বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যে যুক্তরাজ্যে গৃহীত একটি উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। জাস্টিস কনসার্ন নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠন যুক্তরাজ্যের অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ এপিপিজিএইচআর -এর মাধ্যমে এ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় এপিপিজিএইচআর-এর ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভবেরির ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন মহলে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন, অতএব এটিতে উপস্থিত না হলে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে ইত্যাদি যুক্তি দেখানো হয় জামাতমনস্ক লবিস্টদের পক্ষ থেকে। কিন্তু 'ওয়ার ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরাম'-এর তথ্যপত্র থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে এ সেমিনারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকেও এতে কেউ যোগ দিচ্ছেন না।

লন্ডন, ২২ জুন : বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী বিচারের উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যে যুক্তরাজ্যে গৃহীত একটি উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। জাস্টিস কনসার্ন নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠন যুক্তরাজ্যের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ (এপিপিজিএইচআর) -এর মাধ্যমে এ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় এপিপিজিএইচআর-এর ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভবেরির ভূমিকা নিয়েও বিভিন্ন মহলে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্তদের প্রধান আশ্রয়দানকারী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষত যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। জাস্টিস কনসার্ন সেরকমই একটি সংগঠন, যার কোনও তৎপরতাই এর আগে যুক্তরাজ্যে দেখা যায়নি।

জাস্টিস কনসার্ন নামের এ সংগঠনটি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রয়াসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ইউ কে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ওপর ভর করার অপচেষ্টা চালায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ প্রচেষ্টায় তারা সফলতাও অর্জন করে এবং ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে হাউস অব লর্ডসে এপিপিজিএইচআর-এর পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ : আন্তর্জাতিক মান বিচার’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। জাস্টিস কনর্সানের তৎপরতা থেকে বোঝা গেছে যে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল এ সেমিনারকে খুবই গুরুত্ববহ করে তোলা এবং এতে বাংলাদেশের সরকার পর্যায়ের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করা। কিন্তু এ উদ্যোগে জাস্টিস কনসার্ন কেবল ব্যর্থই হয়নি, বরং তারা যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত তা ফাঁস হয়ে যায়। ফলে এপিপিজিএইচআর-এর এ সেমিনারটি সম্পর্কে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, এপিপিজিএইচআর আয়োজিত সেমিনারটিতে উপস্থিতির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্যে যে টেলিফোন নাম্বারটি দেয়া হয়েছিল, সেটিতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়ে গত ২১ জুন কথা বলা সম্ভব হয়েছে। এ সময় টেলিফোনটি ধরেন জাস্টিস কনসার্নের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। সেমিনারটির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‌জাস্টিস কনসার্ন আর এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত নেই। এটি আয়োজন করছে এপিপিজিএইচআর।’

এরপর এপিপিজিএইচআর অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার একজন কর্মকর্তা জানান, ‌এরকম কোনও ইভেন্ট-এ এপিপিজিএইচআর-এর সম্পৃক্তির কথা তাদের জানা নেই। এপিপিজিএইচআর-এর অফিস থেকে এরকম জানানো হলেও যুক্তরাজ্যে ওয়ার ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরামের (WCSF) একজন সংগঠক জানিয়েছেন, ‌লর্ড অ্যাভবেরি তাদের সেমিনারে উপস্থিত থাকার জন্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে তারা সুনির্দিষ্ট তথ্যপত্র উপস্থাপন করে জানিয়েছেন, এর সঙ্গে জামায়াতচক্র সংশ্লিষ্ট থাকায় উদ্যোগটির উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে বলে তারা এতে যোগ দেবেন না।

জানা গেছে, সেমিনারটি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ-এর উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের টেলিফোন নাম্বারটি জামায়াত ঘরানার সুপরিচিত এক সংগঠকের। এটি নিশ্চিত হওয়ার পর ‘ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত একদল তরুণ বিষয়টি আরও বিশদভাবে জানার চেষ্টা চালান। তারা সাইটটি সম্পর্কে জানার জন্যে বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন। তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যে, যুক্তরাজ্যে জামায়াত-শিবির ঘরানার একটি সাপ্তাহিক ইউরোবাংলার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী কামাল শিকদারের নামে এই ডোমেইনটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, যিনি এক কালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির এর কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। সাইটটি রেজিস্টার করার সময় তার ব্যক্তিগত বাড়ির ঠিকানাও ব্যবহার করা হয়েছে। জাস্টিস কনর্সানের ওয়েবসাইটটিতে ‘কনটাক্ট আস’ এবং ‘অ্যাবাউট আস’ সহ বেশ কয়েকটি পেইজও সবার জন্যে উন্মুক্ত নয়। এর আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ- যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গোপনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন এবং যুক্তরাজ্যে আসার পর বাংলাদেশ ফোরাম অব ইউরোপ (BFE)-এর নির্বাহী সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ ফোরাম অব ইউরোপ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে আসা শিবির কর্মীদের সংগঠন হিসেবে সুপরিচিত, যাদের আয়োজিত আলোচনাচক্রে কথিত যুদ্ধাপরাধী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকেও অতীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বিএফই এর সাথে আইএফই (Islamic Forum of Europe – IFE) নামের আরেকটি জঙ্গী-মৌলবাদ সমর্থক বিতর্কিত সংগঠনের যোগাযোগের বিষয়টিও সর্বজনবিদিত। উল্লেখ্য, আইএফই এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম হল – যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী কথিত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈনউদ্দিন, যার বিরুদ্ধে একাত্তরের বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। (এখানে এবং এখানে দেখুন)।

জানা গেছে, বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সেমিনারটিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। এমনকি এ সেমিনারটিতে লর্ড অ্যাভবেরির ভূমিকা নিয়েও নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন, অতএব এটিতে উপস্থিত না হলে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নের মুখে পড়বে ইত্যাদি যুক্তি দেখানো হয় জামাতমনস্ক লবিস্টদের পক্ষ থেকে। কিন্তু ‘ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’-এর তথ্যপত্র থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে এ সেমিনারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকেও এতে কেউ যোগ দিচ্ছেন না।

তবে জাস্টিস কনসার্ন নামের সংগঠনটি এরপরও তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জুন শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংগঠনটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সভাপতিত্বে কুইন মেরির ম্যাসন লেকচার থিয়েটারে ‘বাংলাদেশ : গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং বাক-স্বাধীনতা’ শীর্ষক একটি সেমিনার। এতে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন যথাক্রমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেন এবং ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল।

১১ comments

  1. মোহাম্মদ মুনিম - ২৩ জুন ২০১০ (২:১২ পূর্বাহ্ণ)

    বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেন ন্যুয়র্কে যা বলেছেন

    বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে আওয়ামী লীগ সরকারই ছেড়ে দিয়েছিল। এখন বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক ঐক্য ঠেকাতে তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বলছে।
    তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হলে আগে পাকিস্তানি আসল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে কেউ স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করলে তাদের বিচার আগে হতে পারে না।
    ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার নিউইয়র্ক সিটির সেন্ট জন কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় এই সেমিনারের। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি মাহতাব উদ্দীন আহমদ।
    অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পত্রিকা কী লিখল বা কে কী বলল তার ভিত্তিতে কোনো বিচার হয় না। রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন মহল বা প্রকাশনা অনেক কিছুই লিখতে পারে। সেটিকে মৌলিক উপাত্ত হিসেবে ধরে নিয়ে কারো বিচার হতে পারে না। অভিযোগ প্রমাণের জন্য প্রত্যক্ষ সাক্ষীসহ বিচারিক বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতেই হবে। অন্যথায় দেশ বা আন্তর্জাতিক মহলে এ ধরনের বিচার গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি হবে রাজনৈতিক প্রহসন।
    তিনি বলেন, নুরেনবার্গ ট্রায়ালেও কাউকে অভিযুক্ত করতে যে ধরনের বিধিবিধানের কথা রয়েছে বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুন্যালে তা-ও নেই। কেউ এসে কিছু বললেই একজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে এটি কোনো বিচার হতে পারে না।
    খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হলে আগে আসল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করুন। সেখানে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন থাকবে।
    তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনে সরকারের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনতার ঐতিহাসিক রায়ের প্রতিফলন ঘটেছে।
    আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর সরকারি দলন নীতিকেও তিনি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন।
    অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটনের জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. জাকির হাফিজ, অ্যাটর্নি তাজুল ইসলাম এবং আমেরিকান একজন আইনজীবী।
    ড. জাকির হাফিজ বলেন, যেকোনো বিচার করতে হলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত হতে হবে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল বা কোণঠাসা করতে কোনো বিচারানুষ্ঠান হলে তাতে দেশ ও সরকারের ইমেজ ক্ষুণí হবে।

  2. অবিশ্রুত - ২৩ জুন ২০১০ (৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ)

    অদ্ভূত!
    এই একটিমাত্র শব্দই তাৎক্ষণিকভাবে মনে এলো এ খবর পড়ার পরে। এরকম অদ্ভূত সব ঘটনাই ঘটে কলিকালে…অদ্ভূত আধার এক আর কাকে বলে!

    এর মধ্যে আরও কিছু খবর চোখে পড়েছে আমাদের। যেমন, গোলাম আযম আবারও চেষ্টা চালাচ্ছেন বিদেশে চলে আসার। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যই লাগসই- কেননা এখানে তার পুত্রধনরা আছে, তারা মাঝেমধ্যেই উইকিপিডিয়ায় হানা দিয়ে বাবার কলংকমোচন করার জন্যে গোলাম আযম এন্ট্রিসহ মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এন্ট্রিগুলি সংশোধন করার চেষ্টা চালায়, এখানেই এক সময় গোলাম আযমের তত্ত্বাবধানে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং এখান থেকেই নানা দেশের যুদ্ধাপরাধীরা নানা ভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে আসছে অনেক আগে থেকেই। বহু স্মৃতি বিজড়িত যুক্তরাজ্যে তাই আবার আসার প্রয়োজন বোধ করেছেন গোলাম আযম- যদিও দোহাই দেয়া হচ্ছে যে, সন্তানদের সঙ্গে দেখা করাই তার সফরের উদ্দেশ্য। কিন্তু উদ্দেশ্য যে কী, তা বলাই বাহুল্য।
    এক সময় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন গোলাম আযম, কে জানত নিজের জীবদ্দশাতেই তার সেই নাগরিকত্বপ্রাপ্তিই (যাকে একদিন জামায়াতে ইসলামীর সবাই মনে করেছিল তাদের একটি বড় রাজনৈতিক বিজয়) এক সময় ভয়াবহ খোয়াব হয়ে উঠবে!
    ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অনীহা আছে, হতাশা আছে, উপহাস আছে; কিন্তু তারপরও এটি একটি অমোঘ সত্য যে ইতিহাস সবার প্রাপ্যই শোধ করে, কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেয়। যারা এখন গোলাম আযমদের রক্ষা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তারাও একদিন ইতিহাসের প্রাপ্য বুঝে পাবেন।
    এই সেমিনারের আয়োজনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যে দিয়ে লর্ড অ্যাভবেরি নিজেকে যে কী পরিমাণ বিতর্কিত করে তুললেন, তা বোধহয় তিনি এখনও বুঝতে পারছেন না। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিদের বিরুদ্ধে, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রমাণিতও হচ্ছে; এ ঘটনাপ্রবাহ থেকে পরিষ্কার ব্রিটেনের প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনও কর্তা ব্যক্তিই এখন আর সন্দেহের উর্ধে নন। জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধ বিচারকে ঠেকানোর জন্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কী পরিমাণ অর্থ লগ্নি করেছেন, তা আমাদের ধারণারও বাইরে। তারা যুদ্ধাপরাধী বিচারকে দেশের জনগণের কাছে অপ্রয়োজনীয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইত্যাদি হিসেবে প্রমাণ করার জন্যে লাখ লাখ বুকলেট বিনা পয়সায় বিলি করেছে এবং সম্প্রতি সাঈদীর লেখা আরও একটি বুকলেট বিলি করার উদ্যোগ নিয়েছে – এ থেকেই বোঝা যায়, তারা ইতিমধ্যেই কত সংঘবদ্ধ প্রস্তুতি নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তারা কী পরিমাণ অর্থ লগ্নি করেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও তার পরিমাণ যে বিশাল, তা এই সামান্য উদাহরণটি থেকেই বোধগম্য।
    যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি তরুণদেরও প্রয়োজন দ্রুত এ ধরণের জামাতি উদ্যোগগুলির মুখোশ উন্মোচন করা। ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের সংগঠকদের অসংখ্য ধন্যবাদ, সেরকম একটি উদ্যোগের আগাপাশতলা উন্মোচন করে তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন আশা করি।

  3. প্রশ্নোত্তর - ২৩ জুন ২০১০ (৫:০১ অপরাহ্ণ)

    ফুয়াদ সাহেবের শিবির-সংশ্লিষ্টতা কেবল কথিত নয়, প্রমাণিত। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে জামাত-শিবির বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে তার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে কুখ্যাত কামরুজ্জামান ওরফে কামরু রাজাকার। বাংলাদেশ থেকে কামরুজ্জামান কলকাঠি নাড়ছে আর লন্ডনে সে কাঠিসমূহ সমন্বয় করছে ফুয়াদ।

  4. প্রশ্নোত্তর - ২৩ জুন ২০১০ (৫:০৪ অপরাহ্ণ)

    জাস্টিস কনসার্ন তো সদ্য গজিয়ে উঠেছে, কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে ওদের নিয়ন্ত্রনে অন্তত আরো এক ডজন সংগঠন আছে যেগুলোর ব্যানার ওরা ব্যবহার করছে বা করবে। এ সংগঠনগুলোর বেশিরভাগই ব্রিটেইনে চ্যারিটি হিসেবে তালিকভুক্ত।

    • রায়হান রশিদ - ২৩ জুন ২০১০ (৫:১৫ অপরাহ্ণ)

      এই সংগঠনগুলোর একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন সত্যিই জরুরী হয়ে পড়েছে।

  5. মুক্তাঙ্গন - ২৩ জুন ২০১০ (৭:০৭ অপরাহ্ণ)

    বিডিনিউজ এক্সক্লুসিভ:

    Jamaat links to UK war crimes meeting
    Wed, Jun 23rd, 2010 1:20 pm BdST

    David Bergman

    London, June 23 ( bdnews24.com) — A United Kingdom human rights parliamentary committee has admitted that a high-profile seminar it is hosting at the House of Lords on Bangladesh’s 1971 war crimes trials has been organised with the assistance of a group accused of having links to the Jamaat-e-Islami.

    Members of the Jamaat and its then student organisation Islami Chhatra Sangha are alleged to have committed crimes during the nation’s war of independence from Pakistan in 1971.

    The seminar discussing the compatibility of the International War Crime (Tribunals) Act 1973 with international legal standards is hosted by Lord Avebury and includes speakers from Amnesty International, Human Rights Watch and the International Bar Association.

    In March 2010, the War Crimes Committee of the International Bar Association, an independent legal body, sent the Bangladesh government a legal opinion outlining changes that it considered should be made to the 1973 Act that would help ensure that the trials would be compatible with international legal standards.

    Its detailed advice reflected the concerns previously set out by the international human rights organisation, Human Rights Watch, in a letter it sent to the prime minister, Sheikh Hasina in July 2009.

    Even though the Bangladesh government has consistently stated in public that its trials will meet international standards, it has however yet to engage with these arguments in any level of detail.

    Lord Avebury, the vice-chair of the Parliamentary Human rights Group, told bdnews24.com that although the invitations to the seminar on the 1973 Act were sent out in his name, Justice Concern provided clerical support in sending out the invitations.

    “[It] also recorded the answers, so that we have a list of those speaking and attending,” he said.

    The e-mail address of Justice Concern along with its contact telephone number was on the bottom of all the invitations.

    Inquiries made by bdnews24.com however indicate that Justice Concern, which was formed only two months ago, has links to the Jamaat-i-Islami in Bangladesh and its sister organisations in England.

    Justice Concern’s website is registered in the name of MKA Sikder, also known as Kamal Sikder who is the executive director of the UK-based jamaat-leaning Euro Bangla magazine.

    In addition, Kamal Sikder, who now lives in the UK, admitted to bdnews24.com that “as a student ten years ago” he was a member of the executive council of the Islami Chaatra Shibir, the student organisation associated with Jamaat.

    Surprisingly, Sikder said he had “no knowledge” that he had himself registered the Justice Concern website. “Kamal Sikder is a common name, it could be anyone.”

    When informed that the e-mail address in the website registration document was his, Sikder replied that he “would have to ask [Justice Concern] whether they used my name”.

    He denied that he had any role within the organisation. “All I know about Justice Concern is that I got an invitation to attend an event.”

    The chair of Justice Concern is barrister Asaduzzaman Bhuiyan (Fuad), who also has links to the Jamaat.

    Bhuiyan is the executive co-ordinator of Bangladesh Forum Europe – an organisation well known in London’s East End to have close links to the party through Islamic Forum Europe, its similarly sounding sister organisation in the UK. Its website has a picture of Jamaat chief Matiur Rahman Nizami as a guest speaker at a seminar.

    Islamic Forum Europe was set up by UK-based Chowdhury Mueenuddin who, 15 years ago was accused in a British television Channel Four documentary of involvement in the abduction of intellectuals in December 1971 when he was a member of the Islami Chaatra Sangha. Mueenuddin denies the allegations.

    Bhuiyan told bdnews24.com that initially Lord Avebury had agreed that the All Party Parliamentary Committee and Justice Concern would organise the meeting together. “However, Lord Avebury told us that in order for the meeting to be bipartisan, Justice Concern should not be involved.”

    Contrary to Lord Avebury’s version, Bhuiyan told bdnews24.com, “We did not send out any invitations. I don’t even know who is attending the meeting.”

    Bhuiyan denied that either Justice Concern or Bangladesh Forum Europe had any links with Jamaat politics. He said that he did not know Kamal Sikder, who had registered the Justice Concern site. “I am not in charge of IT issues. Somebody else did it.”

    Sikder, however, contradicted Bhuiyan when he told bdnews24.com that he and Bhuiyan did “know each other”.

    Lord Avebury appeared unrepentant that Justice Concern was involved in the meeting’s organisation.

    “I do know that Justice Concern is alleged to have links with the Jamaat, and I have been made aware that unfortunately it was for this reason that some organisations declined to participate in the meeting,” he told bdnews24.com.

    Many fear however that the involvement of a Jamaat-linked group in the organisation of a meeting on international standards will provide the government an excuse to discount the views of international lawyers raising concerns about the Bangladesh trials.

    “It is important that the Bangladesh government gives serious consideration to the arguments made by organisations like the IBA, and Amnesty International, and not just ignore them,” Rayhan Rashid from the War Crimes Strategy Forum, a coalition of independent activists working on the 1971 war crimes trials, told bdnews24.com.

    “However, organising meetings jointly with Jamaat groups is not the way to get the government or others in Bangladesh to listen,” Rashid said.

    The Bangladesh high commissioner in London did not accept an invitation to speak at the meeting informing the parliamentary group that he was busy with the president’s visit.

    Chris Hall, senior legal adviser at the human rights organisation Amnesty International who is down to speak at the meeting, told bdnews24.com that he had no knowledge that Justice Concern was involved in the meeting, “I only had dealings with Lord Avebury.”

    He said that Amnesty International’s position was clear, that “anyone regardless of affiliation or nationality who is suspected of international crimes should be investigated and if there is sufficient evidence, should be prosecuted.”

    At the end of March, the government established a three-member tribunal along with an investigation body and a group of prosecutors to hold trials of those accused of committing war crimes during the 1971 War.

    The issue of whether the 1973 Act satisfies international legal standards — the subject of the seminar — is important to whether or not the trials, when they do take place, will be accepted internationally.
    bdnews24.com/db/bd/1020h

    • রায়হান রশিদ - ২৩ জুন ২০১০ (৯:০০ অপরাহ্ণ)

      ডেভিড বার্গম্যানের রিপোর্টটি অসাধারণ। তবে নিচের এই বক্তব্যের আলোকে কিছু নতুন তথ্য উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করছি:

      Even though the Bangladesh government has consistently stated in public that its trials will meet international standards, it has however yet to engage with these arguments in any level of detail.

      গত ১৩ জুন ২০১০, আইবিএ-ওয়ার ক্রাইম কমিটি’র বহুল আলোচিত রিভিউটির (১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন নিয়ে) বিষয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ তিন আইনজীবির মতামত আহ্বান করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ড কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম, এবং জনাব রোকনউদ্দিন মাহমুদসহ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান – বিচারপতি (অব:) আব্দুর রশিদ। এই মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইবিএ রিভিউ এর প্রত্যুত্তরে একটি বিশদ ‘আইনগত মতামত’ প্রণয়ন করা হয়, যা সপ্তাহকাল আগেই লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এসে পৌঁছায়। দূতাবাস এর পক্ষ থেকে এই আইনগত মতামতটি গত ২১ জুন তারিখেই যুক্তরাজ্যের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে – যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের আইনী অবস্থান এবং প্রত্যুত্তর হিসেবে। যুক্তরাজ্য আইন সভার যাঁদের কাছে প্রত্যুত্তরটি অফিশিয়ালী পাঠানো হয়েছে তাঁরা হলেন:

      ১) এ্যান ক্লুইড, ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ অন হিউম্যান রাইটস’ এর চেয়ারপার্সন।
      ২) লর্ড এরিক এ্যাভবেরী, যিনি উপরোক্ত পার্লামেন্টারী গ্রুপের পাঁচ জন ভাইস-চেয়ারম্যানের একজন, তাকেও এই দলিলটির একটি অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
      ৩) এ্যান মেইন, ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারী গ্রুপ অন বাংলাদেশ’ এর চেয়ারপার্সন।

  6. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০১০ (৮:৩৯ অপরাহ্ণ)

    আজকের দৈনিক সংগ্রামের সূত্রে জানা গেল খন্দকার মাহবুব হোসেন এখন আমেরিকায়। ব্যারিস্টার মাহবুব হোসেন ও খন্দকার মাহবুব হোসেন কি একই লোক? তাহলে আমেরিকার পরই তিনি আসবেন ইংল্যান্ডে, তার সফরসূচি মনে হয় বেশ বড়। নিউইয়র্কের সভায় কারা কারা ছিলেন, কী কী আলোচনা হল, দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদন

    দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ১৯৫ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়ে গেছে
    ডানপন্থী দলগুলোকে ধ্বংস করার জন্যে ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ – খন্দকার মাহবুব হোসেন

    নিউইয়র্ক (ইউএনএ) : বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি, প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দৃঢ়তার সাথে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে বলেছেন, বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই। তাই ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩’ আইনের আওতায় কারো বিচার করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, শুধু যুদ্ধাপরাধী নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদেরও বিচার হতে হবে। ক্ষমতাসীন সরকার বিএনপি-জামায়াতসহ ডানপন্থী দলগুলোকে ধ্বংস করার জন্যই ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৫ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই হয়ে গেছে এবং শেখ মুজিব সরকার তাদের ক্ষমা ঘোষণা করে গেছেন। মহাজোট সরকার একটি পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি, প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে বলেন, হতাশ হবেন না, দেশে আইন আছে, আইনজীবী-বুদ্ধিজীবী আছেন। এখন প্রয়োজন দেশে-বিদেশে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ ( এইচআরডিবি) আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব হোসেন উপরোক্ত কথা বলেন। সিটির কুইন্সস্থ সেন্ট জন ইউনিভার্সিটির অ্যালুমনাই থিয়েটার হলে গত ১৯ জুন শনিবার সকালে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এইচআরডিবি’র সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে টেলিকনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ। সেমিনারে প্রধান বক্তা ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. জাকির হাফিজ এবং আলোচনায় অংশ নেন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস-এর এজিএস, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মূলধারার রাজনীতিক লাইবেটারিয়ান পার্টির ম্যানহাটান চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান রন মোর, এটর্নী ইসাবেল বুকারাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারহাত হোসেন এবং দৈনিক যুগান্তর-এর সহকারী সম্পাদক ড. মাহবুব হাসান। সেমিনারের ডিক্লারেশন পাঠ করেন এইচআরডিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।
    সেমিনারের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আব্দুল্লাহ আল আরিফ এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এইচআরডিবি’র সহ-সভাপতি মাসুম আলী। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন এইচআরডিবি’র সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে মডারেটরের দায়িত্ব পালন জাহিদ জামির। সেমিনারের এক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে মহাজোট সরকারের পানি সম্পদমন্ত্রী’র বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সবশেষে প্রধান অতিথি খন্দকার মাহবুব হোসেন উপস্থত সুধীবৃন্দের প্রশ্নের উত্তর দেন।
    সেমিনারে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জামায়াতে ইসলামী ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান চেয়েছিল সত্য। এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিলো। ৯৫ হাজার পাক আর্মি আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এটা ছিল আমাদের বিজয়। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার বাকশাল কায়েম করে জনগণের সকল মৌলিক অধিকার ভুলুণ্ঠিত করে দেয়। চারটি সংবাদপত্র রেখে ২২টি সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সরকার গঠনের সময় আওয়ামী লীগের কাছে জামায়াত ভালো ছিলো। পরবর্তীতে জামায়াত-বিএনপির সাথে চলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের কাছে জামায়াতে ইসলামী খারাপ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে বিএনপি-জামায়াত এখন জঙ্গী। তিনি বলেন, এর আগে আওয়ামী লীগ দুই দুইবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো তখন তো এই বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তখন আওয়ামী লীগ নিরব ছিলো। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে যে, বিএনপি-জামায়াতসহ ডানপন্থী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের আর কোন জায়গা থাকবে না।
    তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন আর চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনে জাতীয়তাবাদীদের বিজয় বলছে সরকারের আর বেশি দিন সময় নেই। তাদের বিদায়ের সময় এসে গেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ-যুবলীগ দেশে প্রতিদিনই মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
    খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিডিআর হত্যার ঘটনার সিরিজ রিপোর্ট দৈনিক আমার দেশ প্রকাশ করায় পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। দেশে চলছে চরম মানবাধিকার, সরকার জঘন্যতম অপরাধ করছে যার দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে দেশে-বিদেশে সরকারের মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদী ভয়েস তুলে ধরার আহবান জানান তিনি।
    টেলিফোনে প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন কায়েম করতে প্রত্যেকের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট মানুষ হিসেবে যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মানবাধিকার দানবাধিকার নয়। আমরা জাতিসংঘকে বলেছি বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের কথা। মানবাধিকারকে আজ অকল্যাণকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
    অধ্যাপক ড. জাকির হাফিজ তার বক্তব্যে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের বিভিন্ন ঘটনার কথা এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ও মানবাধিকার আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিচারকদের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে, ঘুষ-দুর্নীতি বেড়ে গেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, পুলিশ নির্যাতনকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
    এডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কিত বিষয়াদী পূর্বাপর তুলে ধরে বলেন, ১৯৫ চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে গেছে, তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। আজ প্রায় ৪০ বছর পর কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতিকে বিভক্ত, গণতন্ত্রকে বিনষ্ট, বিরোধীদলকে দমন আর একদলীয় শাসন কায়েম করতেই এ উদ্যোগ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশ সংবিধানের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে বলেন, যেকোন কালো আইন তা সংবিধান অনুযায়ী বাতিলযোগ্য। যে আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে আন্তর্জাতিকতার কিছু নেই। আইনটি নামেই শুধু ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩’ আইন। তিনি বলেন, হাত-পা বেঁধে গরু জবাই করার মতো অবস্থা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যবস্থা। এই বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাসহ একসময় যারা গলাকাটা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের কাউকে কাউকে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকার আওয়ামী লীগের, বিচারক আওয়ামী লীগের, আইনজীবী, আওয়ামী লীগের আর বিচার হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের। বিচার কার্যে আসামীদের কোন অধিকার থাকবে না। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে কেমন বিচার হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও এমন মানবাধিকার হরণের নজির নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে ১৯৭২-৭৩ সালে যারা ৩০ হাজার লোককে হত্যা করেছে তাদের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সরকারের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরেছেন। আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম ঢাকা বারের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) থাকাকালে দুর্নীতির জন্য বরখাস্ত হয়েছিলেন। আজ সুপ্রীম কোর্টকে মারাত্মকভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, কুক্ষিগত করা হয়েছে বিচার বিভাগ।
    মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের রাজনীতিকদের জিঘাংসা-প্রতিহিংসা আর দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশের বড় সমস্যা। জাতি গড়তে হলে পিছনের ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে, সকল নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনারা রেমিট্যান্স পাঠান, বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে আপনাদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।
    মি. রন মোর বলেন, বন্যা, খড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশের অনেক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ একটি বিচিত্র দেশ। সরকারের দায়িত্ব জানমালের নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতা আর মানবাধিকার নিশ্চিত করা।
    এটর্নী ইসাবেল বলেন, বুকারাম মানবাধিকার লংঘন শুধু একটা দেশের সমস্যা নয়। এই সমস্যা বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সমস্যা। তিনি বলেন, জনগণের অধিকারের সঠিক প্রয়োগই হচ্ছে গণতন্ত্র। সুষ্ঠু নির্বাচন, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত।
    অধ্যাপক ফরহাত হোসেন বলেন, আমাদের সামনে কোন দলীয় রাজনীতি নেই। সম্মিলিতভাবে মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের সমস্যায় প্রবাসীদের উদ্বিগ্নতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যারা দেশে থাকি তাদের চেয়ে প্রবাসীরা বোধহয় বেশি দেশ নিয়ে ভাবছেন।
    ড. মাহবুব হাসান বলেন, মানুষের মৌলিক চিন্তা-চেতনা থেকে বিচ্যুত করা যায় না। প্রজ্ঞা-জ্ঞান কাজে লাগাতে না পারলে সমাজকে কখনোই এগিয়ে নেয়া যাবে না। আমাদের সমাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্য আজও সফল হয়নি। এর জন্য দেশের রাজনীতিকরা দায়ী। জনগণের মানবাধিকার রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক জীবনে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
    মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে চরম মানবাধিকারের ঘটনা ঘটছে। প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে দেশের মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদ করার অধিকার আমাদের রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে যা হচ্ছে তা মেনে নেয়া যায় না। এটি হচ্ছে আইনের আওতায় রাজনৈতিক বিচার। তিনি বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩’ কি এবং কেন তা আজ নতুন করে ভেবে-চিন্তে দেখতে হবে। তিনি বলেন, মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদ আর মানবাধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিই এইচআরডিবি’র প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে এইচআরডিবি’র রয়েছে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা।
    নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং উল্লেখযোগ্য নারীসহ বিপুল সংখ্যক দর্শক-শ্রোতা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
    সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়
    এদিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি, প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ঐদিন সন্ধ্যায় এইচআরডিবি আয়োজিত সিটির জ্যামাইকাস্থ টিক্কা গার্ডেন রেস্টুরেন্টে বাংলা মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে তিনি নৈশভোজে অংশ নেন।

    দৈনিক সংগ্রামের এই প্রতিবেদনটির লিন্ক এখানে

  7. মাসুদ করিম - ২৩ জুন ২০১০ (৯:০৩ অপরাহ্ণ)

    টুইটারে এই পোস্টের লিন্ক দেয়ার পাশাপাশি লিখেছি : জামাত হল চোখের পাতা ছাড়া লাল চোখের ত্রাস : এর না আছে ঘুম না আছে লজ্জা। ঘুম আর লজ্জা যার নেই, সে মরে কী করবে?

  8. মাসুদ করিম - ২৫ জুন ২০১০ (১১:০৬ পূর্বাহ্ণ)

    এই সেমিনার নিয়ে দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্ট

    হাউজ অব লর্ডসে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন বিষয়ক সেমিনার
    যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইনে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হবে

    ০ বিচারের বর্তমান পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ০

    স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত আইনে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে বৃটেনের হাউজ অব লর্ডসের সর্বদলীয় সংসদীয় মানবাধিকার গ্রুপ। যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করা হলেই আন্তর্জাতিক মহলে বিচারের বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হবে। বিচার প্রক্রিয়াও হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইনকে আন্তর্জাতিক আইনের বিধান মেনে চলতে হবে। এ জন্য বক্তারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) এ্যাক্ট ১৯৭৩ আইনের ক্ষেত্রে তিনটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ আকর্ষণ করেন।
    গত বুধবার যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লর্ডসের ৩ নম্বর কক্ষে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন (ট্রাইব্যুনাল) ১৯৭৩ : আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
    সেমিনারটির আয়োজন করে সর্বদলীয় সংসদীয় মানবাধিকার গ্রুপ। সভাপতিত্ব করেন গ্রুপের সহসভাপতি লর্ড এ্যাভিবারি। তিনি আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানও।
    সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে লর্ড এ্যাভিবারি বলেন, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ায় বিচার হতে হবে। তার আগে বাংলাদেশ সরকারকে সম্পূর্ণভাবে ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ আইনকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা অর্জন করতে হবে।
    আন্তর্জাতিক বার এসোসিয়েশনের (আইবিএ) যুদ্ধাপরাধ কমিটির সভাপতি স্টুয়ার্ট এলফোর্ড বলেন, লর্ড এ্যাভিবারির পক্ষ থেকে আইবিএ’কে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি পর্যালোচনার অনুরোধ করা হয়। আইবিএ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান যাচাই করেছে। আইবিএ যুদ্ধাপরাধ কমিটি তিনটি মৌল বিষয়কে বিবেচ্য হিসেবে সুনির্দিষ্ট করেন। এগুলো হলো: সাবসটেল্টিভ ল’ (অপরাধের সংজ্ঞা), অভিযুক্তের দায় (কোন ঘটনায় সে অপরাধী) এবং সুষ্ঠু বিচার ও ট্রাইবুন্যালের নিরপেক্ষতা।
    এই ভিন্ন মূল নীতির ভিত্তিতেই আইবিএ বাংলাদেশের দেশের যুদ্ধাপরাধ আইনের ১৭ দফা সংশোধনীর সুপারিশ করে।
    বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন সেমিনারে বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে নই কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট বারের আইনজীবীরা ১৯৭৩ সালের আইনের কয়েকটি বিধানকে বাদ দিতে বলেছে। কারণ এগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। উদাহরণ হিসেবে ১৯৭৩ সালের আইন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগের সরকারি এখতিয়ার ও চ্যালেঞ্জ না করার বিধান এবং ট্রাইব্যুনালের কোন কিছুই অভিযুক্তের চ্যালেঞ্জ না করতে পারার কথা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধে দু’ধরনের মানুষ জড়িত ছিল। এজন্য দু’পক্ষই দায়ী। ১৯৭৩ সালে সিমলা চুক্তির আওতায় আওয়ামী লীগ সরকারই যুদ্ধাপরাধের জন্য চিহ্নিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী সদস্যদের ক্ষমা করে দিয়েছিল। ৩৯ বছর পর বর্তমানে বিচারের পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছাড়া কিছুই নয়।
    অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের (এআই) যুদ্ধাপরাধ বিভাগের ক্রিস কলের মতে, ১৯৭৩ সালের আইনের বিশ্লেষণকে তার আগের এবং পরের ক্ষমা, অব্যাহতিদানের পটভূমিতে দেখতে হবে। যাদের সন্দেহ করা হবে তাদের ব্যাপরটি দ্রুত তদন্ত করতে হবে। অ্যামনেস্টি সকল অর্থেই মৃত্যুদন্ডকে সমর্থন করে না। তাছাড়া ঐ আইনে আসামীদের অধিকার যথেষ্টভাবে রক্ষিত হয়নি। অ্যামনেস্টি বিশেষ আদালতের ব্যাপারেও অ্যামনেস্টি উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, সেখানেও মাত্র অল্প সংখ্যক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জড়িত করা হয়।
    আন্তর্জাতিক আইনজীবী সমিতির (আইবিএ) টবি ক্যাডম্যান ফৌজদারি আইনের স্বাভাবিক বিধান যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের বেলায় প্রযোজ্য করা হচ্ছে না- শ্রোতাদের এই উদ্বেগকে আলোচনায় এনে বলেন, নিরপরাধ ভাবা ও নীরব থাকা মানুষের মৌলিক অধিকার।
    এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিবিই কিউসি মি. রবি নওলিস, সিএমজি কিউসি মিজ জোয়ানা কর্নার, মি. সুজিত সেন, ব্যারিস্টার মিসেস সাদিয়া সাফি, সাংবাদিক এম আফজাল, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, লন্ডন কুইন মেরী ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. হাসান শহীদ, ব্যারিস্টার আশিকুর রহমান, ব্যারিস্টার নাঈম মাহমুদ, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মামুন সুমন, ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান, সাংবাদিক আলতাফ হোসেন, ব্যারিস্টার মিজ লুবাবা, ব্যারিস্টার হাসিব খন্দকার, ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির প্রভাষক ড. ইমরানুল হক, ব্যারিস্টার সুইটি আক্তার, ব্যারিস্টার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার সাঈদ হাসান, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ এ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার মামুন সরকার, ব্যারিস্টার মিসেস তামান্না, ব্যারিস্টার ইসমাইল, ড. ফুয়াদ হাসানাত, ড. রায়হানা নাসরীন, সেন্টবার্গের মিজ আলিয়া, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন ও ব্যারিস্টার জিয়া উদ্দিন মামুন।
    সাধারণ আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন খোকন বড়ুয়া, ন্যাশনাল ফোরাম ফর প্রোটেকশন অব হিউম্যান রাইটসের (এনএফপিএইচআর) সদস্য সচিব এডভোকেট তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মোখলেছুর রহমান চৌধুরী, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ড. এমএ মালেক, ব্যারিস্টার, মিসেস তামান্না, এডভোকেট আব্দুল গাফফার ও কমিউনিটি নেতা শামসুল আলম চৌধুরী।

    লিন্ক এখানে

  9. Pingback: যুদ্ধাপরাধের বিচার : ‘বড় হলে বুঝবে’ | ইমতিয়ার শামীম

Have your say

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.