রাজাকার : মতিউর রহমানের গোপন ডায়েরি

আমি সাতে পাঁচে থাকার মানুষ নই, আমার দৃষ্টি সবসময় আমার মতো করে বাঁধানো -- সাতে পাঁচের প্যাঁচে বাঁধা [...]

ছোটবেলা থেকে আমার প্রধান কাজ উদ্দেশ্যমূলক মাখামাখি, ওই যে কোনো খেলাই খেলতে পারতাম না সেখানেও আমার মাখামাখি থেকে প্রভাবশালী কারোরই রেহাই ছিল না – খেলার মাঠের ছেলেগুলো কেমন যেন আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, পরে জেনেছিলাম আমি মাঠে গেলেই নাকি ওরা বলত, মাখন এসেছে।

আর আমি আরেকটি কাজ করতাম, একাজটা আমি বিভিন্ন পরিস্থতিতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে পারতাম, এবং সত্যিকার অর্থে বলতে কি – আমার চেয়ে একাজ বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত আর কাউকে আমার চেয়ে ভালভাবে করতে দেখিনি – আমি ভুল লোক দিয়ে ঠিক কাজটি করাতে ঈর্ষণীয়ভাবে দক্ষ।

আমি সাতে পাঁচে থাকার মানুষ নই, আমার দৃষ্টি সবসময় আমার মতো করে বাঁধানো — সাতে পাঁচের প্যাঁচে বাঁধা – এবং এজন্যই আমার সাথে তাল রাখতে আমার গুণগ্রাহী তালবিদরাও সদাসতর্ক থাকেন, আমিও এমনই দৃষ্টিবিদ এমনই সতর্কতা জারি রাখি নিজের উপরও – কাউকে কখনো পরীক্ষামূলক প্যাঁচে ফেলার লোভে পড়ি না, সাতে পাঁচের প্যাঁচে কেউ পড়লে একবারই পড়ে – আর সেখান থেকে বের হতে পারে না।

গোপনে এত কথা লেখাটা ঠিক হচ্ছে না, অবশ্য লেখার কারণও আছে, কিন্তু সেকারণটা কোথাও উন্মুক্ত করা যাবে না – কারণ জীবনে এই প্রথম মালেকা আমাকে না জানিয়ে কয়েকটি আমার জন্য প্রাণঘাতী পদক্ষেপ দিয়েছে – যার অভিঘাত আমার মতো গভীর জলের আত্মস্বীকৃত রাজাকারের আসনটাই তছনছ করে দেয় কিনা এই ভয় আমাকে স্নায়বিক তাড়নায় চুরমার করে দিতে চাইছে।

চর্মকার মালাকার স্বর্ণকার তো বোঝেন, কাজেই রাজাকারও নিশ্চয়ই বোঝেন – গর্বের সাথে দুদশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে এই রাজা বানানোর কাজ করছি বলে দুনিয়াজোড়া ফুলানো ফাঁফানো আমার যে হাঁকডাক তা কি এবার ধুলিসাৎ হয়ে যাবে?

আরো গোপন ডায়েরি :

হন্যতে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোপন ডায়েরি
আসব আগের দিন আজ যাই : মনমোহন সিংয়ের গোপন ডায়েরি
পুতুল প্রতিভা : মওদুদ আহমেদের গোপন ডায়েরি
চাণক্য নই : প্রণব মুখার্জির গোপন ডায়েরি
কই মাছের প্রাণ : এরশাদের গোপন ডায়েরি
এক বিয়োগ এক : খালেদা জিয়ার গোপন ডায়েরি
আমার জলবায়ু : শেখ হাসিনার গোপন ডায়েরি
টিপাইমুখ বাঁধ : দীপু মনির গোপন ডায়েরি

মাসুদ করিম

লেখক। যদিও তার মৃত্যু হয়েছে। পাঠক। যেহেতু সে পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে। সমালোচক। কারণ জীবন ধারন তাই করে তোলে আমাদের। আমার টুইট অনুসরণ করুন, আমার টুইট আমাকে বুঝতে অবদান রাখে। নিচের আইকনগুলো দিতে পারে আমার সাথে যোগাযোগের, আমাকে পাঠের ও আমাকে অনুসরণের একগুচ্ছ মাধ্যম।

১১ comments

  1. মাসুদ করিম - ২৫ আগস্ট ২০১৩ (৭:০৫ অপরাহ্ণ)

  2. মাসুদ করিম - ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ (৬:৪৬ অপরাহ্ণ)

  3. মাসুদ করিম - ১২ অক্টোবর ২০১৩ (১০:১১ পূর্বাহ্ণ)

    ভেবেছিলাম রাজাকারের পত্রিকার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক নির্বাচনী জরিপ নিয়ে একটিও কথা বলব না, কিন্তু প্রেসে অনএয়ারে যেরকম তোড়জোড় পড়ে গেছে এই জরিপ নিয়ে তাতে কিছু বলতেই হচ্ছে, এবং ঠিক করেছি অবশ্য পদ্য প্যারোডিতেই বলব:

    আল্লার দোহাই তোরা চুপ কর
    রাজাকারের কাজ করেছে রাজাকার
    জুতো সেলাই ছাড়া থাকে কোন চর্মকার

    * এখানে ‘রাজাকার’ শব্দটি প্রচলিত অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে মকর অভিধান-এর অর্থে [রাজা বানান যিনি — রাজাকার] ব্যবহৃত হয়েছে।

  4. মাসুদ করিম - ২ নভেম্বর ২০১৩ (৫:৫৩ অপরাহ্ণ)

  5. মাসুদ করিম - ২৬ নভেম্বর ২০১৩ (১২:১৯ অপরাহ্ণ)

  6. মাসুদ করিম - ৭ জানুয়ারি ২০১৪ (১:০২ পূর্বাহ্ণ)

  7. মাসুদ করিম - ৭ জানুয়ারি ২০১৪ (৪:৪২ অপরাহ্ণ)

    সুধাংশু তুই পালা

  8. মাসুদ করিম - ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (১১:২২ পূর্বাহ্ণ)

  9. Pingback: স্থান : নভেরা আহমেদের গোপন ডায়েরি | মাসুদ করিম

  10. মাসুদ করিম - ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (৯:১০ অপরাহ্ণ)

    আত্মমর্যাদা থাকলে মাহফুজ আনাম পদত্যাগ করতেন: হাসিনা

    প্রতিরক্ষা গোয়েন্দাদের সরবরাহকৃত তথ্য যাচাই না করে প্রকাশ করার কথা স্বীকার করে সমালোচিত জ্যেষ্ঠ একজন সম্পাদককে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কই, তিনি ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস তো দেখাতে পারলেন না। এতটুকু আত্মমর্যাদা থাকলে এর পরে নিশ্চয়ই তিনি পদত্যাগ করতেন।”

    সম্প্রতি একটি টেলিভিশন আলোচনায় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক প্রশ্নের মুখে বলেন, ২০০৭-৮ সালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর সরবরাহ করা ‘খবর’ যাছাই না করে ছাপানো ছিল তার সাংবাদিকতা জীবনের ‘বিরাট ভুল’।

    এরপর দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা একের পর এক মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে চলেছেন।

    সরকার সমর্থকদের মামলার ঢলের মধ্যেই সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে ১১ মাস কারাবন্দি থাকা হাসিনার বক্তৃতায় প্রসঙ্গটি উঠে আসে।

    আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ছদ্ম এই সেনা শাসনের প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রথম দিকে ডেইলি স্টার এবং তাদের সহযোগী বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর ভূমিকারও সমলোচনা করেন।

    সাংবাদিকতা ও সম্পাদকীয় নীতিতে ভুলের কারণে পদত্যাগের নজির তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মাহফুজ আনামকে পদত্যাগ করতে বলেন।

    তিনি প্রথম আলোরও কঠোর সমালোচনা করেন।

    সম্পাদকের ‘ভুলে’ বিবিসির সাংবাদিক, সম্পাদক ও মহাপরিচালকের পদত্যাগের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিবিসির মহাপরিচালক থেকে শুরু করে যারা যারা ওই সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে জড়িত তাদের সকলে পদত্যাগ করেছিলেন। তাদের সৎসাহস ছিল, পদত্যাগ করেছেন।

    ইরাক যুদ্ধের প্রাক্কালে সেখানে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার খবর প্রকাশকালে তথ্যের অতিরঞ্জন করা হয়েছিল মর্মে খবর প্রকাশ করে তোলপাড় করেছিলেন বিবিসির একজন সাংবাদিক।

    ওই খবরের সূত্রদাতার নাম প্রকাশ হয়ে গেলে বিজ্ঞানী ডেভিড কেলি আত্মহত্যাও করেছিলেন। এই বিতর্কের মধ্যে বিবিসি প্রধান সম্পাদকীয় প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটার দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।

    প্রধানমন্ত্রী সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে বলেন, “কিন্তু এই সম্পাদক (মাহফুজ আনাম) সাহেব উনি ডিজিএফআই এর লেখা ছাপিয়ে ভুল করেছেন বললেন। কিন্তু এই ভুলের খেসারত বাংলাদেশের জনগণ দিল, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিল, এদেশের ব্যবসায়ী মহল দিল, ছাত্র-সমাজ দিল, সকলে দিল, আর যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখেছে সেজন্য আমি-আমার পরিবার তো দিয়েছিই।”

    ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা গ্রহণের পর ‘অত্যাচার-নির্যাতনের’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জনকণ্ঠসহ দু’একটি পত্রিকা এ ঘটনা তুলে ধরেছে। অনেক পত্রিকায় কিন্তু বিএনপি জামায়াতের অত্যাচার- নির্যাতনের কথা লিখে নাই। তাদের কথা ছিল- সরকারকে সময় দিতে হবে।

    “তিন মাস সরকারের বিরুদ্ধে কিছুই লিখবে না। এমন দুটি পত্রিকার এই বক্তব্য- তাদের চরিত্র পরিবর্তন হয় নাই।”

    পত্রিকা দুটি প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কয়েক বছর ‘নিরপেক্ষ’ ছিল মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “এরপরে গোটা ২০টা বছর আমার রাজনীতি জীবনে এই পত্রিকা শুধু আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে গেছে। আমার বিরুদ্ধে লিখে গেছে।”

    ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে জরুরি অবস্থা জারির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাদের নির্বাচন দেওয়ার কথা তারা বেশ গেড়েই বসে গেল। আর তখন আমরা কি দেখলাম। রাজত্ব চালাচ্ছে কে?”

    ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে সহিংস দ্বন্দ্বের পর তৎকালীন বিএনপি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ নিজেই রাষ্ট্রপ্রধানের পাশাপাশি সরকারপ্রধানেরও দায়িত্ব নেন। সেসময় ইয়াজউদ্দীনের বিরুদ্ধে অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন ১০ উপদেষ্টার চারজন।

    এরপর বেসামরিক প্রশাসনের মুখোশে কার্যত সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে দেশে। জরুরি অবস্থা জারির পর প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।

    ধারণা করা হয় যে, বেসামরিক প্রশাসনের আড়ালে কলকাঠি নাড়তেন কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা।

    নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে ক্ষমতা আরোহনকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “যখন তারা ক্ষমতায় বসলো তখন তাদের ভিন্নরূপ দেখা গেল। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত কিভাবে করা যায়। আর এই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করবার জন্য ওই দুটি পত্রিকা আপ্রাণ উঠেপড়ে লেগে গেল তাদের সাথে।”

    প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সেসময়ের ভূমিকা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতোমধ্যেই আপনারা দেখেছেন একজন সম্পাদক, তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি যা লিখতেন, ডিজিএফআই যা দিত তাই লিখে দিতেন।

    “ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সরকারের আমলে হ্যাঁ, ডিজিএফআই খুব শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল। যে প্রশ্নটা কেউ করেনি। আমি করেছিলাম যে, দেশ চালায় কে? সরকার প্রধান কে? ওই ডিজিএফআইয়ের দুই ডাইরেক্টর ব্রিগেডিয়ার আমিন আর ব্রিগেডিয়ার বারী তারাই হয়ে গিয়েছিল হিরো, তারাই মনে হত যেন দেশ চালাতো।

    “কীভাবে তাদের হাতে ছাত্র-শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সকলেই তখন নির্যাতিন হয়েছে।

    “কে না নির্যাতিত হয়েছে? ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে টাকা নেয়া, অনেকেই দেশ ছাড়া, অনেকেই কারাগারে বন্দি।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর এর মদদটা দেওয়ার জন্য ওই ব্রিগেডিয়ার আমিন আর বারী যে কাগজ ধরিয়ে দিত সেই কাগজই ওই সম্পাদক সাহেক লিখে দিতেন পত্রিকায় এই কথা তিনি স্বীকার করে গেছেন।

    “সত্য কখনো চাপা দেওয়া যায় না, একসময় বেরিয়ে আসে। আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। কিন্তু আমার মাঝে মাঝে প্রশ্ন মনে জাগে। যে উনি বললেন, ডিজিএফআই যে কাগজ দিত সেই কাগজই ছাপাতো। তো সেই পত্রিকার উপরে লেখা থাকে নির্ভীক সাংবাদিকতা। তাহলে নির্ভীক সাংবাদিকতা কাকে বলে?

    “এতই নির্ভীক যে ডিজিএফআইয়ের ওই আমিন-বারীর ধরা কাগজ ছাপাচ্ছেন, একবার তাকাচ্ছেন না। তার অর্থ কী দাঁড়ায়? আমার প্রশ্ন এখানে। প্রশ্নটা হচ্ছে- এই ডিজিএফআইয়ের সাথে বা ব্রিগিডিয়ার আমিন আর বারীর সাথে উনার কি সখ্য ছিল? অথবা তিনি কি এদের হাতে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন, যে যা দিত তাই লিখতো।”

    প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “অথবা যে মাইনাস টু ফর্মুলার একটা ষড়যন্ত্র চলছিল, যে রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য বিদায় দেবে-সেই ষড়যন্ত্রের সাথে ওই সম্পাদকদ্বয় জড়িত ছিল। কোনটা সত্য?

    “যদি বুকের পাটা থাকে সাহস থাকে জাতির কাছে স্বীকার করেন। হয় ভয়ে লিখেছেন, তাহলে নির্ভীক সাংবাদিকতা থাকে না। আর যদি তাদের কাছে বিক্রি হয়ে থাকেন বা তাদের সখ্য থাকে সেখানে আমার কিছু বলার নেই।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “আর যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের যারা জড়িত গণতন্ত্র হত্যা করে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করেছিল। এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল, এই দেশের মানুষকে নির্যাতনের শিকার করেছিল।

    “যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে ঠিক সেইভাবে এদের একদিন সংবিধান ধ্বংস করার দায়ে বিচার করা হবে।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। এবং প্রতিদিন পত্রিকায় একটা একটা লেখা। যে দুর্নীতিবাজ আমাকে বানিয়েই ছাড়বেন।”

    পত্রিকা দুটির সাম্প্রতিক ভূমিকার সমালোচনা করে পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির প্রসঙ্গে টানেন প্রধানমন্ত্রী: “আমি সেই সম্পাদক মাহফুজ আনামকে একটা কথাই বলবো যে, দুর্নীতিবাজ বানাতে বহু চেষ্টা করেছেন আমাকে। আপনি তো আপনি, আপনার পিতৃতুল্য বিশ্ব ব্যাংক তারাও তো দুর্নীতিবাজ বানাতে চেষ্টা করে পারে নাই।

    “পদ্মা সেতু নিয়ে যখন কথা উঠেছিল। তখনোতো কত বড় বড় কথা। ভাবখানা এমন-এতদিন পারি নাই এবার ধরে ফেলেছি।”

    মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে বলেন, “তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মামলা হয়েছে বলে খুব হা-হুতাশ দুঃখ।”

    ওয়ান ইলেভেনের সময় নিজের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি, নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে হয়রানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “কিন্তু কারা এগুলিতে ইন্ধন দিয়েছে?

    “যারা এই মামলা দেওয়ার বিরুদ্ধে এত দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন-১১ মাস যদি আপনাদেরকে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়। আর যদি আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। আর যদি মিথ্যা অপবাদ দেয় হয়। তাদের পরিবারের প্রতি যদি এরকম করা হয় তাহলেও কি তারা বিবৃতি দেবেন? সহানুভূতি দেখাবেন? যারা আমাদেরকে ওই ধরনের বিপদে ঠেলে দিয়েছেন।

    “এ বিপদ শুধু আমার একার বিপদ ছিল না। এ বিপদ ছিল সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের বিপদ। এদের এই ক্ষমতার লিপ্সা একটা দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছিল। আজকে তাদের হয়ে এত বিবৃতি। একটু মালায়ই ঘাবড়ে গেলেন! আর জেলখানায় যদি ১১ মাস সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয় তাহলে কী হত?”

    জরুরি অবস্থায় রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা

    জরুরি অবস্থার মধ্যে মাহফুজ আনাম রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেন, “অনবরত প্রচেষ্টা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিংস পার্টি গঠন করতে গেল। কিংস পার্টি গঠন করতে গিয়ে সেখানেও ব্যর্থ। তারপরে একজন বিশ্বখ্যাত ব্যক্তির পার্টি করার শখ হল।

    “সে দায়িত্ব ওই সম্পাদক সাহেবই নিয়েছিলেন। ৭০ জনের তালিকা হয়েছিল। ফোন করলে কেউ সাড়া দেয় না। তার দলও হয় না।”

    তাদের মধ্যে হতাশা

    মাহফুজ আনামরা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা জন্ম নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

    তিনি বলেন, “এরপরে যদি আসি ২০১৪ সালের নির্বাচন। এই নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য ওই পত্রিকার কি ভূমিকা ছিল সেটাও আপনারা বিচার করে দেখবেন।

    “নির্বাচন যখন আমরা করে ফেললাম। আমি জানি তাদের মধ্যে হতাশা। হতাশা কারণ, একটা পতাকা পাবে তা আর হল না।”

    মুক্তিযুদ্ধে মাহফুজ আনামের ভূমিকা

    মুক্তিযুদ্ধে মাহফুজ আনামের কী ধরনের ভূমিকা ছিল তাও তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনা।

    বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ নস্যাৎ করার অনেক প্রচেষ্টা। যিনি আজকে এই কথাগুলি বিশেষ করে ডিজিএফআইয়ের কথাগুলি লিখেছেন তার ইতিহাস যদি বলি- মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় আমরা সবাই (মাহফুজ আনামও) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম। আমাদের পড়াশোনাতো নষ্ট হয়েছে।

    “কিন্তু ওই সম্পাদক করাচিতে চলে গিয়েছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানে- তার পড়াশোনা যাতে নষ্ট না হয়। যেকোনো কারণে হোক সেখানে না থেকে পরবর্তীতে চলে যায় কলকাতায়। একটু ইংরেজি জানত বলে তার ওপড় দায়িত্ব ইংরেজি লেখার। এই হল মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযোদ্ধা তিনি।”

    কাজেই তার থেকে এর বেশি আর কি আশা করবো- মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উচ্চশিক্ষার্থে পাকিস্তান হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাঠে গিয়ে শুধু ইংরেজি বলা আর লেখার কাজটা করেছিল।”

    ডিজিএফআইয়ের দালালির অভিযোগ

    শেখ হাসিনা বলেন, ওই ডিজিএফআই এর দালালি বা আমিন-বারীর দালালি করা যাদের চরিত্র তারা এ দেশ আর দেশের মানুষকে কী দেবে?

    “ডিজিএফআই এর দেওয়া কাগজ যদি লিখে থাকে তাহলে এতদিন যা লিখেছে সবই ভেজাল মার্কা, সবই অসত্য, সবই মিথ্যা এবং দেশকে ধ্বংস করা।

    নেতা-কর্মীদের সরব হওয়ার আহ্বান

    বক্তব্যে মাহফুজ আনামদের বিরুদ্ধে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মুখ খোলার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

    তিনি বলেন, “আমার দুঃখ হয়, আমাদের পার্টিতে কয়েকজন এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন। অনেকে দেখি মুখও খুলতে তাদের কেন যেন দ্বিধা। সত্য কথা বলতে কেন এত ভয়? ২০টা বছর তো আমার বিরুদ্ধে লিখেছে।”

    শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে, অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আজকে এখানে এসেছি এবং সাতটা বছর বাংলাদেশে সরকার পরিচালনা করে দেশকে আজকে খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণ করেছি। দারিদ্র্যের হার আমরা উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়েছি; সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করেছি।

    “আজকে বিশ্বে যে পাঁচটি দেশ উল্লেখযোগ্যহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ তার একটি। সারাবিশ্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।”

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা দেশপ্রেমিক, দেশকে ভালবাসে নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে এই চেতনা থাকবে যে, হ্যাঁ এই দলটি এ দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

    “বিশ্বে বাংলাদেশের যে মর্যাদা আজকে উচ্চস্থানে, যে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সেটা করতে পেরেছে কে? আমরা, আওয়ামী লীগ সরকার। তাদেরকে সাহায্য না করে, তাদের পক্ষে না লিখে নানারকম ঘোঁট পাকানোর চেষ্টা-আল্লাহর রহমতে সে চেষ্টা সফল হবে না।”

    “বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর এই সমস্ত দালালগুলি-বাংলাদেশের জনগণের হাতে তাদের বিচারের ভার আমি দিয়ে গেলাম।”

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.