১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া তাদের ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে পালন করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাতে (কারণ তখন রোজার মাস ছিল, তাই মধ্যাহ্নভোজের পরিবর্তে নৈশভোজের মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল) ও মধ্যরাতে (১৫ আগস্ট জ্যোতিষের গণনায় ছিল ‘অশুভ দিন’ তাই ১৪ আগস্টের মধ্যরাতে শুভ সময় শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ইন্ডিয়ার জন্ম হয়েছিল) সত্যিকার অর্থে যা ঘটেছিল তাকে স্বাধীনতা বললে ভুল হবে – সেদিন ব্রিটিশ সরকার তার ইন্ডিয়ান উপনিবেশকে দুইটি ‘ডমিনিয়ন’ ঘোষণা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। এবং এই দুই ‘ডমিনিয়ন’ পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া যখন নিজ নিজ সংবিধান রচনা সম্পন্ন করবে তখনই তারা সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষিত হবে, তার আগ পর্যন্ত তাদের পরিচয় হবে : Dominion of India and Dominion of Pakistan in the Commonwealth of Nations। সংবিধান রচনা সম্পন্ন করে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ইন্ডিয়া সার্বভৌম রাষ্ট্র হয়ে ওঠে। আর সংবিধান রচনা সম্পন্ন করে পাকিস্তান ১৯৫৬ সালে সার্বভৌম হয়।
কাজেই সাদাকথায় ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট (ও ১৫ আগস্ট) কী হয়েছিল, জানতে চাইলে আমার সবসময়ের উত্তর : দেশভাগ। আজ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ যাই ভাবুক, ইতিহাসের বিচারে এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছিল এই ভূখণ্ডের সেই অঞ্চলগুলোর যেই অঞ্চলগুলো বিভেদরেখার প্রান্তীয় ভৌগলিকতার কারণে জাতিগত ভাবে দ্বিখণ্ডিত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। বাংলা, কাশ্মীর, পাঞ্জাব, সিন্ধু… উত্তর ও পূর্বের এই দুর্ভাগা অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে এক অসমযুদ্ধে (সেই অসমসাহসী যুদ্ধে বাংলাদেশ জয়লাভ করে প্রতিষ্ঠা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশ, যদি জয়লাভ করতে না পারত তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যে কী ভয়ংকর নারকীয় রাষ্ট্রীয় নির্যাতন নেমে আসত তা বোঝার ক্ষমতা আজ আমাদের দেশের অনেকেরই নেই) হারাতে হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণ, পশ্চিমবাংলাকে আত্মস্থ করতে হয়েছে সুবিশাল শরণার্থীর দানবিক চাপ। আজো কাশ্মীর যে ভয়ংকর অমর্যাদার ও অনিশ্চয়তার আগুনে পুড়ছে তাও তো এই দেশভাগেরই কারণে। পাঞ্জাব ও সিন্ধু ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে দুঅংশেই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক হলেও ওই অঞ্চলের সামাজিক জীবনের অন্তরআত্মায় আজো দেশভাগের রক্তক্ষরণ চলছে। আর বিচ্ছিন্ন মেঘালয়, আসাম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা তো দেশভাগের পর থেকেই চির অসুখী জীবনযাপন করছে।
ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তার নিজ নিজ স্বাধীনতা দিবস পালন করুক। একটি স্বাধীন দেশের জন্য তার ‘স্বাধীনতা দিবস’ এক অপরিসীম আনন্দ ও প্রতিজ্ঞার উপলক্ষ তৈরি করে। কিন্তু এই উপমহাদেশের ইতিহাসে ‘দেশভাগ’-এর মতো এমন বেদনাদায়ক ঘটনাকে বিস্মৃতি থেকে রক্ষা করতে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের যৌথভাবে ‘দেশভাগ’ দিবস পালন করা এখন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার স্বাধীনতা দিবসের পরদিন ১৬ আগস্ট ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একযোগে ‘দেশভাগ’ দিবস পালন করতে পারে। এই দিবস হতে পারে এই উপমহাদেশের ইতিহাসকে তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার ও এই ত্রিদেশীয় সম্পর্কের নেতিবাচকতা উপশম করে এক উষ্ণ সম্পর্কের দিকে যাত্রার প্রচেষ্টায় সতত পদক্ষেপ।
লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।
