কর্নেল তাহের যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তা থেকে প্রচলিত সেনা অফিসারদের ভাব-মানস থেকে তাঁর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা যায়। বঙ্গবন্ধু ‘ডেপুটি চীফ অব স্টাফ’ এর নতুন পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে নিয়োগ দেন। তারপরও জিয়ার নানা তৎপরতার সংবাদ কানে আসায় বঙ্গবন্ধু জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে প্রেষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এবং পূর্ব জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এখন জানা যাচ্ছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সেনা ষড়যন্ত্রে পরিবার-পরিজনসহ জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .) কর্নেল তাহের যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তা থেকে প্রচলিত সেনা অফিসারদের ভাব-মানস থেকে তাঁর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা যায়। বাংলাদেশের নব প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীতে তার বদলে জেনারেল শফিউল্লাহ্কে সেনা প্রধান নিয়োগ করায় জিয়া ছিল অসন্তুষ্ট। বঙ্গবন্ধুও তাঁর এই মনোভাবের কথা জানতেন। তাই ব্যতিক্রম হিসেবে বঙ্গবন্ধু ‘ডেপুটি চীফ অব স্টাফ’ এর নতুন পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে নিয়োগ দেন। তারপরও জিয়ার নানা তৎপরতার সংবাদ কানে আসায় বঙ্গবন্ধু জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে প্রেষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এবং পূর্ব জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় জিয়া আওয়ামী লীগের নানা স্তরের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে এই তদবির শুরু করেন, যাতে তাকে সেনাবাহিনীতে রাখা হয়। তার এই মিশনে তিনি সফল হয়েছিলেন। এখন জানা যাচ্ছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সেনা ষড়যন্ত্রে পরিবার-পরিজনসহ জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, শফিউল্লাহ এবং সমগোত্রীয় অফিসাররা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ভবিষ্যত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিজেদের ক্ষমতার ভিত পাকা করার জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আদলে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্রিগেডগুলোই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোড়া পত্তন করে। ঐ তিন অফিসারই ১৫ আগস্ট-এর কালরাতে সেনাবাহিনীর তিন শীর্ষ পদে সমাসীন ছিলেন। কিন্তু জাতির জনক এবং দেশের রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি সেনাবাহিনী থেকে পৃথক যে, রক্ষীবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল তার হেড কোয়ার্টার বঙ্গবন্ধুর বাসগৃহ ৩২নং থেকে খুবই কাছে থাকা সত্বেও মুষ্টিমেয় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তারা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। ১৯৭২-এর ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে তাহের তাঁর পদত্যাগ পত্রে পাকিস্তানী আদলে গড়ে তোলা জনবিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র ও ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তাহেরকে সেনাবাহিনী ছেড়ে যেতে হয়েছিল আর যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা রয়ে গেলেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকালে সেনাবাহিনীর ‘চীফ অফ স্টাফ’ ছাড়া বাকি ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং এমনকি রক্ষীবাহিনীর কর্তৃত্বে ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত…

প্রশাসন যন্ত্র সেই পুরোনো ব্যক্তিরাই চালান। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তারাই। যে সামরিক অফিসার পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য ছিলেন সচেষ্ট, তিনি আজ আরও উচ্চপদে সমাসীন। যে পুলিশ অফিসার দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে সোপর্দ করেছেন পাকিস্তানীদের হাতে, তিনি আবার মুক্তিযোদ্ধদের নামে হুলিয়া বের করতে ব্যস্ত। যে আমলারা রাতদিন খেটে তৈরি করেছে রাজাকার বাহিনী তারা মুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরী দিয়ে দয়া প্রদর্শনের অধিকারী। যে শিক্ষক দেশের ডাকে সাড়া দিতে পারেননি তিনিই আজ তরুণদের শিক্ষা দেয়ার গুরু দায়িত্ব বহন করেছেন। পরিকল্পনা বিভাগের যে কর্মীকে শোষণের পরিকল্পনা শেখানো হয়েছে বছরের পর বছর, তিনিই এখন সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পরিকল্পনা তৈরি করেন। যুদ্ধ চলাকালে যারা পাকিস্তানীদের হয়ে প্রচারণায় মত্ত ছিলেন, ১৬ ডিসেম্বর-এর পর তারাই ভোল পাল্টে সংস্কৃতির মধ্যমণি হয়েছেন।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর...) গৌহাটি সামরিক হাসপাতালের ইমার্জেন্সি কক্ষ। জীবন শঙ্কা এখনও কাটেনি। এর মধ্যে আহত হওয়ার চারদিনের মাথায় ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে রণক্ষেত্রে ছেড়ে আসা তার প্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তাহের একটি পত্রের ডিকটেশন দেন। আমি তার কথা শুনে তা লিখি। তার কিছু অংশ, “কামালপুরে কিছুক্ষণের জন্য যা দেখেছি তা অপূর্ব। তোমরা সম্মুখ যুদ্ধেও যে রণকৌশলের পরিচয় দিয়েছ তা যুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। কামালপুরের যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের ও অনন্য রণকৌশলের স্বাক্ষর। তোমরা নিয়মিত বাহিনীকেও হারিয়ে দিয়েছে। যতোদিন না আবার আমি তোমাদের মধ্যে ফিরে আসি, আশা করি সংগ্রাম চালিয়ে যাবে সাফল্যের সাথে। . . . তোমরা যুদ্ধ করছো জনসাধারণের জন্য। বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, জনগণকে অভাব, দুঃখ, অশিক্ষা থেকে মুক্ত করা এ যুদ্ধের লক্ষ্য। তোমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে যেন জনসাধারণের মধ্যে সেই লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলার অগনিত কৃষক যারা দেশের সর্বপ্রধান শ্রেনী তাদের মুক্তির জন্য এ যুদ্ধ। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে মুক্তির আলো দেখাও, তাদেরকে শিক্ষিত করো, যেন স্বাধীন বাংলাকে তারা একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। যখনই তোমরা কারো বাড়ীতে আশ্রয় নাও, তোমাদের উচিত তাদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করা। এ কাজ তোমাদের কৃষকদের সঙ্গে একাত্ম করবে এবং তারা পরিস্কার বুঝতে পারবে তোমরা কাদের জন্য যুদ্ধ করছো। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ জুলুম করে, মেয়েদের সম্ভ্রম নষ্ট করে, তবে তাদের জনসাধারণের দ্বারা বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে দ্বিধা করবে না। . . . তোমরা তরুণ। তোমরা একটি পবিত্র ইচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে নেমেছো। বাংলাদেশ তোমাদের জন্য গর্বিত। মনে রাখবে, বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব তোমাদের। জয় বাংলা। মেজর আবু তাহের”। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্রের দশম খণ্ডে সশস্ত্র সংগ্রাম (২) এ সন্নিবেশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাহেরের সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরবো: “সামরিক দিক থেকে ময়মনসিংহের চাইতে টাঙ্গাইল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই ময়মনসিংহ পাশে রেখে কামালপুর থেকে শেরপুর-জামালপুর-টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা পৌঁছানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করলাম। রংপুর এবং বগুড়া ৭ নং সেক্টরের অধীনে থাকলেও যোগাযোগের সুবিধার জন্য ঐ সেক্টরের অনেক অপারেশন আমার নেতৃত্বেই হয়েছে। আগস্ট মাসেই টাঙ্গাইলে যুদ্ধরত কাদের সিদ্দিকী…

২৯ অক্টোবর ২০১০, চটগ্রামে অনুষ্ঠিত 'কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা' হিসেবে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্নেল তাহের এর অনুজ ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। মুক্তাঙ্গন এর পাঠকদের জন্য বক্তৃতাটি পাঁচ পর্বে ভাগ করে উপস্থাপন করা হল।

[২৯ অক্টোবর ২০১০, চটগ্রামে অনুষ্ঠিত 'কর্নেল তাহের স্মারক বক্তৃতা' হিসেবে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং কর্নেল তাহের এর অনুজ ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন। মুক্তাঙ্গন এর পাঠকদের জন্য বক্তৃতাটি পাঁচ পর্বে ভাগ করে উপস্থাপন করা হল] ১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব *** *** *** “আমি একটি সোনার বাংলার চিত্র দেখেছি। এই চিত্র কল্পনায় কেটেছে বহু বিনিদ্র রাত্রি। এই চিত্র আমাকে রোমাঞ্চিত করেছে, উত্তেজিত করেছে। এই কল্পনায় বার বার মনে হয়েছে জনগণের সঙ্গে একাত্ব হয়ে আমি এক অসীম শক্তির অধিকারী। সমস্ত জীর্ণতাকে ভেঙ্গে ফেলে এই চিত্রকে রূপ দিতে সক্ষম। এ চিত্র আমাকে সাহস যুগিয়েছে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আমি জনগণের সাথে একাত্ব হয়েছি। বাংলার মানুষের নিবিড় সংস্পর্শে এসে আমি দেখেছি তাদের উদ্যম, কষ্ট সহিষ্ণুতা ও দেশপ্রেম। আমি বুঝেছি বাংলার এই শিক্ষাবঞ্চিত, প্রতারিত জনগণই হচ্ছে প্রকৃত প্রগতিশীল। তারাই বাংলার সুপ্ত শক্তি। বাংলার এই জনগণকে আমি আমার চিত্র কল্পনায় অংশীদার করতে চাই। আমি চাই তারা গভীরভাবে এই চিত্র উপলব্ধি করুক। রোমাঞ্চিত হোক, উত্তেজিত হোক। তাদের শক্তির পূর্ণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের যাদুঘরে বন্দী ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’ সোনার বাংলাকে মুক্ত করুক” মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে’ নামের একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম উপরের কথাগুলো লিখেন। ভূমিকায় বলা কথাগুলোর পর তাহের তাঁর চিত্রের সোনার বাংলার একটি ছবি উপস্থাপন করেছিলেন প্রবন্ধে। তাঁর আঁকা চিত্রের মূল উপজীব্য নদী ও মানুষ। সোনার বাংলার রূপ-কল্পটি তিনি শেষ করেছেন এই বলে, “নদীর বাঁধের উপর গড়ে ওঠা বাংলার এ জনপদ একটি নতুন সভ্যতা ও সংস্কৃতির অধিকারী। সুশৃঙ্খল এই জনপদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রেরণা দেয় সমগ্র পৃথিবীকে”। আমরা দেখবো, বাংলাকে স্বাধীন করে সোনার বাংলায় রূপ দিতে তাহের তাঁর কিশোর বয়স থেকে স্বপ্ন দেখেছেন। তা লালন করেছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছেন। ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ - এই আকুতি, বেদনা এবং তা থেকে সঞ্জাত ক্ষোভ, প্রতিজ্ঞা ও স্থীর সংকল্প স্কুল জীবন থেকেই তাহেরকে আলোড়িত করেছে। এ প্রসঙ্গে মায়ের কাছ থেকে শোনা ১৯৫২ সালের একটি ঘটনার কথা বলি: আমাদের…

৭০ বছরের দীনবন্ধু বিশ্বাস এসেছেন নাতনির হাত ধরে। তার হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। নাতনির হাতে বাংলাদেশের। ৬৫ বছরের বিধবা যশোদা দাস হাঁটছিলেন দ্রুত গতিতে। ছেলেকে কাঁধে নিয়ে সুশান্ত ভিল প্রায় দৌড়াচ্ছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার আগেই পৌঁছাতে চান তারা। অনেকে উঠে গেছেন টিনের চালে। অনেকে গাছের উপর। ৪০ বছর আগেকার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনা তাদের কাছে এখনও তরতাজা।[...]

লিন্ক তোলা যাচ্ছে না, তাই টাইপ করেই তুলে দিতে হল – ত্রিপুরার বাংলা দৈনিক ডেইলি দেশের কথার খবর : জেগে উঠল ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি – চোত্তাখলায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানের শিলান্যাস। নিজস্ব প্রতিনিধি।। আগরতলা, ১১ নভেম্বর : আবেগ, উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, স্মৃতি রোমন্থন আর এক বুক প্রত্যাশা নিয়ে বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত চোত্তাখলায় শুরু হল নতুন পথ চলা। হাজার মানুষের বিপুল করতালিতে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর আগের স্মৃতি বুকে চোত্তাখলা জেগে উঠল নতুন উদ্যমে। ৭০ বছরের দীনবন্ধু বিশ্বাস এসেছেন নাতনির হাত ধরে। তার হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। নাতনির হাতে বাংলাদেশের। ৬৫ বছরের বিধবা যশোদা দাস হাঁটছিলেন দ্রুত গতিতে। ছেলেকে কাঁধে নিয়ে সুশান্ত ভিল প্রায় দৌড়াচ্ছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার আগেই পৌঁছাতে চান তারা। অনেকে উঠে গেছেন টিনের চালে। অনেকে গাছের উপর। ৪০ বছর আগেকার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনা তাদের কাছে এখনও তরতাজা। ৭১এর পর অনেক বছর কেটে গেলেও মানুষ ভোলেননি সেই স্মৃতি। তাই তারা এলেন হাজারে হাজারে। নিজেদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, এসব শুনেই বড় হচ্ছে। এখানেই ছিল গণকবর, এখানেই ছিল ট্রেনিং ক্যাম্প। ঘুরে ঘুরে তাই দেখাচ্ছিলেন আত্মজদের। গনগনে রোদের উত্তাপ মাথায় নিয়ে বসেছেন অনেকে মাঠেই। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন [ইউসুফ] ইউনুস চোত্তাখলায় মাটিতে পা রেখে আবেগে আপ্লুত হলেন। বলছিলেন এই ক্যাম্পটির নেতৃত্বে ছিলেন কাজী জাফর আহমেদ। ঘন জঙ্গলে ঢাকা এই এলাকায় কয়েকবার এসেছিলাম। আমার কর্মকাণ্ড ছিল মেলাঘরের হাবুল ব্যানার্জীর বাগান আর ঢাকায়। তার স্মৃতির রোমন্থনে অনেকে পাশে এসে দাঁড়ান। এমন একটি ঐতিহাসিক স্থানকে ত্রিপুরা সরকার সংরক্ষণ করছে দেখে তাদের চোখে জল। বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন প্রজন্মের যুবক-যুবতীরাও ত্রিপুরাবাসীর এই হৃদয় নিংড়ানো উদ্দীপনা দেখে রীতিমতো আপ্লুত। নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দুয়েক আগে থেকেই রাজনগর ব্লকের সীমান্তবর্তী চোত্তাখলা মাঠ দর্শকে পরিপূর্ণ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে নিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার যখন চোত্তাখলার মাটি ছোঁয় সে সময় দুদেশের পতাকা নাড়িয়ে জনগণ তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। দুদেশের মৈত্রী বন্ধনকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা যখন বক্তব্য রাখছিলেন সে সময় পড়ছিল মুহুর্মুহু করতালি। অনুষ্ঠান কভার করতে আসা বাংলাদেশের এক সাংবাদিকের মুখ থেকে বেরিয়েই…

আমরা এশিয়ার উন্নয়নের অংশীদার হতে চাইলে, আমরা এশিয়ার পূর্ব পশ্চিমের সিংহদুয়ার হতে চাইলে, আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি গভীর সম্পর্কে জড়াতে হবে জাপানের সাথে।[...]

ভারত ও চীন সুপ্রাচীন সভ্যতা ও বর্তমানের দুই রাজনৈতিক অর্থনৈতিক শক্তি হলেও জাপান মানবাধিকার মানবিক অর্জন এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তির সূক্ষ্ম দক্ষতায় ওই দুই দেশের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। আমরা ভারত সভ্যতার মোগল ভারতের ও ভারত রাজের অংশ এবং বর্তমান ভারতের মধ্যবর্তী প্রতিবেশী আর চীন উত্তরে ও পূর্বে আমাদের এতই কাছে বাংলাদেশের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় অংশ পাকিস্তানের চেয়েও আজ নিকটবর্তী প্রতিবেশী। বাংলাদেশ শুধু ভারত চীনের মধ্যে এই বিশেষ ভূরাজনৈতিক অবস্থানেই আবদ্ধ নয়, সৌভাগ্যের কথা সামুদ্রিক পথে জাপানের সাথে বাংলাদেশের দূরত্ব প্রায় উত্তর চীনের সমান। এখন এই ‘পুবে তাকাও’ নীতির সবচেয়ে কৌশলগত প্রাসঙ্গিক ভৌগোলিক অবস্থান আমাদেরই – আরো ভাল করে বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের। এটা সুনিশ্চিত ‘পুবে তাকাও’ নীতির ভৌগোলিক সিংহদুয়ার হবে এই বাংলাভাষী অঞ্চল ( অনেকে ‘সেতু’ বলতে চান, না, – সেতু নয়, আমাদের ওপর দিয়ে নয়, আমদের ভেতর দিয়ে সবাইকে পূর্বে যেতে হবে)। ফলে এই অঞ্চলের জন্য প্রয়োজন হবে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। বর্তমান পৃথিবীতে অবকাঠামোর উন্নয়নে সবচেয়ে প্রাগ্রসর দেশ জাপান। আমরা এশিয়ার উন্নয়নের অংশীদার হতে চাইলে, আমরা এশিয়ার পূর্ব পশ্চিমের সিংহদুয়ার হতে চাইলে, আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি গভীর সম্পর্কে জড়াতে হবে জাপানের সাথে। আর জাপানের দিক থেকে এটা হবে এক সুবর্ণ সুযোগ, এই বিরাট অঞ্চলের অবকাঠামোয় বিনিয়োগ ও উঁচুমানের দক্ষতা ফেরি করে, তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে তাদের দেশের ভয়ংকর মন্দার প্রভাব। তাই বাংলাদেশের বিদেশ নীতিতে জাপানের গুরুত্বকে শুধু রিকন্ডিশন গাড়ি বাণিজ্য ও অনুদানের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে একে আরো উন্নত ও বহুমুখী করে তোলাই হবে এ সরকারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিনিয়োগ, অবশ্য সরকার যদি সে-লক্ষ্যে কাজ করতে চায় – না চাইলে বা না পারলে বর্তমানের এই ‘পুবে তাকাও’ নীতির সুযোগের কোনো সুফল না তুলেই শূন্য হাতে বসে থাকা ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের আর কিছুই করার থাকবে না – এবং বাংলাদেশ সরকারের এই ধরনের ব্যর্থতার ভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ বলেই, আজ আরো বেশি বাংলাদেশ সরকারের সাথে দক্ষ জাপানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতার সওয়াল করছি। ভারতের জন্য সংযোগ, চীনের জন্য গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ বরাদ্দ হলে জাপানের জন্য রয়ে গেল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষায় জাপানের বিনিয়োগ ও দক্ষতার সবল অংশগ্রহণ। বাংলাদেশকে ‘পুবে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.