দ্য ট্রায়াল অব দ্য বার্থ অব আ নেশন -- সোজা বাংলায় বলতে গেলে একটি রাষ্ট্রের জন্মবিচার; লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট-এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এটি। ইকোনমিস্ট কি তাদের এই শিরোনাম বুঝেশুনে দিয়েছে? জানা নেই আমাদের। তবে বুঝে হোক আর না-বুঝে হোক, ইকোনমিস্ট একটি নির্মম সত্যই বলে বসেছে, বাংলাদেশে এখন চূড়ান্ত অর্থে এই রাষ্ট্রের জন্মের বিচারকাজ চলছে। [...]

যুদ্ধাপরাধী বিচারের রাজনীতি ৪ দ্য ট্রায়াল অব দ্য বার্থ অব আ নেশন -- সোজা বাংলায় বলতে গেলে একটি রাষ্ট্রের জন্মবিচার; লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট-এর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এটি। ইকোনমিস্ট কি তাদের এই শিরোনাম বুঝেশুনে দিয়েছে? জানা নেই আমাদের। তবে বুঝে হোক আর না-বুঝে হোক, ইকোনমিস্ট একটি নির্মম সত্যই বলে বসেছে, বাংলাদেশে এখন চূড়ান্ত অর্থে এই রাষ্ট্রের জন্মের বিচারকাজ চলছে। এই জনপদের মানুষ তখন চেয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসন ও দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক রাষ্ট্রের বাইরে এসে গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যদিকে, এরকম রাষ্ট্র যাতে মুক্তিকামীরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারে সেজন্যে বিরোধীরা সবরকম সহিংস পথ বেছে নিয়েছিল। ইকোনমিস্টের শিরোনাম তাই পুরোপুরি ইঙ্গিতময় : এই রাষ্ট্রে কি তারা আইনের উর্ধ্বে থাকবে, যারা একদিন এই রাষ্ট্রের জন্ম ঠেকানোর জন্যে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে সব কিছু করেছে? ওরাই করবে রাষ্ট্র পরিচালনা যারা একাত্তরে গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করেছে একটি রাষ্ট্রের জন্মযন্ত্রণা? আর এর বিপরীতে তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে ন্যায় বিচার, যারা একদিন এই রাষ্ট্রের জন্যে স্বজন হারিয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে আর পালিয়ে থেকে জীবন বাঁচিয়েছে? না কি বাংলাদেশ একাত্তরের সেইসব পরিবারের জন্যে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে প্রমাণ করবে, যারা ম্যাসাকারের শিকার হওয়ার মধ্যে দিয়ে খুব সরল সিধা এই সত্য তুলে ধরেছিল যে, তাদের আকাঙ্ক্ষিত নতুন একটি রাষ্ট্রের জন্মের জন্যে যে কোনও পরিণতি বরণ করতে রাজি তারা? যেমনটি বলেছিলেন খান সারওয়ার মুরশিদ একাত্তরের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথবাণীর একটি বাক্য হিসেবে : ‘আমরা অঙ্গীকার করছি স্বাধীনতার জন্য জীবন সম্পদ সব দেব।’ আজ হয়তো অনেকে কথাটি মানতে রাজি হবেন না, কিন্তু ভবিষ্যত প্রমাণ করবে, এই প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যে দিয়ে ইকোনমিস্ট পৃথিবীর সাংবাদিকতার ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে জঘন্য কালো একটি অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে মিশন নিয়ে ইকোনমিস্ট এখন মাঠে নেমেছে সে মিশনকে বৈধতা দিতে তারা মীমাংসিত বিষয়কেও অমীমাংসিত করে তোলার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। যেমন, প্রতিবেদনের প্রথম পরিচ্ছেদেই তারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা উল্লেখ করতে গিয়ে জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা তিন লাখ থেকে বর্তমান সরকারের দাবি অনুযায়ী ত্রিশ লাখের মধ্যে একটা কিছু হবে। যুদ্ধাপরাধীদের…

‘আমি বা আমরা কোনো আইন ভঙ্গ করিনি, কোনো অন্যায় করিনি। বরং প্রয়োজনে আমাদের সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে এই বিচার প্রক্রিয়াকে যতভাবে সম্ভব সহায়তা দানের চেষ্টাই করে গেছি এবং যাবো। এই সময়ে সবার কাছে আমার একটি মাত্র বিনীত অনুরোধ থাকবে। এই বিচারের দিকে পুরো দেশ এবং নতুন প্রজন্ম অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, ১৯৭১ সালের ভিকটিম এবং তাদের পরিবারেরাও তাকিয়ে আছেন। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রগতির শিবিরে যদি কোনো বিভেদ বা ব্যক্তিগত মনোমালিন্য থেকেও থাকে তা যেন আজকের এই নতুন প্রজন্মের আশাটিকে পদদলিত না করে; আমরা যেন ওদের কাছে নিজেদের বিভেদ দিয়ে নিজেদের আর ছোটো না করি। এই বিচারটি শুরু করতে এমনিতেই ৪১ বছর দেরী হয়ে গেছে, সেটি আমাদের প্রজন্মেরই ব্যার্থতা, আমরা যেন সেটা ভুলে না যাই।’ [...]

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সম্মানিত চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের ব্যক্তিগত স্কাইপ কথোপকথন এবং ইমেইল হ্যাকিংকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাপ্রবাহ তার সাথে বাংলাদেশের অনেকেই ইতোমধ্যে বোধ করি অবগত হয়েছেন। গত কয়েকদিনে ইকনমিস্টসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে আমার সাথে এবং আইসিটির বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করার জন্য আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের অনেকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ট্রাইবুনালের বিচারাধীন থাকায়, এবং এ বিষয়ে ট্রাইবুনালের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকায় আমরা সচেতনভাবেই কোনো মন্তব্য দেয়া থেকে বিরত ছিলাম। এখনও আমরা এই বিচারাধীন বিষয়ের কনটেন্ট নিয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। কিন্তু গত কয়েক দিনের পত্রপত্রিকায় এবং সংবাদ মাধ্যমে কিছু বিভ্রান্তিমূলক কথা আমাদের গোচরে এসেছে। “আমার দেশ” নামের চিহ্নিত পত্রিকাটি আদালতের সুনির্দিষ্ট আদেশের লঙ্ঘন করে, সমস্ত ধরণের শিষ্টাচার ও সভ্যতার নিয়মকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই অপরাধের মাধ্যমে গৃহীত তথ্যসমূহ অনেক রঙ চড়িয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে থাকে। তার সাথে যোগ দেয় অনলাইন প্লাটফর্মের চিহ্নিত কিছু জামাতপন্থী গ্রুপ। এমনই কিছু বিভ্রান্তির ওপর আলোকপাত করতেই আমার আজকের এই লেখাটি। বিচারপতি নিজামুল হকের সাথে আমার কথিত কথোপকথন এবং ইমেইল হ্যাকিং-এর ঘটনাটি আমি প্রথম জানতে পারি “ইকনমিস্ট” এর একজন সাংবাদিকের কাছ থেকে, যখন তিনি এই বিষয়ে আমার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। এই কথিত কথোপকথনে আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের আরও কয়েকজনের সাথেও যে ইকনমিস্ট পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে, তাও জানতে পারি। এর পরের ঘটনা সবার জানা। ইকনমিস্ট এর সাংবাদিক যখন বিচারপতির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন, তার পরের দিন, অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে একটি আদেশ জারী করা হয় ইকনমিস্ট পত্রিকার বিরুদ্ধে। সেখানে উম্মুক্ত আদালতে ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে বিচারপতি হক স্পষ্টভাবে তার আদেশে উল্লেখ করেন যে -- হ্যাকিং-এর মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ইমেইলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা হয়েছে। অবৈধভাব তার ব্যক্তিগত কথোপকথন রেকর্ডিং-এর কথাও তিনি সে আদেশে দেশবাসীকে অবগত করেন। সাথে তিনি উম্মুক্ত আদালতে এটাও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন কেন, কী পরিস্থিতিতে, এবং কী প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে ট্রাইবুনাল বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিষয়ে আমিসহ অন্যান্যদের পরামর্শ ও গবেষণা সহায়তা গ্রহণ করেছেন। আমার সাথে বিচারপতির খোলামেলা আলোচনায় আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন নিয়ামক, এই জাতীয় বিচারের রায়ের আান্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত কাঠামো/ বিন্যাসসহ ব্যক্তিগত…

এই ঘটনায় দুটি অপরাধ সাধিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে দু'জন মানুষের কথোপকথন হ্যাক করা এবং সেই হ্যাক করা তথ্য প্রকাশ করা। এই দুটি অপরাধেরই আশু বিচার কামনা করছি। আমরা এই হ্যাকারদের পরিচয় জানতে চাই, শাস্তি চাই, আর এই হ্যাকড ম্যাটেরিয়াল যারা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ করলো, তাদের শাস্তি চাই।

বিচারকের আলাপ যদি আড়ি পেতে শোনে কেউ, সে যে সাক্ষীদের গোপন রাখা পরিচয়ও হ্যাক করে কাজে লাগায়নি, তারই বা নিশ্চয়তা কী? এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে সম্ভবত বিব্রত হবে সরকারের সেই অংশটিই, যাদের দায়িত্ব ছিলো গোপনীয় তথ্যকে গোপনীয় রাখা। আজ বিচারকের আলাপ হ্যাক হচ্ছে, কাল যে খোদ প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির ফোন আলাপ হ্যাক হবে না, আমরা কীভাবে নিশ্চিত হবো? আর সেই হ্যাকিঙের বিচার চেয়ে মিডিয়াতে যদি কোনো প্রশ্ন না ওঠে, তাহলে কি এই সঙ্কেতই দেয়া হয় না, যে হ্যাকিংকে আমরা মেনে নিচ্ছি? এই প্রশ্নগুলো ওঠার আগেই তাই অনলাইনে এই হ্যাকারদের প্রোপাগাণ্ডা অংশ অভিযোগের আঙুল তুলছে আইন বিশেষজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিনের দিকেই। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে কিছু কাঠবলদ ও পিতৃপায়ুজাত গর্ভস্রাব। তারা বলতে চায়, ড. জিয়াউদ্দিনই এই অডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ড. জিয়াউদ্দিন নিজেকে বিপন্ন করে এই বিচার প্রক্রিয়াকে কোন দুঃখে স্যাবোটাজ করতে যাবেন? আর নিরীহ আইনজ্ঞ জিয়াউদ্দিনকে যূপকাষ্ঠে চড়ালে কি বিচারককে গোপনীয়তা প্রদানে ব্যর্থ সরকারের বিশেষ কর্তাদের সদুত্তর দেয়ার খাটনি কমে যায়? জামাতের প্রোপাগাণ্ডু মূর্খের দল নিজেদের অজান্তেই নিজেদের দাবির বিরুদ্ধে প্রমাণ তুলে দিয়েছে ইউটিউবে। যারা ইউটিউবে কথোপকথন শুনেছেন, তারা পরিষ্কার খেয়াল করেছেন একটি ব্যাপার। এই অডিওতে ড. জিয়াউদ্দিনের কথা এসেছে কাটা কাটা, যেখানে বিচারকের কথা এসেছে পরিষ্কার। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের কচ্ছপগতির কারণে স্কাইপি বা গুগলটকে অপর প্রান্ত থেকে ভয়েস ডেটা আসে ভেঙে ভেঙে, যে কারণে কথা যান্ত্রিক শোনায়। বিচারকের কম্পিউটারে আড়ি পাতার কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বলেই সেখানে মন্থর নেটসংযোগের কারণে ড. জিয়াউদ্দিনের কথা এসেছে ভেঙে, আর সরাসরি মাইকে ধারণকৃত বিচারকের কথা স্পষ্ট শোনা গেছে। যদি ড. জিয়াউদ্দিনের প্রান্ত থেকে এই কথোপকথন রেকর্ড করা হতো, তার নিজের কথা কখনোই ভেঙে যেতো না। যার আগ্রহ আছে, তিনি ইন্টারনেটে জামাতের প্রোপাগাণ্ডুদের ছড়িয়ে দেয়া অডিও থেকে শুনে যাচাই করে দেখতে পারেন। এই ঘটনায় দুটি অপরাধ সাধিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে দু'জন মানুষের কথোপকথন হ্যাক করা এবং সেই হ্যাক করা তথ্য প্রকাশ করা। এই দুটি অপরাধেরই আশু বিচার কামনা করছি। আমরা এই হ্যাকারদের পরিচয় জানতে চাই, শাস্তি চাই, আর এই হ্যাকড ম্যাটেরিয়াল যারা আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ করলো, তাদের শাস্তি চাই। হ্যাকিং ঘটেছে কোন প্রান্তে? বিস্তারিত…

...এ যুদ্ধেও আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী- যেমন ছিল একাত্তরে। ১৪ ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী আনোয়ার পাশা লিখেছিলেন তার উপন্যাস ‘রাইফেল রোটি আওরাত’-এর শেষ বাক্য, ‘মাভৈঃ, ভয় নেই, রাত কেটে যাবে।’ তারপরই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল আলবদর বাহিনী- তিনি আর ফিরে আসেননি, কিন্তু রাত পেরিয়ে ভোর এসেছিল, পরাজিত হয়েছিল পাকবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহায়তাকারীরা। এ যুদ্ধেও আমাদের অনেক-অনেকবার বিব্রত হতে হবে এ রকম অপপ্রচারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাত কাটবেই, ন্যায়বিচার পাওয়ার হাসিকান্নায় উদ্বেলিত মানুষদের প্রশান্তিময় নতুন ভোর আসবেই...

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। তখনও যুদ্ধ শেষ হয়নি -- আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় স্বীকার করেনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, দ্রুত মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারী যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য গণহত্যা তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। হাইকোর্টে কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা সমপর্যায়ের একজন ব্যক্তি এ কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে আরো জানানো হলো, পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দালালদের অপরাধের কারণে যাঁদের ক্ষতি হয়েছে, কমিশন তাঁদের লিখিত ও মৌখিক সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করবে। তখনো আমাদের নীতিনির্ধারক মুক্তিযোদ্ধারা জানতেন না, তাঁরা মূলত আরো একটি যুদ্ধ শুরু করতে চলেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের যুদ্ধ -- ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। যুদ্ধের অবসান ঘটেছে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরাজয় মেনে নিয়ে আমাদের হাঁটুর নিচে অবনত হয়ে অস্ত্রসমর্পণ করেছে। স্বাধীন দেশের আকাশে-বাতাসে গুমরে মরছে স্বজনহারানো ক্ষুব্ধ মানুষের কান্না। সারা বাংলাদেশ তখন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতার পরিপ্রেক্ষিত : ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই/ স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’ বিক্ষুব্ধ স্বজনহারানো ও ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে এদিন এক বিবৃতিতে গণহত্যা তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের দাবি জানালেন ২৪ জন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁরা হলেন বেগম সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান, জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, সৈয়দ নূরুদ্দীন, কে. জি. মুস্তাফা, বদরুদ্দীন উমর, কবীর চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, নজমুল করিম, দরফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সমর দাস, এবিএম মূসা, কামাল লোহানী, ফয়েজ আহ্‌মদ, জাহেদুর রহিম, সৈয়দ আতিকুল্লাহ, নূরজাহান বেগম, লায়লা সামাদ, আবদুল গণি হাজারী, গোলাম রসুল, আলী আশরাফ, মনিরুজ্জামান, সৈয়দ আসাদুজ্জামান, এম এ খতিব। ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২। অন্তর্ঘাত চালানোর গোপন জিঘাংসা নিয়ে ততদিনে গা-ঢাকা দিয়েছে পাকবাহিনীর সমর্থক বাহিনীগুলোর সদস্যরা -- যারা রাজনৈতিকভাবে মূলত জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতাকর্মী। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রেসনোটের মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ সংঘটনকারী এসব অপরাধীকে অচিরেই বিচারের আওতায় আনা হবে। প্রেসনোটে বলা হলো, ‘দালাল বা এ ধরনের অপরাধীদের দেখা পেলে তাদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অসামরিক পুলিশকে নির্দেশ…

নষ্টবীজের দল যতই আড়ি পাতুক, যতই হুমকি দিক, আস্ফালন করুন - কোনো লাভ নেই। [..]

দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল? ১৯৭১ এর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা আজকে বিচারপতিদের বাসায় আড়িপাতা যন্ত্র বসায়, ইমেইল একাউন্ট হ্যাক করে তথ্য চুরি করে, তারপর সেটা আবার দম্ভ ভরে প্রচার করে! তার মানে বাকি বিচারপতিদের প্রত্যেকের, প্রসিকিউটর প্রত্যেকের, তদন্ত অফিসারদের প্রত্যেকের আর রেজিস্ট্রারের সাথেও যে এই নষ্টবীজের দল একই কাজ করেনি তার গ্যারান্টি কি? এখন স্পষ্ট হচ্ছে - কেন সেফ-হাউসের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যে সাক্ষীদের এনে রাখা হয়েছিল তারা কেন একের পর এক হঠাত ভয়ে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানালো! কেন কিছু কিছু সাক্ষী হঠাত আসামী পক্ষের হয়ে যুধিষ্ঠিরী সাফাই গাইতে এতো উতলা হয়ে পড়লো! কেন একজন সাক্ষী হঠাত লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল! এভাবেই ট্রাইবুনালের গোপনীয় সব তথ্য সংগ্রহ করে সেটা ব্যবহার করা হয়েছে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের কাজে, লোভ দেখানোর কাজে, কিনে নেয়ার কাজে! জাতি হিসেবে এখনই এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। এদের চিহ্নিত করুন, এদের প্রতিহত করুন। দিনের পর দিন আমরা এদের সহ্য করেছি, আর আমাদের এই সব সুশীল সহনশীলতা আর তত্ত্বালোচনার সুযোগ নিয়ে নষ্টবীজের দল বিস্তৃত থেকে বিস্তৃততর হয়েছে। ১৯৭১ এ যেভাবে বাঙালী একদিন যার যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আজকের এই সময়ও কিন্তু তার থেকে আলাদা কিছু না। প্রশ্ন হল - আমরা সেটা অনুধাবন করছি তো? পৃথিবীর প্রত্যেকটি কোণায় যতজন বিবেকবান বাঙ্গালী আছি - আমরা এই বিচার প্রক্রিয়ার পাশে ছিলাম, পাশে থাকবো, আমাদের সবটুকু সাধ্য দিয়ে, কিংবা প্রয়োজনে তার বাইরে গিয়ে হলেও এই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করবো, সফল করবো। কোনো ধরণের হুমকি, ব্ল্যাকমেইল বা বেআইনী আড়িপাতা দিয়ে আমাদের লক্ষ কোটি মানুষের বিচারের আর্তিকে থামাতে পারবে এমন শক্তি নেই। আমি, আমরা, এবং আমরা সকল সহযোদ্ধারা বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তুলছি। নিজের যা আছে তার সবটুকু নিয়ে আমরা আছি, আমরা থাকবো, নষ্টবীজমুক্ত বাংলাদেশ গড়বো। এই ষড়যন্ত্রের জড় উপড়ে না ফেলে, এর শেষ না দেখে আমরা কেউ বাড়ি ফিরছি না। নষ্টবীজের দল যতই আড়ি পাতুক, যতই হুমকি দিক, আস্ফালন করুন - কোনো লাভ নেই। [রায়হান রশিদ] লিন্ক এখানে ও এখানে।

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.