(ইহা শুষ্ক এবং নিশ্ছিদ্র ইতিহাস নহে; নিতান্তই ভালোলাগার এবং বিস্মিত হওয়ার কিছু ব্যক্তিগত উপাদান লইয়া ইহা রচিত। ভুলভ্রান্তি পাইলে নিজগুণে মার্জনা করিবেন)
ইতিহাসের দীর্ঘতম অধ্যায় ধরে টিকে-থাকা হত্যাকারীর দল, যারা একতাবদ্ধ হয়েছিল ধর্মের নামে, আর শেষমেষ কোথায় যে মিলিয়ে গেল তেমন কোন হদিশ না রেখে, আজ তাদের কথা স্মরণ করতে চাই কিছুটা, শ্রদ্ধায় নয় অবশ্যই, নয় ঘৃণায়ও। নিজেদের ব্র্যান্ডিং করেছিল তারা অসাধারণভাবে, যদিও ওই শব্দের মানেটা নিশ্চয়ই তারা জানতো না। আজকাল যেমন হোন্ডা বলতে বুঝি মটরসাইকেল, কোকা-কোলা বা সংক্ষেপে কোক বললে বুঝি কোমল পানীয় বা প্যাম্পার্স শব্দটা হয়ে উঠেছে বাচ্চাদের ডায়াপারের প্রতিশব্দ, তেমনি তাদের সঙ্ঘটির নাম, তথা নামবাচক বিশেষ্যটি ইতিহাসের পাতায় তো বটেই, একটি টিউটোনিক/ জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠীজাত ভাষার শব্দসম্ভার এবং অভিধানে চিরকাল অক্ষয় হয়ে থাকার দাবি নিয়ে রূপ নিয়েছে জাতিবাচক বিশেষ্যে, অর্থও ‘ধর্মীয় গোষ্ঠী’ থেকে হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আততায়ী’। ভাষাটি ইংরেজি, শব্দটি এ্যাসাসিন (assassin)।ইতিহাসের পাতায়, পরিহাসমূলকভাবেই বোধকরি, গোষ্ঠীটির সাথে এমন দু’জনের নাম জড়িয়ে আছে, একজনের প্রত্যক্ষভাবে, অন্যজনের পরোক্ষভাবে, যাঁদের একজন কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদী এবং গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা, অন্যজন জগদ্ব্যাপী শিক্ষিত লোকেদের কাছে একজন কবি এবং বিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। আর দু’জনের মাঝে যোগসূত্র বেঁধেছিল সেকালের এক অনন্য নগরী, যাকে কবিবরটি প্রিয়ার একটি গালের তিলের বিনিময়ে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন (সাথে আরো একটিকেও অবশ্য)।
সমরখন্দ। কবিবর এবং বিজ্ঞানী ওমর খৈয়ামের সুখ্যাত কর্মভূমি। ওমরের জন্ম বস্তুত নিশাপুরে। ‘খৈয়াম’ কথাটা মূলত ‘তাঁবু প্রস্তুতকারী’ বোঝায়। সম্ভবত, ওমরের পিতৃপুরুষ ওই কাজ করতেন, কমপক্ষে তাঁর পিতা ইব্রাহিম, যদিও তিনি নিজে তাঁর চতুষ্পদীতে ওই পদবি নিয়ে বেশ ব্যঙ্গ করেছেন। ধরা হয় মোটামুটি ১০৭২ খ্রিস্টাব্দে ওমর পা রাখেন এই শহরে, যা তখন ত্রানসাজোনিয়া সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। রাজসিংহাসনে তখন তুরুক বংশধর নাসর খান। বলা হয়, ওমরের হাতে সমরখন্দের কাজি আবু তাহের তুলে দেন একটি সাদা পাতার বই, যা কালক্রমে বিশ্বের বহুলপঠিত বইয়ের একটি হয়ে উঠবে। তাই, ওটি পরিচিতই হয়ে উঠেছিল ‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’ নামে।
মুসলিম সাম্রাজ্যে তখন সর্বাধিক ক্ষমতাধর নৃপতি তুর্কি সেলজুক বংশের অধিপতি আলফ আরসালান, বয়েস যাঁর প্রায় ৩৮, আর যাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত কাবুল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত। এমনকি পূর্ব রোমের সম্রাট রোমেনাস দাইওজেনুসও হার মেনেছেন তাঁর কাছে, বাইজেন্টাইন সম্রাটও পরাভূত। অথচ, কাছের শহর সমরখন্দ তাঁর সাম্রাজ্যের বাইরে! নাসর খান তাঁর সাথে আত্মীয়তা গড়ে তুলেছিলেন। আরসালানের বড় ছেলে জালালউদ্দিন মালেক শাহ বিয়ে করেন নাসর খানের বোন তেরকেন খাতুনকে আর নাসর খান পাণিগ্রহণ করেন আরসালানের কন্যার। নেহাৎ বাইজেন্টাইনদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকায় সমরখন্দ তাঁর কুক্ষিগত হয় নি, নইলে আত্মীয়তার বন্ধন জয়ের আনন্দের চাইতে বেশি আকর্ষণীয় নয় মোটেই। রোম সম্রাটের ভবিষ্যৎ আক্রমণ রোধকল্পে আরসালান তাঁর কাকাতো ভাই সুলাইমান ইবনে কুৎলুমিশকে এশিয়া মাইনরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন ওই ১০৭২ খ্রিস্টাব্দেই। সুলাইমান ইকনিয়াম নগরীতে বসান নিজের রাজধানী, পরিচিতি ছিলো শহরটার কুনিয়া বা রুম নামেও। ওখানেই জন্ম নেন ‘মসনবি’ বিখ্যাত পারসিক কবি রুমি।
যাইহোক, এগিয়ে আসছেন সেলজুক সম্রাট প্রায় লাখ দুয়েক সৈন্য নিয়ে, পার হয়েছেন জাইহুন নদী, এখন আমরা একে চিনি আমু দরিয়া নামে। পন্টুন ব্রিজ বানিয়ে তার ওপর এই বিশাল অনীকিনী পার করাতে প্রায় দিন বিশেক সময় লাগে। ১০৭৩ সালে খাওয়ারজামের বিদ্রোহীদের শান্ত করতে তাঁর এই আগমন বলে কেউ কেউ দাবি করেন। ইতিহাসের আরেক পরিহাসে খাওয়ারজামের বিদ্রোহী নেতা ইউসুফ ধরা পড়লেও তাঁর হাতেই মারা যান বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী আরসালান, চারদিন ধরে কষ্ট পেয়ে। কাহিনীটা অদ্ভুত। তবে, এখানে শোনাবো না সেই কথা। সমরখন্দ রক্ষা পেলো সেবারের মতো। এরপর যা ঘটলো তাতে মিলন ঘটলো এমন তিন জনের, যাঁরা সেই আমলে এবং তার পরবর্তীকালে ইতিহাসের অনেক কীর্তিস্তম্ভের স্থাপয়িতা। লেবাননি সাংবাদিক এবং লেখক আমিন মা’আলোফ সমরখন্দ, ওই তিন ব্যক্তিত্ব এবং ওমরের রুবাইয়াতের সংকলন ‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’ নিয়ে লিখেছেন তাঁর বহুলপ্রশংসিত এবং একাধিক পুরস্কারে ভূষিত উপন্যাস ‘সমরখন্দ’। দু’জনের কথা আগেই বলেছি, বাকিজন হলেন মালেক শাহের বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী নিজাম-উল-মুল তিনি ছিলেন শ্রদ্ধেয়, তাঁর নাম কেউ উচ্চারণ করতো না (সম্প্রতি গাফফার চৌ:-এর এক লেখায় পড়লাম তিনি ঢাকায় এসে বিস্ময়াপন্ন হয়েছেন, পরিচিত মন্ত্রীরা এমনকি ঘরোয়া বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির নাম না বলে মাননীয়, মহামান্য ইত্যাদি মহদাকৃতির বিশেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করছেন)। বাগদাদের বিখ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসা তাঁরই হাতে স্থাপিত। তাঁর আসল নাম জানা যায় হাসান ইবনে আলি মুলক। রাজনীতিসংক্রান্ত তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সিয়াসৎনামা’ ১৮৯০-৯১ সালে প্যারিসে অনুবাদসহ প্রকাশিত হয়।
কেউ কেউ বলছেন তিনজন পড়াশোনা করেছিলেন একই পাঠশালায়, নিশাপুরে, শপথ নিয়েছিলেন বড় হয়ে কেউ সুনাম করলে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন অন্যদের জন্যে। কিন্তু, নিজাম ছিলেন হাসানের চাইতে অন্তত কুড়ি বছরের বড়। হাসানের তাঁর পাঠশালা ছিল রে শহরে এবং বাড়ি কোম-এ। জন্ম ধরা হয় তাঁর ১০৩৪-এ। আর ওমরের ১০৪৮/৫০ খ্রিস্টাব্দে।
‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’-র দোহাই দিয়ে আমির জানাচ্ছেন, তিনজনের প্রথম দেখা হয়েছিলো মালেক শাহের রাজধানী ইস্পাহান শহরে। হাসান ইবনুল সাব্বাহর জন্ম এক অভিজাত শিয়া পরিবারে। ইসমাইলিদের ব্যাপারে তাদের তেমন শ্রদ্ধা ছিল না। তবে, মজার ব্যাপার হচ্ছে কোম এবং কাশান শহরে ওমর নামটিই ছিল যথেষ্ট ঘৃণিত, কারণ বাসিন্দারা প্রায় সবাই শিয়া। কেমন ঘৃণা করতো তারা ওমর নামটি? প্রতিবছর বেশ জাঁকজমকের মাধ্যমে পালিত হতো ওমরের মৃত্যুবার্ষিকী; নারীরা কেশ আর বেশ সুসজ্জিত করতো; বিলানো হতো মিষ্টি। বাচ্চারা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতো, চিৎকার করতো, “আল্লার গজব নামুক ওমরের ওপর”, একই স্লোগানমুখরিত হয়ে উঠতো কোন কোন বড়দের মিছিল; কারোর নাম ওমর শুনলে বলা হতো, “জাহান্নাম তৈরি আছে তোমার জন্যে”; কোম এবং কাশানের মুচিরা জুতোর তলায় লিখে রাখতো ‘ওমর’; পশুপালকেরা ওই নামটা রাখতো খচ্চরের, গালি দিতো ওগুলোকে পেটানোর সময়, আর শিকারীরা শেষ তিরটা ছোঁড়ার সময় অস্ফুটে বলতো, “এটা বিঁধুক ওমরের বুকে”। সেই এলাকার ছেলে হয়ে ওমরের সাথে হাসান সাব্বাহর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা বেশ কৌতূহল-জাগানিয়া বটে। ওমর অবশ্য তার আগেই যথেষ্ট পরিচিত ও তাঁর রুবাইয়াতে প্রচারিত কিছু দৃশ্যত ‘ফাইলাসুফি’ (মূল শব্দ ‘ফাইলাসুফ’, শব্দটা ‘ফিলসফি’ থেকে এলেও নাস্তিকদেরই নির্দেশ করতো) কিছুটা বিভ্রান্তির শিকারেই বোধকরি পরিণত করেছিলো তাঁকে। তবে, তাঁর পৃষ্ঠপোষকেরা তাঁর রুবাইয়ের চাইতে তাঁর জ্ঞান, বিশেষত জ্যোতির্বিদ্যাসংক্রান্ত দক্ষতা কাজে লাগাতেই উৎসুক ছিলেন বেশি। এছাড়া, গণিতেও তাঁর মেধার প্রকাশ ছিলো অনন্যসাধারণ। নিজেই তিনি জানিয়েছেন:
বীজগণিতের তত্ত্বকথা যৌবনে মোর ছিলোই ধ্যান।
কাজ করেছেন ঘনক সমীকরণ নিয়ে, দ্বিঘাত সমীকরণ নিয়েও। বীজগণিতে অজানা বিষয় বোঝাতে গিয়ে ব্যবহার করেছেন একটি আরবি শব্দ ‘শাই’, যার মানে ‘বস্তু’। স্পেনের বিজ্ঞানীরা একে বলতেন ‘জাই’ আর শব্দটির আদ্যক্ষর থেকেই এসেছে বীজগণিতের আজকের বিশ্বজনীন অজ্ঞাত রাশির প্রতীক ‘এক্স’। এমনকি, অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে তাঁর অবদান আছে বলেও ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা মত দেন।
১০৭৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ঘরের পাশেই নিশাপুরে একটি মানমন্দির তৈরি করে মালেক শাহ তাঁকে এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন। ১০৭৯ ইসায়িতে তৎকালে প্রচলিত পঞ্জিকার ভ্রম সংশোধন করে ওমর ‘জালালি’ সন (Galalaean era) প্রবর্তন করেন। এসম্পর্কে ফিলিপ হিট্টির বহুলপরিচিত ‘হিস্ট্রি অব দ্য আরবস’ গ্রন্থে উল্লিখিত যে, এই বর্ষপঞ্জি “…is even more accurate than the Gregorian Calendar”। কিন্তু, তাঁর প্রথম ভালোবাসাই ছিলো কবিতা।
রাজদরবারে হাসানও নিযুক্ত হন, কিন্তু, একটু দ্রুত ছুটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে ছিটকে পড়লেন তিনি একেবারে রাজসভার বাইরে। পরে অবশ্য এর নির্মম প্রতিশোধ তিনি নিয়েছিলেন এর জন্যে দায়ি নিজামকে ওপরের রাস্তা দেখিয়ে, তাঁরই অন্ধ ভক্তের মাধ্যমে হত্যা করিয়ে। প্রচারক হিসেবে তিনি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন ‘ইসমাইলি বাতেনি’ মতবাদ প্রচার করে।
সৈয়দবংশীয় ইমাম জাফর সাদেক তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাইলকে ইমাম পদ দেবেন বলে ভাবেন, কিন্তু, ইসমাইলের উচ্ছৃঙ্খলতা ও পানাসক্তির খবর পেয়ে তিনি দ্বিতীয় পুত্র মুসা আল কাজেমকে পরবর্তী ইমাম (সপ্তম) নিযুক্ত করেন। ইসমাইলপ্রেমীরা মনে করেন/দাবি করেন সুরাপান বা এজাতীয় কাজে ইমামের সমস্যা নেই (তুলনীয় অস্মদ্দেশেঃ “যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়িবাড়ি যায়, তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়”)। এজন্যে ইমামতি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা অনুচিত। আরেক জায়গায় অবশ্য পেয়েছি, ইসমাইল মারা যাওয়ার পর তাঁর পুত্র আরেক ইসমাইলকে ইমাম না করে করা হয় পিতা ইসমাইলের ছোট ভাই মুসাকে। কিন্তু, এটা মেনে নেয় নি ইসমাইলিরা। তাদের মতে, ইসমাইল গুপ্ত ইমাম এবং মুহম্মদ শেষ ‘প্রেরিত পুরুষ’ বা ‘আল তাম্ম’। জগতে শরিয়ত প্রচারের জন্যে, তাদের মতে, অন্তত সাত জন মহাপুরুষ প্রেরিত হয়েছেন। তাঁরা হলেন, আদম, নুহ, ইব্রাহিম, মুসা, ইসা, মুহম্মদ ও আল তাম্ম। এঁদের প্রত্যেকের দুজনের মধ্যবর্তী সময়ে একজন ‘সামেত’ বা নীরব কর্মী এসেছেন। যেমন: ইসমাইল, হারুন ও আলি প্রমুখ। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ইসমাইল শিগগিরই ইমাম মেহেদি হয়ে আবার অবতীর্ণ হবেন। তাঁদের এই মতবাদকে ‘আল বাতেন’ এবং এই মতবাদে বিশ্বাসীদের ‘বাতেনি’ বা ‘ইসমায়েলি’ বলা হয়।
আবদুল্লাহ ইবনে ময়মুন নামের একজন ইসমাইলি কর্তৃক বাতেনি মতবাদ রূপ নেয় দৃঢ় ধর্মাদর্শে। তিনি প্রথমত বসরা এবং পরে সিরিয়ার সালামিয়া থেকে বাতেনি মতবাদ গুপ্ত অথচ সুশৃঙ্খলভাবে প্রচার করতে থাকেন। ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে আবদুল্লাহ গত হলে পরে হামাদান আল কারমাত নামে কুফার অধিবাসী তাঁর এক শিষ্য বাতেনিদের ভিন্ন একটি গোত্র (কারমাতিয়া) প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আবু সাইদ হাসান আল জান্নাবি। তিনি কারমাতিয়া মতবাদের অনুসারী এবং তাঁরই চেষ্টায় পারস্য উপসাগর থেকে এমামা ও ওমান পর্যন্ত ভূভাগ তাঁর শাসনাধীন হয়। ৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর উপযুক্ত সন্তান আবু তাহের সুলতান আল কারমাতি দক্ষিণ ইরাক তছনছ করে হজযাত্রী প্রায় বিশ হাজার মুসলিমের প্রাণনাশ করেন এবং কাবাঘর ও জমজম –এর জল রক্তে লাল করে তোলেন। ‘হজরে আসওয়াদ’-ও তিনি তুলে নিয়ে যান (আনুমানিক সময়কাল: ৯২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দ)।
হাসান সাব্বাহ ইমাম গাজ্জালির সতীর্থ ছিলেন বলে কথিত। যুবক বয়েসে তিনি মিশর যান এবং সেখানে কায়রোর একটি শিয়া শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় বছর দেড়েক থাকেন। বলা হয়, সেখানে ছাত্রদের ইসলামি বিভিন্ন মতবাদ নিয়ে প্রশ্ন করতে (বাহাস) এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্যে তাদের ওস্তাদের মতবাদে পৌঁছানোর রাস্তা শেখানো হতো। শাগরিদেরা নয়স্তরী পথ পেরিয়ে অবশেষে পরম সত্যে পৌঁছাতো। কী সেই সত্য? পৃথিবী তৈরি হয়েছে কর্মের মাধ্যমে এবং বিশ্বাস বা ইমান হচ্ছে জনতাকে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের রাস্তা।
ফাতিমীয় বংশের উত্তরাধিকারীর প্রশ্নে হাসান মিশরের রাজার সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দাবি করেন যে, খলিফার জ্যেষ্ঠ পুত্র নিজার-ই সিংহাসনের প্রকৃত দাবিদার। এতে ক্ষুব্ধ হন অন্যেরা। তিনি বন্দী হন কারাগারে। একদিন হঠাৎ ধসে যায় কারাকক্ষের দেয়াল। এরপর তিনি পালান মিশর থেকে। মিশরে যাওয়ার আগে তিনি অবশ্য সেলজুক দরবারে কাজ করতেন, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। একদিন অবশেষে তিনি উদয় হন আলামুত দুর্গের অধিপতি হিসেবে।
স্থানীয় ভাষায় ‘আলামুত’ মানে ছিল ‘ইগলের বাসা’/ ‘ইগলের শিক্ষা’। বলা হয়, এক রাজা (বাহ সুদান ইবনে মারজুবান) পাহাড়ি এলাকায় একটি দুর্গ তৈরি করতে চান। এলক্ষ্যে তিনি একটি ইগল ছেড়ে দেন, সেটি উড়ে গিয়ে বসে পাহাড়ের খাঁজের বিরাট এক পাথরের ওপর। সেখানেই তিনি দুর্গ নির্মাণের আদেশ দেন। ঘটনাটা প্রায় ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে। কিভাবে হাসান দুর্গটা পেলেন, সে নিয়েও আছে নানা কাহিনী। এক জায়গায় পাচ্ছি তারিখটা ছিল ৬ সেপ্টেম্বর, ১০৯০। আলামুত ছিল প্রত্যন্ত এক অজপাড়াগাঁ। হাসান প্রথমে তাঁর কিছু অনুচর পাঠান সেখানে বাতেনি মতবাদ প্রচার করতে। তারা মাটি তৈরি করলে এরপর তিনি নিজে গিয়ে সেখানে হাজির হন। দুর্গেশ মাহদি আলাবাতিকে তিন হাজার দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিয়ে তিনি দুর্গটা কিনে নেন। আরেকটি কিম্বদন্তী আরো চমকপ্রদ। তিনি দুর্গাধিপতির কাছে একটি গরুর চামড়া যতটুকু জায়গা নেবে শুধু ততটুকু জায়গা চান। মঞ্জুর হলো। এরপরেই খেল। চামড়াটা ফালি ফালি করে করে এতো বিস্তৃত করে ফেলা হলো যে, শেষমেষ ওই চামড়ার টুকরো দিয়ে পুরো দুর্গটাই ঢেকে ফেলা সম্ভব হলো। এরপর , আর কি! দরাদরির শেষে হতভম্ব প্রধানকে রাস্তায় নামিয়ে দুর্গ দখল। (রোমক কবি ভার্জিল-এর ‘ইনিড’ মহাকাব্যে দিদোর কার্থেজ নগরী স্থাপনের সাথে ঘটনাটার বেশ মিল আছে)।
জায়গাটার ভৌগোলিক অবস্থান ছিলো উত্তর পারস্যে, আলবুর্জ পর্বতের ওপরের এক উপত্যকায়। প্রায় দশহাজার ফুট ওপরে। দরিঞ্জান (আরেক জায়গায় দেখছি শাহরুদ) নদী বয়ে যেতো এর পাশ দিয়ে। বসন্তে আলবুর্জ পর্বত থেকে বরফগলা জলের ঢল নামতো পাহাড় বেয়ে, বয়ে যেতো বড় বড় গাছ আর পাথরের চাঁই। ফলে, দুর্গটা ছিল নিতান্তই দুর্জয়। হাসান এখানেই স্থাপন করেন তাঁর শিক্ষাকেন্দ্র এবং অনুসারীদের অভয়ারণ্য, যা পরবর্তী প্রায় ১৫০ বছর ধরে সারা মুসলিম জগতে এবং অন্যত্রও ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়াবে। কায়রোর ফাতিমি রাজবংশের বিখ্যাত রাজ্যের কিছুটা রং-রূপ বুঝি তিনি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন এই বর্ণহীন মরুদেশে।
ইসলামের মূল গঠন দুটি স্তরের বিভাজনে বিকশিত। একদিকে ঐশ্বরিক আইন (‘শরিয়া’), অন্যদিকে ঐশ্বরিক বা আধ্যাত্মিক মার্গ (‘তরিকা’)। দ্বিতীয়টি দেখা হয় গুহ্য আভ্যন্তর হিসেবে আর আইন হলো বাহ্য আবরণ। ইসমাইলিয়াদের কাছে দুটো একত্রে একটি সত্তা যা কেবল তা’ইল-এর মাধ্যমে ভেদ্য। শরিয়া আর তরিকার মাঝেই লুকিয়ে আছে পরম সত্য (‘হাকিকা’), ধর্মতত্ত্বীয় বচনে পরমেশ্বর স্বয়ং। এই তা’ইল-ই ইসমাইলিয়াদের মূল ধারণা । ইসমাইলি মরমিয়াবাদের কেন্দ্র তা’ইল-এর আসল অর্থ হচ্ছে, “কোন কিছু এর উৎসে বা গভীর তাৎপর্যে প্রকাশ করা।”এমনিতেই শিয়ারা এর আগে থেকেই কোরানের ভেতরকার রহস্য অনুধাবনে মগ্নতা দেখিয়েছিলো। কিছু আয়াতের মর্মভেদ করে তারা দেখাতে চেয়েছিলো যে, ওগুলো আসলে সংকেতের আড়ালে আলি এবং অন্য ইমামদের কথা ঘোষণা করছে। ইসমাইলিরা ব্যাপারটা আরো বৈপ্লবিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ইসলাম তাদের কাছে একটি বহিরাবরণ, যার আড়ালে লুকনো আসল সত্য জানতে গেলে তা’ইলের সাহায্যে পুরো ব্যাপারটা সামগ্রিকভাবে উন্মোচন করতে হবে। আর এই উন্মোচনের মাধ্যমে ‘হাকিকা’-য় পৌঁছনো সাধারণ মানুষের কম্মো নয়, এর প্রকাশ ঘটে কেবল একজন পরিপূর্ণ মানুষের মাধ্যমে, এবং তিনি হচ্ছেন ইমাম। ইমামকে জানলেই সেই গূঢ় সত্য জানা যায়, কারণ তাঁর মাধ্যমেই ঈশ্বর স্বপ্রকাশ। (ভারতীয় উপমহাদেশের অবতারবাদের সাথে এর মিল সুস্পষ্ট) একবার যখন ইমাম জ্ঞাত হলেন, তখন শরিয়া আর তরিকা ধানের তুষের মতো উড়ে ভেসে যায় বাতাসে। এই আভ্যন্তর জ্ঞান মানুষকে বাইরের বাস্তবতা থেকে মুক্তি দেয়। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের ওপর বিজয় ঘটে অবশেষে সেই গুহ্য জ্ঞানের।
তবে, কথা হচ্ছে এই যে, এই সব আইন ছুঁড়ে ফেলার ব্যাপারটা ইসলাম যে শুধু ভালো চোখে দেখেনি তাই নয়, বরং এটাকে রীতিমত ধর্মদ্রোহিতার পর্যায়ে ফেলা হয়েছে। শিয়াদের আত্মরক্ষার জন্যে ‘তাকিয়া’ গ্রহণের অনুমতি আছে। এর মানে মৃত্যু বা শাস্তি এড়ানোর জন্যে গোঁড়া মুসলিম হিসেবে অভিনয় করা জায়েজ। আর নিজারি বা বাতেনিদের জন্যে এটা রীতিমত ধর্মাচরণের অঙ্গ। আলামুতে কেবল সর্বোচ্চ পদবিধারীরা ছাড়া হাসান আর সবার জন্যেই এই গোপনীয়তার পোশাক বাধ্যতামূলক করেছিলেন।
সেসময়ে আসলে কে ছিলেন ইমাম? সাব্বাহ নিজে কখনো নন। একবার তিনি এরকমও বলেছিলেন, “ইমামের অবাধ্য সন্তান হওয়ার চাইতে তাঁর বাধ্য অনুগত হতেই আমি পছন্দ করবো।” কথাটা তিনি বলেছিলেন কারণ তখন লোকজন তাঁর সাথে ইমামের কুষ্ঠিঠিকুজি মেলানো শুরু করেছিলো। ফাতিমি রাজবংশের রাজপুত্র নিজার এবং তাঁর সন্তান মারা গেছেন উত্তরাধিকারীহীন অবস্থায়। কিন্তু, আলামুতে তাঁরা সবাই ‘নিজার-এর নামেই’ উপাসনা করতেন। বস্তুত, ইসমাইলিয়াদেরও কিন্তু তিনটে উপগোত্র হয়ে যায় ইমাম এবং অন্য ব্যাপারের জের ধরে। ফাতিমিয়া, নিজারিয়া আর কারমাতিয়া।
আলামুতে নতুন নাজিরিদের সাতধাপের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়া হতো। এদের হয় সংগ্রহ করা হতো কম বয়েসে আশপাশের এলাকা থেকে অথবা মগজধোলাই করে নিয়ে আসা হতো অন্য জায়গা থেকে। পরবর্তী সময়ে অবশ্য দুর্গের অধিবাসীদের বংশধরেরাই সংখ্যায় যথেষ্ট ছিলো। তবে, বিশ্বাসান্তরকরণ চলছিলোই। আলামুতে রীতিমত আমলাতান্ত্রিক স্তরবিন্যাস বর্তমান ছিলো। সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন সৈয়দেনা হাসান ইবনে সাব্বাহ, প্রধান গুরু এবং প্রচারক, সব গূঢ় বিষয়ের রক্ষাকারী, ‘শাখ্ আল জাবাল’, ক্রুসেডারদের কাছে অনুবাদে ‘দ্য ওল্ড ম্যান অব দ্য মাউন্টেন’; তাঁর আশেপাশে মাত্র কয়েকজনই থাকতো। তাদের নাম ছিলো দা’ই। এদের মধ্যে ছিলো তিনজন প্রশাসক-একজন পূর্ব পারস্যের জন্যে, একজন খোরাসান এবং একজন কুহিস্তানের-ত্রানসাজোনিয়ার জন্যে। তাদের নিচে ছিল রফিক-এরাই একনিষ্ঠ কর্মী। দুর্গ থেকে নির্দেশ এলে তা সুনির্দিষ্ট নিয়মে এদের মাধ্যমেই পরিপালিত হতো। সংগঠনের নিচের স্তরে লাসেকদের অবস্থান। এরা মতবাদে ছিলো আস্থাশীল, কিন্তু তেমন কোনো দায়িত্ব এদের ওপর ছিলো না।
এছাড়া ছিলো মুজিব। এরা একটু পড়াশুনো-করা উত্তরদাতা। মতাদর্শ নিয়ে তাদের কিছু শিক্ষা দেয়া হতো, নিজেরাও পড়ে নিয়ে জ্ঞান বাড়াতো, উত্তর দিতো লোকেদের অভিযোগের। তারাই ছিলো মূলত প্রচারকের দায়িত্বে। সবার নিচে ছিলো ফেদা’ইরা/ফিদা’ইরা। এরাই ছিলো মূল আত্মঘাতী। ফেদা’ই শব্দটা এসেছে ‘ফিদা’ মানে ‘আত্মোৎসর্গ’ থেকে। পড়াশুনো তাদের সামান্যই ছিলো, তবে যুদ্ধবিদ্যা তাদের শিখতেই হতো। এদের কারণেই নাজিরি ইসমাইলিয়ারা অ্যাসাসিন হিসেবে এতো খ্যাতিমান হয়ে ওঠে। পরনে থাকতো তাদের সাদা জোব্বা আর লাল কোমরবন্দ। সবসময় এরা প্রস্তুত থাকতো জীবন বিসর্জনের জন্যে। তাদের প্রশিক্ষণ হতো স্বয়ং হাসানের হাতে। তারা শিখতো জোব্বার নিচে ডাকের পায়রা লুকিয়ে-রাখা, যে-কোন পরিস্থিতিতে খবর-দেয়ার কৌশল, কেমন করে লুকিয়ে রাখতে হবে ছোরা, কেমন করে আচমকা ওটা বের করে আনতে হবে আর বসিয়ে দিতে হবে শিকারের বুকে। কাউকে শেখানো হতো কোন বিশেষ অঞ্চলের ভাষা বা উচ্চারণ। অন্য অঞ্চলের জামাকাপড়-পরা বা আচারব্যবহারও শিখতে হতো তাদের। শিকার বিশিষ্ট হলে প্রশিক্ষণও হয়ে উঠতো বিশেষরকমের। শিকারের অভ্যাস, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, কোথায়, কখন তার যাওয়া-আসা, তার সহচরদের তথ্য-এগুলোও জানতে হতো তাদের। তবে, সবার উপরে তাদের শিক্ষার মূল বিষয় ছিলো-বিশ্বাস ও মৃত্যুসংক্রান্ত। তাদের বিশ্বাস ছিলো শত্রুদের হত্যা করে আত্মঘাতী হলে বা ধরা পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তারা বেহেস্তগামী হবে-শহিদ হিসেবে।
প্রিয় পাঠকগণ, এতক্ষণ যে-বিবরণ শুনলেন তাতে বাংলার কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কথা মনে কি দোলা দিয়ে যায় নি? যদি না যায়, তা’লে আপনি মশাই এবাংলার লোকই নন।
সাধারণ্যে তারা ‘অ্যাসাসিন’ হিসেবে পরিচিত কেন? এই নামের পেছনে যে-কাহিনি কাজ করে, তা হলো এই যে, তাদের হত্যার আগে হাশিশ নামে একরকম উত্তেজক মাদক খাইয়ে পাঠানো হতো হত্যাকাণ্ডে, যাতে তাদের অন্য কোনো ধারণা মাথায় ঠাঁই-ই না পায়। তাদের অবশ্য এর আগে কিছুটা বেহেশতি স্বাদ দেয়া হতো।
কিভাবে?
আলামুতে, মার্কা পোলোর ভাষ্যমতে, গড়ে উঠেছিল এক ‘স্বর্গের নন্দনকানন’ (Garden of earthly delights)। মনে রাখতে হবে, মার্কা পোলো এখানটায় এসেছিলেন আলামুত ধ্বংস হওয়ার পরে, হাসানের মৃত্যুরও প্রায় দেড়শ’ বছর পরে, ১২৭২-৩ খ্রিস্টাব্দে। সুতরাং, তাঁর পক্ষে বাগানটা দেখা সম্ভবপর ছিলো না। যাহোক, এরপর যা বলবো তা গল্প হিসেবেই ধরে নেবেন, ইতিহাস-গবেষকদের চোখরাঙানি মানছি না।
বাগানটা ছিলো দুই পাহাড়ের মাঝখানে। সেখানে কোরানবর্ণিত এক সুরম্য উদ্যানে ছিলো জায়গায় জায়গায় সোনা, রুপো, মুক্তো, হিরের মতো কৃত্রিম রঙে রাঙানো অট্টালিকা। গাছে গাছে পাখিরা নতুন আগন্তুকদের কোরানি বাক্যে অভ্যর্থনা জানাতো “সালামু আলায়কুম তিব্তম ফাদখুলুহা খালেদিন, সালামুন কাওলাম্মের রাব্বির রাহিম” ইত্যাদি বলে। আশিশিন হতে ইচ্ছুক না হলে ওখানে কাউকে আনা হতো না। আলামুতের দরবারে থাকা ১২ থেকে ২০ বছরের নানান বিশ্বাসী ছেলেদের হ্যাশিশ খাইয়ে আনা হতো বাগানে। বলা হয়, কাজভিন থেকে তাদের হ্যাশিশ মেশানো শরাব খাইয়ে বেহুঁশ করে গাধার পিঠে করে বয়ে আনা হতো বাগানে, সাধারণত ৪/৬/১০ জনকে একত্রে আনা হতো। সেখানে জায়গায় জায়গায় বইছে মধু, দুধ, শরাবের নহর। ছিলো শরাব আর বিশুদ্ধ পাহাড়ি জলের ঝর্ণা। নবীন অ্যাসাসিনেরা জেগে দেখতো তাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে স্বর্গবেশ্যারা (হুরি) । তাদেরও আনা হতো নানা জায়গা থেকে অপহরণ করে। তারা নাচতো, গাইতো, সুমধুর বাদ্য বাজাতো, মনোরঞ্জন করতো তাদের নানা উপায়ে। কিভাবে? রবার্ট অ্যান্টন উইলসন তাঁর ‘প্রমিথিউস রাইজিং’ বইতে যা বলছেন তার বিবরণ এখানে ইনজিরিতেই রাখছি।
As he drifted into an ecstatic daze, the girls would go to work on the initiate, giving him a full-body tongue massage, while one girl performed oral sex on him. Eventually, the bedazzled young man would climax into the girl’s mouth “as softly and slowly and blissfully as a single snowflake falling”.
আহা, স্বর্গসুখ আর কাকে বলে!! এরপরে কি আর গুরুবাক্যের অবাধ্য হওয়া যায়? আবার তাদের মর্ত্যভূমিতে নিয়ে আসা হতো এবং বলা হতো মৃত্যু হলে আবারো এই স্বর্গেই ফিরে আসবে তারা। তো, কোন প্রশ্ন? না। পরিপূর্ণ আনুগত্য এবং আত্মসমর্পণ। তাই মৃত্যুই কাম্য হোক। আধুনিক অ্যাসাসিনেরা অবশ্য আরো মহান মস্তিষ্কের অধিকারী। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাগে না তাদের, শুনেই বা পড়েই হয়ে যায়!
অবশ্য, এই বিবরণের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন অনেকেই। কারণ, মার্কো পোলোর এই বিবরণ যখন লেখা তার প্রায় ২০ বছর আগেই আলামুত দুর্গ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আর, তাছাড়া, হাসান তাঁর দুর্গে সাংঘাতিক কঠোর শরিয়া আইন বজায় রাখতেন। তাঁর দুই পুত্রের তিনি প্রাণদণ্ডের বিধান দিয়েছিলেন-একজনের মদ্যপানের অপরাধে, অন্যজনের চুরির অভিযোগে। এমনকি, বাশিঁ বাজানোর অপরাধে একজনকে দুর্গ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর বংশের কেউ তাঁর মৃত্যুর পর আলামুতের উত্তরাধিকারী হয় নি। সুতরাং, তাঁর পক্ষে কাউকে নেশাগ্রস্ত করিয়ে বা কল্পিত স্বর্গের শরাবন তহুরা পান করিয়ে উদ্বুদ্ধ করার প্রশ্নই উঠতো না। আর, তাছাড়া, চেঙ্গিজের নাতি হালাকু খান যখন দুর্গটি ধ্বংস করেন ১২৫৬ খ্রিস্টাব্দে, তখন তাঁর সাথে একজন ‘এমবেডেড’ ঐতিহাসিক ছিলেন বছর ত্রিশেক বয়েসের। তাঁর নাম আতা মালিক জুয়াইনি, সুন্নি মুসলিম। তিনি সেসময় একটা বই লিখছিলেন বা তাঁকে লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। বইটার নাম ‘তারিখ-ই-জাহান গুশা’ বা ‘বিশ্ববিজয়ীর ইতিহাস’। ওটাতে এসবের কোন উল্লেখই নেই। আগুন লাগিয়ে দেয়ার আগে একমাত্র তিনিই ঢুকতে পেরেছিলেন অ্যাসাসিনদের গোপন গ্রন্থাগারে এবং সেখান থেকে তাঁর উদ্ধার করা বইগুলোই মূলত হাসান এবং অ্যাসাসিনদের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, যার মধ্যে হাসানের আত্মজীবনীও ছিল বলে মনে করা হয়।
অ্যাসাসিন নামের অন্য অনুমিত উৎসগুলো হচ্ছে: ১) নামটা এসেছে হাসানের অনুসারী ‘হাসানিন’ শব্দ থেকে; ২) বলা হতো নিজারিরা আলামুতের নাম দিয়েছিলো ‘আল-আসাস’ বা ‘মৌলভিত্তি’। কারণ, হাসান চাইতেন আলামুতই হবে তাঁর সব কাজের ভিত্তি। এবং, এর কারণেই আল-আসাসের সদস্যদের নাম দেয়া হয় ‘আল-আসাসিন’।
আপনার মন মতো বেছে নেয়ার ইচ্ছে আপনার আছে। বিশ্বাস করুন, এটার নাম অবশ্যই মুক্তবুদ্ধির চর্চা নয়। প্রায় ১৬৬ বছর ধরে অ্যাসাসিনেরা সমগ্র ইসলাম সাম্রাজ্যে এক আতঙ্কের শিহরণ বইয়ে দিয়েছিলো। তাদের ছুরির ধার থেকে মুক্ত ছিলো না বাদশাহ থেকে শুরু করে কেউই। হাসান এক শাসককে চিঠিতে লিখেছিলেন, “সুলতানের মতো ক্ষমতা আমার নেই, কিন্তু তাঁর চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি আমি করার ক্ষমতা রাখি।” সমস্যা ছিলো যে তারা ছিলো আত্মঘাতী, আর তাদের কিভাবেই বা আটকানো যায়? নিজের জীবনের মায়াই যার নেই, তাকে বাঁধবে কে? হাসানের শিক্ষা গুঞ্জরিত হতো তাদের মাথায়, “তোমরা এই পৃথিবীর জন্যে নও, এর পরেরটার জন্যে। পুকুরের মাছ কি ভয় পায় যদি তাকে ছুঁড়ে ফেলা হয় সাগরে?” বস্তুত, হাসানের শিক্ষা বোধহয় আজও কাজ করে চলে।
যাহোক, কোন সালতানাত আলামুতের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে নি। এমনকি, হাসান মৃত্যুবরণ করার পরেও নয়। তিনি ৯০ বছর বয়েসে মারা যান, অর্থাৎ, ১১২৪ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু, আলামুতের পতন ঘটে হালাকু খানের কাছে, ১২৫৬ সালে। তিনি প্রশংসা করেছিলেন দুর্গের আত্মরক্ষা ব্যবস্থার এবং হাসানের। হুকুম দিয়েছিলেন আগুন লাগাতে, প্রতিটি ইট ধ্বংস করতে এবং বিশেষত গ্রন্থাগারটা যেন ধ্বংস হয় সেব্যাপারে বিশেষ নির্দেশ ছিল তাঁর। সাত রাত আর সাত দিন ধরে জ্বলেছিলো আগুন। সেই শেষ হল আলামুতের।
এর মধ্যে ওমরের জায়গা কোথায়?
কিম্বদন্তী, ওমরের ‘সমরখন্দ পাণ্ডুলিপি’ থাকতো হাসানের নিজস্ব কক্ষে। ওটা ওমরের কাছ থেকে চুরি যায় এবং এরপর থেকে আলামুতে হাসানের ঘরের একটা জালে-ঢাকা এলাকায় ওটা সংরক্ষিত থাকতো। হাসান ওমরকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তাঁর অধিকৃত দুর্গে আসার জন্যে।
ওহ্, এই প্রসঙ্গে হাসানের ঘরটার কথাও একটু বলি। পুবপাশের একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে দুর্গের নিচের অংশে ঢুকতে হতো। সেখানে ঢালু জায়গাটার পাশে ছিলো ক’টা মাটির ঘর, দুর্গের উঁচু মূল অংশে যেতে একটা খোলা ময়দান পেরুতে হতো। মাঠটার পশ্চিম দিকটা ছিলো তুলনামূলকভাবে সরু। ওই সরু পথটার ওপারেই ছিলো দুর্গটা, হাসানের ঘরটা ছিলো এর ওপরেই। পুরো ঘরে জানালা ছিলো ঠিক একটা, মাঠের দিকটায়। ঘরটা যেন দুর্গের ভেতর আরেক দুর্গ। হাসান ওই ঘরে ঢোকার পর জীবনের শেষ ত্রিশ বছরে মাত্র দু’বার বেরিয়েছিলেন, দু’বারই উঠেছিলেন দুর্গের ছাদে, সম্ভবত দেখেছিলেন দুর্গের দুর্ভেদ্যতা। আকাশ দেখেছিলেন কি? তাঁর জীবনকাহিনিতে এই তথ্যের উল্লেখ নেই।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ওখানে একটা মাদুরে বসেই কাটাতেন, মাদুরটা ঠিক করা হয় নি বা বদলানোও নয়। নিজের পড়ালেখা, আত্মঘাতী শিষ্যদের শিক্ষাদান-সবই চলতো ওই ঘরের ভেতরে। নামাজ পড়তেন পাঁচ ওয়াক্ত, ওই মাদুরের ওপরেই। কেউ দেখা করতে এলে তার সাথে কথাও বলতেন ওই মাদুরে বসেই। তাঁর পাশে ছিলো না কেউই। শুধু পাথর আর ভয় দিয়ে গড়া তাঁর পরিপার্শ্ব। শুধু অপ্রেম, শুধু সংঘ, আর আরো উঁচুতে, আরো উঁচুতে, আলবুর্জের আরো ওপরে ওঠার নিরন্তর স্বপ্ন।
শুধু ওমরের প্রতি ছিলো বুঝি অহৈতুকী প্রীতি। মা’আলোফ জানাচ্ছেন, একবার ওমরকে পত্রাঘাত করেছিলেন তিনি, লিখেছিলেন,
পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর চাইতে আপনি আলামুতে আসছেন না কেন? আমি এখানে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে করতে নিজেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছি। এখানে আপনি নিরাপদেই থাকবেন, আপনার যত্ন হবে, সম্মান পাবেন। পৃথিবীর কোন শক্তি আপনার চুলও স্পর্শ করতে পারবে না। এখানে একটা বিশাল গ্রন্থাগার করেছি, আপনার লেখাপড়াও হবে। এখানে শান্তি পাবেন আপনি।
ওমর আসেন নি। সূর্যের আলো শেষ দেখেন তিনি ১১৩১ খ্রিস্টাব্দে।
আর তখন আলামুত আতঙ্ক আর সমান্তরাল ক্ষমতার এক কেন্দ্র। সেলজুক সাম্রাজ্য হাত মিলিয়েছে তার সাথে, করেছে চুক্তি। যদি কোথাও নাজিরি ইসমাইলিদের বাধা দেয়া হলো, তো মৃত্যু অবধারিত। হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হতো সাধারণত শুক্রবারে, দ্বিপ্রাহরিক উপাসনার সময়। হত্যাকারীর উদয় ঘটতো আকস্মিকভাবে, কিন্তু, কিভাবে তারা নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করতো? জবাব নেই। শিকার মৃত, কিন্তু অ্যাসাসিন পালাতো না; ধরা দিতো আর তারস্বরে ঘোষণা করতো নিজের বিশ্বাসের কথা। রক্ষীরাই তাকে খুন করতো, প্রায়শই তাৎক্ষণিকভাবে। আর আলামুত সম্পর্কে কৌতূহলী হতো লোকেরা, আগ্রহ বাড়তো।
এদিকে আলামুতে হাসানের মৃত্যুর পরে কঠোরতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। চতুর্থ প্রজন্মের আরেক হাসানের হাতে, যাকে মনে করা হতো ইমাম মাহদি, অবশেষে এই অতুলকঠোর ব্যবস্থার অবসান ঘটে। তিনি নিশ্চয় পড়েছিলেন ওমরের রুবাইসমগ্র, আপ্লুত হয়েছিলেন এর স্বর্গীয় সৌরভে, মদমত্ত হয়ে উঠেছিলেন এর সৌন্দর্যের স্পর্শে।
১১৬৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ অগস্ট।
তিনি উঠে এলেন মঞ্চে। পরনে তাঁর সাদা আলখেল্লা। অনবদ্য এবং তুমুল বিস্ময়াবহ তাঁর ভাষণে তিনি জানালেন,
“বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব বাসিন্দা-জিন, ইনসান আর ফেরেশতারা শোন, ইমাম মাহদি তোমাদের আশীর্বাদ করছে আর তোমাদের সব পাপ ক্ষমা করা হলো, অতীত এবং ভবিষ্যতেরও। সে তোমাদের বলছে গোপন আইন বাতিল করা হলো, পুনরুজ্জীবনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যে বিধান করেছিলেন তা স্বর্গ অর্জনের জন্যে আর নিঃসন্দেহে তোমরা সেই স্বর্গ অর্জন করেছো। আজ থেকে স্বর্গ তোমাদের। আইনত তোমারা এখন মুক্ত। যা কিছু এতদিন নিষিদ্ধ ছিলো সব এখন থেকে বৈধ। আর যা কিছু বিঘ্নসৃষ্টিকারী তা এখন নিষিদ্ধ। দিনে পাঁচবার উপাসনা নিষিদ্ধ, প্রয়োজনহীন-কেননা আমরা এখন স্বর্গে আছি এবং সৃষ্টিকর্তার সাথে আমরা এখন সরাসরি সম্পৃক্ত, সেজন্য নির্দিষ্ট সময়ে তাঁকে আর নিয়ম করে ডাকার দরকার নেই। যারা ওই কাজ করবে-তারা এই পুনরুজ্জীবনে বিশ্বাস করে না বলেই ধরে নিতে হবে। উপাসনাকে এখন থেকে অবিশ্বাসীদের কাজ বলেই গণ্য করা হলো। অন্যদিকে সুরা পবিত্র কোরানে স্বর্গের পানীয় বলে উল্লিখিত, এখন থেকে যারা সুরা পান করবে না, তাদেরই ইমানে ঘাটতি আছে বলে ধরে নেয়া হবে।
পুরো সমাবেশ তখন আনন্দের তুঙ্গে। হাসান সাব্বাহ যা চেয়েছিলেন, ঘটেছিলো ঠিক তার বিপরীতটাই। আলামুত এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোয় ইসমাইলিয়াদের অন্য সম্প্রদায়গুলোর কাছে দূত পাঠানো হলো। সবাইকে বলা হলো ঘোষণার দিনটি পবিত্র মনে করার জন্যে, নিচে ছিলো হাসানের স্বাক্ষর। হিজরি, গ্রিক এবং নিশাপুরের ওমর খৈয়ামের তৈরি পঞ্জিকা অনুসরণে দিনটা নির্ধারিত হয়। ওমরের নামের আগে লেখা হয়, “দুই জাহানের সবচে’ জ্ঞানী ব্যক্তি”।
এভাবেই আলামুতের জীবন হয়ে উঠে আনন্দময়, হাসান সাব্বাহ-র আলামুতকে ‘বীরের পুণ্যভূমি’ করার পরিকল্পনা ওখানেই থেমে যায়, ইসলামি রাজ্যগুলোতে থেমে যায় গুপ্তহত্যা, ইসমাইলিয়াদের তিনটি গোত্র মিলে যায় একটিতে। এবং এরপর থেকে ইসমাইলিয়ারা পরিণত হয় রীতিমত ধৈর্যশীল সুফিবাদি এক গোত্রে। আজও তারা আছে, তবে তাদের নেতা আগা খান, আর সংগঠনটা নিতান্তই নিরীহ ধর্মপালনকারী।
কিন্তু, অ্যাসাসিনদের প্রভাব থেমে থাকে নি। ক্রুসেডারেরা তাদের সাথে পরিচিত হয়ে এই সংগঠনের শিক্ষা বয়ে নিয়ে যায় ইউরোপখণ্ডে। নানান রহস্যময় এবং গুপ্ত ভ্রাতৃসংঘে বয়ে চলে অ্যাসাসিনদের ধর্ম এবং কর্মপদ্ধতি। বলা হয়, দ্য টেম্পলারস, দ্য সোসাইটি অব জেসস, প্রায়রি দ্যো সায়ন, ফ্রিম্যাসনস, দ্য রোজিক্রুসিয়ানস, সবাই যেন হাসানের ভাবশিষ্য। অ্যাডাম পারফ্রে-র অ্যাপোক্যালিপ্স কালচার গ্রন্থে টিম ও’ নিল এই প্রভাবের কাহিনি বিস্তৃত করেছেন।
এমনকি, সিআইএ-ও। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে গুয়াতেমালায় মোসাদিক সরকারের বিরুদ্ধে এক গোপন অভিযানে সিআইএ নিজের এজেন্টদের নিযুক্ত করার সময় তাদের হাতে একটা ১,৪০০ পৃষ্ঠার ফাইল ধরিয়ে দেয়। কিভাবে নিজেদের কাজ সারতে হবে তা ওখানে লেখা ছিলো। প্রশিক্ষণ ম্যানুয়ালটার নাম ছিলো ‘আ স্টাডি অব অ্যাসাসিনেশন’। আজও প্রাসঙ্গিক!
এমনকি, সাহিত্যেও। বলা হয় শেক্সপিয়র প্রথম ইংরেজিতে ‘অ্যাসাসিন’ শব্দটি ব্যবহার করেন আর ড্যান ব্রাউন তো রীতিমত তাঁর অ্যাঞ্জেলস এন্ড ডেমনস বইতে একজন অ্যাসাসিনকে দ্বিতীয় খলনায়ক হিসেবেই এনেছেন। এমনকি, স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের আফিমের ঘোরে পাওয়া সুখ্যাত কবিতা ‘কুবলা খান’-এও আলামুত আর অ্যাসাসিনদের কিছুটা প্রভাব ছিলো বলে অনেকে মনে করেন। বিটনিক জেনারেশনের লেখকেরাও এড়াতে পারেন নি এর প্রভাব, মানে, মাদক আর হাসান দু’য়েরই। ব্রায়ান গাইসিন নামের এক লেখক ও চিত্রী তাঁর একাধিক কবিতায় হাসানের প্রসঙ্গ এনেছেন। তাঁর সাথে হাসানের পরিচয় ঘটান ঔপন্যাসিক ও সুরস্রষ্টা পল বোয়েলস। গাইসিন আবার সে- তথ্য সরবরাহ করেন উইলিয়াম এস, বোরোস-কে। তিনি লিখলেন “দ্য লাস্ট ওয়ার্ডস অব হাসান সাব্বাহ” নামে এক চমৎকার কবিতা। আরেক দক্ষ সুরকার বিল লসওয়েল ১৯৯৯ সালে তো রীতিমত একখানা অ্যালবামই বের করে ফেলেন হাশিশিন: এন্ড অব দ্য ল নামে। খুঁজে দেখলে হয়তো এমনি আরো অনেক পাওয়া যাবে।
যাক, আমার কথাটি ফুরলো, আর কি কি হলো তা আর বলে কাজ কি? শুধু একটি কথাই বলবো। এই লেখা কোন ধর্মীয় গোত্র সম্পর্কে পরীবাদের কোন উদ্দেশ্য নিয়ে রচিত নয়। শুধু, ধর্মের নামে মানুষ কতটা হিংস্র হয়ে ওঠে, তার কিছু বর্ণনা দেয়া আর আমার প্রিয় এক কবির এতে অনীহ সংশ্লিষ্টতার কিছু দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, তাঁর কাব্যপ্রভাবেই নিস্তেজ হয়ে যায় সে-আমলের রক্ততৃষার সবচাইতে মূর্তমান ধারাটি। কাব্যের জয় হোক!
হাসান অবশ্য আজও অনেকের আদর্শ হতে পারেন, তাঁর একনিষ্ঠতা আর বিশ্বাসের প্রগাঢ়তার জন্যে। ওমরের রুবাইয়ের রসাস্বাদন করার আমন্ত্রণ করার জানিয়ে এখানেই তুলে রাখছি আমার দুর্বল লেখনীখানি। এই লেখাটি লেখার জন্যে আমি মূলত অনুপ্রাণিত হই আমিন মা’আলোফ-এর ‘সমরখন্দ’ উপন্যাসটি পড়ে, যার কথা বলেছি আগেই। এছাড়া, নিচের লেখাগুলো থেকেও ইচ্ছেমত তথ্যাদি নিয়ে লেখাটির কলেবর বৃহদায়তন করেছি।
১) আমিন মা’আলোফ, সমরখন্দ, অনু: আবীর হাসান, সন্দেশ, ঢাকা, ২০০৯। (বেশ ভালো বই; রাজনীতি, ধর্মান্ধতা, হিংস্রতা, কবিতা, প্রেম, আর সবার ওপরে-ইতিহাস)
২) বাংলা একাডেমী ঐতিহাসিক অভিধান, সঙ্কলক: মোহাম্মদ মতিওর রহমান, সম্পাদক: মনজুরুর রহমান, বাংলা একাডেমী, তৃতীয় সংস্করণ, ঢাকা, ২০০০। (নিজের সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রশংসা এবং অন্যদের সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, এবং বেশ কিছু অনৈতিহাসিক তথ্যে বইটি ভর্তি)
৩) http://en.wikipedia.org/wiki/Hassan-i_Sabbah (উইকির নিজস্ব তথ্যভাণ্ডার, তবে পূর্ণাঙ্গ নয়)।
৪)http://old.disinfo.com/archive/pages/dossier/id985/pg1/index.html (দারুণ তথ্যসংকলন, অনেক লিংক পাবেন আরো জানতে চাইলে)।
৫) http://www.iranian.com/History/Aug97/Sabbah/index.html ( সিআইএ ম্যানুয়ালটা এখানে পাবেন)
৬) http://www.akdn.org (ইসমাইলিয়াদের বর্তমান মানবসেবাময় সংগঠনের ওয়েবসাইট)
৭) http://www.druglibrary.org/schaffer/hemp/assassin.htm (ফিলিপ কে. হিট্টি-র অল্প জায়গায় ভালো তথ্যসংকলন)
৮) http://www.alamut.com/subj/ideologies/alamut/iqbal_Sabbah.html (আমার পড়া সবচাইতে তথ্যঋদ্ধ উপকরণ, অবশ্যই পড়া উচিত)।
৯) http://www.britannica.com/EBchecked/topic/256475/Hasan-e-Sabbah (ব্রিটানিকার হাস্যকর সামান্য উপাদান)।
১০) http://www.lastsigh.com/reviews99/hashisheen.htm (বিল লসওয়েলের এ্যালবামের পুরোটাই পাবেন এখানে)।
ব্লাডি সিভিলিয়ান
নেহাৎ সাদাসিধে নাগরিক হয়ে বাঁচতে চাই। একটু অন্যরকম স্থান, কালের রূপ দেখতে চাই। পড়তে চাই, পড়ি -- এটুকুই। আর তেমন কিছু নয়।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৫ comments
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১২:১৮ অপরাহ্ণ)
প্রিয় ব্লগ মডারেটর,
শুভেচ্ছা জানবেন। আজ সাহায্য চাইছি না বরং একটি অনুযোগ নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আপনাদের দরবারে।
আমার শেষ লেখাটি আপনাদের মডারেশনের ছোঁয়ায় কিছুটা উন্নত হয়েছে স্বীকার করি। লেখাটায় ব্লক-কোট ছিলো না, করে দেয়া হয়েছে। তাতে সৌকর্য বেড়েছে। কিন্তু, একটি ব্যাপার নিয়ে মর্মাহত।
কিছু কিছু জায়গায় আমি একটি লাইনেই একটি অনুচ্ছেদ শেষ করেছিলাম (অনেকটা জহির রায়হানের আদলে)। গতি বাড়ানো বা জোর দেয়ার জন্যে আমি কাজটা মাঝেসাঝে করি। কিন্তু, দুঃখ নিয়ে দেখলাম আপনারা সেগুলো একটি অনুচ্ছেদেরই অন্তর্গত করেছেন। এছাড়া, একাধিক অনুচ্ছেদও একটি অনুচ্ছেদের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। মডারেশনের নীতিমালা ঘেঁটে কোথাও পেলাম না যে, আপনারা এগুলো করবেন বলে জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে ভুল বানান বা ভুল উদ্ধৃতি ঠিক আপনারা করতেই পারেন। কিন্তু, বাক্য বা অনুচ্ছেদের গঠন পরিবর্তনও কি এর মধ্যে পড়ে? ওটা কি লেখকের নিজস্ব শৈলীপ্রকাশের অধিকারের অন্তর্গত নয়?
সত্যিই, আহত হলাম, আহত হলাম।
মুক্তাঙ্গন - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৪:৪৪ অপরাহ্ণ)
@ ব্লাডি সিভিলিয়ান,
আপনার সাথে একমত। বাক্য বা অনুচ্ছেদ গঠন অবশ্যই লেখকের নিজস্ব শৈলীপ্রকাশের অধিকারের অন্তর্গত।
দীর্ঘ পোস্টের ক্ষেত্রে ফরম্যাটিংয়ের বিষয়গুলো জরুরী, পাঠ সুবিধার আলোকে। আপনি হয়তো খেয়াল করেননি, আপনার বড় অনুচ্ছেদগুলোরও বেশীরভাগই একটার সাথে আরেকটা লেগে লেগে ছিল, কোন ধরণের আন্তঃঅনুচ্ছেদ ফাঁক ছাড়াই (সেগুলোও ঠিক করে দেয়া হয়েছে)। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্লককোটের অভাব তো ছিলই, উদ্ধৃত কবিতার লাইনের ক্ষেত্রে ইনডেনটিংয়ের সমস্যাও ছিল (দু’টোই ঠিক করে দেয়া হয়েছে)। আপনার সংযোজিত ছবির কোডেও ত্রুটি ছিল। চেষ্টা করে মাত্র একটি ছবির কোড উদ্ধার করা গেছে।
এসব কারণে বোঝার কোন উপায় ছিল না কোনটা আপনার ইচ্ছাকৃত, আর কোনটা ফরম্যাটিংকালীন সচেতনতার অভাব। মডারেশন টিমের মনে হয়েছে আপনার হয়তো সাহায্য দরকার, এবং সে অনুযায়ী যে অংশগুলো ফরম্যাটিংয়ের সমস্যা মনে হয়েছে সেগুলো সাধ্যমত সংশোধন করে নেয়া হয়েছে।
আপনি চাইলে এখনো লগিন করে ক্ষেত্রবিশেষে আপনার অনুচ্ছেদ বিভাজন “জহির রায়হান” এর মতো করে নিতে পারেন।
ভবিষ্যতে পোস্ট সাবমিট করার আগে এই বিষয়গুলোতে আপনাকেই আরও সচেতন হওয়ার অনুরোধ করবো। ফরম্যাটিং কিংবা কারিগরি কোন বিষয়ে সংশয় থাকলে দয়া করে আগে প্রশ্ন করে জেনে নিন। পোস্ট সেক্ষেত্রে “ড্রাফট” হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, প্রকাশের জন্য চূড়ান্তভাবে “সাবমিট” করে দেয়ার পরিবর্তে। আর প্রতিটি পোস্ট ড্রাফট অবস্থাতেও “প্রিভিউ” দেখে নেয়ার সুযোগ রয়েছে, সেটি সদ্ব্যবহারের পরামর্শ দেবো।
ধন্যবাদ।
মুক্তাঙ্গন - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৪:৪৭ অপরাহ্ণ)
গত ১০ ফেব্রুয়ারী এই পোস্টটি অন্য একটি ব্লগ প্লাটফর্মেও প্রকাশ করা হয়েছে। মুক্তাঙ্গন এর রিপোস্ট নীতির আলোকে পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে লেখকের ব্যক্তিগত ব্লগপাতায় সরিয়ে দেয়া হল। এই নিয়মটির বিস্তারিত পাওয়া যাবে এখানে।
ধন্যবাদ।
রায়হান রশিদ - ৬ জুন ২০১০ (১০:১৮ অপরাহ্ণ)
আপনার লেখাটা আর জেফারসন গ্রে’র Holy Terror: The Rise of the Order of Assassins রচনাটি মিলিয়ে পড়লাম। নতুন অনেক বিষয় জানা গেল। কয়েকটি অংশ বিশেষ করে নজর কাড়লো, বিশেষত বাংলাদেশের জামাত শিবির এর রাজনীতি কিংবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে বহুল প্রচলিত আত্মাহুতিমূলক জঙ্গী তৎপরতার সাথে সে সবের মিলের কারণে।
যেমন: গ্রের লেখার এই অংশটিতে বিবৃত কৌশলের সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে এবং জোবরা গ্রামে শিবির কর্মীদের সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলেও সে কৌশলের পূনরাবৃত্তি ইত্যাদির ভীষন মিল লক্ষ্য করা যায়:
ব্লাডি সিভিলিয়ান - ৭ জুন ২০১০ (৩:৫৭ অপরাহ্ণ)
ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার আর মন্তব্যের জন্যে।
হুঁ, মিল আছে বটে। আমারও তাই মনে হয়েছিলো। ওপরে এক জায়গাতে তা উল্লেখও করেছি।
শুভেচ্ছা রইলো।