২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি [...]

২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি, যদিও আমার টাইপ স্পিড এক কচ্ছপ চলা। আর আমার একটি অনুরোধ আছে, কেউ যদি পুরো ভাষণটির (না পাওয়া গেলে আংশিক) অডিও তুলে দিতে পারতেন সাইটে খুব ভালো হতো। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত…

একুশে ফেব্রুয়ারী আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষা শহীদদের চেতনা-সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না [...]

ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্তদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৪৮ সালে এ দেশের ছাত্র সমাজ মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে ছাত্রদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র সমাজের গৌরবময় রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি হয়। '৫২-এর ছাত্র আন্দোলন এদেশের বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে। একুশে ফেব্রুয়ারী আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষা শহীদদের চেতনা-সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা সকলেই জানি, একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী পালনের খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হবে। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ দিবসের ৫৭ বছর পূর্ণ হলেও ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবী অদ্যাবধি উপেক্ষিত। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১১ দফা, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮২-'৯০ সময়কালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ছাত্র সমাজের রক্তস্নাত ১০ দফা ও '৯০-এ মহান গণঅভ্যুত্থানসহ এ পর্যন্ত সকল গণ-আন্দোলনে প্রায় সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও শক্তি যে দাবীটি জানিয়ে আসছে, যা এখনো জনগণের প থেকে উত্থাপিত হচ্ছে তা হলো, শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হতে হবে মাতৃভাষা বাংলা এবং ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ জরুরী ভিত্তিতে বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। ৫৭ বছর আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের সূচনা, বুকের রক্ত ঢেলে জাতিকে রুখে দাঁড়াবার সাহসে উজ্জীবিত করেছিল যারা, সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালিত হবে। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মধ্যে সীমিত থাকেনি, ভাষাভিত্তিক চেতনায় জাতি ক্রমে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের শিকল ছিঁড়ে মুক্তিকামী মানুষ একুশের চেতনার পথ ধরেই একাত্তরে রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা। গৌরবোজ্জ্বল এই দিবসের অনন্যতা বিষয়ে জাতির গর্ব আরো বেড়ে গেছে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা…

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই ছিল এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন যেদিন সবগুলি ছাত্র সংগঠন প্রথম একসঙ্গে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী তারুণ্যের প্রথম সংঘবদ্ধ উত্থানদিন। সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনার এ দিবসটির তাৎপর্য প্রথম ক্ষুণ্ণ করার উদ্যোগ নেন শফিক রেহমান তাঁর যায়যায়দিন সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন দিবস-এর প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে তার সূত্রে।

১৪ ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিশেষ একটি দিন, -- বিশেষ করে তাঁদের কাছে, যাঁরা ১৯৮৩ সালে তরুণ ছিলেন। তখন দেশে সামরিক শাসন ছিল, সামরিক জান্তা ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, -- যিনি এখন সুযোগ পেলেই নিজেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ভাই হিসেবে দাবি করছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক ভাঙাগড়ার সঙ্গেই আমরা পরিচিতি। কিন্তু তারপরও আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত হই এ কারণে, কেন ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের রাজনৈতিক ও ছাত্রঅঙ্গনে আজও একটি বিশেষ দিন হয়ে উঠল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই ছিল এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন যেদিন সবগুলি ছাত্র সংগঠন প্রথম একসঙ্গে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেও এরকম সংগঠিত ছাত্র-গণ আন্দোলন ঘটেনি, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এভাবে আন্দোলন চলেনি এবং চিরতরে সামরিক শাসন উৎখাতের জন্যে তরুণরা এত মরিয়াও হয়নি। সত্যি কথা বলতে গেলে, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী তারুণ্যের প্রথম সংঘবদ্ধ উত্থানদিন। তারুণ্যে মুক্তিযুদ্ধকে না পাওয়ার সুপ্ত অতৃপ্তি কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিল এই তারুণ্য সামরিক শাসনবিরোধী এ রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। এখন এ দিবসটি রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়ম্বরে দূরে থাক, কোনও কোনও বছর সংবাদপত্রের পাতাতেও চোখে পড়ে না। সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনার এ দিবসটির তাৎপর্য প্রথম ক্ষুণ্ণ করার উদ্যোগ নেন শফিক রেহমান তাঁর যায়যায়দিন সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন দিবস-এর প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে তার সূত্রে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনার রাজনৈতিক দলগুলি এতই মেরুদণ্ডহীন যে, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাজনৈতিক চেতনার স্থান থেকে উদ্‌যাপন করার স্থান থেকে সরে আসে তারা এবং এদেরকেও এখন দেখা যায় জাফর, জয়নালের কথা ভুলে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবসের তাৎপর্য বয়ান করতে। এরপর যেহেতু রাজনৈতিক কারণে এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ, খালেদা জিয়া ও বিএনপি সকলের কাছেই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, সে-কারণে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের আর সব দিনের মতো ১৪ ফেব্রুয়ারিও মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। এসবই চর্বিত চর্বণ। আপনারা সবাই জানেন। আমিও আমার বক্তব্য বাড়াবো না। আমি খুবই নগণ্য মানুষ, রক্তমাংসের মানুষ, তাই জাফর জয়নালদের এখনও ভুলতে পারিনি, সেলিম দেলোয়ারদের ভুলিনি, তিতাস-তাজুলদের ভুলতে পারিনি, ময়েজউদ্দিনকে ভুলতে পারিনি, বসুনিয়া-শাহজাহান সিরাজদের ভুলতে পারিনি। নূর হোসেনকেও ভুলতে পারিনি। সেই সঙ্গে এও মনে আছে, খুব স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের সামনে আমাদের গণতান্ত্রিক নেতারা কী কী দাবিদাওয়া ঘোষণা করেছিলেন, কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ থেকে শুরু…

এই বিশ্লেষণমূলক তথ্যবহুল পোস্টটিতে আন্তর্জাতিক অপরাধের সংজ্ঞা, নুরেমবার্গ ট্রায়াল, টোকিও ট্রায়াল, আইকম্যানের বিচার, সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মিলোসেভিচের যুদ্ধাপরাধের বিচার, রুয়ান্ডা ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সে সবের আলোকে বর্তমানের আন্তর্জাতিক আইন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আনুষঙ্গিক পূর্ব ইতিহাস এবং বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটের মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে এই লেখাটিতে।

ভূমিকা একাত্তর সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসকেরা একটি অন্যায় যুদ্ধ এ ভূখন্ডের বাঙ্গালীদের ওপর চাপিয়ে দেন। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ আরম্ভ করে তা ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে সমগ্র ভূখন্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বাঙ্গাঁলী জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য হানাদার বাহিনী হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ সমগ্র বাংলাদেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। সেনাবাহিনীর সকল কর্মকান্ডে, যা কিনা ছিল মানবতা ও শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ, জামাতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেন। হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজের মত কর্মকান্ডে সমর্থন দিয়েই তারা বসে থাকেনি, মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে জামাতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আলশামস ইত্যাদি বাহিনী গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে। এসব সহযোগী বাহিনীর সদস্যরা হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে পাকিস্তানের সেনা সদস্যদের চেয়ে পিছিয়ে ছিল না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাঙ্গাঁলী জনগোষ্ঠীর ওপর যে হিংস্রতা ও বর্বরতা করেছে সেটি ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। যুদ্ধাপরাধ, মানবতা ও শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ করার দায়ে পাক সেনাদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গঁবন্ধু সরকার এব্যাপারে নানা উদ্যোগ নিলেও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা, কুটনৈতিক চাপ ও সর্বোপরি পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙ্গাঁলীদের কথা চিন্তা করে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের বিচার সম্ভব হয়নি। তবুও যে ১৯৫ জন সেনা সদস্যকে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তাদের বিচার করে শাস্তি দেয়া গেলে সেটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি প্রতীকী আবেদন তৈরি করত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গঁনে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে আরও একটি উত্তম দৃষ্টান্ত হত। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় সহযোগীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনালস) আদেশ, ১৯৭২ এবং ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ জারি করে। ১৯৭২ সালের ২৯ আগষ্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনালস) আদেশ-এ তিনটি সংশোধনী আনা হয়। ১৯৭৩ সালের ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত সারা বাংলাদেশ থেকে এ আদেশের অধীনে ৩৭ হাজার ৪ শ ৯১ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয় যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে বঙ্গঁবন্ধু সরকার ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। যেসকল মামলা দায়ের করা হয়েছিল তার…

ছোট ছোট কোমলমতি শিশু বালিকারা মাথায় ঝুটি বেঁধে, কেউ-বা বেণী দুলিয়ে কাঁধে বা হাতে ব্যাগ নিয়ে তাদের প্রিয় স্কুলপ্রাঙ্গণে যায়। এটা চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ত এলাকা নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয় ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার দৃশ্য। স্কুল দুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ঐতিহ্যবাহী স্কুল দুটির উপর সম্প্রতি শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে চট্টগ্রামের নির্বাচিত হ্যাট্রিক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। [...]

ছোট ছোট কোমলমতি শিশু বালিকারা মাথায় ঝুটি বেঁধে, কেউ-বা বেণী দুলিয়ে কাঁধে বা হাতে ব্যাগ নিয়ে তাদের প্রিয় স্কুলপ্রাঙ্গণে যায়। এটা চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ও ব্যস্ত এলাকা নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয় ও কৃষ্ণকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনকার দৃশ্য। স্কুল দুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করছেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ঐতিহ্যবাহী স্কুল দুটির উপর সম্প্রতি শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে চট্টগ্রামের নির্বাচিত হ্যাট্রিক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিকে শিক্ষাঙ্গন হিসেবে না দেখে বাণিজ্যিকভাবে দেখতে শুরু করেছেন। এখানেই তিনি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন। যতদূর জানা গেছে, এখানে সিটি কর্পোরেশনের ১৬ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে একটি নকশা জমা দেয়া হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কিন্তু সেই নকশায় ৬টি ত্রুটি দেখিয়ে অনুমোদন না দিয়ে তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। সিডিএ এবং সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির সাথে আলাপ করে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে যা জানা গেল তার জন্য সাধারণ সচেতন নাগরিক সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ভবনে কোমলমতি বালিকা শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হবে, তা ভাবা যায় এ সভ্য সমাজে? বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের ভেতরে কি শিক্ষার্থীরা প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে খোলামাঠে ছোটাছুটি আর কানামাছি খেলতে পারবে? শিক্ষকরাও কি পারবেন সঠিকভাবে শিক্ষাদান করতে? অথচ চট্টগ্রামের নগরপিতা মহিউদ্দিন চৌধুরী তাই করাতে চাইছেন! কিন্তু কেন? -- এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ কথা ঠিক যে, মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজের সুপরিকল্পনায় ও সদিচ্ছায় সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে নগর জুড়ে বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ, এমনকী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তিনি পরিচালনাও করেছেন সুষ্ঠুভাবে। এর পাশাপাশি গরিব ও সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বেশকিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও মাতৃসদন স্থাপন করেও তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন। যার সুফল ভোগ করছে চট্টগ্রামবাসী। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এত সুচারুভাবে করতে পেরেছে বলে আমার অন্তত জানা নেই। অন্য নগরীর মেয়রগণ এসব ক্ষেত্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে অনেক সময় পরামর্শ নিয়েছেন বলেও শুনেছি। এসব সেবামূলক কর্মকাণ্ডের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.