ঐতিহাসিক মে দিবসের আলোচনায় অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস শ্রমিকদের নিয়ে নানা গালভরা গল্প শুনিয়েছে। কিন্তু গত আট মাসে তার অসাংবিধানিক শাসনামলেই কল-কারখানা বন্ধ হওয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়েছেন, বেতন-ভাতার দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গুলিতে নিহত হয়েছেন। শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য শ্রমিক নেতাদের আইন-বহির্ভূতভাবে আটক করা হয়েছে। বোনাস তো দূরের কথা, ঈদের আগে ন্যায্য বেতনটুকুও পাননি হাজার হাজার শ্রমিক। আর ইউনূস মে দিবসের গান শুনিয়ে তার তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীদের শেখাচ্ছে, কীভাবে প্রভুর দালালি করে যেতে হয়।

লেখাটি যখন লিখছি, তখনও ক্যালেন্ডারের পাতায় এপ্রিল মাসের শেষ দিনের শেষপ্রহর—পহেলা মে এখনও আসেনি। কিন্তু ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশের কর্পোরেট গণমাধ্যমগুলোতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের নানা বক্তব্য-বিজ্ঞাপন-কর্মসূচীর হৈ-হুল্লুড় চলছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঝুলানো হয়েছে মহান মে দিবসের গরম গরম ব্যানার। ওয়েবসাইটে ঢুকলেই অবৈধ ইউনূস সরকারের আমলে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশের মতো ব্যানারটি ঝুলে থাকে। তার পাশেই কানছোঁয়া হাসির ঠ্যালায় চোখ বুজে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টা—ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি; তার নিচেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের বেশ একটা সিনেম্যাটিক ক্লোজ পোর্ট্রেট। নিচে স্ক্রল যাচ্ছে—“শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে।”1 এরই মধ্যে টানা তিনদিনের ছুটির আমেজে মো মো করছে আমাদের নাগরিক সমাজের ভদ্রলোকের ড্রয়িংরুম—কেউ কেউ হয়তো বেশ জমানো একটি ট্যুর প্ল্যানও সেরে নিয়েছেন ক্যালেন্ডার দেখে। ফেসবুকে কয়েকটি ট্র্যাভেল গ্রুপের পেইজ ঘুরে দেখলাম—তিনদিনের ছুটিতে “মে দিবসের আকর্ষণীয় অফারে” কক্সবাজার, সিলেট কিংবা হাওড়ে বেড়ানোর বেশ তুলতুলে প্যাকেজ আইটেনারি ঘুরছে। আর এই ছুটির ছন্দে রাজনৈতিক ঘষাঘষিতে উৎসাহী হয়ে উঠেছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো—খবরে প্রকাশ, রাজধানীতে পর পর তিনদিনে ৪ দলের সমাবেশ2। ভাগ্যিস

১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে নির্বিচারে শ্রমিক হত্যা হয়েছিল, নাহলে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এমন Heyday কোথায় পেত? বোঝাই যাচ্ছে, বেশ একটা উদযাপন ভাব নিয়ে ইউনূস সরকার এবারের মে দিবস পালনে বদ্ধপরিকর হয়েছে। বিয়ের পর প্রথমবার বেড়াতে যাওয়ার মতো ইউনূস সরকারের প্রথমবার মে দিবস উদযাপন। নিশ্চয়ই আগামীকাল সংবাদপত্রে প্রধান উপদেষ্টার বেশ কিছু সরকারি বাণী প্রচারিত হবে। সরকারি আয়োজনে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা বিষয়ক বেশ কিছু দরকারি কথা বলবে আমাদের নোবেলবাবু। আমাদের নাতিশীতোষ্ণ মিডিয়া সেগুলো প্রচার করবে অক্ষরে অক্ষরে—একেবারে মেপে: একটু বেশিও নয়, একটু কমও নয়—কম-বেশি হলেই কিন্তু সাংবাদিকের চাকরি যাবে3। এসব ঝা চকচকে ঘটনাবলীর মধ্যে অবশ্য জানা যাবে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ড. ইউনূস যে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ দেয়নি—তার কী হলো; জানা যাবে না, ১০১ জন শ্রমিকের যে চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি4—তাঁরা এখন কেমন আছেন? অবশ্য সেই মামলা এখন আর নেই—ক্ষমতা গ্রহণের আগের দিন (৭ আগস্ট ২০২৪) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ড বাতিল করে5 সাফসুতরো সাজার মেকাপ নিয়েই মসনদে বসেছে…

১.দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএ ইন্ডস্ট্রীয়াল পুলিশের দাবী করে আসছিল, এখন তার সাথে যোগ হয়েছে বিশেষ ইন্ডাস্ট্রীয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। এর অর্থ ওই পুলিশ এবং আদালত দ্রুত গার্মেন্ট শ্রমিকদের "অপরাধ" দমন করবে বা বিচার করবে। ২.কোরিয়া-জাপানের চাপে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করতে হয়েছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সেই অধিকার দিতে চাইছে সরকার, কিন্তু বেঁকে বসেছে বিজিএমইএ! ৩.বিশেষ পুলিশ, বিশেষ আদালত চালু হওয়া মানে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরকারের সরাসরি কনফ্রন্টেশন! সরকার-গার্মেন্ট মালিকরা কি শ্রমিকদের "যুদ্ধে পরাস্ত" করে হাত-পা বেঁধে উৎপাদনে বাধ্য করতে যাচ্ছে? ৪.আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী এটা কি মানবাধীকার লঙ্ঘন নয়? এর ফলে কি এক দেশের ভেতরেই আর এক "মিনি দেশ" কল্পনা করে শ্রমিক-মালিক-সরকার সম্মূখ সমরে লড়াই শুরু করতে যাচ্ছে না? ৫.ক্রমাগত বিশ্বমন্দায় বন্ধ হতে থাকা গার্মেন্ট শিল্প কি এতে করে বিকাশ লাভ করার বদলে ধ্বংস হয়ে যেতে বসবে না? এই নির্মম বাস্তব প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের জানা নেই। আমাদের আশঙ্কা গার্মেন্ট শিল্প হয়ত স্থায়ীভাবে ডেস্ট্রয় হতে চলেছে! গত কিছুদিন ধরে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠেছে আশুলিয়া। আর আশুলিয়া শিরোনাম হয়ে ওঠার মানেই সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ অথবা শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনের বীরদর্পি চিত্রাবলি। রাজনীতির খোল-নলচে বদলে যাওয়ার আগে আমাদের ছাত্ররা তাদের নিজস্ব দাবী-দাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় দাবী-দাওয়া নিয়েও বিক্ষোভ বিদ্রোহ দেখাত। সেই বিক্ষোভ বা বিদ্রোহ দমনও করা হতো। তখনো যারা এই বিক্ষোভ দমনের কাজ করত এখনো তারাই অর্থাৎ সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই বিক্ষোভ দমনের কাজ করছে। তখনকার সাথে এখনকার মোটাদাগের পার্থক্য হলো তখন বিক্ষোভকারীদের নিজেদের শ্রেণী অথবা নিজেদের সমাজের মানুষ ভেবে পুলিশ চরম হঠকারী হতে পারত না। আর এখন পারে। খুব ঠান্ডা মাথায়ই পারে। এর কারণ কি? শ্রমিক এবং ছাত্র বা শিক্ষার্থী উভয়েই কি এদেশেরই সন্তান নয়? তারপরও কেন এখন শ্রমিকের উপর বিক্ষোভ দমনের নামে পোড়ামাটি নীতি প্রয়োগ করা হয়? সেটা কি শুধুই শ্রমিকরাও সহিংস হয়ে উঠেছে সে কারণে? নাকি সমগ্র ব্যাপারটা এখন শ্রেণীশাসন আর শ্রেণীশোষণের মাত্রায় নির্ধারিত হচ্ছে? জানা কথা রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এই মাসে সবার মত গার্মেন্ট শ্রমিকদেরও অন্যান্য মাসের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয়ভার মেটাতে হবে। তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই রমজানে আর সকলের মত একটু ভাল খাওয়া-দাওয়ার আশা করতেই পারে। এই মাসেই তারা চাইতেই পারে তাদের…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.