ঐতিহাসিক মে দিবসের আলোচনায় অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস শ্রমিকদের নিয়ে নানা গালভরা গল্প শুনিয়েছে। কিন্তু গত আট মাসে তার অসাংবিধানিক শাসনামলেই কল-কারখানা বন্ধ হওয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়েছেন, বেতন-ভাতার দাবিতে রাস্তায় আন্দোলন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গুলিতে নিহত হয়েছেন। শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য শ্রমিক নেতাদের আইন-বহির্ভূতভাবে আটক করা হয়েছে। বোনাস তো দূরের কথা, ঈদের আগে ন্যায্য বেতনটুকুও পাননি হাজার হাজার শ্রমিক। আর ইউনূস মে দিবসের গান শুনিয়ে তার তল্পিবাহক বুদ্ধিজীবীদের শেখাচ্ছে, কীভাবে প্রভুর দালালি করে যেতে হয়।

লেখাটি যখন লিখছি, তখনও ক্যালেন্ডারের পাতায় এপ্রিল মাসের শেষ দিনের শেষপ্রহর—পহেলা মে এখনও আসেনি। কিন্তু ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ দেশের কর্পোরেট গণমাধ্যমগুলোতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের নানা বক্তব্য-বিজ্ঞাপন-কর্মসূচীর হৈ-হুল্লুড় চলছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঝুলানো হয়েছে মহান মে দিবসের গরম গরম ব্যানার। ওয়েবসাইটে ঢুকলেই অবৈধ ইউনূস সরকারের আমলে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশের মতো ব্যানারটি ঝুলে থাকে। তার পাশেই কানছোঁয়া হাসির ঠ্যালায় চোখ বুজে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টা—ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবি; তার নিচেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনের বেশ একটা সিনেম্যাটিক ক্লোজ পোর্ট্রেট। নিচে স্ক্রল যাচ্ছে—“শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে।”1

এরই মধ্যে টানা তিনদিনের ছুটির আমেজে মো মো করছে আমাদের নাগরিক সমাজের ভদ্রলোকের ড্রয়িংরুম—কেউ কেউ হয়তো বেশ জমানো একটি ট্যুর প্ল্যানও সেরে নিয়েছেন ক্যালেন্ডার দেখে। ফেসবুকে কয়েকটি ট্র্যাভেল গ্রুপের পেইজ ঘুরে দেখলাম—তিনদিনের ছুটিতে “মে দিবসের আকর্ষণীয় অফারে” কক্সবাজার, সিলেট কিংবা হাওড়ে বেড়ানোর বেশ তুলতুলে প্যাকেজ আইটেনারি ঘুরছে। আর এই ছুটির ছন্দে রাজনৈতিক ঘষাঘষিতে উৎসাহী হয়ে উঠেছে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো—খবরে প্রকাশ, রাজধানীতে পর পর তিনদিনে ৪ দলের সমাবেশ2। ভাগ্যিস ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে নির্বিচারে শ্রমিক হত্যা হয়েছিল, নাহলে ২০২৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এমন Heyday কোথায় পেত?

বোঝাই যাচ্ছে, বেশ একটা উদযাপন ভাব নিয়ে ইউনূস সরকার এবারের মে দিবস পালনে বদ্ধপরিকর হয়েছে। বিয়ের পর প্রথমবার বেড়াতে যাওয়ার মতো ইউনূস সরকারের প্রথমবার মে দিবস উদযাপন। নিশ্চয়ই আগামীকাল সংবাদপত্রে প্রধান উপদেষ্টার বেশ কিছু সরকারি বাণী প্রচারিত হবে। সরকারি আয়োজনে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা বিষয়ক বেশ কিছু দরকারি কথা বলবে আমাদের নোবেলবাবু। আমাদের নাতিশীতোষ্ণ মিডিয়া সেগুলো প্রচার করবে অক্ষরে অক্ষরে—একেবারে মেপে: একটু বেশিও নয়, একটু কমও নয়—কম-বেশি হলেই কিন্তু সাংবাদিকের চাকরি যাবে3। এসব ঝা চকচকে ঘটনাবলীর মধ্যে অবশ্য জানা যাবে না, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ড. ইউনূস যে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ দেয়নি—তার কী হলো; জানা যাবে না, ১০১ জন শ্রমিকের যে চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি4—তাঁরা এখন কেমন আছেন? অবশ্য সেই মামলা এখন আর নেই—ক্ষমতা গ্রহণের আগের দিন (৭ আগস্ট ২০২৪) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ড বাতিল করে5 সাফসুতরো সাজার মেকাপ নিয়েই মসনদে বসেছে ইউনূস।

কিন্তু ড. ইউনূসের এই চড়া মেকাপের সস্তা স্ট্যান্ডআপ কমিডি শো-তে প্রতিদিন নতুন করে রক্তের লাল লাল ছোপ এসে জমছে। প্রধান উপদেষ্টা লালের পাহারাদার—তাই রঙটায় যেন লালের কমতি না পড়ে, সে জন্য তিনি ও তার সভাসদেরা টা টাট্কা রক্তের রিকুইজিশন দিয়ে চলেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকেই তাই সারাদেশে চলছে রক্তের হোলিখেলা—শ্রমিকের রক্ত, নারী-পুরুষ-শিশুর রক্ত, গণমাধ্যমকর্মীদের রক্ত, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রক্ত, চিকিৎসকদের রক্ত, শিল্পী-সাহিত্যিকদের রক্ত, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রক্ত, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের রক্ত, মুক্তিযোদ্ধার রক্ত, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলের কর্মীদের রক্ত…এভাবেই যমুনায় রক্তপ্রবাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে গত আটমাস ধরে। মে দিবসে উপদেষ্টারা নিশ্চয়ই খুব কেতাবি কায়দায় বক্তৃতা ঝাড়বেন মঞ্চে। নিশ্চয়ই “শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট ছিল” বলতে বলতে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ কেঁদে ফেলবেন, আমলাদের কেউ কেউ ঢলে পড়বেন, সিপিবি-বাসদ বা এই জাতীয় নাম-না-জানা বেশকিছু রাজনৈতিক তোতাপাখিরা কিংবা ট্রেড ইউনিয়ন বা সমগোত্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলো সারাদিন দুনিয়ার মজদুরদের এক হতে বলে বলে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে রাতে নিজেরাই ঘুমিয়ে পড়বেন যার যার মাইক্রোফোনকে কোলবালিশ বানিয়ে।

এইসব অর্থগৃধ্নু ও ক্ষমতালিপ্সুদের কেউই কিন্তু বলবে না যে, গত আট মাসে অবৈধ ইউনূস সরকারের অসাংবিধানিক শাসনামলে শ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। কেউই প্রশ্ন তুলবে না, কেন এসব ঘটনার প্রায় কিছুই প্রথমদিকে প্রকাশ পায়নি দেশের কর্পোরেট গণমাধ্যমগুলোতে। কেউ জানতে চাইবেন না গত আট মাসে কতগুলো শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে আর কতজন শ্রমিক বেকার হয়ে নিঃস্ব জীবনযাপন করছেন। কতজন শ্রমিক বা শ্রমিক পরিবারের সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা কী—তার কোনো হদিশই নেই আমাদের “আমরাই বিকল্প” জেনারেশনের কাছে।

ফায়ার সার্ভিসের ড্রোনে তোলা আগুনে পুড়তে থাকা গাজী টায়ার কারখানার ছবি। ছবিসূত্র: বিবিসি বাংলা

গাজী টায়ার কারখানায় আগুন: সরকারি মদদে শ্রমিকহত্যা

২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট রাত নয়টায় রূপগঞ্জের তারাবো রূপসী এলাকার গাজী টায়ার কারখানায় আগুন লাগানো হয়6। এর মাত্র ২০ দিন আগেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জুলাই ষড়যন্ত্রের জেরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে7। ৫ আগস্টের পর থেকেই সারাদেশে শুরু হয় জামাত-শিবির-বিএনপি-জঙ্গীদের আওয়ামী লীগ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ আর সনাতন ধর্মাবলম্বী নিধনযজ্ঞ8। শুধু হত্যা, নির্মম নির্যাতন আর নির্বিচারে মামলা দেওয়াই9 নয়; সারাদেশে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সমন্বয়ক ও জামাত-শিবির-বিএনপির নেতা-কর্মীরা শুরু করে লুটপাট আর ডাকাতি10

আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘গাজী টায়ার’। আগুন লাগানোর আগের দিন, অর্থাৎ ২৫ আগস্ট, গ্রেফতার করা হয় গাজী গোলাম দস্তগীরকে11। তাঁর গ্রেফতারের সংবাদটি প্রকাশ পেতেই মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে কারখানায় লুটপাট চালানো হয়12, নির্বিচারে হত্যা করা হয় শ্রমিকদের—আর তারপর প্রমাণ লোপাটের জন্যই কারখানায় আগুন দেয় জুলাই-আগস্ট সন্ত্রাসপন্থীরা13। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে ইউনূস সরকার এই কারখানার আগুন নিভানোর ক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি—কারণ, এটা আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্যের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকদের জীবনের কোনো মূল্যই ছিল না সরকারের কাছে, সরকার-সমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের কাছে। ফলে আগুন লাগার ৪ দিন পরও কোনো উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেনি সরকার14

গাজী টায়ার কারখানার আগুনে ঠিক কতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন—তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য সঠিক সংখ্যা সরকার আমাদের জানাতে পারেনি। অধিকাংশ কর্পোরেট মিডিয়াই খবরগুলোর কোনো ফলো-আপ রাখেনি। একমাত্র বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম এ সংক্রান্ত সংবাদগুলো কিছুটা বিস্তারিত প্রচার করেছিল। তাছাড়া বিবিসি বাংলা একটি সরজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল15প্রথম আলো দ্য ডেইলি স্টার যথাক্রমে তাদের অনলাইন ও বাংলা সংস্করণে খবর রাখলেও, ২৬ আগস্ট দুটো পত্রিকার কোনোটিই তাদের ছাপা সংস্করণে এ বিষয়ক কোনো সংবাদই রাখেনি। প্রসঙ্গত মনে করা যেতে পারে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল মর্মান্তিক রানা প্লাজা ধ্বসের পর নিহত শ্রমিকদের জন্য অন্যান্য গণমাধ্যমের মতোই এ দুটো পত্রিকাও প্রায় আড়াই সপ্তাহ টানা বেশ জোরালো প্রতিবেদন, ফলো-আপ, উপ-সম্পাদকীয়, ফিচার, গোলটেবিল ইত্যাদি অব্যাহত রেখেছিল—এমনকি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিদেশি মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছিল। তার সাথে বাংলাদেশের ছবিওয়ালাদের আবেগমথিত রমরমা ফটোগ্রাফি পুরস্কার তো ছিলই।

কিন্তু গাজী টায়ার কারখানায় আগুনে নিহত শ্রমিকদের বিষয়ে গণমাধ্যম, ছবিওয়ালা, শ্রমিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন—কারোরই কোনো ভ্রক্ষেপ ছিল না। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—যদিও ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে অবস্থানকারীদের পক্ষে ফেসবুক-এক্স বা ইউটিউবে নিহত শ্রমিকদের বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে; কেননা সারাদেশে তখন চলছে হত্যা, হামলা আর মামলার মহোৎসব। তবুও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেই আমরা এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্যগুলো জানতে পারি।

সরকার ২৭ আগস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল এই “নাশকতার সূত্রপাত ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে”16। কিন্তু ৩২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ীদের চিহ্নিতই করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। অতএব, বিচারের তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। যে ঘটনায় দায়ীই নয় কেউ, সে ঘটনায় আর বিচার কীসের? আবার তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নিহত’ শব্দটি ব্যবহার না করে লেখা হয়েছে—“…১৮২ জন নিখোঁজ…”17 —হায় রে শ্রমিকের ভাগ্য! আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলে ইউনূস সরকার তোমাকে ‘নিখোঁজ’ ঘোষণা দেয়।

১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেয় অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কতগুলো কেতাবি বক্তব্য দিয়ে দায় সারে প্রধান উপদেষ্টা—অবশ্য দখলদারের আর কী-ই-বা দায় থাকে দেশের প্রতি? গাজী টায়ার কারখানায় পুড়িয়ে শ্রমিকহত্যার বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি সে ভাষণে। একজন কুটিল বেনিয়ার মতো পুরো ভাষণে সে শুধু কারখানা খোলা রেখে অর্থনীতি সচল রাখার হুংকার ঝাড়ে18।  

এখন রাজা যদি দু নম্বর হয়, পারিষদ-দল তো তবে চার নম্বর হওয়ার কথা। হয়েছেও তাই। গাজী টায়ারের কারখানায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে লুটপাট, শ্রমিক হত্যা ও অগ্নিসংযোগ করে মানুষ পোড়ানোর পরও এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্যই করেননি আমাদের বরাবরের সুশীল সমাজ। একে তো তারা তখন ইউনূসের নানা ধরনের সংস্কারি কমিটি-উপকমিটিতে ঢুকতে ব্যস্ত, দ্বিতীয়ত তারা সকলেই তো জানে—এ আগুন কারা লাগিয়েছে। যে জামাত-শিবির আর জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো জুলাই সন্ত্রাস চালিয়ে ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তারাই তো এখানে হত্যাকারী। এখন দৃক, পাঠশালা, কাউন্টার ফটো, ফটোফি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার বা নানা ধরনের এনজিও, বামপন্থী রাজনৈতিক ক্লাবসমূহ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো কি তাদের নিয়োগকর্তা জামাত-শিবির-জঙ্গীগোষ্ঠী পিতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবে? গেল ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের নিয়ে তারা নানা ধরনের অনুষ্ঠান করলেন, কিন্তু রূপগঞ্জের গাজী টায়ার কারখানায় যে শত শত শ্রমিক হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে মারলো—এ বিষয়ে কিন্তু তাদের মুখে রা নেই। কারণ তারা সকলেই শ্রমিক হত্যাকারী ইউনূস সরকারের সুবিধাভোগী—শ্রমিক, শ্রমিকহত্যা কিংবা শ্রমিকের অধিকার এখানে উপলক্ষ মাত্র।

শ্রমিকের ন্যায্য দাবির আন্দোলন ও ইউনূস সরকারের শ্রমিকহত্যা

ইউনূস সরকারের গত ৮ মাসে বাংলাদেশে নির্মম নির্যাতন আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন শ্রমিকরা। অধিকাংশ ঘটনার খবরই প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়। পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশ মেনে দেশের কর্পোরেট মিডিয়াগুলো এ বিষয়ক সংবাদ প্রচার করে—যদিও এসব সংবাদে শ্রমিকহত্যার বিচার বা শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য থাকে না।

  • সেপ্টেম্বর ২০২৪: শ্রমিক শোষণ, শ্রমিক নির্যাতন

পুরো সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই সাভার শিল্পাঞ্চলে একের পর এক বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন তৈরি পোষাক কারখানা। যদিও গণমাধ্যমগুলোতে এসব কারখানা বন্ধের দায় একতরফাভাবে চাপানো হয়েছে ন্যায্য দাবিতে রাস্তায় নেমে আসা শ্রমিকদের ওপর, কিন্তু মূল কারণটি রাজনৈতিক। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সমন্বয়ক-জামাত-শিবির-বিএনপি ও অন্যান্য জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্যরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়িদের কারখানা দখল শুরু করে। কোনো কোনো কারখানা মালিকদের কাছে দাবি করে মোটা অঙ্কের চাঁদা। এসব সরকারি অপকর্মের সাথে বামপন্থী শ্রমিকনেতারাও নিজ নিজ ভাগের টাকা তুলতে ব্যস্ত। ফলে অনেক কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দিতে পারে না। কিন্তু শ্রমিককে তো সংসার চালাতে হবে—তাই পাওনা বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন শ্রমিকরা।

শ্রমিক আন্দোলন দমনে ইউনূস সরকারের চাপ প্রয়োগ করতে থাকে মালিকদের ওপর। যেখানেই বেতন-ভাতার দাবিতে পথে নেমেছেন শ্রমিকরা, সরকার পাওনা না মিটিয়ে বা দাবি না মেনে উল্টো আশেপাশের সকল কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা শ্রমিক বিদ্রোহ দমনের পাঁয়তারায় নামে। ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, “শ্রমিক অসন্তোষের কারণে” গাজীপুর ও আশুলিয়ায় ১৮৩টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসব কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে সরকার প্রকৃত যুক্তি-তথ্য না দিয়েই নির্বিচারে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারার প্রয়োগ ঘটিয়েছে19

সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে গণমাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষের যেটুকু সংবাদ পাওয়া যায়, তাতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দশদিনে দেশের ছয়টি জেলায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গাজীপুরে ২৩৪টি, ঢাকায় ১৬৮টি, নারায়ণগঞ্জে ৩৯টি, ময়মনসিংহে ২১টি, চট্টগ্রামে ১৯টি, পাবনায় ২টি ও নরসিংদীতে ১টি শ্রমিক বিক্ষোভের সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়20

এসব শ্রমিক অসন্তোষে অবৈধ ইউনূস সরকারের তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা নানা ধরনের গেরেমভারি গল্প শুনিয়েছিল গণমাধ্যমে। যে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে এই ইউনূস সরকার যেমন বুঝে না-বুঝে তথাকথিত “জুলাই স্পিরিট” সামনে আনে, এক্ষেত্রেও শ্রম উপদেষ্টা তা-ই করেছিল। প্রথম আলো তার একটি বক্তব্য ছেপেছিল শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে সে বলেছিল,

আমরা মানুষের মধ্য থেকে এসেছি। এসেছি মিছিল থেকে। আমরা মাঠপর্যায়ে (কারখানা) যাব। শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।21

কিন্তু এই আবেগসর্বস্ব ইউটোপিয়ান কথায় শ্রমিকদের পেটে ভাত জোটেনি, তারা বকেয়া বেতন পায়নি। ফলে দেশজুড়ে শ্রমিকদের প্রতিবাদও থামেনি। শুধু জেন জি’দের মতো করে শ্রমিকরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলতে পারেননি, “নাটক কম করো পিও।”

সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ন্যায্য পাওনার দাবিতে যখন একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশব্যাপী, যখন ইউনূস সরকারের কোলে ওঠা “শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট ছিল” জিকির তোলা তথাকথিত বামপন্থী শ্রমিকনেতাদের আর বিশ্বাস করছেন না শ্রমিকরা, যখন রাষ্ট্রীয় বাহিনী ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েও বন্ধ করতে পারেনি শ্রমিকদের আন্দোলন; তখনই বেরিয়ে আসে ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের আসল চেহারা। শ্রমিক-মালিকদের মুখোমুখি দাঁড় করাতেই মালিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে মামলা করানো হয় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। গাজীপুর-আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষ দমনে মোট ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, “এসব মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৯১০ জনকে আসামী করা হয়।”22 কেবল মামলা দেওয়াই নয়, রাতারাতি গ্রেফতার করা হয় ৩৬ জনকে23

অথচ এ কথা সবসময়ই সত্য যে, শ্রমিক কখনোই তাঁর কাজের জায়গায় আগুন দেন না। কারণ, কারখানার জন্য মালিকের তো ইন্সুরেন্স করা থাকে কিন্তু শ্রমিকের পেটের ক্ষুধার তো কোনো ইন্সুরেন্স নেই। একজন শ্রমিক জানেন, এই কারখানা থেকেই তাঁর খাবার আসে; তাই তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, মিছিল করেন, রাস্তা অবরোধ করেন; কিন্তু তাঁর রিযিকের অবলম্বনে আগুন দেন না।

তবুও গত বছরের সেপ্টেম্বরে যতগুলো কারখানায় আগুন লাগানো হয়েছে, প্রায় সবগুলোর ক্ষেত্রেই মামলার আসামী করা হয়েছে শ্রমিকদের। ১১ সেপ্টেম্বর বিগ বস ফ্যাক্টরিতে যে আগুন লাগে, শ্রমিকরাই তো নিজ নিজ ফেসবুক একাউন্টে সে ভয়াবহতার ভিডিও আপলোড করে আগুন নিভানোর জন্য সাহায্য চেয়েছেন।

শ্রমিকদের সূত্রেই পাওয়া গেছে এই ভিডিও। অথচ সরকারি নানা মহল আর ইউনূসের চাটুকাররা সবখানেই ‘অপশক্তির’ ভূত দেখেছে। (ভিডিও সূত্র: ফেসবুক)

কিন্তু মামলা করেও যখন আন্দোলন দমন করতে পারেনি সরকার, তখনই তারা গুলি চালায় আন্দোলনরত শ্রমিকের ওপর। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ দুপুরে অবৈধ ইউনূস সরকারের যৌথবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায় শ্রমিকদের ওপর। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ম্যাঙ্গোটেক্স লিমিটেডের অপারেটর ২৬ বছর বয়সী কাউসার হোসেন খান। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ৩০জন শ্রমিক24

যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত শ্রমিক কাওসার মিয়ার স্বজনের আহাজারি। (ছবি সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার)

হত্যার পর ইউনূসের অসাংবিধানিক সরকার একজন ২৬ বছর বয়সী তরুণ শ্রমিকের জীবনের দাম ঠিক করেছিল “১৩ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ”। শুধু তা-ই নয়, যৌথবাহিনীর হত্যাকান্ডকে জায়েজ করতে তারা শ্রমিকদের “গুজব সৃষ্টিকারী” হিসেবেও আখ্যা দেয়। এই হলো তাদের তথাকথিত “জুলাই স্পিরিট”—যা ব্যবহার করে এখনও তারা মাছের মায়ের পুত্রশোক করে থাকে। যে সরকার দাবি করে “জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে” সে ক্ষমতায় এসেছে, দায়িত্ব নেওয়ার দু মাস না যেতেই তারা শ্রমিকহত্যা করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। শুধু হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, এই হত্যাকান্ড জায়েজ করার জন্য নির্লজ্জের মতো সংবাদ সম্মেলনও করেছিল।

একজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা এর দায় চাপায় শ্রমিকদের ওপরই, ‘গুজব’ ছড়ানোর দাবি তুলে হত্যাকান্ডকে জায়েজ করে। শুধু তাই নয়, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের ক্ষেত্রে যে শ্রম আইনকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়, সেই আইনকেই এখন তারা শ্রমিকের দাবি মানার ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। (ভিডিও সূত্র: সময় টেলিভিশন)
  • অক্টোবর ২০২৪: মিরপুরে আবারও শ্রমিক হত্যা

সেপ্টেম্বরের শেষদিনে নিহত শ্রমিক কাওসারের জন্য তাঁর সহকর্মী-স্বজনদের প্রতিবাদ অক্টোবর মাসেও জারি থাকে। কেননা, শ্রমিকদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি, উল্টো গুলি চালিয়ে শ্রমিকহত্যার মাধ্যমে ইউনূস সরকার আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল। যে দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন শ্রমিকরা, তার সাথে যুক্ত হয়েছিল নিহত কাউসারের হত্যাকারীর বিচারের দাবি। কিন্তু আশ্চর্যের ঘটনা হলো, যৌথবাহিনীর গুলিতেই শ্রমিক কাউসার নিহত হয়েছেন—এমন তথ্য একাধিক গণমাধ্যম বিভিন্ন বরাতে জানালেও এ প্রশ্নটি কেউ করলো না যে, এ হত্যাকান্ডে কি কোনো মামলা হয়েছে? কোনো সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তাহলে কি শ্রম উপদেষ্টার “দুঃখিত” বলাটাই কাউসার হত্যাকাণ্ডের বিচার? একজন মানুষ গুলিতে নিহত হলেন, এ নিয়ে কোনো মামলা হবে না? যৌথবাহিনীর এত ক্ষমতা! ইউনূস সরকারের আমলে শ্রমিকহত্যা এতটাই ফ্রি স্টাইল!

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ ঘটনায় আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররা, শ্রমিকদরদী লেখক-শিল্পী-গাতকরা একেবারেই চুপচাপ। একসময় ভ্যালেন্টাইন ডে-তেও যারা শ্রমিক অধিকার নিয়ে কলম চালাতেন, ইউনূস সরকারের বাহিনীর গুলিতে কাউসারের হত্যাকান্ডের পর তারা এ সামান্য প্রশ্নটিও তুললেন না—মামলা হয়েছে কি না?

ইউনূসের শাসনামলে “জুলাই চেতনায়” বলিয়ান হয়ে যেহেতু চাইলেই গুলি করা যায়, শ্রমিক মেরে “দুঃখিত” বলে ১৩ লক্ষ টাকায় গল্প পাল্টানো যায়—তাই শ্রমিক হত্যায় আর বাধা কোথায়? সারাদেশে গত আটমাসে যেভাবে রাজনৈতিক কর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষসহ যার সাথে মতে মিলছে না তাকেই হত্যা করার নজির তৈরি হয়েছে—সেখানে আন্দোলনরত শ্রমিকের লাশ পড়বে প্রতিমাসে—এ তো স্বাভাবিক কথা!

ঘটেছেও তাই। সেপ্টেম্বর মাসের মতো পুরো অক্টোবর মাসজুড়েও সারাদেশে চলে শ্রমিক অসন্তোষ। দেশের কর্পোরেট মিডিয়া আর ইউনূসেক্সুয়াল বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে শ্রমিক কাউসার হত্যাকান্ডকে যখন সরকার জায়েজ করে ফেলতে পেরেছিল, তখন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নির্যাতন দিনকে দিন বাড়তেই থাকে। তারই চূড়ান্ত প্রতিফলন পাওয়া যায়, ৩১ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে—যেখানে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত পোষাক শ্রমিকদের ওপর ইউনূস সরকারের নির্দেশে চড়াও হয় যৌথবাহিনী। গুলিবিদ্ধ হন দুজন শ্রমিক—১৮ বছর বয়সী আল আমিন ও ১৫ বছর বয়সী ঝুমা আক্তার25

শুধু গুলি চালিয়েই সরকার সন্তোষ্ট হতে পারেনি, এ ঘটনায় তারা ৫০০ শ্রমিককে আসামী করে মামলাও করে26। তবে এই মামলার সংবাদটি পরিবেশনে বাংলা ট্রিবিউন শ্রমিকদের গলা টিপে ধরার ইউনূসীয় কৌশলকে জায়েজ করতে বেশ চমৎকার একটি প্রতিবেদনভাষ্য তৈরি করে। প্রতিবেদনের এক জায়গায় কোনো ধরনের সূত্র উল্লেখ না করেই গণমাধ্যমটি আমাদের জানায়,

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুর ১৪ নম্বর-সংলগ্ন পুরোনো কচুক্ষেত এলাকার প্রধান সড়কের পাশে ক্রিয়েটিভ ডিজাইনারস লিমিটেড (সিডিএল) নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ‘কাজ না করলে বেতন নয়’ নোটিশ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।27

প্রতিবেদনটি পড়লেই পাঠকের মনে হবে, শ্রমিকগুলো কী ছোটোলোক রে বাবা! কাজ করবে না আবার বেতন চাইবে! প্রশ্ন হলো, এজন্যই যে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন, এ কথা পত্রিকাটির প্রতিবেদক কার কাছে শুনলেন? কোনো শ্রমিক বলেছেন? আর আন্দোলনের দাবি তো ছিল বকেয়া বেতন আদায়। দু তিন মাস ধরে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না, তখন তাঁরা কাজ করেননি?

এই হলো নোবেল বিজয়ীর পার্সেপশন তৈরির সাংবাদিকতার ক্লাশ—যেখানে পক্ককেশীরা হয়ে যান গীতিহারা। এবার অবশ্য শ্রমিকের ওপর গুলি চালানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো সাফাই গাইতে হয়নি, বরং সরকারি পোষ্য মিডিয়াগুলো সানন্দে সে দায়িত্ব গ্রহণ করে নিয়েছে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর মিরপুরে শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে ড. ইউনূসের ফ্যানবয় মিডিয়া দ্য ডেইলি স্টার একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মনোলোগধর্মী এ প্রতিবেদনে অর্থনীতি, রপ্তানী আয়, বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ সবই আছে—শুধু নেই একমাস আগে নিহত কাউসার হত্যার বিচারের প্রসঙ্গ, এমনকি গুলিবিদ্ধ দুজন শ্রমিকের নামও। ইউনূস সরকারের মিডিয়া আমাদের শিখিয়েছে, বড়োলোকদের মনোলগী সাংবাদিকতায় ছোটোলোক শ্রমিকদের নামও থাকতে নেই।

ভিডিও সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার বাংলা
  • নভেম্বর ২০২৪: শ্রমিক নির্যাতন চালিয়েই গেছে ইউনূস সরকার

তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন নভেম্বর মাসে অন্যান্য ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়ে। পোশাক রপ্তানি খাতই যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা, তাই এই শিল্পের শ্রমিকদের নিপীড়নের প্রসঙ্গই বারবার এসেছে। নভেম্বর মাসে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন চলমান থাকে। ১৫ নভেম্বর বকেয়া বেতন না দিলে কারখানার মালিকদের কালো তালিকাভুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা।

(ভিডিও সূত্র: সময় টেলিভিশন)

কিন্তু সরকার-শ্রমিক ভাই ভাই নীতি অবলম্বন করে ইউনূসের অবৈধ সরকার দমনের নতুন কৌশল খুঁজতে থাকে। শিশু উপদেষ্টা আসিফ যেহেতু ঘটনা সামাল দিতে পারছে না, তাই দপ্তরের বদল ঘটানো হলো। ১০ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন প্রথম থেকেই পিংপং উপদেষ্টা হয়ে থাকা সামরিক ব্যক্তিত্ব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

১৯ নভেম্বর রিকশাচালকগণও নিজেদের বঞ্চনার কথা আর নির্যাতনের খতিয়ান নিয়ে রাস্তায় নামেন। তাঁরা নিজেদের আলোচনায় যে কথাগুলো বলেছেন, এমন কথা বলার সাহস এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের নেই। এই যে শ্রমিকের বক্তব্য প্রচার না করে মিডিয়া একটি ইউটোপিয়ান সংস্কারের গল্প আমাদের এখনও শোনাচ্ছে—তার মুখে চপেটাঘাত করে এই শ্রমিকের বক্তব্য।

ভিডিও সূত্র: প্রতিদিনের খবর

চারপাশে যখন একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটছেই, তখনই মঞ্চে আসেন আমাদের শ্রমিক নেতারা। সরকারের তখন দু মাস পূর্তি হয়েছে মাত্র, অথচ ফ্রুটিকা খেয়ে আমাদের শ্রমিক নেতারা সব সত্য কথা বলা শুরু করে দিলেন।

(ভিডিও সূত্র: সময় টেলিভিশন)

এমনকি জুলাই-আগস্ট সন্ত্রাস চলাকালীন যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামের প্রিয়পাত্র বনে যাওয়া সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও ভুল করে ফ্রুটিকা খেয়ে দুয়েকটি উল্টোসিধা কথা বলে বসলেন। সুতরাং ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’ নীতিতে জামায়াত-শিবিরের ইউনূস প্রশাসন নভেম্বর মাসে নিজেদের কাজের পদ্ধতি বদলালো। তবে এবার যেহেতু উপদেষ্টা বদলেছে, শিশুদের খেলা বড়োদের হাতে পড়েছে—তাই আমলাতন্ত্র এবার কথা বলতে শুরু করেছে। শ্রমিক খাবেন গুলি আর শ্রমিকনেতা খাবে দাওয়াত—এই আপ্তবাক্য মেনেই বাংলাদেশের শ্রমিক নেতারা প্রশাসনের দাওয়াত খাওয়া শুরু করলো। এখন পেটে খেলে পিঠে সয়, তাই সচিবও শ্রমিক নেতাদের একটু কান মলে দিলো তার বক্তব্যে।

শ্রম সচিব বেশ কড়কড়িয়ে জানান দিলেন, শ্রমিক নেতাদের দু পাত্তর খাইয়ে দু ঘা বসিয়ে দেওয়া যায়। (ভিডিও সূত্র: ফেসবুক)

শ্রমিক নেতাদের পকেট গরম করে ইউনূস সরকারের শ্রমিক আন্দোলন দমনের এই আমলাতান্ত্রিক পন্থাটি সম্ভবত এম সাখাওয়াতের আবিষ্কার। ব্যাপারটি মন্দ ছিল না, কারণ পরিস্থিতির মোড় ঘুরাতে তারা আন্দোলনকে একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়ায় আনার চেষ্টা করলো। ২৪ নভেম্বর হঠাৎ করেই বেক্সিমকোর ব্যাবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সরকার একটি কমিটি গঠন করলো28। একদিকে সরকার কমিটি করে, অন্যদিকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ন্যায্য শ্রমিক অসন্তোষ দমনের জন্য রাস্তায় লেলিয়ে দেয় সরকারের পোষা পেটোয়া সমন্বয়কবাহিনী। তারা পথেঘাটে শ্রমিকদের ওপর যেমন আক্রমণ করে, তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে; অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলনকে ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আওড়াতে থাকে। রাস্তায় বাস আটকে তারা শ্রমিকদের নাজেহাল করে আন্দোলন দমনের জন্য।

  • ডিসেম্বর ২০২৪: জাহাজে রহস্যজনক নৌ-শ্রমিক হত্যা

নভেম্বরে শ্রমিক নেতাদের প্রশাসনের সাথে মাখামাখি ও সচিবের ভাষ্যমতে “দাওয়াত” খাওয়ার হাতে গরম ফলাফল পেতে শুরু করলেন দেশের শ্রমিকগণ। আন্দোলন দমনে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউনূস বেছে নিলো চিরাচরিত সামরিক দমন-পীড়নের পথ। শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য একটা ঘুরপথ বেছে নেয় সরকার। ১০ ডিসেম্বর “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে” তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শ্রমিকনেতা তালুকদার মোঃ মনিরকে। গণমাধ্যমের ভাষ্যমতে তিনি শ্রমিক লীগের নেতা। উল্লিখিত অভিযোগটিকে ইউনূস সরকার এমন এক অভিযোগে পরিণত করেছে যে, বর্তমানে যে কোনো সময়, যে কোনো নাগরিক এ অভিযোগে মামলা খেতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও শ্রমিকরা তাঁদের ঐক্য দেখিয়েছেন। এই অবৈধ গ্রেফতারের প্রতিবাদে তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছিলেন29

শুধু শ্রমিক লীগের নেতা বলেই গ্রেফতার, তা কিন্তু নয়—যে সব শ্রমিক সংগঠন জুলাই সন্ত্রাসের সাথে ছিল, তাদের নেতারাও ইউনূস সরকারের রোষানল থেকে রেহাই পায়নি। ইউনূস ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা গত এক দশক ধরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিনা অপরাধে আটকের বিরোধিতা করে এসেছে। কিন্তু ক্ষমতায় বসে তারা ওই একই পদ্ধতি আরও সুচারুভাবে প্রয়োগ করছে। আশুলিয়ার শ্রমিক অসন্তোষকে ধামাচাপা দিয়ে সরকারি ন্যারেটিভ প্রচারের জন্যই ১৪ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে আশুলিয়ার দুই শ্রমিক নেতাকে তুলে নেয় যৌথবাহিনী। এরা হলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি সারোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাচ্চু। পরবর্তীতে যৌথবাহিনী এদের থানায় সোপর্দ করে30।  

তবে ডিসেম্বরে বাংলাদেশে শ্রমিকহত্যার এক অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনা ঘটে। ২৩ ডিসেম্বর মেঘনা নদীতে একটি পণ্যবাহী জাহাজে সাতজন নৌ-শ্রমিককে হত্যা করা হয়31। জাহাজে এভাবে শ্রমিকহত্যার ঘটনায় আমাদের মনে পড়ে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ সোয়াত জাহাজে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিচালিত জেনোসাইডের কথা32। যদিও, মেঘনায় নৌ-শ্রমিক হত্যার কোনো তদন্ত বা বিচারিক প্রক্রিয়ার সাম্প্রতিক কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই; তবুও এমন প্রশ্ন সকলের মনেই উঠেছে—এভাবে জাহাজে ৭জন নৌ-শ্রমিক হত্যার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে? পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যময় এ শ্রমিকহত্যা নিয়ে কোনো প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য নেই। তবে পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যম অন্তত এটুকু জানিয়েছে যে, “এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।”33 আল-বাখেরা নামের এই জাহাজটি ইউরিয়া সার পরিবহনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ৮০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার এই জাহাজটি ২১ ডিসেম্বর কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে বোঝাই হয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের করাচি থেকে কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ ‘এমভি ইউয়ান ঝিয়ান ফা ঝং’ ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ভিড়েছিল। পাকিস্তান থেকে ২৯৭টি একক কনটেইনারসহ মোট ৩৭০টি একক কনটেইনার আনা হয়েছিল এ জাহাজে। এই জাহাজের আগমন নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের অতি উৎসাহ ও সন্দেহজনক তথ্যচাপা দেওয়ার কৌশল তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার শিকার হয়েছিল। জল অনেকখানি ঘোলা করে সরকার যদিও পরে জানিয়েছিল এই কন্টেইনারে টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল আছে34 —কিন্তু জনগণ তা বিশ্বাস করেনি; কারণ পাকিস্তানিরা সোয়াত জাহাজেও অস্ত্র আনার কথা স্বীকার করেনি প্রথমে।

১৮ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১১ ডিসেম্বর করাচি থেকে রওনা দিয়ে ‘এমভি ইউয়ান ঝিয়ান ফা ঝং’ জাহাজটি আবারও চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় ২০ ডিসেম্বর। পণ্য হিসেবে টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল, খনিজ পদার্থ ও ভোগ্যপণ্যের কথাই বলা হয়েছিল, যদিও দ্বিতীয়বার তারা প্রথমবারের চেয়ে দ্বিগুণ পণ্য বহন করে আনে বাংলাদেশে35। পাকিস্তানি জাহাজের এই সন্দেহজনক পণ্য পরিবহনের সাথে আল-বাখেরা জাহাজে ৭জন নৌ-শ্রমিক হত্যার কী কোনো যোগসূত্র আছে? জাহাজে এমন রহস্যজনকভাবে ৭জন নৌ-শ্রমিক হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন শুরু করেন নৌ-শ্রমিকরা। সরকারের নানাবিধ আশ্বাসে পরবর্তীতে তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও, এ বিষয়ে আজপর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি সরকার। ফলে শ্রমিক হত্যার এমন নারকীয় ঘটনার কোনো সুরাহা হয়নি।

ইউনূসের ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ আর শ্রমিকের ‘ভাত দে হারামজাদা’

২০২৫ সালে দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমই বেশ তেলতেলে হ্যাপি নিউ ইয়ার পালন করেছে। অবৈধ ইউনূস সরকার যন্ত্রপাতিসমেত মব পাঠিয়ে মহাসমারেহে ধ্বংস করেছে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের সূতিকাগার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর। বইমেলাতে তৌহিদি জনতা বেশ তেজ দেখিয়ে স্টল বন্ধ করেছে। রোযার মাসে “বাজারে সবজির দাম কম” বলে বলে বগল বাজিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকের দশা খারাপ থেকে আরও খারাপ হয়েছে।

২৪ জানুয়ারি ইউনূস সরকারের অন্যতম মুখপত্র দৈনিক প্রথম আলো প্রতিবেদন লিখে জানাচ্ছে, ইউনূস সরকারের সাড়ে পাঁচ মাসে গাজীপুর ও সাভারে ৬৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৫৮টি স্থায়ীভাবে আর ১০টি অস্থায়ী ভিত্তিতে। এসব কারখানায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করতেন বলে পত্রিকাটি আমাদের জানিয়েছে36। কিন্তু অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ হওয়া ১০টি কারখানা আজ অব্দি খুলেছে কি না, সে খবর আমরা আর জানতে পারিনি।

শুধু এই প্রতিবেদনটিকেই যদি আলোচনার কেন্দ্রে রাখি, তবে বাংলাদেশে জানুয়ারি মাসের শেষদিকের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক সম্পূর্ণ বেকার। এই শ্রমিকদের সাথে তাঁদের পরিবার-পরিজনের জীবন সম্পর্কিত। আগের সাড়ে পাঁচ মাসের সাথে আরও চার মাস কেটে গেছে। এই সাড়ে নয় মাসে তাঁরা কীভাবে বেঁচে আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কি না—সে খবরও নেয়নি রাষ্ট্র, নেয়নি রাষ্ট্রের কর্তা বনে যাওয়ারা।

সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েও শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত লাখ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য নিয়ে ইউনূস সরকারের নির্লজ্জ হঠকারিতার কোনো তুলনা নেই। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নভেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশে ‘রিসিভার’ নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নিয়োগ দিতে দেরি হলো না, কিন্তু নিয়োগের পরও কারখানা খুলছে না—এ কেমন বিচার!37 মানে খেতে বসলে সকলেই ঘি-মাখন খাবেন, আর লাঠিচার্জ-গুলি খেয়েই পেটের ক্ষুধা মেটাতে হবে শ্রমিকদের!

অসাংবিধানিক ইউনূস সরকারের নেতৃত্বে এবার বেশ ঘটা করে ঈদ শোভাযাত্রা করা হলো। এসব চমক সত্যিই চমকপ্রদ, কেননা এবারই তো প্রথমবার দন্ডপ্রাপ্ত জঙ্গীরা সব সদলবলে ঈদ করতে পারছে। এবারই তো প্রথমবার একজন যৌন-নিপীড়ককে থানা থেকে ছিনিয়ে এনে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে তৌহিদি জনতার সংবর্ধনা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। কিন্তু শ্রমিকের পেট সেই অভুক্তই থেকে গেছে। ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দের সরকারি জোয়ার বইলেও, হাজার হাজার শ্রমিক পাননি ঈদের বেতন, বোনাস তো দূর কী বাত!

২৭ মার্চ, ২০২৫—ঈদুল ফিতরের মাত্র তিনদিন আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের করা এক প্রতিবেদনে জানা যায়, তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের অধীনে থাকা ১২২টি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনই পরিশোধ করতে পারেনি। জানুয়ারি মাসের বেতন বকেয়া আছে ৩০টি কারখানায়। অন্যদিকে ঈদের বোনাস দেয়নি ৭২৩টি কারখানা38। এখন বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বেতন পরবর্তী মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়; কিন্তু এখন তো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস—যে নিজেই শ্রম আইন লঙ্ঘন করে ৬ মাসের কারাদন্ড পেয়েছিল এবং ক্ষমতা নেওয়ার একদিন আগে গায়ের জোরে সেই দন্ড বাতিল করিয়েছিল।

ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে এক বড়ো জোচ্চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়ে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাহেব। ধুরন্ধর সরকারের জালিয়াতি যে কোন মাত্রার, সেটা আমাদের শ্রমিকরা টের পেয়েছিলেন ঈদের দুদিন আগে। বকেয়া বেতন ও বোনাস আদায়ের জন্য সরকার-শ্রমিক-মালিক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়, যার শর্ত অনুযায়ী তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কিছু সম্পদ বিক্রি করে সরকারি মধ্যস্থতায় শ্রমিকদের পাওনা আদায় করা হবে। উপদেষ্টা সদর্পে ঘোষণাও দিয়েছিল যে, সব পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা পরবর্তীতে প্রমাণসহ প্রতিবাদ করলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন জনগণ39

সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইউনূস সরকার ক্ষমতা দখলের পর রপ্তানি আদেশ ও পণ্যের ক্রয় আদেশ কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটের কারণে চট্টগ্রামের ৫০টি কারখানা লে-অফ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক, সুতা তৈরি ও জুতার কারখানা40। হাজার হাজার শ্রমিক এতে বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁরা কী করে বেঁচে থাকবেন—এ নিয়ে উপদেষ্টাদের কারও কোনো মাথাব্যথা নেই।

ইউনূসেক্সুয়াল বুদ্ধিজীবীদের দালালির লালা আর গোলামির রতিরস

প্রশ্ন উঠতেই পারে, অবৈধ অন্তর্বর্তকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নাহয় শ্রমিকদের দুশমন। ড. ইউনূস যখন গ্রামীণ ব্যাংকসহ ওই ব্যাংকের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র অধিপতি ছিল, তখন তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নানা অভিযোগ ছিল এবং এসব অভিযোগ আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ টেলিকমসহ নানা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় রাস্তায় আন্দোলন করেছেন ইউনূসের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। সুতরাং ক্ষমতা হাতে পেয়ে ইউনূস শ্রমিকদের এক হাত দেখে নিবে—এ আর নতুন কী! এমনকি চলতি বছরেও গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সুতরাং ইউনূসের শ্রমিকবিরোধী মনস্তত্ত্ব আমরা বুঝি এবং আমাদের এ বোঝার পক্ষে অসংখ্য নথিপত্র ও প্রমাণ আছে।

কিন্তু গত প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের যে বুদ্ধিজীবী বা বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো শ্রমিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিল, তারা হঠাৎ করে শীতনিদ্রায় চলে গেল কেন? মানছি, তারা সকলেই বর্তমান সরকারের উচ্ছিষ্টভোগী, তাই বলে যে দোকান খুলে তারা এত বছর নিজেদের সংসার চালিয়েছেন, সে দোকানের কথাই ভুলে গেলেন? রানা প্লাজা নিয়ে যে বিক্ষোভ-বিদ্রোহ-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-প্রদর্শনী ছিল, গাজী টায়ারের কারখানায় আগুনে পুড়ে নিহত শ্রমিকদের বিষয়ে কি তার সিকিভাগও করা যেত না? নাকি আওয়ামী লীগ বিরোধিতার মতো ইউনূস বিরোধিতার ডলার মূল্যমান ততটা নেই?

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও তাসলিমা আখতার
(ছবিসূত্র: মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট)

এই যে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজিডি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পয়সায় শ্রদ্ধা নিবেদন করে দোয়া-খায়ের করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন আর গণসংহতি আন্দোলনের নেত্রী তাসলিমা আখতার—তারা কি একবারও মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করেছেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজিডির মামলার কাজ কদ্দূর? তাদের তো না জানার কথা নয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই (১৫ জানুয়ারি ২০২৪) রানা প্লাজা হত্যা মামলার ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি ২০২৩ সালে এই মামলার প্রধান আসামী সোহেল রানাকে যে জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট, তিনদিনের মধ্যেই সে আদেশ স্থগিত করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেয় চেম্বার আদালত41

এখন সুপ্রিম কোর্টের আদেশের ছয় মাস পেরিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় গড়িয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারও ক্ষমতায় নেই নয় মাস হতে চললো—রানা প্লাজা মামলার কী খবর? ২৪ এপ্রিল তো ঘটা করে দিবস পালন করলেন আমাদের আইজীবী, ফটোজীবী, গানজীবী আর বুদ্ধিজীবীরা; কিন্তু মামলার অগ্রগতির খবর নেই কেনো?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া খুব কঠিন কাজ নয়। যারা গত পনেরো বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে শ্রমিকহত্যার প্রতিবাদে কলাম লিখেছেন, সেইসব স্তম্ভকারেরাও জানেন—আশুলিয়ায় যৌথবাহিনীর গুলিতে নিহত শ্রমিক কাউসারের বিচার চাইতে গেলে থুথু তাদের নিজের গায়ে এসেই পড়বে। এই সরকার তো জনগণের নয়, কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসেনি—এই সরকার এসেছে তাদেরই মতো ডলারভোজী বুদ্ধিজীবীদের ঘাড়ে পা রেখে। এখন নিজের সরকারকে কেউই কাঠগড়ায় দাঁড় করায় না, তাহলে সরকারি সুবিধা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সুবিধা বাতিলের প্রসঙ্গেই মনে পড়লো, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার বাংলা সংস্করণে তাসলিমা আখতারের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে পত্রিকাটি জানতে চেয়েছিল আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে। তাসলিমা আখতার যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা হুবহু তুলে ধরা হলো—

শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে বিশেষভাবে আছে বকেয়া বেতন পরিশোধ দাবি। শোনা যাচ্ছে প্রায় ২৬ শতাংশ কারখানায় এখনো বেতন পরিশোধ হয়নি। এ ছাড়া স্বৈরশাসকের শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কারখানাসহ বেশ কিছু কারখানা বন্ধ থাকায় বেকারত্ব শঙ্কা বাড়ছে। কারখানাভিত্তিক কিছু দাবি সামনে উঠেছে যার মধ্যে টিফিন বিল, হাজিরা বোনাস, নাইট বিল, ছুটির টাকা, মাতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধিসহ একাধিক দাবি শ্রমিকরা তুলছেন। বর্তমান বাজারে বেঁচে থাকা দায় বলেই দাবিগুলো উঠে এসেছে। এর মধ্যে কিছু কারখানায় কারখানাভিত্তিক কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। উদ্যোক্তারা টিফিন বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ অর্ধশতাধিকের বেশি কারখানা নানা সময়ে বন্ধ ছিল। কোনো কোনা কারখানায় মালিকরা ১৩/১  ধারায় বন্ধ রেখেছিল। বেক্সিমকোর মালিকসহ এই খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে লোন পেলেও শ্রমিকদের দাবি ঝুলিয়ে রাখে। এ অবস্থায় দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ করা জরুরি। শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবি রেশনিং নিশ্চিত করা। এই মুহূর্তে এটা সময়ের দাবি। কারণ, গত বছর শ্রমিকরা ২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি করলেও সেখানে সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি। এই বাজারে এই মজুরিতে চলা যে কঠিন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মজুরি মূল্যায়নসহ ধাপে ধাপে শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি বিবেচনায় এনে কারখানা খুলে দিয়ে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকের রুটিরুজি ও রপ্তানি—দুই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।42

এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরও সাত মাস কেটে গেছে। কিন্তু কোনো দাবি কি পূরণ হয়েছে? একটিও না। উল্টো আরও অনেক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। তাছাড়া তাসলিমা আখতার যে গদগদ হয়ে বলেছিলেন, “উদ্যোক্তারা টিফিন বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে”—এই ঘোষণা কি বাস্তবায়ন হয়েছে? উনি তো শ্রমিক নেতা, উনি কি আজপর্যন্ত এ নিয়ে সরকারের সাথে কোনো দেন-দরবার করেছেন? শ্রমিকহত্যা নিয়ে একটা রা-ও করেননি তিনি। কারণ এখন এসব কথায় টাইম ম্যাগাজিনে ছবি যাবে না, ঝুড়িতে পুরস্কার আসবে না। সবচেয়ে বড়ো কথা, তাসলিমা জানেন—তার সমর্থিত ইউনূস সরকারের সাথে থাকা জামাত-শিবির-জঙ্গীদের Final Embrace-কে এইমুহূর্তে বিব্রত করা যাবে না। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের ন্যায্য আন্দোলনে যৌথবাহিনী গুলি ছুঁড়েছে, শ্রমিক নেতাদের তুলে নিয়ে গিয়ে আইন-বহির্ভূতভাবে আটকে রেখেছে; কিন্তু এই ইউনূসেক্সুয়ালরা সবখানেই দেখতে পাচ্ছে ‘ফ্যাসিস্টের ভূত’। বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন করলেই এই যে ‘আওয়ামী লীগ’ বানিয়ে দেওয়ার এক নতুন কিন্তু ফালতু রাজনীতি—এতে আমাদের শ্রমিক নেতারাও জোর ফাঁসা ফেঁসেছেন। একের পর এক কল-কারাখানা বন্ধ হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আর আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মুখে কার কী একটা পুরে নিয়ে বসে বসে বলছেন—পাক সারজমিন সাদ বাদ।

লেখাটি শুরু করেছিলাম ক্যালেন্ডারের পাতায় মে দিবস আসার আগে, লেখাটি শেষ করছি ক্যালেন্ডার থেকে মে দিবসটি চলে যাওয়ার প্রাক্কালে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই মে দিবসকে ঘিরে নানা আয়োজন-আলোচনা-বক্তব্য-বিবৃতি হয়ে গেছে। শ্রম আইন লঙ্ঘন করে দন্ড-পাওয়া প্রধান উপদেষ্টা শ্রমিকদের নতুন বাংলাদেশের গল্প শোনালো। বামপন্থী নানা রাজনৈতিক সংগঠনের ফেসবুক পেইজে ইভেন্ট ম্যানজমেন্ট ফার্মের মতো কিছু দিবসভিত্তিক ফটোকার্ড ছাড়া হলো। আগামী দুদিনেও শহরে আরও কিছু সমাবেশ হবে, সেখানেও নানা আলোচনা করে সবাই বলবে যার যার পকেটের কথা।

কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্য বদলাবে না—কারণ, এই কর্পোরেট পিআর নির্ভর অবৈধ ইউনূস সরকারের আমলে তাদের পাশে আজ কেউই নেই। নিহত কাউসারের নাম একদিন লোকে ভুলে যাবে—যেমন রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের নাম চাপা পড়ে গেছে তাসলিমার পুরস্কার-খ্যাতি আর দৃকের ছবি বাণিজ্যের কাছে, যেমন বিডার চেয়ারম্যানের গাঁকগাঁক করা ইংরেজির তোড়ে ভেসে গেছে লে-অফ হয়ে যাওয়া কারখানার অসহায় বেকার শ্রমিকের ক্ষুধার ভাষা।

কর্পোরেট সরকারের দিবস পালন শেষ হলো। কর্পোরেট-যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গীবাদী রাজনৈতিক দলগুলো অবশ্য আরও দুদিন ছুটির আমেজে থাকবে। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামবাসীদের লাল-লাল রঙের মে দিবস খেলাও হয়তো কেটে যাবে একটু পর। শ্রমিক-টমিক নিয়ে পত্রিকা আর চ্যানেলওয়ালাদের বিশেষ বিশেষ কথারও মেয়াদ ফুরালো।

শুধু যাদের নিয়ে এতকিছু, সেই শ্রমিকরাই কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে আছেন।

তাঁরা শুধু জানেন—ভাতের রঙ সাদা আর ক্ষুধার নাম কান্না।

পহেলা মে, ২০২৫


তথ্যসূত্র

  1. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট। ৩০ এপ্রিল ২০২৫। ↩︎
  2. “রাজধানীতে পর পর তিনদিনে ৪ দলের সমাবেশ”, বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ৩০ এপ্রিল ২০২৫। ↩︎
  3. “সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার জেরে তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি – যা জানা যাচ্ছে”, বিবিসি বাংলা, ২৯ এপ্রিল ২০২৫। ↩︎
  4. “শ্রম আইন লঙ্ঘনে মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা”, বিবিসি বাংলা, ১ জানুয়ারি ২০২৪। ↩︎
  5. “শ্রম আইনের মামলায় দণ্ড বাতিল, খালাস পেলেন ড. ইউনূস”, প্রথম আলো, ৭ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  6. “লুটপাটের পর গাজী টায়ার কারখানায় আগুন, জ্বলছে ১৫ ঘণ্টা ধরে”, প্রথম আলো, ২৬ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  7. “Leaked files expose covert US government plot to meddle in Bangladesh’s politics”, The Grayzone, 30 September 2024. ↩︎
  8. “সরকার পতনের পর সহিংসতায় এ পর্যন্ত ২৩২ জনের মৃত্যু”, প্রথম আলো, ৮ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  9. “হাসিনা সরকারের পতন: ৫১ দিনে ১৪৭৪ মামলায় ৯২ হাজারের বেশি আসামি”, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ১০ অক্টোবর ২০২৪। ↩︎
  10. “ঢাকা শহরজুড়ে গণডাকাতি ও লুটপাট”, একাত্তর টেলিভিশন, ৮ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  11. “সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার”, প্রথম আলো, ২৫ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  12. “গাজী টায়ারস: মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো, তারপর লুটপাট-আগুন”, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২৭ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  13. “লুটপাট-অগ্নিসংযোগ: ১৪ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি গাজী টায়ার কারখানার আগুন”, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২৬ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  14. “গাজী টায়ারস: ৪ দিনেও শুরু হয়নি উদ্ধার অভিযান”, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২৮ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  15. “রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় গিয়ে যা দেখলেন বিবিসি সংবাদদাতা”, বিবিসি বাংলা, ৩১ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  16. “গাজী টায়ারসে আগুন-লুটপাট: জেলা প্রশাসনের ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি”, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২৭ আগস্ট ২০২৪। ↩︎
  17. “গাজী টায়ারসে আগুন: প্রতিবেদনেও নিখোঁজ ১৮২, ‘ধামাচাপার’ অভিযোগ”, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০ অক্টোবর ২০২৪। ↩︎
  18. “কারখানা খোলা রাখুন, অর্থনীতি সচল করে তুলুন: প্রধান উপদেষ্টা“, আরটিভি নিউজ, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ↩︎
  19. “আশুলিয়া ও গাজীপুরে ১৮৩ কারখানা বন্ধ”, প্রথম আলো, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ↩︎
  20. প্রাগুক্ত। ↩︎
  21. প্রাগুক্ত। ↩︎
  22. “শ্রমিক অসন্তোষ: আশুলিয়ায় ৬ মামলা, আসামি ১৯১০”, বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ↩︎
  23. “আশুলিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩৬”, প্রথম আলো, ১ অক্টোবর ২০২৪। ↩︎
  24. “আশুলিয়ায় শ্রমিক-যৌথবাহিনীর সংঘর্ষে গুলি, নিহত ১”, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ↩︎
  25. “মিরপুরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পোশাকশ্রমিক গুলিবিদ্ধ”, প্রথম আলো, ৩১ অক্টোবর ২০২৪। ↩︎
  26. “মিরপুরে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ: ৫০০ শ্রমিককে আসামি করে মামলা”, বাংলা ট্রিবিউন, ১ নভেম্বর ২০২৪। ↩︎
  27. প্রাগুক্ত। ↩︎
  28. “বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠান: সুপারিশ দিতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন”, আজকের পত্রিকা, ২৫ নভেম্বর ২০২৪। ↩︎
  29. “শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করায় তেজগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ”, দেশ রূপান্তর, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪। ↩︎
  30. “আশুলিয়ায় ২ শ্রমিক নেতাকে ডেকে নিয়ে থানায় হস্তান্তর”, দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪। ↩︎
  31. “মেঘনায় নৌযানের পাঁচটি কক্ষে পড়ে ছিল পাঁচ রক্তাক্ত লাশ”, প্রথম আলো, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪। ↩︎
  32. “সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধকালে গণহত্যা (চট্টগ্রাম মহানগর)”, সংগ্রামের নোটবুক↩︎
  33. “মেঘনায় সাত খুনে যা জানা গেল”, প্রথম আলো, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪। ↩︎
  34. “পাকিস্তানের করাচি থেকে আসা জাহাজটির কন্টেইনারে যা যা আছে”, বিবিসি বাংলা, ১৬ নভেম্বর ২০২৪। ↩︎
  35. “পাকিস্তান থেকে আবারও আসছে সেই জাহাজ”, প্রথম আলো, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪। ↩︎
  36. “গাজীপুর-সাভারে সাড়ে পাঁচ মাসে বন্ধ ৬৮ কারখানা”, প্রথম আলো, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫। ↩︎
  37. “রিসিভার নিয়োগের পরও কেন বন্ধ হলো বেক্সিমকোর পোশাক কারখানা?”, বিবিসি বাংলা, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫। ↩︎
  38. “ফেব্রুয়ারির বেতন দেয়নি ১২২টি পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানা, ঈদের বোনাস বাকি ৭২৩টির”, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৭ মার্চ ২০২৫। ↩︎
  39. “শ্রম উপদেষ্টার ‘মিথ্যা’ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান, পোশাকশ্রমিকদের ভূখা মিছিল”, ইত্তেফাক, ২৮ মার্চ ২০২৫। ↩︎
  40. “যে কারণে চট্টগ্রামের ৫০ কারখানা সাময়িক বন্ধ”, প্রথম আলো, ১৭ এপ্রিল ২০২৫। ↩︎
  41. “৬ মাসের মধ্যে রানা প্লাজা হত্যা মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ”, দ্য ডেইলি স্টার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪। ↩︎
  42. “শ্রমিকদের কথা বলার অধিকার থাকতে হবে”, দ্য ডেইলি স্টার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ↩︎

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

0 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.