সম্পূর্ণ মামলাটি হচ্ছিল একটি সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। গোপন সেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন কর্নেল ইউসুফ হায়দার। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ বাঙালী অফিসার ১৯৭১-এ দেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় নি। বরং সক্রিয়ভাবে সে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। ১নং সামরিক আদালত গঠিত হলেও শুরুতে তার ন্যূনতম আইনী বৈধতাও ছিল না। বিচার শুরুর কিছুদিন পর একটি অর্ডিন্যান্স জারী করে ওই ট্রাইবুনালকে বৈধ করা হয়। ওই অর্ডিন্যান্সকে পেছন থেকে ক্রিয়াশীল করা হয় মামলা শুরুর বেশ পরে এক সামরিক ফরমান বলে। অর্থাৎ পুরো বিচারের কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। কর্নেল তাহের ও আমাদের আইনজীবীরা বারবারই এসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ মামলা পরিচালিত হচ্ছিল গোপন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় এবং তা অত্যন্ত জবরদস্তিমূলকভাবে। মামলা চলাকালে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী নানা কাজই জিয়া সরকার করেছে।

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব

(পূর্ব প্রকাশিতের পর…)

সম্পূর্ণ মামলাটি হচ্ছিল একটি সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। ১নং সামরিক আদালত গঠিত হলেও শুরুতে তার ন্যূনতম আইনী বৈধতাও ছিল না। বিচার শুরুর কিছুদিন পর একটি অর্ডিন্যান্স জারী করে ওই ট্রাইবুনালকে বৈধ করা হয়। ওই অর্ডিন্যান্সকে পেছন থেকে ক্রিয়াশীল করা হয় মামলা শুরুর বেশ পরে এক সামরিক ফরমান বলে। অর্থাৎ পুরো বিচারের কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। কর্নেল তাহের ও আমাদের আইনজীবীরা বারবারই এসব বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ মামলা পরিচালিত হচ্ছিল গোপন রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় এবং তা অত্যন্ত জবরদস্তিমূলকভাবে।

মামলা চলাকালে বিদ্যমান আইনের পরিপন্থী নানা কাজই জিয়া সরকার করেছে। যেমন কারাগারের অভ্যন্তরে কোনো অস্ত্রধারী থাকতে পারে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছিল তার ব্যতিক্রম। জিয়া কর্তৃক সেসময় নবগঠিত সশস্ত্র আর্মড ব্যাটালিয়নকে ওই সময় কারাভ্যন্তরে আনা হয় আমাদের নিয়ন্ত্রণের জন্যে। হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় বিচারালয়ে আসতে অস্বীকার করলে আমাদের তারা জোর করে শারীরিক বল প্রয়োগের মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত করে। এছাড়া সেসময় কারাগারে এবং কারাগারের বাইরে ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকার কয়েকটি বাড়ির ছাদেও মেশিনগান পোস্ট বসানো হয়েছিল। এমনকি কারাগারের ভেতরে আদালত কক্ষের দরজা-জানালার বাইরেও হালকা মেশিনগানের পাহারা বসানো হয়। এসবই ছিল বেআইনী। তথাকথিত বিচারকদের বারবার এসব স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে আর্মড ব্যাটলিয়নের কর্তব্যরত সৈনিকদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি যে, তাদের জানানো হয়েছিল আমরা অত্যন্ত বিপদজনক রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি। ভারতীয় বাহিনী হেলিকপ্টারে এসে আমাদের কারাগার থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারে। তাই এই সশস্ত্র প্রহরা।

গোপন সেই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন কর্নেল ইউসুফ হায়দার। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ বাঙালী অফিসার ১৯৭১-এ দেশে অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় নি। বরং সক্রিয়ভাবে সে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। ট্রাইব্যুনালে বিমান বাহিনীর উইং কমাণ্ডার আব্দুর রশিদ ও নৌ বাহিনীর একজন কর্মকর্তাও সদস্য হিসাবে ছিলেন। আর ছিলেন দু’জন বেসামরিক ম্যাজিস্ট্রেট। কর্নেল ইউসুফ হায়দার ও উইং কমান্ডার রশিদ এখন আর বেঁচে নেই। দু’জনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ মামলার অসারতা ও অবৈধতা সম্পর্কে অনেক কিছুই উল্লেখ করা যায়। যেমন প্রথমদিন আমাদের আদালত কক্ষে নেবার পূর্বে গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন এক জায়গায় আমাদের সবাইকে বসায়। তারপর তারা রাজসাক্ষীদের চেনাতে শুরু করে আমরা কে কোন জন। এটা তারা করেছিল প্রকাশ্যেই, কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। উল্লেখ্য ওই রাজসাক্ষীদের মধ্যেই আমি ফখরুলকে দেখি, যার সহযোগিতায় ডিএফআই আমাকে ধরতে সক্ষম হয়েছিল।

২১ জুন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর ২৮ জুন পর্যন্ত বিচার মূলতবী করা হয়। যেসব ষড়যন্ত্রকারী এ গোপন মামলা সাজিয়েছিল তাদের কথা মতই সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিচ্ছিলো। যার মধ্যে মিথ্যাচার আর গরমিলের ছিল ছড়াছড়ি। যেমন রাজসাক্ষী ফখরুল এক পর্যায়ে বলে যে ড. আখলাকের মোহাম্মদপুরস্থ বাসায় সে কর্নেল তাহেরকে দেখেছে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ভোরার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে। অথচ বাস্তব সত্য হলো ড. আখলাকের বাসায় কোনো ফোনই ছিল না। এ ধরনের জাজ্বল্যমান অনেক মিথ্যাচারেই অভিযুক্ত হয়েছিলাম কর্নেল তাহেরসহ আমরা। আমাদের আইনজীবীরা রাজসাক্ষীদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করার পরও মামলার ফলাফল প্রভাবিত হয় নি। কার্যত পুরো বিচার প্রক্রিয়াটি ছিল একটি প্রহসন। মামলাটি যথাযথভাবে সাজানোরও প্রয়োজনবোধ করে নি সরকার। কাকে কি দণ্ড দেয়া হবে তা ক্যান্টনমেন্টের ডিএফআই হেড অফিসে আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় ডিএফআই-এর প্রধান ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল আমিনুল ইসলাম। প্রধানত তার ভূমিকায় সমস্ত ষড়যন্ত্র এগোলেও রাষ্টের সকল গোপন নিরাপত্তা সংস্থার কর্তারাই যুক্ত ছিলেন এ পুরো প্রক্রিয়ায়। আর এদের সবার পুরোভাগে ছিলেন বিশ্বাসঘাতক জেনারেল জিয়া। স্বাভাবিক ভাবেই তথাকথিত অভিযুক্ত হিসাবে গোটা বিচারকেই অবজ্ঞা ভরে প্রত্যাখান করেছিলাম আমরা। শুনানি চলাকালে আমরা বিচারকদের দিকে পা তুলে বসে থাকতাম। কখনো বিচারকদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারীও উচ্চারণ করা হতো। যেমন রব ভাই তাঁর জবানবন্দীতে বিচারকদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘তোমরা মরে গেলেও কবর থেকে তুলে তোমাদের চাবকানো হবে’। বিচারকদের এ ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হতো। যেমনটি করেছিলেন কিউবার ফিদেল কাস্ট্রো তাঁর জবানবন্দিতে।

সে সময় ১৯৫৩ সালে সামরিক একনায়ক জেনারেল বাতিস্তার বিরুদ্ধে মানকাডা দূর্গ অভিযান ব্যর্থ হবার পর হাসপাতালের একটি কক্ষে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বিরুদ্ধে গোপন বিচার চলছিল। সব দিক থেকেই অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে এ দুটো বিচার প্রহসনের। পার্থক্য এখানেই যে বাতিস্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কিউবার বিচারক ন্যায় ও সত্যের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। আর বাংলাদেশের ইউসুফ হায়দাররা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন না। কিউবা ও বাংলাদেশের বিচারকরা পুরস্কৃত হয়েছিলেন তাদের কর্মের জন্য। বিচারের ছয় বছর পর জেনারেল বাতিস্তার পতন হলে বিজয়ী ফিদেল ক্যাস্ট্রো তাঁর গোপন বিচারের সেই বিচারককে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করেছিলেন বিপ্লব পরবর্তী কিউবার প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসাবে তাঁকে নিয়োগ করে। আর বাংলাদেশে গোপন ষড়যন্ত্র মামলায় ক্রীড়নক কর্নেল ইউসুফ হায়দারকে পুরস্কৃত করা হয় ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার নিযুক্ত করে। রাজসাক্ষীদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়। কিন্তু যে কলঙ্কের বোঝা তারা নিজ স্কন্ধে নিলেন তা তাদের বহন করতে হবে অনাগত কাল ধরে।

গোপন বিচারে তথাকথিত আসামীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের অভিযোগ এনেছিল জিয়া সরকার। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন ওঠে কোনো বৈধ সরকারকে উৎখাত করেছি আমরা? আমাদের কৌসুলী আতাউর রহমান খান, আমিনুল হক, জুলমত আলী খান, গাজীউল হক, আব্দুর রউফ প্রমুখ বারবার এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। সরকারি পিপিকে তারা বলেন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবকে হত্যা করে বৈধ সরকারকে উৎখাত করেছিল রশিদ-ফারুক চক্র। বর্তমান অভিযুক্তরা নয়। সেই বৈধ সরকারকে ষড়যন্ত্র ও হত্যার মধ্য দিয়ে যারা উৎখাত করেছে তাদের বিরুদ্ধে জিয়া সরকার তো কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেনি। বরং হত্যা ও উৎখাতের সাথে জড়িত খুনীদের পুরস্কৃত করেছে। খুনী মুশতাক সরকার কি বৈধ সরকার ছিল? রাষ্ট্রের তথাকথিত আইনী দৃষ্টিতে বৈধ এ সরকারকেও উৎখাত করেনি তাহের ও তার সহযোগীরা। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ কর্তৃক ক্ষমতা দখলের সময়কালে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকারই ছিল না। আমাদের কৌসুলীরা বলেন, তাহেরের নেতৃত্বে সংগঠিত সিপাহী জনতার অভ্যুত্থানের ফলশ্র“তিতে জেনারেল জিয়া ক্ষমতাসীন হন। তারা যুক্তি দিয়ে বলেন, সরকারি অভিযোগের বয়ান ও রাজসাক্ষীদের ভাষ্যে এটা পরিষ্কার যে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পরিচালিত সিপাহী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই বন্দী জিয়ার জীবন রক্ষা হয় এবং কার্যত তিনিই সরকার গঠন করেন। ওই অভ্যুত্থান পরিচালনা কি একটি বৈধ সরকারকে উৎখাতের প্রচেষ্টা বলে গণ্য হবে? যদি তাই হয়, তাহলে কেন জিয়া সরকার ৭ নভেম্বরকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেছেন? সুতরাং তাহের ও তার সহযোগীদের তো ওই কাজের জন্য অভিযুক্ত করা যায় না। বরং সিপাহী অভ্যুত্থান সম্পর্কে সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই অভ্যুত্থানের স্থপতি তাহেরকে পুরস্কৃত করার কথা।

আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির। আমাদের আইনজীবীরা ধারাবাহিক উদাহরণ সহ যুক্তি প্রদর্শন করলেন এ প্রশ্নে। তারা উল্লেখ করলেন যে, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে রশিদ-ফারুকের ক্যুদেতা ছিল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গের বড় নজির। এ ব্যাপারে জিয়া সরকার কি কিছু বলেছেন? ৭৫-এর ১৫ আগষ্ট থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে বিরাজমান নৈরাজ্য ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের সাথে তো তাহের ও তার সহযোগিরা জড়িত নন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জিয়া সে সমস্ত শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেননি। তাহের তাঁর ঐতিহাসিক জবানবন্দীতে ঘোষণা করলেন যে, তিনিই সিপাহী অভ্যুত্থান পরিচালনা করেছেন। তার মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বিরাজমান প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার অবসান সূচিত হয়েছিল। তাহের উল্লেখ করলেন যে, বাংলাদেশের নতুন মীরজাফর জিয়া সিপাহী অভ্যুত্থানের লক্ষ্যের সঙ্গে বেঈমানী করে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নতুন অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

সমস্ত সওয়াল-জবাবের পর অভিযুক্তদের জবানবন্দী প্রদানের প্রশ্ন এসেছিল। প্রথমে আমরা ঠিক করেছিলাম জবানবন্দী দেব না। কিইবা লাভ তাতে। কিন্তু আইনজীবীদের অনুরোধে জবানবন্দী দিতে রাজী হই আমরা। প্রায় সবাই কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই জবানবন্দী দেন। মেজর জলিল ইংরেজীতে অত্যন্ত উদ্দীপনাময় জবানবন্দী দেন। রব ভাই-এর বক্তব্যও ছিল বলিষ্ঠ। ইনু ভাই লিখিত জবানবন্দী দেন। জাসদ রাজনীতি, গণবাহিনী গড়ে তোলার অনিবার্যতা ও ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেন তিনি। আমাদের বক্তব্য ধৈর্য্য ধরে শোনার কোন ইচ্ছা সামরিক আদালতের ছিল না। কোর্ট থেকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছিল জবানবন্দী সংক্ষিপ্ত করার।

সবার শেষে তাহের ক্রাচে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। শুরু হলো বাঙালী জাতির এক অকুতোভয় বিপ্লবী বীরের ঐতিহাসিক জবানবন্দী। ৬ ঘন্টা তাহের বলে গেলেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান কর্নেল ইউসুফ হায়দার বার বার বাধা দেন তাহেরের বক্তব্যে। মনে হচ্ছিল ওই সব বিচারকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে তাহেরের কথা শুনে। সংক্ষিপ্ততম সময়ে তাহেরের জবানবন্দী শেষ হোক – এই তারা চাইছিল। অন্যদিকে আমরা সহ সকল অভিযুক্ত, আইনজীবীবৃন্দ ও এমনকি সশস্ত্র প্রহরীরা সম্মোহিতের মত তাহেরের ‘শেষ কথা’ শুনি। বাঙালী জাতির গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ, সাধারণ মানুষের বীরত্বগাঁথা, স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ার পথে অবস্থিত সেনাবাহিনীর প্রতিবন্ধকতা, গণবিচ্ছিন্ন এই বাহিনীর স্থলে জনগণের উৎপাদনশীল গণবাহিনী গড়ে তোলার অনস্বীকার্য প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি তুলে ধরেন তার বক্তব্যে। আমোঘ বাণীর মত কিছু কথা উচ্চারিত হয় তাহেরের জবানবন্দীর শেষ অংশে। ইংরেজীতে বলা সে সব উদ্দীপনাময় উচ্চারণের বাংলা অনুবাদ অনেকটা এ রকম –

‘সাড়ে সাতকোটি মানুষের এই জাতি মরে যেতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ বীরের জাতি। সাতই নভেম্বরের অভ্যুত্থান এ জাতিকে অদম্য সাহস যোগাবে। এ অভ্যুত্থানে থেকে যে শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা তারা পেয়েছে তা ভবিষ্যতে তাদেরকে সব কাজে পথ দেখাবে। আমি ভীত নই। আমার দেশ ও জাতিকে আমি ভালবাসি। এ জাতির অস্তিত্বে আমি মিশে রয়েছি। কার সাহস আছে আমাদের আলাদা করার। নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। আমি তার অধিকারী। আমি আমার জাতিকে তা অর্জন করতে ডাক দিয়ে যাই’।

বিনা প্রস্তুতিতে বলা তাহেরের সেই জবানবন্দী ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত হয় বিদেশে। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফৎশুলজ তা প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী তৎকালীন বাংলাদেশের সামরিক রাষ্ট্র প্রশাসনের ভেতরকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো একজনের কাছ থেকে তাহেরের জবানবন্দী পাওয়া যায়। তাহের ও ৭ নভেম্বরের সিপাহী অভ্যুত্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে লরেন্স লিফৎশুলজ সম্পর্কে কিছু বলতেই হয়। এই সাংবাদিক-গবেষক তার অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে অভ্যুত্থানকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ১৯৭৪-এ বন্যা ও দুর্ভিক্ষের কঠিন দিনগুলোতে প্রথম এই সাংবাদিক তাহেরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। কয়েকজন বাঙালী সাংবাদিক তাকে জানিয়েছিলেন যে আবু তাহের নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে খাল ও সেচ ব্যবস্থার পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ‘বিচিত্রায়’ একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। উৎপাদনশীল সেনাবাহিনীর ধারণাও তিনি তুলে ধরেছেন সে প্রবন্ধে। পরবর্তীকালে ৭ নভেম্বরের ওপর লিখিত তার বইয়ের বাংলা সংস্করণের ভূমিকায় লরেন্স বলেন, ‘প্রথম যখন আমি বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তাহেরের সাথে আলাপ করতে গেলাম তখন আমার কোনো ধারণাই ছিল না যে তিনি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। জানতামই না তিনি নেপথ্যে যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাই প্রকাশ পাবে ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানে’। অভ্যুত্থান সংঘটনের সাত দিন পর ঢাকায় পৌঁছে তিনি জানলেন তাহের এই অভ্যুত্থানের স্থপতি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছোট ভাই চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক জোনাবুল ইসলামের বাসায় তাহেরের সাথে আবারও সাক্ষাৎ হয় লিফৎশুলজের। ইউসুফ ভাই সে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। ততদিনে জিয়ার প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। হংকং থেকে প্রকাশিত ‘ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউ’ পত্রিকায় লিফৎশুলজের পাঠানো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাহেরের ছবি ছাপা হয় তাতে। তার নিচে লেখা হয় – ‘নভেম্বর বিপ্লবের স্থপতি’। ঢাকা কারাগারে আমাদের বিচার চলাকালেও লরেন্স ঢাকায় আসেন। কিন্তু সরকার অতিশীঘ্র তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়। আজ এ প্রসঙ্গে এ কথা বলতে চাই যে লরেন্স লিফৎশুলজের লেখা প্রবন্ধ ও তাহেরের উপর তার লেখা বইটি বিদেশ থেকে প্রকাশিত না হলে বাংলাদেশের সুশিল সমাজ হয়তো বিশ্বাসও করতো না যে তাহের ও জাসদ ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিলেন আর জিয়া সংগঠিত করেছিলেন প্রতিবিপ্লব।

কারাগারের অভ্যন্তরে ওই গোপন বিচার চলাকালে নেতৃবৃন্দসহ আমাদের সকলেরই মনোবল অত্যন্ত শক্ত ছিল। কারও মধ্যে কোনোরূপ ভীতি কাজ করেনি। বস্তুত সকলেই ছিলেন বিপ্লবী আবেগ ও উদ্দীপনায় উজ্জীবিত। বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা খুব একটা মনযোগীও ছিলাম না। বরং আদালতের বিরতিকালে কবিতা, গান ইত্যাদি নিয়েই মেতে থাকতাম আমার। তথাকথিত আসামীদের এ ধরণের কর্মকাণ্ডে শক্রপক্ষ নিশ্চয়ই আরও বেশি আতংকিত বোধ করে থাকবে। ১৭ জুলাই মামলার রায় পড়ে শোনান ইউসুফ হায়দার। প্রথমে ঘোষিত হয় ড. আখলাক, সাংবাদিক এবিএম মাহমুদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, মাহমুদুর রহমান মান্না সহ ১৩ জন খালাস প্রাপ্তের নাম। এরপর যারা স্বল্প মেয়াদী দণ্ড পেয়েছিলেন তাদের নাম। আসম রব, ইনু ও আমার দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা। মেজর জিয়াউদ্দিন-এর চোদ্দ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এভাবেই এক পর্যায়ে নাম এলো মেজর এম এ জলিল ও আবু ইউসুফের। বলা হলো যে, তাদের জন্যে নির্ধারিত দণ্ড হলো ফাঁসি। তবে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্যে তাদের উভয়কে মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। এখন তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করলেই চলবে, আর তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হবে। এ পর্যায়েই আমরা বুঝে ফেলি যে কর্নেল তাহেরের জন্যে কি শাস্তি নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। বিচারক কম্পিত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন যে, কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো এবং তা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হবে। একথা বলেই বিচারকরা অনেকটা দৌড়ে আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। চারিদিকে শ্লোগান উঠলো ‘কর্নেল তাহের লাল সেলাম’। সবাই তাহের ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু শুনতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘আমি যখন আপনাদের সবার মাঝে থাকি সব ভয় দূরে চলে যায় ও আমি সাহসী হই। এক অপরাজেয় শক্তি আমার মধ্যে কাজ করে। আমাদের একাকীত্বকে বিসর্জন দিয়ে সবার মাঝে প্রকাশিত হতে চাই। সে জন্যেই আমাদের সংগ্রাম’

এরপর সন্ধ্যার আগে আগে আমাদের নিজ নিজ সেলে নিয়ে যাওয়া হলো। রায়ের পরও আমরা ধারণা করেছিলাম যে, কর্নেল তাহেরের দণ্ড নিঃসন্দেহে কার্যকর হবার নয়। একজন বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা, যিনি সেক্টর কমাণ্ডার ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ যাঁর একটি পা কেড়ে নিয়েছে তাকে কিভাবে ফাঁসী দেয়া সম্ভব? এতটা নির্মমতা ও বিশ্বাসঘাতকতা নিশ্চয়ই জিয়া করবে না। কিন্তু মাত্র এক দিনের মধ্যেই আমাদের ভুল ভাঙতে শুরু করে। কারণ রায় ঘোষণার পরদিনই বহু বছর ধরে অকার্যকর ও অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা জেলের ফাঁসীর মঞ্চ সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কেবল তখনি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে, ফাঁসীর আদেশ কাগুজে নয়। শক্রপক্ষ সত্যি সত্যি কর্নেল তাহেরকে হত্যা করবে। গোপন বিচারে কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেবার পরদিনই তড়িঘড়ি করে কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির মঞ্চের সংস্কার কাজ শুরু হয়। সেসময় সেনাবাহিনীতে জেনারেল জিয়ার ডানহাত হিসাবে পরিচিত জেনারেল মীর শওকত নিজে কারাগারে এসে ফাঁসির মঞ্চের ওই সংস্কার কাজ তদারক করেছিলেন। বলা বাহুল্য যে, এ কাজ তার স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সেটা করেছিলেন এ কারণে যে, তাহেরের প্রতি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র তখন প্রতিহিংসায় উন্মত্ত। আরও একটি কারণ হয়তো এই যে, ১৯৭২ সালে এ্যাডজুটেন্ট জেনারেলের দায়িত্ব পালনকালে তাহের মীর শওকত সহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ কুক্ষিগত করার অভিযোগে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেন। চার বছর পর শওকত তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার সুযোগ পেলেন।

১৭ জুলাই আদালত কক্ষে সামরিক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান রায় ঘোষণা করলে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের আইনজীবীরাই স্তম্ভিত হয়ে যান। সরকারি পিপি এ টি এম আফজাল পরে জানান যে, তিনি এ সাজা চান নি। বাস্তবেও তিনি কোনো আসামীরই মৃত্যুদণ্ড দাবী করেন নি। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তার জন্য সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবতজীবন কারাদণ্ড। কিন্তু আমি আগেই বলেছি যে, সবারই দণ্ড নির্ধারিত হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টের ডিএফআই হেড অফিসে। বিচার ছিল আসলে একটি প্রহসন।
রায় ঘোষণার পরই আমাদের আইনজীবীরা ঠিক করেন যে, এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে তারা রীট করবেন। কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফের জন্য তারা প্রেসিডেন্টের কাছে অনুকম্পা চেয়ে আবেদন করারও সিদ্ধান্ত নেন। সেখানেই তারা তাহেরের পক্ষে একটি চিঠি তৈরি করে ফেললেন। কিন্তু তাহের ভাই তাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মীর জাফরদের কাছে আমার প্রাণ ভিক্ষা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, এ অসম্ভব’। আইনজীবীদের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও কর্নেল তাহের অনুকম্পার আবেদন জানান নি।

তবে তাঁর অজান্তে মিসেস লুৎফা তাহের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। বিচারপতি সায়েম সে আবেদনে সাড়া দেননি। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে মিসেস তাহের এসময় অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিলেন। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর তৎকালীন সিজিএস জেনারেল মঞ্জুরের নাম উল্লেখ করা যায়। জেনারেল মঞ্জুর তাহেরের সাথে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাহেরকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে এলেন না। মাওলানা ভাসানীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। ভাসানী টেলিগ্রাম পাঠান মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার অনুরোধ জানিয়ে। জাতিসংঘ ও এ্যামন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বার্তা প্রেরিত হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ শুরুর পূর্বেই তড়িঘড়ি করে জিয়া ফাঁসী দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেন। পরে শুনেছি আত্মগোপন অবস্থা থেকে কর্নেল জিয়াউদ্দিনও তার বন্ধু ও রাজনৈতিক দীক্ষাদাতা তাহেরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর না করার জন্যে জেনারেল জিয়াকে টেলিফোনে অনুরোধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘don’t kill Taher’.

রায় ঘোষণার পর থেকে ফাঁসী কার্যকর পর্যন্ত তিন দিন পুরো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছিল নিস্তব্ধ। সর্বত্র ছিল শোকের ছায়া। এর মধ্যেই ২০ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আমাদের তিন ভাইকে এক এক করে তাহের ভাই’র ফাঁসির সেলে নেয়া হলো শেষ সাক্ষাতের জন্য। প্রথমে ইউসুফ ভাই, এরপর বেলাল এবং সবশেষে গেলাম আমি। আমার পুরনো ২০ সেল থেকে ফাঁসীর সেলে যেতে নতুন বিশ সেলের সামনে দিয়ে যেতে হয়। যাবার সময় তার দোতলা থেকে মেজর জলিল আমাকে চীৎকার করে বলছিলেন, ‘তাহের ভাইকে বল তার মরে গেলে চলবে না। তিনি যেন ক্ষমা ভিক্ষার আবেদনে সই করেন’। আমি প্রতি উত্তরে বলেছিলাম, ‘জলিল ভাই আমি তা বলতে পারবো না এবং এটা করা ঠিকও হবে না’

ফাঁসির সেলে পৌঁছার পর লৌহ কপাট ঘেঁষে বাইরের দিকটায় বসলাম। তাহের ভাই ক্র্যাচে ভর করে এগিয়ে এসে দরজার ভেতরের দিকটায় আমার কাছ ঘেঁষে বসলেন।
ইতিমধ্যে ফাঁসির মঞ্চে সার্চলাইট লাগানো হয়েছে। ওজন দিয়ে সম্ভাব্য ফাঁসির কার্যকারিতাও পরীক্ষা হয়ে গেছে। আমি এক পর্যায়ে জলিল ভাই এর কথাটি তাহের ভাইকে জানালাম। একই সঙ্গে আমি জলিল ভাইকে যা বলে এসেছি সেটাও বললাম। খুব খুশি হয়ে তিনি বললেন – তোমার কাছ থেকে আমি তাই আশা করি। আমি যেন বেশিক্ষণ তার সঙ্গে থাকতে পারি সে জন্যে প্রহরীকে আমার জন্যে চা তৈরি করতে বললেন। একে একে সমস্ত সাথীদের কথা জানতে চাইলেন তিনি। একই সঙ্গে তাহের ভাই জানালেন যে, মৃত্যুর জন্যে তিনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বললেন বহুবার আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। মৃত্যু আমাকে পরাজিত করতে পারেনি। প্রতিবারই আমি মৃত্যুকে পরাজিত করেছি। একটি খাতা বের করে সেখানে লেখা একটি চিঠি তিনি আমাকে পাঠ করে শুনান। এ’টি তাহেরের শেষ চিঠি হিসেবে বিখ্যাত হয়েছে।

ওই মুহূর্তে কর্নেল তাহেরের সঙ্গে কথা বলে মনে হয় নি যে, তাকে আমরা হারাতে যাচ্ছি। যদিও ইতিমধ্যে আমি জানি যে সেটাই হতে যাচ্ছে। অত্যন্ত স্বাভাবিক, সাবলীল এবং প্রাণবন্ত ছিলেন তাহের ওই মুহূর্তে। সেদিন সে মুহূর্তে আমি নানাভাবে বুঝলাম যে, কত বড়, কত মহান ব্যক্তি ছিলেন আমাদের এই ভাইটি। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অবিচল ভাবে তার সহযোগীদের মধ্যে তিনি সাহস সঞ্চার করে গেছেন এবং নিজেও ছিলেন সমস্ত শংকা ও ভীতির উর্ধ্বে। তাহের ভাই’র ফাঁসী হয়ে যাচ্ছে এটা জেনেও আমরা মোটেও ভীত ছিলাম না। আমার তখন মনে হচ্ছিলো যে, একটি জাতির মুক্তির জন্য এরকম সাহস ও আত্মত্যাগের বোধহয় বড়ই প্রয়োজন। একদিন নিশ্চয়ই আসবে, যখন এ ধরনের আত্মত্যাগ সবাইকে নাড়া দেবে, উদ্বুদ্ধ করবে। সাক্ষাৎ শেষে আমি বললাম, ‘আমাদের আবার দেখা হবে’। আমাকে আশস্ত করে তিনি হাসলেন। নির্ভীক চিত্তে নিজের সেলে ফিরে এলাম আমি। সারাদিন স্তব্ধ অপেক্ষায় কাটালো সমগ্র কারাগার। রাতে কারাগারের কোনো বন্দীই ঘুমোয় নি। সবারই অপেক্ষা কখন সাহস আর বেদনায় মোড়ানো ওই মুহূর্ত আসবে। রাত ১২টার দিকে উজ্জ্বল আলোয় ফাঁসির মঞ্চ আলোকিত হয়ে উঠলো। সে আলোর ছটা দেখা যাচ্ছিলো আমার সেল থেকেও। রক্ষীরাও জানলো যে ঘাতকরা প্রস্তুত। ভোর রাত ৪ টায় ফাঁসি কার্যকর হলো। তার কিছুক্ষণ পরই একজন কারারক্ষী আমার সেলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। পানি পড়ছিল তার চোখ দিয়ে। কিছুই বলতে হলো না তাকে। আমি বুঝে ফেললাম কর্নেল তাহের আর আমাদের মাঝে নেই।

সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলার এসে আমাকে জানালেন যে, আমি লাশ দেখতে যেতে পারি। কারা হাসপাতালে যাবার পথেই বুঝতে পারলাম যে সেদিন দিনের বেলাতেও সমগ্র কারাগার লক আপ করে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছে স্ট্রেচারে শায়িত কর্নেল তাহেরকে দেখলাম। ইতিমধ্যে পোস্টমর্টেমও হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও তার মুখাবয়ব ছিল আশ্চর্যজনক ভাবে সুন্দর। সাধারণত ফাঁসী হলে মুখমণ্ডলে যে বিকৃতি আসে তাহেরের ক্ষেত্রে তা ছিল অনুপস্থিত। ফাঁসীর প্রচণ্ড ঝাঁকুনী যেন তার মুখমণ্ডলে কোনো পরিবর্তন আনতে না পারে, তার জন্যে তিনি নিশ্চয়ই প্রস্তুত করেছিলেন নিজেকে। কারাগারের ফুলের বাগান থেকে নেয়া কিছু ফুল আমি তার বুকের উপর রাখলাম। বিদায় নেবার সময় সামরিক কায়দায় স্যালুট জানালাম। আমার পূর্বে বেলাল ও ইউসুফ ভাই একইভাবে তাহের ভাইকে শেষবারের মতো দেখে গেছেন। ইউসুফ ভাই প্রথম এসে নিজের পাঞ্জাবীটি খুলে তাহেরের গা থেকে রক্ত মুছে নেন। রক্ত ভেজা সে পাঞ্জাবিটি এখনও সংরক্ষিত আছে।

কর্নেল তাহেরের মৃত্যু সংবাদ ওই দিনই আমাদের পরিবারকে অবহিত করা হয়। কিন্তু সরকার লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। ঢাকায় তাহেরকে সমাহিত করা হোক এই ছিল সবার ইচ্ছা। কিন্তু পরিবারের ওই ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী হেলিকপ্টারে করে আমাদের গ্রামের বাড়ি কাজলায় নিয়ে তাকে সমাধিস্থ করে। প্রায় এক কোম্পানী সশস্ত্র সৈন্য পূর্ব থেকে সেদিন কাজলায় মোতায়েন ছিল। এমনকি পরবর্তীতে প্রায় দু’মাস সৈন্যরা তাহেরের কবর পাহারা দিয়ে রাখে। তাহেরের হত্যার মধ্য দিয়ে ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। ব্যর্থতায় মোড়ানো একটি অধ্যায় ছিল এ’টি। যে ব্যর্থতার শুরু ৭ নভেম্বর ভোর থেকে এবং যার শেষ তাহেরের হত্যার মধ্য দিয়ে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক সপ্তাহ পরে এর প্রতিবাদে জাসদ দেশব্যাপী হরতাল পালনের ডাক দিয়েছিল। সারাদেশে আমাদের আটজন সাথী প্রতিবাদী সে হরতালে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।

জাসদ রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন সিরাজুল আলম খান এবং এ দলের অবক্ষয় ও আত্মসমর্পণের সূচনা ঘটান তিনিই। তাহেরের হত্যাকাণ্ডের কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বাসঘাতক জিয়ার কাছে মুচলেকা দিয়ে সিরাজুল আলম খান তার ও অন্যান্য জাসদ নেতৃবৃন্দের মুক্তি ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ’টা তিনি করেছিলেন বিশেষ তত্ত্বকথাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ময়মনসিংহ কারাগার থেকে জাসদ নেতৃবৃন্দের কাছে সিরাজুল আলম খান লিখেন, ‘আমরা পোশাক পরিবর্তন করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত’। অর্থাৎ জাসদকে তার বিপ্লবী রাজনীতি ত্যাগ করে জিয়ার আনুগত্য স্বীকার করে নিতে হবে। তিনি এও বলেন যে, ‘বিপ্লবীরা শুধু নিচ থেকে নয়, উপর থেকেও আন্দোলন করে’। অর্থাৎ বুর্জোয়াদের সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব করে বিপ্লব ত্বরান্বিত করা যায়।

সিরাজুল আলম খানের এসব বক্তব্যের ফলেই রাজশাহী জেল হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে সে সময় গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ ও জাসদকে নিয়ে জিয়া-বিরোধী সম্ভাবনাময় ১০ দলীয় ঐক্যজোটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। জাসদ নেতৃত্বের কর্তব্য ছিল আপোসের পথে না গিয়ে বিপ্লবী রাজনীতির ধারা অক্ষুন্ন রেখে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা। বাস্তবে তা হলো না। জাসদের এ বিপর্যয়ে নেতৃত্বের আপোসকামিতার পাশাপাশি জেনারেল জিয়ার ক্রয়নীতিও ভূমিকা রেখেছিল। জিয়া তাঁর কুখ্যাত দল ভাঙার রাজনীতির শুরু করেছিলেন বস্তুত জাসদকে দিয়েই। অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও ন্যাক্কারজনকভাবেই তিনি সকল প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন কিংবা নিষ্ক্রিয় করেছিলেন।

এহেন জিয়াকে আস্থায় নেয়া এবং অভ্যুত্থানে সহযোগী হিসেবে পাওয়ার চিন্তা নিঃসন্দেহে কর্নেল তাহেরের জন্য ছিল এক গুরুতর ভুল। তাহেরের আরেকটি ভ্রান্তি হলো বিপ্লবের প্রতিপক্ষের প্রতি তিনি নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বিপ্লব তো একটা উগ্র বলপ্রয়োগের কাজ। এক শ্রেণী কর্তৃক আরেক শ্রেণীকে পরাস্ত ও উৎখাত করার বিষয়। তাহের এ সত্যকে সঠিকভাবে অভ্যুত্থানে প্রতিফলিত করতে পারেননি। ফলে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে তাকে এবং জাসদকে। তবে জাসদ ও তার ফ্রন্ট সংগঠনের নেতারা অভ্যুত্থানকালে পরিকল্পনা মতো তাদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করলে অর্থাৎ রাজপথে সংগঠিত শ্রমিক-ছাত্র-জনতার সবল উপস্থিতি বাস্তবায়ন করলে অবশ্যই ভুলের মাশুল কম দিতে হতো। সেক্ষেত্রে জিয়ার পক্ষে এত দ্রুত তার প্রতিবিপ্লব সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না। তাহেরের দু’টি পা থাকলে অর্থাৎ তিনি পুরো সচল থাকলে জাসদের সাংগঠনিক দূর্বলতা ও ঘাটতিগুলোও তার চোখ এড়াতো না।

তাহেরের শ্রেষ্ঠত্ব হলো এখানেই যে, ভুলের দায়ভাগ পরিশোধে তিনি কোনো দোদুল্যমানতা প্রদর্শন করেন নি। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েও তিনি রক্ষা করেছেন আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি তার প্রতিজ্ঞা। এদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে উঠে আসা বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীদের মাঝে তাহেরের অনন্যতা এখানেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী দু’টি ঘটনা আছে। একটি মুক্তিযুদ্ধ। অপরটি ৭ নভেম্বরের সিপাহী অভ্যুত্থান। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় বাঙালী জাতীয়তাবাদের পুরোধা অওয়ামী লীগ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু জাতীয়তাবাদী সেই নেতৃত্বের ঐতিহাসিক সীমাবদ্ধতার কারণে জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম ও শোষণমুক্ত অর্থব্যবস্থা পত্তন করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার লক্ষ্যে সংগঠিত হয় নভেম্বর অভ্যুত্থান। যা পরিচালিত হয় সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি বিপ্লবী সংগঠন দ্বারা। তাহেরের নেতৃত্বে ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ছিল মেহনতী মানুষের পক্ষে ক্ষমতা দখলের একটি মহড়া। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো উপমহাদেশে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। ক্ষমতা দখলের অভ্যুত্থানমূলক রণনীতির এই প্রয়োগের ব্যর্থতা ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লবের ব্যর্থতার মতোই। লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা তাদের ব্যর্থতাকে বিজয়ে রূপান্তরিত করেছিলেন ১২ বছরের ব্যবধানে। আমাদের অতো সময়ও প্রয়োজন ছিল না। তাহেরের ফাঁসির পর কারাগারের অন্তরীণ দিনগুলোতে এটাই ভাবতাম আমরা। সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি চলছিল। আমাদের সামনে ছিল নভেম্বর অভ্যুত্থানের বাস্তব শিক্ষা আর তাহেরের বিপ্লবী আত্মত্যাগের গৌরবময় দৃষ্টান্ত। কিন্তু নীতিভ্রষ্ট নেতৃত্বের আপোসকামিতার কারণে তাহের ও হাজারো কর্মী-সংগঠকের আত্মত্যাগ আপাতত হলেও ব্যর্থই হয়েছে। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তাহের বলেছিলেন, ‘এ জনপদের লক্ষ কোটি নিরন্ন মানুষের মুক্তি ও তাদের জন্যে একটি সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন অবিনাশী’। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যারাই সে স্বপ্নের পথে আগুয়ান হবে, তাহেরের আত্মত্যাগ অনুপ্রাণিত করবে তাদের। তাহের নিজেই বলেছিলেন, তিনি মিশে আছেন সমগ্র জাতির মাঝে।

মৃত্যুর দুই দিন আগে পরিবারের প্রিয়জনদের কাছে পাঠানো শেষ চিঠিতে তাহের লিখেছিলেন,

‘আমরা দেখেছি শত সহস্র উলঙ্গ, মায়া-ভালবাসা বঞ্চিত শিশু। তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় আমরা গড়তে চেয়েছি। বাঙালি জাতির জন্য উদ্ভাসিত সূর্যের আর কত দেরী। না, আর দেরী নেই। সূর্য উঠলো বলে। এদেশ সৃষ্টির জন্য আমি রক্ত দিয়েছি। সেই সূর্যের জন্য আমি প্রাণ দেব যা আমার জাতিকে আলোকিত করবে, উজ্জীবিত করবে – এর চাইতে বড় পুরষ্কার আর কি হতে পারে’।

ঢাকা কারাগারের ফাঁসীর আসামীদের জন্য নির্দিষ্ট ৮ সেলে বসে তাহের তাঁর শেষ চিঠিতে যখন উপরের কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন সেই সেলের লোহার দরজা, কারাগারের উঁচু দেয়াল অতিক্রম করে তাঁর দৃষ্টি নিশ্চয়ই প্রসারিত হয়েছিল তাঁর প্রিয় বাংলাদেশ ও তার মানুষের উপর। একে একে চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছিল নানা স্বপ্ন। ঐসব স্বপ্ন যা তিনি দেখেছেন কৈশোরে, যৌবনে ও পরিণত বয়সে। তাঁর প্রিয় কর্ণঝোরা নিয়ে স্বপ্নও হয়তো তার চোখে ভেসে উঠেছিল সেই মূহুর্তে। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে সেইসব স্বপ্নকে তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে।

লরেন্স লিফৎসুলজ তার লেখা Unfinished Revolution – Taher’s Last Testament গ্রন্থের বাংলা সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছিলেন,

‘নিকারাগুয়ায় যারা জেনারেল অগাস্টো সানডিনোর আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন, তারাই উনিশ শো চৌত্রিশে তাঁর মৃত্যুর অর্ধশতাব্দী পর আবারো উঠে দাঁড়ান। তাহেরের মত সানডিনোও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলেন, তাঁকেও হত্যা করা হয়েছিল। … হয়তো তাহেরের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত তেমনি বুদ্ধিদীপ্ত অনুপ্রেরণার জোয়ার আনবে। চারপাশে নির্যাতিত মানুষের ভীড় দেখে যারা আত্মজিজ্ঞাসায় ব্রতী হবেন, জানতে চাইবেন তাদের মধ্যে কেউ কোন দিন পৃথিবী বদলে দিতে উঠে দাঁড়িয়েছিল কিনা। তাদের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে হয়তবা’।

ফাঁসীর মঞ্চে তাহেরের আত্মদানের ৩৪ বছর পর গত ২৩ আগষ্ট ২০১০ তারিখে বাংলাদেশের মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গোপন বিচারে তাহের হত্যার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এবং তথাকথিত বিচারের নথিপত্র প্রকাশ করার দাবী জানিয়ে রিট আবেদনে সাড়া দিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি রুলজারি করেছেন। সেখানে রুলজারির তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচার সংক্রান্ত সকল নথী হাইকোর্টের কাছে হস্তান্তর এবং কেন গোপন সামরিক আইন আদালতের দেয়া রায় এবং তাহেরের ফাঁসীকে অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা তা জানাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের এই ঐতিহাসিক রুলিং দেশের সচেতন মানুষকে নতুন আশায় উদ্দীপ্ত করেছে। ৩৪ বছর অপেক্ষার পর সত্য প্রকাশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরু হওয়া, সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফসল ’৭২-এর সংবিধান পুন:প্রতিষ্ঠা – এসবের সাথে তাহের হত্যা বিষয়ে হাইকোর্টের রুলিং স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে নতুন প্রজন্মকে। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। ‘সোনার বাংলা’ কায়েমের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন দেখেছেন বঙ্গবন্ধু ও তাহেরসহ অগুনিত শহীদেরা। মনে হচ্ছে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। প্রস্তুতি পর্বের সেই সময়ে এবং ভবিষ্যতে তাহেরের বিপ্লবী শিক্ষা, সাহস ও আত্মদান তাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

(শেষ)

১ম পর্ব | ২য় পর্ব | ৩য় পর্ব | ৪র্থ পর্ব | ৫ম পর্ব

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

19 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
19
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.