মৌলবাদ দমনে বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা প্রকৃতপক্ষে আন্তরিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, মৌলবাদ সব সময়ই সামন্তবাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে ভেঙে খান খান করে দিতে পুঁজিবাদীরা এটাকে ব্যবহার করেছে। এমন কি গোত্রগত সংঘাত চাঙ্গা করে রাখতেও ব্যবহৃত হয়েছে মৌলবাদী দানতন্ত্র। তবে কি পরোক্ষভাবে গণতন্ত্রই মৌলবাদের সহচর? আসতে পারে সে প্রশ্নটিও। দেখা গেছে, গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার নামে কোন কোন দেশে মৌলবাদকে উসকে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- এটাও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। পুঁজিবাদীরা একে ব্যবহার করেছে তাদের প্রয়োজনে। পরে দেখা গেছে এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষবাষ্প। দূষিত হয়ে গিয়েছে ক্রমশ! গোটা বিশ্বের মুক্তিকামী গণতান্ত্রিক মানুষের নিঃশ্বাসের আবাসস্থল। সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে ইরাকের কথাই ধরা যাক। ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেন স্বৈরাচারী ছিলেন। ইরাক শিয়া অধ্যুষিত দেশ। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভোট হলে শিয়ারা ক্ষমতায় থাকবে সারাজীবন। সুন্নী পন্থী সাদ্দাম হোসেন টুঁটি চেপে ধরে ছিলেন। ক্ষমতায় ছিলেন বলপূর্বক। এই সাদ্দাম একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের। সে সম্পর্কে ফাটল ধরার পরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শাসকদের কাছে চোখের বালিতে পরিণত হন। সাদ্দামের দেশ ইরাকে গণবিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র আছে, এমন ধুয়া তুলে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর যুদ্ধ বাধায়। সে যুদ্ধ এখনো চলছে। ইরাক এখন ধ্বংসস্তূপ। তারপরও পুঁজিবাদীর দৃষ্টি সেখানে প্রসারিত। নেপথ্য নিয়ন্ত্রণ রাখার মরিয়া প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে বিদ্রোহীরা মৌলবাদী লেবাসে হোক আর জঙ্গিবাদী লেবাসে হোক প্রতিদিন চোরাগোপ্তা হামলা করছে। শেষ সময়ে এসে আক্রান্ত হয়েছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। একজন সাংবাদিক বুশকে জুতো নিক্ষেপ করেছেন। তার নাম মুন্তাজার আল যাইদী। জাইদীর ক্ষোভ ছিল ভীষণ, তিনি স্বজন হারিয়েছেন এই যুদ্ধে। নিজে বন্দি থেকেছেন। ইরাক যুদ্ধে নিহত মানুষের লাশ জাইদীকে ব্যথিত করেছে। তিনি তার ঘৃণার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। এমন ঘৃণা পুঁজিবাদী দুঃশাসন এবং মৌলবাদী হায়েনা দুটোকেই উসকে দেয়। বুশের মাথার ওপর দিয়ে একজোড়া জুতো উড়ে যাওয়ার পর বুশ সাংবাদিকদের হেসে কি বলেছেন- সেটা দেখুন। বুশ মসকারা করে বলেছেন- ‘ইট ওয়াজ এ সাইজ টেন’! অর্থাৎ জুতা জোড়া দশনম্বর ছিল। ভাবটা যেন এমন, চৌদ্দ নম্বর জুতা তার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও তার কিছু যায় আসে না! এর কারণ কি? কারণটি হচ্ছে সামন্তবাদ ধরে রাখতে হলে এমন ঘটনাবলী সহজে গ্রহণ করার…

উৎসবমুখর এখন বাংলাদেশ। এ উৎসব নির্বাচনের। এ উৎসব পরিবর্তনের। চারদিকে চলছে প্রতিশ্রুতির পালা। প্রার্থীরা ছুটছেন আনাচে-কানাচে। যারা কখনই এসব নেতাকে দেখেনি, তারা দেখছে­ এই তাদের সম্ভাব্য প্রতিনিধি। নির্বাচন নিয়ে নানা মেরুকরণ সবসময়ই হয়। এবারও হচ্ছে? একটি মহল মধ্যস্বত্বভোগে ব্যস্ত। তারা ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাইছে। এই মহলটির নতুন পরিচয় এবার দেখছে দেশবাসী। খুনের হুমকি হলে সেটাকেও তারা বলছে­ এটা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা! ভারতীয় কিছু মিডিয়ায় খবর এসেছে­ আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের জন্য জঙ্গিবাদীরা তৎপর। এটা একটি মারাত্মক দু:সংবাদ। অথচ এই খবর বের হওয়ার পর চারদলীয় জোটের নেত্রী, রাজাকারদের মূল আশ্রয়দাতা খালেদা জিয়া কি প্রতিক্রিয়া দেখালেন? তিনি বললেন, পরিকল্পিতভাবে নাকি দেশকে জঙ্গিবাদী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তার বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে­ শেখ হাসিনা সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য এমন অপপ্রচার চালানোর প্রত্যয়ী হচ্ছেন। খালেদা জিয়া আরও বললেন, একটি উদার মুসলিম দেশ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণí করার চেষ্টা করছে একটি জোট। কি জঘন্য মানসিকতা! হুমকি কে দিচ্ছে- কোথা থেকে আসছে তা তদন্তের দাবি না করে বরং তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই কথা বলা শুরু করলেন! এটা কি সহনশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিদর্শন? একজন দলপ্রধান কোন দায় নিয়ে এমন অসংলগ্ন কথা বলতে পারেন? এর দু’দিন পরই কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার জনসভার দেড় মাইল দূরে থেকে চারটি গ্রেনেডসহ তিনজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর পরই খালেদা জিয়া জনসভায় দাঁড়িয়ে বললেন, তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশ্ন জাগে­ কারা করছে এসব? এদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? যখন শেখ হাসিনা হুমকির সম্মুখীন হন­ তখন নীরব থাকেন খালেদা জিয়া, সস্তা জনপ্রিয়তার কথা বলেন। এখন তার জনসভার কাছাকাছি গ্রেনেড পাওয়ার পরই তিনি বুলি পাল্টিয়ে দিলেন। খালেদার ভাষায় দেশে ‘জঙ্গিবাদী নেই’। যদি তাই হয় তবে তার জনসভার কাছে কারা বোমা নিয়ে বসেছিল? গ্রেফতারকৃতদের প্রকৃত পরিচয় কি? খালেদা কি আড়ালে কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? ভাবতে অবাক লাগে­ খালেদা জিয়া সেসব জঙ্গি গডফাদারের পক্ষে ভোট চাইছেন। ২০০১-এর নির্বাচনে জিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের প্রতি কি আচরণ করেছিল জামায়াত-বিএনপির ক্যাডাররা তা জাতি এখনও ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি পূর্ণিমা রানীর প্রতি নারকীয় আচরণের কথা। চারদলীয় জোট এভাবেই তাদের জয়োল্লাস করে ২০০১…

‘যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ চাই’­ এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে পালিত হলো ২০০৮-এর বিজয় দিবস। এবারের বিজয় দিবস পালিত হলো এমন এক সময়ে, যখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র আর ১৩ দিন বাকি। দেশ এখন নির্বাচনমুখী। বড় দুটি দলের দুই শীর্ষ নেত্রী বেরিয়েছেন ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণায়। তারা চষে বেড়াচ্ছেন জেলা থেকে জেলা। নিজ প্রতীক তুলে দিচ্ছেন নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের হাতে। আর দেশের জনগণকে বলছেন, ভোট দিতে হবে তাদের প্রার্থীকেই। দুই নেত্রীর জনসমাবেশেই প্রচুর লোক সমাগম হচ্ছে। জনতার ঢেউ একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। জনসমাগম দেখে বোঝার কোন উপায় নেই, কারা আগামী সংসদ নির্বাচনে পাস করবে। জানার কোন উপায় নেই রাষ্ট্রের জনগণের মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা। একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার চারপাশ ঘিরে রাখছেন সেই নেতারাই যারা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে জেল-হাজতে ছিলেন। জোট সরকারের শাসনামলে তাদের দু:শাসনে ভীষণ আতঙ্কিত ছিলেন দেশের মানুষ। এ নেতাদের অনেকে এবার প্রার্থী হতে পারেননি। কিন্তু তারা মাঠে নেমেছেন, তাদের পছন্দের ছায়া প্রার্থীকে তারা সমর্থন দিচ্ছেন। এটা খুবই স্পষ্ট­ দুটি প্রধান দলই চাইছে, দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। কারণ নির্বাচিত সরকার এলে এতে রাজনীতিকদের কর্তৃত্ব থাকবে। তারা তাদের ইচ্ছেমতো যা খুশি করতে পারবেন। যেমনটি তারা আগেও করেছেন। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগে কিছু কিছু প্রধান নেতা যে নিজ নিজ দলেই কোণঠাসা হয়ে আছেন তা তো দেশবাসী দেখছে। দেশের মানুষ দেখেছে দুটি প্রধান দলের সম্পাদকদের বর্তমান হাল-অবস্খা। একজন দল থেকে বিদায় নিয়েছেন। অন্যজনের সব ক্ষমতা ও খর্বিত হয়েছে। এখন সেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বটি পালন করছেন, একজন ‘মুখপাত্র’, প্রকারান্তরে তিনিই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। এটাও বুঝতে পারছেন দেশবাসী। দুটি প্রধান দলে একটি নেপথ্য লুটপাট সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, তা দুনেত্রীও জানতেন। তারপরও তারা তা কঠোর হাতে দমন করলেন না কেন?  করলে তো আজ এমন দুরবস্খার সৃষ্টি হতো না রাজনীতির ময়দানে। বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি সিলেট-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার পক্ষে প্রচারণার জন্য বিএনপিপন্থি দু’জন বুদ্ধিজীবী সিলেটে গিয়েছিলেন। এই দু’জন শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান। এদের পরিচয় দেশবাসীকে নতুন করে জানানোর দরকার নেই। এ দু’জন সাইফুর রহমানের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস…

দু’হাজার আট-এর ডিসেম্বর মাসটি বাঙালির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে জিতে কারা ক্ষমতায় যাবেন তা নিয়ে সর্বত্র জল্পনা। ইতোমধ্যে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নিচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট, আর বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি। সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের এই দলটি অনেক দরকষাকষি শেষে ৪৯টি আসন নিয়ে মহাজোটে থাকতে পেরেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের জাতীয় পার্টির ঐক্য আদৌ হওয়া উচিত ছিল কি না তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। কারণ এই এরশাদ শাহীর অবৈধ ক্ষমতায় থাকার নয় বছরে দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার ব্যাপক তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য আদালতে মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে। সেলিম, দেলওয়ার, ডা. মিলন, বসুনিয়া, নূর হোসেন প্রমুখ শহীদদের বুক ঝাঝরা করা হয়েছিল এই স্বৈরশাসকের মসনদ বাঁচাবার জন্যই। ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে সৃষ্ট নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন এরশাদের পতনের সূত্রপাত করে। তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। জাতির জীবন থেকে এই যে একটি দশক অবৈধভাবে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ এর কোনো কৈফিয়ত তিনি কি রাষ্ট্রের জনগণকে দিয়েছেন? না, দেননি। বরং আজ তিনি আরেকটি প্রধান দলের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে রাষ্ট্রের নিয়ামক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আছেন। এ দুর্ভাগ্যটি গোটা রাষ্ট্রের মানুষের। অন্যদিকে বিএনপি এমন একটি দলের সঙ্গে মোর্চা করে নির্বাচন করছে, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা জাতির স্বপ্নের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। গণহত্যা, ধর্ষণ, নারীর সম্ভ্রমহানি, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ কোন হীন কাজটি রাজাকার আলবদররা করেনি? সেই বদর বাহিনীর প্রধান কর্ণধারদের মন্ত্রীত্ব দিয়ে বিএনপি তাদের মসনদ পাকাপোক্ত করার কাজটি সম্পন্ন করেছিল বিনাদ্বিধায়। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই রাজাকার চক্রের সঙ্গেই ঐক্য করে মেনিফেস্টো দিচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন আওয়ামী লীগ জাপার সঙ্গে ঐক্য না করেও নির্বাচনে ভালো ফলাফল পেতে পারতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে সংশয়বাদী বলেই মনে হয়েছে। অনেকেই মনে করেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে এরশাদের জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করে দেশে বড়জোর দশটি আসন পেতে পারে। বিষয়টি শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন জরিপ-সমীক্ষায় জানতে-বুঝতে পেরেছেন বলেই আমি বিশ্বাস করি। তারপরও পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে মহাজোট…

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় কোন কৃত্রিমতা ছিল না। তারা রক্ত দিয়েই একটি মানচিত্র পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই প্রাণের বলিদান, আত্মাহুতি কোন মুখ্য বিষয় ছিল না। সে সময় রাজনীতিকরাও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূমির। একটি বলীয়ান জাতিসত্তার। মানুষ রাজনীতিকদের কথায় আস্থা রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সে যুদ্ধে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এরপরের দায়িত্বটুকু ছিল জনগণ-রাজনীতিকের সমন্বয় সাধনের। যে কাজটি দ্রুত করতে পারেননি স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রশাসকরা। করতে পারলে তাৎক্ষণিক বহুধা বিভক্তির জন্ম হতো না। মানুষও বিভ্রান্ত হতো না। একটি স্খিতিশীলতার পথ দেখতো জাতি [...]

সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় কোন কৃত্রিমতা ছিল না। তারা রক্ত দিয়েই একটি মানচিত্র পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তাই প্রাণের বলিদান, আত্মাহুতি কোন মুখ্য বিষয় ছিল না। সে সময় রাজনীতিকরাও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূমির। একটি বলীয়ান জাতিসত্তার। মানুষ রাজনীতিকদের কথায় আস্থা রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সে যুদ্ধে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এরপরের দায়িত্বটুকু ছিল জনগণ-রাজনীতিকের সমন্বয় সাধনের। যে কাজটি দ্রুত করতে পারেননি স্বাধীনতা পরবর্তী রাষ্ট্রশাসকরা। করতে পারলে তাৎক্ষণিক বহুধা বিভক্তির জন্ম হতো না। মানুষও বিভ্রান্ত হতো না। একটি স্খিতিশীলতার পথ দেখতো জাতি। রাষ্ট্রের অবকাঠামো নির্মাণে, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সবসময়ই জরুরি ভূমিকা রাখে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে পরিকল্পনায় ছিলেন ব্যাপক উদার। তার উদারতা তাৎক্ষণিক মহানুভবতার পরিচয় দিলেও পরাজিত পক্ষ সেটা দেখেছিল দুর্বলতা হিসেবে। যার ফলে এখনও তারা বলে কিংবা বলার সাহস দেখায়, শেখ মুজিব ঘাতক-দালালদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন! বঙ্গবন্ধু তেমন কোন ‘ক্ষমা’ ঘোষণা করেননি। বরং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্খা নেয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ব্যক্তিগত খাতিরের সুযোগ নিয়ে, সামাজিক মুচলেকা দিয়ে তারা পার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কেউ কেউ পলায়ন করেছিল পাকিস্তানে। পলাতক মাহমুদ আলী পাকিস্তানে মারা গেলেও, গোলাম আযমরা ফিরে এসেছিল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এবং পাখনা মেলেছিল সদলবলে। পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার নেশায় মত্ত ছিল তাদের লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। দেশের মঙ্গল সাধনের চেয়ে, দেশ থেকে মুজিব এবং তার স্বপ্নের নামাবলি মুছে দেয়ার প্রধান ইজারা নিয়েছিল তারা। দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লুটপাটকে বেছে নিয়েছিল তারা টিকে থাকার সিঁড়ি হিসেবে। প্রয়োজনীয় গণ উন্নয়ন খাতের বাজেটকে সঙ্কুচিত করে তারা মনগড়া অনুন্নয়নশীল খাতে বরাদ্দ করেছিল বেশি রাষ্ট্রীয় অর্থ। সবচেয়ে বেশি অমনোযোগী ছিল শিক্ষা খাতের প্রতি। ভয় ছিল, মানুষ সুশিক্ষিত হয়ে গেলে লুটপাটের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে। একটি জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে যে প্রত্যয়টির প্রধানত প্রয়োজন ছিল তা হচ্ছে দেশ গঠনে আন্তরিকতা। সেদিকে না এগিয়ে একটি মহল বন্দুক উঁচিয়ে ক্ষমতার স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে ছিল মরিয়া। শেখ মুজিবকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন নেতা ষ্পষ্ট বলেছিলেন, কাল সাপেরা ছোবল দিতে পারে। হ্যাঁ, সেটাই হয়েছিল। বন্দুকধারীদের সঙ্গে খুব সহজেই যোগ দিয়েছিল পরাজিত রাজাকারচক্র। তাদের মধ্য থেকে শাহ আজিজুর রহমানকে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.