এখন ইউনূসকাহনের সূত্র ধরে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি বাংলাদেশে তাদের আকাঙ্ক্ষিত কথিত রাজনৈতিক বিকল্প গড়ে তোলার আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে, আমরা উপনীত হয়েছি কথিত রাজনৈতিক বিকল্প-অনুসন্ধান পর্বের দ্বিতীয় অধ্যায়ে।[...]

এখন ইউনূসকাহনের সূত্র ধরে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলি বাংলাদেশে তাদের আকাঙ্ক্ষিত কথিত রাজনৈতিক বিকল্প গড়ে তোলার আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে, আমরা উপনীত হয়েছি কথিত রাজনৈতিক বিকল্প-অনুসন্ধান পর্বের দ্বিতীয় অধ্যায়ে। এই কথিত রাজনৈতিক বিকল্প-অনুসন্ধান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছিল ১১ জানুয়ারি বা ওয়ান-ইলেভেন। তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে রাজি হননি। সামরিক বাহিনীর তৎকালীন প্রধান মইন উ আহমদের বইয়ে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী (আরও অনেক সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে), ইউনূস তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে তার যে পরিকল্পনা রয়েছে তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সীমিত শাসনামলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, তাই তিনি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। ড. ইউনূসই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ফখরুদ্দীনের নাম প্রস্তাব করেন। এর পরের ঘটনাও সবার কমবেশি জানা আছে-সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতাপূর্ণ তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে ইউনূস চেষ্টা করেন রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার। আমাদের সুশীল কাণ্ডারিরা বার বার কমপক্ষে দু বছর সময় চাইতে থাকেন ‘লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে টেনে তুলতে’। কিন্তু খুব দ্রুতই ড. ইউনূস বুঝতে পারেন, এই যাত্রায় কাজ হবে না। তিনি তাই সব কিছু ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিয়ে সাময়িক বিরতি দেন। তার বিবৃতিতে তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, যারা তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা তা রক্ষা না করায় তিনি এ উদ্যোগে ক্ষান্তি দিচ্ছেন। কিন্তু ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, প্রস্তুতির জন্যে তিনি ও সুশীলগণ আরও খানিকটা সময় চাইছিলেন। আধুনিক মহাজন ইউনূসকে নির্যাতিত ইউনূস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে জনগণের সহানুভূতি আদায় করার সুযোগ খুঁজছিলেন তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে সে সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন, সহানুভূতির পাত্র হয়ে উঠেছেন। এবং এতে কোনও সন্দেহ নেই ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের প্রাণভোমরা হিসেবে প্রমাণ করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সুশীল সমাজ যা-যা করা সম্ভব তার সবই করবে। কিন্তু ড. ইউনূস সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে এখন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? হয়তো এটি সঠিক প্রশ্ন নয়, কেননা আসলে ড. ইউনূস নন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। এই ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখন ব্যবহার করতে পারে দুটি উপায়ে : হয় দেশটিতে ইসলামী জঙ্গিবাদকে চাঙ্গা করে…

ফেইসবুকের কল্যাণে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি এক কল্পিত কেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ে নেটজগতে। সেই কল্পিত কেচ্ছার সারসংক্ষেপ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ‘নিরপেক্ষ’ করবার জন্যে খুব করে শাসিয়েছেন। তখন হিলারী ক্লিনটনের জেরার মুখে বেরিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের বর্তমান উদ্যোগ নেহাৎই ভারতের চাপে নেয়া হয়েছে।...

মিথ্যুকদের রান্নাবান্না ফেইসবুকের কল্যাণে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি এক কল্পিত কেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ে নেটজগতে। সেই কল্পিত কেচ্ছার সারসংক্ষেপ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ‘নিরপেক্ষ’ করবার জন্যে খুব করে শাসিয়েছেন। তখন হিলারী ক্লিনটনের জেরার মুখে বেরিয়ে এসেছে যে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের বর্তমান উদ্যোগ নেহাৎই ভারতের চাপে নেয়া হয়েছে। এখন পরিষ্কার, পরিকল্পিতভাবেই ফেইসববুকে ওই কাহিনী ছাড়া হয়েছিল, মানুষ যাতে সত্যি মনে করে সংলাপগুলোও সেভাবে সাজানো হয়েছিল-এবং পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে সেই কাহিনীকে সংবাদ হিসেবে লুফে নিতে দেরি করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনা। বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীদের পরিচালিত ওয়েবসাইট প্রবাসীভয়েস ডট কমেও সংবাদটি প্রচার করা হয়েছে ফলাও করে। এরকম কল্পিত সাক্ষাৎকার বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলির প্রিন্ট মিডিয়াতে অহরহ ছাপা হয়, কিন্তু সেটিকে কেউ উদ্ধৃত করে না, সংবাদের উৎস হিসেবে গণ্য করে না, ফলাও করে সেটির ভিত্তিতে কেউ দেশ-বিদেশের পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষণ করতে বসে না। কিন্তু এই গুজবকেচ্ছাকেই ২১ জানুয়ারি নিবন্ধের তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করলেন ঢাকার ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে’র প্রতিবেদক শহীদুল ইসলাম। বাজারে লিফলেটও এলো একইদিনে। পরদিন ২২ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর দৈনিক সংগ্রাম তাদের পত্রিকার প্রথম পাতায় সংবাদ ছাপলো : হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে গেল/ যুদ্ধাপরাধ ইস্যু ভারতের এজেন্ডা। অবশ্য খানিকটা বিশ্বস্ত থাকার ভাবও দেখানো হলো-লেখা হলো, সরকারিভাবে এ ধরণের কথোপকথনের ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। তবে এই বাক্যগুলির মধ্যে এমন একটি হালকা ভাব রাখা হলো, পাঠকদের যাতে মনে হয়, ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা তো অস্বীকারই করবে। এই অপপ্রচার যে কত সংগঠিত উপায়ে করা হয়েছে, তা বোঝা যায় সাপ্তাহিক হলিডে-তে নিবন্ধটি প্রকাশের তারিখ ২১ জানুয়ারিতেই ‘বেরিয়ে পড়েছে থলের বিড়াল : প্রধানমন্ত্রী বলে ফেলেছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আসল মদদদাতা কে’ শিরোনামের একটি লিফলেট উদ্ধার করার ঘটনা থেকে। যে-খবর কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসেনি, দেশের দৈনিক-সাপ্তাহিকে আসেনি, কোনও গ্রহণযোগ্য বিকল্পধারার ব্লগেও ছাপা হয়নি, যে-খবর কল্পিত সাক্ষাৎকার হিসেবে সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেইসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে তাকে ভিত্তি করে সাপ্তাহিক হলিডে যেদিন এশিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের আলামত খুঁজে পেল, সেইদিনই সে গুজব বাজারে ছড়ানোর জন্যে লিফলেট আকারে নিয়ে আসা হলো। কেননা, বিদেশি দূতাবাসগুলি আর বিশেষ কিছু ব্যক্তির কাছে বিনা পয়সায় সাপ্তাহিক হলিডে পাঠানো গেলেও সব মানুষের কাছে তো আর ওভাবে…

একাত্তরের গণহত্যা কেউ কি ভুলতে পারে? তারপরও বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদেছে বছরের পর বছর। কিন্তু সময় বদলে যায়, কেননা সময়ও চায় অতীতকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে। তাই গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের খুজেঁ বের করছে আইনের দীর্ঘ হাত। কেমন ছিল সেই দিনটি, যেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে হাজির করা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে? মফিদুল হক লিখেছেন সেই দিনটির কথা।

আদালত কক্ষে প্রবেশ করতে আমার কিছুটা বিলম্ব ঘটে গিয়েছিল। প্রধান ফটক দিয়ে এলাকায় প্রবেশের মুখে জেরা ও তল্লাশি থেকে বোঝা যাচ্ছিল আজকের আদালতের রয়েছে ভিন্নতা। একাত্তরে গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আদালতে উপস্থিত করা হবে প্রধান এক অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। মূল ভবনে ঢোকার মুখে আবারও তল্লাশি এবং পরিচয়প্রদান ও পরিদর্শকের কার্ড সংগ্রহের জন্য বিলম্ব হয়ে গেল আরো। ঢোকার সময়ে গুঞ্জন শোনা গেল, বেশ কিছুটা হৈ-হল্লা ঘটেছে প্রবেশাধিকার নিয়ে। মূল এজলাশ সুপরিসর বটে, তবে ভেতরে প্রবেশের দাবিদার হয়েছেন যত মানুষ ততজনকে স্থান দেয়ার কোনো উপায় নেই। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এজলাশে উপস্থাপনেও কিছু বিলম্ব ঘটেছে, প্রিজন ভ্যানে তিনি যখন পৌঁছলেন আদালত-প্রাঙ্গণে তখন পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীদের কেউ কেউ পুলিশী বারণ উপেক্ষা করে অভিযুক্তের সঙ্গে পার করলেন দীর্ঘ সময়। ফলে ঘটেছিল অনভিপ্রেত বিলম্ব। আমি যখন প্রবেশ করি আদালত-কক্ষে তখন অভিযুক্তের আইনজীবীর জমাকৃত ওকালতনামা বৈধ হয় নি বিধায় বিচারকমণ্ডলী সে-বিষয়ে মত-প্রকাশ করছিলেন। অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবীকে সংযত থাকতেও উপদেশ দিচ্ছিলেন ট্রাইবুন্যালের মান্যবর প্রধান বিচারক। সেসব কথা শুনছিলাম বটে, কিন্তু আমার নজর পড়ে ছিল কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্তের দিকে। তিনি বলিষ্ঠ পুরুষ, তাঁর দাঁড়িয়ে থাকায় শারীরিক সেই বলিষ্ঠতার কোনো কমতি ছিল না। তাঁর চেহারায় বা শরীরে বা শরীরের ভাষায় নির্যাতনের কোনো ছাপ নেই। মনে পড়ছিল মাত্র ক’দিন আগে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীকে পুলিশ রিমাণ্ডে নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেয়া বিবৃতির কথা। সেই বিবৃতিতে অনেক ধরনের নির্যাতনের উল্লেখ করা হয়েছিল, পায়ের নখ উপড়ে ফেলা, যৌনাঙ্গে বিদ্যুৎ শলাকা প্রয়োগ, ক্ষুর দিয়ে তলপেটে চির ধরানো ইত্যাদি ইত্যাদি। অ্যামনেস্টির বাংলাদেশ সংক্রান্ত গবেষক আব্বাস ফায়েজ এইসব নির্যাতনের কথা বলে বাংলাদেশ সরকারের জবাবদিহিতা কামনা করেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবেকের বন্দিদের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য সদা সচেষ্ট থাকে। কিন্তু পশ্চিমী দৃষ্টিভঙ্গি যে তাদের চিন্তা-চেতনা অনেকাংশে আচ্ছন্ন করে রাখে সেই পরিচয়ও তারা সময় সময় দিয়েছে। বাংলাদেশে একাত্তরের গণহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা বিচারের হাত থেকে নিজেদের জন্য অব্যাহতি নিশ্চিত করেছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু-হত্যা ছিল তাদের এই অব্যাহতি আদায়করণ প্রচেষ্টার অংশ। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পর বাতিল ঘোষিত হয় দালাল আইন, রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত হয় ঘাতক ও…

প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো।...

প্রায় পাঁচশ বছর আগে ম্যাকিয়াভেলি দ্য প্রিন্স নামে একটি বই লিখেছিলেন। অনেকের মতে, এ বইয়ের মধ্যে দিয়েই আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণার সূচনা ঘটে। ইতালির রেনেসাঁ যে কেবল শিল্পের রেনেসাঁ ছিল না, ছিল রাষ্ট্রেরও পুনর্জন্মগাথা তার উদাহরণ ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স। আইডিয়ালিজমকে প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি, জয়গান গাইলেন রিয়ালিজমের। এমনকি সত্য সম্পর্কেও নতুন ধারনা দিলেন ম্যাকিয়াভেলি। বললেন তিনি, যে-কোনও বিমূর্ত আদর্শিকতা থেকে গ্রহণযোগ্য সত্য অনেক-অনেক ভালো। খণ্ডবিখণ্ড ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ এক ইতালিতে পরিণত করার অন্তর্গত তাগিদ থেকে লেখা দ্য প্রিন্স বিতর্কের ঝড় তুললো। এইভাবে মানবজাতি মুখোমুখি হলো রাজনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার, যে-ধারণা রাষ্ট্রকেও নতুনভাবে সজ্জিত করলো। রাষ্ট্র মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক যুগের দিকে রওনা হলো। ম্যাকিয়াভেলির দ্য প্রিন্স-এর প্রতিটি বাক্য রাষ্ট্রশাসকদের শিক্ষা দিলো, রাজনীতি নৈতিকতার নয়, বরং নৈতিকতাই রাজনীতির অধীন। ম্যাকিয়াভেলি বললেন, রাজনীতির সঙ্গে নৈতিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা জানতে পারলাম রাষ্ট্র মানে নৈতিকতা নয়, রাষ্ট্র মানে রাজনৈতিকতা। হুবহু মনে নেই, তবে ওই দ্য প্রিন্সের কোনও কোনও বাক্য এখনও আবছা মনে আছে। যেমন, একটি বাক্য ছিল এরকম : A son can bear with equanimity the loss of his father, but the loss of his inheritance may drive him to despair. দ্য প্রিন্সের ওই কথাগুলিই বার বার মনে পড়ছে খালেদা জিয়া ‘বাস্তুহারা’ হবার পর থেকে। ম্যাকিয়াভেলি কি জানতেন, প্রায় ৫০০ বছর পরও পৃথিবীতে এমন কোনও রাষ্ট্র থাকবে, যেটির ক্ষেত্রে তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে অর্জিত ধারণাটি খাপে খাপে মিলে যাবে? ২. এ কথা বলা সত্যের অপলাপ হবে, জিয়াউর রহমানকে হারানোর পর খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানদের চোখে জল আসেনি। নিশ্চয়ই এসেছিল। কিন্তু তা তত দ্রষ্টব্য হয়ে ওঠেনি। হতে পারে, মিডিয়ার দশহাত তখনো দশদিককে গ্রাস করেনি। তাই তাদের কান্নামাখা মু্খও আমাদের বার বার দেখার সুযোগ হয়নি। তারা কেঁদেছেন এবং জিয়াউর রহমানকে মনে রেখেছেন, জিয়াউর রহমান নামটিকে ব্যবহারের বস্তুতে পরিণত করেছেন। এই নামটি তাদের এত কিছু দিয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। জিয়াউর রহমান তাতে উজ্জল হননি, কিন্তু আপোষহীন নেত্রী আর যুবরাজ ক্ষমতায় সজ্জিত হয়েছেন। এ জন্যে তাদের জিয়াউর রহমানের কাছে যত ঋণই থাক না কেন, জিয়াউর রহমানের হন্তারকের অনুসন্ধান তারা কখনো করেননি। একজন…

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দাঁড়িয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফকরুল ইসলাম বললেনঃ '৭১ এর যুদ্ধ ছিল পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে এবং তা আমাদের ভুখণ্ডে হয়েছিল [..]

তিনি জনাব ফকরুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে আসামি পক্ষের একজন আইনজীবী। গতকাল ট্রাইবুনালে অভিযুক্ত ৪ জনের পক্ষে নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি বললেনঃ ক) '৭১ সালের যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে। খ) যদিও আমাদের এই ভুখণ্ডে ঐ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এরপর তার বক্তব্যকে শাণিত করতে গিয়ে, তিনি উদাহরন টানেন এই বলে যে, "একাত্তর সালের ১৭ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কোন কথা বলা হয়নি।" দেখুনঃ যুগান্তর ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ তিনি আরো বলেন, "স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে 'যুদ্ধ' শব্দটি নেই।" দেখুনঃ প্রথম আলো, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ট্রাইবুনালের অনেক খবরের ভিড়ে এই খবরটি ছিল অনেক গুরুত্ববহ। কিন্ত অনেক পত্রিকাই এই রিপোর্টটি করতে পারেনি। জানি না কেন? এটি কি অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি সংবাদ নয়? আমরা কি জনাব ফকরুল ইসলামদের কাছ থেকে "স্বাধীনতার ঘোষনা পত্রের" নতুন পাঠ নেবো? তার কাছে আমরা কি জবাব চাইবো না?

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.