এতে (‌‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার') পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ভাই-বেরাদর সহযোগে একধরনের ফুর্তির আয়োজন করতে পেরেছেন। এতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাণিজ্যিক জোশ আমদানি করতে পেরেছেন। [...]

সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি না বহুদিন হলো। পারিবারিক আয়োজনের ভিতর দিয়েই তা দেখতে হলো। তার মানে শহুরে মধ্যবিত্তকে টিভি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এতে কিছুটা হলেও বোঝা যায়। এটি প্রায় দুই ঘণ্টা সময়ের এক আয়োজন। এতে পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী তার ভাই-বেরাদর সহযোগে একধরনের ফুর্তির আয়োজন করতে পেরেছেন। এতে অন্তত পাঁচ ধরনের বাণিজ্যিক জোশ আমদানি করতে পেরেছেন। সেগুলি একে একে জানানোর চেষ্টা করব। ১. যৌনতা : যৌনতার এমন সর্বব্যাপী ব্যবহার খুব কম ছবিতেই দেখা গেছে। একাকী এক মেয়ে এই সমাজে চলা খুবই ডিফিকাল্ট। নষ্টভ্রষ্ট সমাজ তাকে বেঁচে থাকার এতটুকু সাহস শক্তি তৎপরতা দিতে পারে না। তা এ ছবিটিতে আছে। কিন্তু এটিকে পুঁজি করে পুঁজি বানানোর এমন ধান্ধা সত্যি বিরল। ২. কমপিউটারাইজ্‌ড লাইফ : ইন্টারনেটে এখন যে ফেসবুক, ব্লগ, ইমেইল, টিভি-কার্ডের সম্মিলিত ব্যবহারের আয়োজন লক্ষ করা যায়, এমনই হুলস্থূল এক লম্ফঝম্ফ দেখা যায়। আমরা আশির দশকে শুনতাম, অঞ্জু ঘোষ সিনেমায় থাকবে, আর সে জলে নামবে না, তা তো হয় না। সেই রূপ ফারুকী ফিল্ম করবে তাতে সেলফোন থাকবে না, তা কী করে হয়? ৩. সতীত্ব প্রকল্প : যত যাই হোক, সতী নারীর পতি মরে না! এই হচ্ছে সনাতন চিন্তাভাবনার আধুনিক রূপায়ন। পরকীয়া আছে-আছে করেও নাই। আর এমন হাস্যকর সতীপনা, বাবা কেন চাকর ধরনের বাণিজ্যিক ছবিতেও হয়ত এতো দেখা যায় না। ৪. পার্টনার বাণিজ্য : এর রেডিও পার্টনার রেডিও ফুর্তি; আর এটিকে অত্যন্ত নির্লজ্জের সাথে চালাকি করে ফিল্মটিতে সরাসরি দেখানো হলো। তপু নামের গায়কটির সরাসরি উল্লেখ থাকলেও তিশা আর মোশাররফকে যথাক্রমে রুবা আর মুন্না চরিত্রেই অভিনয় করে যেতে হয়। ৫. চরিত-বিধান : কোনো একটা চরিত্রেরই কোনো বিকাশ নেই। এমনকি কেন্দ্রীয় মেয়ে চরিত্রটিও শেষতক পরিচালকের হাতের পুতুল হয়ে থাকে। আবার তাদের সুখে-শান্তিতে বসবাস করানোর জন্য স্বামী-স্ত্রী-বন্ধুকে একেবারে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেয়া হয়। কক্সবাজার পাঠানো মানেই যেন ভালোবাসার বিদ্যানিকেতনে ভর্তি করিয়ে দেয়া। বালখিল্যতা কারে কয়! চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমা হলে খেয়াল করলাম, এর দর্শক মূলত কলেজ-ভার্সিটির ছেলে-মেয়ে। এরা যে ছবিটি দেখে কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! কর্পোরেট পুঁজির কী যে দাপট এখানে! এই ধরনের ছবির চেয়ে কথিত বাণিজ্যিক ছবি অনেক ভালো, কারণ এ সম্পর্কে আমরা জানি, আগে থেকেই…

আমার এ লেখা কোনো প্রস্তাবনা, বিজ্ঞপ্তি, হুকুমনামা কিংবা বিজ্ঞাপনের মালমশল্লা দাবি করে না। এটি নিতান্তই এককধরনের হতচকিত অবস্থার সারাংশ [..]

আমার এ লেখা কোনো প্রস্তাবনা, বিজ্ঞপ্তি, হুকুমনামা কিংবা বিজ্ঞাপনের মালমশল্লা দাবি করে না। এটি নিতান্তই এককধরনের হতচকিত অবস্থার সারাংশ। মুশকিল হচ্ছে, আমরা যে মধ্যবিত্তীয় শহুরে বাস্তবতায় জীবনযাপন করি, তাতে নির্জনতা, হতবিহ্বল অবস্থা, এমনকি লাজ-শরমও দিনকে দিন উঠে যাচ্ছে। সেলফোন, ইন্টারনেট, সর্বোপরি বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া আমাদের মানসিক অবস্থাকে ধুয়ে-মুছে দিচ্ছে। এতসব কথাবার্তা মূলত একটা সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমগ্র চৈতন্যকে একেবারে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ঘটনাটি মাত্র গতকালকের- সমাজ সমীক্ষা সংঘ আয়োজিত অক্টোবর বিপ্লব বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মিলনায়তনে তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এম এম আকাশ একটি প্রবন্ধ পাঠান্তে তার আসনে বসতেই মঞ্চটিতে মৃদৃ নড়াচড়া, মানুষের চলাচল একধরনের হুলস্থূলে রূপ নেয়া শুরু করে। ঘটনা আর কিছুই নয়, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার বাজারে একধরনের কোলাহল শুরু হয়েছে। মার্কেট ইকোনমির এই যুগে বাজারতো বাজার চিনবেই। সেই বাজারটা হচ্ছে, মঞ্চে বসা বক্তাদের ভিতর যাদের বাজারমূল্য আছে,হায়দার আকবর খান রনো, রতন খাসনবিশকে অযথাই মাইকের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আলোর উল্লাস শুরু হয়ে গেল। তারা তাদের মৃদু আপত্তিসহযোগে দুই-চার কথা বলে যার-তার আসনে বসে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে মঞ্চের সাড়া বাড়তে থাকে। বন্দুক-পিস্তল-রাইফেল সহযোগে যেন বিকল্প ক্রসফায়ার প্রত্যক্ষ করছি। একধরনের রক্তক্ষরণের স্বাদ পাই আমি। নুন-নুন তাপে শরীর ঘেমে যেতে থাকে। রনো ভাইও মাইকের সামনে দাঁড়ান। তিনি এই সময় নেতা থেকে অভিনেতা হওয়ার কথা জানালেন, তার আপত্তির কথাও আমরা শুনলাম। কিন্তু মিডিয়ার বাজারী-ব্যবস্থাকে তিনি তো মেনেই নিলেন! আনু মুহাম্মদের বাজারতো কম নয়। কিন্তু তিনি আবার অসুস্থজনিত কারণে চেয়ারে বসে তার মূল বক্তব্যই শুরু করলেন। রাজনীতি ক্রমেই এখন সেলফোন, ইন্টারনেট আর মিডিয়া বিশেষত প্রিন্ট মিডিয়ার কোলাজ-মন্তাজে ভরপুর হয়ে যাচ্ছে। একসময় হয়ত তা-বিবৃতি, শ্লোগান, লড়াই-সংগ্রামের আশ্রয়স্থল হয়ে যাবে। কিছু কিছু চরিত্র থাকে যাদেরকে আমি একধরনের সাধনাই করেছি। রনো ভাই তেমনই একজন। তার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আমি যদ্দূর জানি তাতে তিনি বরাবরই একজন প্রখর সমাজতন্ত্রী, গ্রন্থবিমুখ রাজনীতিকের এই দেশে তিনি বই-পুস্তকে তিনি রীতিমতো নাক ডুবিয়ে থাকতেই পছন্দ করেন। সশস্ত্র বিপ্লব, মাও চিন্তাধারা, স্ট্যালিনের প্রতি পক্ষপাত যেমন তার আছে, তেমনি মাওলানা ভাসানির মতো রহস্যময় দেশপ্রেমিকের সাহচর্যও নিয়েছেন। বুর্জুয়া রাজনীতি, ভোটের জবরধ্বস্তিমূলক কারসাজিতে তাকে কখনো পাওয়া যায়নি। মেনন-রনোর বন্ধুত্বকে অনেকেই আল্লা-রসুলের বন্ধুত্বের সাথে…

বাংলাদেশে এনজিও-কাযর্ক্রম নিয়ে কিছু আশঙ্কা ও প্রশ্ন [...]

এনজিও যে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছায়ার মতো তাদের থাবা বিস্তার করছে তা বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা যদি এনজিও-কার্যক্রমের দিকে নজর দিই তাহলে দেখব, স্বাধীনতার পর-পর মাত্র গুটিকয় এনজিও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আর এখন তো বাংলাদেশের প্রতি ধূলিকণায় তাদের রক্তাক্ত ছোঁয়া রেখে যাচ্ছে। রুরাল ইকোনোমির প্রায় সবটুকুই তারা তাদের করায়ত্ত করে ফেলছে। তাদের কাজের বিস্তৃতির কিছু নমুনা দেয়া যাক। রেলের টেলিকম সিস্টেমের সাথে গ্রামীণ ফোনের সম্পর্ক বরাবরই বেশ নিবিড়। এখন এরা সুবর্ণ এক্সপ্রেসের একটা বগি সেলফোনের জন্য নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের বিজ্ঞাপনের কাজে ব্যবহার করছে। আরও এক মজাদার বিষয় কেউ কেউ লক্ষ্য করে থাকবেন : চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড়ে একটি পুলিশ বক্স। তা এমনই দৃষ্টিনান্দনিকতায় পরিপূর্ণ যে, মনে হবে বেহেশতের স্নিগ্ধস্রোত চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামছে। যে-কোনো পুলিশ বক্সকে বরাবরই ষড়যন্ত্রমুখর, পলায়নপর, যন্ত্রণাময় এক জায়গা মনে হয়। কিন্তু এমন স্মার্ট আর রোমান্টিক পুলিশ বক্স এই দেশে কমই আছে। এটি নির্মিত হয়েছে সানমারের সৌজন্যে। এ-ধরনের বহু কাজ সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গনে হরহামেশাই চোখে পড়ে। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে, এই যে, এনজিও-গ্রাস শুরু হয়েছে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ কি এতে রুদ্ধ হবে না?

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.