আমার পড়াশোনা আইন বিষয়ে। ‘ক্রসফায়ারের’ সাথে আমার পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে, সেই ২০০৭ সালে, যখন আমি ছাত্র অবস্থায় ‘অধিকার’ নামক একটি মানবাধিকার সংগঠনে কাজ শুরু করি। আমি সেখানে মূলত ডকুমেন্টেশানের কাজ করতাম। প্রধানত র‌্যাব কর্তৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ক্রসফায়ারের ঘটনার উপর তৈরি করা অধিকারের প্রতিবেদন আমি বাংলা ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতাম। বলতে গেলে অনুবাদ করার সুবাদেই আমার টানা বেশ কয়েক বছর অগণিত ক্রসফায়ারের বিষদ বর্ণনা পড়ার সুযোগ হয়। প্রায় সব ঘটনাতেই র‌্যাব -এর পক্ষ থেকে বলা হত যে একটি সোর্স-এর মাধ্যমে তারা ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত একটি সন্ত্রাসী/ডাকাতের দল তাদের উপর আক্রমণ চালায়। সেই আক্রমণের ফলে র‌্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয়। গুলি বিনিময়কালে একজন মারা যান (যিনি ক্রসফায়ারের শিকার) এবং সন্ত্রাসী/ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসী/ডাকাতের পাশে কুড়িয়ে পাওয়া যায় একটি রিভল্ভার এবং কয়েক রাউন্ড গুলি। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন র‌্যাবের গুলি কখনো ক্রসফায়ার ভিক্টিমের ‘পায়ে’ লাগে না কেন? কেন তাদের গুলি সবসময়েই ‘বুক’ বা তার কাছাকাছি স্থানে আঘাত হানে? সেই প্রশ্ন সবারই। এমনসব প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাই পরবর্তী বছরগুলোতে আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর জন্য কিছু কাজ করতে গিয়ে। আমার মনে আছে হেনরিক আলফ্র্যামের সাথে ঢাকা এবং গাজিপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলোর কথা। আমরা ক্রসফায়ার ভিক্টিমদের কথা শুনতাম। হয়তোবা একজন হতভাগা মা আমাদের জানাতেন কিভাবে তার সন্তানকে র‌্যাব তাদের বাসা বা বাসার সামনের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিভাবে জীবিত অবস্থায় সেই সন্তানকে আর খুঁজে পাওয়া হয়ে ওঠে না। আমার আজও মনে পরে কিভাবে ক্রসফায়ার ভিক্টিমদের পরিবারের সদস্য আমাকে টেলিফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট প্রকাশিত কবে হবে? তাদের বুকে তখন অনেক আশা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত বিদেশী মানবাধিকার সংগঠন তাদের না বলা কথা তুলে ধরবে আর সেই সুবাদে বিচারের পথ প্রশস্ত হবে, এই ছিল তাদের চাওয়া। দুবছরের মধ্যে দুটি পৃথক (২০০৯ ও ২০১১ সালে) রিপোর্ট প্রকাশিত হয় । শুরুর দিকে মনে অনেক আশা ছিল – মহাজোট সরকার ক্রসফায়ারকে শক্ত হাতে দমন করবে যেমন তারা…

মোহাম্মদ নাশিদকে তার সংগ্রাম একাই চালিয়ে যেতে হবে[...]

মোহাম্মদ নাশিদকে তার সংগ্রাম একাই চালিয়ে যেতে হবে। আমেরিকা, ভারত, চীন সব একজোট হয়েছে -- প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট যিনি ক্যু-এর পরে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তাকে তারা সমর্থন দিয়েছেন। আমেরিকা ও চীন সুপারপাওয়ার তাদের সুপারপাওয়ারি সমর্থন তারা এভাবেই দেয়। কিন্তু ভারত তো সুপারপাওয়ার নয়, ভারত কেন সবসময় পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে আশেপাশের ছোট নবীন গণতন্ত্রকে বিপদে সহায়তা করে না? কারণ ভারতের বিদেশ নীতি ভারতের স্বদেশ নীতির মতোই বিষণ্ণতায় ভোগে, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। ভারতের বিদেশ নীতির মূল কূটনীতিটা মধ্যপ্রাচ্য, মধ্যএশিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণএশিয়াকে ঘিরে -- এই অঞ্চলে সংখ্যগরিষ্ঠরা মুসলমান, আর ভারতের নিজ দেশে বড় সংখ্যালঘুরা মুসলমান, তার আশেপাশের মুসলমানদের অগণতান্ত্রিক অবস্থানটাই তার কাছে বড় আবার নিজ দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় মুসলমানদের ভোটটাও তার কাছে বড়। এই অগ্নিমান্দ্য থেকে ভারতের বিষণ্ণতা ভারতের সিদ্ধান্তহীনতা। এজন্যই ভারত আরব বসন্তের নীরব দর্শক, এজন্যই ভারত মোহাম্মদ নাশিদের পাশে দাঁড়াতে পারে না, এজন্যই ভারত হাসিনার বন্ধুত্ব চায় কিন্তু নিজের মন নিজেই খুঁজে পায় না, এজন্যই ভারত সুকির চেয়ে বার্মিজ জেনারেলদের বেশি ভালবাসে, আজো ভালবাসে নেপালের রাজাদের, আর পাকিস্তানকে সে যমের মতো ভয় পায়। তাই মোহাম্মদ নাশিদকে, শেখ হাসিনাকে, সুকিকে তাদের নিজের সংগ্রাম নিজেদেরকেই চালাতে হবে। এরা যদি নিজেদের সংগ্রামে জয়ী হয় তাহলেই দক্ষিণএশিয়ার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, আর যদি তা না হয় তাহলে দক্ষিণএশিয়াও মধ্যএশিয়া মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের মতো অসহজ ইসলামি দৈন্যতায় নিমজ্জিত হবে -- এবং এই অঞ্চলের নানা ধর্মের নানা বিশ্বাসের মানুষের জীবনে অপরিসীম সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ডেকে আনবে।

সম্পূর্ণ মামলাটি হচ্ছিল একটি সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। গোপন সেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন কর্নেল ইউসুফ হায়দার। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ বাঙালী অফিসার ১৯৭১-এ দেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় নি। বরং সক্রিয়ভাবে সে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। ১নং সামরিক আদালত গঠিত হলেও শুরুতে তার ন্যূনতম আইনী বৈধতাও ছিল না। বিচার শুরুর কিছুদিন পর একটি অর্ডিন্যান্স জারী করে ওই ট্রাইবুনালকে বৈধ করা হয়। ওই অর্ডিন্যান্সকে পেছন থেকে ক্রিয়াশীল করা হয় মামলা শুরুর বেশ পরে এক সামরিক ফরমান বলে। অর্থাৎ পুরো বিচারের কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। কর্নেল তাহের ও আমাদের আইনজীবীরা বারবারই এসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ মামলা পরিচালিত হচ্ছিল গোপন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় এবং তা অত্যন্ত জবরদস্তিমূলকভাবে। মামলা চলাকালে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী নানা কাজই জিয়া সরকার করেছে।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর...) সম্পূর্ণ মামলাটি হচ্ছিল একটি সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। ১নং সামরিক আদালত গঠিত হলেও শুরুতে তার ন্যূনতম আইনী বৈধতাও ছিল না। বিচার শুরুর কিছুদিন পর একটি অর্ডিন্যান্স জারী করে ওই ট্রাইবুনালকে বৈধ করা হয়। ওই অর্ডিন্যান্সকে পেছন থেকে ক্রিয়াশীল করা হয় মামলা শুরুর বেশ পরে এক সামরিক ফরমান বলে। অর্থাৎ পুরো বিচারের কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। কর্নেল তাহের ও আমাদের আইনজীবীরা বারবারই এসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ মামলা পরিচালিত হচ্ছিল গোপন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় এবং তা অত্যন্ত জবরদস্তিমূলকভাবে। মামলা চলাকালে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী নানা কাজই জিয়া সরকার করেছে। যেমন কারাগারের অভ্যন্তরে কোনো অস্ত্রধারী থাকতে পারে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল তার ব্যতিক্রম। জিয়া কর্তৃক সেসময় নবগঠিত সশস্ত্র আর্মড ব্যাটালিয়নকে ওই সময় কারাভ্যন্তরে আনা হয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের জন্যে। হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় বিচারালয়ে আসতে অস্বীকার করলে আমাদের তারা জোর করে শারীরিক বল প্রয়োগের মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত করে। এছাড়া সেসময় কারাগারে এবং কারাগারের বাইরে ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকার কয়েকটি বাড়ির ছাদেও মেশিনগান পোস্ট বসানো হয়েছিল। এমনকি কারাগারের ভেতরে আদালত কক্ষের দরজা-জানালার বাইরেও হালকা মেশিনগানের পাহারা বসানো হয়। এসবই ছিল বেআইনী। তথাকথিত বিচারকদের বারবার এসব স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে আর্মড ব্যাটলিয়নের কর্তব্যরত সৈনিকদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি যে, তাদের জানানো হয়েছিল আমরা অত্যন্ত বিপদজনক রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি। ভারতীয় বাহিনী হেলিকপ্টারে এসে আমাদের কারাগার থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারে। তাই এই সশস্ত্র প্রহরা। গোপন সেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন কর্নেল ইউসুফ হায়দার। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ বাঙালী অফিসার ১৯৭১-এ দেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় নি। বরং সক্রিয়ভাবে সে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। ট্রাইব্যুনালে বিমান বাহিনীর উইং কমাণ্ডার আব্দুর রশিদ ও নৌ বাহিনীর একজন কর্মকর্তাও সদস্য হিসাবে ছিলেন। আর ছিলেন দু’জন বেসামরিক ম্যাজিস্ট্রেট। কর্নেল ইউসুফ হায়দার ও উইং কমান্ডার রশিদ এখন আর বেঁচে নেই। দু’জনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ মামলার অসারতা ও অবৈধতা সম্পর্কে অনেক কিছুই উল্লেখ করা যায়। যেমন প্রথমদিন আমাদের আদালত কক্ষে নেবার পূর্বে গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন এক জায়গায় আমাদের সবাইকে বসায়। তারপর তারা রাজসাক্ষীদের চেনাতে…

চার নেতার জেল হত্যাকান্ড এবং ৩ নভেম্বর-এর অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততায় ঘটনাবলী ঘটতে থাকে। ইতিপূর্বে ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর মুষ্টিমেয় কয়েকজন অফিসার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা করায়ত্ত করার মতো অসম্ভব কর্মটি সম্পাদন করেছে। ঘটে যাওয়া এসব নাটকীয় দৃশ্যপট হয়তো জাসদ নেতৃবৃন্দকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে থাকবে। সৈনিকরা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ফেলার পর জাসদ নেতারা বুঝতে পারলেন যে, কি বিশাল কর্মযজ্ঞে তারা হাত দিয়েছিলেন এবং কি পাহাড় পরিমাণ তাদের গাফিলতি।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .) আগেই উল্লেখ করেছি যে, ৩ নভেম্বর-এর অভ্যুত্থানের পর থেকে অস্বাভাবিক দ্রুততায় ঘটনাবলী ঘটতে থাকে। ইতিপূর্বে ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর মুষ্টিমেয় কয়েকজন অফিসার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা করায়ত্ত করার মতো অসম্ভব কর্মটি সম্পাদন করেছে। ঘটে যাওয়া এসব নাটকীয় দৃশ্যপট হয়তো জাসদ নেতৃবৃন্দকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে থাকবে। মূল পরিকল্পনায় ছিল অভ্যুত্থান শুরুর পর সৈন্যরা বাধাদানকারী অফিসারদের গ্রেফতার করে টু ফিল্ড আর্টিলারীতে নিয়ে রাখবে। একমাত্র জিয়াকে নিয়ে আসা হবে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে, কর্নেল তাহেরের কাছে। সে অনুযায়ী এলিফ্যান্ট রোডে ইউসুফ ভাইয়ের বাসায় তাহের ও ইনু অপেক্ষা করতে লাগলেন। আমিও ছিলাম সেখানে। রাত দেড়টার দিকে নায়েক সিদ্দিকের নেতৃত্বে এক ট্রাক সৈন্য গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সেখানে এলেন। তাহের প্রথমেই তাদের জিজ্ঞাসা করলেন ‘জিয়া কোথায়’? উত্তরে সিদ্দিক বললো, ‘স্যার আপনাকে এখনি ক্যান্টনমেন্ট যেতে হবে। জিয়াকে মুক্ত করেছি। কিন্তু তিনি আসেন নি। আপনাকে যেতে বলেছেন’। এই বলে সিদ্দিক যা জানালেন তা সংক্ষেপে এরকম - সিপাহীরা জিয়াকে বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করার পর জানায়, দেশে সিপাহী-জনতার বিপ্লব শুরু হয়েছে। কর্নেল তাহের হলেন তাদের নেতা এবং তার কাছে জিয়াকে যেতে হবে এখনি। জিয়া সব শুনে সৈন্যদের আবেগে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তাহের শুধু তোমাদের নেতা হবে কেন, সে আমারও নেতা। সে ক্যান্টনমেন্টে এসে বিপ্লবের নেতৃত্ব দিলেই তো ভাল হয়। তাকে তোমরা এখানে নিয়ে আস’। একথা শুনে সৈন্যরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। একদিকে তারা জানে জাসদ জিয়াকে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসাবেই দেখছে। পাশাপাশি তাহের সম্পর্কে জিয়ার এ বক্তব্যে সৈন্যরা জিয়াকে এলিফেন্ট রোড নিয়ে যাবার নির্দেশ বিস্মৃত হয়। সিপাহীদের এই গ্র“পের নেতৃত্বে একজন অফিসার থাকলে এই ভুল হতো না। সব শুনে কর্নেল তাহের সে মুহূর্তে তাৎপর্যপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা হেরে গেছি’। তারপর তিনি এবং হাসানুল হক ইনু রওনা হলেন ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে। অভ্যুত্থানী সৈন্য বোঝাই ট্রাকের পেছনে ইউসুফ ভাইয়ের গাড়িতে। আমাকে বলা হলো সিরাজুল আলম খানের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে। ইউসুফ ভাইয়ের বাসার পাশেই সেসময় সাংবাদিক কে বি এম মাহমুদ থাকতেন। তার বাসা থেকে সিরাজুল আলম খানকে ফোন করলাম। তিনি ইতিমধ্যে অভ্যুত্থান সম্পর্কে জেনেছেন। সেনানিবাসের…

কর্নেল তাহের যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তা থেকে প্রচলিত সেনা অফিসারদের ভাব-মানস থেকে তাঁর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা যায়। বঙ্গবন্ধু ‘ডেপুটি চীফ অব স্টাফ’ এর নতুন পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে নিয়োগ দেন। তারপরও জিয়ার নানা তৎপরতার সংবাদ কানে আসায় বঙ্গবন্ধু জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে প্রেষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এবং পূর্ব জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। এখন জানা যাচ্ছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সেনা ষড়যন্ত্রে পরিবার-পরিজনসহ জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব (পূর্ব প্রকাশিতের পর . . .) কর্নেল তাহের যে সেনাবাহিনীর উচ্চপদ ছেড়ে দিয়ে জনতার কাতারে যোগ দিয়েছিলেন এবং একটি বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তা থেকে প্রচলিত সেনা অফিসারদের ভাব-মানস থেকে তাঁর মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা যায়। বাংলাদেশের নব প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীতে তার বদলে জেনারেল শফিউল্লাহ্কে সেনা প্রধান নিয়োগ করায় জিয়া ছিল অসন্তুষ্ট। বঙ্গবন্ধুও তাঁর এই মনোভাবের কথা জানতেন। তাই ব্যতিক্রম হিসেবে বঙ্গবন্ধু ‘ডেপুটি চীফ অব স্টাফ’ এর নতুন পদ সৃষ্টি করে জিয়াকে সেখানে নিয়োগ দেন। তারপরও জিয়ার নানা তৎপরতার সংবাদ কানে আসায় বঙ্গবন্ধু জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে প্রেষনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের এবং পূর্ব জার্মানীর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় জিয়া আওয়ামী লীগের নানা স্তরের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে এই তদবির শুরু করেন, যাতে তাকে সেনাবাহিনীতে রাখা হয়। তার এই মিশনে তিনি সফল হয়েছিলেন। এখন জানা যাচ্ছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে সেনা ষড়যন্ত্রে পরিবার-পরিজনসহ জাতির জনকের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, শফিউল্লাহ এবং সমগোত্রীয় অফিসাররা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ভবিষ্যত বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে নিজেদের ক্ষমতার ভিত পাকা করার জন্য পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আদলে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্রিগেডগুলোই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোড়া পত্তন করে। ঐ তিন অফিসারই ১৫ আগস্ট-এর কালরাতে সেনাবাহিনীর তিন শীর্ষ পদে সমাসীন ছিলেন। কিন্তু জাতির জনক এবং দেশের রাষ্ট্রপতিকে রক্ষায় তারা কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকি সেনাবাহিনী থেকে পৃথক যে, রক্ষীবাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল তার হেড কোয়ার্টার বঙ্গবন্ধুর বাসগৃহ ৩২নং থেকে খুবই কাছে থাকা সত্বেও মুষ্টিমেয় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তারা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। ১৯৭২-এর ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে তাহের তাঁর পদত্যাগ পত্রে পাকিস্তানী আদলে গড়ে তোলা জনবিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র ও ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তাহেরকে সেনাবাহিনী ছেড়ে যেতে হয়েছিল আর যারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা রয়ে গেলেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকালে সেনাবাহিনীর ‘চীফ অফ স্টাফ’ ছাড়া বাকি ৮টি গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং এমনকি রক্ষীবাহিনীর কর্তৃত্বে ছিল পাকিস্তান প্রত্যাগত…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.