আমি সাতে পাঁচে থাকার মানুষ নই, আমার দৃষ্টি সবসময় আমার মতো করে বাঁধানো -- সাতে পাঁচের প্যাঁচে বাঁধা [...]

ছোটবেলা থেকে আমার প্রধান কাজ উদ্দেশ্যমূলক মাখামাখি, ওই যে কোনো খেলাই খেলতে পারতাম না সেখানেও আমার মাখামাখি থেকে প্রভাবশালী কারোরই রেহাই ছিল না – খেলার মাঠের ছেলেগুলো কেমন যেন আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, পরে জেনেছিলাম আমি মাঠে গেলেই নাকি ওরা বলত, মাখন এসেছে। আর আমি আরেকটি কাজ করতাম, একাজটা আমি বিভিন্ন পরিস্থতিতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে পারতাম, এবং সত্যিকার অর্থে বলতে কি – আমার চেয়ে একাজ বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত আর কাউকে আমার চেয়ে ভালভাবে করতে দেখিনি – আমি ভুল লোক দিয়ে ঠিক কাজটি করাতে ঈর্ষণীয়ভাবে দক্ষ। আমি সাতে পাঁচে থাকার মানুষ নই, আমার দৃষ্টি সবসময় আমার মতো করে বাঁধানো -- সাতে পাঁচের প্যাঁচে বাঁধা – এবং এজন্যই আমার সাথে তাল রাখতে আমার গুণগ্রাহী তালবিদরাও সদাসতর্ক থাকেন, আমিও এমনই দৃষ্টিবিদ এমনই সতর্কতা জারি রাখি নিজের উপরও – কাউকে কখনো পরীক্ষামূলক প্যাঁচে ফেলার লোভে পড়ি না, সাতে পাঁচের প্যাঁচে কেউ পড়লে একবারই পড়ে – আর সেখান থেকে বের হতে পারে না। গোপনে এত কথা লেখাটা ঠিক হচ্ছে না, অবশ্য লেখার কারণও আছে, কিন্তু সেকারণটা কোথাও উন্মুক্ত করা যাবে না – কারণ জীবনে এই প্রথম মালেকা আমাকে না জানিয়ে কয়েকটি আমার জন্য প্রাণঘাতী পদক্ষেপ দিয়েছে – যার অভিঘাত আমার মতো গভীর জলের আত্মস্বীকৃত রাজাকারের আসনটাই তছনছ করে দেয় কিনা এই ভয় আমাকে স্নায়বিক তাড়নায় চুরমার করে দিতে চাইছে। চর্মকার মালাকার স্বর্ণকার তো বোঝেন, কাজেই রাজাকারও নিশ্চয়ই বোঝেন – গর্বের সাথে দুদশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে এই রাজা বানানোর কাজ করছি বলে দুনিয়াজোড়া ফুলানো ফাঁফানো আমার যে হাঁকডাক তা কি এবার ধুলিসাৎ হয়ে যাবে? আরো গোপন ডায়েরি : হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি আসব আগের দিন আজ যাই : মনমোহন সিংয়ের গোপন ডায়েরি পুতুল প্রতিভা : মওদুদ আহমেদের গোপন ডায়েরি চাণক্য নই : প্রণব মুখার্জির গোপন ডায়েরি কই মাছের প্রাণ : এরশাদের গোপন ডায়েরি এক বিয়োগ এক : খালেদা জিয়ার গোপন ডায়েরি আমার জলবায়ু : শেখ হাসিনার গোপন ডায়েরি টিপাইমুখ বাঁধ : দীপু মনির গোপন ডায়েরি

শ্যামলালদের পকেট অচর্চিত অশিক্ষিত হাঁকমারা শিল্পকর্মে ঠাসা।[...]

করিবে করিতেথাকিবে করিতেথাকিতেহইবে। শিখিবারকিছুনেই শিখিবারকিছুপ্রয়োজননেই শিখিবারকিছুপ্রয়োজনথাকিতেপারিবেনা। এই হল আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে নৃত্যাদি গানাদি নাটকাদি চলচ্চিত্রাদি দৃশ্যশিল্পাদি সাহিত্যাদির সাম্প্রতিক কয়েক দশকাদির করুণ অবস্থা। এভাবে চললে তবেই না বিপুল মানুষের অনন্ত সম্ভাবনার সার্বজনীন চাতাল সদাভাষ্যগ্রস্ত কর্মচঞ্চল শোকেস হয়ে উঠবে। এটা খুবই লজ্জাজনক আজ সকলেই সকল কিছু পারার যুগ, আজ সকলেরই ন্যূনতম পিড়িবিদ্যা না শেখার যুগ। আমাদের ক্লাশে একটি নূতন ছাত্র আসিয়াছে। সে আসিয়া প্রথম দিন‌‌ই সকলকে জানাইল, "আমি পোইট্‌‌রি লিখতে পারি !" একথা শুনিয়া ক্লাশের অনেকেই অবাক হ‌‌ইয়া গেল; কেবল দুই-একজন হিংসা করিয়া বলিল, "আমরাও ছেলেবেলায় ঢের ঢের কবিতা লিখেছি।" নতুন ছাত্রটি বোধহয় ভাবিয়াছিল, সে কবিতা লিখিতে পারে শুনিয়া ক্লাশে খুব হুলুস্থুল পড়িয়া যাইবে এবং কবিতার নমুনা শুনিবার জন্য সকলে হা হা করিয়া উঠিবে। শেষ পর্যন্ত এই পোইট্‌‌রি বা কবিতা কিভাবে নাজেহাল হয়েছিল সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’র পাঠক মাত্রই তা জানেন। ইন্‌‌স্পেক্টর ইস্কুল দেখিতে আসিলেন। প্রায় বিশ-পঁচিশটি ছেলে সাবধানে পকেটের মধ্যে লুকা‌‌ইয়া কবিতার কাগজ আনিয়াছে। বড় হলের মধ্যে সমস্ত স্কুলের ছেলেদের দাঁড় করানো হ‌‌ইয়াছে, হেডমাস্টার মহাশয় ইন্‌‌স্পেটরকে ল‌‌ইয়া ঘরে ঢুকিতেছেন— এমন সময় শ্যামলাল আস্তে আস্তে পকেট হ‌‌ইতে একটি কাগজ বহির করিল। আর যায় কোথা ! পাছে শ্যামলাল আগেই তাহার কবিতা পড়িয়া ফেলে, এই ভয়ে ছোট বড় একদল কবিতাওয়ালা একসঙ্গে নানাসুরে চীৎ‌কার করিয়া যে যার কবিতা হাঁকিয়া উঠিল। মনে হ‌‌ইল, সমস্ত বাড়িটা কর্তালের মতো ঝন্‌‌ঝন্‌‌ করিয়া বাজিয়া উঠিল, ইন্‌‌স্পেক্টর মহাশয় মাথা ঘুরিয়া মাঝ পথেই মেঝের উপর বসিয়া পড়িলেন। ছাদের উপর একটা বিড়াল ঘুমা‌‌ইতেছিল, সেটা হঠাৎ‌ হাত পা ছুড়িয়া তিনতলা হ‌‌ইতে পড়িয়া গেল, ইস্কুলের দারোয়ান হ‌‌ইতে অফিসের কেশিয়ার বাবু পর্যন্ত হাঁ হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিল। সকলে সুস্থ হ‌‌ইলে পর মাস্টার মহাশয় বলিলেন, "এতো চেঁচালে কেন?" আমাদের সুকুমারবৃত্তির ডোবাখানায় আজ খালি হাঁকডাক চেঁচামেচি। একজন রাজমিস্ত্রির যে গাঁথুনিবিদ্যা লেখকের তা নেই, একজন রঙমিস্ত্রির যে প্রলেপবিদ্যা একজন চিত্রশিল্পীর তা নেই, একজন ঠেলাগাড়িওয়ালার যে চলনবিদ্যা একজন সঙ্গীতশিল্পীর তা নেই। নেই, নেই, নেই। কারণ একটাই রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার করণকৌশল শেখা আছে সুকুমারবৃত্তির ডোবাখানাবাহিনির তা নেই – তা থাকার দরকারও নেই – করণকৌশল জানা না থাকলে রাজমিস্ত্রির রঙমিস্ত্রির ঠেলাগাড়িওয়ালার কাজ জোটে না – কিন্তু সুকুমারভোম্বলদের কোনোকিছুই জানা থাকার কোনো প্রয়োজন…

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরানোর জন্য খুব পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের সার্বিকভাবে অন্যদিকে ব্যস্ত করে তোলার চেষ্টা চলছে। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি। যদিও তা একেবারেই সফল হয়নি। সারাদেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে জনস্রোত তা-ই প্রমাণ করে। [...]

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরানোর জন্য খুব পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের সার্বিকভাবে অন্যদিকে ব্যস্ত করে তোলার চেষ্টা চলছে। ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি। যদিও তা একেবারেই সফল হয়নি। সারাদেশে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে জনস্রোত তা-ই প্রমাণ করে। উৎসবপ্রিয় বাঙালিকে ঘরে আটকে রাখবে কার সাধ্যি! সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মজাত হলেও, সে-সবই এখন ঐতিহ্যের মাপকাঠিতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আত্মীকরণ হয়েছে। ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কখনো কখনো  বিরোধ প্রমাণের চেষ্টা চললেও তা খুব একটা ধোপে টেকে না। এদেশের মানুষ ধর্মভীরু। কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি এদেশের মানুষ কখনোই স্বাগত জানায়নি। কোনো উগ্র মতবাদ সাধারণ মানুষের প্রশ্রয় পাবে না। উগ্রতা কোনো ধার্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ সব ধর্মের প্রকৃত অনুসারীরা সবসময় শান্তিপ্রিয়। কোনো ধর্মেই সংঘাতের কথা বলা হয় নি। আর কেউ ধর্মে বিশ্বাস না করলে, তার বিচারের দায়িত্বও কোনো ধর্মেই মানুষের উপর অর্পণ করা হয়নি। ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিচারের ক্ষমতা পুরোপুরি স্রষ্টার। যে-যে যার-যার দায়িত্বে ধর্মে বিশ্বাস-অবিশ্বাস বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এই বিষয়ে বল্ প্রয়োগের কোনো অধিকার কারো নেই। কাউকে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া অথবা কোনো ধর্মকে অবমাননা নিশ্চয়ই অনুচিত। আর তা সব ধর্মের ক্ষেত্রেই  প্রযোজ্য। ধর্মের প্রতি ভালোবাসার দোহাই দিয়ে মন্দির ভাঙা, বাড়িঘরে আগুন দেওয়া, মানুষের উপর আক্রমণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যারা ইন্ধন দেয়, শাস্তি প্রাপ্য তাদেরও। 'নাস্তিক' বিতর্ক একেবারেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ‌এই বিষয়টা নিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে সোচ্চার তরুণ প্রজন্মকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা সফল হবে না। সাধারণ মানুষকে অতো বোকা আর বোধহীন ভাববার দিন শেষ হয়েছে। ‘ব্লগার’, ‘শাহবাগ’, ‘নারী’ শুধুমাত্র এই বিষয়গুলো নিয়ে যে পরিমাণ তালগোল পাকানো পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে, তাতে এটা একেবারেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কী কারণে এসব হচ্ছে। কারণ এই বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এই  সম্পৃক্তিটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্যই একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত কিংবা আওয়ামী লীগ যে দলই সাধারণ জনমতের বিরুদ্ধে ঔদ্ধ্যত্যপূর্ণ আচরণ করুক, তা তাদের রাজনৈতিক বিপন্নতাই ডেকে আনবে। এসব ষড়যন্ত্রে যুদ্ধাপরাধের বিচাররের দাবি লক্ষভ্রষ্ট…

...তলিয়ে দেখা হচ্ছে না, একজন হিন্দুর সাংস্কৃতিক জীবনের সাংস্কৃতিক উপাদানের কোনটা হিন্দুধর্মীয় আর কোনটা লোকায়ত। এরা বুঝতে নারাজ, লোকায়ত সংস্কৃতি সব ধর্মের মানুষের সর্বজনীন উত্তরাধিকার। আর ভারতবর্ষে হিন্দুর নামে প্রচলিত সংস্কৃতির বেশির ভাগই হিন্দুধর্মজাত নয়, যেমন আরববিশ্বে মুসলমানদের নামে প্রচলিত সংস্কৃতির অধিকাংশই ইসলামধর্মজাত নয়। হিন্দুর নামে প্রচলিত সংস্কৃতির অধিকাংশই আসলে এ অঞ্চলের প্রাচীন অধিবাসী ভাষাজাতি অস্ট্রিক-দ্রাবিড়দের পল্লীভিত্তিক লোকায়ত সংস্কৃতি। সে হিসেবে এসবই আমাদের সর্বজনীন উত্তরাধিকার।...

নববর্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীগুলোকে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে বড় করে দেখতে শিখিয়েছে। দেখবার এই দৃষ্টিভঙ্গি এখানকার জনগোষ্ঠী শুধু নিয়ত বহমান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই অর্জন করেনি, এ ক্ষেত্রে এ জনপদের অধিবাসী বাঙালি ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক- এক কথায় মুক্তির সংগ্রামও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে মানুষের মানবিক যে-জীবন, পহেলা বৈশাখ তার আদল নির্মাণ করেছে নববর্ষকে এ রাষ্ট্রের অধিবাসীদের সবচেয়ে বড় অথচ সম্প্রদায়ঊর্ধ্ব ঊৎসবে পরিণত করে। কিন্তু তারপরও এখনও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, ধর্মীয় পরিচয়কেই আমাদের সাংস্কৃতিক বা জনগোষ্ঠীগত পরিচয়ের চেয়ে বড় করে দেখা উচিত। ঊনচল্লিশে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তারচেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়। এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকার জো টি নেই’ বলার মধ্যে দিয়ে যে বিতর্কের অবসান করতে চেয়েছিলেন, একাত্তর যে বিতর্কের রাজনৈতিক নিরসন ঘটিয়েছিল, রাজনৈতিক উত্থানপতনের ধারায় সে বিতর্ক স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও জিইয়ে রাখা হয়েছে। এরকম একটি বিতর্ক জিইয়ে থাকার একটি কার্যকারণ এই, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে আমাদের অনেকে এখনও ইতিহাস আলাদা করে দেখতে চান না। সম্পর্কযুক্ত আরও একটি কার্যকারণ হলো, রাজনৈতিক কারণে সেরকম দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাও রচনা করা হয়েছে কি সামাজিকভাবে, কি রাষ্ট্রীয়ভাবে। ধর্ম ও সংস্কৃতি কোনও একটি পর্যায়ে সম্পর্কিত হলেও এ দুটি যে একেবারেই আলাদা, সেটি এমনকি আমাদের সমাজ বিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের অনেক শিক্ষার্থীও মানতে নারাজ। তারা স্বীকার করেন না, ধর্ম সংস্কৃতিরই অংশবিশেষ। ধর্ম তাদের কাছে সংস্কৃতির চেয়ে অনেক অনেক বড়, কেননা ধর্মকে তারা বিবেচনা করতে চান পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে। অথচ জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে এরাও প্রতিনিয়ত এ সত্য স্বীকার করে নেন যে, সংস্কৃতি ক্রমপরিবর্তনশীল, অন্যদিকে জাড্যতাই ধর্মের মূল শক্তি। অপরিবর্তনীয় হওয়ার পরও ধর্ম যে অনেক মানুষকে ছায়া দিচ্ছে, তার কারণ এটির অংশবিশেষ মানুষের জগৎ ও জীবনবোধের বা ইডিওলোজির অন্তর্গত আর অংশবিশেষ আবার তার আচারগত। অন্যদিকে সংস্কৃতি হলো সর্বব্যাপ্ত, যেমন গতিশীল ঠিক তেমনি আবার সৃষ্টিশীল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কট মানুষকে আক্রান্ত করেছে, কেননা জাড্যতা সৃজনশীলতা ও…

যারা মাদ্রাসায় যায়, তারা কি খায়, কি পরে, কি শেখে, তারা বড়হুজুরের হাতে ধর্ষিত হয় কি না, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, তাদের শিক্ষাশেষে গন্তব্য কি এই নিয়ে কেন আমরা ভাবিনি? কেন সরকার ভাবেনাই? মহল্লার একেকটা বাড়ি থেকে একেকদিন খাওয়া পাঠানো হবে, এইরকম হিসাব করে আমরা একটা বিশাল হুজুরশ্রেণী তৈরি করেছি, এই পরান্নপুষ্ট-অশিক্ষিত-পরনির্ভরশীল জাতটা তৈরির আগে আমরা কেউ কেন ভেবে দেখলাম না? [...]

এই লেখার শুরুতেই জানিয়ে দিই, যীশুর এক গালে চড় খেলে আরেক গাল পেতে দেয়ার বিধান মানবার মন নিয়ে এটি লেখা নয়। যে আপনাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতে মারতে আসে, তাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতেই প্রতিহত করতে হয়, সেটা জেনেই এটা লেখা। যদি আপনি জানেন আপনাকে লাঠি/সড়কি/রাম-দা দিয়ে প্রতিহত করা হবে, তাহলে আপনার লাঠি/সড়কি/রাম-দা ধরবার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে, অথবা আগেই ভেবে রাখতে হবে, লাঠি/সড়কি/রাম-দা দ্বারা আক্রান্ত হলে আপনার কাছে তার প্রতিবিধান কি। এইসব আগেই স্বীকার করে নিয়ে আমি কেবল এইটুকু নিয়ে আজকে লিখতে বসেছি, যে, প্রতিবিধান আপনি ভেবে রাখবেন বটে, সেইসাথে আপনাকে এও ভাবতে হবে আপনাকে এই লোকগুলি লাঠি/সড়কি/রাম-দা হাতে মারতে আসছে কেন? এই অসম্ভব ঘৃণার উৎস কি। এর চর্চ্চা কোথায় এবং কতদিনের? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে কোনো সভ্য দেশে দ্বিমত থাকার কথা নয়, উচিতও নয়। কিন্তু যে মানুষগুলি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দেখেনাই, যারা এখনও ভাতকে ভাত আর মা’কে মা ডাকে, বাসায় গিয়ে বাংলাদেশের কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমায়, সে কেন জামাত-শিবির করে, কেন সে সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিপক্ষে এমন নাছোড়? কেন সে অন্য আর সকল মানুষকে কাফের এবং দিকভ্রান্ত ভাবতে শিখেছে? নারীকে এমন বৈরী চোখে দেখা তাকে কে শিখিয়েছে? মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের শিক্ষাখাতের বিপুল অর্থ ব্যয় হয় বলে আমি জানি। আন্তনগর মহাসড়কগুলিতে কয়েক হাত পর পর আপনি আজকে মাদ্রাসা খুঁজে পাবেন।এই শিক্ষাব্যবস্থায় দেশ-জাতি-জাতীয়তাবাদ-জাতীয় সংগীত ইত্যাদি সমন্বিত আছে কি না এটা না দেখে কেন এই শিক্ষাব্যবস্থাকে নিজের ইচ্ছামতন চলতে দেয়া হয়েছে? যারা মাদ্রাসায় যায়, তারা কি খায়, কি পরে, কি শেখে, তারা বড়হুজুরের হাতে ধর্ষিত হয় কি না, তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, তাদের শিক্ষাশেষে গন্তব্য কি এই নিয়ে কেন আমরা ভাবিনি? কেন সরকার ভাবেনাই? মহল্লার একেকটা বাড়ি থেকে একেকদিন খাওয়া পাঠানো হবে, এইরকম হিসাব করে আমরা একটা বিশাল হুজুরশ্রেণী তৈরি করেছি, এই পরান্নপুষ্ট-অশিক্ষিত-পরনির্ভরশীল জাতটা তৈরির আগে আমরা কেউ কেন ভেবে দেখলাম না? যে নিজের ভাষাতেই একটা ‘আউট-বুক’ পড়ে দেখেনাই, জ্ঞানলাভ করতে সুদূর চীনদেশ যাওয়া দূরে থাক, তালাবের ঐ পাড়ের মক্তব অব্দি যে কেবল যেয়ে দেখেছে, তার কাছে আমরা কেন ধর্মশিক্ষার জন্যে-বালামুসিবত কাটানোর জন্যে-দুঃস্বপ্নের অর্থ জানবার জন্যে যাই? আমরা স্কুল-কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সময়, হরলাল রায়ের রচনাবলী পড়বার সময়, টেস্টপেপার সলভ করার…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.