জাতীয়করণের শিক্ষাদীক্ষা

দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন এফবিসিসিআই-এর একটি প্রতিনিধিদল। ওইসময় এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আনিসুল হক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা থেকে তাদের ব্যবসাবাণিজ্য বাঁচানোর জন্যে সরকারের কাছ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছেন। এখন জানা যাচ্ছে, এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেয়ার আগে তারা বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি, কোনও খাতভিত্তিক পরিসংখ্যান নেননি, কোনও সমন্বিত বৈঠকও করেননি। কেবলমাত্র অনুমানের ওপর দাঁড়িয়ে এরকম মামাবাড়ির আবদার করা কেবল বাংলাদেশের শিল্পপতি আর ব্যবসায়ীদের পক্ষেই সম্ভব! পরে সিপিডি-র এক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নগদ অর্থসহায়তা করা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তেমন সম্ভব হবে না। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, বিভিন্ন খাতকে অবশ্যই সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে। কী হবে সেই সাহায্যের প্রকৃতি? আমাদের জানা নেই। হতে পারে খানিকটা নগদ সহায়তা, আর খানিকটা পৃথিবীর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির বহুল আলোচিত সেই জাতীয়করণের পথ! কইয়ের তেলে কই ভাজার পথ!

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালেও দেশটির অধিকাংশ শিল্পকারখানাই জাতীয়করণ করা হয়েছিল। এরকম একটি সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায় ছিল না তখন। যদিও পুঁজিতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন অনেকেও এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কারণ তাদের কাছে মনে হয়েছিল, এ পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগ সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

রাজনৈতিক চরিত্রের দিক থেকে আওয়ামী লীগ যে-ধরনের দল তাতে এরকম সিদ্ধান্ত তাদের নেয়ার কথা ছিল না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মানসপুত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সোহরাওয়ার্দীর লক্ষ্য থেকে খানিকটা সরে এসেছিলেন বটে, কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচকই ছিল। আর এ জন্যেই এক পা নিজের নৌকায় রেখে আরেক পা খোন্দকার মোশতাকের নৌকায় রাখতে তিনি কোনও সমস্যা মনে করেননি। আসলে বাস্তব পরিস্থিতিই স্বাধীনতাউত্তর কালের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে জাতীয়করণের মতো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে ঠেলে দিয়েছিল। কেননা শিল্পবিকাশের দিক থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ একেবারেই পিছিয়ে ছিল। আর পূর্ববাংলাকে বা পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানি নীতিনির্ধারকরা ব্যবহার করেছিল তাদের শোষণের পশ্চাৎভূমি হিসেবে। এরকম একটি প্রায়-উপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে অগ্রভূমি পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হয়েছিল বড় বড় ও ভারী শিল্পকারখানা। একই সঙ্গে রাজধানী বদলের মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল বড় প্রশাসনিক অবকাঠামো ও সুবিন্যস্ত যোগাযোগ-পরিবহন ব্যবস্থা। এর মানে এই নয় যে, পূর্ববাংলায় কোনও শিল্পকারখানাই গড়ে ওঠেনি তখন। পণ্য উৎপাদনের অপরিহার্য কাঁচামাল সরাসরি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করার সুবিধা থেকে এখানেও কিছু কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান তখন গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সেসবের মূল উদ্যোক্তা কিংবা পরিচালক ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরাই। আর তাতেও আবার বড় একটি মালিকানা ছিল পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের। যেমন, ধরা যাক আদমজী জুটমিলের কথা। আমরা সবাই মনে করি, শিল্পপতি আদমজী এর মালিক। কিন্তু বস্তুতপক্ষে আদমজী জুটমিলে আদমজীর শেয়ার ছিল মাত্র ১২ শতাংশ। আর বাকি ৮৮ শতাংশ শেয়ার ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের। কিন্তু মাত্র ১২ শতাংশ একক ও বৃহৎ মালিকানার জোরেই আদমজী হয়ে উঠেছিলেন এ কারখানার একচ্ছত্র অধিপতি। একই অবস্থা ছিল প্রায় সব কয়টি শিল্পকারখানার। এতই সামান্য পুঁজি এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পাকিস্তানি শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করে মালিক বনে গিয়েছিলেন-যে যুদ্ধের সময় এসব শিল্পকারখানা রক্ষার জন্যে পশ্চিম পাকিস্তানিদের কোনও বোধ কাজ করেনি। বরং চলে যাওয়ার আগে পাকসেনারা নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে এগুলো নষ্ট করে রেখে গেছে, যাতে সদ্যস্বাধীন দেশের মানুষ ও সরকার মহাসংকটে পড়ে। পূর্ববাংলাকে পোড়ামাটি বানাতে চেয়েছিল পাকিস্তানিরা, সেই পোড়ামাটির ওপর মানুষ আর শিল্পপ্রতিষ্ঠান সবই পড়েছিল নিষ্প্রাণ বিধ্বস্ত অথবা ছাই হয়ে যাওয়া কাঠামো নিয়ে।

শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহযোগীরা এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রাণ দিতে চাইলেন। কিন্তু পুঁজিপতি পাবেন কোথায়? আদর্শিকভাবে ও তত্ত্বগত দিক বিচারে একটি পুঁজিপতি শ্রেণীর চিহ্ন তখন মিলেছে বটে, কিন্তু অর্থনৈতিক দাপটের বিচারে বাংলাদেশে তখনও তেমন কোনও পুঁজিপতি মাথাচাড়া দিতে পারেনি। যে দু’চারজন পুঁজিপতি ছিলেন তাদের পুঁজিতেও তখন মাত্র নয়মাসের যুদ্ধেই টান পড়েছে। অতএব এমন একটি প্রক্রিয়ায় সরকারকে যেতে হলো, যাতে রাষ্ট্রের টাকা দিয়ে, জনগণের টাকা দিয়ে এইসব বিধ্বস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নতুন করে গড়ে তোলা যায়, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও উপকরণ কিনে ফেলা যায় এবং শিল্পগুলিকে চাঙ্গা করে তোলা যায়। আর এসবের মূল উদ্দেশ্যই ছিল, সন্দেহ নেই পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করা।
সরকারের উদ্দেশ্য তখন এরকম হলেও ওই সময় দেশে তেমন কেউই ছিল না, যে বা যারা বিশ্বাস করবে শেখ মুজিবের উদ্দেশ্য পুঁজিবাদকে বিকশিত করা। একটি বড় অংশই মনে করতেন, আওয়ামী লীগ সামন্ততান্ত্রিক সংগঠন; এ সংগঠনটি-যে স্বাধীন পুঁজিপতিদের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী তা তাদের বিশ্বাসই হতো না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের মতো রাজনৈতিক দলগুলি তখন আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল; কিন্তু দিনরাত ২৪ ঘন্টা এই জাতীয়করণের উদাহরণ দিয়ে চিন্তার দিক থেকে অস্বচ্ছ জনগণকে ‘সমাজতন্ত্রের ভূত’ দেখিয়ে বেড়াচ্ছিল তারা। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরও সব ডানপন্থী রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ কোনও শক্তিশালী বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক দল তখন দেশে ছিল না, আওয়ামী লীগেরও ইচ্ছে ছিল না তেমন কোনও দল দেশে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিকশিত হোক। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তখন একই নৌকায় চড়েছিল সিপিবি আর ন্যাপ মোজাফফর। সবাই মিলে তারা রচনা করে চলেছিল বিখ্যাত রম্য লেখক জেরোম জে জেরোমের ‘এক নায়ে তিনজন’ উপন্যাসের মতো নানা ঘটনা। এই সিপিবি আর ন্যাপ আবার তখন জোশের সঙ্গে মনে করত, এই জাতীয়করণ হলো সমাজতন্ত্রের পথের প্রথম পদক্ষেপ।

দিন যেতে লাগল। এইসব সরকারি শিল্পকারখানা পরিচালনার মধ্যে দিয়ে দেশপ্রেমিক আওয়ামী ভাইদের শরীরের দ্রষ্টব্য স্থানসমূহে তেল জমতে লাগল, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে লাগল শিল্পকারখানাগুলো ভেঙে পড়ছে। কেননা লাভের গুড় পিঁপড়ে খাচ্ছিল। দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব যাদের ঘাড়ে ছিল তারা তখন এমনই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছিলেন যা লিখে শেষ করা যাবে না। এটি ঠিক, একটি সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে ওই সময় বাংলাদেশে নানা সমস্যা, উত্তেজনা, স্যাবোটাজ ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু ছিল। কিন্তু তারও চেয়ে বড় সমস্যা ছিল দেশপরিচালনাকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের গাঠনিকতার ভেতর। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী, পরবর্তী সময়ে অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ দলের সম্মেলনে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যা-যা বলেছিলেন, সেসবই এর বড় প্রমাণ। ওই ভাষণের পর তাজউদ্দিনকে আর দলের ও মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি আওয়ামী লীগাররা। বছর না ঘুরতেই তাকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পুরো নয়মাস এই মানুষটি একা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন, গভীর রাতে নিজের জামাকাপড় নিজে পরিষ্কার করে শুকাতে দিয়েছেন পরদিন তা পরে অফিস করবার জন্যে; কিন্তু স্বাধীন দেশে অনুকুল পরিস্থিতি দূরে থাক, তিনি পড়লেন আরও ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে। গোয়েন্দারা তাঁর পিছে ঘুরে বেড়াতো। কোথাও যেতে ভয় পেতেন তিনি; না, নিজের জন্যে নয়, যার কাছে যাবেন সেই মানুষটিই হয়তো বিপদে পড়বেন,- এই আশঙ্কা থেকে। তাজউদ্দিন চাইতেন, মন থেকেই চাইতেন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে মিশ্র অর্থনীতি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির জন্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক অনিবার্য বলেই মনে করতেন তিনি, যদিও তাঁর রাজনীতি ছিল সমাজতন্ত্র থেকে অনেক দূরের। তাই আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে কাজ করুক বা না করুক, তাঁর মধ্যে জাতীয়করণের ক্ষেত্রে নৈতিকতার বোধ পুরোমাত্রাতেই কাজ করেছে; যেমন কাজ করেছে তখনকার পরিকল্পনাকারী অর্থনীতিবিদদের মধ্যে, যাদের দলে ছিলেন নূরুল ইসলাম, রেহমান সোবহান, আনিসুর রহমান প্রমুখ।
এটি বিস্ময়কর হলেও সত্য, আওয়ামী লীগকে জাতীয় বুর্জোয়াদের দল বলে একমাত্র তারাই মনে করতো, যারা ছিল তাদের তখন সবচেয়ে বড় শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী,- সেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। আওয়ামী লীগ সরকারের এই জাতীয়করণ নীতি নিয়ে সবচেয়ে স্বচ্ছ ব্যাখ্যাও ছিল তাদের। জাসদের দলীয় পুস্তিকায় বলা হতো, রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে পুঁজি বিকাশের স্বার্থে জাতীয়করণ করা হয়েছে। এবং এ কথায় মিথ্যা ছিল না মোটেও। শেখ মুজিবুর রহমানের সময়েই কোটিপটির সংখ্যা দুজন থেকে বেড়ে গিয়ে কয়েকশ জন হয় এবং জাতীয়করণকৃত শিল্পকারখানাও বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যাদের ওপর বিভিন্ন শিল্প-ব্যাংক-বীমা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারাই পরিচালনার নামে লুটপাট করে পুঁজি আহরণ করেন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নামে বেসরকারিকরণের কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। এরকম পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদদের মধ্যেও হতাশা জাগতে শুরু করে। বিদেশ চলে যান অর্থনীতিবিদ ড. আনিসুর রহমান,ণ্ড যিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্বনির্ভরতার পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। বিদেশ চলে যান ড. নূরুল ইসলাম। আর রেহমান সোবহান মনযোগ দেন বরং বিআইডিএস-কে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার কাজে।

কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো বিভিন্ন শ্রেণীর সমর্থকসমবায়ে গড়ে ওঠা বড় অবয়বের রাজনৈতিক দলের পক্ষে ঢালাওভাবে বেসরকারিকরণ করা সম্ভব ছিল না। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণের পাশাপাশি এইসব অর্থনৈতিক কার্যকরণও শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস মৃত্যু ডেকে আনে। এই মৃত্যু আমাদের মতো মানুষদের কাছে যত অনাকাঙিক্ষতই হোক না কেন, তখনকার পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ী শ্রেণীর কাছে ছিল পরম আরাধ্য। এই মৃত্যুর বিনিময়ে জাতীয়করণ থেকে বেসরকারিকরণের পথ আরও উন্মুক্ত হয়। লুটপাটের মাধ্যমে সঞ্চয় করা পুঁজি বিনিয়োগের জায়গা খুঁজে পান এরা। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমানের এই বেসরকারিকরণের ধারাকে চরমতম পর্যায়ে নিয়ে যান আরেক সামরিক জান্তা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। বেসরকারিকরণের উন্মত্ত ধারা তারপর আর থামেনি। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের গণতান্ত্রিক সরকারও এই বেসরকারিকরণের ধোয়ায় ফুঁ দিয়েছেন। ফুঁ দিয়েছেন সেখানকার সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এখন শেখ হাসিনার সরকারও ফুঁ দেবেন, সন্দেহ নেই।

আজকে যারা সুশাসনের কথা বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বলেন, গণতন্ত্রে উত্তরণের কথা বলেন এবং এগুলি এরশাদ পতনের পর ১৫ বছরের শাসনামলে খালেদা ও হাসিনা সরকারের কেউই করেনি বলে বিগত সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফাই গান, তারা কিন্তু একবারও বলেন না, এরশাদবিরোধী দীর্ঘ নয় বছরের আন্দোলনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শিল্প-ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি বেসরকারিকরণ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অথচ ক্ষমতায় গি্য়েও তারা বেসরকারিকরণের ধারা অব্যাহত রেখেছে। তারা কিন্তু একবারও বলেন না, প্রাথমিক শিক্ষাকে পুরোপুরি জাতীয়করণ করার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি; কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে ওদিকে আর পা বাড়ায়নি তারা, বরং পারলে এখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি করে ফেলবে তারা। কৃষিখাতে ভর্তুকী বাড়াতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু বাড়ানো দূরে থাক, বরং কমিয়েছে দফায় দফায়। এবং এ দুটো দলেরই সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা, কৃষিখাতের ভর্তুকী একেবারে বন্ধ করে দেয়ার।

আমার প্রশ্ন, আশি ও নব্বইয়ের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্ররা যেসব আকাঙ্ক্ষাভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে পথে নেমেছিল এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলি যেগুলির প্রতি উদাত্ত সমর্থন জানিয়েছিল সেগুলির বাস্তবায়নই কি সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর গণতন্ত্রের মূল প্রশ্ন নয়? অথচ বড় বড় দলের রাজনীতিবিদরা, সুশীল লুম্পেনরা এবং কর্পোরেটতন্ত্রী মিডিয়াগুলি বাংলাদেশে যা করছেন তাতে মনে হয় সুশাসন, স্থিতিশীলতা আর গণতন্ত্র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়কার ওইসব দাবিদাওয়াভিত্তিক আকাঙ্ক্ষামুক্ত বিচ্ছিন্ন ব্যাপার! বিএনপি আর আওয়ামী লীগের ওপর বুর্জোয়া শ্রেণীর ক্ষোভের যেসব কারণ রয়েছে, তার অন্যতম একটি হলো তারা বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বশীল দল হওয়ার পরও বু্র্জোয়াদের আকাঙ্ক্ষিত গতিতে বেসরকারিকরণের ধারা প্রবাহিত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগকে বিদায় নিতে হয়েছে, কেননা চট্টগ্রাম বন্দর বেসরকারি করতে পারেনি তারা, আদমজীর মতো অনেক কিছু বেসরকারি করতে পারেনি তারা। বিএনপি তথা চারদল ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আদমজীকে বেসরকারি করে তাদের শ্রেণীকে আশ্বস্ত করতে পেরেছিল, যদিও গ্যাস দিতে না পারায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিতে না পারায় আস্থা হারিয়েছে তারা। এগুলো সামগ্রিক কারণ নয়, কিন্তু অন্যতম কারণ। আর এরকম সব কারণগুলোকে সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্যে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র মতো দলগুলিকে বার বার একটি রেজিমেন্টেড ফোর্স ক্ষমতায় নিয়ে আসার দরকার হয়েছে; যেমন ১১ জানুয়ারিতেও সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ আর বিএনপিরই ডাকে। তারা যতই বলুক না কেন, জনগণের স্বার্থেই এটা হয়েছে আর তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারও যতই বলুক না জনগণের ডাকেই তারা ক্ষমতায় গিয়েছিলেন, প্রকৃতার্থে জনগণ মোটেও আহ্বান করেনি তাদের। তারা এসেছিলেন এবং তাদের আনা হয়েছিল তাদের নিজেদের স্বার্থেই। আদমজী যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন আওয়ামী লীগের মতো দলগুলি চারদলীয় জোটের বিরুদ্ধে কিছুই বলেনি, কারণ ওটা বন্ধ হয়ে যাক সেটা আওয়ামী লীগও চেয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে পাটশিল্পগুলি বন্ধ ও বেসরকারি করলেও তা আর রাজনৈতিক ইস্যুর মর্যাদা পায়নি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির কাছ থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়ের মতো। এখন যেমন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, গভীর সমুদ্রবন্দর সরকার যে-ভাবেই হোক না কেন স্থাপন করবে,- এও সেরকম এক অঙ্গীকার পূরণ। দিনবদলের কর্মসূচিতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার আছে, কিন্তু তারপরও সরকারের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার মনে হবে। আর ক্ষমতাবহির্ভূত দলগু্লিও ২০০১-এর আওয়ামী লীগের মতো ‘দেখেছেন কী করছে? দেখেছেন কী করছে?’ বলবে; কিন্তু প্রতিরোধের কোনও কর্মসূচিই দেবে না। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান আর উত্তোলনেও বিদেশি কোম্পানিগুলিকে কেউই বাধা দেবে না।

এমন হতে পারে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারকে পুনরায় কোনও শিল্পকারখানা ও কোম্পানি জাতীয়করণ করতে হবে! কেননা আগেই বলেছি, জাতীয়করণ ১৯৭২ সালেও হয়েছিল এবং আসলে পুঁজিকে রক্ষার স্বার্থেই হয়েছিল। যেমন এখন যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যেও জাতীয়করণ করা হচ্ছে এবং আসলে ব্যক্তিমালিককে উদ্ধার করার লক্ষ্য থেকেই করা হচ্ছে। তারা ভাব দেখাচ্ছে, গ্রাহকদের টাকা বাঁচানোর জন্যে এমনটি করছে; অথচ একই সঙ্গে হাজার হাজার কর্মজীবীকে অত্যন্ত নিস্পৃহভঙ্গীতে ছাটাই করে দিচ্ছে। আর এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাদের দ্বিমুখী নীতি। ঠিক তেমনি, বাংলাদেশেও ভবিষ্যতে অনেক মালিককে বাঁচাতে হয়তো বেসরকারিকরণের পাশাপাশি জাতীয়করণের নীতিও সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। হয়তো হাস্যকর মনে হবে (আমার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে), কিন্তু একবার গার্মেন্টস মালিকদের কথাই চিন্তা করুন। গত কয়েক বছর ধরে এরা নির্মমভাবে শ্রমিকদের শোষণ করে টাকা কামিয়েছেন, একটা গার্মেন্টস কারখানা থেকে একাধিক কারখানা বানিয়েছেন, এদের একাধিক গাড়ি হয়েছে, এদের অনেকে বিদেশে বাড়িও কিনেছেন অথবা বানিয়েছেন। বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকদের মতো এত অল্প পুঁজিতে এবং এত নৃশংস উপায়ে শ্রম-পুঁজি চুরি করে ধনী হয়ে ওঠা গার্মেন্টস মালিক পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে খুব কমই আছে। এদের অনেকে বিদেশেও গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করেছেন এবং এখন সেসব দেশে সটকে পড়ার তালে আছেন। কথা ছিল, এরা রাজধানীর বাইরে গার্মেন্টস শিল্প গড়ে তুলবেন। কিন্তু এরা গার্মেন্টস শিল্প গড়ে তুলেছেন রাজধানী ঢাকার বুকে। এইভাবে রাজধানীকে তারা জনবহুল, যানবহুল করে তুলেছেন, পরিবেশ দূষণের শিকার করেছেন। কিন্তু এ-জন্যে কোনও সরকার তাদের কাউকে কখনও আদালতে তুলেছে বলে জানা নেই আমাদের। এতই নিয়মবহির্ভূত ভাবে এসব গার্মেন্টস ভবন গড়ে তোলা হয়েছে যে মাঝে-মধ্যেই কারখানায় আগুন লাগে অথবা হঠাৎ করেই তা ভেঙে পড়ে, বিধ্বস্ত হয় মুহূর্তের মধ্যে। আগুনে পুড়ে মারা যায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা, চাপা পড়ে মারা যায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা। কিন্তু এজন্যে এখনও তেমন কোনও গার্মেন্টস মালিককে শাস্তি পাওয়া দূরে থাক, একবেলার জন্যে হাজতেও থাকতে হয়নি। গার্মেন্টস শিল্পের জন্যে নিত্যনতুন বিনিয়োগ করতে এদের কোনও অসুবিধা হয় না, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের জন্যে আলাদা গাড়ি কিনতে এদের কোনও অসুবিধা হয় না, প্রতিদিন শেরাটনের মতো হোটেলে নাস্তা-লাঞ্চ-ডিনার সারতে অসুবিধা হয় না; কিন্তু শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি দেয়ার কথা বললেই এরা নানা প্রতিকুলতার কথা বলতে শুরু করেন। তো শ্রমিকদের যদি মজুরিই দিতে না পারেন, তা হলে আপনাদের শিল্পকারখানা করার দরকার কি? আপনাদের তো শিল্প বানানোর জন্যে কেউ হাত-পা ধরেনি, সাধাসাধি করেনি!

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকরা নিজেরাই নিজেদের জন্যে কুয়ো খুঁড়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের জন্যে একটি উদাহরণ তৈরি করে দিলো, যাতে সেই কুয়োতে তাদের পড়তে না হয়, বরং অন্যের মাথায় মাটিবোঝাই টুকড়ি চাপিয়ে কুয়োটা বন্ধ করা যায়। এবং জাতীয়করণই হলো এরকম চরমতম সময়ের মহৌষধ, এ দিয়ে তারাও পারবেন তাদের চলার পথের কুয়োগুলো বুজিয়ে ফেলতে! আসুন আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের পৃথিবীর সেইসব নেতাদের, যারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন কেন ও কীভাবে জাতীয়করণ করতে হয়; আবার সময় বুঝে কেন ও কীভাবে বেসরকারিকরণ করতে হয়। কৃতজ্ঞ আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে, কৃতজ্ঞ আমরা জিয়া-এরশাদ-খালেদা-হাসিনার কাছে এবং বলাই বাহুল্য, বারাক ওবামা, জর্জ বুশ ও গর্ডন ব্রাউনেরও কাছে। আপনারা আমাদের কৃতজ্ঞতা গ্রহণ করুন। শুধু ছয় হাজার কোটি টাকা কেন, আপনারা আমাদের সব কিছুই নিতে পারেন, অতএব যা ইচ্ছা হয় তা নিয়ে আমাদের কৃতার্থ করুন।

অবিশ্রুত

সেইসব দিন স্মরণে,- যখন কলামিস্টরা ছদ্মনামে লিখতেন; এমন নয় যে তাদের সাহসের অভাব ছিল, তারপরও তারা নামটিকে অনুক্ত রাখতেন। হতে পারে তাৎক্ষণিক ঝড়-ঝাপটার হাত থেকে বাঁচতেই তারা এরকম করতেন। আবার এ-ও হতে পারে, সাহসকেও বিনয়-ভুষণে সজ্জিত করেছিলেন তারা। আমারও খুব ইচ্ছে দেখার, নামহীন গোত্রহীন হলে মানুষ তাকে কী চোখে দেখে... কাঙালের কথা বাসী হলে কাঙালকে কি মানুষ আদৌ মনে করে!

৪ comments

  1. অস্মিতা - ১ এপ্রিল ২০০৯ (৮:০৯ অপরাহ্ণ)

    ছুটি কাটাতে বাইরে এসেছিলাম। কিন্তু মুক্তাঙ্গন থেকে ছুটি নেয়া আর হয়ে উঠলো না। অবিশ্রুত, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই লেখাটির জন্য। ৭১-৭৫ এই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন সময়টির রাজনৈতিক ঘটনাক্রম বা তার বিশ্লেষণ পাওয়াই একটি দুরূহ ব্যাপার। সেখানে সে সময়কালের অর্থনৈতিক মতাদর্শিক বিশ্লেষণ তো আরও বিরল। কিছুটা জানার সুযোগ হয়েছিল নুরুল ইসলামের কিছু স্মৃতিচারণমূলক লেখায় যেগুলোর কয়েকটি বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় এসেছে। সেই তালিকায় নতুন কিছু যোগ হলো আপনার এই লেখা দিয়ে। আশা করি আলোচনার রেশ ধরে আরও কিছু জানার সুযোগ হবে। শুধু একটি বিষয়ে খানিকটা খটকা লেগেছে বলতে পারেন। আপনি লিখেছেন:

    কৃষিখাতে ভর্তুকী বাড়াতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু বাড়ানো দূরে থাক, বরং কমিয়েছে দফায় দফায়। এবং এ দুটো দলেরই সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা, কৃষিখাতের ভর্তুকী একেবারে বন্ধ করে দেয়ার।

    আমাদের সৌভাগ্যই বলতে হবে যে নতুন সরকারের মধ্যে কৃষি খাতে এখনো উপরোক্ত কোন লক্ষণ দেখতে পাইনি। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। বরং দেখছি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে “কৃষি” শব্দটি বিভিন্ন প্রসঙ্গে (কৃষকের নিরাপত্তা, কৃষি গবেষণা ইত্যাদি) উত্থাপিত হয়েছে সর্বমোট ১৮ বার (বঙ্গানুবাদ অনুযায়ী)। ইশতেহারের ৭ অনুচ্ছেদে আরও বলা রয়েছে:

    ৭. কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন
    ৭.১ আমাদের মূল লক্ষ্য ‘সবার জন্য খাদ্য’ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পুনরায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করা হবে। কৃষি উপকরণে ভর্তুকি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা ও কৃষি ঋণের আওতা বৃদ্ধি এবং প্রাপ্তি সহজীকরণ করা হবে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সুলভ করা হবে ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফসল ও সকল কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। মাছ, দুধ, ডিম, মুরগি, গবাদি পশু ও লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে, উদ্বৃত্ত পণ্য রফতানির লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা নেয়া হবে।
    ৭.২ বর্গাচাষীদের জন্য ঋণ, ক্ষেতমজুরদের কর্মসংস্থান ও তাদের পল্লী রেশনের আওতায় আনা হবে।
    ৭.৩ বাণিজ্যিক কৃষি, জৈব প্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন, বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
    ৭.৪ পল্লী উন্নয়নে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার পরিধি বিস্তৃত করা হবে। ভুমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণ, খাস জলাশয় ও জলমহাল প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে। সমুদয় জমির রেকর্ড কম্পিউটারায়ন করা হবে এবং জমি, জলাশয়ের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে ভুমি সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে।
    ৭.৫ উপকুলীয় অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে ভুমি উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে।

    একথা ঠিক যে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে (পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখছি) ইশতেহারে কোন কিছুর উল্লেখ থাকাই শেষ কথা নয়। তবে নির্বাচন পরবর্তী সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে কৃষি খাতে অর্থবহ উন্নয়ন তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যেই পড়ে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকেই কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল (বিবিসি রিপোর্টটি এখানে)। এবং তৎপরবর্তীকালে কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর বিভিন্ন বক্তব্য এবং উদ্যোগগুলো আমার কাছে আন্তরিক বলেই মনে হয়েছে।

    আবারও ধন্যবাদ।

  2. অবিশ্রুত - ২ এপ্রিল ২০০৯ (১:১২ অপরাহ্ণ)

    এই মুহূর্তে কৃষি ভর্তুকির তথ্যবহুল কোনও চিত্র আপনার সামনে দিতে পারছি না অস্মিতা। তবে বিভিন্ন সময় এ নিয়ে যে-সব সংবাদ চোখে পড়েছে, তা থেকে কৃষি ভর্তুকির যে-গতিপ্রবণতা অনুমান করেছি, তাতে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসায় কৃষিভর্তুকি অনেকটা বাড়ে (মানে আর সব রাজনৈতিক দলের শাসনামলের চেয়ে), কিন্তু সেই বৃদ্ধিটা প্রকৃত মূল্যমানের নয়। শিক্ষা খাতের বাজেটে যেমন সামরিক খাতের শিক্ষা-বাজেট যুক্ত করে শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের দাবি করা হয় অনেকটা সেরকম অনেক ফাঁকি থাকে এসব বরাদ্দে। তা ছাড়া এই ভর্তুকি সরবরাহের ক্ষেত্রে যে-সব মধ্যবর্তী স্তর পেরুতে হয়, তাতে প্রকৃত কৃষকের কাছে আর ভর্তুকি গিয়ে পৌঁছতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে মতিয়া চৌধুরী যে-পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন, তার তাৎপর্য আশা করা যায় খুব তাড়াতাড়িই আমরা জানতে পারব।
    আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখছি না,- ভূমি ব্যবহারের নীতি। এ নীতির কার্যকারিতা না থাকায় উর্বর অনেক জমিতে বাড়িঘর উঠছে, শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে।
    অর্থনীতিবিদ নূরুল ইসলামের বইটি পড়ার সৌভাগ্য হয়নি, তবে আনিসুর রহমানের একটি বই আছে অপহৃত বাংলাদেশ,- তাঁর ওই সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। সেটি পড়েছিলাম অনেক আগে। এঁদের কাছ থেকে এখনও আমাদের অনেক কিছু নেয়ার আছে, পাওয়ার আছে।
    ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্যে, আপনার জরুরি সংযোজনের জন্যে।

  3. অস্মিতা - ২ এপ্রিল ২০০৯ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

    @ অবিশ্রুত

    আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখছি না,- ভূমি ব্যবহারের নীতি। এ নীতির কার্যকারিতা না থাকায় উর্বর অনেক জমিতে বাড়িঘর উঠছে, শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে।

    এ বিষয়ে আজকের পত্রিকায় কিছু অগ্রগতি চোখে পড়লো। এখানে:

    কৃষি জমির পরিমান কমে যাওয়ায় আর কোনও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র আয়োজিত এআইসিসি বিষয়ে এক প্রশিক্ষন কর্মশালায় তিনি আরো বলেন, বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া কৃষকের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। জমি স্বল্পতার কারণে এমন কি বিভিন্ন স্থাপনা সম্প্রসারণ না করার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন তিনি। নির্ভুল তথ্য দিয়ে কৃষককে আরো সমর্থবান করার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। সূত্র : চ্যানেল আই

    অবশ্য শেষ বিচারে সবই নির্ভর করবে কৃষি মন্ত্রী তাঁর কথার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারবেন তার ওপর। তবে বিষয়টি তার নজরে রয়েছে বলেই মনে হয়।

  4. অবিশ্রুত - ৩ এপ্রিল ২০০৯ (১২:৫৬ অপরাহ্ণ)

    কৃষি, কৃষি ভর্তুকি, সরকারি কৃষি পরিকল্পনার গন্তব্য ইত্যাদি আলোচনায় ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বিবেচনায় এখানে দু’টি সংবাদ তুলে রাখছি।
    প্রথম সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক যুগান্তরে।
    এতে গ্রামীণ সমাজে, কৃষি কাঠামোয় ভূমিহীনতা বৃদ্ধির সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে।

    গ্রামে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। দেশের প্রায় সব বিভাগেই ভূমিহীন পরিবার বাড়ছে আশংকাজনক হারে। বর্তমানে গ্রামের ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ পরিবারই ভূমিহীন, যা ১৯৯৬ সালে ছিল ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। ১৯৮৩-৮৪ সালে ছিল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। দেশে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষিজীবী পরিবারের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ কৃষি জরিপ-২০০৮ এর প্রিলিমিনারি রিপোর্ট থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। জরিপে দেখা যায়, বর্তমানে গ্রাম এলাকায় ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৩২ লাখ ৫৬ হাজার। এর আগে ১৯৯৬ সালের কৃষি জরিপ অনুসারে গ্রামে মোট ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ১৫ হাজার, যা ছিল গ্রামের মোট পরিবারের ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। ১৯৮৩-৮৪ সালের জরিপে ভূমিহীন পরিবার ছিল প্রায় ১২ লাখ, যা ছিল সে সময়কার গ্রামীণ পরিবারগুলোর ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জরিপে দেখা যাচ্ছে, ভূমিহীন পরিবার বেড়েই চলেছে।
    বিভাগওয়ারি হিসাব : সর্বশেষ কৃষি জরিপ অনুসারে বরিশাল ছাড়া সব বিভাগেই ভূমিহীন পরিবার মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বেড়েছে। যদিও সংখ্যার হিসাবে বরিশালেও ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গত ১২ বছরে ভূমিহীন পরিবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগে। মেট্রোপলিটন শহর এবং অন্যান্য শহরকে ঘিরে দ্রুত নগরায়নকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিএসের রিপোর্টে। এক বিভাগের লোক আরেক বিভাগে চলে যাওয়াও এর ছোট একটি কারণ হতে পারে বলেও এতে বলা হয়েছে। তবে ভূমিহীন বেড়ে যাওয়ার বিস্তারিত কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি রিপোর্টে।
    ঢাকা ও রাজশাহীতে ভূমিহীন বেশি : সংখ্যার বিচারে বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্রামীণ ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে প্রথমে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। দ্বিতীয় চট্টগ্রাম। তবে মোট জনগোষ্ঠীর অনুপাত হিসাব করলে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা এবং দ্বিতীয় স্থানে সিলেট বিভাগ।
    ঢাকা বিভাগের গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা বর্তমানে ১১ লাখ ২৯ হাজার, যা মোট গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এটা ১৯৯৬ সালের জরিপে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ আর ১৯৮৩-৮৪ সালে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
    রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে ১০ লাখ ৬ হাজার ভূমিহীন পরিবার রয়েছে, যা গ্রামের মোট পরিবারগুলোর ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এটা ১৯৯৬ সালে ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
    সিলেটে বর্তমানে গ্রামীণ ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার, যা সেখানকার মোট গ্রামীণ জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা ১৯৯৬ সালে ছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
    বর্তমানে বরিশাল বিভাগে গ্রামীণ ভূমিহীন পরিবার রয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার, যা ওই অঞ্চলের মোট পরিবারের ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে বরিশালে ১ লাখ ২৩ হাজার ভূমিহীন পরিবার ছিল, যা তখনকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ১৯৮৩-৮৪ সালে গ্রামে ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার, যা ছিল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
    চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামে বর্তমানে মোট ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার, যা সেখানকার মোট গ্রামীণ জনসংখ্যার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। ভূমিহীন পরিবারের হার ১৯৯৬ সালে ছিল মোট গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এটা ১৯৮৩-৮৪ সালে ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
    খুলনা বিভাগে বর্তমানে মোট ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এটা ১৯৯৬ সালে ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
    কৃষিজীবী পরিবার কমছে : মোট জনসংখ্যার অনুপাতে দেশে কৃষিজীবী পরিবার ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। যদিও সংখ্যায় বাড়ছে, যেটি প্রকৃত হিসাব নয়। কৃষিজীবী পরিবার বলতে সেসব পরিবারকে বোঝানো হয় যাদের অন্তত শূন্য দশমিক শূন্য ৫ একর করে আবাদি জমি আছে।
    ১৯৮৩-৮৪ সালে সারাদেশের গ্রামে এরকম কৃষিজীবী পরিবারের হার ছিল মোট জনসংখ্যার ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ১৯৯৬ সালে কমে হয় ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর এবারের জরিপে এ ধরনের পরিবার হার আরও কমে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশের প্রত্যেক বিভাগেই এ ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে।
    এ প্রসঙ্গে বিবিএসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারাদেশে দ্রুত নগরায়ন এবং লোকজন অকৃষি খাতের পেশায় চলে যাওয়াই এই প্রবণতার পেছনে কারণ হতে পারে। গত ১২ বছরের মধ্যে কৃষিজীবী পরিবারের হার সবচেয়ে বেশি কমেছে ঢাকা বিভাগে।
    ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিভাগে কৃষিজীবী পরিবার ছিল মোট জনসংখ্যার ৬৫ দশমিক ১ শতাংশ। এবার সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশে। কৃষিজীবী পরিবারের অনুপাত কমায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ঢাকা বিভাগের পরই চট্টগ্রাম বিভাগে গত ১২ বছরে কৃষিজীবী পরিবার সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রামে কৃষিজীবী পরিবার ছিল মোট জনসংখ্যার ৬৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এবার সেটা কমে হয়েছে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কৃষিজীবী পরিবার কমার হারে এরপরের অবস্থানে সিলেট বিভাগ। সিলেট বিভাগে আগের জরিপে কৃষিজীবী পরিবারের অনুপাত ছিল মোট জনসংখ্যার ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এখন সেটা কমে হয়েছে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীতেও কমেছে কৃষিভিত্তিক পরিবারের অনুপাত।
    আনুপাতিক হিসাবে বরিশাল ও সংখ্যায় রাজশাহী শীর্ষে : এবারও বরিশালে কৃষিজীবী পরিবার আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। বরিশালের ৬৭ দশমিক ৬৭ পরিবার কৃষিজীবী। আগের জরিপেও বরিশালে এটা বেশি ছিল। তবে সংখ্যার বিচারে শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। রাজশাহীর ৪২ লাখেরও বেশি পরিবার কৃষিজীবী।

    দ্বিতীয় সংবাদটি প্রকাশ পেয়েছে নয়া দিগন্তের পহেলা এপ্রিল সংখ্যায়
    এ সংবাদটিতে চলতি অর্থ বছরে সারের ক্ষেত্রে দেয়া ভর্তুকিসংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। এতে বলা হচ্ছে :

    ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সারে ভর্তুকি বাবদ সর্বমোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়ায় ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, টিএসপিতে ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, এমওপি সারে ৭০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং ডিএপি সারে ৩৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
    জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে গত পহেলা এপ্রিল জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদের (কক্সবাজার-২) এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এ তথ্য জানান। কৃষিমন্ত্রী আরো জানান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি সেচ মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা ১০ হাজার ৮৩১ কোটি ৬৬ লাখ লিটার। বর্তমান সরকার লিটার প্রতি দুই টাকা কমানোর ফলে এ খাতে প্রায় ২১৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
    মোঃ শাহরিয়ার আলমের অপর এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী জানান, ইউরিয়া সারের ভর্তুকির বিষয়টি আন্তর্জাতিক বাজারে সারের ‘লটপ্রতি’ মূল্যের ওপর নির্ভর করে। এ সারে সরকারকে ‘ট্রেড গ্যাপ’ নামে প্রতি কেজিতে ৩০-৫০ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়।
    এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সার ২ লাখ ৪৫ হাজার ১১৭ মেট্রিক টনের বিপরীতে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪২ হাজার ৮০১ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন, এমপিও ৩৩ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩৪ মেট্রিক টন এবং ডিএপি ১৭ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে ৩৩ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন মজুদ আছে। অর্থাৎ পরবর্তী মৌসুমে সারের কোনো ঘাটতি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষকদের বিনামূল্যে সার দেয়ার পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
    ননী গোপাল মণ্ডলের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, কৃষকদের দোরগোড়ায় সহজে সার পৌঁছে দেয়ার জন্য ১৯৯৬-২০০১ সালের সার বিতরণ পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা দ্রুততার সাথে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

    দু’চারদিনের মধ্যেই এ-প্রসঙ্গে আরও কিছু জানা যাবে, আশা করছি।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.