পারে, আমাকে অবাংলাদেশ ভাবার অনেক প্রগতিঅপ্রগতিশীল থাকতে পারে, আমাকে চামুচমুখেদেয়া বৈভবখোর ভাবার অনেক সংগ্রামঅসংগ্রামশীল থাকতে পারে – কিন্তু সবকিছুর বিপরীতে কথা হল আমি নিরন্তর কাজ করেছি। আর কাজের জন্য আমি স্থান বদল করেছি বা স্থান নির্বাচন করেছি। এবং ইতিহাসের পাতা জুড়ে আপনি দেখবেন অনেকেই তাই করেছেন – কিন্তু আমি কেন আলাদা হয়ে গেলাম? –আপনাদের দেখার ভুলেই নিশ্চয়। আপনারা কেন আমাকে এভাবে দেখলেন? – এটা আমার কোনো প্রশ্ন বা অভিমান নয়, এটা আমার বোধ, এটা এমন নয় স্থানকালের কিছু পাত্রের পরিবর্তন হলেই আপনাদের দেখার ভুল ঘটত না – সব ঠিকঠাক চলত, তা কিন্তু নয়। মন খুলে বলুন তো কত জন ভাস্কর আছে বাংলাদেশে? কত জন ভাস্কর কাজ করে বাংলাদেশে? কতটা ভাস্কর্যপ্রবণ বাংলাদেশ? তাহলে বলুন কোথায় দাঁড়িয়ে আপনাদের ভুল দেখা ঠিক হয়ে যেত? শেষ পর্যন্ত কাজে থাকতে আমাদের অনেক কিছু করতে হয়ই, যেমন কাজ শিখতেও আমাদের অনেক কিছু না করে থাকতে হয়। যেজীবন বেছে নিয়েছিলাম তার আদ্যোপান্ত আমাকেই ছিবড়ে নেবে তা জেনেই আমি জীবন শুরু করেছিলাম – আমার কোনো খেদ নেই, আমার কোনো অভিমান নেই – আপনাদেরও যা আছে ঝেড়ে ফেলুন। আমার কাজ যদি কোনো আগ্রহ তৈরি করে আপনাদের মধ্যে চেষ্টা করুন দেখুন আমার কাজ, আর যদি না করে অন্য কোনো আগ্রহের জায়গায় সময় দিন, আমার জীবন যদি কোনো আগ্রহ তৈরি করে আপনাদের মধ্যে আমার জীবনটাকে উদঘাটন করার চেষ্টা করুন, আর যদি না করে অন্য কোনো আগ্রহের…

আর একদিন পরেই একমাস পূর্তি হবে, কিন্তু অভিজিৎ রায় হত্যা তদন্তের কোনও অগ্রগতি নেই। তিন মাস হতে চললো, অবরোধ-হরতালের সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিরীহ মানুষদের পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে, সে হত্যাযজ্ঞ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে অনেক আগে থেকেই — কিন্তু গত কয়েক মাসে তা নতুন এক ব্যাখা অর্জন করেছে; কেননা অনেকেই এখন এ সব ঘটনাগুলোকে নিরীহ মানুষ হত্যার সমান সমীকরণে দাঁড় করিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার বিষয়টিকে হালকা করার খেলায় মেতে উঠেছেন। সুশীলদের গলা মাহমুদুর রহমান মান্না গ্রেফতার হওয়ার পর কয়েকদিন বেশ বসে গিয়েছিল, কিন্তু বিএনপি'র আত্মগোপনে থেকে ভিডিও বার্তা ও বিবৃতি দিয়ে হরতাল প্রদানকারী নেতা সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর তারা হালে পানি পেয়েছেন। [. . .]

আর একদিন পরেই একমাস পূর্তি হবে, কিন্তু অভিজিৎ রায় হত্যা তদন্তের কোনও অগ্রগতি নেই। তিন মাস হতে চললো, অবরোধ-হরতালের সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিরীহ মানুষদের পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে, সে হত্যাযজ্ঞ বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে অনেক আগে থেকেই — কিন্তু গত কয়েক মাসে তা নতুন এক ব্যাখা অর্জন করেছে; কেননা অনেকেই এখন এ সব ঘটনাগুলোকে নিরীহ মানুষ হত্যার সমান সমীকরণে দাঁড় করিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার বিষয়টিকে হালকা করার খেলায় মেতে উঠেছেন। সুশীলদের গলা মাহমুদুর রহমান মান্না গ্রেফতার হওয়ার পর কয়েকদিন বেশ বসে গিয়েছিল, কিন্তু বিএনপি’র আত্মগোপনে থেকে ভিডিও-বার্তা ও বিবৃতি দিয়ে হরতাল প্রদানকারী নেতা সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর তারা হালে পানি পেয়েছেন। এই ডামাডোলে ঘুরে ফিরে একটি কথাই উঠে আসছে তাদের প্রতি নম্র টকশোজীবীদের পক্ষ থেকে — সংলাপ, সংলাপ চাই। সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। কথা হলো, সংলাপ কি হচ্ছে না? দেখা যাচ্ছে, সংলাপ প্রতিদিনই হচ্ছে। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিন টক-শো নামের যে বস্তুটি হয়, তা তো সংলাপেরই নামান্তর। প্রতিদিন সংলাপ হচ্ছে, প্রতিদিন সে সংলাপের ফলাফলও দেখা যাচ্ছে — কোনো অগ্রগতি নেই। শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়াকে যদি সর্বোচ্চ সংলাপকারী ভাবি, এঁরা তা হলে তাদেরই প্রাথমিক কিংবা কিংবা মধ্য পর্যায়ের সংলাপকারী; তাঁরাই যেখানে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না, ওনারা সংলাপে বসবেন কোথা থেকে? তাঁরা তো আর দিনের পর দিন সংলাপ করবেন না। যাঁরা আসলে সংলাপের কথা (পক্ষে হোক আর বিপক্ষে হোক) বলছেন, তাঁরা আসলে প্রতারণা করছেন; কেননা সংলাপের কথা বলে তাঁরা কালক্ষেপণ করছেন, সাধারণ মানুষদের যারা হত্যা করে চলেছে তাদের আয়ু বাড়াচ্ছেন। পেট্রোলবোমায় নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধের কোনও সম্ভাবনা নেই, কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন আকাশেবাতাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের হাওয়া ছড়াচ্ছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা চিন্তা করছেন, এইভাবে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। বিএনপির কথিত আন্দোলন ধামাচাপা পড়বে, অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচনে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কিন্তু হিতে বিপরীত হতে চলেছে, কেননা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে এবং তা তাদের কথিত আন্দোলন বন্ধ না করেই। কেননা কাগজেকলমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ব্যানারেই হয়ে থাকে এবং তাই দলীয় কথিত আন্দোলনের কর্মসূচি বন্ধ না…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.