১৯১৩ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নোবেল ফাউন্ডেশনের আরো গৌণ কবিদের নোবেল পুরস্কার প্রদানের দৃষ্টান্তের একটি দৃষ্টান্ত। নোবেল পুরস্কার পাওয়া এরকম আরো গৌণ কবিদের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বিস্মৃত হয়েছেন। ইংরেজি কবিতার জন্য সাহিত্যের ১৯১৩ সালের নোবেল পাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে Rabindranath Tagore ইংরেজি কবিতার জগতে কোনো উল্লেখযোগ্য অবস্থানেই তো নেই অনেক দিন থেকে। কী বিদঘুটে এক ইতিহাস বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাংলা সাহিত্যকে একশ বছরের বেশি সময় ধরে যার মধ্যে প্রথম আটাশ বছর রবীন্দ্রনাথের অস্তিত্বকে কুরে কুরে খেয়েছে এই বিদঘুটে ইতিহাস। আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এই নোবেল পুরস্কারটা হজম করতে হয়েছিল তাৎক্ষণিক বৈশ্বিক পরিচয় ও নগদ অর্থলাভের দুর্লভ সুযোগ হিসেবে। কী হত যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাতেও গৌণ কবি হতেন? তাহলে ওই নোবেল পুরস্কার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর বাংলায় ফিরে আসতেন না। মানে আমি বলতে চাইছি তেমন হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এরপর থেকে হয় ইংল্যান্ডে না হয় আমেরিকাতেই বসবাস শুরুর চেষ্টা করতেন। এবং তখনি ইন্ডিয়ান ইংরেজি ভাষার কবি হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরুর তোড়জোড় শুরু করতেন। কিন্তু যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার মহৎ

কবিদের অন্যতম এবং রবীন্দ্রনাথের মতো বিপুল প্রতিভা সারা পৃথিবীতে বিরল কাজেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবি অস্তিত্বের ভেতর গৌণ কবির নোবেল পুরস্কার লাভের প্রাত্যহিক দংশন সহ্য করেও সারা পৃথিবী চষে বেড়িয়েছেন প্রাচ্যের মহৎ বাণী শোনানোর অদম্য আগ্রহে। রবীন্দ্রনাথের একটা বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী বিশ্বায়নের এক বড় পীঠস্থান হবে। বাংলা ভাষার অপরিচয় ঘুঁচে যাবে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে। আরো বেশি বেশি বাংলা ভাষাকে বাংলার সাহিত্য শিল্পকে জানবে পৃথিবী যেমন বাংলাও জানবে পৃথিবীর বিবিধ ভাষা সাহিত্য ও শিল্পকে। এবং এভাবে জগতে বাংলা সাহিত্যের প্রভাব বলয় বাড়বে। অন্য ভাষার মহৎ কবিরা শুধু বাংলায় প্রচারিত হবেন না বাংলা ভাষার মহৎ কবিরাও পৃথিবীতে প্রচারিত হবেন। সেভাবে কিছুই হয়নি। পৃথিবী দূরে থাক ভারতের মধ্যেই বাংলা ভাষার মহৎ কবি সাহিত্যিকদের প্রচার হল না যতটা প্রচার হল ভারতের বিবিধ ভাষা সাহিত্য শিল্পের প্রচার বাংলা ভাষাতে। বাংলা ভাষার অপরিচয় রয়েই গেল। রবীন্দ্রনাথের অস্তিত্বের যন্ত্রণায় বিদ্ধ শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী এদিক থেকে সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়ে গেল। আর এ তো আমাদেরও দায়। বাংলা ভাষার মহত্তম কবির বিশ্বপরিচয় ইংরেজি ভাষার এক গৌণ সম্পূর্ণ বিস্মৃত কবি হিসেবে।…

গতকাল বিকেলে আমি এক অন্ধ পদক্ষেপ নিলাম, যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, আমি সরাসরি nobelprize.org এ সার্চ দিয়ে বসলাম [...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ বইপ্রস্থ ২৬ জুন ২০১২ বইপ্রস্থ ২৩ এপ্রিল ২০১৩ বইপ্রস্থ ১৮ নভেম্বর ২০১৩ বইপ্রস্থ ১১ মে ২০১৪ বইপ্রস্থ ৫ নভেম্বর ২০১৫ বইপ্রস্থ ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ বইপ্রস্থ ১২ মার্চ ২০১৬ বইপ্রস্থ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ বইপ্রস্থ ৩০ মার্চ ২০১৭ রজনী রঞ্জন সেন সম্বন্ধে আরো জানতে চাই রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের সেই অনুবাদ পড়তে চাই GLIMPSES OF BENGAL LIFE ।। Being Short Stories from the Bengali of Rabindranath Tagore ।। By Rajani Ranjan Sen ।। Minto Press, Chittagong ।। G. A. Natesan & Co., Publishers, Madras ।। 1913 ।। The book is acquired by Nobelbibliotek, Swedish Academy, Sweden।। কয়েক মাস আগে worldcat.org এ ঝোঁকের বশেই 'rabindranath tagore, chittagong' লিখে সার্চ দিই, তার ফলে যেতালিকা এলো সেখানে Publisher: Chittagong : Minto Press, 1913 এবং Author: Rajani Ranjan Sen আর Print book : English এই তথ্যগুলো আমাকে প্রলুব্ধ করে, আমি তখন শুধু এটা বুঝতে পারছিলাম রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখার সম্বন্ধে ইংরেজিতে হয়ত কিছু লিখে থাকবেন রজনী রঞ্জন সেন এবং তা ছাপা হয়েছে ১৯১৩ সালে চট্টগ্রামের মিন্টো প্রেস থেকে। পরে আমি গুগল সার্চে এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে রজনী রঞ্জন সেন চট্টগ্রাম কলেজের আইন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এবং তিনি রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন জানতে পারি। আমি নিজে চট্টগ্রাম কলেজের ড্রপআউট, আমাদের সময় চট্টগ্রাম কলেজে কোনো আইন বিভাগ ছিল না এবং আমাদের আগে পরেও কোনো আইন বিভাগের কথা কখনো শুনিনি, চট্টগ্রাম কলেজের সাথে আমার বিভিন্ন পরিচয়ের সূত্রে আমি তখন জানতে চেষ্টা করি চট্টগ্রাম কলেজে ১৯১৩ সালে আইন বিভাগ ছিল কিনা, পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে আমি জানতে পারি চট্টগ্রাম কলেজে কখনো আইন বিভাগ ছিল না, কিন্তু আমি সন্তুষ্ট হতে পারি না, আমার মনে হচ্ছিল ১০০+ বছর আগে আইন শিক্ষার জনপ্রিয়তার যুগে চট্টগ্রাম কলেজের মতো কলেজে আইন বিভাগ থাকাটাই স্বাভাবিক। সুহৃদ নীড় সন্ধানীর সাথে আমি চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়ই আলাপ করে থাকি এবং এবিষয়ে আলাপের এক পর্যায়ে তিনিও চট্টগ্রাম কলেজে আইন বিভাগ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করলেও এবিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, এই আলাপের কয়েক দিন পরেই…

পদ্য আছে যার গদ্য আছে যার তার আর কী আছে যে তার গদ্যপদ্য আছে? [...]

পুরনো বইপ্রস্থ বইপ্রস্থ ২৫ আগস্ট ২০০৯ বইপ্রস্থ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ বইপ্রস্থ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০ বইপ্রস্থ ২৬ জুন ২০১২ বইপ্রস্থ ২৩ এপ্রিল ২০১৩ বইপ্রস্থ ১৮ নভেম্বর ২০১৩ গদ্যপদ্য পরিসর গদ্য ও পদ্যের দ্বন্দ্ব ।। শিশিরকুমার দাশ ।। ২১-২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত ১৯৮৩ সালের শরৎ-স্মৃতি বক্তৃতা ।। প্রকাশক : দে’জ পাবলিশিং ।। মূল্য : ৫০ ভারতীয় টাকা মানুষ কথা বলে তাই তার বাচন আছে। কিন্তু তাতে কী? মানুষ দাগ কাটতে চায় তাই তার লিপি আছে। কিন্তু তাতে কী? মানুষের মন আছে স্মৃতি আছে মস্তিষ্ক আছে তাই প্রতীকের অরণ্য ধরে রাখার তার ক্ষমতা আছে। কিন্তু তাতে কী? পদ্য আছে যার গদ্য আছে যার তার আর কী আছে যে তার গদ্যপদ্য আছে? সৃষ্টিশীলতা মানুষকে পদ্যে ও গদ্যে আসক্ত করেছে। তাই লিপির আর বাচনের কোড হয়ে ওঠেনি কোনোদিন কারো পদ্য অথবা আজ পর্যন্ত কারো গদ্য। চিঠি কড়চা থেকে দর্শন বিজ্ঞান পদ্যেগদ্যে শুধু সৃষ্টিমুখরতাই মানুষের অস্তিত্বকে মর্মরিত রেখেছে। মানুষ বলেছে এক আর লিখেছে আরেক। কখনো বিপর্যস্ত হয়েছে পদ্যে তো কখনো বিপর্যস্ত হয়েছে গদ্যে। কোনো

সন্দেহ নেই দুটোই সমান উচ্চতার দুটোই সমান সৃষ্টিশীলতার। এবং মহত্তম, স্বীকার করে কোনো ক্ষতি নেই আদ্যন্ত কোনো লাভও নেই, প্রকাশের কত কঠিন পথ পেরিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আজকের গদ্য আজকের পদ্য। আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে মহত্তম গদ্যপদ্যের পরিসরে প্রস্তুত থাকা বা হতে থাকাই সব লেখকের প্রতি মুহূর্তের মুক্তিযুদ্ধ। বক্তৃতাটি যিনি দিয়েছেন তিনি বাংলা পদ্য ও গদ্যের সুপরিসর পরিক্রমাকে বিশ্লেষণ করেছেন, পদ্যের ও গদ্যের নানান উদাহরণ উঠে এসেছে। বক্তৃতাটি শুনতে কেমন উপভোগ্য ছিল তা আমার দ্বারা জানানো সম্ভব হচ্ছে না, কিন্তু বক্তৃতাটি পড়তে আমার ভাল লেগেছে – শরীর খারাপের সুযোগে হালকা কিছু পড়ার উদ্দেশে এবই আমার হাতে উঠেছিল, সেটা পূর্ণ মাত্রায় রক্ষা করে আমার শরীর ও তার প্রেক্ষিত মনকে বইটি ভারী করে তোলেনি একেবারেই। পদ্য ও গদ্যের আলোচনায় রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতার জন্মের কথা উঠেছে, কথা উঠেছে বঙ্কিমের গদ্যপদ্য প্রবন্ধের কথা – কিন্তু গদ্যকবিতার কোনো নিদর্শন যেহেতু আমি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দেখি না এবং বঙ্কিমের এবিষয়ক প্রচেষ্টাকে আমরা যেহেতু চিন্তার একটুখানি উসকানি ছাড়া কিছুই ভাবি না – আমি বলতে কোনো দ্বিধা…

আমাকে এখন একটু মরতে দিন। [...]

আমি যে বেঁচে আছি এটা আমার সমস্যা নয় অমরত্বের সমস্যা। আমি মরতেই চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে টেনে টেনে আত্মার সূত্র ধরে ক্লান্তিহীন ভাবে চারিদিকে একাকার করে রাখা হল। এতে কার লাভ হল কার ক্ষতি হল এপ্রশ্ন তোলার কোনো অধিকার আজ আমার নেই, আর আমার নিজের কী লাভ হল কী ক্ষতি হল এপ্রশ্ন তোলার মতো বোধবুদ্ধি তো আজ আমার অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। এটি একটি চরম বিপর্যয় কথা নেই বার্তা নেই সময় নেই অসময় নেই যখন যার যেখানে ইচ্ছে আমাকে স্রেফ নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি কে? এপ্রশ্নটাই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে অবান্তর প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। ইংরেজের স্কুল ছেড়েছিলাম খুব সহজ কারণে, কারণ এটা আমার কাছে জলের মতো পরিস্কার ছিল ঠাকুরবাড়ির স্কুলটাই আমাকে গড়ে তুলবে, ঠাকুরবাড়ির স্কুলটাতেই আমার স্ফূর্তি আর আমি যা যা পড়তে চেয়েছি শিখতে চেয়েছি ঠাকুরবাড়ির স্কুলটাতেই তার অপূরণীয় সনিদর্শন ব্যবস্থা ছিল। অনেকে শান্তিনিকেতন নিয়ে মহাতোড়জোড়ে আমাকে গুরুদেব পর্যায়ে পর্যবসিত করে – সেই আমাকে ভুল বিবেচনার শুরু, শান্তিনিকেতন, কোনো কারণ ছাড়াই ঠাকুরবাড়ির স্কুলটারই অধিকতর সম্প্রসারণ, নিজের পড়াশুনার ধরনটাকেই অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার

চেষ্টা, তাকে একটা জনহিতকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা – সেই হিতকরতা আরো দূরে ছড়াল না, কেউ একে মডেল ধরে এগিয়ে গেল না – ওই শান্তিনিকেতন শান্তিনেকেতন হয়েই পড়ে রইল – আমিও ওই গুরুদেব পর্যন্ত উঠে নির্বাসিত হলাম। স্বাধীনতার কথা বলব না। ওই পথে বাংলার পরিবার থেকেই মানা। আমরা সেই মানাকে আজো রদ করতেই পারলাম না। জীবনের কাছে যতদিন ছিলাম জীবনটাকে নিংড়ে নিঃশেষ করে সৃষ্টির কাজে নিজেকে রাখতে পেরেছি সেটাই সার্থকতা – যদিও ওই সার্থকতা সম্পূর্ণ বিফলও হতে পারত। কারণ জীবনের ধরনটাই এমন, কখনো হাজার চেয়েও হাজার তাকিয়ে থেকেও নির্বিকল্প পথে হেঁটেও প্রাচীন বৈরিতার দেয়ালের অমোঘতার কাছে জীবনকে লাঞ্চিত হতে হয়। আমাকে এখন একটু মরতে দিন। ও, অমরত্ব। ও, পাঠক। ও, শিল্পী। ও, গায়ক। ও, কর্মবীর। ও, নায়ক। ও, রাজা। আমাকে একটু মরতে দেবেন? আরো গোপন ডায়েরি : আসব আগের দিন আজ যাই : মনমোহন সিংয়ের গোপন ডায়েরি পুতুল প্রতিভা : মওদুদ আহমেদের গোপন ডায়েরি চাণক্য নই : প্রণব মুখার্জির গোপন ডায়েরি কই মাছের প্রাণ : এরশাদের গোপন ডায়েরি এক বিয়োগ…

গল্পগুচ্ছের সাথে আমার পরিচয় বাল্যকালে, নীল কাপড়ে বাঁধাই একখানা মোটা বই, গোড়ার দিকে অরুণদা বলে কে একজন আমার বাবার অগ্রজপ্রতিম ভদ্রলোক বাবার বৌভাতে বইখানা উপহার দিয়েছেন -- সেটা বাঁকা বাঁকা হরফে লেখা। অতএব, গল্পগুচ্ছ প্রথমত আমার কাছে ছিল সেই সময়ের চিহ্ন [...]

গল্পগুচ্ছের সাথে আমার পরিচয় বাল্যকালে, নীল কাপড়ে বাঁধাই একখানা মোটা বই, গোড়ার দিকে অরুণদা বলে কে একজন আমার বাবার অগ্রজপ্রতিম ভদ্রলোক বাবার বৌভাতে বইখানা উপহার দিয়েছেন -- সেটা বাঁকা বাঁকা হরফে লেখা। অতএব, গল্পগুচ্ছ প্রথমত আমার কাছে ছিল সেই সময়ের চিহ্ন -- যখন লোকে বিয়েতে বই উপহার দিত। আর সবকিছুকে যেমন মা চিনিয়ে দেন -- ‘ন’ চেনান, ন-এ নদী চেনান… সেইরকম করে আমাদের মা আমাদের গল্পগুচ্ছ চিনিয়েছিলেন। বাইরে ঝুপঝুপ বৃষ্টি, ঘরের কোণে কোণে অন্ধকার আর এই দেয়াল থেকে ঐ দেয়াল অব্দি দড়ি খাটিয়ে ভেজা শাড়ি-কাপড় মেলে দেয়া, কাপড়ের মাড়-আর্দ্রতা-নীল-গুঁড়োসাবানের গন্ধ ঠাসা সেই ঘরে আমাদের দু’পাশে রেখে আম্মা পড়ে শুনিয়েছিলেন -- ‘কাবুলিওয়ালা’ আর ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’। ‘হামি সসুরকে মারিবে’ শুনে কত হেসেছিলাম। আর পদ্মাতীরে সেই কদমফুললোলুপ শিশুর করুণ মৃত্যু আমাকে কত যে কাঁদিয়েছিল। সে তো কেবল শুরু, এই পরিজ্ঞানের শুরু যে আমাদের সাহিত্য শিশুর মৃত্যুতে আকীর্ণ (বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’, ‘পুঁইমাচা’ কিংবা ‘কিন্নরদল’, রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’, শরৎচন্দ্রের ‘পণ্ডিতমশাই’), তারপরে আরেকদিন, আম্মার কাছে বসেই পড়া -- ‘বলাই’। মনে মনে বলাই যে আমার কী আপন, ঘাসিয়াড়া যেদিন আসে, সেদিন তার ‘শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর’, আর আমার বেলায় -- যেদিন কাগজওয়ালা আসে, পুরাতন কাগজ-বই-খাতা ওজন করে কিনে নিয়ে যায় -- এই বৈশ্য আচার আমার দারুণ অপছন্দ। ঘাসফুলের জন্যে -- কন্টিকারির জন্যে বলাইয়ের অপার ভালবাসা আমাকে স্পর্শ করে। তারপরে ক্রমেই ‘ইচ্ছাপূরণ’, ‘অতিথি’ আর ‘ফেল’। আস্তে আস্তে আমার দাঁত সবল হতে শুরু করেছে তখন, আমি নেড়েচেড়ে দেখছি তারাশঙ্করের ‘ধাত্রীদেবতা’ -- “বউ হাসিয়া বলিল -- কার আমার? -- বলিয়া শিবনাথের গায়ে হাসিয়া ঢলিয়া পড়িল। শিবনাথ চট করিয়া তাহার মুখে চুম্বন করিয়া বসিল। নান্তি মুখ মুছতে মুছতে বলল -- কি রকম ভাত-ভাত গন্ধ তোমার মুখে!...”। এর পরে তারাশঙ্করের ছোটগল্পগুলি, বাংলা সাহিত্যের যা চিরকালীন সম্পদ, ‘অগ্রদানি’, ‘না’, ‘তারিনী মাঝি’ এইসব। কিন্তু গল্পগুচ্ছ সেই রাঙামাটির এবড়োখেবড়ো পথের বাইরে, এ যেন ধ্রুপদ, তার তাল-লয় -- তার অবারিত বাক্যপ্রবাহ -- তার ঈষৎ শ্লেষ -- তার ব্যাজস্তুতি এইসব আমাকে ফেলে কখন সামনে চলে যায়, তার নাগাল মেলে না। এত শব্দ আছে বাংলায়, তাদের এমন রঙিন পরিচ্ছদ, তারা এমনি এসে ভেসে যায়? “মাল্যদান পড়, একটু সহজ ভাষায়…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.