পাখির মতো কখনো সময়ের হিসাব ভুল করেননি, আপন মনে সবসময় ঠিক জায়গায় সমাবেশ করেছেন [...]

১৯৩৯এ তার বয়স ১০ ১৯৪৯এ ২০, এই তো আমাদের কবি, দেশচেতনার বাংলাদেশের কবি, ১৯৫২ থেকে ২০০৬এর কবি, ৫৪ বার তাকে দরকার ছিল আমাদের, পাখির মতো কখনো সময়ের হিসাব ভুল করেননি, আপন মনে সবসময় ঠিক জায়গায় সমাবেশ করেছেন, আমাদের বাংলাদেশ বাংলা ভাষায় স্বাধীনতার এক অদম্য ছাপ এঁকে দিয়েছে, তার প্রাণে এই ছাপের ভাষার ছবি অনন্য রূপে আরো বড় বাংলা ভাষায় তাকে অভিষিক্ত করেছে, আর আমরা এক নতুন কালপরিধির চারণকে দেখলাম, সব কালপরিধির কবি থাকে না, কিন্তু আমাদের এই হাজারো অভাবের মধ্যে, শামসুর রাহমান এই একটি অভাব আমাদের রাখলেন না, তিনি বাংলাদেশের নতুন কালপরিধির কবি হলেন, প্রতিশ্রুতি প্রস্তুতি সংগ্রাম স্বাধিকার কালোথাবা ক্ষয় অবক্ষয় গণতন্ত্র আঘাত, তার জীবনহ্রদে, আমাদের দেশ পরিক্রমায়, এই পরিস্থিতিগুলোর প্রকাশ দিনলিপির মতো প্রাণসংহারের আগ পর্যন্ত চলেছে, তিনি থেমে গেছেন, কাল পরিক্রমা তো থামবে না আমরা জানি, কিন্তু এই ১৯২৯এর ২৩ অক্টোবরের কথা আমরা মনে রাখব, আমাদের কবি এসেছিলেন, আমরা জানি চলে যেতেও দুঃখময় আগস্টেই গেলেন, কারণ তিনি আমাদের কবি, আজন্ম যুদ্ধকে ঘৃণা করেছেন, বাঙালি শবের স্তূপ দেখে বাণীহীন বিমর্ষ

যন্ত্রণাজর্জর হয়েছেন, বিকল হয়ে যাননি, আমাদেরও অবিকল সেপথে নেমে নরপিশাচের বিচারের পরোয়ানা হাতে তুলে নিতে হবে, যেমন নিতেন তিনি, যিনি ছিলেন আমাদের, কবি, কালপরিধির অদম্য স্বাধীন কবি।

আমাদের তৃপ্তি হত তার প্রধান কারণ ওই বস্তুগুলো মানসম্পন্ন উপাদানে ও উপায়েই তৈরি হত।[...]

গ্রামে আমরা মুড়িটা মোয়াটা খইটা চিড়াটা ঘরের যেমন খেতাম বাইরেরও খেতাম। আমাদের মতো গ্রামের গরীব ঘরের যারা ছিলাম তারা তো এসব বাইরেরটা উৎসবে পরবে ঘরেরটার চেয়ে উৎসাহ নিয়ে খেতাম। সেশুধু দূরের বাদ্য মধুর শোনায় এই কারণে নয়, ঘরের চেয়ে বাইরের মুড়িটা মোয়াটা খইটা চিড়াটা আরো তৃপ্তিদায়ক ছিল – কারণ গরীব ঘরের উপকরণ তো অত ভাল ছিল না, আর গরীব ঘরের মা-দাদির হাতে অন্য আরো অনেক সাংসারিক কাজ সেরে এসব ভাল করে বানানোর মতো সময় দেয়াও কঠিন ছিল। তো এই বাইরের খেয়ে (যা উৎসব পরব ছাড়া জোটার প্রশ্নই আসে না, আমাদের হাতে কিছু পয়সা শুধু এসময়েই উঠত) যে আমাদের তৃপ্তি হত তার প্রধান কারণ ওই বস্তুগুলো মানসম্পন্ন উপাদানে ও উপায়েই তৈরি হত। সেই সহজ গ্রামীন জীবনে এনিয়ে আজকের মতো ম্যাজিস্ট্রেট ও মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি করতে হত না। এই গরীব ঘরের একমাত্র পুত্রসন্তান, আমার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ও তার প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যের প্রসারলাভের ফলে একদিন ওই গ্রাম ছেড়ে আমরা চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করতে শুরু করি। শহরে এসেও বাইরের হাতে বানানো ও কারখানায় বানানো খাবারে তৃপ্তি অব্যাহত ছিল। আশির দশকের মিমি চকলেট, রাস্তায় বিক্রি হওয়া কুলফি, ললিপপ, আচার মান সম্পন্ন ছিল। এছাড়া ফুটবল, র‌্যাকেট, ব্যাট, বল, ব্যান্ড এসব হয়তো এখনকার মতো এত অঢেল ছিল না কিন্তু গুণেমানে আজকের চেয়ে অনেক ভাল ছিল। আমি অতীতের গুণগান করছি না, আমি আজো উপরে উল্লেখিত প্রতিটি জিনিসের ভোক্তা – তাই বলছি মানের প্রশ্নে আমরা অনেক নিচে নেমে গেছি, আমাদের দেশে তৈরি বিদেশে তৈরি প্রতিটি কুটির ও শিল্পবস্তুতে আমরা ন্যাক্কারজনকভাবে উল্টো পথের যাত্রী হয়ে উঠেছি। একটি প্রচলিত কথা আছে, দশচক্রে ভগবান ভূত – তাই কোটি হাতে শিল্প ও বাণিজ্যে ভেজাল হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এটাই তো শেষ কথা নয়, যেসব দেশ শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নত তারা কিন্তু মানের অবনমন ঘটায়নি, তারা মাননিয়ন্ত্রণে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারা বুঝতে পেরেছে গ্রামের সমাজে যা স্বতস্ফূর্ত তাকে মেট্রোপলিটন সমাজে অব্যাহত রাখতে হলে মাননিয়ন্ত্রণের সজাগ দৃষ্টি ও সংকল্প নিয়ে একদল লোকের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেভাবে তারা তাদের বাজারকে শাসন করেছে। আমাদের এখানে এভাবে মাননিয়ন্ত্রণের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না, আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু…

তোর তো সাহস বেশি, তুই রাজাকার ন, তুই বেডা জামাত![...]

স্থান : চট্টগ্রামের মহানগর বিএনপি অফিসের ঠিক উল্টা দিকে। রিকশা টেক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে কিছু লোক ও কিছু রিক্সা। কাল : ২৯ রোজা ২০১০, দুপুর, একেবারেই কড়া দুপুর, জোহরের নামাজের ঠিক পরপর। পাত্র : একজন রিক্সাওয়ালা (*) বড় খোঁচা খোঁচা দাড়ি, রিক্সাওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে দরাদরি করছে (**) সাদা চাপদাড়িওয়ালা একজন ছোটো দোকানি। ** গোলপাহাড়ের মোড়ে যাবি? * ২৫ টাকা। ** তুই বেডা রাজাকার! তোর রাজাকারের চেহারা, তোর ইনসাফ নাই, গোলপাহাড়ের মোড় এখান থেকে এখানে, ২৫ টাকা! * দেশে কার ইনসাফ আছে? কারো ইনসাফ নাই। দেশে শুধু ফাঁসির গল্প, ফাঁসির ধান্দা। ** তোর তো সাহস বেশি, তুই রাজাকার ন, তুই বেডা জামাত! * হাসিনার… রিক্সাওয়ালা এপর্যায়ে হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটা অশ্রাব্য গালি চার্জ করে বসে। ** তোর সাহস রাজাকার জামাতের তুনও বেশি, তুই বেডা বিএনপি! * বিএনপিই তো, বিএনপি অইলে কি অইছে! এপর্যায়ে সবাই রিক্সাওয়ালাটাকে সামনে থেকে সরে যেতে বলে, রোজা রমজানের দিন মারামারি করা ঠিক হবে না – এই তাদের মতামত। রিক্সাওয়ালা ওইখান থেকে সরে সামনে চলে যায়।

এই দিবস হতে পারে এই উপমহাদেশের ইতিহাসকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার ও এই ত্রিদেশীয় সম্পর্কের নেতিবাচকতা উপশম করে এক উষ্ণ সম্পর্কের দিকে যাত্রার প্রচেষ্টায় সতত পদক্ষেপ।[...]

১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া তাদের ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে পালন করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাতে (কারণ তখন রোজার মাস ছিল, তাই মধ্যাহ্নভোজের পরিবর্তে নৈশভোজের মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল) ও মধ্যরাতে (১৫ আগস্ট জ্যোতিষের গণনায় ছিল ‘অশুভ দিন’ তাই ১৪ আগস্টের মধ্যরাতে শুভ সময় শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ইন্ডিয়ার জন্ম হয়েছিল) সত্যিকার অর্থে যা ঘটেছিল তাকে স্বাধীনতা বললে ভুল হবে – সেদিন ব্রিটিশ সরকার তার ইন্ডিয়ান উপনিবেশকে দুইটি ‘ডমিনিয়ন’ ঘোষণা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। এবং এই দুই ‘ডমিনিয়ন’ পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া যখন নিজ নিজ সংবিধান রচনা সম্পন্ন করবে তখনই তারা সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষিত হবে, তার আগ পর্যন্ত তাদের পরিচয় হবে : Dominion of India and Dominion of Pakistan in the Commonwealth of Nations। সংবিধান রচনা সম্পন্ন করে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ইন্ডিয়া সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। আর সংবিধান রচনা সম্পন্ন করে পাকিস্তান ১৯৫৬ সালে সার্বভৌম হয়। কাজেই সাদাকথায় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট (ও ১৫ আগস্ট) কী হয়েছিল, জানতে চাইলে আমার সবসময়ের উত্তর : দেশভাগ। আজ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যাই ভাবুক, ইতিহাসের বিচারে এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছিল এই ভূখণ্ডের সেই অঞ্চলগুলোর যেই অঞ্চলগুলো বিভেদরেখার প্রান্তীয় ভৌগলিকতার কারণে জাতিগত ভাবে দ্বিখণ্ডিত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বাংলা, কাশ্মীর, পাঞ্জাব, সিন্ধু… উত্তর ও পূর্বের এই দুর্ভাগা অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে এক অসমযুদ্ধে (সেই অসমসাহসী যুদ্ধে বাংলাদেশ জয়লাভ করে প্রতিষ্ঠা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ, যদি জয়লাভ করতে না পারত তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ভয়ংকর নারকীয় রাষ্ট্রীয় নির্যাতন নেমে আসত তা বোঝার ক্ষমতা আজ আমাদের দেশের অনেকেরই নেই) হারাতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ, পশ্চিমবাংলাকে আত্মস্থ করতে হয়েছে সুবিশাল শরণার্থীর দানবিক চাপ। আজো কাশ্মীর যে ভয়ংকর অমর্যাদার ও অনিশ্চয়তার আগুনে পুড়ছে তাও তো এই দেশভাগেরই কারণে। পাঞ্জাব ও সিন্ধু ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে দুঅংশেই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক হলেও ওই অঞ্চলের সামাজিক জীবনের অন্তরআত্মায় আজো দেশভাগের রক্তক্ষরণ চলছে। আর বিচ্ছিন্ন মেঘালয়, আসাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা তো দেশভাগের পর থেকেই চির অসুখী জীবনযাপন করছে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তার নিজ নিজ স্বাধীনতা দিবস পালন করুক।…

বাংলাদেশকে যদি রাজনৈতিক মুসলমানের মন শাসন করে তবে সেই হারের মধ্যে বেঁচে থাকার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যেতেই হবে যতদিন বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের মুক্তবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির পথের সংস্কৃতি।[...]

তার পা পেছনে। দেশ সারা পৃথিবী। অর্থনীতি, প্রতিদিনের প্রয়োজনে মুক্তবাজারের বিনিয়োগ ব্যবসা লভ্যাংশ তার খুবই পছন্দের । প্রযুক্তি, আল্লাহ ও সৎমানুষের শাসনে তার বিশ্বাস। তাকে ঘিরেই জেহাদি জঙ্গির কাছ থেকে ফিরতে চায় – ভারত, চীন, ইউরোপ, রাশিয়া ও আমেরিকা। এই চাওয়ার সাথে বাংলাদেশকে মেলানো যায় না। তুরস্ক, মালেশিয়া, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যের তেলওয়ালা দেশগুলো, মিশর, মরক্কো, আলজিরিয়া, মধ্য এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলো, সুদান, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া… এরকম আরো আরো মুসলিম দেশের কোনো একটির সাথে বাংলাদেশের কোনো মিল নেই। কিন্তু কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে যদি রাজনৈতিক মুসলমানের মন শাসন করে তবে সেই হারের মধ্যে বেঁচে থাকার ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যেতেই হবে যতদিন বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের মুক্তবুদ্ধি, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতির পথের সংস্কৃতি। জামাতের মধ্যে এবং আরো বড় করে দেখলে বিএনপির মধ্যে ও আরো দুঃখজনক রূপটি দেখতে হলে আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজনৈতিক মুসলমানের মনের অস্তিত্ব কড়িকোমলে প্রোথিত। আমাদের কোনো সম্ভাবনা নেই – এই রাজনৈতিক ইসলামের ‘মেইনস্ট্রিম’ আমাদের মধ্যে আছেই – সেই পথের সবকিছু আমাদের দেশে তৈরি হয়েই আছে। চারপাশের এই ‘মেইনস্ট্রিম’কে যখন দেখি, তখন সবচেয়ে করুণ যেছবি দেখি তা হল মানচিত্র ভূগোল বলে যে কিছু আছে – ইতিহাস তো বাদই দিলাম, কারণ কারো কারো মতে তাতো মৃত – তা মনেই হয় না। একেক জন আল্লাহ প্রেরিত বঙ্গসন্তান, আর এতোই বেশি তিনি এঅঞ্চলে পাঠিয়েছেন, যাদের আবার তার ইচ্ছায় কৈশোরযৌবনকালে নারীপুরুষনির্বিশেষে পাচারবাস ঘটে। কিন্তু এরাই সব ভুলে কথিত অকথিত কোরান ও সুন্নার আলোকে সর্বঘটে আল্লার শাসন কায়েম করতে চাইছে। এদের মধ্যে জেহাদি যারা তাদের এখন সরিয়ে নেয়া হয়েছে ‘মেইনস্ট্রিম’এর রাজনীতির নামে ও অর্থনৈতিক শক্তিতে এবং ইসলামিক ন্যায়ের ইউটোপিয়ায় এখন এরা ‘আশরাফুল মাকলুকাত’ বা ইসলামি ‘হোমো সেপিয়েন্স’ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশে যদি একটি কাজ করা যায়, যদি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা যায়, যদি সত্যিই তা সম্ভব হয়, তাহলে এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মুসলমানের মনে একটা বড় ধরনের আঘাত আমরা হানতে পারব। সেআঘাত শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বরাজনীতিতেও তার প্রভাব ফেলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের সাথে পৃথিবীর আর কোনো মুসলমান দেশকে কেউ মেলাতে পারবে না, সেই দেশ বেতাল হয়েও যদি রাজনৈতিক মুসলমানের মনে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.