১.দীর্ঘদিন ধরে বিজিএমইএ ইন্ডস্ট্রীয়াল পুলিশের দাবী করে আসছিল, এখন তার সাথে যোগ হয়েছে বিশেষ ইন্ডাস্ট্রীয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি। এর অর্থ ওই পুলিশ এবং আদালত দ্রুত গার্মেন্ট শ্রমিকদের "অপরাধ" দমন করবে বা বিচার করবে। ২.কোরিয়া-জাপানের চাপে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করতে হয়েছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে সেই অধিকার দিতে চাইছে সরকার, কিন্তু বেঁকে বসেছে বিজিএমইএ! ৩.বিশেষ পুলিশ, বিশেষ আদালত চালু হওয়া মানে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরকারের সরাসরি কনফ্রন্টেশন! সরকার-গার্মেন্ট মালিকরা কি শ্রমিকদের "যুদ্ধে পরাস্ত" করে হাত-পা বেঁধে উৎপাদনে বাধ্য করতে যাচ্ছে? ৪.আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী এটা কি মানবাধীকার লঙ্ঘন নয়? এর ফলে কি এক দেশের ভেতরেই আর এক "মিনি দেশ" কল্পনা করে শ্রমিক-মালিক-সরকার সম্মূখ সমরে লড়াই শুরু করতে যাচ্ছে না? ৫.ক্রমাগত বিশ্বমন্দায় বন্ধ হতে থাকা গার্মেন্ট শিল্প কি এতে করে বিকাশ লাভ করার বদলে ধ্বংস হয়ে যেতে বসবে না? এই নির্মম বাস্তব প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের জানা নেই। আমাদের আশঙ্কা গার্মেন্ট শিল্প হয়ত স্থায়ীভাবে ডেস্ট্রয় হতে চলেছে! গত কিছুদিন ধরে বারবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠেছে আশুলিয়া। আর আশুলিয়া শিরোনাম হয়ে ওঠার মানেই সেখানে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ অথবা শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনের বীরদর্পি চিত্রাবলি। রাজনীতির খোল-নলচে বদলে যাওয়ার আগে আমাদের ছাত্ররা তাদের নিজস্ব দাবী-দাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় দাবী-দাওয়া নিয়েও বিক্ষোভ বিদ্রোহ দেখাত। সেই বিক্ষোভ বা বিদ্রোহ দমনও করা হতো। তখনো যারা এই বিক্ষোভ দমনের কাজ করত এখনো তারাই অর্থাৎ সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই বিক্ষোভ দমনের কাজ করছে। তখনকার সাথে এখনকার মোটাদাগের পার্থক্য হলো তখন বিক্ষোভকারীদের নিজেদের শ্রেণী অথবা নিজেদের সমাজের মানুষ ভেবে পুলিশ চরম হঠকারী হতে পারত না। আর এখন পারে। খুব ঠান্ডা মাথায়ই পারে। এর কারণ কি? শ্রমিক এবং ছাত্র বা শিক্ষার্থী উভয়েই কি এদেশেরই সন্তান নয়? তারপরও কেন এখন শ্রমিকের উপর বিক্ষোভ দমনের নামে পোড়ামাটি নীতি প্রয়োগ করা হয়? সেটা কি শুধুই শ্রমিকরাও সহিংস হয়ে উঠেছে সে কারণে? নাকি সমগ্র ব্যাপারটা এখন শ্রেণীশাসন আর শ্রেণীশোষণের মাত্রায় নির্ধারিত হচ্ছে? জানা কথা রমজান মাস শুরু হচ্ছে। এই মাসে সবার মত গার্মেন্ট শ্রমিকদেরও অন্যান্য মাসের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয়ভার মেটাতে হবে। তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই রমজানে আর সকলের মত একটু ভাল খাওয়া-দাওয়ার আশা করতেই পারে। এই মাসেই তারা চাইতেই পারে তাদের…

আজো বুকটা ভারী হয়ে আছে। ২০০৪ থেকে ২০০৯, হয়তো অনন্তকাল ধরে, এই আঘাত আমরা ভুলতে পারব না, আমরা যারা লেখক বা লেখক হতে চাই, আমাদের ওপর এই আঘাত, এই আঘাতের প্রতীক হয়ে হুমায়ুন আজাদ, প্রতিদিন আমাদের প্রতিক্রিয়াশীলতার হিংস্রতার কথা মনে করিয়ে দেবে। সফদর হাশমি যেমন ভারতে আমাদের দেশে হুমায়ুন আজাদ, আমরা ভুলতে পারব না, ভুললেই শেষ হয়ে যাব, বুকটা ভারী হয়ে আছে, প্রকাশ অক্ষম, কিন্তু সাবধান, শুধুই সাবধান। আমরা আজ ২০০৮-এর নির্বাচনের পর যে সময় কাটাচ্ছি, তাতে নিরাপদ বোধ করলে চরম ভুল করব। তাই ১২ আগস্ট-কে আমাদের আরো ব্যাপক পরিসরে পালন করা উচিত, লেখকদের ‘ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’র মতো একটি আন্দোলনের কথা ভাবা উচিত, আরো ঐক্যবদ্ধ শক্তিই পারে লেখকদের আরো স্বাধীন করতে, তসলিমা নাসরিন-ও দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে বাহিরে পড়ে আছেন, কিন্তু কেন এমন হবে? ১২ আগস্ট ‘লেখক দিবস’ হয়ে উঠুক, এবং একে ঘিরে লেখকদের সম্মিলন আন্দোলন সম্ভব হোক, এখনই হোক, না হলে বাংলাদেশে লেখকদের ভবিষ্যৎ আরো ভয়ংকর বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে।

২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি [...]

২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯, এই তিন বছর আমি রাস্তায় ৭ই মার্চের ভাষণ বাজাতে শুনিনি। ২০০৭ ও ২০০৮ বুঝলাম, কিন্তু কেন ২০০৯-এ ও শুনলাম না, বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কি আর কখনো ৭ই মার্চের ভাষণ বাজবে না? এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুঙ্গ ভাষণ, বাংলা ভাষার সে কী জোর, বাংলাদেশের সে কী অভ্যুত্থান, সে কী দীপ্ত ঘোষণা স্বাধীনতার। বাংলাদেশের বাঙালী যদি এ ভাষণ না শোনে, তার যেমন বাংলা জানা সম্পন্ন হবে না, তেমনি শুরুই হবে না বাংলাদেশকে ভালোবাসা। আমি এখানে পুরো ভাষণটি টাইপ করছি, যদিও আমার টাইপ স্পিড এক কচ্ছপ চলা। আর আমার একটি অনুরোধ আছে, কেউ যদি পুরো ভাষণটির (না পাওয়া গেলে আংশিক) অডিও তুলে দিতে পারতেন সাইটে খুব ভালো হতো। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত…

একুশে ফেব্রুয়ারী আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষা শহীদদের চেতনা-সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না [...]

ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্তদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৪৮ সালে এ দেশের ছাত্র সমাজ মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে ছাত্রদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র সমাজের গৌরবময় রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি হয়। '৫২-এর ছাত্র আন্দোলন এদেশের বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে। একুশে ফেব্রুয়ারী আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষা শহীদদের চেতনা-সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা সকলেই জানি, একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী পালনের খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হবে। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ দিবসের ৫৭ বছর পূর্ণ হলেও ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবী অদ্যাবধি উপেক্ষিত। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১১ দফা, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮২-'৯০ সময়কালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ছাত্র সমাজের রক্তস্নাত ১০ দফা ও '৯০-এ মহান গণঅভ্যুত্থানসহ এ পর্যন্ত সকল গণ-আন্দোলনে প্রায় সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও শক্তি যে দাবীটি জানিয়ে আসছে, যা এখনো জনগণের প থেকে উত্থাপিত হচ্ছে তা হলো, শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হতে হবে মাতৃভাষা বাংলা এবং ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ জরুরী ভিত্তিতে বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। ৫৭ বছর আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের সূচনা, বুকের রক্ত ঢেলে জাতিকে রুখে দাঁড়াবার সাহসে উজ্জীবিত করেছিল যারা, সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালিত হবে। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মধ্যে সীমিত থাকেনি, ভাষাভিত্তিক চেতনায় জাতি ক্রমে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের শিকল ছিঁড়ে মুক্তিকামী মানুষ একুশের চেতনার পথ ধরেই একাত্তরে রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা। গৌরবোজ্জ্বল এই দিবসের অনন্যতা বিষয়ে জাতির গর্ব আরো বেড়ে গেছে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা…

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই ছিল এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন যেদিন সবগুলি ছাত্র সংগঠন প্রথম একসঙ্গে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী তারুণ্যের প্রথম সংঘবদ্ধ উত্থানদিন। সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনার এ দিবসটির তাৎপর্য প্রথম ক্ষুণ্ণ করার উদ্যোগ নেন শফিক রেহমান তাঁর যায়যায়দিন সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন দিবস-এর প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে তার সূত্রে।

১৪ ফেব্রুয়ারি অবশ্যই বিশেষ একটি দিন, -- বিশেষ করে তাঁদের কাছে, যাঁরা ১৯৮৩ সালে তরুণ ছিলেন। তখন দেশে সামরিক শাসন ছিল, সামরিক জান্তা ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, -- যিনি এখন সুযোগ পেলেই নিজেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ভাই হিসেবে দাবি করছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক ভাঙাগড়ার সঙ্গেই আমরা পরিচিতি। কিন্তু তারপরও আমি মাঝে মাঝে বিস্মিত হই এ কারণে, কেন ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের রাজনৈতিক ও ছাত্রঅঙ্গনে আজও একটি বিশেষ দিন হয়ে উঠল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারিই ছিল এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন যেদিন সবগুলি ছাত্র সংগঠন প্রথম একসঙ্গে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধেও এরকম সংগঠিত ছাত্র-গণ আন্দোলন ঘটেনি, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এভাবে আন্দোলন চলেনি এবং চিরতরে সামরিক শাসন উৎখাতের জন্যে তরুণরা এত মরিয়াও হয়নি। সত্যি কথা বলতে গেলে, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী তারুণ্যের প্রথম সংঘবদ্ধ উত্থানদিন। তারুণ্যে মুক্তিযুদ্ধকে না পাওয়ার সুপ্ত অতৃপ্তি কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিল এই তারুণ্য সামরিক শাসনবিরোধী এ রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। এখন এ দিবসটি রাজনৈতিক অঙ্গনে সাড়ম্বরে দূরে থাক, কোনও কোনও বছর সংবাদপত্রের পাতাতেও চোখে পড়ে না। সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক চেতনার এ দিবসটির তাৎপর্য প্রথম ক্ষুণ্ণ করার উদ্যোগ নেন শফিক রেহমান তাঁর যায়যায়দিন সাপ্তাহিক পত্রিকাটির মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন দিবস-এর প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে তার সূত্রে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনার রাজনৈতিক দলগুলি এতই মেরুদণ্ডহীন যে, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাজনৈতিক চেতনার স্থান থেকে উদ্‌যাপন করার স্থান থেকে সরে আসে তারা এবং এদেরকেও এখন দেখা যায় জাফর, জয়নালের কথা ভুলে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবসের তাৎপর্য বয়ান করতে। এরপর যেহেতু রাজনৈতিক কারণে এরশাদ এবং জাতীয় পার্টি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ, খালেদা জিয়া ও বিএনপি সকলের কাছেই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে, সে-কারণে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের আর সব দিনের মতো ১৪ ফেব্রুয়ারিও মর্যাদা হারিয়ে ফেলে। এসবই চর্বিত চর্বণ। আপনারা সবাই জানেন। আমিও আমার বক্তব্য বাড়াবো না। আমি খুবই নগণ্য মানুষ, রক্তমাংসের মানুষ, তাই জাফর জয়নালদের এখনও ভুলতে পারিনি, সেলিম দেলোয়ারদের ভুলিনি, তিতাস-তাজুলদের ভুলতে পারিনি, ময়েজউদ্দিনকে ভুলতে পারিনি, বসুনিয়া-শাহজাহান সিরাজদের ভুলতে পারিনি। নূর হোসেনকেও ভুলতে পারিনি। সেই সঙ্গে এও মনে আছে, খুব স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের সামনে আমাদের গণতান্ত্রিক নেতারা কী কী দাবিদাওয়া ঘোষণা করেছিলেন, কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ থেকে শুরু…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.