অনেক তপ্ত খবর আমাদের আশপাশে : আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল ভেঙে না দিলে এবং তাদের দলের অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি না দিলে গৃহযুদ্ধ শুরু করবে জামায়াতে ইসলামী, হরতালের পর হরতালের মধ্যে দিয়ে ‘জ্বালাও পোড়াও পুলিশ পেটাও’ নীতি নিয়ে মাঠে নেমেছে তাদের সব নেতাকর্মী, এ দেশের গণতন্ত্রকে নিরাপদ করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে একটি অভিমত-নিবন্ধ লিখেছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় প্রত্যাশিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন দেশের মানুষ-রাজপথে নেমে এসেছে তরুণ...

অনেক তপ্ত খবর আমাদের আশপাশে : আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল ভেঙে না দিলে এবং তাদের দলের অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি না দিলে গৃহযুদ্ধ শুরু করবে জামায়াতে ইসলামী, হরতালের পর হরতালের মধ্যে দিয়ে ‘জ্বালাও পোড়াও পুলিশ পেটাও’ নীতি নিয়ে মাঠে নেমেছে তাদের সব নেতাকর্মী, এ দেশের গণতন্ত্রকে নিরাপদ করার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে একটি অভিমত-নিবন্ধ লিখেছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় প্রত্যাশিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন দেশের মানুষ-রাজপথে নেমে এসেছে তরুণ সমাজ, ওদিকে এতসব ঘটনার ডামাডোলের মধ্যে ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের দূতিয়ালি করতে গোপনে গোপনে জোর তৎপরতা শুরু করেছে কর্পোরেট শক্তি। তা হলে কোনপথে এগিয়ে চলেছে এ দেশ? সবাই জানেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ একাত্তরের গণহত্যা বিচারের আরেকটি মামলার রায় দিয়েছে। এতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। লেখাই বাহুল্য, জামায়াতে ইসলামীর নেতা হওয়ার জন্যে তাকে এ দণ্ড দেয়া হয়নি; বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর নেতা হওয়ার জন্যেও কাউকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়নি-ট্রাইব্যুনাল থেকে যাদের এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হয়েছে কিংবা যাদের বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, তাদের প্রত্যেককেই আন্তর্জাতিক অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের কারণেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের এসব অভিযোগ আজকের নয়, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই এসব অভিযোগ সচেতন ও ভুক্তভোগী মানুষজন বার বার করে আসছেন। অধুনাবিলুপ্ত সাপ্তাহিক বিচিত্রার পাঠকপ্রিয়তার একটি অন্যতম কারণ ছিল এই যে সত্তর ও আশির দশকে এ পত্রিকাটি এসব যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধগুলি সম্পর্কে, তাদের রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টাগুলি সম্পর্কে জনগণকে বিভিন্ন সময় অবহিত করেছে। যুদ্ধাপরাধী কেউ বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামীর নেতা হলেই তারা ওই সব অভিযোগের সূত্রে পরিচালিত বিচারের উর্ধ্বে উঠে যায় না। কিন্তু বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জনগণকে বার বার এরকমই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের উদ্দেশ্যে না কি এ বিচার হচ্ছে। এইভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা করেছে তারা। ট্রাইব্যুনালে কয়েকটি মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার দিকে এগুতে শুরু করতেই মরণছোবল দিতে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী ও দলটির সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্র শিবির। পুলিশের ওপর অব্যাহত হামলার মধ্যে দিয়ে তারা চাইছে পরিস্থিতি…

সেনাবাহিনী বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা নিতে পারে- গত ২১ ডিসেম্বর এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ফরেন পলিসির অনলাইন সংস্করণে, জোসেফ অলচিনের ‘দ্য মিডলাইফ ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। অথচ ২০১২ সালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনাই হলো, একটি সামরিক ক্যু-এর অপচেষ্টাকে নসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ভবিষ্যতে সত্যিই কি এমন কিছু ঘটবে?[...]

সেনাবাহিনী বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা নিতে পারে- গত ২১ ডিসেম্বর এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা ফরেন পলিসির অনলাইন সংস্করণে, জোসেফ অলচিনের ‘দ্য মিডলাইফ ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। অথচ ২০১২ সালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনাই হলো, একটি সামরিক ক্যু-এর অপচেষ্টাকে নসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। ভবিষ্যতে সত্যিই কি এমন কিছু ঘটবে? বাংলাদেশের রাজনীতিকে যেসব ঘটনা, সংশয় ও গুঞ্জন অস্বচ্ছ করে রেখেছে, রাজনীতি সম্পর্কে আমাদের অন্ধকারে রেখেছে, সেসবের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন এই গুঞ্জনভিত্তিক প্রতিবেদন। আর সে প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে ফরেন পলিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ দ্বি-মাসিক পত্রিকার ওয়েবসাইটে। এ রকম একটি নয়, অসংখ্য গুঞ্জন ও অপপ্রচার অস্বচ্ছ ও অস্পষ্ট করে রেখেছে আমাদের রাজনীতিকে। দিন আনি দিন খাই মানুষদের কাছে এখন তাই একটি বড় প্রশ্ন, আমাদের এ রাজনীতির গন্তব্য কোথায়? রাজনীতি নিঃসন্দেহে গতিশীল ও প্রবহমান, কিন্তু তার তো একটি গতিমুখ থাকে, লক্ষ্য থাকে। কিন্তু তেমন কিছু কি আছে চলমান রাজনীতির? অনেক উত্তর দেয়া যাবে এই প্রশ্নের, কিন্তু পরক্ষণেই আমরা দেখতে পাব, সেসব উত্তরও প্রশ্ন হয়ে ছুটে আসছে আমাদের দিকে। এই রাজনীতি কি চায় আমাদের গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে? তা হলে সাংবিধানিকভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ হলেও এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কেন নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে জাতীয় সংসদকে? এই রাজনীতি কি চায় আমাদের জীবনযাপনের নিরাপত্তাব্যূহ তৈরি করতে? তা হলে কেন বিশ্বজিতের মতো জীবন ঝরে যায় রাজপথে? এই রাজনীতি কি চায় আমাদের ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা দিতে? সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠবে, আমাদের রাষ্ট্র কি আদৌ বোঝে ব্যক্তির স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা? আর আমরাইবা কতটুকু প্রস্তুত রয়েছি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যক্তির ও বাকস্বাধীনতার অনুশীলন করতে? এই রাজনীতি কি চায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে? তা হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কেন এত সমালোচনা, কেনইবা এত ষড়যন্ত্র? এই রাজনীতি কি চায় সবার অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে? তা হলে কেন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে, কর্মসূচিতে কোনো প্রতিফলন নেই সেসবের? প্রধান রাজনৈতিক কোনো দল একটি হরতালও কি করেছে খাদ্য সঙ্কট কিংবা দ্রব্যমূল্যের ক্রমবৃদ্ধি নিয়ে? এ রকম অনেক প্রশ্নই আমরা করতে পারি। আর সেসবের উত্তরের জের ধরে আমাদের মনে দেখা দেয় আরো অজস্র প্রশ্ন। যদিও এক অর্থে বলতে গেলে, এসব প্রশ্ন এবং উত্তরও হয়তো অর্থহীন; কেননা যেসব রাজনৈতিক দল…

...এ যুদ্ধেও আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী- যেমন ছিল একাত্তরে। ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা লিখেছিলেন তার উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’-এর শেষ বাক্য, ‘মাভৈঃ, ভয় নেই, রাত কেটে যাবে।’ তারপরই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আলবদর বাহিনী- তিনি আর ফিরে আসেননি, কিন্তু রাত পেরিয়ে ভোর এসেছিল, পরাজিত হয়েছিল পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহায়তাকারীরা। এ যুদ্ধেও আমাদের অনেক-অনেকবার বিব্রত হতে হবে এ রকম অপপ্রচারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাত কাটবেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার হাসিকান্নায় উদ্বেলিত মানুষদের প্রশান্তিময় নতুন ভোর আসবেই...

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। তখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি -- আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় স্বীকার করেনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, দ্রুত মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারী যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য গণহত্যা তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। হাইকোর্টে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা সমপর্যায়ের একজন ব্যক্তি এ কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে আরো জানানো হলো, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দালালদের অপরাধের কারণে যাঁদের ক্ষতি হয়েছে, কমিশন তাঁদের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করবে। তখনো আমাদের নীতিনির্ধারক মুক্তিযোদ্ধারা জানতেন না, তাঁরা মূলত আরো একটি যুদ্ধ শুরু করতে চলেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের যুদ্ধ -- ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। যুদ্ধের অবসান ঘটেছে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজয় মেনে নিয়ে আমাদের হাঁটুর নিচে অবনত হয়ে অস্ত্রসমর্পণ করেছে। স্বাধীন দেশের আকাশে-বাতাসে গুমরে মরছে স্বজনহারানো ক্ষুব্ধ মানুষের কান্না। সারা বাংলাদেশ তখন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতার পরিপ্রেক্ষিত : ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই/ স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’ বিক্ষুব্ধ স্বজনহারানো ও ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে এদিন এক বিবৃতিতে গণহত্যা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের দাবি জানালেন ২৪ জন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা হলেন বেগম সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সৈয়দ নূরুদ্দীন, কে. জি. মুস্তাফা, বদরুদ্দীন উমর, কবীর চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, নজমুল করিম, দরফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সমর দাস, এবিএম মূসা, কামাল লোহানী, ফয়েজ আহ্‌মদ, জাহেদুর রহিম, সৈয়দ আতিকুল্লাহ, নূরজাহান বেগম, লায়লা সামাদ, আবদুল গণি হাজারী, গোলাম রসুল, আলী আশরাফ, মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আসাদুজ্জামান, এম এ খতিব। ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২। অন্তর্ঘাত চালানোর গোপন জিঘাংসা নিয়ে ততদিনে গা-ঢাকা দিয়েছে পাকবাহিনীর সমর্থক বাহিনীগুলোর সদস্যরা -- যারা রাজনৈতিকভাবে মূলত জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতাকর্মী। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রেসনোটের মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারী এসব অপরাধীকে অচিরেই বিচারের আওতায় আনা হবে। প্রেসনোটে বলা হলো, ‘দালাল বা এ ধরনের অপরাধীদের দেখা পেলে তাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অসামরিক পুলিশকে নির্দেশ…

...কফিনের মধ্যে কাফনে ঢাকা তাঁর ছায়া-ছায়া মুখ -- কিন্তু কোনও মুখরতা নেই আগের মতো, আমাদের সেই শিল্পাঙ্গনের সন্ধ্যার আড্ডাগুলির মতো। তবে, কফিনের ওপর রয়েছে মার্কস ও এঙ্গেলস-এর লেখা বই ‘কম্যুনিস্ট পার্টির ম্যানিফেস্টো’। এটাও তার একটি অন্যতম শেষ ইচ্ছে।...

মধ্যরাতে, মানুষের ক্রান্তিকালে, বিপন্ন সময়ে কিংবা মুখর শুক্ল অথবা কৃষ্ণপক্ষের আড্ডাতে নিশ্চয়ই তিনি আমাদের মধ্যে ফিরে-ফিরে আসবেন -- যদিও তিনি আর নেই। তিনি, ফয়েজ আহ্‌মদ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে শারীরিকভাবে বিদায় নিয়েছেন এই পৃথিবী থেকে। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। কিন্তু বয়স দিয়ে ফয়েজ আহ্‌মদের বিস্তার অনুমান করা সম্ভব নয়। আসলে তিনি ত্রিকালজ্ঞ। জন্ম নিয়েছিলেন পরাধীনকালে, উপনিবেশে ১৯২৮ সালের ২ মেতে। তাঁর জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ তখনও পরিচিত বিক্রমপুর হিসেবে। বালককাল থেকেই বার বার অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়িয়েছেন -- কখনো কাউকে না বলে চলে গেছেন ভাইয়ের চাকরিস্থলে, কখনও আবার প্রিয় পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলার জন্যে চেপে বসেছেন কলকাতার রেলে। আর মধ্যরাতের অশ্বারোহী হওয়ার গল্প -- সেও তো সবার জানা। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন আমাদের মাঝে জীবন্ত কিংবদন্তি। আর এই কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পথে কত না দীর্ঘ সময় হেঁটেছেন তিনি -- রাজনীতি করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, মানুষের সঙ্গে থেকেছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, কথা শুনেছেন। তার মতো কথক আর কেই-বা ছিল? কখনও নিচু লয়ে, কখনও দ্রুত লয়ে খানিকটা ফিসফিসানো আচ্ছন্নতা মেশানো কণ্ঠে তিনি আড্ডায় শোনাতেন পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী মুক্তিআন্দোলনসমূহের কথা, ডা. নন্দীর চলে যাওয়ার বর্ণনা, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্মাণের আর ব্যক্তিত্বের তুচ্ছ দীনতার ঘটনা। সাহিত্যচর্চার শুরু করেছিলেন শিশুসাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে -- অন্যদিকে ১৯৪৭ সালের পর থেকেই যুক্ত হয়েছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে। পৃথিবীকে শিশুর বসবাসযোগ্য করে তোলার সুকান্তীয় ছাড়পত্র হাতে তারপর ফয়েজ আহ্‌মদ ছুটে বেরিয়েছেন বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে -- পৃথিবীর একদিক থেকে আরেকদিকে। কত কমিটমেন্ট ছিল তাঁর! আর ছিল সেসব কমিটমেন্ট পূরণের জন্যে কত উদ্যোগ! সেসব আমরা লিখে, বলে কখনও শেষ করতে পারব না। সাম্প্রদায়িকতা ঠেকাতে রক্তাক্ত হয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটকে গড়ে তুলেছেন নিজের সন্তানের মতো করে, শিল্পকে এ সমাজে মর্যাদাপূর্ণ করে তোলার প্রয়াসে নব্বইয়ের দশকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সমস্ত প্রয়াস একীভূত করেছেন ‘শিল্পাঙ্গন’ গড়ে তোলার কাজে। আমরা কি কখনও ভুলতে পারব, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি কী করে এরশাদ পতনের আন্দোলনের শেষ সময় দু নেত্রীকে ঐক্যবদ্ধ করার, এক মঞ্চে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং সে উদ্যোগে সফলও হয়েছিলেন? এবং সেই উদ্যোগের অনিবার্য উপসংহার ছিল…

...২০১২-এর ১১ জানুয়ারিও হয়তো ২০০৭ সালের পুরানো চেহারায় ফিরে যেতে পারত। এ ধরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটানোর মূল ধাত্রী বলে যাদের মনে করা হয় তাদের উৎসাহিত করার চেষ্টাও হয়েছে নানাভাবে। ‘সামরিক বাহিনীর মেধাবী কর্মকর্তারা গুম খুনের শিকার হচ্ছেন’, রাজনৈতিক অঙ্গনের এরকম বক্তব্যে ও লিফলেটে সেনাবাহিনীতে ভীতি-অসন্তোষ এবং বিক্ষোভ দেখা দেয়া অস্বাভাবিক ছিল না। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরিরের পক্ষ থেকে তো সেনাবাহিনীর প্রতি সরাসরি বর্তমান সরকারকে অপসারণের আহ্বানই রাখা হয়েছিল। ...

একটি ক্রান্তিদিনই বলা যায় বোধকরি এবারের ১১ জানুয়ারিকে। এ দিনে আমাদের মনে হয় ২০০৭ সালের কথা, সামরিক বাহিনীশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থানের কথা। সামরিকতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়েই সম্ভব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পথ বন্ধ করা-এরকম একটি পাকিস্তানবাদী, সামরিকতান্ত্রিক ধারণা ফিরে আসতে শুরু করে ওই ১১ জানুয়ারি থেকে। এবং এ ধারণার পালে বাতাস যোগাতে থাকেন সুশীল নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা। সেই অর্থে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সুশীলতন্ত্র ও সামরিকতন্ত্রের গাঁটছড়া বাঁধার দিবসও বটে। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারিও একইভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। জনগণ দেখেছে, এদিন একদিকে গোলাম আযম গ্রেফতার হচ্ছেন, অন্যদিকে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাচ্ছেন, একইসঙ্গে আবার বিএনপি বিবৃতি দিয়ে জানাচ্ছে, সরকার ‘আইএসপিআরকে দিয়ে উস্কানি দিচ্ছে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)।’ রাজনীতির এরকম বড় বড় ঘটনাগুলির বাইরে ওইদিন দেখা গেছে, সিআইডি অভিযোগপত্র দিচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ খুনের মামলায় ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ নূরন্নবী চৌধুরী শাওনকে বাদ দিয়ে। সাক্ষী করা হয়েছেন নূরন্নবী শাওনকে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮)। এখন জানা যাচ্ছে, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার মোঃ আবদুল হালিম বিয়ে করেছেন এমপি শাওনের আপন মামাতো বোনকে (মানবজমিন, ১ মাঘ ১৪১৮)। নারায়নগঞ্জে এইদিন ‘যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে (প্রথম আলো, ২৯ পৌষ ১৪১৮) সরকার আমাদের আবারও নিশ্চিত করেছে, গণতন্ত্র আর সরকারি গণতন্ত্র দু’ রকম গণতন্ত্র, সরকারি গণতন্ত্রে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্যাতন জায়েজ করা আছে। অনেকেই হয়তো একমত হবেন না, তবে মনে হচ্ছে, এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল আইএসপিআর’এর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র বিবৃতিটি। এ বিবৃতি থেকে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বাংলাদেশের প্র্রধান বিরোধী দল বিএনপি সামরিক বাহিনীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা মনে করে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে থাকায় আইএসপিআর’কে বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন, বেসামরিক পর্যায়ে যেমন গুম খুন চলছে, সামরিক সামরিক কর্মকর্তারাও তেমনি গুম হয়ে যাচ্ছেন (প্রথম আলো, ২৭ পৌষ ১৪১৮)। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি’র এ অভিযোগ খুবই স্পর্শকাতর অভিযোগ। সামরিক বাহিনীতে কারও বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে অপরাধ বিচারের জন্যে বাহিনীটির নিজস্ব আইন আছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার এ অভিযোগ…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.