নীল মলাটের ছোট্ট একটা বই। ১৪৯ পাতার মধ্যেই শেষ। কিন্তু শেষ হয়ে গেলেও মুগ্ধতা শেষ হয না। তোত্তোর সঙ্গে কাটানো ১৪৯টা পাতায় ফিরে যাই বারবার। যেন আমাদের অব্যক্ত শৈশব লেখা হযে গেছে তেৎসুকো কুরোয়ানাগির কলমে। [...]

‘তোত্তো-চান’, তেৎসুকো কুরোয়ানাগি, ছবি : চিহিরো ইবাসাকি, অনুবাদ: মৌসুমী ভৌমিক, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া, ২০০০ . . . জাপানের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব তেৎসুকো কুরোনায়াগির (জন্ম ১৯৩৩) ছোটবেলার স্মৃতিকথা ‘তোত্তো-চান’ (১৯৮১)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার জাপানের টোকিও শহরের ঘটনা। এতে তেৎসুকোর শৈশবের সঙ্গে রয়েছে অন্যরকম একটি স্কুলের গল্প, রেলগাড়ির বাতিল কামরাগুলো ছিলো যার ক্লাসরুম। খোলামন আর স্বাধীনভাবে কিছু করার অধিকার শিক্ষার উত্তম মাধ্যম – মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোসাকু কোবায়াশি (মৃত্যু ১৯৬৩)। স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে একজন আদর্শ শিক্ষাবিদের আরাধ্য শিক্ষাব্যবস্থার অনন্যসাধারণ নানা দিক । জাপানি ভাষায় প্রকাশের প্রথম বছরেই বিক্রি হয়েছিলো ৪৫ লক্ষ কপি। নানা ভাষায় অনূদিত ‘তোত্তো-চান’ সারা পৃথিবীর লক্ষ মানুষের মন জয় করেছে। মূল জাপানি ভাষা থেকে প্রথম বাংলা অনুবাদ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হলেও সেটা ছাপা নেই বলে জানা গেছে। অবশেষে শিল্পী গবেষক মৌসুমী ভৌমিকের অনুবাদে আমরা বাংলায় বইটি পড়বার সুযোগ পেয়েছি। নীল মলাটের ছোট্ট একটা বই। ১৪৯ পাতার মধ্যেই শেষ। কিন্তু শেষ হয়ে গেলেও মুগ্ধতা শেষ হয না। তোত্তোর সঙ্গে কাটানো ১৪৯টা পাতায় ফিরে যাই বারবার। যেন আমাদের অব্যক্ত শৈশব লেখা হযে গেছে তেৎসুকো কুরোয়ানাগির কলমে। আজ আপনাদের তোত্তো-চানের গল্প শোনাবো। আশা করি ভালো লাগবে তোত্তো-চানের ছেলেবেলা আর হেডমাস্টারমশাই সোসাকু কোবায়াশির স্বপ্ন ‘তোমোই গাকুয়েন’কে।   ২ সাত বছরের ছোট্ট তোত্তো-চানকে নিয়ে জিয়ুগায়োকা স্টেশনে নেমেছেন মা। ওকে নতুন স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। কিন্তু তোত্তোর সেসব চিন্তা নেই। টিকিট চেকারের টিকিট ভর্তি বাক্স দেখেই তোত্তো ভুলে গেলো ক’দিন আগেই সে হতে চেয়েছিল গুপ্তচর। মাকে বললো, “ধরো, এমনিতে আমি টিকেট বিক্রি করি, কিন্তু আসলে আমি একজন গুপ্তচর।” আবার রাস্তার বাজনাওয়ালাদের দলেও তার থাকা চাই, পুরোনো স্কুলের জানালায় দাঁড়িয়ে রোজ যাদের কাছে বাজনা শুনবার আবদার করত। আরো কত কী যে ওর ভালো লাগতো। ওর খুব ভালো লেগেছিল স্কুলের ঢাকনাওয়ালা ডেস্ক যার ভেতরে অনায়াসে ভরে ফেলা যায় রাজ্যের সব জিনিস, আর  ডেস্কের ঢাকনা খুলে ভেতর থেকে সেসব বের করা আর ঢোকানোও ছিল ভারী আনন্দের। দিদিমণির পড়ানোর চেয়ে ওর ভালো লাগতো কার্নিশে বসে থাকা সোয়ালো পাখিদের সঙ্গে কথা বলতে। ছবি আঁকার সময়ও কল্পনার আকাশ হয়ে উঠতো সবুজ, আকাঁর খাতা…

এইখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাদত হাসান মান্টো। তাঁর সঙ্গে মাটি-চাপা পড়ে আছে ছোটগল্প রচনার যাবতীয় কারুকৃতি আর প্রহেলিকা [...]

লাহোরে তাঁর সমাধিতে এই এপিটাফের দেখা মিলবে না। কট্টরপন্থী আর মৌলবিদের ভয়ে তাঁর আত্মীয়রা এই স্মৃতিলিপি উৎকীর্ণ করাননি। তবু আজ জন্মশতবর্ষে তাঁর গল্প-রেখাচিত্র-স্মৃতিকথার নিবিড় পাঠের মধ্য দিয়ে না-দেখা সেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা নির্ভুল পড়ে নিতে পারি লেখকের স্বরচিত এই এপিটাফ : এইখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সাদত হাসান মান্টো। তাঁর সঙ্গে মাটি-চাপা পড়ে আছে ছোটগল্প রচনার যাবতীয় কারুকৃতি আর প্রহেলিকা... তাল তাল মাটির নীচে শুয়ে তিনি আপনমনে ভাবছেন, তাঁদের দু’জনের মধ্যে মহত্তর ছোটগল্পলেখক কে : ঈশ্বর না কি তিনি। মৃত্যু : ১৮ জানুয়ারি ১৯৫৫। জন্ম : ১১ মে ১৯১২।

গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়ের করা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগসমূহ খণ্ডন করে ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, যা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেকর্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এখানে তাঁর বক্তব্যের বঙ্গানুবাদ।

গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশন বাংলাদেশে বর্তমানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে সকল পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল -- বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিচারে অভিযুক্তের অধিকার কতটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে। এই বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পূর্বেই ট্রাইবুনালের প্রক্রিয়াকে সমালোচনা করে বিস্তারিত আইনি ব্রিফ জমা দেয়া হয়। ৩১ তারিখে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শুনানির লক্ষ্য ছিল ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়ের করা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের এই সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই। আসামী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে টোবি ক্যাডম্যান বক্তব্য রাখেন। বিপরীতে ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, যা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেকর্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কীভাবে তদন্ত ও বিচারের উন্নত মানদণ্ডের নীতিসমুহ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে তা বর্ণনা করেন।মূল ইংরেজিতে দেয়া বক্তব্যটি প্রথম প্রকাশিত হয় আইসিএসএফ এর ব্লগে যা থেকে আইসিএসএফ অনুবাদ টিমের সদস্যবৃন্দ বাংলায় অনুবাদ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলোর প্রতিনিয়ত বিচারের মান নিয়ে করা মিথ্যাচারে যাঁরা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়ী এবং একই সাথে যাঁরা পুরো পক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেতে চান লেখাটি তাঁদের কাজে লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ডেলিগেশনের সামনে পুরো শুনানিটিতে সকল পক্ষের বক্তব্য নীচের এই ভিডিও থেকেও দেখে নেয়া যাবে: --------------------------------------------------- বাংলাদেশ বিষয়ক সভা: যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জবাবদিহিতা প্রসঙ্গে মতবিনিময় দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের সম্পর্কবিষয়ক কমিটি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ৩১ জানুয়ারি ২০১২ কক্ষ ১ই-২, আলতেইরো স্পিনেল্লি ভবন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ব্রাসেলস বক্তব্য - এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ________________________ ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সন্মানিত সদস্যবৃন্দ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:   ১. প্রথমেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনের সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেবার জন্য। বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের অপরাধসমূহের বিচারের দাবীকে সবসময় সমর্থন জানিয়ে আসার জন্যও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ইয়োরোপীয় পার্লামেন্টে ইতঃপূর্বে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা, বিশেষ করে ২০০৫ সালে যখন আপনারা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের সন্মুখীন করার দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।   ২. এছাড়াও ধন্যবাদ জানাই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ (ICDB) এবং বাংলাদেশ সাপোর্ট…

দ্বিতীয় অধ্যায় [শি ল্প শা শ্ব ত/ মিশর, মেসোপটেমিয়া, ক্রিট] পৃথিবীর সবখানেই কোনো না কোনো ধরনের শিল্পের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু শিল্পের কাহিনী একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস হিসেবে দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু গুহায় বা উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মাঝে শুরু হয়নি। [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্‌কথন-এর সূচনাংশ, ৩. প্রাক্‌কথন-এর মধ্যাংশ, ৪. প্রাক্‌কথন-এর শেষাংশ, ৫. প্রথম অধ্যায়ের সূচনাংশ, ৬. প্রথম অধ্যায়ের শেষাংশ] ২ শি ল্প শা শ্ব ত মিশর, মেসোপোটেমিয়া, ক্রিট [সূচনাংশ] পৃথিবীর সবখানেই কোনো না কোনো ধরনের শিল্পের অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু শিল্পের কাহিনী একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস হিসেবে দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু গুহায় বা উত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মাঝে শুরু হয়নি। এমন কোনো প্রত্যক্ষ ঐতিহ্য নেই যা এই বিস্ময়কর প্রারম্ভকে আমাদের যুগের সঙ্গে যুক্ত করেছে, তবে এমন একটি প্রত্যক্ষ ঐতিহ্য রয়েছে যা শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী থেকে অনুরাগী বা অনুলিপিকারের কাছে উত্তরাধিকার সূত্রে চলে এসেছে, এবং যা আমাদের নিজেদের কালের শিল্পকে, যে-কোনো বাড়ি বা যে-কোনো পোস্টারকে পাঁচ হাজার বছর পূর্বের নীলনদের উপত্যকার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করেছে। কারণ, আমরা লক্ষ করব, মহান গ্রীক শিল্পীরা পাঠশালায় গিয়েছিলেন মিশরীয়দের সঙ্গে, এবং আমরা সবাই গ্রীকদেরই শিক্ষার্থী। কাজেই, মিশরের শিল্পকলা আমাদের কাছে অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। সবাই জানে মিশর হচ্ছে পিরামিডের দেশ (চিত্র ৩১), সেই সব পাথুরে পর্বতের দেশ যেসব পর্বত ইতিহাসের সুদূর দিগন্তে ক্ষয়প্রাপ্ত দিকচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেগুলোকে যতোই দূরবর্তী আর রহস্যময় বলে মনে হোক না কেন, তারা তাদের নিজেদের গল্পের অনেকটাই বলে দেয় আমাদের। তারা আমাদেরকে এমন এক দেশের কথা বলে যে-দেশ এমন সর্বাত্মকভাবে সুশৃঙ্খল যে একজন মাত্র রাজার জীবদ্দশাতেই পাথরের এসব দৈত্যাকার স্তূপ দাঁড় করিয়ে ফেলা সম্ভবপর ছিল। তারা আমাদের সেই সব রাজার কথা বলে যাঁরা এতোই বিত্তশালী এবং ক্ষমতাধর ছিলেন যে হাজার হাজার শ্রমিক বা দাসকে বাধ্য করতে পারতেন বছরের পর বছর ধরে তাঁদের স্বার্থে খাটতে, পাথর খুঁড়ে তুলতে, সেগুলোকে নির্মাণস্থলে টেনে নিয়ে যেতে এবং আদিমতম যন্ত্রপাতির সাহায্যে সেগুলো স্থানান্তর করতে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সমাধিস্থলটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয় রাজাকে তার বক্ষে আশ্রয় দেয়ার জন্যে। কোনো নৃপতি বা জাতিই স্রেফ একটা স্মৃতিস্তম্ভ গড়ার জন্যে এতো ব্যয় বা পরিশ্রম করতো না। বস্তুত, আমরা জানি যে রাজা-রাজড়া এবং তাঁদের প্রজাদের চোখে এসব পিরামিডের একটি ব্যবহারিক গুরুত্ব ছিল। রাজকে বিবেচনা করা হতো এক ঐশ্বরিক সত্তা হিসেবে, যে-সত্তা তাদের ওপর প্রভুত্ব করে; এবং এই পৃথিবী থেকে তাঁর বিদায়ের কালে তিনি উঠে যাবেন সুরলোকে, যেখান থেকে তিনি…

আদিম শিল্পের একটা বড় অংশ যে দেখতে একেবারেই অদ্ভুত তার কারণ তাহলে কী হতে পারে? সম্ভবত, এ-প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদেরকে আরো একবার ফিরে আসতে হবে আমাদেরই কাছে, এবং আমরা সবাই যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি সেসবের কাছে। [...]

[১. অনুবাদক ও রচয়িতার ভূমিকা, ২. প্রাক্‌কথন-এর সূচনাংশ, ৩. প্রাক্‌কথন-এর মধ্যাংশ, ৪. প্রাক্‌কথন-এর শেষাংশ, ৫. প্রথম অধ্যায়ের সূচনাংশ] (পূর্বানুসৃতি) ১ প্রা র ম্ভ বি স্ম য় ক র প্রাগৈতিহাসিক এবং আদিম জনগোষ্ঠী সমূহ; প্রাচীন আমেরিকা [শেষাংশ] আদিম শিল্পের একটা বড় অংশ যে দেখতে একেবারেই অদ্ভুত তার কারণ তাহলে কী হতে পারে? সম্ভবত, এ-প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদেরকে আরো একবার ফিরে আসতে হবে আমাদেরই কাছে, এবং আমরা সবাই যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি সেসবের কাছে। এক টুকরো কাগজ নিয়ে সেটার ওপর হিজিবিজি করে কোনোরকমে একটা মুখ আঁকা যাক। তেমন কিছু না, মাথা বোঝাতে একটা বৃত্ত, নাকের জন্যে একটা টান, আরেকটা টান মুখের জন্যে। এবারে সেই চক্ষুবিহীন হিজিবিজিটার দিকে তাকানো যাক। অসহনীয় রকমের বিষণ্ণ বলে মনে হচ্ছে না ওটাকে? বেচারা দেখতে পায় না। আমরা ভাবতে থাকি, তাহলে তো দুটো চোখ দিতেই হচ্ছে ওটাকে। আর, যখন দুটো ফুটকি বসিয়েই ফেলি, এবং শেষ পর্যন্ত ওটা যখন তাকাতে পারে আমাদের দিকে, তখন যে কী স্বস্তি আমাদের! এর সবটাই আমাদের কাছে একটা তামাশা ছাড়া কিছু না হলেও একজন আদিবাসীর কাছে কিন্তু ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। কাঠের একটা খুঁটিতে সে যে সাদামাটা একটা মুখের ছবি এঁকে দিয়েছে তাতে করেই, তার কাছে, সেটা পুরোপুরি বদলে গেছে; মুখটা তার মধ্যে যে প্রভাব সৃষ্টি করেছে সেটাকে লোকটি মুখটার জাদুকরী ক্ষমতার একটি চিহ্ন বলেই ধরে নিয়েছে। দেখার জন্যে সেটার দুটো চোখ থাকলেই হলো, মুখটাকে এর চাইতে বাস্তবসম্মত করে তৈরি করার কোনো প্রয়োজন নেই। ২৪ নম্বর চিত্রে পলিনেশীয় 'যুদ্ধ দেবতা' ওরো-র একটি ছবি দেখা যাচ্ছে। পলিনেশীয়রা খোদাই কাজে তুখোড়, কিন্তু তারপরেও এটাকে মানুষের একটা সঠিক প্রতিরূপ হিসেবেই দেখাতে হবে এমনটি মনে হয়নি তাদের কাছে। আমরা শুধু দেখতে পাই, এক টুকরো কাঠকে বোনা কিছু আঁশ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। সেটার দু'চোখ আর দু'বাহুরই শুধু আভাস দেয়া হয়েছে এই আঁশের বেনী দিয়ে, কিন্তু একবার সেগুলো লক্ষ করলেই খুঁটিটি আমাদের সামনে আবির্ভূত হয় অশুভ শক্তির একটা চেহারা নিয়ে। এখনো আমরা ঠিক শিল্পরাজ্যে প্রবেশ করিনি, কিন্তু আমাদের হিজিবিজি পরীক্ষাটার কাছে সম্ভবত আরো কিছু শেখার আছে আমাদের। আঁকিবুকি-কাঁটা মুখের আদলটা সম্ভাব্য সব রকম উপায়ে বদলে দেয়া যাক। চোখের আকৃতিটাকে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.