করিবে করিতেথাকিবে করিতেথাকিতেহইবে। শিখিবারকিছুনেই শিখিবারকিছুপ্রয়োজননেই শিখিবারকিছুপ্রয়োজনথাকিতেপারিবেনা। এই হল আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে নৃত্যাদি গানাদি নাটকাদি চলচ্চিত্রাদি দৃশ্যশিল্পাদি সাহিত্যাদির সাম্প্রতিক কয়েক দশকাদির করুণ অবস্থা। এভাবে চললে তবেই না বিপুল মানুষের অনন্ত সম্ভাবনার সার্বজনীন চাতাল সদাভাষ্যগ্রস্ত কর্মচঞ্চল শোকেস হয়ে উঠবে। এটা খুবই লজ্জাজনক আজ সকলেই সকল কিছু পারার যুগ, আজ সকলেরই ন্যূনতম পিড়িবিদ্যা না শেখার যুগ।
আমাদের ক্লাশে একটি নূতন ছাত্র আসিয়াছে। সে আসিয়া প্রথম দিনই সকলকে জানাইল, “আমি পোইট্রি লিখতে পারি !” একথা শুনিয়া ক্লাশের অনেকেই অবাক হইয়া গেল; কেবল দুই-একজন হিংসা করিয়া বলিল, “আমরাও ছেলেবেলায় ঢের ঢের কবিতা লিখেছি।” নতুন ছাত্রটি বোধহয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলুস্থুল পড়িয়া যাইবে এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হা হা করিয়া উঠিবে।
শেষ পর্যন্ত এই পোইট্রি বা কবিতা কিভাবে নাজেহাল হয়েছিল সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’র পাঠক মাত্রই তা জানেন।
ইন্স্পেক্টর ইস্কুল দেখিতে আসিলেন। প্রায় বিশ-পঁচিশটি ছেলে সাবধানে পকেটের মধ্যে লুকাইয়া কবিতার কাগজ আনিয়াছে। বড় হলের মধ্যে সমস্ত স্কুলের ছেলেদের দাঁড় করানো হইয়াছে, হেডমাস্টার মহাশয় ইন্স্পেটরকে লইয়া ঘরে ঢুকিতেছেন— এমন সময় শ্যামলাল আস্তে আস্তে পকেট হইতে একটি কাগজ বহির করিল। আর যায় কোথা ! পাছে শ্যামলাল আগেই তাহার কবিতা পড়িয়া ফেলে, এই ভয়ে ছোট বড় একদল কবিতাওয়ালা একসঙ্গে নানাসুরে চীৎকার করিয়া যে যার কবিতা হাঁকিয়া উঠিল। মনে হইল, সমস্ত বাড়িটা কর্তালের মতো ঝন্ঝন্ করিয়া বাজিয়া উঠিল, ইন্স্পেক্টর মহাশয় মাথা ঘুরিয়া মাঝ পথেই মেঝের উপর বসিয়া পড়িলেন। ছাদের উপর একটা বিড়াল ঘুমাইতেছিল, সেটা হঠাৎ হাত পা ছুড়িয়া তিনতলা হইতে পড়িয়া গেল, ইস্কুলের দারোয়ান হইতে অফিসের কেশিয়ার বাবু পর্যন্ত হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিল। সকলে সুস্থ হইলে পর মাস্টার মহাশয় বলিলেন, “এতো চেঁচালে কেন?”
আমাদের সুকুমারবৃত্তির ডোবাখানায় আজ খালি হাঁকডাক চেঁচামেচি। একজন রাজমিস্ত্রির যে গাঁথুনিবিদ্যা লেখকের তা নেই, একজন রঙমিস্ত্রির যে প্রলেপবিদ্যা একজন চিত্রশিল্পীর তা নেই, একজন ঠেলাগাড়িওয়ালার যে চলনবিদ্যা একজন সঙ্গীতশিল্পীর তা নেই। নেই, নেই, নেই। কারণ একটাই রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার করণকৌশল শেখা আছে সুকুমারবৃত্তির ডোবাখানাবাহিনির তা নেই – তা থাকার দরকারও নেই – করণকৌশল জানা না থাকলে রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার কাজ জোটে না – কিন্তু সুকুমারভোম্বলদের কোনোকিছুই জানা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই – ওরা অলি, ওরা ভ্যাটকাইয়া থাকে, কাজ হতে থাকে, হয়ে যায়।
দর্শকশ্রোতাবন্ধুদের প্রাণ ওষ্ঠাগত কিন্তু সুকুমার শ্যামলালদের পকেট অচর্চিত অশিক্ষিত হাঁকমারা শিল্পকর্মে ঠাসা। ভরাবিতান – তাই বাণিজ্যেও আগুনের হলকা। শুধু পীড়ন থামে না – থামবে না?
সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’র এগল্পটি থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৩ comments
লুসিফার - ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ (১:৩১ অপরাহ্ণ)
করণকৌশল জানা না থাকলে রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার কাজ জোটে না – কিন্তু সুকুমারভোম্বলদের কোনোকিছুই জানা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই – ওরা অলি, ওরা ভ্যাটকাইয়া থাকে, কাজ হতে থাকে, হয়ে যায়।
চমৎকার লিখেছেন ।
তানবীরা - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ (১:৪১ পূর্বাহ্ণ)
অন্তত জলিল আর বর্ষাকে নিয়ে নাতো এই পোষ্ট 🙂
মাসুদ করিম - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ (১:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
না, আমরা তো জানি ওরা কোত্থকে আসে — আমার তো এফডিসি বাংলা ছবি ভালই লাগে — আপনি জানেন আপনি কী দেখতে বসেছেন। কিন্তু চারপাশে উচ্চতর শিল্পের সাধকসাধক ভাবওয়ালারা মঞ্চ, টিভি, প্রকাশনায় যা দিয়ে যাচ্ছেন — এটা বেশি তাদেরকে নিয়ে।