কর্নেল তাহের যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তা থেকে প্রচলিত সেনা অফিসারদের ভাব-মানস থেকে তাঁর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা যায়। বঙ্গবন্ধু ‘ডেপুটি চীফ অব স্টাফ’ এর নতুন পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে নিয়োগ দেন। তারপরও জিয়ার নানা তৎপরতার সংবাদ কানে আসায় বঙ্গবন্ধু জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে প্রেষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এবং পূর্ব জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এখন জানা যাচ্ছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সেনা ষড়যন্ত্রে পরিবার-পরিজনসহ জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .) কর্নেল তাহের যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তা থেকে প্রচলিত সেনা অফিসারদের ভাব-মানস থেকে তাঁর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা যায়। বাংলাদেশের নব প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীতে তার বদলে জেনারেল শফিউল্লাহ্কে সেনা প্রধান নিয়োগ করায় জিয়া ছিল অসন্তুষ্ট। বঙ্গবন্ধুও তাঁর এই মনোভাবের কথা জানতেন। তাই ব্যতিক্রম হিসেবে বঙ্গবন্ধু ‘ডেপুটি চীফ অব স্টাফ’ এর নতুন পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে নিয়োগ দেন। তারপরও জিয়ার নানা তৎপরতার সংবাদ কানে আসায় বঙ্গবন্ধু জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে প্রেষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এবং পূর্ব জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় জিয়া আওয়ামী লীগের নানা স্তরের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে এই তদবির শুরু করেন, যাতে তাকে সেনাবাহিনীতে রাখা হয়। তার এই মিশনে তিনি সফল হয়েছিলেন। এখন জানা যাচ্ছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সেনা ষড়যন্ত্রে পরিবার-পরিজনসহ জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, শফিউল্লাহ এবং সমগোত্রীয় অফিসাররা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ভবিষ্যত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিজেদের ক্ষমতার ভিত পাকা করার জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আদলে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্রিগেডগুলোই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোড়া পত্তন করে। ঐ তিন অফিসারই ১৫ আগস্ট-এর কালরাতে সেনাবাহিনীর তিন শীর্ষ পদে সমাসীন ছিলেন। কিন্তু জাতির জনক এবং দেশের রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি সেনাবাহিনী থেকে পৃথক যে, রক্ষীবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল তার হেড কোয়ার্টার বঙ্গবন্ধুর বাসগৃহ ৩২নং থেকে খুবই কাছে থাকা সত্বেও মুষ্টিমেয় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তারা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। ১৯৭২-এর ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে তাহের তাঁর পদত্যাগ পত্রে পাকিস্তানী আদলে গড়ে তোলা জনবিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র ও ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তাহেরকে সেনাবাহিনী ছেড়ে যেতে হয়েছিল আর যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা রয়ে গেলেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকালে সেনাবাহিনীর ‘চীফ অফ স্টাফ’ ছাড়া বাকি ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং এমনকি রক্ষীবাহিনীর কর্তৃত্বে ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত…

প্রশাসন যন্ত্র সেই পুরোনো ব্যক্তিরাই চালান। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তারাই। যে সামরিক অফিসার পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য ছিলেন সচেষ্ট, তিনি আজ আরও উচ্চপদে সমাসীন। যে পুলিশ অফিসার দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে সোপর্দ করেছেন পাকিস্তানীদের হাতে, তিনি আবার মুক্তিযোদ্ধদের নামে হুলিয়া বের করতে ব্যস্ত। যে আমলারা রাতদিন খেটে তৈরি করেছে রাজাকার বাহিনী তারা মুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরী দিয়ে দয়া প্রদর্শনের অধিকারী। যে শিক্ষক দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারেননি তিনিই আজ তরুণদের শিক্ষা দেয়ার গুরু দায়িত্ব বহন করেছেন। পরিকল্পনা বিভাগের যে কর্মীকে শোষণের পরিকল্পনা শেখানো হয়েছে বছরের পর বছর, তিনিই এখন সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পরিকল্পনা তৈরি করেন। যুদ্ধ চলাকালে যারা পাকিস্তানীদের হয়ে প্রচারণায় মত্ত ছিলেন, ১৬ ডিসেম্বর-এর পর তারাই ভোল পাল্টে সংস্কৃতির মধ্যমণি হয়েছেন।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর...) গৌহাটি সামরিক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কক্ষ। জীবন শঙ্কা এখনও কাটেনি। এর মধ্যে আহত হওয়ার চারদিনের মাথায় ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে রণক্ষেত্রে ছেড়ে আসা তার প্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তাহের একটি পত্রের ডিকটেশন দেন। আমি তার কথা শুনে তা লিখি। তার কিছু অংশ, “কামালপুরে কিছুক্ষণের জন্য যা দেখেছি তা অপূর্ব। তোমরা সম্মুখ যুদ্ধেও যে রণকৌশলের পরিচয় দিয়েছ তা যুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। কামালপুরের যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ও অনন্য রণকৌশলের স্বাক্ষর। তোমরা নিয়মিত বাহিনীকেও হারিয়ে দিয়েছে। যতোদিন না আবার আমি তোমাদের মধ্যে ফিরে আসি, আশা করি সংগ্রাম চালিয়ে যাবে সাফল্যের সাথে। . . . তোমরা যুদ্ধ করছো জনসাধারণের জন্য। বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, জনগণকে অভাব, দুঃখ, অশিক্ষা থেকে মুক্ত করা এ যুদ্ধের লক্ষ্য। তোমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে যেন জনসাধারণের মধ্যে সেই লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলার অগনিত কৃষক যারা দেশের সর্বপ্রধান শ্রেনী তাদের মুক্তির জন্য এ যুদ্ধ। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে মুক্তির আলো দেখাও, তাদেরকে শিক্ষিত করো, যেন স্বাধীন বাংলাকে তারা একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। যখনই তোমরা কারো বাড়ীতে আশ্রয় নাও, তোমাদের উচিত তাদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করা। এ কাজ তোমাদের কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম করবে এবং তারা পরিস্কার বুঝতে পারবে তোমরা কাদের জন্য যুদ্ধ করছো। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ জুলুম করে, মেয়েদের সম্ভ্রম নষ্ট করে, তবে তাদের জনসাধারণের দ্বারা বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে দ্বিধা করবে না। . . . তোমরা তরুণ। তোমরা একটি পবিত্র ইচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে নেমেছো। বাংলাদেশ তোমাদের জন্য গর্বিত। মনে রাখবে, বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব তোমাদের। জয় বাংলা। মেজর আবু তাহের”। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের দশম খণ্ডে সশস্ত্র সংগ্রাম (২) এ সন্নিবেশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাহেরের সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরবো: “সামরিক দিক থেকে ময়মনসিংহের চাইতে টাঙ্গাইল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ময়মনসিংহ পাশে রেখে কামালপুর থেকে শেরপুর-জামালপুর-টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা পৌঁছানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করলাম। রংপুর এবং বগুড়া ৭ নং সেক্টরের অধীনে থাকলেও যোগাযোগের সুবিধার জন্য ঐ সেক্টরের অনেক অপারেশন আমার নেতৃত্বেই হয়েছে। আগস্ট মাসেই টাঙ্গাইলে যুদ্ধরত কাদের সিদ্দিকী…

২৯ অক্টোবর ২০১০, চটগ্রামে অনুষ্ঠিত 'কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা' হিসেবে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্নেল তাহের এর অনুজ ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। মুক্তাঙ্গন এর পাঠকদের জন্য বক্তৃতাটি পাঁচ পর্বে ভাগ করে উপস্থাপন করা হল।

[২৯ অক্টোবর ২০১০, চটগ্রামে অনুষ্ঠিত 'কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা' হিসেবে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্নেল তাহের এর অনুজ ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। মুক্তাঙ্গন এর পাঠকদের জন্য বক্তৃতাটি পাঁচ পর্বে ভাগ করে উপস্থাপন করা হল] ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব *** *** *** “আমি একটি সোনার বাংলার চিত্র দেখেছি। এই চিত্র কল্পনায় কেটেছে বহু বিনিদ্র রাত্রি। এই চিত্র আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে, উত্তেজিত করেছে। এই কল্পনায় বার বার মনে হয়েছে জনগণের সঙ্গে একাত্ব হয়ে আমি এক অসীম শক্তির অধিকারী। সমস্ত জীর্ণতাকে ভেঙ্গে ফেলে এই চিত্রকে রূপ দিতে সক্ষম। এ চিত্র আমাকে সাহস যুগিয়েছে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমি জনগণের সাথে একাত্ব হয়েছি। বাংলার মানুষের নিবিড় সংস্পর্শে এসে আমি দেখেছি তাদের উদ্যম, কষ্ট সহিষ্ণুতা ও দেশপ্রেম। আমি বুঝেছি বাংলার এই শিক্ষাবঞ্চিত, প্রতারিত জনগণই হচ্ছে প্রকৃত প্রগতিশীল। তারাই বাংলার সুপ্ত শক্তি। বাংলার এই জনগণকে আমি আমার চিত্র কল্পনায় অংশীদার করতে চাই। আমি চাই তারা গভীরভাবে এই চিত্র উপলব্ধি করুক। রোমাঞ্চিত হোক, উত্তেজিত হোক। তাদের শক্তির পূর্ণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যাদুঘরে বন্দী ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’ সোনার বাংলাকে মুক্ত করুক” মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে’ নামের একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম উপরের কথাগুলো লিখেন। ভূমিকায় বলা কথাগুলোর পর তাহের তাঁর চিত্রের সোনার বাংলার একটি ছবি উপস্থাপন করেছিলেন প্রবন্ধে। তাঁর আঁকা চিত্রের মূল উপজীব্য নদী ও মানুষ। সোনার বাংলার রূপ-কল্পটি তিনি শেষ করেছেন এই বলে, “নদীর বাঁধের উপর গড়ে ওঠা বাংলার এ জনপদ একটি নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী। সুশৃঙ্খল এই জনপদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রেরণা দেয় সমগ্র পৃথিবীকে”। আমরা দেখবো, বাংলাকে স্বাধীন করে সোনার বাংলায় রূপ দিতে তাহের তাঁর কিশোর বয়স থেকে স্বপ্ন দেখেছেন। তা লালন করেছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছেন। ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ - এই আকুতি, বেদনা এবং তা থেকে সঞ্জাত ক্ষোভ, প্রতিজ্ঞা ও স্থীর সংকল্প স্কুল জীবন থেকেই তাহেরকে আলোড়িত করেছে। এ প্রসঙ্গে মায়ের কাছ থেকে শোনা ১৯৫২ সালের একটি ঘটনার কথা বলি: আমাদের…

গত ১৫ই আগস্ট ছিল বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন, ১৯৭৫ সালের একই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে একদল সামরিক কর্মকর্তার আক্রমণে নিহত হন[..]

গত ১৫ই আগস্ট ছিল বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন, ১৯৭৫ সালের একই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সপরিবারে একদল সামরিক কর্মকর্তার আক্রমণে নিহত হন। জন্ম মৃত্যুর উপর আমাদের কারো নিয়ন্ত্রণ নেই, বিখ্যাত কারো মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার জন্মদিন হলে আমি জন্মদিন উদযাপন করতে পারবো না এমন কোন কথা নেই। কিন্তু উদযাপনের ব্যাপারটা যখন সারা দিন ব্যাপী গোটা পাঁচেক কেক কেটে করা হয় তখনই ব্যাপারটা চোখে লাগে। Wikipediaতে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া জন্ম নেন ভারতে, ৪৬ সালে। তাঁর পরিবার দেশভাগের পরে বাংলাদেশে (মানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) চলে আসেন। দেশভাগের টানাপোড়েনে তাঁর পরিবারের পক্ষে খালেদা জিয়ার জন্মদিন ঘটা করে পালন করা সম্ভব ছিল না, এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন নিয়ে কোন কথাও শোনা যায়নি। জন্মদিন উদযাপন একটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যাপার, খালেদা জিয়াও তাঁর জন্মদিন নিভৃতেই উদ্‌যাপন করেছেন বলে মনে হচ্ছে। ১৯৯৬ সাল, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। অবশ্য সে পালনের ব্যাপারটা বিভিন্ন অতি উৎসাহী ব্যক্তির কল্যাণে মোটামুটি ‘উদযাপনের পর্যায়েই পড়ে। এই উদযাপনের সাথে যুক্ত হয় খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন। দলের নেতা কর্মী পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিন স্তর বিশিষ্ট কেকসহ তাঁর হাস্যোজ্জল ছবি পত্র পত্রিকায় দেখা গেল। পুরো ব্যাপারটা করা হলো বঙ্গবন্ধুর ইমেজকে defy করার জন্য, মানে বঙ্গবন্ধু স্রেফ একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, তাঁর মৃত্যুদিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের কিছু নেই, ১৫ই আগস্ট নিতান্তই সাধারন একটা দিন, এই দিনে জন্মদিন উদ্‌যাপন করাই যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টে বঙ্গবন্ধু বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুবরণ না করে জ্বরে ভুগে বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মরতে পারতেন। কোন ব্যক্তি বিশেষের মৃত্যুর উপর কোন জাতির ভাগ্য নির্ভর করে না, কিন্তু বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে চলা সেই বিশেষ দিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, কারণ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথে তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে মেরে ফেলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালে একটা ছুতো ধরে তাঁর পরিবারকে পাকিস্তানীরা সহজেই মেরে ফেলতে পারতো, যে কারণেই হোক এটা না করার মানবিকতাটুকু তারা দেখিয়েছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের একদল তরুণ সামরিক কর্মকর্তা, যাদেরকে তিনি পুত্রবৎ স্নেহ করতেন, তারা তাঁকে, তাঁর গর্ভবতী পুত্রবধূ এবং শিশুপুত্রকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্কে গুলি করে মেরে ফেলে।…

গত ৩০ মে 'আমাদের সময়' পত্রিকায় একটি অদ্ভুত খবর প্রকাশিত হয়েছে। এও কি সম্ভব যে সরকারের আইন বিষয়ক 'বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টাগণ' ১৯৭৩ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত মূল ইনডেমনিটি আইনটির অস্তিত্বের ব্যাপারে অবগত নন? বিশ্বাস করা কঠিন, কিন্তু কিছুই অসম্ভব না। নাকি এই আইনটির উদ্দেশ্য হল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নতুন এক শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গকে দায়মুক্তি প্রদান?

গত ৩০ মে আমাদের সময় পত্রিকায় একটি অদ্ভুত খবর প্রকাশিত হয়েছে (মিডিয়া আর্কাইভে আপলোডকৃত)। খবরে প্রকাশ, আইন বিচার এবং সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে যার লক্ষ্য হবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা সংঘটিত সব ফৌজদারী অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি। শুধু মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বা প্রয়োজনে সংঘটিত অপরাধগুলোই এই দায়মুক্তির আওতায় পড়বে। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী: প্রায় ৪০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের অপরাধের দায়মুক্তি দিয়ে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সম্মুখ সমরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কিংবা এদেশীয় রাজাকারদের হত্যা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়াসহ যেসব অনিবার্য কাজ করতে হয়েছে এবং প্রচলিত আইনে যা অপরাধ তার দায় থেকে মুক্তি দিয়ে এ আইন প্রণীত হবে। জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ আইনসহ সংবিধানের বিভিন্ন বিধান কার্যকর করতে আরও প্রায় চল্লিশটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আইন কমিশনকে এসব আইনের খসড়া তৈরি করে সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। আইন কমিশন ইতিমধ্যেই এসব আইনের খসড়া তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়নি বলেই জামায়াত এখন ওই সময়ের কর্মকা ের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চাওয়ার সাহস দেখায়। এ আইন অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। রিপোর্টটিতে দেখা যাচ্ছে আইন কমিশনও ইতোমধ্যেই এই নতুন ইনডেমনিটি আইনটির খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। প্রকাশিত খবরটি যে কারণে অদ্ভুত তা হল, আজ থেকে প্রায় ৩৭ বছর আগেই এই সুনির্দিষ্ট বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি আইন প্রণীত হয়েছিল, যা এখনো বলবত। আইনটির নাম: The Bangladesh National Liberation Struggle (Indemnity) Order 1973 (P.O. No. 16 of 1973)। ১৯৭৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী তারিখে প্রণীত এই আইনটিকে ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ পর্যন্ত পুরো সময়টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য করা হয়েছে। সবার সুবিধার্থে ১৯৭৩ সালের সংক্ষিপ্ত এই আইনটির পুরোটাই এখানে উদ্ধৃত হল: WHEREAS it is expedient to provide for indemnity to persons in the service of the Republic and to other persons in respect of act done in connection with the national liberation struggle, the maintenance or restoration of order; NOW, THEREFORE, in…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.