ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও [...]

(ইহা শুষ্ক এবং নিশ্ছিদ্র ইতিহাস নহে; নিতান্তই ভালোলাগার এবং বিস্মিত হওয়ার কিছু ব্যক্তিগত উপাদান লইয়া ইহা রচিত। ভুলভ্রান্তি পাইলে নিজগুণে মার্জনা করিবেন) ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও। নিজেদের ব্র্যান্ডিং করেছিল তারা অসাধারণভাবে, যদিও ওই শব্দের মানেটা নিশ্চয়ই তারা জানতো না। আজকাল যেমন হোন্ডা বলতে বুঝি মটরসাইকেল, কোকা-কোলা বা সংক্ষেপে কোক বললে বুঝি কোমল পানীয় বা প্যাম্পার্স শব্দটা হয়ে উঠেছে বাচ্চাদের ডায়াপারের প্রতিশব্দ, তেমনি তাদের সঙ্ঘটির নাম, তথা নামবাচক বিশেষ্যটি ইতিহাসের পাতায় তো বটেই, একটি টিউটোনিক/ জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীজাত ভাষার শব্দসম্ভার এবং অভিধানে চিরকাল অক্ষয় হয়ে থাকার দাবি নিয়ে রূপ নিয়েছে জাতিবাচক বিশেষ্যে, অর্থও ‘ধর্মীয় গোষ্ঠী’ থেকে হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আততায়ী’। ভাষাটি ইংরেজি, শব্দটি এ্যাসাসিন (assassin)।ইতিহাসের পাতায়, পরিহাসমূলকভাবেই বোধকরি, গোষ্ঠীটির সাথে এমন দু’জনের নাম জড়িয়ে আছে, একজনের প্রত্যক্ষভাবে, অন্যজনের পরোক্ষভাবে, যাঁদের একজন কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী এবং গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা, অন্যজন জগদ্ব্যাপী শিক্ষিত লোকেদের কাছে একজন কবি এবং বিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। আর দু’জনের মাঝে যোগসূত্র বেঁধেছিল সেকালের এক অনন্য নগরী, যাকে কবিবরটি প্রিয়ার একটি গালের তিলের বিনিময়ে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন (সাথে আরো একটিকেও অবশ্য)। সমরখন্দ। কবিবর এবং বিজ্ঞানী ওমর খৈয়ামের সুখ্যাত কর্মভূমি। ওমরের জন্ম বস্তুত নিশাপুরে। ‘খৈয়াম’ কথাটা মূলত ‘তাঁবু প্রস্তুতকারী’ বোঝায়। সম্ভবত, ওমরের পিতৃপুরুষ ওই কাজ করতেন, কমপক্ষে তাঁর পিতা ইব্রাহিম, যদিও তিনি নিজে তাঁর চতুষ্পদীতে ওই পদবি নিয়ে বেশ ব্যঙ্গ করেছেন। ধরা হয় মোটামুটি ১০৭২ খ্রিস্টাব্দে ওমর পা রাখেন এই শহরে, যা তখন ত্রানসাজোনিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। রাজসিংহাসনে তখন তুরুক বংশধর নাসর খান। বলা হয়, ওমরের হাতে সমরখন্দের কাজি আবু তাহের তুলে দেন একটি সাদা পাতার বই, যা কালক্রমে বিশ্বের বহুলপঠিত বইয়ের একটি হয়ে উঠবে। তাই, ওটি পরিচিতই হয়ে উঠেছিল ‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’ নামে। মুসলিম সাম্রাজ্যে তখন সর্বাধিক ক্ষমতাধর নৃপতি তুর্কি সেলজুক বংশের অধিপতি আলফ আরসালান, বয়েস যাঁর প্রায় ৩৮, আর যাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত কাবুল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত। এমনকি পূর্ব রোমের সম্রাট রোমেনাস দাইওজেনুসও হার মেনেছেন তাঁর কাছে, বাইজেন্টাইন সম্রাটও পরাভূত। অথচ, কাছের শহর সমরখন্দ…

আমরা গরমের দেশের মানুষেরা সহজেই উত্তেজিত। রাজনীতি, মেয়েঘটিত, আর ধর্ম হলো চরম তরম উত্তেজিত হওয়ার মতো প্রিয় বিষয় আমাদের। আগাপাশ তলা না ভেবে হুঙ্কার ছেড়ে ঝাপিয়ে পড়ি যুদ্ধে। কোথায় কে একখান কার্টুন আঁকলো তাই নিয়ে মার মার কাট কাট, সালমান রুশদী কিংবা তাসলিমা কিছু লিখেছে, কল্লা কাটো। এরমধ্যে অনন্তকাল থেকে পাশাপাশি থাকার জন্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যতার কারনে এ উপমহাদেশে হিন্দু - মুসলিম বৈরীতা চার্টের টপ লিষ্টেড আইটেম যাকে বলে। কিন্তু আদতে ধর্মগুলোর মধ্যে অমিলের থেকে মিলই বেশি। হিন্দু মুসলমান গুতাগুতি কেনো করে সেই নিয়ে আজ একটু ধর্ম রংগ। দুই দলের ধর্মান্ধরাই একে অন্যের বাড়িতে অন্ন গ্রহন করেন না। দু'দলের একই সমস্যা, জাত যাবে। একদল হালাল ছাড়া খাবেন না আবার অন্যদল মুসলমানের ছোঁয়া বলে খাবেন না। শুদ্ধ হওয়ার জন্য দু'দলের লোকেরাই উপবাস করে থাকেন। দু'দলেরই পাপ মোচন করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ও সময় আছে। বিশুদ্ধ পানিও আছে। একদলের আছে জমজমের পানিতো অন্যদলের আছে গঙ্গাজল। দু'দলই তাদের পবিত্র কাজের সময় সেলাই করা বস্ত্র পরিধান করেন না। মুসলমানরা হজ্বের সময় আর হিন্দুরা পূজার সময়। পশু উৎসর্গে ধর্মের ভূমিকা এ উপমহাদেশের দু'দলের কাছেই অপরিসীম। স্বর্গে যাওয়ার জন্য দু'দলই নিরীহ পশুদের উৎসর্গ করে থাকেন কিন্তু ভিন্ন পদ্ধতিতে। পদ্ধতি ভিন্ন হলেও বস্তু একই। যদিও মুহম্মদ, রাম, কৃষ্ণ সবাই শান্তির বানী প্রচার করার দাবী করেছেন কিন্তু তারা শান্তির চেয়ে অশান্তি থুক্কু যুদ্ধই করেছেন বেশি। এই তিনজনের জীবনেই নারীদের অপরিসীম ভূমিকা ছিল, বৈধ এবং অবৈধ পন্থায়। দুই ধর্মেই পুরুষের নীচে মেয়েদের স্থান, স্বামী পরম গুরু। দু'দলই পাপমোচনের আশায় হুজুর কিংবা পূজারীকে অজস্র দান ধ্যান করে থাকেন। তার বাইরে কেউ মসজিদ বানানতো কেউ মন্দির। মৃত্যুর পর অন্তত সুখ, সাথে ঊর্বশী, হুর, আঙ্গুর বেদানার প্রতিশ্রুতি উভয়েই দেন আমাদেরকে। দু'দলেরই ধর্মানুভূতি অত্যন্ত প্রখর। ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা আর শ্লীলতাহানি করা একই পর্যায়ের অপরাধের স্তরে পরে। কথার আগে তাদের ছুরি চলে। ভন্ড নাস্তিক আর আঁতেলে দল ভর্তি। সবারই রক্ত লাল আর মরে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক কম জানা সত্বেও তাদের ধর্মের নামে এই অপরিসীম যুদ্ধ চলছে এবং চলতেই থাকবে। তানবীরা ১৪.০১.১০

মূলত ‘অনুমান’ কোন তুচ্ছ বিষয় নয়। এর আশ্রয় না নিয়ে মানুষের এক মুহূর্তও চলে না। অনুমান করার শক্তি ক্ষীণ বলেই ইতর প্রাণী মানুষের চেয়ে এত পিছনে এবং মানুষ এত অগ্রগামী তার অনুমান করার শক্তি প্রবল বলেই। ভবিষ্যতের চিন্তা মাত্রেই অনুমান, কতক অতীতেরও। আর ভবিষ্যত ও অতীত বিষয়ের চিন্তা ও অনুমান করতে পারে বলেই মানুষ ‘মানুষ’ হতে পেরেছে। - আরজ আলী মাতুব্বর (অনুমান, ১৯৮৩) মাতুব্বর তার অনুমান নামক পুস্তকটির ভূমিকাতে এভাবেই মানুষের অনুমান ক্ষমতার গুরুত্বকে অনুধাবন করেছেন। শিল্প, সাহিত্য, দর্শন এমনকি বিজ্ঞানের জগতেও মানুষের সৃষ্ঠিশীলতার অন্যতম নিয়ামক তার অনুমান শক্তি। অনুমান শব্দটিকে যত দুর্বল ও লাগামছাড়া মনে হয় এটি আসলে তা নয়, কারণ মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী, প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী, তার অনুমান যুক্তি নির্ভর, যুক্তিহীন অনুমান সে নিজের স্বার্থেই করতে চায়না। যুক্তিনির্ভর অনুমানকে উৎস ধরেই দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বিকশিত হয়, তবে আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে অবশ্য পরীক্ষনের মাপকাঠি পেরোতে হয় অনেক ক্ষেত্রেই। প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী হওয়া সত্ত্বেও জীবন দর্শনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ কেন যুক্তির আশ্রয় না নিয়ে অন্ধবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তা নৃতাত্বিক ও মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের বিষয়, আমি এখানে সে আলোচনা করার সাহস পাইনা। আমরা বরং আরজ আলী মাতুব্বর রচিত ‘অনুমান’ পুস্তকটি নিয়ে খানিকটা আলোচনা করব। ‘অনুমান’ পুস্তকটি যুক্তিনির্ভর ‘অনুমানে’র, প্রকৃত অর্থে ‘বিশ্লেষনে’র। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই পুস্তকে মাতুব্বর যে অনুমানগুলো করেছেন সেগুলো মূলত নৃতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ। আরজ আলী মাতুব্বরের ‘সত্যের সন্ধানে’ বা ‘সৃষ্ঠিরহস্য’ নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়েছে ‘অনুমান’ নিয়ে তা হয় নাই। অথচ অনুমান পুস্তকটি আরজ আলী মাতুব্বর রচিত অন্য যেকোন পুস্তকের চেয়ে বেশি বৈচিত্রধর্মী। ‘সত্যের সন্ধানে’ জিজ্ঞাসা নির্ভর দর্শনের পুস্তক, টমাস পেইন রচিত ‘The Age of Reason’ এর সাথে এর তুলনা করা চলে। অন্যদিকে ‘সৃষ্ঠিরহস্য’ তথ্যনির্ভর প্রবন্ধ পুস্তক, জিজ্ঞাসা নির্ভর দর্শন এখানেও উপস্থিত। এই পুস্তকগুলো তথ্য ও যুক্তি তর্ক নির্ভর, সাহিত্যের শিল্পগুন এখানে খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। ‘অনুমান’ই একমাত্র পুস্তক যাতে আরজ আলী মাতুব্বরের লেখার শিল্পগুনের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। আগের পুস্তকগুলোর বিনয় এখানে অনেকটাই অনুপস্থিত, তিনি এখানে নায়ককে ভিলেন বানিয়েছেন, বানিয়েছেন ভিলেনকে নায়ক, রম্য করেছেন, খোঁচা দিতে ছাড়েননি, ফিকশন তৈরি করেছেন, ধারণ করেছেন লোকায়ত বাঙলা সাহিত্যের বিপ্লবী চেতনাকে। আগেই…

তিনি শুধু প্রগতিশীল সমাজের সেনাপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশি চিন্তার একজন অভিভাবকও। এটা বুঝতেও আমাদের সময়ের দরকার হতে পারে। একটা ধাবমান অন্ধকার ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল। [...]

'সৃষ্টি করো সেই সব যা দেখে জনগণ বিদ্ধ করবে বিদ্রূপে। আর সেটুকুই হলে তুমি।' -- জাঁ ককতো আমরা কেউই আশা করিনি হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪) এত অচিরাৎ মৃত্যুকে গ্রহণ করবেন। আমরা বলতে যারা তাঁকে সেনাপতি জ্ঞান করতাম। বস্তুত পক্ষে তিনি শুধু প্রগতিশীল সমাজের সেনাপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশি চিন্তার একজন অভিভাবকও। এটা বুঝতেও আমাদের সময়ের দরকার হতে পারে। একটা ধাবমান অন্ধকার ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যস্থল। সাহিত্যের ইতিহাস মূলত অজ্ঞানতা আর অন্ধকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইতিহাস। আর সমস্ত আবিষ্কার ভয় থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য। আগুন জ্বালানোর পর মানুষের ভয় অনেকখানি কেটে যায়। আলো সবসময় অন্ধকারের শত্রু। তবে আজাদের সময়ের সব চাইতে বড় অন্ধকার হচ্ছে অজ্ঞানের অন্ধকার। এটা প্রতিক্রিয়াশীল এবং সংক্রামক। উগ্র এবং আদেশপ্রবণ। অনেকটা দানবীয় তার স্বভাব। যার বিরুদ্ধে তিনি লড়েছিলেন। ভাবি যে হুমায়ুন আজাদ কি জানতেন না তাঁর শত্রুর অপশক্তি ও দেহকাঠামো সম্পর্কে? যদি তিনি তা জানার পরও সম্মুখসমরে লড়াই করতে মনস্থির করে থাকেন এবং লড়াই চালিয়ে যান আমৃত্যু, তাহলে তাঁকে অসম্ভব সাহসী, সৎ আলোকপ্রাপ্ত শহিদ সেনাপতি হিসেবে তকমা মারা যায়। হুমায়ুন আজাদের আঘাতের প্রক্রিয়া এত সরাসরি এবং এত সঠিক ছিল যে তাঁকে একমাত্র ফরাসি চিরবিদ্রোহী দার্শনিক মহাত্মা ভলতেয়ারের সাথেই তুলনা করা চলে। আর আমার বিশ্বাস, এই যুদ্ধে নামার আগেই তিনি মৃত্যুকে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সক্রাতেসকে জানতেন, জানতেন ভলতেয়ারকে, জানতেন গ্যালিলিওকে, জানতেন হাইপেশিয়াকে। তাঁর স্থান অন্ধকারের বিরুদ্ধে এই সব সৈনিকদের কাতারে খোদাই হয়ে গেছে। যদিও তাঁর প্রায় উপন্যাসে তিনি যৌনতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন আধুনিকতার নাম করে, তবুও মনে হয় তিনি মেজাজে মার্ক্সীয় ছিলেন। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে যেখানে লেখক-সাহিত্যিকরা নব্য সিনিসিজমে মেতে উঠেছেন, যখন তাঁরা পৃথিবীব্যাপী বোমার শব্দে জেগে উঠে বলেছেন, 'অনেক ঘুমাতে চেয়েছি আমি' এবং তারপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছেন, সেখানে তিনি জেগে ছিলেন এবং নির্ভয়ে বিহার করে চলেছেন এই পোড়োজমিতে এবং হাঁকিয়ে চলেছেন সম্মুখ-রণাঙ্গনে। তিনিও তো পারতেন প্রথম দুনিয়ার কোনো দেশের পুঁজির গোলামি করতে বা পালিয়ে যেতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারি যে তিনি নিজেকে একা মনে করতেন না, তিনি নিজেকে সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার অংশ মনে করতেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, 'অন্ধ হলেই প্রলয়…

আজকের বিশ্বে ধর্মবিশ্বাস আর আইডেন্টিটি আবার একাকার হওয়া শুরু করেছে মনে হয়। সনাতন সব নীতি ও মূল্যবোধ যখন বিশ্বায়িত পুঁজি, প্রযুক্তি আর জীবিকার সংগ্রামের কাছে পরাজিত হয়ে ভেসে যাচ্ছে, তখন ধর্মকেও এর আদলে বদলে যেতে হয়। পশ্চিমা দুনিয়ায় খ্রীস্টধর্ম অনেক আগেই এই চাপে বদলে গেছে। রিফর্মেশন-এনলাইটেনমেন্ট-এর যুগে। ট্রিনিটি-তে ঈমান থাক বা না থাক, শ্বেতবরণ নীলচক্ষু যীশু এবং তার পিতা ঈশ্বরকে তারা ছাড়ে নাই আত্মপরিচয়ের ঠেকা আছে বলে। ধর্মবোধ এখানে আত্মপরিচয়ের মধ্যে দ্বান্দিকভাবে মিলে গেছে। [...]

১. আজকের বিশ্বে ধর্মবিশ্বাস আর আইডেন্টিটি আবার একাকার হওয়া শুরু করেছে মনে হয়। সনাতন সব নীতি ও মূল্যবোধ যখন বিশ্বায়িত পুঁজি, প্রযুক্তি আর জীবিকার সংগ্রামের কাছে পরাজিত হয়ে ভেসে যাচ্ছে, তখন ধর্মকেও এর আদলে বদলে যেতে হয়। পশ্চিমা দুনিয়ায় খ্রীস্টধর্ম অনেক আগেই এই চাপে বদলে গেছে। রিফর্মেশন-এনলাইটেনমেন্ট-এর যুগে। ট্রিনিটি-তে ঈমান থাক বা না থাক, শ্বেতবরণ নীলচক্ষু যীশু এবং তার পিতা ঈশ্বরকে তারা ছাড়ে নাই আত্মপরিচয়ের ঠেকা আছে বলে। ধর্মবোধ এখানে আত্মপরিচয়ের মধ্যে দ্বান্দিকভাবে মিলে গেছে। ঊনিশ শতকের শেষ দিকে বিকশিত হওয়া ভারতীয় জাতীয়তাবাদগুলোর সমস্যাও ছিল এটা। এখনো কম্যুনিটি বা জাত আর জাতীয়তা আমাদর চোখে একাকার। ২. ভারতে বিজেপি বা জার্মান নাৎসিরাও কিন্তু ক্যাথলিসিজম ও আর্যবাদের মিশ্রণে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তি নির্মাণ করছিল। শিল্পায়ন ও তার ভিতের ওপর দাঁড়ানো সামরিক সক্ষমতা তাদের অভিলাষী করেছিল। আমেরিকায় বা ইউরোপের বাকি অংশে এটা এখনো কঠিন। তিনশ বছরের মানবতাবাদী সংগ্রাম, শ্রেণী সংগ্রাম ও পুরুষতন্ত্র ও বর্ণবাদবিরোধী ঐতিহ্য। ভারতেও একইসঙ্গে উপমহাদেশের সবচে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক চেতনা আছে, আবার এই ভারতই এখন ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণার শক্ত আশ্রয়। ইসলাম বাংলাদেশে মেইনস্ট্রিমে নাই, ভারত-পাকিস্তানে আছে। ৩. পশ্চিমা এলিট এমনকি গরিবদেরও আত্মপরিচয় নিয়ে সংকট এখনো জাগে নাই। সেখানকার গরিব ও কালো মানুষটিও সভ্য দুনিয়ার অহংকার আর ক্রাইস্টের ছত্রছায়া অনুভব করে জাতগর্ব উপভোগ করে। এই মনের জোর বাদবাকি বিশ্বে নাই তাদের মাজার জোর কম থাকার জন্য। । ফলে তাদের হয় জাতি বা ধর্মের কাছে ফিরতে হয় অথবা এসব ছেড়ে কাল্পনিক বিশ্বজনীনতার নামে সাদা-জুডিও-খ্রিস্টান-সাম্রাজ্যের মাস্তুলে লটকে থাকার নিয়তি নিতে হয়। তারা ইতিহাস-ভূগোল ও সংস্কৃতি থেকে বিতারিত বা পরিত্যক্ত হয়। আমাদের সুশীল সেকুলারদের বড় অংশই এই পথ ধরেছেন। মধ্যবিত্তের 'আধুনিক' অংশ কর্পোরেট পুঁজি ও তার বাজারের মধ্যে এতই আত্তীকৃত হয়ে গেছে যে, এদের কোনো প্রতিবাদ করার মতাই নাই। এরা বরং দেশ ছেড়ে যাবে অথবা দেশে মার্কিন বাহিনীকে স্বাগত জানাবে। এ অংশটির সুবিধাবাদীতাই তাদের ধর্মীয় বা সেকুলার পথে সংগ্রামী হতে বাধা দেবে। ৪. অন্যদিকে জামাতি ইসলাম বা ব্রাদারহুডের মতো যারা তারাও এক প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া ইসলামকে বিকশিত করছে। এদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ভিশন এটা প্রমাণ করে। এরা মোটাদাগে পরাশক্তি ও দেশীয় শাসকদের সঙ্গে কোলাবরেশন করে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.