২০১২ সালের শেষদিকের কথা। ফেসবুকে একজনের ওয়ালে একটা ফটোগ্রাফ দেখি; ছবির সঙ্গে নাম না থাকলে হয়তো খেয়াল করতাম না ওটা কার প্রতিকৃতি। এ যে আমাদের অভিমানী শিল্পী নভেরা আহমেদ! তাঁর সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানতাম। যদিও বাংলাদেশের শিল্পজগতে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই আমার অজানা। আমি শিল্পকলার ছাত্র নই, তার ওপর কয়েক বছর ধরে আছি দেশের বাইরে। বিদেশে থাকি বলেই বাংলা বইপত্র নিয়ে কথা বলার সুযোগ খুঁজি। ফেসবুকে বইপড়ুয়াদের একটা বড়োসড়ো গ্রুপও ততদিনে গড়ে উঠেছে। নভেরার ফটোগ্রাফ যাঁর ওয়ালে দেখেছিলাম তাঁর সঙ্গেও আলাপ ওই বইয়েরই সূত্রে। আমার বিশেষভাবে আগ্রহ ছিল রুশ সাহিত্যের বইপত্র বিষয়ে; আর রুশ সাহিত্যের বিখ্যাত অনুবাদক ননী ভৌমিককে নিয়ে তাঁরা চট্টগ্রাম থেকে একটি লিটল ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যা করবেন বলেও জেনেছিলাম। নভেরার ছবির সূত্রে নয়, বরং রুশ সাহিত্য নিয়ে আলাপের জন্যই ওই পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে তাই বন্ধুত্ব করতে চাইছিলাম। প্রারম্ভিক এক আলাপের মাঝখানেই তিনি নিশ্চিত হতে চাইলেন যে আমি প্যারিসে থাকি কিনা, আর তারপর কিছুটা অপ্রাসঙ্গিকভাবেই উত্থাপন করলেন নভেরা আহমেদের কথা। জানতে চাইলেন, দীর্ঘদিন ফ্রান্স-প্রবাসী এই বাঙালি ভাস্কর সম্পর্কে আমার আগ্রহ আছে কিনা। আগ্রহ অবশ্যই আছে; কিন্তু তিনি যে ফ্রান্সেই আছেন, সে-কথা আমি জানতাম না। নিজের অজ্ঞতার কথা খোলাখুলিই স্বীকার করি। আমার বন্ধু তখন মুক্তাঙ্গন ব্লগের একটা পোস্টের লিংক দেন আমাকে – তাঁরই লেখা, এবং পড়তে বলেন। বিশেষভাবে অনুরোধ করেন যেন আমি নভেরা আহমেদ সম্পর্কে এবং বিশেষ করে তাঁর শিল্পকর্ম সম্পর্কে সম্ভব হলে খোঁজ নিই। আমাদের এই আলাপ হয়েছিল ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর রাতে। সে-রাতেই লেখাটি পড়তে শুরু করি। ‘নভেরা আহমেদ : মৃত ও জীবিত’ – ভাস্কর নভেরা আহমেদকে নিয়ে রেজাউল করিম সুমনের একটি অনুসন্ধানী লেখা। শিল্পীকে নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার কথা জানতে পারি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে তাঁর কয়েকটি কাজ কীরকম অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে তারও ছবি ছিল ওই লেখার সঙ্গে। ততক্ষণে আমার বুকের মধ্যে ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে – সত্যিই কি নভেরা মারা গেছেন? এরপর মূল লেখার নীচে নানা জনের মন্তব্যগুলি পড়তে থাকি, ক্রমশ জট খুলতে থাকে। সুমন ভাইয়ের ব্লগপোস্ট আর তার নীচে বিভিন্ন জনের মন্তব্য থেকে শেষপর্যন্ত যা জানা গেল তা হলো – নভেরা আহমেদ এখনো জীবিত, তবে বন্ধুদের কারো…
ইকতিয়ার চৌধুরীর লেখা থেকে জানতে পেরেছিলাম, নভেরা আহমেদ বাংলায় কথা বলেন না, কথা বলেন ইংরেজিতে। কিন্তু আমি কী করব – ততক্ষণে আমি ইংরেজি ফরাসি যে একটু-আধটু পারতাম তাও ভুলে বসেছি। অগত্যা বাংলাতেই নভেরাকে সকালের শুভেচ্ছা জানালাম… কিন্তু অপর পাশের অভিমান যে সুউচ্চ, পর্বতের মতোই অনড়। [. . .]