আমাদের হাতে সময় নেই। ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করে বিচার প্রক্রিয়াকে মানবাধিকার বিরোধী বলে যে পেশাদারী চর্চায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নেমেছে তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে নামতেই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষের প্রতিটি মানুষকে। [...]

সময় এসেছে বাস্তবের জমিনে পা রেখে কথা বলার। মাস দুয়েক আগে মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে নিউইয়র্ক প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। সন্তানবাৎসল্যের নানা উদাহরণ দিয়ে সে তার পিতার মানবিক রূপটি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জানায় একজন ইসলামী রাজনীতিবিদ হওয়াটাই তার অপরাধ। বর্তমান সরকার বিরোধী দলের নেতাদের রাজনৈতিক নিপীড়নের জন্য যেসব মাধ্যম ব্যবহার করছে তার মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল অন্যতম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের নামে এতে যাবতীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। উপস্থিত সাংবাদিকদের কেউ যদি আগ্রহী হয়ে তখন গুগলিং করেন, বাংলাদেশ ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল লিখে সার্চ দেন, নিশ্চিতভাবেই প্রথম যে ১০০টি লেখা এ বিষয়ে তার সামনে আসবে, তা এই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লেখা। যদি কেউ উইকিপিডিয়া সার্চ দেন, দেখবেন আলবদর নামে যে সংগঠনটির নেতা হিসেবে নিজামীর বিচার হচ্ছে সেই আলবদর সম্পর্কে লেখা আছে এরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে স্বল্প সময়ের জন্য ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় এবং দেশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।হ্যাঁ, উইকিপিডিয়ায় আপনি যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে কোনও তথ্য পাবেন না। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের শীর্ষে থাকা চৌধুরী মঈনউদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী লেখার দায়ে বিশাল অঙ্কের মানহানির মামলা করার হুমকি দেওয়া হয়েছিলো উইকিপিডিয়াকে। তাই তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো তার সম্পর্কে যাবতীয় অভিযোগ। একই ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান এবং টেলিগ্রাফ পত্রিকার ক্ষেত্রেও। আইনি হুমকির কারণে এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তারা কোনও লেখা ছাপাতে নারাজ। অন্যদিকে শুরুতে বলা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বর্তমান সরকারকে দুর্নীতিবাজ ও অত্যাচারী বলে প্রতিষ্ঠিত করার অভিপ্রায়ে লেখা বিভিন্ন অভিযোগের বিশাল বিশাল ফাইল জমা হয়েছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত দপ্তরে। প্রতিদিন এসব ফাইল আরও মোটা হচ্ছে। মোটের উপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আসলে একটি রাজনৈতিক দমন প্রক্রিয়া এবং এরসঙ্গে জনগণের কোনও সম্পর্ক নাই এমন দাবি করে দাতা দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মিথ্যে প্রতিবেদন বানিয়ে, ভিডিও বানিয়ে সেগুলো পাঠানো হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, যেখানে আমাদের জনশক্তির একটা বড় অংশ কর্মরত আছে।হিসেবটা পরিষ্কার, নানা রকম আন্তর্জাতিক চাপের মাধ্যমে এই বিচারে বিঘ্ন ঘটানো এবং জনমত তৈরি করে এই বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে একে বিতর্কিত করা। তাই আমরা জিততে জিততে আসলে হেরে যাচ্ছি। কারণ এসবের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও…

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘Operation Searchlight’-এর মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী বেসামরিক বাঙালিদের উপর আক্রমণ শুরু করে যা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৯ (নয়) মাস অব্যাহত থাকে। এই সময়টিই হল অপরাধ সংঘটনের কাল। [...]

অপরাধ সংঘটনের কাল ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘Operation Searchlight’-এর মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী বেসামরিক বাঙালিদের উপর আক্রমণ শুরু করে যা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৯ (নয়) মাস অব্যাহত থাকে। এই সময়টিই হল অপরাধ সংঘটনের কাল। এক নজরে অপরাধ সংঘটনকারী পক্ষসমূহ আগ্রাসী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। তাদের সহযোগী বাহিনী হিসেবে আবির্ভাব হওয়া জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র সংঘ, রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটি, আল-বদর, আল-শামস, আল-মুজাহিদ বাহিনী ইত্যাদি। এদের প্রত্যেকের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্যসহ শিগগিরই স্টেটাস দেয়া হবে। চোখ রাখুন এই পাতায়। কৃত অপরাধসমূহ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার সহযোগী বাহিনী আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) ধারার অধীনে মানবতা বিরোধী অপরাধ (crimes against humanity), যেমন হত্যা (murder), সমূলে নিধন (extermination), ধর্মান্তরিতকরণ (forced conversion), দাসত্বে বাধ্যকরণ (enslavement), দেশত্যাগে বাধ্যকরণ (deportation), বন্দীকরণ (imprisonment), অপহরণ (abduction), আটক (confinement), নির্যাতন (torture), ধর্ষণ (rape), পারসিকিউশন (persecution), অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ইত্যাদি অপরাধের পাশাপাশি গণহত্যা (genocide), যুদ্ধাপরাধ (war crimes), শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ (crimes against peace) এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন অন্যান্য অপরাধসমূহও সংঘটন করে। কৃত অপরাধসমূহের বিবরণ (তাদের জ্ঞাতার্থে যারা এসব অপরাধের অস্তিত্বই অস্বীকার করে) যুদ্ধকালীন নয় মাস বেসামরিক নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি জনগণের উপর অব্যাহতভাবে চলে নারকীয় নির্যাতন। বাঙালিদের হত্যা, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয় এক বীভৎস পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিকামী বাঙালিদের দমনের নামে এই নির্মূল অভিযানের শুরু। অভিযানের সূচনায় সেনাবাহিনীর প্রতি জেনারেল টিক্কার আদেশে বলা হয়, ‘আমি মানুষ চাই না, ভূমি চাই’। ঢাকায় জেনারেল টিক্কার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ চালানোর নীলনকশা হল: "Burn everything, kill everyone in sight." [Lawrence Lifschultz, Bangladesh: The Unfinished Revolution, p. 77] International Commission of Jurists (ICJ) তাদের ‘Report of the Commission of Inquiry into the events in East Pakistan, 1971’-এ অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস-এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেছে : ... West Pakistan army systematically massacred tens of thousands of Bengalis. He described how one Major Iftihar set fire to a row of houses…

গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়ের করা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগসমূহ খণ্ডন করে ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, যা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেকর্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এখানে তাঁর বক্তব্যের বঙ্গানুবাদ।

গত ৩১ জানুয়ারি ২০১২, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশন বাংলাদেশে বর্তমানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নিয়ে সকল পক্ষের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসেন। আলোচনার মূল বিষয় ছিল -- বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিচারে অভিযুক্তের অধিকার কতটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে। এই বিষয়ে আসামী পক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পূর্বেই ট্রাইবুনালের প্রক্রিয়াকে সমালোচনা করে বিস্তারিত আইনি ব্রিফ জমা দেয়া হয়। ৩১ তারিখে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শুনানির লক্ষ্য ছিল ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দায়ের করা আসামী পক্ষের আইনজীবীদের এই সব অভিযোগের সত্যতা যাচাই। আসামী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে টোবি ক্যাডম্যান বক্তব্য রাখেন। বিপরীতে ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, যা এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেকর্ডের অংশ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কীভাবে তদন্ত ও বিচারের উন্নত মানদণ্ডের নীতিসমুহ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে তা বর্ণনা করেন।মূল ইংরেজিতে দেয়া বক্তব্যটি প্রথম প্রকাশিত হয় আইসিএসএফ এর ব্লগে যা থেকে আইসিএসএফ অনুবাদ টিমের সদস্যবৃন্দ বাংলায় অনুবাদ করেছেন। যুদ্ধাপরাধীরা এবং তাদের সমর্থনকারী দলগুলোর প্রতিনিয়ত বিচারের মান নিয়ে করা মিথ্যাচারে যাঁরা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সংশয়ী এবং একই সাথে যাঁরা পুরো পক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেতে চান লেখাটি তাঁদের কাজে লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ডেলিগেশনের সামনে পুরো শুনানিটিতে সকল পক্ষের বক্তব্য নীচের এই ভিডিও থেকেও দেখে নেয়া যাবে: --------------------------------------------------- বাংলাদেশ বিষয়ক সভা: যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং জবাবদিহিতা প্রসঙ্গে মতবিনিময় দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের সম্পর্কবিষয়ক কমিটি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ৩১ জানুয়ারি ২০১২ কক্ষ ১ই-২, আলতেইরো স্পিনেল্লি ভবন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ব্রাসেলস বক্তব্য - এডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম, প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ________________________ ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সন্মানিত সদস্যবৃন্দ, ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:   ১. প্রথমেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, দক্ষিণ এশীয় ডেলিগেশনের সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ করে দেবার জন্য। বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের অপরাধসমূহের বিচারের দাবীকে সবসময় সমর্থন জানিয়ে আসার জন্যও আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ইয়োরোপীয় পার্লামেন্টে ইতঃপূর্বে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা, বিশেষ করে ২০০৫ সালে যখন আপনারা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের সন্মুখীন করার দাবীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।   ২. এছাড়াও ধন্যবাদ জানাই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ (ICDB) এবং বাংলাদেশ সাপোর্ট…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.