মূলত ‘অনুমান’ কোন তুচ্ছ বিষয় নয়। এর আশ্রয় না নিয়ে মানুষের এক মুহূর্তও চলে না। অনুমান করার শক্তি ক্ষীণ বলেই ইতর প্রাণী মানুষের চেয়ে এত পিছনে এবং মানুষ এত অগ্রগামী তার অনুমান করার শক্তি প্রবল বলেই। ভবিষ্যতের চিন্তা মাত্রেই অনুমান, কতক অতীতেরও। আর ভবিষ্যত ও অতীত বিষয়ের চিন্তা ও অনুমান করতে পারে বলেই মানুষ ‘মানুষ’ হতে পেরেছে। – আরজ আলী মাতুব্বর (অনুমান, ১৯৮৩)
মাতুব্বর তার অনুমান নামক পুস্তকটির ভূমিকাতে এভাবেই মানুষের অনুমান ক্ষমতার গুরুত্বকে অনুধাবন করেছেন। শিল্প, সাহিত্য, দর্শন এমনকি বিজ্ঞানের জগতেও মানুষের সৃষ্ঠিশীলতার অন্যতম নিয়ামক তার অনুমান শক্তি। অনুমান শব্দটিকে যত দুর্বল ও লাগামছাড়া মনে হয় এটি আসলে তা নয়, কারণ মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী, প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী, তার অনুমান যুক্তি নির্ভর, যুক্তিহীন অনুমান সে নিজের স্বার্থেই করতে চায়না। যুক্তিনির্ভর অনুমানকে উৎস ধরেই দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বিকশিত হয়, তবে আধুনিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে অবশ্য পরীক্ষনের মাপকাঠি পেরোতে হয় অনেক ক্ষেত্রেই। প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিবাদী হওয়া সত্ত্বেও জীবন দর্শনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ কেন যুক্তির আশ্রয় না নিয়ে অন্ধবিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় তা নৃতাত্বিক ও মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের বিষয়, আমি এখানে সে আলোচনা করার সাহস পাইনা। আমরা বরং আরজ আলী মাতুব্বর রচিত ‘অনুমান’ পুস্তকটি নিয়ে খানিকটা আলোচনা করব।
‘অনুমান’ পুস্তকটি যুক্তিনির্ভর ‘অনুমানে’র, প্রকৃত অর্থে ‘বিশ্লেষনে’র। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত এই পুস্তকে মাতুব্বর যে অনুমানগুলো করেছেন সেগুলো মূলত নৃতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ। আরজ আলী মাতুব্বরের ‘সত্যের সন্ধানে’ বা ‘সৃষ্ঠিরহস্য’ নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়েছে ‘অনুমান’ নিয়ে তা হয় নাই। অথচ অনুমান পুস্তকটি আরজ আলী মাতুব্বর রচিত অন্য যেকোন পুস্তকের চেয়ে বেশি বৈচিত্রধর্মী। ‘সত্যের সন্ধানে’ জিজ্ঞাসা নির্ভর দর্শনের পুস্তক, টমাস পেইন রচিত ‘The Age of Reason’ এর সাথে এর তুলনা করা চলে। অন্যদিকে ‘সৃষ্ঠিরহস্য’ তথ্যনির্ভর প্রবন্ধ পুস্তক, জিজ্ঞাসা নির্ভর দর্শন এখানেও উপস্থিত। এই পুস্তকগুলো তথ্য ও যুক্তি তর্ক নির্ভর, সাহিত্যের শিল্পগুন এখানে খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। ‘অনুমান’ই একমাত্র পুস্তক যাতে আরজ আলী মাতুব্বরের লেখার শিল্পগুনের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। আগের পুস্তকগুলোর বিনয় এখানে অনেকটাই অনুপস্থিত, তিনি এখানে নায়ককে ভিলেন বানিয়েছেন, বানিয়েছেন ভিলেনকে নায়ক, রম্য করেছেন, খোঁচা দিতে ছাড়েননি, ফিকশন তৈরি করেছেন, ধারণ করেছেন লোকায়ত বাঙলা সাহিত্যের বিপ্লবী চেতনাকে। আগেই বলেছি এই পুস্তকের বৈচিত্রের কথা, কিন্তু সে বৈচিত্র শুধু বিষয়বস্তুতে সীমাবদ্ধ নয়, বৈচিত্র রয়েছে শিল্পমানেও। এই পুস্তক পড়তে গেলে খটকা লাগে, কোথাও কোথাও তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, আকাশ ছুঁয়েছেন, তার লেখার ত্যাজে পাঠককে প্রায় অন্ধ করে ফেলেছেন, আবার কিছু অংশে তিনি বিষয়বস্তুর বিচারে ও লেখার ধারাবাহিকতায় খুব একটা বিবেচনার পরিচয় দেন নাই। বিষয়বস্তু ও শিল্পমানের বৈচিত্রের এ কারণ বিশ্লেষনের প্রয়োজন আছে, আরজ আলী মাতুব্বরকে বোঝার জন্য এবং তিনি লোকায়ত বাঙলা সাহিত্যের যে ধারার প্রতিনিধিত্ব করেন তার খাতিরে।
এই পুস্তকে অধ্যায় রয়েছে সাতটা, যার মধ্যে প্রথম ছয়টা প্রবন্ধ এবং সর্বশেষ ‘সমাপ্তি’ অধ্যায়ে আরজ আলী মাতুব্বর অনেকটা তার পাঠকদের কাছে শেষ বিদায় নিয়েছেন, তখন তার বয়স ছিল তিরাশি, পঁচাশি বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । প্রবন্ধ ছয়টার মধ্যে প্রথম প্রবন্ধ ‘রাবণের প্রতিভা’ ও সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘শয়তানের জবানবন্দি’ সবচেয়ে শক্তিশালী ও সর্বাপেক্ষা অধিক আলোচনার দাবিদার। ‘ফেরাউনের কীর্তি’ অনেকটা ‘রাবণের প্রতিভা’র ধাঁচেই রচিত, তবে ‘রাবণের প্রতিভা’র তুলনায় খানিকটা নিরাবেগ। ‘ভগবানের মৃত্যু’ অপেক্ষাকৃত ছোট প্রবন্ধ হলেও শিল্পগুন বিচারে শক্তিশালী প্রবন্ধ, এতে রম্য রয়েছে, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তির্যক্ বান রয়েছে। অন্যদিকে ‘আধুনিক দেবতত্ত্ব’ ও ‘মেরাজ’ অপ্রকৃত বৈজ্ঞানিক (pseudo scientific) তথ্যের দোষে দুষ্ট।
‘অনুমান’ পুস্তকটি বৃহৎ না হলেও বিস্তৃত আলোচনার দাবি রাখে। স্বল্প পরিসরে খুব ভালোভাবে তা করা সম্ভব না। ব্যক্তিগত পছন্দের কারণেই ‘শয়তানের জবানবন্দি’র উপর জোর দিতে চাই। বিশ্লেষণ এই অভাজনের একান্তই ব্যক্তিগত। দোষ ত্রুটি ও গাধামির ক্ষেত্রে উপদেশ এবং গালাগালি দুটোকেই অভিন্দন জানাই। বিনয়ের সাথে বলতে চাই, ‘রাবণের প্রতিভা’ আমার পড়া আধুনিক বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম সাহসী প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে আরজ আলী রাবণকে নায়ক বানিয়েছেন, রামকে বানিয়েছেন ভিলেন। এই কাজ তিনি করেছেন যুক্তি নির্ভর অনুমানের মাধ্যমে, যাকে আসলে যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ বলাই ভালো, এবং সেই বিশ্লেষনের পক্ষে তথ্য উপাত্তও তিনি কম হাজির করেন নাই। ‘রামায়ণ প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সাহিত্য কীর্তি, হিন্দুদের কাছে পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন একটা পুস্তকের মূল চরিত্রগুলোর এমন অপ্রচলিত বিশ্লেষণ তিনি কেন করলেন। উত্তর হচ্ছে, এই কথাটা বোঝাতে যে, প্রচলিত ইতিহাস ও মিথ রচিত হয় বিজয়ীর হাতে, বিজীতের হাতে না। এটা আসলে অনেক পুরনো একটা বিষয়। দুটি পরস্পর বিরোধী জাতি বা গোষ্ঠী একই ঘটনার ইতিহাসকে নিজ নিজ স্বার্থে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে রচনা করে গেছে এমন ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রয়েছে। কিন্তু যেখানে বিজীতের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না কিংবা বিজীতের সমাজ সংস্কৃতি বিজয়ীর সমাজ সংস্কৃতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায় সেখানে ইতিহাসের মূল রুপ খুঁজতে যাওয়া কষ্টসাধ্য, আর মিথ ও গাঁথার ক্ষেত্রেতো অনুমানের বিকল্প কিছুই থাকে না, তবে অবশ্যই যুক্তিনির্ভর অনুমানের। বাঙলা সাহিত্যে এই কাজটা খুব বেশি মানুষ করেন নাই। মধ্যযুগে কিছু কবি-সাহিত্যিক ধর্মীয় উপাখ্যানকে প্রেমোপাখ্যানে পরিণত করেছেন, কাহিনীতে ধর্মের চেয়ে মানুষের মূল্য বেশি দিয়েছেন, ‘ইউসুফ জোলেখা’, ‘মনসা মঙ্গল’কে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, বাঙলার লোকায়ত কবি ও বাউল শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় তত্ত্ব-কাহিনীর সমালোচনা করেছেন, সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মাইকেল মধুসুধন দত্ত্ তার ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যে মূল চরিত্র করেছিলেন রাবণপুত্র মেঘনাদ তথা ইন্দ্রজিতকে, কিন্তু মেঘনাদের চরিত্র সেখানে এক ট্রাজেডির নায়ক চরিত্র, রাম-রাবণের ব্যক্তিগত যুদ্ধের মাঝে বলি হওয়া ত্যাজোদীপ্ত মহান নায়ক, অনেকটা হ্যাক্টরের মত। ‘মেঘনাদ বধ’এ ধর্মীয় কাহিনীর ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ আছে, কিন্তু তা মূল কাহিনী বা বিশ্বাসকে সরাসরি আঘাত করে নাই, করেছে আবেগিভাবে। বৃটিশ শাসনামলে বাঙলাদেশে যে ইংরেজি শিক্ষিত সাহিত্যিক সমাজের উদ্ভব ঘটে, মধুসুদন সে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে আরজ আলী গ্রাম বাঙলার কৃষক, পালা গানও গাইতেন একসময়। যে অন্যায় ও অন্ধ সংস্কার তিনি দেখেছেন, যার বিরুদ্ধে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তা আমাদের আবহমান বাঙলার মাটি মানুষের মাঝে বিরাজমান। নিজের চেষ্টায় আধুনিক সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের চর্চা করলেও তার চিন্তাধারার মূল শিকড় লোকায়ত বাঙলার নিজস্ব সম্পদ, তার সাহিত্যের শিল্পগুন লোকায়ত বাঙলার কবি বাউলের চিন্তাধারা আর আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান যুক্তিবাদের মিলিত সংস্করন, একান্তই মৌলিক। ‘রাবণের প্রতিভা’য় চরীত্রের বিপরীতধর্মী বিশ্লেষণ করেই তিনি ক্ষান্ত হন নাই। জাতে, সংস্কৃতিতে এবং চিন্তা চেতনায় আরজ আলী অনার্য। বেদ বিরোধী, অনার্য, স্বদেশভূমি রক্ষার যুদ্ধে শহীদ রাবণের প্রতি সহানুভুতি জানাতে তিনি দেরি করেন নাই। রামের বিরুদ্ধে তার বিশ্লেষণ যুক্তিপুর্ণ, তবে তা শ্লেষাত্মক ও বিদ্রুপধর্মী, রাম বিরোধী এই শ্লোকাত্মক মনভাব তিনি খোলাখুলি ভাবেই করেছেন বলে মনে হয়। ‘ফেরাউনের কীর্তি’ও ধর্মীয় গাঁথার ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ, কিন্তু ‘রাবণের প্রতিভা’র মত আবেগ, সহানুভুতি, শ্লেষ, ঘৃণা এখানে খুঁজে পাওয়া যায়না। ফেরাউন যে কোন একক ব্যাক্তি নন, তাওরাতের ইশ্বর ‘জেহোভা’যে শুধুমাত্র ইহুদিদের ইশ্বর, এসব অনেকের কাছেই নতুন কথা হলেও আরজ আলী মাতুব্বরের নিজস্ব বক্তব্য এই প্রবন্ধটিতে কম। রাবণ ও রামের প্রতি অনুভুতি ও আবেগের যে তীব্রতা তিনি পোষণ করেন, মুসা বা ফেরাউন রামেসিসের ক্ষেত্রে তা তিনি করেন না। যুক্তি তর্ক নয় বরং তথ্যই এই প্রবন্ধের মূল উপজীব্য। আগেই বলেছি, ‘ভগবানের মৃত্যু’ ছোট কিন্তু শক্তিশালী। রম্য করে এর আগে আরজ আলী আর কোন লেখা শুরু করেন নাই। তার এই রম্য ব্যাঙ্গধর্মী। তিনি এই লেখা শেষও করেছেন ব্যাঙ্গ দিয়ে। ভগবান নামের অর্থ তিনি বিশ্লেষণ করেছেন, বলেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাঝে স্রষ্টা সম্পর্কে ধারণার কথা, এবং এইসব কল্প কাহিনীর অসারতাও তিনি তুলে ধরেছেন। শিশুশুলভ অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তির্যক বাণ হেনেছেন তিনি এ লেখায়। তবে এই সব কল্প কাহিনী ও অন্ধ বিশ্বাসের উৎপত্তি সন্ধানে ব্যাপক আলোচনা তিনি করেন নাই, যতটুকু করেছেন তাতেও খুব বেশি গভীরতা নাই। এই প্রবন্ধের শক্তি এর পরিষ্কার ও শ্লোকাত্মক কথনে, বরাবরের মতই জিজ্ঞাসা ধর্মী, তবে বিনয়ের বাহুল্যহীন। ‘আধুনিক দেবতত্ম’ ও ‘মেরাজ’ নিঃশন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্তত আমাদের সময়কার পাঠকদের কাছেতো বটেই। দুটি প্রবন্ধই অপ্রকৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্বের আলোচনা। এই ক্ষেত্রে অবশ্য লেখককে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। তিনি বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন, একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন, কিন্তু বিজ্ঞানী ছিলেন না। আর যে যুগে এই পুস্তক তিনি লিখেছেন সেই যুগে new age mysticism, new age occultism এই সব popular culture এর আবর্জনা নিয়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয় বরং অনেক বিজ্ঞানীও মেতেছিলেন, এখনো অনেকে মেতে আছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে ভুত, প্রেত, আত্মা, দেবতা বা স্রষ্টা অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে তখন রহস্য ও ভাববাদ প্রিয় মানুষ আশ্রয় খুজেছে ভিনগ্রহবাসী অতি উন্নত প্রানীদের পৃথিবীতে আগমন ও আমাদের সভ্যতায় তাদের অবদানের তত্ত্বে, যেসব তত্ত্বে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্কের চেয়ে কল্পনা ও অতিরঞ্জনেরই বেশি অবদান। প্রকৃতপক্ষে, ‘এরিক ফন দানিকেন’ বা ‘জেচারিয়ান শিচিন’এর মত তথাকথিত নৃতাত্ত্বিক বা বিজ্ঞানীদের এইসব আধুনিক দেবতত্ত্ব মূল ধারার বিজ্ঞানীরা ‘পুছেনা’ বললেই চলে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা প্রমান হওয়ার মত তথ্য প্রমান এই তত্ত্বগুলোর নাই বলেই। বাংলাদেশের কিছু পেপারব্যাক প্রকাশনী সে সময় দানিকেন সাহেব ও তার তত্ত্বকে এদেশে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছিলো, দুঃখের বিষয় সে সময় এদেশের জ্ঞানীগুনী জন এগিয়ে এসে এই সব তত্ত্বের অতিরঞ্জন ও অতিকথনের বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই। আরজ আলী মাতুব্বর ইংরেজি পড়তে পারতেন না, এই সব তত্ত্ব সম্বন্ধে বিদেশী মূলধারার বিজ্ঞানীদের লেখাও তিনি তাই পড়তে পারেন নাই। অন্যদিকে ‘সত্যের সন্ধানে’র মত দর্শনের পুস্তক হিসেবে বা ‘সৃষ্টি রহস্যে’র মত তথ্যপুঞ্জ হিসেবে তিনি ‘অনুমান’কে লেখেন নাই, বরং গুরুত্ব দিয়েছেন অনুমানের উপর, তাই হয়ত এইসব তত্ত্ব কতটা বৈজ্ঞানিক বা অবৈজ্ঞানিক তা নিয়ে তিনি বিচার করেন নাই। যতকিছুই হোক, এই প্রবন্ধ দুটি এই পুস্তকের দুর্বল অংশ। এই পুস্তকের সর্বশেষ প্রবন্ধের নাম ‘শয়তানের জবানবন্দি’। ‘অনুমান’ পুস্তকটিকে যদি এর একটি মাত্র প্রবন্ধের জন্য হলেও স্মরণ করতে হয় তবে তা হচ্ছে এই ‘শয়তানের জবানবন্দি’। পুরো পুস্তকে এই লেখাটি অন্য সব লেখার চেয়ে অনেক উঁচুতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আরজ আলী মাতুব্বরের ‘শয়তানের জবানবন্দী’ আর শফিকুর রহমানের ‘স্বর্গ মুসলমানের’ ছাড়া এ জাতীয় লেখা বাঙলা সাহিত্যে আর আছে কিনা আমি জানিনা, থাকলেও খুব বেশি যে নাই তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। দার্শনিক আরজ আলী নয়, বরং সাহিত্যিক আরজ আলী এ লেখায় তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। ফিকশন ধাঁচের এ লেখায় ইসলাম, খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্ম স্বীকৃত মানব জাতির মহাশত্রু শয়তানকে তিনি বিপ্লবাত্মকরকম ভিন্ন রুপে উপস্থাপন করেছেন। একত্ত্ববাদী এই তিনটি ধর্মেই শয়তান খোদা বিরোধী চরিত্র, মানব জাতিকে প্রতারিত করতে সর্বদা ব্যস্ত। ইহুদী ধর্মের প্রাথমিক যুগে অবশ্য শয়তানের বিশেষ গুরুত্ব ছিলনা, তাওরাতের কোথাও শয়তানকে খুঁজে পাওয়া যায়না। বিবি হাওয়াকে গন্ধম ফল বা জ্ঞান বৃক্ষের (tree of knowledge) ফল খাওয়ানোর যে কাহিনী তাওরাতে বর্ণিত আছে তাতে যে প্রতারণাকারীর কথা বলা আছে তাকে সাপ বলা হয়েছে, শয়তান বলা হয়নি, পরবর্তিকালে অবশ্য ইহুদী ও খৃষ্টানরা এই সাপকে শয়তানের সাথে মিলাতে শুরু করে। ইহুদী ধর্মে শয়তান চরিত্রটি গুরুত্ব পেতে শুরু করে ঈসা নবীর জন্মের কয়েকশ বছর আগে থেকে। পরবর্তিতে খৃষ্টান ধর্মে শয়তান শুধুমাত্র খোদাবিরোধী হিসেবেই নয় বরং খোদার বিপরীত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। খৃষ্টান ধর্মে শয়তান অনেকটা প্রাচীন পারস্যের জোরাস্ট্রিয়ান ধর্মের আহরীমানের মত, যে সকল খারাপ ও পাপের প্রভু অন্যদিকে আল্লাহ হচ্ছেন সকল ভালো ও পূণ্যের প্রভু। শয়তান কোথা থেকে এলো তার অবশ্য পরিষ্কার ধারণা ইহুদী বা খৃষ্টান ধর্মে খুঁজে পাওয়া কষ্ট। কেননা, বিভিন্ন ইহুদী রহস্যধর্মী ধর্মীয় পুস্তকের বিলিয়াল, বেলযেবাব, লুসিফার প্রমুখ চরিত্রকে পরবর্তিতে শয়তানের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে, যে চরিত্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক পরিচয় রয়েছে। ইসলাম ধর্মে শয়তানের প্রকৃত নাম বলা হয়েছে ‘আযাযিল’। এই আযাযিল নামটি ইহুদি বা খৃষ্টান ধর্মে শয়তানের সাথে সম্পর্কিত না। তাওরাতে আযাযিল নামে এক মরুভূমির ভুতের কথা আছে। অন্যদিকে ‘Book of Enoch’ বা ‘নবী ইউনুসের পুস্তক’ নামক সহিফায় আযাযিলের নাম একজন পথভ্রষ্ট ও পতিত ফেরেস্তার নাম হিসেবে পাওয়া যায়, তবে তার পতনের ঘটনা মানব সৃষ্টির অনেক পরের ঘটনা, নুহ নবীর সময়কার। সে যাই হোক, শয়তান সম্পর্কে খৃষ্টান ও ইসলামের ধারণা প্রায় একই রকম। ইসলাম ধর্মে শয়তানের ক্ষমতা ও পরিচয় নিয়ে অনেক ইসলামী চিন্তাবীদকেই ইসলামের প্রাথমিক যুগে ধন্ধে পরতে হয়েছে। শয়তান পতনের পূর্বে ফেরেশতা ছিলেন না জ্বীন ছিলেন তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা কম হয় নাই। কোরআন শরিফে শয়তানের এ পরিচয়ের কোন মীমাংসা নাই। সুরা আল বাক্কারার তিরিশ থেকে সাঁইত্রিশ নং আয়াতে ইবলিশ কর্তৃক আদমকে সিজদা না করার, মানে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কাহিনী বর্ণিত আছে। এখানে বলা হয়েছে যে সকল ফেরেশতাই আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আদমকে সিজদা করেছিল, শুধু ইবলিস এই আদেশ মান্য করে নাই। এসব আয়াতে ইবলিশকে ফেরেশতাদের একজন ছাড়া অন্যকিছু মনে করার কোন কারণ নাই। কিন্তু পরবর্তিতে বিভিন্ন ইসলামী কাহিনী ও হাদিসে শয়তানকে জ্বীন জাতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যে কিনা তার ইবাদতের জোরে ফেরেশতাদের সর্দার হতে পেরেছিল। যাই হোক, শয়তানকে ফেরেশতা হিসেবে মানতে এই অনিচ্ছার কারণ রয়েছে। ইসলাম ধর্ম মতে ফেরেশতারা আল্লাহর দাসানুদাস, তাদের মুক্তচিন্তা করার ক্ষমতা নেই, তারা প্রোগ্রাম করা রোবটের মত, প্রোগ্রামের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই, তাই আল্লাহর আদেশ অমান্য করার মত ক্ষমতাও তাদের নেই, সুতুরাং শয়তানের পক্ষে ফেরেশতা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সমস্যা হল, সুরা বাক্কারার এই সাতটি আয়াতেই আবার দেখা যায়, আল্লাহ যখন মানুষ বানাতে চাইলেন ফেরেশতারা তখন শুরুতে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন, যা মুক্তচিন্তার পরিচয়। আবার আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের বলছিলেন, আমি সবই জানি, তোমরা আমাকে যা বল তাও যা গোপন কর তাও, তখন আমরা দেখি যে ফেরেশতাদের তথ্য গোপন করার ক্ষমতাও রয়েছে, মুক্তভাবে চিন্তা তারা করতে পারে বৈকি। শয়তানের ক্ষমতা নিয়ে ইসলাম যে সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা মূলত তাওহিদ বা একত্ত্ববাদের সাথে সম্পর্কিত। ইসলামে শয়তান খৃষ্টান ধর্মের মত Anti God নয়, বরং অনেক কম ক্ষমতার অধিকারী, Lesser Being, আল্লাহ সকল শুভ কর্মের উৎস হলেও শয়তান সকল অশুভের দন্ডমুণ্ডের কর্তা নন, তিনি শুধু আল্লাহর কাছ থেকে মানুষকে দাগা দেয়ার ক্ষমতা অনুরোধ করে চেয়ে নিয়েছেন, ভালো মন্দ যাবতীয় সবকিছুর নিয়ন্ত্রক আসলে আল্লাহ। তারপরও, সাধারণত মুসলমানরা পাপকর্মের জন্য শয়তানকেই দায়ী করে থাকেন। ‘শয়তানের জবানবন্দী’তে শয়তান তাই প্রশ্ন করেছেন, “ শুভ কাজের কর্তা আল্লাহতা’লা এবং অশুভকাজের কর্তা শয়তান।’ যদি তাই হয় তাবে ‘আল্লাহ অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও সর্বশক্তিমান’ — এ কথাটির সঠিকতা কি? প্রশ্ন এখানে তাওহীদের, আর এখানেই শুরু হয় যাবতীয় গোলমালের, প্রশ্ন আসে, পাপের জন্য দায়ি আসলে কে- মানুষ, শয়তান, না আল্লাহ স্বয়ং। প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাকদির বা আমোঘ নিয়তির ধারণা, সবকিছুই যেখানে আগে থেকে ঠিক করা, মানুষের যা পরিবর্তন করার ক্ষমতা নেই, সেখানে মানুষের পাপ বিচার করা হয় কোন মাপকাঠিতে, শয়তানেরই বা মানুষকে পাপের পথে নিয়ে যাওয়ার দায় নেয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? এসব প্রশ্ন কোন নতুন প্রশ্ন নয়, পরস্পর বিরোধী তত্ত্ব একটি মূল মতবাদের অংশ হলে এসব প্রশ্ন যাগেই। আমাদের গ্রাম বাঙলার মানুষের এসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবার ও প্রশ্ন করার একটা নিজস্ব ধরণ আছে। লৌকিক বাঙলার প্রগতিশীলশ্রেনী, সে হাজার বছর আগের বৌদ্ধ সহজীয়াদের থেকে শুরু করে বাউলদের সময় পর্যন্ত ধর্মীয় মতবাদের স্ববিরোধী তত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রশ্নের একটা নির্দিষ্ট ‘ধাঁচ আছে। আরজ আলীর ‘শয়তানের জবানবন্দী’ সেই ‘ধাঁচের প্রতিনিধিত্ব করে, আবার, এই লেখা প্রচলিত বাঙলা সাহিত্যের বিচারে একেবারেই আনকোরা, আধুনিক। যেসব ভাবনা আমাদের মনে প্রতিনিয়ত উঁকি দেয়, যেসব প্রশ্ন আমরা করতে গিয়েও সাহস পাইনা, যে সব চিন্তা আমরা পাঁপের ভয়ে ভূলে যেতে চেষ্টা করি, এই ফিকশনে সেইসব ভাবনা আর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। শয়তানের প্রতিমূর্তি এখানে কোন দন্ত, শিংবহুল দানবের প্রতিমূর্তি নয়, বরং জুব্বা পাগড়ি দাড়িওয়ালা ত্যাজোদীপ্ত সৌম্য মূর্তি। শয়তানকে নিয়ে প্রচলিত ধারণার বাইরে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে নতুন বিষয় নয়। খৃষ্টপূর্ব এবং পরবর্তী সময়ে নস্টিক (Gnostic) রা তাওরাতে বর্ণিত সাপ তথা শয়তানকে মানুষের শত্রুর বদলে বন্ধু হিসেবে গণ্য করত, কেননা এই সাপ গন্ধম তথা জ্ঞানের ফল মানুষকে খাইয়েছিল আর তার ফলেই মানুষ ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা লাভ করেছিল, নির্বোধ পশু থেকে পরিণত হয়েছিল বোধসর্বস্য মানুষে। ইরাক, সিরিয়া ও তুর্কিতে বসবাসকারী ‘ইয়েজিদী’ গোত্রের লোকজন বিশ্বাস করে শয়তান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা এবং আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি পৃথিবী শাসন করছেন। এসব অবশ্য ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ হতে পারে ‘জন মিল্টনে’র ‘প্যারাডাইস লস্ট’। ‘প্যারাডাইস লস্ট’ এ শয়তানের প্রতি সহানুভুতি জাগে, এখানে সে কেন্দ্রীয় চরিত্র, স্বর্গ হতে বিতাড়িত, শয়তানের শোকগাথা এই এপিক। ‘শয়তানের জবানবন্দি’তে ঠিক শয়তানের শোকের কথা তেমন নেই, যাও আছে তা শ্লেষপূর্ণ। প্যারাডাইস লস্টের মত শয়তান এখানে দুঃখবাদী চরিত্র নয়, শয়তানের প্রতি সহানুভুতি নয় বরং নিজের জন্যই সহানুভুতি জেগে ওঠে পাঠকের। শয়তান এখানে বিদ্রোহী, তবে ঠিক স্রষ্টার বিরুদ্ধে না, বরং মানুষের প্রচলিত পশ্চাৎপদ অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে। শয়তানকে কোন একক চরিত্র হিসেবে গণ্য করা এই কাহিনীতে সম্ভব না, কোন একক কাহিনীর বর্ণনাও এখানে নেই। শয়তান এখানে আমাদের মনের বিভিন্ন সময়ের এক একটি জিজ্ঞাসু চরিত্রের প্রতিবিম্ব।
অনুমান এমন একটি পুস্তক যেখানে আরজ আলী মাতুব্বরের শিল্প চেতনা এবং জিজ্ঞাসু চরিত্র স্বকীয়তার সর্বোচ্চ মাত্রায় উদ্ভাসিত। এই পুস্তকটি নিয়ে এত স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত আলোচনা সম্ভব না। যতটুকু আলোচনা করেছি তা একেবারেই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আগেই বলেছি, দোষ ত্রুটি ও গাধামির ক্ষেত্রে উপদেশ এবং গালাগালি দুটোকেই অভিনন্দন জানাই। সবশেষে সবাইকে ‘অনুমান’ পুস্তকটি যারা পড়েননি তাদের পড়ার অনুরোধ জানাই, যারা পড়েছেন তাদের কাছে পুস্তকটি সম্বন্ধে আলোচনা ও বিশ্লেষনের আশা রাখি। আসসালামু আলাইকুম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১৫ comments
রায়হান রশিদ - ৯ জানুয়ারি ২০১০ (৮:৩৮ অপরাহ্ণ)
@ পারভেজ আলম,
অনেক ধন্যবাদ আলোচনাটির জন্য। আপনাদের নেয়া “আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগার” এর উদ্যোগটি অনন্য। অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা সেজন্য।
সেখানে কি বইগুলো পিডিএফ আকারে উত্তোলনের কথা ভাবছেন? মুক্তাঙ্গন এর “আনবাড়ি” তালিকায় সম্ভাবনাময় এই সাইটটি যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ থাকলো মডারেশন টিমের প্রতি।
পারভেজ আলম - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
jiggashu.com এ আরজ আলীর বইগুলো ইবুক আকারে রাখার ইচ্ছা আমাদের আছে। তবে “পাঠক সমাবেশ” এ ব্যপারে কোন আপত্তি করে কিনা সেটা আগে দেখতে হবে। কপিরাইটের যেহেতু একটা বিষয় আছে এবং পাঠক সমাবেশ যেহেতু অনলাইনে তার বই বিক্রির ব্যবস্থাও রেখেছে, তাই এখনি কাজটা করতে পারছিনা।
আপনাকেও অভিনন্দন।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (১২:২২ পূর্বাহ্ণ)
পারভেজ আলমকে ধন্যবাদ। একটি বিষয় হচ্ছে, অনুমান নামের গ্রন্থটি পাওয়া যাবে কোথায় তা কিন্তু ক্লিয়ার হলো না। এটি কি আরজ আলী মাতুব্বর সমগ্রে আছে? গ্রন্থটি তো ইন্টারনেটেও দেয়া যায়। কারণ আমরা তো এটি পড়তে চাই।
পারভেজ আলম - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ)
বইটা আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্রতে আছে
ইমতিয়ার - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
আরজ আলী মাতুব্বরের অন্যতম গুণমুগ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব বিষয়ের অধ্যাপক কাজী নূরুল ইসলাম লিখেছিলেন :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখনও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটাতে না পারুক, আরজ আলী মাতুব্বরের চিন্তাশীলতার সঙ্গে আমাদের পরিচিত করেছে, তাঁর চিন্তা আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করেছে,- এ-ও কি খুব কম পাওয়া?
বিপ্লব রহমান - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৫:৫৬ অপরাহ্ণ)
একমত। আরজ আলী খুব চমৎকার ও দ্বান্দ্বিক ভাবনায় সেসব সহজিয়া প্রশ্নের সহজিয়া উত্তর খুঁজেছেন। একজন গ্রামের মানুষ যেমন করে ভাবে, প্রশ্ন করে, তার উত্থাপিত প্রশ্নগুলো সেরকমই, উত্তর খোঁজার ধরণও একই রকম– সহজিয়া। তার এই স্টাইলটি আমার খুব পছন্দ। আর এটি সবচেয়ে বেশী মূর্ত ‘সত্যের সন্ধানে’র প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদেই, যেটি তাঁর নিজস্ব করা। …
‘অনুমান’ বইটি পড়া হয়নি। এটি পড়ার জন্য জোর তাগিদ অনুভব করছি। লেখককে এই আগ্রহটুকু জাগিয়ে তোলায় ধন্যবাদ জানাই।
পারভেজ আলম - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (৯:৩৯ অপরাহ্ণ)
এই সহজিয়া প্রশ্ন পদ্ধতি কিন্তু অনে ক্ষেত্রেই বেশ কার্যকর এবং ইউরোপিয় যুক্তিবিদ্যার মার প্যাচের চেয়েও অনেক যৌক্তিক। পশ্চিমে যেখানে দার্শনিকরা নৈতিকতার সার্বজনিনতা অথবা আপেক্ষিকতা নিয়ে জটিল থেকে জটিলতর তর্কের অবতারণা করেছেন সেখানে আমাদের লালনের “পাপ পূন্যের কথা আমি কাহারে জিগাই” এর অল্প কিছু সহজিয়া প্রশ্নই অনেক বেশি কার্যকরল।
গৌতম - ১০ জানুয়ারি ২০১০ (১১:০০ অপরাহ্ণ)
আমার জীবনধারা বদলানোতে যে কয়জন মানুষের সরাসরি প্রভাব রয়েছে, আরজ আলী মাতুব্বর তাঁদের একজন। মনে পড়ে, তাঁর সত্যের সন্ধান পরার পর কয়েকদিনের জন্য বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম।
আরজ আলী সমগ্রটা নেটে তুলে রাখতে পারলে একটা ভালো কাজ হতো। কিন্তু পাঠক সমাবেশ থেকে সেই অনুমতিটা কি পাওয়া যাবে?
তানবীরা - ১১ জানুয়ারি ২০১০ (৫:০৫ পূর্বাহ্ণ)
আমার মনের মধ্যে থাকা এলোমেলো প্রশ্নগুলোকে প্রথম স্থিরভাবে বসার জায়গা করে দিয়েছিলো, “সত্যের সন্ধানে” বইটি। আরজ আলী মাতুব্বরের “সত্যের সন্ধানে” বইটি এতো সহজ ভাষায় লেখা যে, কলেজ লাইফেও আমার পড়তে বা বুঝতে এতোটুকু সমস্যা হয়নি। পড়ে বারবার মনে হয়েছে, এগুলোতো আমারও কথা ছিল।
আমি সবচেয়ে বেশি মজা পাই শয়তানের জবানবদনী আর রাবণের প্রতিভা দুটো পড়ে। নচিকেতাও তার গানে বলেন, রাম যদি হেরে যেতো রাবায়ণ লেখা হতো, রাবন রাজা হতো সেখানে ।
পারভেজ ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার একটি লেখার জন্য
এ এম মইলন - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১:০৮ অপরাহ্ণ)
আমি মাতুব্বর সাহহেবের রচনা শমগ্র পরে নিজের ভেতরে জাগা অনেক প্রস্নের উত্তর পেয়েছি,আমি মনে করি তার মত মানুশের এই মুহুরতে খুব ই প্রয়জন বাংআলি তথা প্রিথিবির শমগ্র মানুশের জন্ন,
milon - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:২২ পূর্বাহ্ণ)
”ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত,,
সবাইকে বশন্তের উশ্ন শুভেছছা
আনওয়ার - ১৫ মার্চ ২০১০ (১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ)
অনুগ্রহ করে কোরআন পড়ুন এবং এতে সাংঘর্শিক কোনো কথা নাই. এটা অন্ধ বিশ্বাস না বরং যৈক্তিক. আল্লাহ, শয়তান, মেরাজ ও তাকদীর এগুলো নিয়ে আরো অধায়্ন করুন. অনুমান করুন এবং অনুমানের ব্যাখ্যা করুন.
Waheed Zaman - ২০ মার্চ ২০১০ (১১:৪৩ অপরাহ্ণ)
Dear Mr. Parvez Alam,
Thank you very much for your work in preserving the work of Mr. Aroj Ali Matubbor. During my college days we friends were really fascinated with his write ups. The story of when his mother died and the Mullahs did not permit him to take pictures of her dead mother really touched us.
With time and my exploration of other matters made me believe that the questions regarding Islam that came into his mind has got answers and they are logical. In his writeu ‘Shoytaan er Jobanbondi’ the basic two questions asked about Islam and Quran are :
1) Whether Shaytaan / Iblis is an angel or jinn?
2) Concept of freewill, sin and predestination
The answer for no. 1 : –
The story of Adam and Iblis is mentioned in the Quran in various places in which Allah (swt) says, “We said to the angels bow down to Adam: and they bowed down: not so Iblis”.
This is mentioned in:
Surah Al Baqarah Chapter 2 verse 43
Surah Al ‘Araf Chapter 7 verse 17
Surah Al Hijr Chapter 15 verses 28-31
Surah Al Isra Chapter 17 verse 61
Surah Ta Ha Chapter 20 verse 116
Surah Sad Chapter 38 verses 71-74
But in Surah Al Kahf chapter 18 verse 50 the Quran says:
“Behold! We said to the angels, “Bow down to Adam.” they bowed down except Iblis He was one of the Jinns.” [Al-Quran 18:50]
Arabic Rule Of Tagleeb
The English translation of the first part of the verse ‘We said to the angels bow down to Adam: they bowed down except Iblis’, gives us the impression that Iblis was an angel. The Quran was revealed in Arabic. In Arabic grammar there is a rule known as Tagleeb, according to which, if the majority is addressed, even the minority is included. If for example, I address a class containing 100 students of whom 99 are boys and one is a girl, and if I say in Arabic that the boys should stand up, it includes the girl as well. I need not mention her seperately.
Similarly in the Quran, when Allah addressed the angels, even Iblis was present, but it is not required that he be mentioned separately. Therefore according to that sentence Iblis may be an angel or may not be an angel, but we come to know from Surah Al Kahf chapter 18 verse 50 that Iblis was a Jinn. No where does the Quran say Iblis was an angel. Therefore there is no contradiction in the Quran. Also, Jinns have a free will and may or may not obey Allah, but angels have no free will and always obey Allah. Therefore the question of an angel disobeying Allah does not arise. This further supplements that Iblis was a Jinn and not an angel. ( This is By Mr. Zakir Naik, http://www.islamicvoice.com/march.2001/religion.htm)
2. Everything in existence is subject to Allah’s will and power. For Muslims, this goes without saying. It is an essential tenet of every Muslim’s faith. Allah says: “Indeed, Allah has power over all things.”
However, this is no excuse for human beings to evade responsibility for their own decisions. No one can argue that it was their fate to sin. We know this from firsthand experience. We know instinctively that we make our own decisions. We choose to do some things and refrain from doing other things. We carry out intentional actions. We intend, for instance, to travel or stay at home, to eat or to sleep. When we carry out these and other intentional actions, we recognize that we are doing so of our own volition.
It is on the basis of these intentions of ours that Allah judges us. We are not judged for the involuntary actions of our bodies, nor for what we are forced to do under compulsion or duress.
This is why we see that Allah says: “Whoever disbelieves in Allah after having believed – save one who is coerced (to make an utterance of unbelief) but whose heart is still fully resolved upon faith – but whoever finds ease in unbelief: on them is Allah’s wrath, and they will have an awful punishment.” [Sūrah al-Nahl: 106]
Whoever is coerced into something to the point that he or she has no choice but to comply, then he or she is legally exempt for that action in this world and sinless for it in the Hereafter. We are taken to account for what we do of our own free choice.
Many people put forth questions about free will and predestination with the sole aim of justifying their sinful tendencies. Whenever someone admonishes them for their sins, they say: “What I did was fated for me. It was Allah’s will. I had no choice.”
When we consider what the Qur’an says about our actions, we see that Allah connects our free will to His permitting us to carry out actions by our own choice. Allah says: “But you do not exercise you will, except that Allah wills it; for Allah is full of Knowledge and Wisdom.” [Sûrah al-Insân: 30]
We are furthermore told in the Qur’an that no one could believe or disbelieve except with Allah’s permission. Allah has permitted us to make the choice. If Allah had willed to subdue our wills, He could have compelled us to do one thing or another. Instead, He has permitted us to make our own choices and formulate our own intentions. This means we cannot avoid taking responsibility for the decisions we make.
Allah, in His wisdom, has given us an indisputable proof of our free will. This proof is our own unavoidable recognition that we make our own decisions. We can tell the difference between the involuntary movements of our body, like our heartbeats, and the free choices that we make. Therefore, those who wantonly goes about sinning, exercising their free choice all the way, cannot then turn around and say that Allah compelled them to sin. (http://xeniagreekmuslimah.wordpress.com/2010/03/17/allahs-decree-free-will-and-our-sins/).
Still I really like Aroj Ali Matubbor for his concepts regarding socialism, philosophy about life etc. But after exploring different aspects of theology and others I really find the holy Quran most AMAZING of all….. Thanks…
রেজাউল করিম সুমন - ১৭ এপ্রিল ২০১১ (১:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
বিজ্ঞানচেতনা পরিষদ-এর উদ্যোগে আরজ আলী মাতুব্বর স্মারক বক্তৃতা ১৪১৭ অনুষ্ঠিত হবে ২২ এপ্রিল ২০১১, শুক্রবার, বিকেল সাড়ে তিনটায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রমেশচন্দ্র মজুমদার মিলনায়তনে। ‘জীববৈচিত্র্য বিনাশের পূর্বাপর’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতাটি দেবেন নিসর্গী দ্বিজেন শর্মা।
Babu mostafizur Rahman - ৫ এপ্রিল ২০১৯ (৪:৩১ অপরাহ্ণ)
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বইটির বিষয়ে জানতে পেরে উপকৃত হলাম।আজিজ মার্কেটে পাওয়া যাবে কি? না পাইলে কোথাই পাওয়া যাবে জানাবেন কি?