ভারত ও চীন সুপ্রাচীন সভ্যতা ও বর্তমানের দুই রাজনৈতিক অর্থনৈতিক শক্তি হলেও জাপান মানবাধিকার মানবিক অর্জন এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির সূক্ষ্ম দক্ষতায় ওই দুই দেশের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। আমরা ভারত সভ্যতার মোগল ভারতের ও ভারত রাজের অংশ এবং বর্তমান ভারতের মধ্যবর্তী প্রতিবেশী আর চীন উত্তরে ও পূর্বে আমাদের এতই কাছে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় অংশ পাকিস্তানের চেয়েও আজ নিকটবর্তী প্রতিবেশী। বাংলাদেশ শুধু ভারত চীনের মধ্যে এই বিশেষ ভূরাজনৈতিক অবস্থানেই আবদ্ধ নয়, সৌভাগ্যের কথা সামুদ্রিক পথে জাপানের সাথে বাংলাদেশের দূরত্ব প্রায় উত্তর চীনের সমান। এখন এই ‘পুবে তাকাও’ নীতির সবচেয়ে কৌশলগত প্রাসঙ্গিক ভৌগোলিক অবস্থান আমাদেরই – আরো ভাল করে বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের। এটা সুনিশ্চিত ‘পুবে তাকাও’ নীতির ভৌগোলিক সিংহদুয়ার হবে এই বাংলাভাষী অঞ্চল ( অনেকে ‘সেতু’ বলতে চান, না, – সেতু নয়, আমাদের ওপর দিয়ে নয়, আমদের ভেতর দিয়ে সবাইকে পূর্বে যেতে হবে)। ফলে এই অঞ্চলের জন্য প্রয়োজন হবে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। বর্তমান পৃথিবীতে অবকাঠামোর উন্নয়নে সবচেয়ে প্রাগ্রসর দেশ জাপান। আমরা এশিয়ার উন্নয়নের অংশীদার হতে চাইলে, আমরা এশিয়ার পূর্ব পশ্চিমের সিংহদুয়ার হতে চাইলে, আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি গভীর সম্পর্কে জড়াতে হবে জাপানের সাথে। আর জাপানের দিক থেকে এটা হবে এক সুবর্ণ সুযোগ, এই বিরাট অঞ্চলের অবকাঠামোয় বিনিয়োগ ও উঁচুমানের দক্ষতা ফেরি করে, তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে তাদের দেশের ভয়ংকর মন্দার প্রভাব। তাই বাংলাদেশের বিদেশ নীতিতে জাপানের গুরুত্বকে শুধু রিকন্ডিশন গাড়ি বাণিজ্য ও অনুদানের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে একে আরো উন্নত ও বহুমুখী করে তোলাই হবে এ সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিনিয়োগ, অবশ্য সরকার যদি সে-লক্ষ্যে কাজ করতে চায় – না চাইলে বা না পারলে বর্তমানের এই ‘পুবে তাকাও’ নীতির সুযোগের কোনো সুফল না তুলেই শূন্য হাতে বসে থাকা ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের আর কিছুই করার থাকবে না – এবং বাংলাদেশ সরকারের এই ধরনের ব্যর্থতার ভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ বলেই, আজ আরো বেশি বাংলাদেশ সরকারের সাথে দক্ষ জাপানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতার সওয়াল করছি।
ভারতের জন্য সংযোগ, চীনের জন্য গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ বরাদ্দ হলে জাপানের জন্য রয়ে গেল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় জাপানের বিনিয়োগ ও দক্ষতার সবল অংশগ্রহণ। বাংলাদেশকে ‘পুবে তাকাও’ নীতির সিংহদুয়ার হতে হলে এই তিন মহারথীর সাথেই দরকার সুগভীর সুচিন্তিত সম্পর্কের। বর্তমানে ঘন ঘন ভারত ও চীনের কথা শোনা গেলেও জাপানের কথা বড় একটা শোনা যাচ্ছে না – আমরা চরম ভুল করব ভারত চীনের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামরিক ডামাডোলের মধ্যে দক্ষ জাপানের কথা বিস্মৃত হলে, আমাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামরিক বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
মাসুদ করিম
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৭ comments
মেঘমালা - ২৮ অক্টোবর ২০১০ (১:৫৮ অপরাহ্ণ)
আপনার বিস্তারিত বর্ননা ভালো লাগলো।আমি মনে করি বিশ্বায়নের এই
যুগে সব দেশেরই সম্ভাবনা আছে।আসল জিনিস হল সে সম্ভাবনাগুলো কে
কত বেশি কাজে লাগাতে পেরেছে।সব দেশের সাথে সু সম্পর্ক এর প্রতি
নজর দেয়া দরকার।
fanus - ৩০ অক্টোবর ২০১০ (২:৩১ অপরাহ্ণ)
প্রথম মন্তব্য করছি মুক্তাঙ্গনে ।
ভারত ও চীন নিকট ও শক্তিশালী অথ’নীতিক প্রতিবেশী হওয়াতে নামটি হয়তো বেশি শুনা যায় । রিকন্ডিশন গাড়ি বাণিজ্য ও সড়ক অবকাঠামোতে জাপানের বিনিয়োগ তো হচ্চে । ধন্যবাদ ।
বিনয়ভূষণ ধর - ১৪ নভেম্বর ২০১০ (৭:৫৯ অপরাহ্ণ)
মাসুদ ভাই!!!
আপনার উল্লেখিত বিষয়বস্তু’র সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে এই লিংকখানা দেয়া হলো। পড়ুন এখানে…
মাসুদ করিম - ৩০ মার্চ ২০১১ (৬:৪২ অপরাহ্ণ)
ভূমিকম্প, সুনামিতেও যদি শেষ হত ফুকুশিমার দুর্যোগ তাহলে এত নির্বোধ লাগত না নিজেকে — কিন্তু তারপর যা হল দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে, এর তো কিছুই আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বোধগম্য হচ্ছে না। দক্ষ জাপানের এই দুর্যোগ নিয়ে কোনো লিন্ক দিতে গিয়ে পিছিয়েই আসছিলাম, কারণ সেখানে যাকিছু লেখা আছে ‘রিয়েক্টর’ নিয়ে তার কিছুই আমি বুঝতে পারছিলাম না। এবার পেয়েছি একটা ‘স্লাইড শো’ মনে হল অন্তত ভাল ছবি অনেক কিছু এমনিতেই প্রকাশ করে, তাই এই লিন্কটি শেয়ার করছি।
মাসুদ করিম - ১০ মার্চ ২০১৩ (২:৫৩ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ২৯ মে ২০১৪ (১২:১০ অপরাহ্ণ)
মাসুদ করিম - ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (১০:২৭ পূর্বাহ্ণ)