আজ এই হত্যার বিচারের দাবিতে আমরা যদি সরব না হই, তবে অভিজিৎ রায় আমাদের যে মানবসত্তা জাগাতে চাইছিলেন তা মিথ্যে হয়ে যাবে। [. . .]

খুব সম্ভব ১৯৯৮ বা ’৯৯ সালের কথা — আমি আমার কলেজ থেকে লোকাল বাসে বাসায় ফিরছিলাম। বাসের মধ্যে হুট করে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। সাথে সাথে দেখি একটা লোক চলন্ত বাস থেকে দৌড়ে নেমে ছুটছে দিগ্বিদিক আর লোকজনও ধর্ ধর্ বলে পিছু ধাওয়া করে ধরে ফেলেছে লোকটাকে। তারপরের ঘটনা বলবার অপেক্ষা রাখে না। মানুষটা গণপিটুনিতে মরে গেছিল কিনা তার খোঁজ কেউ রাখেনি; আমিও না। এখনও নিশ্চয়ই চলতি পথে এমন ঘটনা ঘটে, সবার সে অভিজ্ঞতাও আছে। এর আরো অনেক পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে রোকেয়া হলের ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাস তখন উত্তাল। মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়ে গেল একদিন। মিছিলের ভেতর ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় পরে একেবারে শত্রুর মুখের উপর। হট করেই তীব্র একটা টান খেয়ে আমি পড়ে গেলাম নীচে আর আমার দিকে উঁচিয়ে ধরা রডের বাড়িটা লেগেছিল এক অপরিচিত ছাত্রের গায়ে। এর পর বহু দিন আমি ছেলেটাকে খুঁজেছি। কিন্তু আর খুঁজেই পাইনি। এই দুটো অভিজ্ঞতা থেকে আমি বহুদিন পর্যন্ত মনে করতাম অন্যায় হলে সব মানুষ না হোক কিছু মানুষ নিশ্চয়ই এগিয়ে আসে; কিছু মানুষ নিশ্চয়ই নিজেকে বিপন্ন করেও অন্যকে বাঁচাতে চায়। (যদিও পকেট মার ধরে বেধড়ক পেটানো আমি মানতে পারি না।) বয়স বেড়ে গেছে আমার, আমার মনের, মননের। অভিজ্ঞতার শরীরে ধুলো পড়ে লব্ধ বিদ্যা লুপ্ত হয়েছে। নতুন সব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে আমি এবং আমরা বিস্ময় শূন্য নির্জীব মানুষে পরিণত হয়েছি। আর কিছুই আমাদের বিশেষ নাড়া দেয়া না, ভাবায় না। নইলে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রীর সাহায্যের জন্যে বাড়িয়ে দেয়া রক্তাক্ত হাত আশ্রয়শূন্য হত না। কেবল দুটো জানোয়ার হাজার মানুষের চোখের সামনে এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে বিনা বাধায় বেঁচে পালিয়ে যেতে পারত না। আমরা ‘হয়তো’ নয়, আমরা সত্যিই আর মানুষ নেই। আমাদের পরিচয় কেবল মহিলা অথবা পুরুষ। অভিজিৎ রায় মিথ্যেই আমাদের আলোর পথের দিশা দেখাতে জন্মেছিলেন। আমাদের অন্ধ চোখে আলোর প্রবেশপথ রুদ্ধ। উনি বইয়ের কাটতি দেখে ভেবেছিলেন হয়তো মানুষ তাঁর চিন্তাকে পড়ছে, ধারণ করছে। উনি জানতেনই না আমাদের মস্তিস্ক কেবল এক্সটারনাল এবং ইন্টারনাল হার্ডড্রাইভ মাত্র। আমরা পড়া শেষ করেই সেগুলোকে সুরক্ষিত স্মৃতিবাক্সে পুরে রাখি যত্ন করে। আমরা পাঠ করি কেবল, কিন্তু ধারণ করতে পারি না। আমরা…

আমার বদ্ধমূল ধারণা পাকিস্তান আর্মির অপারেশন সার্চলাইটের একটা উর্দু নাম ছিলই, সেটা পাক আর্মিরা জানত শুধু, বহুবার বহুজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ নিয়ে কিছু পড়তে গেলেই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খুঁজে দেখেছি আমার জিজ্ঞাসার উত্তর মেলে কিনা [...]

আমার বদ্ধমূল ধারণা পাকিস্তান আর্মির অপারেশন সার্চলাইটের একটা উর্দু নাম ছিলই, সেটা পাক আর্মিরা জানত শুধু, বহুবার বহুজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি, ২৫শে মার্চ ১৯৭১ নিয়ে কিছু পড়তে গেলেই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খুঁজে দেখেছি আমার জিজ্ঞাসার উত্তর মেলে কিনা, বছর বছর চলে গেল – কোনোভাবেই এব্যাপারে কিছু জানতে পারলাম না – কিন্তু আমি এখন থেকে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এর পাক আর্মির অপারেশনকে আর সার্চলাইট হিসেবে অভিহিত করব না – আমি এখন থেকে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এর পাক আর্মির অপারেশনকে হামেঁ মিট্টি চাহিয়ে এই উর্দু নামেই ডেকে যাব – যত দিন পাক আর্মির সেদিনের অপারেশনের উর্দু নামটা জানা না যায় তত দিন আমার কাছে এটাই থাকুক সেই কালরাত্রির আগ্রাসনের উর্দু নাম। সত্যিকার অর্থে তারা তাই চেয়েছিল, তারা এই মাটি চেয়েছিল, এই মাটিতে পবিত্র পাকিস্তানিদের চেয়েছিল, আমাদেরকে মেরে নদীর বুকে ফেলে পলির সাথে বঙ্গোপসাগরে বিলীন করে দিতে চেয়েছিল, আর তারপর এই মাটি পবিত্র পাকিস্তানের পবিত্র পাকিস্তানি দিয়ে ভোগ করতে চেয়েছিল – সার্চলাইট বাইরে বাইরে ভেতরে ভেতরে ছিল হামেঁ মিট্টি চাহিয়ে।

এসময়ে সবচেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে, তেলের থেকে সব প্রাপ্তি যেন সরকার এদেরকে খাইয়ে না দেয় [...]

টুইট করতে করতে অনেক সময় এমন কিছু গুচ্ছ টুইট হয়ে যায় যেগুলোকে পোস্টের রূপ সহজে দেয়া যায়। সেকাজটাই এখানে করা হল। আগে এরকম প্রচুর টুইট কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন থেকে ভাবছি, এরকম টুইটগুলোকে ‘টুইট থেকে পোস্টে’ সিরিজে সংগ্রহ করে রাখব। তেলের উৎপাদক বেড়েছে চাহিদা সামান্য বেড়েছে তেলের দাম তো কমবেই— MasudKarimমাক (@urumurum) January 7, 2015 উৎপাদকদের সর্বনাশ হলেও বাংলাদেশের মতো সরকারগুলোর এখন দাপটে থাকার সময় - এসময়ে সবচেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো— MasudKarimমাক (@urumurum) January 7, 2015 নিয়ে, তেলের থেকে সব প্রাপ্তি যেন সরকার এদেরকে খাইয়ে না দেয়, মাঝারি ও বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প গিয়ে রেন্টাল বন্ধ করার এমন ভাল সুযোগ আর আসবে— MasudKarimমাক (@urumurum) January 7, 2015 না - কিন্তু সরকার যদি অতি লোভে এগুলি থেকে সরে না এসে আরো রেন্টালে ডুবে যায় তাহলে কিন্তু সরকার তাড়াতে রাজনীতি লাগবে না - তেলনীতি দফারফা— MasudKarimমাক (@urumurum) January 7, 2015 দেবে, কাজেই লোভে পড়বেন না কৌশলী হয়ে বড় প্রকল্পের দিকে চলে যান, কোনো নীতিই তখন আপাতত সরকার তাড়াতে পারবে না।— MasudKarimমাক (@urumurum) January 7, 2015 তেলের উৎপাদক বেড়েছে চাহিদা সামান্য বেড়েছে তেলের দাম তো কমবেই – উৎপাদকদের সর্বনাশ হলেও বাংলাদেশের মতো সরকারগুলোর এখন দাপটে থাকার সময় – এসময়ে সবচেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে, তেলের থেকে সব প্রাপ্তি যেন সরকার এদেরকে খাইয়ে না দেয়, মাঝারি ও বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পে গিয়ে রেন্টাল বন্ধ করার এমন ভাল সুযোগ আর আসবে না – কিন্তু সরকার যদি অতি লোভে এগুলি থেকে সরে না এসে আরো রেন্টালে ডুবে যায় তাহলে কিন্তু সরকার তাড়াতে রাজনীতি লাগবে না – তেলনীতি দফারফা করে দেবে, কাজেই লোভে পড়বেন না কৌশলী হয়ে বড় প্রকল্পের দিকে চলে যান, কোনো নীতিই তখন আপাতত সরকার তাড়াতে পারবে না।

মাত্র ৫ জন আগ্রহী পাঠকও কি নেই বাংলাদেশের এক-একটি জেলায়? তাঁদের কাছে পৌঁছানোর কথা আমরা ভাবছি কি? প্রতি জেলায় গড়ে যদি ৫ কপি করেও বিক্রি হয়, ৩২০ কপি বই বিক্রি হতে ৩ বছরের বদলে বড়োজোর ৩ সপ্তাহ, মানসাঙ্কের হিসাবে এমনকী ৩ মিনিট লাগার কথা! [. . .]

কোনো একটা বই বা লিটল ম্যাগাজিন বের করার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-কুমিল্লার দু-চারটা চেনা দোকানে ৫/১০ কপি দিয়ে আসা, এখন ফেসবুকেও একটু শেয়ার-টেয়ার করা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে জড়ো হওয়া — অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিনকর্মী হিসেবে আমাদের অপেশাদার বিপণনের দৌড় এই পর্যন্তই। (অবশ্য কেউ কেউ নিশ্চয়ই আরো গুছিয়েই করেন কাজটা।) বগুড়ার বা রাজশাহীর বা বরিশালের বা নোয়াখালির পাঠক-পাঠিকাদের হাতের নাগালে আমাদের প্রকাশনাগুলি পৌঁছে দিতে পারলেই কি ভালো হয় না? দেশের ৬৪ জেলায় না হোক, অন্তত বেশ কিছু জেলা শহরেই নিশ্চয়ই এমন একাধিক  সুপরিচিত বইবিপণি আছে যেখান থেকে বই বা লিটল ম্যাগাজিন সচরাচর বিক্রি হয়, এবং আর্থিক লেনদেনের বিষয়েও যাঁরা আন্তরিক। মাত্র ৫ জন আগ্রহী পাঠকও কি নেই বাংলাদেশের এক-একটি জেলায়? তাঁদের কাছে পৌঁছানোর কথা আমরা ভাবছি কি? প্রতি জেলায় গড়ে যদি ৫ কপি করেও বিক্রি হয়, ৩২০ কপি বই বিক্রি হতে ৩ বছরের বদলে বড়োজোর ৩ সপ্তাহ, মানসাঙ্কের হিসাবে এমনকী ৩ মিনিট লাগার কথা! পাঠকের কাছে পৌঁছানো না গেলে ‘লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন’, ‘মুদ্রণশিল্পের বিপ্লব’ ইত্যাদি গালভরা কথারও তো কোনো মানে থাকে না। নিজস্ব বিপণন-ব্যবস্থা আর বিজ্ঞাপনের জোরে কেবল  বড়ো প্রকাশকরাই তাহলে টিকে থাকবে? আমাদেরও কি কিছুই করণীয় নেই? জনপ্রিয় লেখকদের বই বাদ দিলে অধিকাংশ বইয়েরই মুদ্রণ সংখ্যা কমতে কমতে এখন ৩০০-তে এসে দাঁড়িয়েছে। বই বিক্রি হয় না বলে কম ছাপা হয়, আর কম ছাপা হলে বইপিছু খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দামও যায় বেড়ে। এই দুষ্টচক্রেই আমরা ঘুরপাক খেয়ে মরব? সেজন্যই প্রত্যেক জেলার চিহ্নিত বইবিপণিগুলোর একটা তালিকার দরকার এখন। আর সে-তালিকা ধরে সমন্বিত উদ্যোগে বিকল্প বিপণনের একটা দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও সম্ভব। লেখক-পাঠক-প্রকাশক সবারই এই ‘সামাজিক নেটওয়ার্ক’ কাজে লাগবে।

স্যার আমি গল্পটা শুরু করি। আপনে শুনতে শুনতে ঘুমায় পড়েন। চক্রবর্তীর এমন বলার কারণ আছে। বেশ ক’রাত ধরে সে দেখেছে আমার ঘুমের জন্য তার গল্প টনিকের মত কাজ করে। চক্রবর্তীর বয়স বিশের মত হবে। দিন পনের আগে ডি জি এফ আইর নিরাপদ গর্ত যেখানটায় আমাকে রাখা হয়েছে, সেখানে লাগোয়া খাটিয়াতে তাকে ফেলে দিয়ে যায়। তখন শেষ রাত। নিঃসাড় হয়ে সে পড়েছিল। সেলের বাইরের করিডোরে প্রহরীর পদশব্দ মৃদু হয়ে আসছিল, সেও হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিরক্তিকর পায়চারিতে ঝিমুনিও হয়তো এসেছে তার। সেই ফাঁকে আমি ঐ যুবকের কপালে হাত রাখি। মে মাসের এই সময়টায় বেশ গরম পড়েছে। কিন্তু ছেলেটির শরীরতো ঠাণ্ডা। নাকের সামনে হাত রেখে বোঝার চেষ্টা করি ও বেঁচে আছে কিনা। শ্বাস-প্রশ্বাস বোঝা যায় কি যায়না। পাটের ছালায় জড়ানো তার শরীর। বুকের বাম দিকে কান পাতি। দূর থেকে ভেসে আসা ঘড়ীর কাটার মৃদু শব্দের মত বুকের শব্দ শুনে বুঝতে পারি জীবন প্রদীপ এখনও নিভে যায়নি। কিন্তু তার উত্তাপ বড় কম। গোটা শরীরকে উষ্ণ রাখতে তা বড় অপ্রতুল। ওর হাতের তালু, কপাল ও বুকে দ্রুত লয়ে হাত দিয়ে ঘষতে থাকি। এ সেলের অনেক উঁচু সিলিংএ ঝোলানো কম পাওয়ারের বাল্ব থেকে ধূষর আলো ওর মুখের উপর পড়েছে। পাণ্ডুর সে মুখে মৃত্যুর ছায়া। আমার হাতের, শরীরের সবটুকু উত্তাপ দিয়ে তাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করি। অতি ধীরে সে চোখ মেলে। কি নাম তোমার? শুধোই তাকে। জবাব দেয় না। বোঝার চেষ্টা করে হয়তো। সময় নিয়ে বলি, কোন ভয় নেই। এই সেলে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আতঙ্ক হয়তো একটু কমে। ওর কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে আবারও জিজ্ঞাসা করি, কি নাম তোমার? কি কর তুমি? আমাকে বলতে পার। আমিও তোমার মত বন্দী এখানে। আমি একজন শিক্ষক। এবারে তার মুখাবয়বে পরিবর্তন দেখি। আরও একটু বড় করে চোখ মেলে তাকায়। খুব মৃদু শব্দে নামটি বলে। অরুণ চক্রবর্তী। পুরনো এলিফেন্ট রোডে এক ফার্মেসীতে কাজ করতো। রামপুরা ব্রিজের ওপারের বস্তিতে ভাড়া ঘরে থাকত। গত সন্ধ্যায় ফার্মেসী থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। সারা রাত ধরে বেদম পিটিয়েছে। বলে, আমি বোধ হয় আর বাঁচুম না স্যার। কি জানতে চায় তোমার কাছে? এবারে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.