গার্মেন্ট শ্রমিকদের বহিঃশত্রু মনে করে তাদের দমনে বিশেষ পুলিশ-বিশেষ আদালত! নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের নাম-আশুলিয়া!!

১.দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএ ইন্ডস্ট্রীয়াল পুলিশের দাবী করে আসছিল, এখন তার সাথে যোগ হয়েছে বিশেষ ইন্ডাস্ট্রীয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। এর অর্থ ওই পুলিশ এবং আদালত দ্রুত গার্মেন্ট শ্রমিকদের “অপরাধ” দমন করবে বা বিচার করবে।
২.কোরিয়া-জাপানের চাপে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করতে হয়েছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সেই অধিকার দিতে চাইছে সরকার, কিন্তু বেঁকে বসেছে বিজিএমইএ!
৩.বিশেষ পুলিশ, বিশেষ আদালত চালু হওয়া মানে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরকারের সরাসরি কনফ্রন্টেশন! সরকার-গার্মেন্ট মালিকরা কি শ্রমিকদের “যুদ্ধে পরাস্ত” করে হাত-পা বেঁধে উৎপাদনে বাধ্য করতে যাচ্ছে?
৪.আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী এটা কি মানবাধীকার লঙ্ঘন নয়? এর ফলে কি এক দেশের ভেতরেই আর এক “মিনি দেশ” কল্পনা করে শ্রমিক-মালিক-সরকার সম্মূখ সমরে লড়াই শুরু করতে যাচ্ছে না?
৫.ক্রমাগত বিশ্বমন্দায় বন্ধ হতে থাকা গার্মেন্ট শিল্প কি এতে করে বিকাশ লাভ করার বদলে ধ্বংস হয়ে যেতে বসবে না?

এই নির্মম বাস্তব প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের জানা নেই। আমাদের আশঙ্কা গার্মেন্ট শিল্প হয়ত স্থায়ীভাবে ডেস্ট্রয় হতে চলেছে!

গত কিছুদিন ধরে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠেছে আশুলিয়া। আর আশুলিয়া শিরোনাম হয়ে ওঠার মানেই সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ অথবা শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনের বীরদর্পি চিত্রাবলি। রাজনীতির খোল-নলচে বদলে যাওয়ার আগে আমাদের ছাত্ররা তাদের নিজস্ব দাবী-দাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় দাবী-দাওয়া নিয়েও বিক্ষোভ বিদ্রোহ দেখাত। সেই বিক্ষোভ বা বিদ্রোহ দমনও করা হতো। তখনো যারা এই বিক্ষোভ দমনের কাজ করত এখনো তারাই অর্থাৎ সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই বিক্ষোভ দমনের কাজ করছে। তখনকার সাথে এখনকার মোটাদাগের পার্থক্য হলো তখন বিক্ষোভকারীদের নিজেদের শ্রেণী অথবা নিজেদের সমাজের মানুষ ভেবে পুলিশ চরম হঠকারী হতে পারত না। আর এখন পারে। খুব ঠান্ডা মাথায়ই পারে। এর কারণ কি? শ্রমিক এবং ছাত্র বা শিক্ষার্থী উভয়েই কি এদেশেরই সন্তান নয়? তারপরও কেন এখন শ্রমিকের উপর বিক্ষোভ দমনের নামে পোড়ামাটি নীতি প্রয়োগ করা হয়? সেটা কি শুধুই শ্রমিকরাও সহিংস হয়ে উঠেছে সে কারণে? নাকি সমগ্র ব্যাপারটা এখন শ্রেণীশাসন আর শ্রেণীশোষণের মাত্রায় নির্ধারিত হচ্ছে?

জানা কথা রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এই মাসে সবার মত গার্মেন্ট শ্রমিকদেরও অন্যান্য মাসের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয়ভার মেটাতে হবে। তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই রমজানে আর সকলের মত একটু ভাল খাওয়া-দাওয়ার আশা করতেই পারে। এই মাসেই তারা চাইতেই পারে তাদের বকেয়া পাওনা-দেনা যেন মালিকপক্ষ মিটিয়ে দেয়। তারা আরো চাইতে পারে রোজা থেকে যেহেতু তারা উৎপাদন চালু রাখবে, তাই তাদের বেতন যেন অন্তত এই মাসে বকেয়া না পড়ে। আর এই মাসের শেষেই আসছে ঈদ। গার্মেন্ট শ্রমিকরা অন্যান্য শ্রমিকদের মতই সারা বছরে মাত্র দুই ঈদে বোনাস পায়। কেই অর্ধেক পায়, আর কেউবা পুরোটাই পায়। সেই পাওয়াটা যেন শুধুই কাগজ-কলমে না হয়ে বাস্তবেও হয় তাই তারা রোজা আসার সাথে সাথে তাদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া নিয়ে সরব হতে চায়, সরব হতে চেষ্টা করে। সেই সরব হতে চাওয়া বা চেষ্টা করাকেই আমরা সংবাদপত্রে দেখি “শ্রমিকদের ভাংচুর” হিসেবে! আর যেহেতু শ্রমিকরা “নির্বিচারে ভাংচুর” করেছে সেহেতু পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীকেও “এ্যাকশনে” যেতে হয়। এই সকল বাহিনীর এ্যাকশন মানে কি সেটা নতুন করে কাউকে বুঝিয়ে বলা অনাবশ্যক।

কিছুদিন আগে “আবার অশান্ত আশুলিয়া” শিরোনামের খবরটি এরকম-“ফের অশান্ত হয়ে উঠছে গার্মেন্ট শিল্প। বেতনভাতার দাবি সামনে রেখে মাঠে নামছে শ্রমিকরা। গত দু’দিন ধরে আশুলিয়া শিল্প এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এনভয় পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। ভাংচুর চালিয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে।

রোববারের সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে গতকালও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুরো আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় ভাংচুর ও বড় ধরনের নাশকতার শঙ্কায় অন্তত ১৫টি গার্মেন্টে তাৎক্ষণিক ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, আগামী তিন মাস বেশিরভাগ গার্মেন্টই অর্ডার সংকটে আছে। এতে অনেক গার্মেন্টেই কাজ নেই। ওভার টাইম নেই। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই সরকারি হিসাবেই ৭০টি গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের কাছেও এ তথ্য রয়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের
তরফ থেকে গার্মেন্ট মালিকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে না। ফলে গার্মেন্ট সেক্টরে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।”

এই খবরটিতে একটি ঝোঁক লক্ষ্য করা যায়। এখানে মূলত দায়ী করা হচ্ছে শ্রমিকদেরকে। অর্থাৎ শ্রমিকরা আশুলিয়া বা শিল্পাঞ্চলকে ‘অশান্ত’ করে তুলছে! এমনই একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। আবার গার্মেন্টগুলোর মালিকদের সংগঠন সরাসরি এই বিক্ষোভ বা শ্রমিক আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে সরকারকে সাবধানও করছে! সরাসরি সরকারকে দায়ীও করছে! সব শেষে এই খবরে আরো বলা হচ্ছে- শ্রমিকরা নাস্তার জন্য নির্ধারিত ২০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা দাবি করলে কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, সামনে শ্রমিকদের বেতন, বোনাস ও ওভারটাইম দেওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে। এরপর গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য সরকারের পে-স্কেল ঘোষণার উদ্যোগের মাধ্যমে মালিকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

এর মানে কি এটাই দাঁড়াচ্ছে না যে, মালিকরা এখন যেটুকু বেতন-বোনাস দিতে পারছেন তাও খুব কষ্ট করেই তারা দিচ্ছেন! এরচে’ বেশি তাদের পক্ষে ‘খুবই কষ্টকর’ হয়ে যাবে! সালাম মুর্শেদীর এই কথা বা আশংকা একঅর্থে ঠিকই আছে, কেননা সারা দেশে এখন গার্মেন্ট শিল্পে মন্দা চলছে। ঢাকায় তো বটেই চিটাগাংয়েও অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো অনেক বন্ধ হওয়ার পথে। এই খবরটি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছেঃ
“ বিশ্বমন্দার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমেছে রফতানি আদেশ। এর সঙ্গে চট্টগ্রামে যোগ হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। এসব কারণে গত ছয় মাসে চট্টগ্রামে ৪৭টি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়েছে এসব কারখানায় কর্মরত প্রায় ৬/৭ হাজার শ্রমিক। ২০০৮ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি ২০০৯ সালের প্রথম ছয় মাসে ক্রয় আদেশ (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন-ইউডি) ২৫ থেকে ২৮ শতাংশ কমে গেছে। চট্টগ্রামে গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে মোট ৭৪২টি। এর মধ্যে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে ১৫৬টি।

বিজিএমইএ নেতাদের অভিমত, এ মুহুর্তে সরকারের সহায়তা ছাড়া অনেক গার্মেন্ট শিল্প মালিকের পক্ষেই ব্যবসা ধরে রাখা সম্ভব হবে না”।

তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? একদিকে বিশ্বমন্দা আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে একের পর এক গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে গার্মেন্ট শ্রমিকরা তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ করে পরিস্থিতি আরো ‘জটিল’ করে তুলছে! মালিকদের কথা অনুযায়ী এই ‘কঠিন সময়ে’ সরকার যদি সহায়তার হাত না বাড়ায় তাহলে একর পর এক গার্মেন্ট বন্ধ হতে থাকবে, এবং শত শত শ্রমিক বেকার হতে থাকবে! আর এই বেকার হতে থাকা যে সরকারের জন্য একটা দশাসই হুমকি সেটা বুঝেই এই ইস্যুটাকে মোক্ষমভাবে ব্যবহার করতে চাইছেন মালিকদের সমিতি। তা না হলে একটা বেসরকারী ‘সমিতি’ থেকে সরাসরি সরকারের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি কি ভাবে আসতে পারে!

বেশ ভাল কথা। মানলাম বিশ্বমন্দার প্রভাবকে দুই আঙ্গুলের তুড়ি মেরে কাগজে-কলমে উড়িয়ে দিতে চাইলেও যে তা উড়িয়ে দেওয়া যায়না বা যাচ্ছেনা সেটা এবার পরিষ্কার হলো। সেই সাথে অব্যহত লোডশেডিং এবং অন্যান্য অনেক হিডেন কারণও আছে যা প্রকাশ্যে বলা না গেলেও সেই সব কারণের জন্যেও গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এবং যাচ্ছেও। এখন শুধু কি সেই কারণেই মালিকদের ক্রমাগত প্ররোচনা আর আব্দারে অতিষ্ট হয়ে সরকার বিশেষ ইন্ডাষ্ট্রীয়াল পুলিশ গড়তে যাচ্ছে? সেই সাথে বিশেষ ইন্ডাষ্ট্রীয়াল আদালতও? শোনা যাচ্ছে অচিরেই আশুলিয়া বা দেশের অন্যত্র যেখানে যেখানে গার্মেন্ট ইন্ডাষ্ট্রীজ আছে সেখানে বিশেষ ইন্ডাষ্ট্রীয়াল পুলিশ এবং বিশেষ ইন্ডাষ্ট্রীয়াল আদালত কর্মকান্ড শুরু করতে যাচ্ছে। যাক, এবার অন্তত গার্মেন্ট মালিকদের ‘ক্লাব’ বা সমিতি সরকারকে যখন-তখন দোষারোপ করতে পারবে না! তখন তারা দোষারোপ করবে ‘পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে’! এই বিশেষ ইন্ডাষ্ট্রীয়াল পুলিশ এবং আদালতের মাজেজা আমরা আমাদের সহজ-সরল সাদা চোখে যে ভাবে বুঝি তা হলো,

এই বিশেষ পুলিশ শ্রমিকদের যে কোন দাবী-দাওয়ার আন্দোলনকে মুহূর্তেই নির্মূল করতে পারবে। মুহূর্তেই বিশেষ আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট সায়েব শ্রমিকদের দ্রুত বিচার করে গরাদে ভরতে পারবেন! এবং কিছু দিনের মধ্যেই শত শত শ্রমিক আন্দোলন করার ‘অপরাধে’ জেলে ঢুকে যাবার পর বাকি শ্রমিকরা বংশদন্ডের ন্যায় ‘সোজা’ হইয়া যাইবে! অর্থাৎ নিয়মিত পুলিশ, বিডিআর, র‌্যাব(এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি সেনাবাহিনী) এত যে দমন-পীড়ন করে ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’ আনছিল তাতে পুরোপুরি কাজ হচ্ছিল না! এবার বিশেষ পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট সেই নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের কাজটা আরো নিখুঁত ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে! এই নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের সোজা অর্থ নিপীড়ন। আর সেই নিপীড়ন যেন আরো পোক্ত হয়, আরো মোক্ষম হয় সে জন্যই আইন করে বিশেষ পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট করা হচ্ছে। তাহলে সোজা কথায় কি দাঁড়াচ্ছে? আশুলিয়া অর্থাৎ শ্রমিক বেল্টগুলোতে একটা আলাদা রাষ্ট্র কায়েম হতে যাচ্ছে। যে রাষ্ট্র শুধুই শ্রমিকদের নিবর্তনের জন্যই গঠিত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের বসবাসের জন্য, তাদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য আলাদা মানবেতর বসবাসের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তারা যেন এই সমাজে থেকেও আর এক ভিন্ন সমাজের মানুষ! এবার সেই ভিন্ন সমাজের মানুষদের জন্য একেবারেই ভিন্ন ধরণের আইন-কানুন তৈরি করে তাদের ভিন্ন ধরণের নাগরিক করে দেওয়া হচ্ছে,যদিও নাগরিক ছিলনা তারা কোন কালেও। আরো সহজ করে বললে –

শ্রমিকদের ভয়ে ভীত মালিক পক্ষ এবং সরকার শ্রমিকদের দেশের প্রচলিত আইন-কানুন আর বিচার ব্যবস্থা থেকে আলাদা জগতে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। আগামীতে এই আশুলিয়া বা অন্যান্য শ্রমিক বেল্টগুলোতে কোন প্রকার বিদ্রোহ বা আন্দোলন যেন অংকুরেই বিনাশ করা যায় তারই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। খুবই বৈপরিত্যপূর্ণ ব্যাপার! শ্রমিক ছাড়া দেশের শিল্প চলেনা,চলছে না, শ্রমিক ছাড়া দেশ এক পা-ও এগুতে পারেনা, পারছে না। আবার শ্রমিককে নিয়ন্ত্রণ-নিবর্তন এবং নিপীড়নের জন্য সরকার-মালিক সবাই একসাথে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামছেন! তবে কি আশুলিয়া আর শ্রমিক অঞ্চলগুলো দেশের বিশেষ পুলিশ বা বিশেষ বাহিনীর নতুন ‘ট্রেনিং সেন্টার’ হয়ে উঠতে যাচ্ছে? এভাবেই কি সেই দেড়শো বছর আগেকার ব্যবস্থায় জোর করে উৎপাদন করিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে? সমস্ত শ্রমশক্তি ছিবড়ে শুষে নেওয়ার পাকাপাকি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে?

মনজুরাউল

আমাদের মাতৃগর্ভগুলি এই নষ্ট দেশে চারদিকের নিষেধ আর কাঁটাতারের ভিতর তবু প্রতিদিন রক্তের সমুদ্রে সাঁতার জানা হাজার শিশুর জন্ম দেয় যারা মানুষ......

১০ comments

  1. রায়হান রশিদ - ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ)

    “ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ”! এ আবার কেমন জিনিস? সাধারণ পুলিশ ব্যবস্থাকেই সরকার ঠিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারছে না, তার ওপর বিজিএমইএ-র কথা মতো নতুন ইউনিফর্মধারীদের আমদানী!

    ১.
    প্রতিটি সরকারের আমলেই এই তথাকথিত বিজিএমইএ সংগঠনটির প্রভাব আমরা লক্ষ্য করে আসছি। যেন গুটিকয় গার্মেন্টস মালিক ছাড়া সরকারের দেশের আর সব মানুষের প্রতি কোন দায় দায়িত্ব নেই। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নকারী গোষ্ঠী কি একমাত্র এরাই? কই, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পূ্র্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করা এতো লক্ষ লক্ষ রেমিটেন্স উপার্জনকারী শ্রমিক রয়েছেন, কই তাদের দুরবস্থা আর অসুবিধের ব্যাপারে সরকারকে কেবল বিবৃতি প্রদান ছাড়া আর কিছুই তো করতে দেখিনি কোন দিন।

    ২.
    শ্রমিক আর মালিকদের মধ্যে তফাত হয়তো এখানেই। আলোচনার টেবিলে প্রভাব বিস্তার করার মতো তাঁদের কোন শক্তিশালী সংগঠন নেই, এঁদের আছে; তাঁদের দুঃখকষ্টে কেবল আত্মীয় স্বজন কাঁদে, আর এঁদের দুঃখকষ্টে খোদ সরকার বুক চাপড়ে কাঁদে; তাঁদের নিয়ে কথা বলার জন্য মাঝে মাঝে দু’একটা বিচ্ছিন্ন পত্রিকার কলাম ছাড়া আর কিছু নেই, আর এঁদের দেশোদ্ধারমূলক সভা-সেমিনার হয় শেরাটন-রেডিসনে সুধী সমাগমে; তাঁরা স্যুট-টাই পরে ঘুরেন না, এঁরা ঘুরেন। ফলাফল অনুমেয়। এরা আজ এটা কাল সেটা (যেমন: নতুন পুলিশ) আবদার ধরবেন; আর সরকারও যেন সে সব শুনবার জন্যই বসে আছে! শুনবে নাই বা কেন? এঁদের জন্যই তো সরকার, জনগণ, দেশ! এর চেয়ে বড়ো নির্লজ্জতা আর কি হতে পারে?

    ৩.
    আর গালভরা নামের বিজেএমইএ কাজের কাজ কি করেছে আজ পর্যন্ত‍? সেগুলোরও একটু খতিয়ান নেয়া প্রয়োজন। কই, পেরেছে কি ওরা গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে শ্রমিদের পুড়ে মরা বন্ধ করতে? পেরেছে কি ওরা গার্মেন্টসগুলোতে শ্রমিকরা তাদের পাওনা মজুরী (যেটার অন্ক নিয়ে কিছু আর বললাম না) যাতে নিয়মিতভাবে পান সেটা নিশ্চিত করতে? পেরেছে কি ওরা শ্রমিক নির্যাতন রোধ করতে? শ্রমিকদের মাসের পর মাস বেতন বোনাস কেন আটকে থাকে কই তার জবাব তো গালভরা নামধারী এই সংগঠনটি কখনো দিতে পারে না। তখন তারা বলেন তাদের “হাত পা বাঁধা”, তখন প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি তাদের “শ্রদ্ধা” দশগুণ বেড়ে যায়, তখন তারা হয়ে ওঠেন কেবলই একটি “এডভাইজরি বডি” যার নাকি কোনো “এক্সিকিউটিভ” ক্ষমতা নেই! আর এখন তারা উঠে পড়ে লেগেছেন সংবিধান স্বীকৃত শ্রমিকদের “সংগঠন করার অধিকার” রদ করতে। আরও কত দেখবো!

    ৪.
    কোন অতিরিক্ত সুবিধা, অধিকার বা অগ্রাধিকার যদি দাবী করতেই হয় – সবার আগে সেটা অর্জন করা লাগে। বিজেএমইএ কবে, কিভাবে এবং কি অর্থে সেটা অর্জন করেছিল তা জানার কৌতুহল হচ্ছে। আর অগ্রাধিকারমূলক অধিকারের সাথে আপনা আপনি চলে আসে অতিরিক্ত দায়। সেই দায়ও পালন করার কোন লক্ষণ আজও তারা দেখাতে পেরেছে কিনা সেটাও বিবেচ্য। আর সরকারের অসীম প্রজ্ঞার (!) প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই‍‍ যে বিজেএমইএ’র আওতাধীন সংগঠনগুলোর রফতানীখাতে অবদানের কারণে বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন – তাহলে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে – রফতানীর জন্য শার্ট আর সোয়েটারগুলো কি গার্মেন্টস কারখানার মালিক আর তাদের পরিবারবর্গ সেলাই করেন? নাকি লাখ লাখ শ্রমিক তাদের রক্ত জল করা শ্রম দিয়ে সেগুলো উৎপাদন করেন? কেবল মালিকের স্বার্থরক্ষায়ই সরকারগুলো অতি-উতলা হয়ে যাবে (আর যাঁদের প্রত্যক্ষ শ্রমে রফতানীযোগ্য পণ্যগুলো সত্যিকার অর্থে “মূল্যবান” হয়ে উঠছে, তাদের ঠেঙ্গানোর জন্য পুলিশ বসাবে, তা তো হতে পারে না। আরেকটা বিষয় – এখানে বিজেএমইএ-ই বা কিভাবে সমস্ত দরকষাকষি আলোচনায় এই সেক্টরের একমাত্র মুখপাত্র হয়ে ওঠে? কি জানি, সরকারের অতি বুদ্ধিমান উপদেষ্টারা হয়তো মনে করেন – এই সব গার্মেন্টস মালিকেরা ব্যক্তিগত মুনাফা নয় দেশ উদ্ধারের মহান ব্রত নিয়ে এই “লাইনে” এসেছেন – আর গুটিকয় মাথা গরম (চক্রান্তকারী!!) শ্রমিক তাতে ঝামেলা বাধাচ্ছে – সুতরাং তাদের সময় থাকতে থাকতে ঢিঁট করতে হবে!

    ৫.
    মনজুরাউল ভাই পোশাক শিল্পখাতে ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষে আমেরিকান লবির কথা উল্লেখ করেছেন। এখানে একটা জিনিস নিয়ে বহুদিন ধরেই একটু দ্বিধায় আছি। যত দূর জানি, এই সেক্টরে শ্রমিকদের যে ট্রেড ইউনিয়নগুলো আছে, তাদের মূল ধারাটিই “ট্রেড ইউনিয়ন এনজিও” ধরণের, তথাকথিত “ফ্রি” ট্রেড ইউনিয়ন। একটির কথা জানতাম, যেটির অর্থায়ন আসতো সরাসরি ইউএসএআইডি থেকে। ঢাকা শহরে বছর দশেক আগেই এই ট্রেড ইউনিয়নটির দফতর শহরের বিভিন্ন কোণায় ছড়ানো একেকটি তিন চারতলা বাড়ীর পুরোটা নিয়ে ছিল, আর সেগুলোর সংখ্যাও ছিল সাত এর অধিক। এগুলোর একটির কর্মকর্তাদের (যেমন: তখনকার AAFLI-Asian American Free Labour Institute) জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম তাদের নিবন্ধিত সদস্যদের (গার্মেন্টস শ্রমিক) সংখ্যা – সাত লাখেরও বেশী ছিল কেবল ঢাকা শহরেই। প্রায় দশ বছর আগেকার কথা সেটা। শুনে একরকম ভিরমি খাবার জোগাড় হয়েছিল। এই পরিমান আর্থিক রিসোর্স (ঢাকা শহরে সাতটি বাড়ি ব্যবহার করার মতো) এক কথায় চোখ ধাঁধানো; এতো বিশাল সংখ্যার নিবন্ধিত সদস্যদের নিয়ে যে অবিশ্বাস্যরকম সাংগঠনিক শক্তি তার কথা তো লেখাই বাহুল্য। তাহলে প্রশ্ন থাকে – সরকারের এবং বিজেএমইএ’র সাথে দরকষাকষি-আলোচনায় এই রিসোর্স এবং শক্তি বাস্তবে ঠিক কি (এবং কতটুকু) ভূমিকা রাখতে পারছে? ট্রেড ইউনিয়নের নামে এই সংগঠনগুলো বিদেশী অর্থায়নে শ্রমিক ভোলানোর কাজটি করছে না তো? তাদের এটা সেটা বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটি করছে না তো? আর শ্রমিকদের এই তথাকথিত “ফ্রি” ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বিদেশী অর্থের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কেন? প্রশ্ন হল – শুধু কি আর্থিক সাহ‍ায্যই আসে বিদেশ থেকে – নাকি সেটার হাত ধরে আসে শ্রমিকদের জন্য বিশ্ব-বাজারের উপযোগী বিদেশী নীতিমালা আর আচরণবিধি, যেগুলো আসলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিজেদেরই নির্ধারণ করার কথা ছিল পরীক্ষিত সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায়? এই বিষয়গুলো তেমন জানা নেই। কারও জানা থাকলে দয়া করে আলোকপাত করবেন?

    • মনজুরাউল - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ)

      ত দূর জানি, এই সেক্টরে শ্রমিকদের যে ট্রেড ইউনিয়নগুলো আছে, তাদের মূল ধারাটিই “ট্রেড ইউনিয়ন এনজিও” ধরণের, তথাকথিত “ফ্রি” ট্রেড ইউনিয়ন। একটির কথা জানতাম, যেটির অর্থায়ন আসতো সরাসরি ইউএসএআইডি থেকে। ঢাকা শহরে বছর দশেক আগেই এই ট্রেড ইউনিয়নটির দফতর শহরের বিভিন্ন কোণায় ছড়ানো একেকটি তিন চারতলা বাড়ীর পুরোটা নিয়ে ছিল, আর সেগুলোর সংখ্যাও ছিল সাত এর অধিক। এগুলোর একটির কর্মকর্তাদের (যেমন: তখনকার AAFLI-Asian American Free Labour Institute) জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম তাদের নিবন্ধিত সদস্যদের (গার্মেন্টস শ্রমিক) সংখ্যা – সাত লাখেরও বেশী ছিল কেবল ঢাকা শহরেই। প্রায় দশ বছর আগেকার কথা সেটা। শুনে একরকম ভিরমি খাবার জোগাড় হয়েছিল। এই পরিমান আর্থিক রিসোর্স (ঢাকা শহরে সাতটি বাড়ি ব্যবহার করার মতো) এক কথায় চোখ ধাঁধানো; এতো বিশাল সংখ্যার নিবন্ধিত সদস্যদের নিয়ে যে অবিশ্বাস্যরকম সাংগঠনিক শক্তি তার কথা তো লেখাই বাহুল্য। তাহলে প্রশ্ন থাকে – সরকারের এবং বিজেএমইএ’র সাথে দরকষাকষি-আলোচনায় এই রিসোর্স এবং শক্তি বাস্তবে ঠিক কি (এবং কতটুকু) ভূমিকা রাখতে পারছে? ট্রেড ইউনিয়নের নামে এই সংগঠনগুলো বিদেশী অর্থায়নে শ্রমিক ভোলানোর কাজটি করছে না তো?

      আপনি ঠিকই জানেন। হ্যাঁ ব্যাপারটা এমনই। এই তথাকিথত ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকলাপ মোটেই আমাদের পরিচিত সেই ট্রেড ইউনিয়নের মত নয়। এটা আক্ষরিক অর্থেই ট্রেড ইউনিয়নের এনজিও। তার পরও এটারই ঘোষণা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মনে হতে পারে যে তারা বুঝিবা শ্রমিকদের সত্যিকারের দাবি-দাওয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল!অথচ ব্যাপারটা তেমন নয়। তারপরও অন্তত তারা ট্রেড ইউনিয়ন শব্দটা ব্যবহার করছে, কিন্তু জাপান-কোরিয়া তো ট্রেড ইউনিয়নের নামও শুনেত চায়না!

      যদিও আমাদের দেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলো বড় বুর্জোয়া দলগুলোর লেজুরবৃত্তি করতে করতে নিজেদের আসল বিপ্লবী চরিত্র বহু আগেই খুইয়ে বসেছে। তথাপী এখন একশ্রেণীর নীতিনির্ধারকরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেওয়ার পক্ষপাতি, কেননা তাতেকরে শ্রমিকদের এখনকার বিক্ষুব্ধ আন্দোলন ঠেকানোর ব্যবস্থা ওই শ্রমিক দিয়েই করা যেত!

      এব্যাপারে আর একটা কম্পাইল লেখা দু’একদিনের মধ্যেই দেব। সেখানে আপনার উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার আশা আছে।

  2. সৈকত আচার্য - ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৬:০৪ অপরাহ্ণ)

    পত্রিকায় দেখলাম, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষনা দিয়েছেন, ইন্ড্রাষ্ট্রীয়াল পুলিশ গঠনের বিষয়ে এবং এর পরপরই আমাদের অত্যন্ত করিৎকর্মা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রনালয়ে পাঠিয়ে দেয়। অর্থ মন্ত্রনালয় প্রস্তাবটি অনুমোদন করে নি। যদিও কোন নীতিগত কারনে নয়। অর্থের জোগান না থাকার কারনে।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সুযোগ্য সচিব বাহাদুর জনাব আবদুস সোবহান সিকদার মর্মাহত হয়েছেন অর্থ মন্ত্রনালয়ের এহেন ভূমিকায়। ইণ্ডাষ্ট্রীয়াল পুলিশের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কথা তিনি স্মরন করিয়ে দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রনালয়কে এভাবেঃ

    ‘Unrest and anarchy are often breaking out in industrial zones. But there ‘is no separate police force there, and it is not possible to instantly tackle those situations due to a scarcity of force and the distances between the police stations and those zones,” said Home Secretary Abdus Sobhan Sikhder in a letter to the Finance Division secretary on July 14.

    He said industry owners are feeling insecure while foreign investors are being discouraged to invest due to frequent unrest in the garments sector. He urged the finance secretary to take steps to form the industrial police considering the premier’s announcement in the parliament.’

    সূত্রঃ দি ডেইলী ষ্টার,২৩ আগষ্ট’০৯

    পুলিশের বড়ো কর্তা জনাব নূর মোহাম্মদ সাহেব আরো এক কাঠি সরেস। রীতিমত একটা তত্ব ঝেড়ে দিলেন তিনি। তিনি বললেনঃ

    ‘…… in a world of specialisation, special forces are needed for special sectors.’

    সূত্রঃ দি ডেইলী ষ্টার,২৩ আগষ্ট’০৯

    প্রধান মন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন বলে কথা! প্রধানমন্ত্রীর নেক নজরে আসা যায় যদি, এই সব তত্ব ঝেড়ে তবে আলাদিনের চেরাগ মিলতে কতক্ষন!

    প্রশ্ন হলঃ এই সব মোসাহেব চামচিকাদের কি সরকার চেনে? এরা কি বিজেএমইএ’ র পেইড এজেণ্ট নাকি সরকারের ভিতর আর কোন সরকার।

  3. অবিশ্রুত - ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ)

    বিভিন্ন সময় গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীলতার কারণে তাদের ব্যবসা নাকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ বেশ কয়েকটি উঠতি দেশ দখল করতে চলেছে। এবং ব্যবসাটি যাতে তাদের হাতে চলে যায়, সেজন্যে সুপরিকল্পিত চক্রান্তও রয়েছে। ভারত, ভিয়েতনামের গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার ও বেতন-মজুরি ইত্যাদি নিয়ে আমার তেমন কোনও ধারণা নেই। কেউ কি এ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন? ওইসব দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিশেষত বাজারদরের তুলনায় বেতনকাঠামো ও ট্রেড ইউনিয়নসংক্রান্ত অধিকার সম্পর্কে কারও কাছে কোনও তথ্য আছে কি?
    ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রশ্ন কেন আসছে? কেননা মালিকরা আর আগের মতো পেটোয়া বাহিনী ব্যবহার করতে পারছে না (কে না জানে, ওনারা বিশ্বায়ন যুগের মানুষ!এইসব তো আর আগের মতো মানায় না, কিন্তু বিকল্প তো একটি থাকতে হবে!)। আবার আগে যেমন ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতি দিয়ে তাতে শ্রমিক নেতৃত্বে কোন্দল ও অন্তর্দ্বন্ধ্ব বাধিয়ে সুবিধা লুটতো, সেটা করার মতো ধৈর্য্ বা আগ্রহও নেই তাদের।
    বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে চলেছে মূলত মালিকদের কারণে,- খুব জোরের সঙ্গেই এ-কথাটি বলার সময় এসে গেছে।
    মনজুরাউলকে ধন্যবাদ, একটি সুন্দর আলোচনার জন্যে।

    • মনজুরাউল - ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (১:১৪ পূর্বাহ্ণ)

      এই লেখাটির পরবর্তী পর্ব আজই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ওই লেখাটিতে রায়হান রশীদ এর সংযোজিত কিছু উপাত্ত যোগ করেছি। লেখাটি আগামীকাল মুক্তাঙ্গনে পোস্ট করতে পারব। আপনি যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন তার কিছু বিবরণ পরের লেখাটিতে থাকছে।
      ধন্যবাদ আপনাকে।

  4. অবিশ্রুত - ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৫০ পূর্বাহ্ণ)

    সংবাদপত্র থেকে জানতে পারছি, গার্মেন্টস মালিকরা এখন শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়ার জন্যে সরকারের কাছ থেকে অনুদান চাইছে! তারা তাদের দাবির সপক্ষে অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলছে। সরকারের অর্থমন্ত্রী অবশ্য তাদের এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু বিজিএমইএ এখনও গোঁ ধরে বসে আছে; বলছে, না হলে শ্রমিকরা বেতন পাবে না এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্যে সরকার দায়ী থাকবে।
    আমার মনে হয়, এই ধরণের দাবি যারা করে তাদের কাছ থেকে গার্মেন্টস কারখানা অধিগ্রহণ করে নেয়ার জন্যে সরকারের উদ্যোগী হওয়া দরকার। অধিগ্রহণকৃত কারখানা তুলে দেয়া হোক শ্রমিক ব্যবস্থাপনায়। এতে গার্মেন্টস শিল্পও বাঁচবে, শ্রমিকরাও বেঁচে থাকার মতো মজুরিতে কাজ করার অনুকুল পরিবেশ পাবেন, দেশের অস্থিতিশীলতাও কমবে।
    আর যে-সব গার্মেন্টস মালিকরা এরকম মামা বাড়ির আবদার দেখান, তারা বরং ভিয়েতনাম কিংবা ভারতে গিয়ে কারখানা খুলুন। তা হলে বুঝতে পারবেন, কত ধানে কত চাল।

    • মনজুরাউল - ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (২:৫৩ পূর্বাহ্ণ)

      আপনার এই প্রস্তাবটি নিঃসন্দেহে চিন্তাভাবনার গোড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। যদি তারা(মালিক) কারখানার শ্রমিকের বেতন-বোনাস দিতে না-ই পারে তো কারখানা সরকারের হাতে তুলে দিক! সরকার যেহেতু ব্যবসা করেনা, তাই যারা কারখানা চালায় তাদের(শ্রমিক) হাতেই তুলে দেওয়া হোক।

      চিন্তাটা মাথায় রইল। পরের কিস্তি লেখার সময় অবশ্যই এটা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করব।
      আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।

      • রায়হান রশিদ - ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৩:৩০ পূর্বাহ্ণ)

        আপনার পরের কিস্তির অপেক্ষায় থাকলাম। অনেক ধন্যবাদ।

        অবিশ্রুত’র দৃষ্টিকোণকে কেউ কেউ হয়তো অতি-বৈপ্লবিক বলবেন, কিন্তু আমার কাছেও তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। সাধারণ যুক্তির বিচারে এমনটাই তো হওয়া উচিত। ব্যবসা করবেন বলে নেমেছেন ‘মালিকের দল’, এখন “মুনাফা করতে পারছি না” বলে নাকি কান্না জুড়বেন আর দেশবাসীর সহানুভূতি কামনা করবেন, তা তো হতে পারে না। আর যদি মুনাফা না-ই করতে পারেন, তাহলে তাদেরকে তো কেউ আর দিব্যি দেয়নি দেশোদ্ধার করার জন্য এই সেক্টরে লটকে থাকার জন্য! গরিব গার্মেন্টস শ্রমিককে কেন তার মূল্য দিতে হবে? আর বাকী জনগণকেই বা কেন ভর্তুকি দিয়ে এই সব মালিকদের ব্যক্তিগত মুনাফার আহ্লাদ-আবদার পূরণ করতে হবে? প্রতিবাদ করে শ্রমিকরা যখন হাজারে হাজারে ছাঁটাই হন, তখন তাদের স্থান পূরণ করতে তো আরও কয়েক হাজার শ্রমিক কারখানার গেটে দাঁড়িয়ে থাকেন বিনা বাক্যব্যয়ে সব মেনে নিয়ে কাজ করার জন্য। যুগে যুগে এটাই তো ছিল মালিকদের গলার জোরের মূল কারণ! আজ যদি ছক উল্টে গিয়ে থাকে, তবে সেই একই বিচারে মালিকরাই বা “নিস্তার” পাবেন কেন? এই সব অযোগ্যরা সরে গেলে তাদের অবস্থান পূরণ করে এগিয়ে আসার মতো কি অধিকতর যোগ্যরা বসে নেই? আর শ্রমিকরা যদি সত্যিই এই শিল্প-সেক্টর ব্যবস্থাপনা করার মতো সামষ্টিক মেধা এবং যোগ্যতা রাখেন, তাহলে তারাই বা এগিয়ে আসবেন না কেন? তেমনটা না ঘটলে আমরাই বা কিভাবে জানবো এটা আসলে সম্ভব কি না। তবে স্রেফ “শ্রমিক-মালিকানার স্বার্থে মালিকানা হস্তান্তরের” বিষয়টার সাথেও ঠিক একমত হতে পারছি না। এটা অর্জনের‍, এবং তার চেয়েও জরুরী “পরিচালনার যোগ্যতার” বিষয়টাও কি আমাদের ভাবা উচিত না? চাই বা না চাই, বর্তমান শিল্প-প্রতিযোগিতার কাঠামোটা তো এমনই!

        • মনজুরাউল - ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৪:১৩ পূর্বাহ্ণ)

          পরের পর্বটা লিখে রেখেছি। প্রেক্ষিত বদলে কিছুটা ভিন্নরূপ পাওয়ায় সেটিকে একটু এডিট করতে হবে।
          প্রধানমন্ত্রী জেনেভা থেকে ফেরার পর “উচ্চ পর্যায়ের ধাতানী” খাওয়ার পর মালিকদের একাংশের এই বোধদয় হয়েছে যে, তাদের মামাবাড়ির আব্দার সুলভ ন্যাকামি দেশবাসী ভাল চোখে দেখেনি। তার চেয়ে বড় কথা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী “রুষ্ঠ” হয়েছেন! তারা অন্য বিষয়াদি ঠিকঠাক ঠাওর করতে পারুন-না পারুন এই উচ্চ ব্যাপারগুলো ভালই বোঝেন। আর তাই প্রনোদনা তহবিল থেকে ৩ কোটি টাকা ছাড়ের দাবি থেকে সরে এসেছে। এখনকার গানটা এইরকমঃ “আমাদের কেউ কেউ টাকা চেয়েছিলেন বটে, তবে ঐ টাকা ছাড়াই আমরা সকল গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিকে ঈদ বোনাস, বেতন দিতে বলেছি”! এখন দেখার বিষয়, এই যে “দিতে বলেছি” কথাটিকে মালিকরা কতটুকু মূল্য দেয়? জানা কথা অধিকাংশ শ্রমিকই ঈদ বোনাস পাবে না। কেউ কেউ হয়ত বেতনটা পাবে। এ নিয়ে মালিক পক্ষের শয়তানি চলতেই থাকবে।

          দেখি পরের পর্বটা কাল-পরশু দিতে পারি কি-না।

  5. মনজুরাউল - ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ)

    আজো কিছু ডেভেলপমেন্ট হয়েছেএই বেতন-বোনাস এর দাবি আদায়ের আন্দোলনে। দেখি কাল হয়ত সারসংকলন দিতে পারব।

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.