দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন এফবিসিসিআই-এর একটি প্রতিনিধিদল। ওইসময় এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আনিসুল হক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে তাদের ব্যবসাবাণিজ্য বাঁচানোর জন্যে সরকারের কাছ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছেন। এখন জানা যাচ্ছে, এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেয়ার আগে তারা বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি, কোনও খাতভিত্তিক পরিসংখ্যান নেননি, কোনও সমন্বিত বৈঠকও করেননি। কেবলমাত্র অনুমানের ওপর দাঁড়িয়ে এরকম মামাবাড়ির আবদার করা কেবল বাংলাদেশের শিল্পপতি আর ব্যবসায়ীদের পক্ষেই সম্ভব! পরে সিপিডি-র এক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নগদ অর্থসহায়তা করা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তেমন সম্ভব হবে না। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বিভিন্ন খাতকে অবশ্যই সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে। কী হবে সেই সাহায্যের প্রকৃতি? আমাদের জানা নেই। হতে পারে খানিকটা নগদ সহায়তা, আর খানিকটা পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির বহুল আলোচিত সেই জাতীয়করণের পথ! কইয়ের তেলে কই ভাজার পথ! বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালেও দেশটির অধিকাংশ শিল্পকারখানাই জাতীয়করণ করা হয়েছিল। এরকম একটি সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায় ছিল না তখন। যদিও পুঁজিতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন অনেকেও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ তাদের কাছে মনে হয়েছিল, এ পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। রাজনৈতিক চরিত্রের দিক থেকে আওয়ামী লীগ যে-ধরনের দল তাতে এরকম সিদ্ধান্ত তাদের নেয়ার কথা ছিল না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মানসপুত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সোহরাওয়ার্দীর লক্ষ্য থেকে খানিকটা সরে এসেছিলেন বটে, কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচকই ছিল। আর এ জন্যেই এক পা নিজের নৌকায় রেখে আরেক পা খোন্দকার মোশতাকের নৌকায় রাখতে তিনি কোনও সমস্যা মনে করেননি। আসলে বাস্তব পরিস্থিতিই স্বাধীনতাউত্তর কালের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জাতীয়করণের মতো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে ঠেলে দিয়েছিল। কেননা শিল্পবিকাশের দিক থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ একেবারেই পিছিয়ে ছিল। আর পূর্ববাংলাকে বা পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানি নীতিনির্ধারকরা ব্যবহার করেছিল তাদের শোষণের পশ্চাৎভূমি হিসেবে। এরকম একটি প্রায়-উপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে অগ্রভূমি পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হয়েছিল বড় বড় ও ভারী শিল্পকারখানা। একই সঙ্গে রাজধানী বদলের মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বড় প্রশাসনিক অবকাঠামো ও সুবিন্যস্ত যোগাযোগ-পরিবহন ব্যবস্থা। এর মানে এই নয় যে, পূর্ববাংলায় কোনও শিল্পকারখানাই গড়ে ওঠেনি তখন।…

প্রবাসের শব্দচিত্র দিয়েই শুরু হলো আমার লেখা। ওয়াশিংটন ডিসিতে এখন বসন্ত আসছে। ধীরে ধীরে শীতের চাদর সরে বসন্তের উষ্ণতায় সবুজ হয়ে উঠছে চারপাশ। মার্চের ২৮ তারিখে এখানে শুরু হয়েছে বসন্ত উৎসব। এখানে রমনার বটমূল না থাকলেও জেফারসন মেমোরিয়ালের ঠিক সামনে টাইডাল বেসিনের পাশে মঞ্চে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী চেরী ফুল উৎসব। গান আর নৃত্য দিয়ে মাতিয়ে রাখবে। জাপানীরা ১৯১২ সালে তিন হাজার চেরী ফুলের চারা দিয়েছিল, তা আরও বিস্তৃত হয়ে চারদিকে শুভ্র ফুলের বাহারি শোভা এক সপ্তাহের জন্য ছড়িয়ে দেয়। দর্শনার্থীদের ভীঁড়ে ডিসি হয়ে উঠে জনাকীর্ণ। প্রতি বছরের মতো উৎসব আনন্দে বরণ করা হয় বসন্তকে। এসব প্রাণবন্ত ছবি আর সচল চিত্র আমাদের চিত্তকে উৎফুল্ল করলেও তার অন্তরালে থাকা চিত্রটা অনেকটা অদৃশ্যই থেকে যায়। এখানে অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে। ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো গুটিয়ে ফেলছে তাদের কার্যক্রম। বাড়ছে বেকারত্ব। আজকের সারাদিনের শিরোনাম ছিল: গাড়ী প্রস্তুতকারী কোম্পানী জিএম হয়তো মন্দার ঠেলায় এবার দেউলিয়া ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ব্যবসার অবস্থা খারাপ। অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, কোন রেসকিউ প্ল্যানই কোন কাজ করছে না। এর মধ্যে সেদিন রেডিওতে একটা খবর শুনে বেশ মজাই পেলাম। ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের এক মশলা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এই দু:সময়ে বেশ ভালই মুনাফা করেছে। তাদের বিক্রি বেড়েছে প্রায় শতকরা ১২ ভাগ। হঠাৎ করে আমেরিকানরা অর্থ সাশ্রয়ের জন্য রেস্টুরেন্টে না খেয়ে বাড়ীতে খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই বেড়েছে মশলার চাহিদা ও বিক্রয়। এর মাঝে সরকার স্টিমিউল্যাস প্যাকেজ দিয়েছে। তাতে অর্থনীতি উদ্দীপ্ত হবে কি না জানি না। তবে এখানে অফিসগুলোতে পাক্ষিক বেতনে গড়পড়তা বিশ ত্রিশ ডলার সবাই বেশী পাওয়া শুরু করেছেন। এখানে বেতনের সাথে সাথে আয়কর কেটে রাখা হয়। ফেডারেল সরকার গত দু'সপ্তাহ থেকে আয়করের হার কমিয়ে দেওয়াতে অনেকের বেতন সামান্য পরিমাণ বেড়েছে। জর্জ বুশ ক্ষমতায় থাকা সময় এই একই প্যাকেজের টাকা নগদ এককালীন চেকে দিয়ে দিয়েছিল। ওবামা সরকার তার চেয়ে এক কাঠি সরেস। তারা পুরো টাকা একটি চেকে না দিয়ে তা বেতনের সাথে যোগ করেছে একটু একটু করে। অর্থনৈতিক মন্দার এই মন্দ সময় কখন কাটবে তা কেউ জানে না। সবাই আশা করছে, অবস্থার পরিবর্তন আগামী বছর থেকে শুরু হবে। আর না হলে, ততোদিনে এই মন্দার মাঝে বসবাস করতে লোকজন অভ্যস্ত হয়ে…

২০ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রোনাল্ড রিগ্যান তাঁর অভিষেক ভাষণে যা বলেছিলেন, এখনও তা আমাদের কানে বাজে। মুক্তবাজারের একনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ফ্রিডম্যানের বই হাতে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণাকারী রিগান তাঁর সেদিনের ভাষণে বলেছিলেন, 'আমাদের সমস্যার সমাধান সরকার নয়; সরকার হলো সমস্যা... আমার পরিকল্পনা হলো ফেডারেল এস্টাবলিসমেন্টের আকার আর প্রভাবের লাগাম টেনে ধরা।' তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীব্যাপী মুক্তবাজার প্রতিষ্ঠার যে তাণ্ডব শুরু করেছিল কালক্রমে তা খ্যাতি পেয়েছিল রিগান বিপ্লব হিসেবে। ক্ষুদ্রাবয়বের সরকার, নিম্ন কর, ডি-রেগুলেশান এসবই ছিল সেই বিপ্লবের অন্তর্গত এবং এই সেদিন সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্লাটফরম থেকেও পুনরায় ঘোষণা করা হয়েছিল রিগানের পুরানো অঙ্গীকার। (more…)

ব্রিটেনের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন অর্থনৈতিক ধসের হাত থেকে ব্যাংকগুলিকে উদ্ধার করার জন্যে ৫০০ বিলিয়ন পাউন্ডের যে-উদ্ধারপ্রকল্প ঘোষণা করেছেন, সেইন্ট জেমস পার্কের কাছে অবস্থানরত ট্রেজারি বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তারা তার নাম দিয়েছেন ‘বালতি বেইলআউট’! এই নাম দেয়ার পেছনে ছোটখাটো এক ঘটনা কাজ করেছে। চ্যান্সেলর অ্যালেস্টেয়ার ডার্লিং এবং তার আরও প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা এক ম্যারাথন বৈঠকে বসেছিলেন মঙ্গলবার। আর ওই বৈঠকের ফাঁকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁরা তাদের মূল্যবান সময়ের খানিকক্ষণ ব্যয় করেছিলেন দক্ষিণ লন্ডনের কেনিংটনের গান্ধী’স ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের টেকওয়ে কারী উদরস্থ করতে। (more…)

আমাদের দেশে সামাজিক মদ্যপান নিষিদ্ধ। দেশের বিশেষ কিছু ক্লাব, দেশজুড়ে স্বল্পসংখ্যক একজনআরেকজনেরমুখদেখতেনাপাওয়া লাইসেন্সধারী অন্ধকার বার এবং কয়েকটা বার লাইসেন্স পাওয়া হোটেল : মদ কেনা বেচা খাওয়া সব এই কয়েকটা জায়গা ছাড়া আর সবখানে বেআইনি। তাই লুকিয়ে চুরিয়ে মদ্যপানই আমাদের সংস্কৃতি। (more…)

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.