কখনো চাণক্য ছিলাম না। এ ছিল আমার নামে সবসময়ের ভুল প্রচারণা। জীবনে খুব সহজসূত্র মেনে চলেছি। দায়িত্ব নিয়েছি, দায়িত্ব পালন করেছি।[..]

আমার রাজনৈতিক জীবনটা এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি বেশ বুঝতে পারছি – আমাকে আর কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই – দলের হাইকমান্ডের যেটুকু প্রয়োজন – তা আমি আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পালন করতে পারব, এতই আত্মস্থ আমার কাছে আমার দল। কিন্তু ২০১৪-এর পর অবসরের কথা ভাবছিলাম, ভাবছিলাম সংসদ সদস্যপদ, মন্ত্রীত্ব এসব থেকে বিদায় নেব। অবশ্য এই কিছু দিন ধরে ভাবছি ২০১৪টাকে ২০১৬ পর্যন্ত যদি নিয়ে যাই, তাহলে ভাল হয় – ভাবছি যদি আমি কেন্দ্রকে ছেড়ে ২০১১তে নিজের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারি, তাহলে সেদায়িত্ব পালন করে ২০১৬তে একেবারে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারি। মমতার রাজনৈতিক জীবনটা এখন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতি এখন তার হাতের মুঠোয়। ২০১১তে মহাস্থবির বামফ্রন্ট সরকারের পতন সে ঘটাতে পারবে – কিন্তু যা সে পারবে না – তা ওই মুখ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন। এর মধ্যেই রেলমন্ত্রী হিসেবে ওর যে ব্যর্থতা, তাতে সামনের দিনগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীত্বের মতো জটিল ও কঠিন দায়িত্ব পালন করা ওর জন্য হবে এককথায় অসম্ভব। ঠিক সেখানেই যদি কেউ ভাবে , কে

হবে পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী? – তাহলে সবদিক বিবেচনায় তাকে এই ‘প্রণব মুখার্জি’র নামের উপর এসেই ভরসা করতে হবে, রাখতে হবে। এবং আমার ভাবনা এখন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে করে এই ভরসা রাখা মানুষগুলো নিরাশ হবে না, আমি নিজের রাজনীতির শেষ দিনগুলো রাজ্যকে দিতে চাই। ইন্দিরার হাত ধরে সেই যে রাজ্য খেকে কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলাম, কেন্দ্রে আমার বহুবিধ কাজের অভিজ্ঞতা ও প্রভাবের উপর ভিত্তি করে আমি এবার আমার রাজ্যের জন্য আমার প্রশাসনিক উৎকর্ষের নির্যাসটুকু দিতে চাই। আমি বাংলার জন্য ফলপ্রসূ ও সুদৃঢ় এমন এক অবস্থান নিশ্চিত করতে চাই, যেন আমার মুখ্যমন্ত্রীত্বের পাঁচ বছর বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে এক নিয়ত সম্ভাবনার পরিকল্পিত রাজ্যের নিশানা হাতে স্থিতধী করে তুলতে পারি। একথা খুবই ঠিক রাজনীতির সবদিক সামলালেও ভোটের রাজনীতির দিকে আমাকে খেয়াল রাখতে হয়নি। ভারতীয় ‘রাজ্যসভা’ আমাকে সেসুযোগ দিয়েছে, ভোটে না দাঁড়িয়েও রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো ‘রাজ্যসভা’ সদস্য হয়েই তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান নিয়ে কাটিয়েছি। ২০০৪ এবং ২০০৯ এই দুবারই আমি লোকসভা সদস্যপদে সরাসরি ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছিলাম, দুবারই বেশ ভালভাবেই সেই পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছি। আজ…

চট্টগ্রামে এখন আর রাজনীতি নেই। রেষারেষি আছে। ঘেঁষাঘেঁষি আছে।[..]

বলার মতো করে সরাসরি লেখা যায় না। লেখার মতো করে সরাসরি বলা যায় না। অনেক দূর যেতে হয়। অনেক সময় পেতে হয়। অভিনিবেশ লাগে। উৎসাহ লাগে। সন্তপ্ত হতে হয়। কাছে যেতে হয়। চট্টগ্রামে এখন আর রাজনীতি নেই। রেষারেষি আছে। ঘেঁষাঘেঁষি আছে। তাই ঠিক করেছি কিছু বলব না। এবারের মেয়র নির্বাচনে চুপ থাকব। চট্টগ্রাম শহরে বসবাস অনেক দিন – সেই ছোট থেকে আজ অব্দি – এশহরের উল্লেখযোগ্য তিনটি দিক : প্রকৃতি, খেলাধুলা, সংস্কৃতি – প্রতিটি একে একে যেতে বসেছে – কারো কোনো দায় নেই – সব দায় আমাদের, নাগরিকদের। নেতারা, আমলারা, ফটকাবাজ ব্যবসায়ীরা ও অক্লান্ত বুদ্ধিজীবিরা যে যার আদায় ঘুষ লুট ফায়দা নিয়ে ব্যস্ত – কিন্তু যখনই পরিষেবার কথা উঠেছে – যখনই প্রয়োজন পড়েছে নাগরিকদের সহায়তার, তখনই সবাই দূরে সরে গেছে। বিস্ময়করভাবে পশ্চাদপদ এক নগর – জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে একজন বড় মাপের নেতা আজ পর্যন্ত দিতে পারল না – প্রকৃতির এতো সৌন্দর্য নিয়েও এনগর ‘রমনা’র সাথে তুলনা করা যায় এমন একটা পার্ক দিতে পারল না – ভাল ভাল সব টুর্নামেন্ট একে একে ধ্বংস করল – সাংস্কৃতিক জগতে এতো অবদানের পরও, আজ পর্যন্ত এখানে একটা ভাল অডিটরিয়াম কমপ্লেক্স ও মিউজিয়াম নেই। দুঃখের শেষ নেই চট্টগ্রামে – বন্দর নগরী – এমন জড় হতোদ্যম বন্দর নগরী পৃথিবীতে আর আছে কি না সন্দেহ আছে। যেনগর নিজের গুরুত্ব নিজে বুঝে নিতে পারে না, যেনগর সিটি কর্পোরেশন ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অসমন্বয়ে দ্বিখণ্ডিত থাকে – সেনগর সত্যিই পিছিয়ে পড়েছে – তার এগিয়ে যাওয়ার পথ অবরুদ্ধ, চট্টগ্রামের আর কোনো আশা নেই। চট্টগ্রাম নির্বাপিত। তাই ১৭ জুনের নির্বাচনের কোনো তাৎপর্য নেই। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন এখনই গুরুত্বহীন। ধড়িবাজ ক্ষমতার খ্যামটার আসর ভেঙ্গে দিতে হবে চট্টগ্রামে। রেষারেষি ঘেঁষাঘেঁষি নিপাত যাক। রাজনীতি ফিরে আসুক চট্টগ্রামে।

শাসন করা তারই সাজে[...]

শাসন করা তারই সাজে শোষণ করে যে।

তিনি মারা গেছেন এখনো একবছরও হয়নি অথচ এর মধ্যেই মহান মে মাসের শেষ দিকে এসে বিখ্যাত সুরজিৎপন্থায় গঠিত হলো ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক সরকার, এই ২০০৯-এর ভারত লোকসভার তৃতীয় ফ্রন্ট সরকার। এমনই হতে পারে মে ২০০৯-এর শেষদিকে কোনো ভারতীয় পত্রিকায় পঞ্চদশ লোকসভার ফলাফল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শুরুর ভাষ্য। বাংলা বিহার উড়িষ্যা অন্ধ্র ও কেরালা এই পাঁচ রাজ্যের লোকসভা ফলাফল ভিত তৈরি করবে তৃতীয় ফ্রন্ট সরকারের এবং তাকে সফলতায় নিয়ে আসবে উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের অন্যান্য প্রদেশের আঞ্চলিক দলগুলোর বিজয়ী সদস্যদের সমর্থন। এই হলো সম্ভাব্য প্রক্রিয়া কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটি কী ঘটবে এখনই বলা যাচ্ছে না, কারণ এবারের লোকসভা নির্বাচন হবে চরম বহুমাত্রিকতার নির্বাচন, সে নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ১৬ মে ২০০৯ ঘোষণা হওয়ার মধ্য দিয়ে অনেক সম্ভাবনা ও অনেক যোগবিয়োগের পরই কিন্তু বেরিয়ে আসবে আরাধ্য সরকার গঠনের ফলাফল। তাই সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের সেই মন্তব্য ‘ফলাফল ঘোষণার পরই বোঝা যাবে তৃতীয় ফ্রন্টের গুরুত্ব’ –এটাই হতে পারে আপাতত শেষ কথা। ভারতের বামফ্রন্ট এখন নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে সুরজিৎপন্থার বাস্তবায়ন, আর তার পরিণতিতে সফলতা আসলে, সে সফলতার উপহারটি তুলে দিতে চাইছে একসময় যাকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিতে চায়নি সিপিএম পলিটব্যুরো, সুরজিতের সহকর্মী ভারতের সতর্কতম রাজনীতিক জ্যোতি বসুকে। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি, বিশেষত আমরা যারা ভারতের প্রতিবেশী, আমরাও চাই অ-কংগ্রেস অ-বিজেপি সরকার, একমাত্র এরকম সরকারের মধ্য দিয়েই, যাকে আমি বারবার বলছি প্রথম ভারতীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার, সম্ভব অনেক বেশী ধর্মনিরপেক্ষ উপমহাদেশ গড়া, যা এখন খুবই প্রয়োজন, এবং যা না হলে উপমহাদেশের পরিস্থিতি দিনের পর দিন আরো খারাপ হবে। কিন্তু একথা আমরা সবাই জানি এই তৃতীয় ফ্রন্ট সরকার ভারতের রাজনীতির কঠিনতম প্রকল্পগুলোর একটি, কিন্তু অসম্ভব কখনো নয়, এবং এবার না হলে যে আর কখনো হবে না তাও নয়, ভবিষ্যৎ তৃতীয় ফ্রন্টের।

সবাই তাকে মই হিসেবেই নিয়েছেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের সব বিরোধীর মই। কংগ্রেস, এসইউসি, সচেতন শিল্পী বিদ্বজ্জন ও নাগরিক, মাধ্যমবাজার—সবার একটাই মই : মমতা মই। তিনি ব্যবহৃত হচ্ছেন সবার জন্য, সবার লক্ষ্যই তার লক্ষ্য; celebrated, ভারতের সবচেয়ে celebrated নেত্রী এখন তিনি, তার ধারে কাছে এখন কেউ নেই। কিন্তু কতদিন? আপাততঃ ১৬ মে ২০০৯ পর্যন্ত, ৪২* এ ১৩** পেলে তিনি যে উচ্চতায় উঠবেন সেখান থেকে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতই নয় সারা পৃথিবী থেকে দেখা যাবে মমতাকে। কিন্তু যদি হয় ভরাডুবি তাহলে সবাইকে নিয়ে তিনি যেখানটায় পড়বেন সেখান থেকে সবাই উঠে পড়বেন আর শুধু মইটি পড়ে থাকবে? এমন মমতাময়ী নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে আগে কখনো হয়নি আর কোনোদিন হবেও না, সে তিনি ১ পান আর ১৩-ই পান। চারিদিকে জয় মমতা, এ নির্বাচন মমতাময়ী : তিনি কি সত্যিই এমনি এক জড় মই শুধু। না, তিনি জড় মই শুধু নন, তিনি স্বয়ংক্রিয় মই, এবং স্বেচ্ছাচারী মই-ও বটে—যখন যাকে ফেলতে হয় তখন তাকে ফেলে দেন—তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায়—তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল নেত্রী, তিনি মই-ই আর কিছু নন, যেই উঠতে চান সোনিয়া বা আদবানি, তিনি কাউকে এখন না করতে পারেন না, তিনি সচেতন মই, বাধা তখনই দেবেন, যখন দিতে চাইবেন, এ এক অনন্য রাজনৈতিক চরিত্র, আশংকা এবার মইটি তার চরম পরিণতিতে পৌঁছে যাবে, ওপরে বা নীচে যেখানেই হোক এরপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কলকাতার ডিলান জয় মমতা স্লোগানকে তখন কবীর সুমনের গান করে তুলবেন আর পথে ঘাটে সুফী ফকিরের মতো ঘুরে ঘুরে জীবনের বাকি দিনগুলো মমতাময়ী সাধনায় দিন কাটাবেন : হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যা হলো... * লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের আসন সংখ্যা ** আনন্দবাজার পত্রিকা ও স্টার আনন্দের সমীক্ষায় তৃণমূল ১৩ আসনে জয়লাভ করবে।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.