শাহবাগ আন্দোলন শুরু হয়েছে পর্যন্ত ঘটনাক্রমের ধারাবাহিক বৃত্তান্ত। পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক আইনের বিধান নিয়ে আলোচনা। [..]

বাংলাদেশে কোন ব্যাক্তিকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার সবচেয়ে সহজ উপায় তাকে নাস্তিক আখ্যা দেয়া। সহজ কোথায় নাস্তিক তারাই যারা কোন স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং পরকালে বিশ্বাসী না। ইতিহাস বলে মুক্তচিন্তার বিকাশ রোধ করতেই মৌলবাদী তথা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বারবার ধর্মান্ধতার আশ্রয় নেয়। ভাষা আন্দোলনের সময় তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিধর্মীদের ভাষা বলেছে, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের ইসলামের শত্রু বলেছে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কারনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে আমাদের বুদ্ধিজীবিদের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রোধে পাকিস্তান আমলের আইন বহাল রেখেছে সরকার, যুক্ত করা হয়েছে দমন-পীড়নের নতুন আইন। সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে সংবিধানে এসেছে পাকিস্তানি আদলে রাষ্ট্রধর্মের বিধান। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরোধে শাসকগোষ্ঠী মৌলবাদের দিকেই ঝুঁকেছে বারবার। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে অটল শহিদ জননী জাহানারা ইমামকেও  নাস্তিক বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদের পাশাপাশি কোরাণের বরাত দিয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধকারী বিচারকদের বলা হয়েছে 'মুরতাদ', অনেকের মাথার দাম হাঁকা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। এই সবকিছুকেই কি বাংলাদেশের রাষ্ট্র  ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেয় নি? ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আর জামাত শিবিরের নিষিদ্ধের দাবিতে যখন তরুন প্রজন্ম শাহবাগে আন্দোলন গড়ে তলে, লাখো মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সেই উচ্চারণকে জামাত শিবির নাস্তিকদের আখড়া বলে প্রচার করবে সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও ঠিক তাই।  প্রতিবাদ মুখর মানুষ বিস্মিত হয়নি, খুঁজেছে নতুন পথ, আন্দোলনের নতুন কৌশল। শাহবাগের আন্দোলন দানা বেঁধেছিল মুলত বিভিন্ন বাংলা ব্লগ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, টুইটারে - ব্লগার, সেচ্ছাসেবক, কর্মী ও গবেষকদের অক্লান্ত লেখালেখি ও আলাপচারিতার সুত্র ধরে। জামাত শিবির আর তার পক্ষের শক্তিও তথ্যপ্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার পূর্ণমাত্রায় অপব্যাবহার করেছে। যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে নানা মিথ্যা ও ভুল তথ্য উপস্থাপন, আইনের অপ-ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছিলো তারা। শাহবাগ আন্দোলন  শুরুর আগেই ১৩ জানুয়ারি হামলা হয়েছিল ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন এর ওপর। আন্দোলন চলাকালীন ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়া ব্লগার রাজীব হায়দারকে। তারপরই সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে  ছড়িয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন উস্কানীমুলক লেখা, জামাত শিবির সমর্থকরা নামে বেনামে বিভিন্ন আইডি থেকে হুমকি দিতে থাকে ব্লগারদের। তাদের নাম তালিকা ছড়িয়ে দেয়া হয় নাস্তিক বলে। মূলতঃ  যুদ্ধাপরাধীদের  বিচারের  দাবিতে সোচ্চার ব্লগারদেরকেই লক্ষ্য নির্বাচন করে জামাত শিবির। অনেকের নাম ব্যাবহার করে নতুন নতুন ব্লগ আইডি তৈরি করে ধর্মকে কটুক্তি করে লেখা পোস্ট করা হয়। 'নাস্তিক' এবং 'ব্লগার' এ দুটি শব্দ সমার্থক হিসেবে উচ্চারিত হতে থাকে রাজনৈতিক…

আজকে যে প্রক্রিয়ায় জামায়াতিদের ফেইসবুক ব্লগ নিষিদ্ধ করতে বলা হচ্ছে, কালকে তো সেই একই প্রক্রিয়ায় আমার ফেইসবুক ব্লগও সরকার নিষিদ্ধ করতে পারে। তাই আমি প্রথমেই জানান দিয়ে রাখি, নির্বাহী আদেশ, কিংবা মত প্রকাশের অধিকার নিষিদ্ধ করবার দাবি আমার নাই। তবে এই যে রুমী স্কোয়াড আওয়াজ তুলেছে, জামায়াত শিবিরকে নিয়ে আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দেবে না তারা, নিজেরাই তাদের বাপারে সিদ্ধান্ত নেবে — এটা ভীষণ আশাবাদী হবার মতো দিক। আমি এই স্পিরিটের প্রতি আমার নিরঙ্কুশ সমর্থন জানাচ্ছি। [...]

এবার কিন্তু ফেঁসে গেছে আওয়ামী লীগ। সত্যিই ফেঁসে গেছে। তাদের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কিন্তু ধরেই নিয়েছিলো; তাদের ভাষ্য অনুযায়ী তরুণ প্রজন্মের সূর্যসন্তান যারা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিদার যেসব ছেলেমেয়ে দেশব্যাপী শাহবাগ বানিয়ে তুলেছে, সেই তারা সবাই আওয়ামী লীগের স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নরম নরম কর্মসূচিই দিতে থাকবে। সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে চলবে। সবমিলে এদের সবাইকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’জনিত নির্বাচনী ইস্যুর মধ্যে গিলে খাওয়া যাবে। মোটকথা, দেশব্যাপী গণজাগরণ মঞ্চের সব তরুণদের নিজেদের ভোটের রাজনীতির অঙ্গীভূত করবার স্বপ্ন দেখেছিলো আওয়ামী-নেতৃত্বাধীন জোট। ব্যাপারটা এমন; সরকার আন্তজাতিক চাপ-ঠাপ দেখবে, দেশের মধ্যেকার রাজনৈতিক অবস্থা দেখবে, ভোটের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ দেখবে আর সেই মাফিক সিদ্ধান্ত নেবে; ওদিকে শাহবাগ-সহ দেশব্যপী যারা জড়ো হয়েছে, তারা সরকারের সাথেই তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পারপাজ সার্ভ করবে। এমনটাই চেয়েছিলো তো সরকার। কে না জানে, যুদ্ধাপরাধীরা সরকারের এখনকার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের একমাত্র রাজনৈতিক হাতিয়ার, যুদ্ধাপরাধীদের কাঙ্ক্ষিত বিচারটা এইখানে আওয়ামী লীগের কাছে ভোটের রাজনীতির থেকে বেশি কিছু নয়। কিন্তু রাজনীতির বাইরে থাকা হাজারো তরুণতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিংবা জামায়াত নিষিদ্ধকরণের দাবিকে নিছক ভোট উৎরাবার হাতিয়ার হিসেবে দেখে না। এটা সত্যিইতো তাদের প্রাণের দাবি। সে-কারণেই আবির্ভাব রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনের। সে-কারণেই আমার ফেইসবুক বন্ধু স্টেটাস লেখেন: নির্বাচনের আগে `যুদ্ধাপরাধ‘ নামে একটি সেনসেশনাল প্রোডাক্ট বাজারে ছেড়েছে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ, তবে রুমী স্কোয়াডের জন্য সুবিধা করতে পারছে না। জয় শাহবাগ, জয় বাংলা!-- সাঈফ ইবনে রফিক একটা বিভেদ তবে শুরু হয়েছে এবার সত্যিই। শুরু হয়েছে এমন না। প্রকট হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে। এই বিভেদ আগে থেকেই ছিলো। সেটা হলো, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াতি রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাণের দাবির সাথে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে রাজনীতির বিভেদ। এই বিভেদই দৃশ্যমান হয়ে রুমি স্কোয়াডের আমরণ অনশনের নামে হাজির হয়েছে দৃশ্যপটে। রুমী স্কোয়াডের সোজা কথা, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত-নিষিদ্ধের হিসেব-নিকেশ করার সুযোগ তারা দেবে না সরকারকে, জামায়াতকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এটাই তাদের দাবি। নইলে তারা অনশন করেই মরে যাবে! এখানে রাজনীতির নামগন্ধও নেই। এখানে ভোট জেতা-হারার হিসেব-নিকেশও নেই। এখানে আছে পরিচ্ছন্ন আবেগ। মানবতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আপাত-মানবিক এক আবেগ। এই আবেগের তাৎপর্য যাই হোক না কেন, এই আবেগের গুরুত্ব বিশাল। এই আবেগ সোজা কথায় ঘোষণা করেছে, সরকারকে আর…

মেয়েকে ইতিহাসের গল্প শোনাতে গিয়ে যখন হোঁচট খাচ্ছিলাম তখন কেবলই ভাবছিলাম -- গল্পটা একটা নতুন প্রজন্মের জন্য কতটা জরুরি। এই কম্পিউটার ডিজিটাইজেশনের যুগে ইতিহাসকে কত সহজে আর কত দ্রুতই-না ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। [...]

আমার ছয় বছর বয়েসী মেয়ে পড়ে ১ম শ্রেণীতে। দেশের গানগুলো কেন যেন তার কাছে খুব প্রিয়। প্রায়ই তার অনুরোধে আমাকে জাতীয় সংগীত গেয়ে শোনাতে হয়। তার সঙ্গে অন্যান্য দেশের গান আর রবীন্দ্র সংগীত। আজ ২৬শে মার্চ ২০১৩। দেশের গানে ঘুম ভেঙেছে আমাদের। বিছানা ছেড়ে, শোলায় বানানো শহীদ মিনারটায় দুটো গোলাপ রেখে শহীদের জন্য প্রার্থনা করলাম আমরা দু’জন। তারপর দু’জনে মিলে একে একে গাইলাম অনেকগুলো গান। গান গেয়ে মন ভরছিল না, ভাবলাম মেয়েকে গল্প বলি। যুদ্ধের গল্প, স্বাধীনতার গল্প। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব ? ব্রিটিশ শাসনের শুরু ? নাহ্, তার আগের পটভূমি থেকে শুরু করাই বোধ হয় ভাল হবে। তৎকালীন রাষ্ট্র ‌আর তার শাসন ব্যবস্থা, শাসকদের ভূমিকা, প্রজা, অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে রাজা-প্রজার সম্পর্ক, দেশের সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্য আরো কত কী! তারপর আসবে ব্রিটিশ আগ্রাসন। নাহ্, মাথাটা গুলিয়ে উঠল একেবারে। “ফকির মজনু শাহ্” ছবিটা নেট থেকে নামানোর ফরমায়েশ করলাম ছোটকে। আমি “ফকির মজনু শাহ্” দেখেছিলাম – যখন ১ম শ্রেণীতে পড়ি। ঢাকায় বিমান বাহিনীর শাহীন সিনেমা হলে। শৈশবের পড়ন্ত বেলাগুলো মায়ের কোলে শুয়ে ‘সোভিয়েত নারী‌’ পত্রিকার শিশু পাতার গল্প শুনে কাটিয়েছি। এই চালশে বয়েসে এসে যখন ভাবি তখন উপলব্ধি করি, ন্যায়-অন্যায় বোধ আর ভালো-মন্দ বিচারের যে-ক্ষমতা আমার ভেতর ‘কিশলয়’ থেকে ‘মহীরূহ’ হয়ে উঠেছে, তার পেছনে বড় একটা অবদান ঐ গল্পগুলোর। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বইপত্র পড়বার প্রত্যয়টা ঐ পথেই শুরু হয়েছিল। আজ হঠাৎ করেই যেন আমাদের দেশের শিশুতোষ পত্রিকা আর বইপত্রগুলোর ভোল্ পালটে গেল! শওকত ওসমান, আবদার রশীদ, আলী ইমাম – এঁদের লেখা শিশুতোষ গল্পগুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। রুশ-বাংলা বইপত্রগুলো ছাপা বন্ধ হয়ে গেছে আশির দশকেই। মাধ্যমিক ক্লাসে বাংলা পড়াতেন রিফাত আরা ম্যাডাম আর আখতার জাহান ম্যাডাম। শীত, গ্রীষ্ম আর উৎসবের ছুটিতে যখন স্কুল বন্ধের নোটিশ আসত ক্লাসে – একই সঙ্গে আমাদের এই দুই শিক্ষিকা নোটিশ করতেন – বন্ধে যেন কিছু প্রবন্ধ আর সাহিত্য পড়া হয়। ছুটি শেষে ক্লাস শুরু হলে, খোঁজ নিতেন – কী পড়েছি। আজকাল শুনছি স্কুল শিক্ষকেরা কেবল ‘এ+’ এর খোঁজ খবরই নেন। চকোলেট কারখানার চকোলেটের মতো তাঁরা ‘এ+’ পাওয়া মেধাবী ছাত্রছাত্রী উৎপাদন করেন মাত্র, মেধা বিকাশের খোঁজখবর রাখার সময় কোথায়!…

বাংলা ব্লগোস্ফেয়ারের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্লগ 'আমার ব্লগ' গত বাইশে মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) 'আমার ব্লগ' কর্তৃপক্ষকে কিছু ব্লগারের একাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে [...]

বাংলা ব্লগোস্ফেয়ারের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্লগ 'আমার ব্লগ' গত বাইশে মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) 'আমার ব্লগ' কর্তৃপক্ষকে কিছু ব্লগারের একাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে এবং সেসব ব্লগারের নাম, ঠিকানা, আইপি ইত্যাদি জানতে চেয়েছে। 'আমার ব্লগ' এই আদেশ অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। BTRC কয়েকমাস আগেই গুগল কর্তৃপক্ষকে মহানবীকে কেন্দ্র করে তৈরি অত্যন্ত আপত্তিকর একটি চলচ্চিত্রের ক্লিপ সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল এবং গুগল কর্তৃপক্ষ এই চিঠির কোন জবাব দেয়নি, ফলশ্রুতিতে BTRC বাংলাদেশে ইউটিউব ব্লক করে দেয় এবং এখনো পর্যন্ত (আমি যতদূর জানি) এই ব্লক বলবৎ আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আমার ব্লগের ওয়েবসাইটটিও হয়তো অচিরেই ব্লক করা হবে। এটাও ধরে নেওয়া যায় যে মুক্তাঙ্গন সহ অন্যান্য ব্লগেও BTRC-র চিঠি শিগগিরই যাবে। BTRC 'আমার ব্লগ’-এর উপর চড়াও হবার পিছনের কারণ আমরা অনেকেই জানি। শাহবাগের আন্দোলনের পরপরই 'আমার দেশ' সহ অন্য কয়েকটি পত্রিকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে এই আন্দোলনের পিছনে নাস্তিক ভাবধারার কিছু ব্লগার কলকাঠি নাড়ছে। একজন ব্লগারকে খুনও করে ফেলা হয় এবং মহানবী এবং আল্লাহ সম্পর্কে কুৎসিত কিছু কথাসহ তাঁর 'ব্যক্তিগত ব্লগটি'ও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় (এই ব্লগার খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর এই ব্লগ সম্পর্কে কেউই কিছু জানতো না)। শাহবাগের আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ব্লগিং করছেন, এত দিন পর্যন্ত তাঁদের 'নাস্তিকতাপূর্ণ' লেখায় কেউ আঘাত না পেলেও দেখা গেলো অতি অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম এইসব ব্লগ পড়ে মানসিক ভাবে 'আহত' হয়েছেন। সুদূর যুক্তরাজ্য থেকেও কিছু আহত মুসলমান নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে যোগ দিতে বাংলাদেশে চলে আসেন। শাহবাগের আন্দোলনকারীরাও আহত মুসলমানদের মন রাখতে প্রতি সভার আগে কোরান তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করলেন, নামাযের সময়ে 'গান বাজনা' বন্ধ রাখলেন। সরকারও এই ব্যাপারে পিছিয়ে থাকলো না, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য ব্লগ এবং ফেসবুককে দায়ী করলেন। এই সংসদীয় কমিটিতে সৈয়দা আশিফা আশরাফী নামে বিএনপির একজন মহিলা এম.পি. আছেন, যিনি সংসদে এবং বিভিন্ন টক শোতে আওয়ামী লীগকে অতি অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তবে এই মিটিংয়ে তিনি এবং আওয়ামী লীগের নেতারা রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে ফেসবুক…

যখন “তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিউ ওয়াতাব্ব” পড়তে শিখেছিলাম আমরা, তখন আমরা আবু লাহাবকে ঘৃণা করতে শিখেছি, চৌদ্দশত বছর আগের অপকীর্তিকে ক্ষমা না করে অভিশাপ দিতে শিখেছি। [...]

যখন “তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিউ ওয়াতাব্ব” পড়তে শিখেছিলাম আমরা, তখন আমরা আবু লাহাবকে ঘৃণা করতে শিখেছি, চৌদ্দশত বছর আগের অপকীর্তিকে ক্ষমা না করে অভিশাপ দিতে শিখেছি। যখন অযুর সময় আমরা পড়ি “আল ইসলামু হাক্কুন ওয়াল কুফরু বাতিল/আল ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরু জুলমাত” তখন আমরা মুসলিম নরনারী, মু'মিনিনা ওয়াল মু'মিনাআতি, মুসলিম বস্তি-শহর-নগরকে আপনার ধরে বলি, আমরা জ্যোতির্ময় তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন। তখন কি আমরা অমুসলিমদের অমুসলিম হবার সুবাদে ক্ষমা করে দিই? এই সবই ধর্মের কথা, যা আমাদের অত্যন্ত যত্নের সাথে ছোটবেলায় শিক্ষা দেয়া হয়, পরিণত বয়েসে আমরা কেউ কেউ এর থেকে বের হয়ে আসি, কেউ কেউ স্মৃতিকাতরতা-অভ্যাস-বিশ্বাস ইত্যাদি বহু কারণে বের হই না। এই ব্যক্তিগত জায়গাটা নিয়ে তর্কের কিছু নেই, তর্কের হাত হৃদয় অব্দি পৌঁছে না। মানুষ কেন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে পড়তে না গিয়ে দেশের জন্যে বস্তাবন্দী হয়ে মার খেতে খেতে মরে যায় তা নিয়ে যেমন তর্ক চলে না। শিখাইবে/পারিবে না করিতে প্রয়োগ ফেইসবুকে ফাহাম আবদুস সালাম একটি নোট দিয়েছেন। তিনি শুরু করেছেন এইভাবে, ক্ষমা করুন এজন্যে না যে ক্ষমা দুর্বলের সান্তনা, বরং ক্ষমা শক্তিমানের শ্রেষ্ঠ রায়। ক্ষমা করে দেখুন আপনার ভাল লাগবে। নতুন ট্যালকম পাউডার ব্যবহারের অনুরোধের মতন করে ক্ষমা করবার অনুরোধ শুনে আমার ভাল লাগে। আমি আরেকটু পড়ি -- জামাতের যে ছেলেটা মাত্র বিশ বছর বয়েসে মারা যাচ্ছে তাকে বাঁচার সুযোগ দিন- চল্লিশ বছর বয়েসে সে হয়তো বুঝতে পারবে যে সহিংসতায় কোনো আদর্শবাদ মানুষের মনে জায়গা পায় না। যে পুলিশ গতকাল ঘরে ফেরেনি, সে হয়তো আগামী বছর বুঝতে পারতো- অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। রাজীব হয়তো আর পাঁচ বছর পরেই বুঝতে পারতো মুহাম্মাদ (সঃ)কে এভাবে তার আক্রমণ করা উচিত হয়নি। জামাত দিয়ে শুরু করে ভারসাম্য আনবার জন্যে ব্লগার রাজীবের প্রসঙ্গ আনাটা বেশ মজার, আমিও এইভাবে মনে মনে লাইন জুড়তে থাকি- ইয়র্কশায়ার রিপার তার চৌদ্দ নম্বর খুনের বেলায়ই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো, আহা মেয়েটার চোখে কত মায়া, ওকে না মারি...ইত্যাদি। এইসব খুনিয়াদের নামধাম লিখে অবশেষে অকালে মরে যাওয়া লোরকা বেঁচে থাকলে কি হতেন তা দিয়ে শেষ করলেই হবে! পুরোটাই শুনতে হবে এমন যে আমি কেবল মানুষের মরে যাওয়ায় বিচলিত।ভুলে গেলেই চলবে যে জামাতের বিশ বছরের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.