নিকট অতীতে কারো মৃত্যু আমাকে এতটা বিষণ্ণ করেনি। মৃত্যু আমাদের সবারই স্বাভাবিক পরিণতি, কিন্তু তারেক মাসুদ মারা গেলেন তাঁর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার বহু আগেই। [...]

নিকট অতীতে কারো মৃত্যু আমাকে এতটা বিষণ্ণ করেনি। মৃত্যু আমাদের সবারই স্বাভাবিক পরিণতি, কিন্তু তারেক মাসুদ মারা গেলেন তাঁর কাজ শেষ হওয়ার বহু আগেই। আর্ট ফিল্ম কপচানো চলচ্চিত্রকর্মীর তো অভাব নেই আমাদের, অভাব আছে কাজের লোকের। তারেক মাসুদ রক্ষণশীল মাদ্রাসায় পড়েছেন, ‘ক্লাসিক’ পড়ে বড় হননি। সেখান থেকে নিউইয়র্কে গিয়ে ফিল্ম বানিয়ে ফেললেন, ফালতু abstract ফিল্ম নয়, কাজের ফিল্ম। ৭১-এ ‘জয় বাংলা’ বলা সাধারণ মানুষের ছবি, শরণার্থী শিবিরের ছবি, লুঙ্গি পরা মুক্তিযোদ্ধার ছবি। অন্যের তোলা raw ফিল্ম edit করে মুক্তির গান, কোন মৌলিক সৃষ্টিশীল কাজ নয়, কিন্তু কাজের কাজ। আমরা যারা ৭১-এর পরে জন্ম নিয়েছি তারা দেড় ঘণ্টাতেই বুঝে ফেললাম কী অসাধারণ স্বপ্নময় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়টা। তারেক মাসুদ মাটির ময়না তৈরি করেছেন বহু পরিশ্রমে, ছবি তৈরির পরিশ্রম তো আছেই, তার চেয়েও বেশি পরিশ্রম গবেষণাতে। ৭১-এর ঠিক আগের বাংলাদেশের ডিটেল ফুটিয়ে তোলা হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ব্যাপার। সাহিত্য-নির্ভর ছবি তো নয়, ইতিহাস-নির্ভর ছবি, এমন ছবি তৈরি সব দেশেই কঠিন, বাংলাদেশে তো আরও কঠিন। কাগজের ফুল-এর প্রেক্ষাপট আরও জটিল (৪০-এর দশকের বাংলাদেশ)। দু-চারটা ফরাসি আর রুশ ছবি দেখে আর কিছু বই পড়ে এসব ছবি তৈরি করা যায় না, দেশের প্রতি, দেশের ইতিহাসের প্রতি নাড়ির টান আর আসুরিক পরিশ্রমের ক্ষমতা থাকলেই এমন ছবি তৈরি করা যায়। আমাদের দেশ জীবননান্দের ‘রূপসী বাংলা’ নয়, আবার ‘মধ্যপন্থী মুসলিম’ দেশও নয়, আমাদের দেশ ‘জয় বাংলা’ আর ‘ইনশাআল্লাহ্’র দেশ। আমাদের ইতিহাসের নিজস্ব dynamics আছে, সেটা আমরা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ৪৭-এর চাষা আর জেলের পূর্ব বাংলা মাত্র ২৪ বছরের মধ্যে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র তৈরি করে ফেলল, কী করে এই magic সম্ভব হল? কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা এখনো বাংলাদেশ বলতে ৪০-এর দশকের ‘নাদের আলীর’ পূর্ববঙ্গই বোঝেন, পশ্চিমারাও বাংলাদেশের কিছুই বোঝেন না (বন্যা, গ্রামীণ ব্যাংক, ইসলাম ইত্যাদি মিলিয়ে একটা কিম্ভুতকিমাকার ধারণা তাঁদের আছে)। তারেক মাসুদ নিজে বাবার আদেশে পশ্চাৎপদ মাদ্রাসায় পড়েছেন, আবার মুক্তিযুদ্ধের পরে সেই বাবাই ভুল বুঝতে পেরে তাঁকে মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। তাঁর নিজের জীবনই আমাদের বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ। নিজের চোখে যেভাবে তিনি বাংলাদেশকে দেখেছেন সেভাবেই ছবি তৈরি করেছেন। ৭১-এর বাংলাদেশ, ৬০-এর দশকের বাংলাদেশ, আধুনিক বাংলাদেশ, শুধু শিল্পসম্মত ছবি নয়,…

কিবরিয়ার অবয়বী ছবির মধ্যে আমাকে বিশেষভাবে টানে ‘গোরস্তান’ নামের একটি ছবি, যার উল্লেখ ইদানীংকার আলোচনায় চোখে পড়ে না। [...]

মোহাম্মদ কিবরিয়ার ছাত্রজীবনের ছবির কথা জানা যায় তাঁর নিজেরই মৌখিক স্মৃতিচারণ থেকে। ১৯৪৫ থেকে ’৫০-এর মধ্যে আঁকা ছবিতে নব্য-বঙ্গীয় শৈলী ও অণুচিত্রের অনুপ্রেরণার কথা তিনি বলেছেন। কলকাতা আর্ট কলেজ থেকে বেরোনোর পর তাঁকে বিশেষভাবে ভাবিয়েছিল যামিনী রায় -- কেবল তাঁর লোকচিত্র-অনুপ্রাণিত স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত ছবি নয়, পশ্চিমের উত্তর-অন্তর্মুদ্রাবাদী ধারায় আঁকা কিছু নিসর্গচিত্রও। কিবরিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতার সূত্রে ঘনিষ্ঠজনেরা এসব কথা জেনেছেন; কিন্তু সেই আদিপর্বের কোনো ছবির প্রতিলিপি কোথাও পুনর্মুদ্রিত হতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ১৯৫৯ সালে চিত্রকলা ও ছাপচিত্রে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের জন্য জাপানে যাবার আগে পর্যন্ত যে আট-নয় বছর কিবরিয়া ঢাকায় কাটিয়েছেন, প্রথমে নওয়াবপুর স্কুলে এবং পরে জয়নুল আবেদিনের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ীভাবে ও ১৯৫৪ থেকে পাকাপাকিভাবে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে, সেই কালপর্বটিকেই অগত্যা তাঁর শিল্পীজীবনের প্রথম পর্ব হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়। এই পর্বের বহুল-আলোচিত ‘জলকেলি’, ‘পূর্ণিমা’, ‘চন্দ্রাহত ঘোড়া’ ইত্যাদি তৈলচিত্রে ঘনবাদী চিত্রশৈলীকে নিজের মতো করে, তাঁর ভাষায় ‘খুব হালকাভাবে’, ব্যবহার করেছেন কিবরিয়া। ১৯৬২-তে উচ্চশিক্ষা সমাপন শেষে দেশে ফেরার আগেই তাঁর ছবিতে পর্বান্তর ঘটে গেছে। বিখ্যাত জাপানি শিল্পী হিদেয়ো হাগিওয়ারা-র (১৯১৩--২০০৭) কাছে ছাপচিত্রে নিবিড় ও নতুনতর পাঠ গ্রহণ, সে-দেশের প্রকৃতি ও বিশেষত উদ্যানসজ্জা এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য দৃশ্য-ও-মননগত অভিজ্ঞতার অভিঘাত তাঁর শিল্পভাবনায় গভীরভাবে পড়েছে। এ সময়ে আঁকা তাঁর বিমূর্ত শৈলীর ছবিগুলো তার সাক্ষ্যবহ। পরবর্তী পাঁচ দশক জুড়ে তাঁর খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে বিমূর্ত ছবির অন্যতম পথিকৃৎ এবং এ-ধারার সবচেয়ে নিরীক্ষাপ্রবণ ও সফল শিল্পী হিসেবে। পরিণত পর্বে (বলা ভালো, পর্বসমূহে) কিবরিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা তাঁর পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের শিল্পীদের অনেককে বিমূর্ত শৈলীতে কাজ করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, এবং তারই সূত্রে এমনটাও বলা হয়েছে যে, তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পী যাঁর বেশ ক’জন অনুসারী আছেন। অনুসারীই কেবল নয়, নিঃসন্দেহে অনুকারকও তৈরি হয়েছে তাঁর। কিন্তু তাঁর কাজের সত্যিকার উত্তরাধিকার দু-একজন বাদে অন্যরা ধারণ করতে পেরেছেন বলে মনে করা যায় না, বিশেষত যখন দেখি আমাদের বিমূর্ত ধারার অধিকাংশ শিল্পীই মনোনিবেশ করেছেন ছবির বহিরঙ্গে, এর অন্তর্কাঠামো তাঁদের তত ভাবায়নি। কখনো-সখনো ‘কিবরিয়া স্কুল’-এর চকিত উল্লেখ পাওয়া গেলেও এ সম্পর্কে কোনো বিশ্লেষণী আলোচনা আমরা এখনো বোধহয় পাইনি। কিবরিয়ার অবয়বী ছবির মধ্যে আমাকে বিশেষভাবে টানে ‘গোরস্তান’ নামের একটি ছবি, যার উল্লেখ ইদানীংকার…

তখনকার পঞ্জিকায় দুটিতে বেশ ভাবসাব করে একত্রেই থাকত। কিন্তু তার পরে আজকাল দেখি সেই ইংরেজি তারিখে বাংলা তারিখে ঝগড়া বেধে গেছে, তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এটা কি ভাল হচ্চে?[...]

এটা তো একটা বড় আক্ষেপ যে আমরা এপার বাংলা ওপার বাংলা আসাম ও ত্রিপুরার বাঙালিরা বাংলা বছরের প্রথম দিন একই দিনে পালন করতে পারি না। বাংলাদেশে আজকে হলে তার পরদিন সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় বাংলা নববর্ষ পালিত হয়। শহীদুল্লাহর পঞ্জিকা সংস্কার বাংলাদেশে চালু করা হলেও মেঘনাদ সাহার পঞ্জিকা সংস্কার এখনো পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় চালু করা হয়নি। ১৯১৯ সালের মে মাসে রাণু অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে একটা রুমাল বানিয়ে উপহার হিসেবে পাঠান এবং তার সাথে এই চিঠিটি পাওয়া যায়। আমার ভানুদাদা, আমি আপনার জন্মদিনের জন্য একটা রুমাল বানিয়েছি। সেই রুমালটার সারাটাই আমি নিজেই বানিয়েছি। তাতে আপনার নামও লিখেছি। আশাদের ইস্কুলে একটা পার্শী মেয়ে পড়ে। তার নাম হোমাই। আমি তার কাছে বানাতে শিখে এই রুমালটা বানিয়েছি। এইটে যদি আপনার জন্মদিনের দিন পৌঁছোয় তো কি মজা হয়। আর শুনুন। এই রুমালটা নিশ্চয় আপনার জন্মদিনের সারাদিইন পকেটে কোরে রাখবেন। যদি না রাখেন তো আপনার সঙ্গে জন্মের মতন আড়ি। বুঝলেন। আপনার নিশ্চয় খুব আনন্দ হচ্ছে। জন্মদিন কিনা। আমি তো জন্মদিনে সারা দিনই লাফিয়ে বেড়াই। আপনি তা বলে লাফাবেন না যেন। বুকে বড় স্ট্রেন লাগবে। আমি যদি আপনার কাছে থাকতাম তো আপনাকে এমন সুন্দর তো আপনাকে এমন চমৎকার করে সাজিয়ে দিতাম। আপনি নিজের রূপ দেখে মুগ্ধ হোয়ে যেতেন। আপনাকে সাজিয়ে গুজিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিতাম। আমি যখন আপনার প্রাইভেট সেক্রেটারী হব তখন আপনাকে জন্মদিনের দিন পৃথিবীর মধ্যে সুন্দর কোরে সাজিয়ে দেব। আর সেদিন মীরাকে বলে দেবেন পরমোন্ন করতে। জন্মদিনের দিন পরমোন্ন না খেলে পাপ হয়। আমরা শিগ্গিরিই ‘সোলানে’ যাব। সেখানে গিয়ে আপনাকে আমি ঠিকানা দেব। আমি বৈতালিক পেয়েছি আর খুব খুসী হয়েছি। রাণু।। আপনার জন্মদিনে আপনাকে প্রণাম কচ্ছি।। রাণু। রবীন্দ্রনাথ রাণুকে এই চিঠির উত্তরে ৭ মে ১৯১৯ সালে শান্তিনিকেতন থেকে লিখেছেন। কল্যাণীয়াসু রাণু ইংরেজি মতে আজ আমার জন্মদিনের পরের দিন, বাংলা মতে আগের দিন। আমার আসল জন্মদিনে ইংরেজি তারিখ ছিল ৬ মে, বাংলা তারিখ ছিল ২৫শে বৈশাখ। তখনকার পঞ্জিকায় দুটিতে বেশ ভাবসাব করে একত্রেই থাকত। কিন্তু তার পরে আজকাল দেখি সেই ইংরেজি তারিখে বাংলা তারিখে ঝগড়া বেধে গেছে, তাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এটা কি…

আজ পেছনে তাকিয়ে মনে হয় জীবনে কোন ব্যাপারে কোন খেদ নেই এমনটা ভাবা কোন মানুষের পক্ষে অস্বাভাবিক। আমি সবসময় ভাবতে পছন্দ করেছি যে কোন বিষয়েই আমার কোন আক্ষেপ নেই, কিন্তু এখন মনে হয় এটা অসম্ভব। [...]

অনুশোচনা আজ পেছনে তাকিয়ে মনে হয় জীবনে কোন ব্যাপারে কোন খেদ নেই এমনটা ভাবা কোন মানুষের পক্ষে অস্বাভাবিক। আমি সবসময় ভাবতে পছন্দ করেছি যে কোন বিষয়েই আমার কোন আক্ষেপ নেই, কিন্তু এখন মনে হয় এটা অসম্ভব। আমি আমার জীবন ও কাজ নিয়ে এতটা ব্যতিব্যস্ত ছিলাম যে এখন এই ভেবে আফসোস হয় কেন আমি আমার ছোট বোন লরেটার সাহায্যে এগিয়ে আসি নি; বিশেষ চিকিৎসা কিংবা সুশ্রুষা পেলে সে হয়ত খুবই উপকৃত হতো। আমার মা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে একটা ব্ল্যাকবোর্ডে খুবই সাদামাটা কিছু একটা শেখানোর চেষ্টা করছেন লরেটাকে, তাঁর এক হাতে একটা চক আরেক হাতে রুলার। এই দৃশ্য আমি কোনদিন ভুলবো না। "দুয়ে দুয়ে কত হয়?" তিনি জিজ্ঞাসা করছেন। আর লরেটা তার সম্ভাব্য পরিণতির কথা ভেবে মুখে যে উত্তরটা আসছে সেটাই উগড়ে দিচ্ছে, "তিন, না পাঁচ, না তিন..." এবং যত প্রাণপণে সে চেষ্টা করতে থাকে ততই উন্মাদ হয়ে উঠতে থাকেন আমার মা। প্রতিবারই এর পরিসমাপ্তি ঘটতো মারধোরে, তারপর মা চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে আমার দিকে ফিরে, হতাশায় দু'হাত ছুঁড়ে প্রশ্ন করতেন, "এমন শাস্তি পাওয়ার মত কী অপরাধ করেছি আমি?", যেন আমি ঈশ্বর যার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে, আমি, এক ক্ষুদে বালক! লরেটা তার নিজের ধরনে ছিল খুব অন্যরকম ও স্পর্শকাতর এক মেয়ে। সে প্রায় সবসময়ই একেবারে ভেঙে পড়ে কান্নাকাটি করতো আর কেউ তার কী হয়েছে জানতে চাইলে বলতো, "আমি অসুখী নই, আমি বিষন্ন নই, আমি শুধু আমাকে সামলাতে পারছি না।" এই কথা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে যে আমি কখনো সময় নিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে সে যেন খুব দরকারি বিশেষ সাহায্য ও মনোযোগটুকু পায়, সেটা দেখি নি। আমার তিন সন্তানের জন্যই আমার বিশেষ অনুশোচনা হয় কেননা তারা তিনজনই মন্দবিয়ের শিকার হয়েছে। আমার বড় মেয়ে বারবারা যখন নেহাত শিশু তখন আমি তার মাকে ছেড়ে যাই। আমি বারবারাকে দেখতে চাইলে তার মা সেটাকে জটিল করে তুলতো। এরপর আমি কয়েক বছরের জন্য পারী চলে গেলে সেখানে এক পর্যায়ে আমি বারবারাকে খুঁজে বার করতে চেষ্টা করি কেননা আমার মনে হয়েছিল তাকে কাছে পেলে দারুণ হবে। আমি কল্পনা করি তাকে পাশে নিয়ে রাস্তায় হাঁটছি, তাকে পারীর দৃশ্যাবলি…

পেটের ভাত যোগানো আর কোনমতে বেঁচে থাকার লড়াইই আমাকে তৈরি করেছে। আমি অবশ্য এই লড়াইয়ে নিজেকে কাবু হতে, ধ্বংস হয়ে যেতে দিই নি।

প্রথম লেখার কাজ পেটের ভাত যোগানো আর কোনমতে বেঁচে থাকার লড়াইই আমাকে তৈরি করেছে। আমি অবশ্য এই লড়াইয়ে নিজেকে কাবু হতে, ধ্বংস হয়ে যেতে দিই নি। হায় যীশু! ক'খানা ফালতু ডলার জোগাড় করার জন্য আমাকে আর জুনকে কী দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়েই না যেতে হয়েছিল! আমরা আমার কিছু কবিতা ছাপিয়েছিলাম, আর জুন সেগুলো বার, কাফে ইত্যাদিতে গিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করতো, আমি তখন বাইরে অপেক্ষা করতাম। আমরা জানতাম আমি পাশে না থাকলেই বরং জুন বেশি টাকা যোগাড় করতে পারবে। কখনো কখনো সে কয়েক ঘন্টার মধ্যেও বারের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো না। সে হয়তো কোন ব্যাটাছেলের সঙ্গে বসে কথা বলতো আর সেই ছেলে তাকে পানীয় কিনে দিত এবং স্রেফ তার কথা শোনার জন্যই তাকে টাকা দিত। সে কখনো কখনো হয়ত মাত্র পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে বেরিয়ে আসতো, কালেভদ্রে হয়তোবা পঞ্চাশ ডলার নিয়ে, আর আমি দরজার পাশে গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে থেকে হাতে কবিতার বান্ডিল নিয়ে ঠাণ্ডায় জমে যেতাম। আমরা এমনকি একবার রেস্তোঁরায় রেস্তোঁরায় ঘুরে চমৎকার মোড়কে প্যাঁচানো চকলেট, ক্যান্ডি বিক্রি করার উদ্যোগও নিয়েছিলাম। আবারও জুনই যেত সেইসব জায়গায়, তার আগ্রহ ছিল, আমার ছিল না। লোকেরা হাসাহাসি করে আমাকে বার করে দিতো, আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। জুন খুব সুন্দরী ছিল। আমি কখনো লেখার কাজ চাইতে গেলে জুনকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম। আমি একা গেলে যতটা সহানুভূতি ও আনুকূল্য পেতাম তার সঙ্গে গেলে সচরাচর এর চেয়ে বেশিই পেতাম। আমরা একদিন লিবার্টি ম্যাগাজিন-এর প্রধানের সঙ্গে দেখা করি। আমি তাঁর কাছে সহকারি সম্পাদক পদের জন্য চাকরি প্রার্থনা করি। তিনি জুন ও আমার দিকে ভালো করে চেয়ে দেখে আমাকে বলেন, "শব্দ নিয়ে একটি রচনা লিখে নিয়ে আসো!" আমাকে ভালো চাকরি দিতে পারেন এমন একজনের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে আমি লাফিয়ে উঠি, তাছাড়া বিষয়টাও ছিল অনেক ব্যাপক, আমি এ-নিয়ে অনেক কিছুই লিখতে পারতাম। গবেষণা করার জন্য আমি ফাঙ্ক অ্যান্ড ওয়াগনাল-এর অভিধানের দপ্তরে যাই। ফ্রাঙ্ক ভিজটেলী ছিলেন এর সম্পাদক, তিনি এমন একজন মানুষ যাঁকে কোনদিনই ভুলবো না আমি। তিনি গোটা অভিধানটিই তিনবার কি চারবার পড়েছেন! আমাদের মধ্যে খুবই উজ্জীবক একটি আলোচনা হয়। আমাদের সাক্ষাৎকারের পর, কয়েকদিনের মধ্যেই,…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.