...এ যুদ্ধেও আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী- যেমন ছিল একাত্তরে। ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা লিখেছিলেন তার উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’-এর শেষ বাক্য, ‘মাভৈঃ, ভয় নেই, রাত কেটে যাবে।’ তারপরই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আলবদর বাহিনী- তিনি আর ফিরে আসেননি, কিন্তু রাত পেরিয়ে ভোর এসেছিল, পরাজিত হয়েছিল পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহায়তাকারীরা। এ যুদ্ধেও আমাদের অনেক-অনেকবার বিব্রত হতে হবে এ রকম অপপ্রচারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাত কাটবেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার হাসিকান্নায় উদ্বেলিত মানুষদের প্রশান্তিময় নতুন ভোর আসবেই...

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১।
তখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি — আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় স্বীকার করেনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, দ্রুত মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারী যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য গণহত্যা তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। হাইকোর্টে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা সমপর্যায়ের একজন ব্যক্তি এ কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে আরো জানানো হলো, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দালালদের অপরাধের কারণে যাঁদের ক্ষতি হয়েছে, কমিশন তাঁদের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করবে। তখনো আমাদের নীতিনির্ধারক মুক্তিযোদ্ধারা জানতেন না, তাঁরা মূলত আরো একটি যুদ্ধ শুরু করতে চলেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের যুদ্ধ — ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ।

২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১।
যুদ্ধের অবসান ঘটেছে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজয় মেনে নিয়ে আমাদের হাঁটুর নিচে অবনত হয়ে অস্ত্রসমর্পণ করেছে। স্বাধীন দেশের আকাশে-বাতাসে গুমরে মরছে স্বজনহারানো ক্ষুব্ধ মানুষের কান্না। সারা বাংলাদেশ তখন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতার পরিপ্রেক্ষিত : ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই/ স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’ বিক্ষুব্ধ স্বজনহারানো ও ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে এদিন এক বিবৃতিতে গণহত্যা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের দাবি জানালেন ২৪ জন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা হলেন বেগম সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সৈয়দ নূরুদ্দীন, কে. জি. মুস্তাফা, বদরুদ্দীন উমর, কবীর চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, নজমুল করিম, দরফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সমর দাস, এবিএম মূসা, কামাল লোহানী, ফয়েজ আহ্‌মদ, জাহেদুর রহিম, সৈয়দ আতিকুল্লাহ, নূরজাহান বেগম, লায়লা সামাদ, আবদুল গণি হাজারী, গোলাম রসুল, আলী আশরাফ, মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আসাদুজ্জামান, এম এ খতিব।

১৬ জানুয়ারি ১৯৭২।
অন্তর্ঘাত চালানোর গোপন জিঘাংসা নিয়ে ততদিনে গা-ঢাকা দিয়েছে পাকবাহিনীর সমর্থক বাহিনীগুলোর সদস্যরা — যারা রাজনৈতিকভাবে মূলত জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতাকর্মী। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রেসনোটের মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারী এসব অপরাধীকে অচিরেই বিচারের আওতায় আনা হবে। প্রেসনোটে বলা হলো, ‘দালাল বা এ ধরনের অপরাধীদের দেখা পেলে তাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অসামরিক পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’

এসবেরই ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি ১৯৭২-এ জারি করা হয় দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল)। তারপর ২০ জুলাই ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ থেকে অনুমোদন পায় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার অবৈধ অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসনকে বৈধ করার লক্ষ্যে কিংবা দলীয় স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন করেছে। অথচ বাংলাদেশের প্রথম সংশোধনীটি আনা হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর শিকার জনগণকে ন্যায়বিচার দেয়ার লক্ষ্য থেকে। এরই মধ্যে ৩০ নভেম্বর ১৯৭৩-এ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই এমন গ্রেফতারকৃতদের জন্য বাংলাদেশ সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। তবে ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা, ঘরবাড়ি অথবা জাহাজে আগুন লাগানোর দায়ে অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে এই সাধারণ ক্ষমা প্রযোজ্য হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৩৭ হাজার জনকে — সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ফলে এদের মধ্যে ২৬ হাজার জন ছাড়া পায়। বাকি ১১ হাজার অভিযুক্তের বিচার অব্যাহত থাকে এবং ১৯৭৩ সালের মধ্যে ৭শ ৫২ জনের ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তি হয়েছিল।

এসবই ইতিহাস। কিন্তু মনে করার কারণ একটাই। গত কয়েক যুগ ধরে সুপরিকল্পিতভাবে একটি অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং বিভিন্ন বামপন্থী রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীও সেই অপপ্রচারের কোরাসে আছেন — তা হলো, মুক্তিযুদ্ধের পরপর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অথচ দালাল আইন বাতিল করেছিলেন সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি নতুন বছরের শুভেচ্ছা হিসেবে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করেন। ফলে তাদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, যারা কারাগারে ছিলেন তারা সবাই মুক্তি পান।

চীন বিপ্লবের নায়ক মাও সেতুংয়ের একটি কথা আছে — ‘যুদ্ধ হলো রক্তপাতময় রাজনীতি, আর রাজনীতি হলো রক্তপাতহীন যুদ্ধ।’ জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করার মধ্য দিয়ে পুরো বাংলাদেশকে ঠেলে নিয়ে যান রক্তপাতহীন যুদ্ধের নতুন এক পর্বে — একদিকে রাজনীতি করার অধিকার পায় সেই সব মানুষেরা যাদের বিরুদ্ধে ছিল কি না আন্তর্জাতিক অপরাধের বা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, অন্যদিকে রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে থাকেন গণতন্ত্রকামী সেসব মানুষ, মুক্তিযুদ্ধ যাঁদের দিয়েছিল ধর্মবাদী রাজনীতিমুক্ত গণতন্ত্র অনুশীলনের চেতনা। এখন যারা কথায় কথায় বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধের বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে, তাদের উচিত ওপরের ওই পরিপ্রেক্ষিতটি ভালো করে জেনে নেয়া। কারণ একটি দেশকে যাঁরা মুক্ত করেছিলেন, সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির নামে দালাল আইন বাতিল করে সেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির শিকার মানুষগুলোকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত তাঁদের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে দমন করা হয়েছিল। অন্যদিকে, রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হয়েছিল তাদের, যারা যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন। ওই রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার জন্য তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধের দায় থেকে আর বঞ্চিত করা হয়েছিল মুক্তিকামী মানুষকে ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে। সত্যিকার অর্থে তাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুকে একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেন সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান। দালাল আইন ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান যে রাজনীতির পথ খুলে দেন, সে রাজনীতিকে পরাস্ত করা না গেলে কখনই সম্ভব ছিল না আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের উদ্যোগ নেয়া, সম্ভব নয় বিচারকার্য অব্যাহত রাখা। বিগত কয়েক যুগ ধরে এ দেশের মানুষ ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় সেই রাজনীতি করেছে, জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনগুলো এই সংগ্রাম-আন্দোলনে বিভিন্ন সময় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু বিএনপি-সহ বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী দল এ আন্দোলনে অংশ নেয়া দূরে থাক, উল্টো যেসব বক্তব্য দিয়েছে, তা ওই দলগুলোর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি নতুন এক মাত্রা পায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে। নির্বাচনে কে জিতবে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ ইস্যুটি প্রধান হয়ে ওঠে। এবং নতুন প্রজন্ম বা নতুন ভোটাররা এ দাবির পক্ষে দাঁড়ায়। নির্বাচনী ইশতেহারে এ দাবিটি যুক্ত করে আওয়ামী লীগ ভোটযুদ্ধে এগিয়ে যায় এবং সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে আবারো শুরু হয় আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার কার্যক্রম।

জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের সময়েই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, আসলে নতুন এক যুদ্ধেরই শুরু হতে চলেছে — ন্যায়বিচার পাওয়ার নতুন এক যুদ্ধ। আর ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর যত দিন গেছে, ততই ওই রক্তপাতহীন যুদ্ধের চেহারা মূর্ত হয়ে উঠেছে আমাদের কাছে। আমরা এখন তেমনই এক যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি, যার অবসান না ঘটলে ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত ঐক্য ও সংহতি ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই এ দেশে; এবং সেই ঐক্য ও সংহতি আমরা ফিরে পেতে পারি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে। যারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের উদ্দেশ্যে এ বিচার করা হচ্ছে, তারা আসলে ইচ্ছে করেই বলছেন না, যুদ্ধাপরাধীদের একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য থেকেই দালাল আইন বাতিল করা হয়েছিল ১৯৭৫-এ। একটা বা দুটো নয় মোট ৭৩টি আদালতে তখন যুদ্ধাপরাধী দালালদের বিচার চলছিল। কিন্তু ওই আইন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে আদালতগুলোও অকার্যকর হয়ে পড়ে। সামরিক শাসনের ঢাল নিয়ে কোনো রাজনৈতিক শক্তি সেই আদালতগুলো অকার্যকর করার ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা মাথায় ভূমিকা রেখেছিল? এরা তারাই যারা গত ৪ ডিসেম্বর হরতাল ডেকেছিল। ওই হরতালে বিএনপি নৈতিক সমর্থন দিয়ে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, তাদের নেতা জিয়াউর রহমানই যুদ্ধাপরাধীদের নববর্ষের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন দালাল আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত। পরে ৯ ডিসেম্বর অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমেও তারা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, নতুন এক যুদ্ধে নেমেছে তারা- আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার বন্ধের যুদ্ধ।

শুরু থেকেই এ যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমমনাদের প্রধানতম হাতিয়ার আন্তর্জাতিক অপপ্রচার। আর এ ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে সুবিধা দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক নেটওয়ার্ক। অনেক বিশ্লেষকই দীর্ঘদিন থেকে আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাজ্যকে চিহ্নিত করে আসছেন বিচারের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে ফেরা ‘যুদ্ধাপরাধীদের স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নেহাত পিছিয়ে নেই একই ধরনের বিশেষণ থেকে। এ দুটি দেশেই ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী আশ্রয় নেয়-যারা তারপর ওইসব দেশের নাগরিক বনে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি যাতে পাকিস্তান মডেলেরই একটি রাষ্ট্র হয় এবং যুদ্ধাপরাধী রাজনীতিকরা যাতে রাষ্ট্র ও সমাজের নেতৃত্বশীল স্থানগুলোতে প্রতিষ্ঠা পায়, সেজন্য তারা শুরু থেকেই বিভিন্ন সমন্বিত কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব পাওয়া যুদ্ধাপরাধীরা এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে এবং অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমও যুক্তরাজ্যে অবস্থান নিয়ে কয়েক বছর পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার আন্দোলন পরিচালনা করেন। এখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে, সে অপপ্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে এই যুক্তরাজ্য। বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী ১৯৭১-এর পরপরই যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং ইস্ট লন্ডন মসজিদকে ঘিরে একটি শক্তিশালী সামাজিক ভিত্তি গড়ে তোলেন, নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটান। আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারকে ঘিরে লন্ডন থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক দি ইকোনমিস্ট আগে থেকেই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে এবং এ ক্ষেত্রে লবিস্ট গ্রুপের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু তাদের এই অপপ্রচারমূলক কর্মকা- শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ যে ধরনের কর্মকা-ের জন্য চিরতরে বন্ধ করে দিতে হয়েছে, অনেকের ধারণা, দি ইকোনমিস্টকেও একই পরিণতি বরণ করতে হতে পারে।

কিন্তু কী ঘটেছে যে দি ইকোনমিস্ট সম্পর্কে আমাদের এমন মন্তব্য করতে হচ্ছে? বিষয়টি সম্পর্কে আমরা শুধু এটুকুই জানতে পেরেছি, গত ৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম দি ইকোনমিস্টের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোর প্রধান অ্যাডাম রবার্টস এবং এশিয় ব্যুরোর প্রধান সম্পাদক রব গিফোর্ডের বিরুদ্ধে একটি রুল জারি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে আইনবিষয়ক ব্যক্তিগত কথোপকথন ও ই-মেইল বেআইনিভাবে সংগ্রহের অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং এগুলো প্রকাশ না করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। কেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট ১৯৭৩-এর ১১(৪) অনুচ্ছেদ তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, সে ব্যাপারে তিন সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। দি ইকোনমিস্ট এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো দেয়নি- যদিও বাংলাদেশের কোনো কোনো দৈনিকে (যেমন, মানবজমিন) দেখতে পাচ্ছি, গত ৮ ডিসেম্বরে সাপ্তাহিকটিতে এ বিষয়ক একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে মর্মে সেটির সূত্র ধরে বিভিন্ন সংবাদ ছাপানো হচ্ছে। মূলত ‘বাংলাদেশ : ডিসক্রিপেন্সি ইন ঢাকা’ নিবন্ধটি আপলোড হয়েছে দি ইকোনমিস্টের ব্লগসাইটে-মূলসাইটে নয়। প্রথম আলোতে কিংবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত সংবাদ বা নিবন্ধ আর তাদের ব্লগ সাইটে প্রকাশিত সংবাদ বা নিবন্ধ নিশ্চয়ই এক নয়। অথচ বাংলাদেশে সেভাবেই বিষয়টি প্রচার করা হচ্ছে। আমাদের অনেকেরই মনে আছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে রুপার্ট মারডকের ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে, সেটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ সেটি অনৈতিক হ্যাকিং এবং ব্যক্তিগত তথ্যাদির গোপানীয়তা লঙ্ঘন করেছিল। অথচ ঐতিহ্যবাহী ওই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়ে আসছিল ১৮৪৩ সাল থেকে। কাকতালীয়ভাবে দি ইকোনমিস্টও একই সময় থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা জানি না, একই ধরনের অপরাধ যদি তারা করে থাকে তবে তাদের জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে। সম্ভবত ওই পরিণতির আশঙ্কাতেই দি ইকোনমিস্ট এখন নীরবতা দেখাচ্ছে। গণমাধ্যমের নৈতিকতা অনুযায়ী, এ রকম একটি রুল জারির পর হ্যাকিং করা তথ্যসমূহ নিজেরা অথবা অন্য কোনো সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রচার করাও একটি গুরুতর অপরাধ। অথচ আমরা দেখলাম, ইকোনমিস্ট ভবিষ্যতের আশঙ্কায় যা নিজেরা করেনি, বাংলাদেশের দৈনিক আমার দেশ তাই করে বসে আছে।

গত ৯ ডিসেম্বর দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে, তাদের কাছে কমপক্ষে ১৭ ঘণ্টার কথোপকথন জমা রয়েছে। তারপর সেই কথোপকথনের খানিকটা তারা লিখিত আকারে প্রকাশ করেছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে, দৈনিক আমার দেশ এই কথোপকথন কোথায় পেল? তারাও কি তা হলে ট্রাইব্যুনালসংশ্লিষ্ট কারো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিংবা ইন্টারনেট হ্যাক করেছে? অথবা আইটিসির রুল জারির কারণে দি ইকোনমিস্ট এসব নিজেরা প্রকাশ করতে পারছে না বলে দৈনিক আমার দেশের সাংবাদিকদের কাছে দিয়েছে? অথবা দৈনিক আমার দেশ কিংবা জামায়াত-বিএনপির আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারবিরোধী সক্রিয় প্রতিনিধিরাই কি দি ইকোনমিস্টকে পটানোর চেষ্টা করেছে এ সংক্রান্ত খবর পত্রিকাটিকে প্রকাশের জন্য? পেছনের কারণ যাই থাকুক না কেন, আপাতত আলোচনার সুবিধার্থে আমরা ধরে নিই, দৈনিক আমার দেশের কাছে সত্যিই কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। এখন দেখা যাক, এ ধরনের কথোপকথন কি অপরাধ? একজন বিচারপতি তার বিচারকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অবিচল থেকে সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এবং বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তাই করেছেন। ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন সেরা কয়েকজন আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের একজন। বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম নিশ্চয়ই তার সঙ্গে কথা বলে কোনো অপরাধ করেননি। আমরা জানি, এ ধরনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংবাদপত্র সচরাচর চটকদার অংশগুলোই গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। ধরে নেয়া যেতে পারে, বেশি চটকদার মনে করার কারণেই দৈনিক আমার দেশের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া তারা একটা রায় চায়’। কিন্তু পুরো বিবরণটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেই যে কেউ বুঝবেন, এটি একটি ব্যক্তিগত কথোপকথনের রেকর্ড হলেও এতে এমন কোনো ভাষ্য নেই, যা আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। শিরোনামের জন্য যে চটকদার বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে, তাও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক নয়। কেননা বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা এ বিচারকাজ যাতে ত্বরান্বিত হয়, সেজন্য মুখিয়ে আছে। এবং নিশ্চয়ই সে কারণে সরকারও খুব চাপে আছে। এই কথোপকথন সম্পর্কে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ট্রাইব্যুনালে জানিয়েছেন, ‘আমরা আগেই বলেছি ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ নতুন একটি আইনে তার বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্যও কাজটি নতুন। সে কারণে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ হিসেবেই আমি আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছি। যা ছিল একান্তই নিজস্ব আলোচনা।’ স্বভাবতই সেখানে কেতাদুরস্ত ভাষায় কথা হয়নি। সংবাদের যে শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে, তা থেকে আমরা এটুকুই বুঝতে পারি, সরকার খুব চাপে আছে, এ বিচারকাজের অগ্রগতি না ঘটলে জনগণের কাছে তার মুখ দেখানোর উপায় নেই। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহের বিচারের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতাও প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে, কথোপকথনের বিস্তারিত বয়ানে দেখা যাচ্ছে, পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তারা দুজন ‘ফেয়ার ট্রায়াল’ নিশ্চিত করার ব্যাপারে কথা বলছেন-তার অর্থ, সরকার যত চাপেই থাকুক না কেন, জনগণ এ বিচার তাড়াতাড়ি করার ব্যাপারে যত উদগ্রীবই হোক না কেন, তাদের দুজনের কেউই সংক্ষিপ্ত কোনো পথ খোঁজেননি। শুধু তাই নয়, তারা রায়ের পাশাপাশি এর বিস্তারিত বিবরণও যাতে দ্রুততার সঙ্গে দেয়া যায়, সে ব্যাপারে কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, বিচারক ও পরামর্শদাতা কোনো রায় নিয়ে কথা বলেননি, রায় লেখার একটি সর্বজনস্বীকৃত বা গ্রহণযোগ্য কাঠামো নিয়ে কথা বলছেন।

তা হলে এই কথোপকথন যদি সঠিকও হয়ে থাকে, তা থেকে তো বরং দেখা যাচ্ছে, ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট বিচারকরা ন্যায়বিচারের প্রশ্নে অবিচল এবং ট্রাইব্যুনালও সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে। যে, সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে দি ইকোনমিস্টের ওপর রুল জারি করা হয়েছে এবং দি ইকোনমিস্ট তা মেনেও নিয়েছে- বাংলাদেশেরই কোনো কোনো পত্রিকা তা প্রকাশের মাধ্যমে বরং আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিশেষ একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এটি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের ওপর রুল ঘোষণার পরদিনই ফেসবুকের বেশ কয়েকটি জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত পেইজে ডিজাইন করে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষ্ণজ্ঞের কথপোকথনের চুম্বক অংশ আপলোড করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, দ্য ইকোনমিস্টকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অপপ্রচারটিকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্য থেকে এবং তাদের ওপর রুল জারি হলেও সংশ্লিষ্ট অন্য মাধ্যমগুলো তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। যেমন, ইকোনমিস্ট কোনো ভাষ্য দেয়ার আগেই ফেসবুকে বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল’ নামের একটি পেইজ। দেশি কিংবা বিদেশি কোনো গণমাধ্যম ট্রাইব্যুনালের স্কাইপ হ্যাকিং থেকে পাওয়া তথ্যগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই এই পেইজটির অ্যাডমিন কী করে তা পেয়েছে, তা অনুসন্ধান করার বিষয়। এই পেইজ কি দি ইকোনমিস্টের কেউ পরিচালনা করেন? তারা কি বাংলাদেশের কোনো দৈনিকে কাজ করেন? পুরো ঘটনাপ্রবাহ থেকে পরিষ্কার যে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবেই এ কাজ করছে। একটি ওয়েবসাইটের অনুসন্ধান থেকে জানা যাচ্ছে, এই ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল’ পেইজটির অ্যাডমিন ‘নাইট্রিক অক্সাইড’ একজন পেশাদার হ্যাকার-যে কি না গত বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০০৫ সালের একজন ছাত্র। ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল’ নামের এই ফেসবুক পেইজে এমনকি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার আগেই জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক কার্যক্রমের ছবি আপলোড হতে দেখা যায়- যা থেকে অনুমান করা যায়, গণমাধ্যমের ও জামায়াত-শিবিরের সংগঠকদের সঙ্গে এর অ্যাডমিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

সন্দেহ নেই, আমরা আসলে অন্যরকম এক যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই এগোচ্ছি। গরিবের বউ সকলের ভাবি-অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকেও তাই বিদেশের অনেকে নিজেদের মতো করে পরামর্শ দিতে চাইছেন। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিদেশি পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান আমাদের একজন বিচারককে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরে যেতে বলেছিলেন- যে ধরনের দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর এবং এটি আদালত অবমাননার শামিল। টবি ক্যাডম্যান অবশ্য বলে বেড়ান যে, ইংল্যান্ডের বার কাউন্সিলের শৃঙ্খলা পর্ষদ তাকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দিয়েছেন। কিন্তু গত ২১ নভেম্বর হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট আইসিসির রাষ্ট্রপক্ষসমূহের সম্মেলনে বাংলাদেশের আইসিটির ওপর এক বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত সবাই যখন এ সংক্রান্ত মূল রায়ের বরাত দিয়ে জানতে পারেন যে, ইংল্যান্ডের বার কাউন্সিলের শৃঙ্খলা পরিষদ বিষয়টি অমীমাংসিত রেখে দিয়েছেন, তখন সেখানে উপস্থিত টবি ক্যাডম্যান মুখ নিচু করে রেখেছিলেন।

যত অপপ্রচারই চলুক, শেষ পর্যন্ত টবি ক্যাডম্যানদের মুখ নিচু করতে হবে; এ যুদ্ধেও আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী — যেমন ছিল একাত্তরে। ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা লিখেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’-এর শেষ বাক্য: ‘মাভৈঃ, ভয় নেই, রাত কেটে যাবে।’ তারপরই তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আলবদর বাহিনী — তিনি আর ফিরে আসেননি, কিন্তু রাত পেরিয়ে ভোর এসেছিল, পরাজিত হয়েছিল পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহায়তাকারীরা। এ যুদ্ধেও আমাদের অনেক-অনেকবার বিব্রত হতে হবে এ রকম অপপ্রচারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাত কাটবেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার হাসিকান্নায় উদ্বেলিত মানুষদের প্রশান্তিময় নতুন ভোর আসবেই…

ইমতিয়ার শামীম

আপনারে এই জানা আমার ফুরাবে না...

১ comment

  1. সঞ্জয় মজুমদার - ২০ ডিসেম্বর ২০১২ (১০:২৬ অপরাহ্ণ)

    আমরাও আনোয়ার পাশার মত এই আশাতেই আছি “মাভৈঃ ভয় নেই, রাত কেটে যাবে।” যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেউ আটকাতে পারবে না। শত অপপ্রচারের জাল ছিন্ন করে সবার কাছে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে উঠছে মূল ইতিহাস। আমাদের বিজয় সম্পূর্ণ হবেই।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.