বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা এবং এর অবলুপ্তি বিষয়ে মূল নিবন্ধটি লিখেছেন শহিদুল ইসলাম। মুক্তাঙ্গনের পক্ষ থেকে নিবন্ধটি এখানে এমবেড করে তুলে দেয়া হল পাঠকের জন্য। পড়তে সমস্যা হলে অনুগ্রহ করে সংযুক্ত পিডিএফ-লিন্ক থেকে পুরো লেখাটি ডাউনলোড করে নিন [...]

[মুক্তাঙ্গনের পক্ষ থেকে শহিদুল ইসলামের নিবন্ধটি এখানে এমবেড করে দেয়া হল। পড়তে অসুবিধে হলে অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির পিডিএফ কপি এই লিন্ক থেকে ডাউনলোড করে নিন]

ঘৃণা করো [...]

পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে ঘৃণা করো, পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীকে নয়।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশটিতে যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ। আজ থেকে চার দশক আগের চোখ দিয়ে দেখি কেবলই গ্রেভইয়ার্ড । একটা নিরীহ গোবেচারা ধরনের সমাজ এখন ক্ষুব্ধ ক্রূর! গাছগাছালিময় আনআরবান প্রায় গ্রাম্য ঢাকা এখন কসমোপলিটান। আরবানাইজড। সাঁই সাঁই করে হাইরাইজ দাঁড়িয়ে গেছে। ঝাঁচকচকে জেল্লা আর বিত্ত-বৈভবের প্লাবনে জঞ্জালময় ঢাকার রাজপথ প্লাবিত। চারিদিকে সুখের পায়রা পতপত করে উড়ছে। সুখ,স্বস্তি আর শান্তির দেবদূতেরা ডলার-পাউন্ডের ভেলায় চরে এই দেশে নেমেছে। তাদের শুভাগমনে সারা দেশে দুধের নহর আর ক্ষীরের পাহাড় গড়ে উঠেছে! সেই নহর আর পাহাড়ের কোণায় শেয়াল-কুকুরের মত একজিস্ট করে চলেছে কিছু পোকামাকড়! খুব কাছে গিয়েই শুধু ঠাওর করা যায়-তারা মানুষ! হোমো স্যাপিয়েন্স! এদেরকে ডাম্প করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগুনোর খতিয়ান রাখায় ব্যস্তসমস্ত হচ্ছেন পরিসংখ্যানবিদগণ। ডাটাবেজে ডিজিট উঠছে.....জিডিপি-সাড়ে পাঁচ! কিছু দিন পরেই ছয়...সাত! দেশকে সাঁই সাঁই করে টার্বো গতিতে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান কারিগর ধরা হয় তৈরি পোশাক শিল্পকে। আসলেই, কি দেয়নি এই গার্মেন্ট? একটা রাইজিং ক্লাস দিয়েছে, যারা কর্পোরেট কালচারকে ”সর্বজনগ্রাহ্য” করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একটা বিশাল সংখ্যক হা-ভাতে আনস্কিল্ড শ্রমিককে খাওয়া-পরা দিয়েছে।

পথের ধারের টাউট-বাটপাড়দের প্রায় বিনে পয়সায় নারী সম্ভোগের সুযোগ দিয়েছে! তালাসংস্কৃতি চালু করে ইঁদুরের মত পুড়িয়ে মানুষ কমানোর ত্বরিকা দিয়েছে। আর সরকারকে বুকে আঙ্গুল ঠুকে এত কোটি ডলার রেমিট্যান্স মওজুদ দেখানোর ক্ষমতা দিয়েছে। এত দেওয়ার পরও এই হতভাগা হা-ভাতে জাতির শনৈ শনৈ উন্নতির চাকায় আরো খানিকটা মবিল দিয়ে আরো সচল করার জন্য এবার চালু হয়েছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। এবার এই নতুন শিল্পের ল্যাজ ধরে পাপী-তাপী সব স্বর্গে পৌঁছে যাবার নিষ্কন্টক পথও পেয়ে যাব আমরা! “বছরে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনা আছে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। বিশ্ববাজারে বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি ডলারের বাজার উন্মুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ কোটি ডলারের বাজারও যদি বাংলাদেশ ধরতে পারে, তাহলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ২ থেকে ৩ শতাংশ। কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক দক্ষ ও অদক্ষ বেকার যুবকের। একটি সুষ্ঠু নীতিমালা করেই সরকার বদলে দিতে পারে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের চিত্র। আর এটি সম্ভব হলে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা উন্নয়নের পরশ দিয়ে পাল্টে দিতে পারবেন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারা। এই শিল্পের বিকাশে সব ধরনের…

২০ থেকে ৩০ কোটি সক্ষম মধ্যবিত্তের বাজার। ভারতীয় বা আরো বড় অর্থে দক্ষিণএশীয় এই বাজারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবী করছেন মনমোহন সিং। নব্বুই-এর দশকের শুরুতে নবুয়তপ্রাপ্ত মনমোহন ২০০৯-১৪ শাসনামলকে তার শ্রেষ্ঠ সময় মনে করছেন এবং বিস্তৃত কর্মপরিধির মধ্যে তার ক্ষমতার সব দিকের সুদৃঢ় বাস্তবায়ন চাইছেন।বিলগ্নীকরণের এক বিশাল কর্মযজ্ঞে নেমেছেন তিনি এবং সফলও হবেন বলেই মনে হচ্ছে। এর মধ্যেই আসিয়ানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি তিনি সেরে ফেলেছেন, সাফটা হোক না হোক তাতে কিছু যায় আসেনা; বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথে ভারত ব্রাজিল দক্ষিণআফ্রিকা ও চীনের, ইউরোপ আমেরিকার কৃষি ভর্তুকি নিয়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল, তার থেকে মনমোহন এবার সরে আসবেন বলেই মনে হচ্ছে। এই লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা রাউন্ডকে পুনরায় উজ্জীবিত করতে এর মধ্যেই ভারত পূর্ণশক্তিতে বাণিজ্যিক কূটনীতিতে নেমে পড়েছে এবং তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে গেছেন গত জুলাইয়ে ভারত সফরে আসা মিসেস ক্লিন্টন। একই মাসে জি-৮-এর রাষ্ট্রনায়করাও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে জি-৮ অতিথি সদস্য ভারতের সঙ্গে পূর্ণসদস্যদের চেয়েও বেশি মর্যাদা দিয়ে মনমোহনের সাথে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। আর এবার জি-৮-এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য চীনের রাষ্ট্রনায়ক উরুমচির জাতিগত দাঙ্গার কারণে সম্মেলনের শুরুতেই দেশে ফিরে যাওয়াতে ভারত পুরো সম্মেলন জুড়ে একধরনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। অনেক পর্যবেক্ষক এও ধারনা করছেন, অলিম্পিকের আগে আগে তিব্বতের দাঙ্গার মতোই উরুমকির দাঙ্গার সময়টিও পরিকল্পিতভাবেই ঠিক করা হয়েছে। সবকিছু মিলে এতো খোলা হাওয়া আর কখনো মনমোহনের গায়ে লাগেনি। এবারের মহামন্দার পর যে মহা মূল্যস্ফীতি আসবে তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার সব পরিকল্পনা এর মধ্যেই মনমোহন শেষ করে এনেছেন। খুব দ্রুতই এক অসাধারণ খরা পরিস্থিতির সুযোগে বহু নীচুতলার মানুষ যখন নিঃশেষিত হবেন তখন এক বিভৎস মজার আক্রার বাজার থেকে মুনাফা লুটবেন বৃহৎ বিলগ্নীকারীরা। সবকিছু সামলাবেন খোলা বাজারের শেষ নবি অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। হ্যাঁ, তিনিই হবেন খোলা বাজারের শেষ নবি; এরপর খোলা বাজার আর থাকবে না সেকথা আমি বলছি না, কিন্তু এরপরে আর নবির দরকার হবে না; খোলা বাজারের ইমাম পুরোহিতরাই তখন সব সামলাতে পারবেন, যেমন এখন ধর্মের ইমাম পুরোহিতরাই ধর্ম সামলাচ্ছেন।

বাঙালি কবে থেকে ব্যাপারী হয়েছে সেই হাল সাকিন মেলে না। কিন্তু বাঙালি যে ব্যাপারী হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। আগে কেউ ব্যাবসা-বাণিজ্য নিয়ে দরকষাকষি করলে, কিংবা কিপ্টেমি করলে বলা হতো-মেড়োর স্বভাব পেয়েছে! মেড়ো, অর্থাৎ উত্তর প্রদেশের বা মধ্য প্রদেশের মাড়োয়ারি সম্প্রদায় এই ব্যবসা-বাণিজ্যে এতদিন একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিল। সে নিয়ে বাঙালির সংস্কৃতিতে অনেক প্রবাদও চালু আছে। একাত্তরের পর মাড়োয়ারি আর বিহারিদের দখল থেকে বাণিজ্য মুক্ত হবার পর পরই সেখানে উঠতি বাঙালি বাবু আর সায়েবদের রমরমা। তারও অনেক পরে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী গুলো ধীরে ধীরে সেই বাঙালির ছোট ছোট ব্যাপার ক্ষেত্রগুলোর দখল নিতে থাকে। বাঙালি অন্য সবকিছুর মতই একটু পরে গা-করে! একটু দেরিতে বোঝে। কিন্তু নব্বই দশকে সারা বিশ্বজুড়ে গ্লোবালাইজেশনের নামে বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়াকরণের যে মচ্ছব শুরু হয় তার ভবিষ্যৎ ফলাফল কি হতে পারে সেটি বাঙালির চঞ্চল মস্তিষ্কে খেলেনি। তাই তারা ট্যাঁপোও করেনি। যারা দুপাতা লেখা-লেখি করেন তারা এনিয়ে কিছু প্রতিবাদের চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু তাও যথেষ্ট ছিল না। ফলে যা হবার তাই-ই হলো। বাংলাদেশ বেগম জিয়ার পারিবারিক সরকারের জমানায় হুট করেই ‘গ্যাট’ চুক্তিতে স্বক্ষর করে বসল! এখানে একটা তথ্য দেওয়া প্রাসঙ্গিক হবে- ভারতে যখন গ্লোবালাইজেশনের নামে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই তারা (ভারত সরকার) একজন বিচারপতি মিঃ ডাঙ্কেল কে দায়িত্ব দিলো এই বিশ্বায়ন চুক্তির ভাল-মন্দ বাছ-বিচার করতে। এটার নাম হলো ‘ডাঙ্কেল প্রস্তাব’। তখন এই প্রস্তবনাটি তারা দেশের একবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিল। রেডিও টিভি, সিনেমা, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে তারা গ্রামের মানুষদের বিশ্বায়নের সুফল-কুফল দুই-ই বোঝাতে লাগল। টানা দুই বছর প্রচারের পর তারা সিদ্ধান্তে আসল যে, বিশ্বায়ন চুক্তি ভারতের আভ্যন্তরীন বাজারের জন্য শুভ নয়। এবং বলা বাহুল্য তারা ওই চুক্তি স্বক্ষর করেনি! আগেই বলেছি, আমাদের খালেদা-নিজামি সরকার অত ধুনপুনের ধার ধারেনা। তারা রাতারাতি গ্যাট নামের চুক্তি স্বাক্ষর করে বসল। আসলে এইসব চুক্তিটুক্তি স্বাক্ষর মানেই কাড়ি কাড়ি টাকা! আর আমাদের মত আবালঅধ্যুষিত সাধারণে ওসব ভাল-মন্দের বিচার করার কে আছে? পাবলিককে অত গোনারই বা কি আছে! তো চুক্তি স্বাক্ষরের পর আমপাবলিক এতে তেমন খারাপ কিছু দেখলোও না। বেশ। তার কয়েক বছর পর থেকেই অবশ্য দেখছে! দেখছে শুধু না, অস্থিমজ্জায় দগদগে ঘা নিয়েই দেখছে!…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.