লু স্যুন লু স্যুনের (১৮৮১—১৯৩৬) মৃত্যুদিনে স্মরণ এবং তাঁর একটি লেখার অনুবাদ ...

১ চীনের চেচিয়াং প্রদেশের প্রাচীন শহর শাওসিং-এর দক্ষিণদিকে অবস্থিত তুছাংফাংখৌ-র ‘চৌ’ পদবীধারী একটি পরিবারে ১৮৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে প্রায় মধ্যরাতে জন্মগ্রহণ করে চৌ পৌয়ি আর শ্রীমতী লুরুই-এর প্রথম পুত্রসন্তান। তাঁদের দ্বিতীয় পুত্র চৌ জুওরেন-ও (১৮৮৫--১৯৬৭) অগ্রজের মতোই সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করে সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জাপ-সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তিনি ধিক্কৃত হন। পরিবারের একমাত্র কন্যাসন্তানের জন্ম হয় ১৮৮৮ সালে, জন্মের ১০ মাস পরেই তার মৃত্যু হয়। তৃতীয় পুত্র চৌ চিয়ানরেন-ও (১৮৮৯--১৯৮৪) আধুনিক চীনের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান চতুর্থ পুত্র চৌ ছুনশৌ-র (১৮৯৩—১৮৯৮) মৃত্যু হয় মাত্র ৫ বছর বয়সে, বসন্ত রোগে। জ্যেষ্ঠ সন্তানের বয়স যখন পনেরো, সে-সময়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর ভুল ও সেকেলে চিকিৎসায় মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে পরিবারের কর্তার মৃত্যু হয় (১২ অক্টোবর ১৮৯৬)। পিতার মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিনি জাপানে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু পড়া শেষ না করেই বদলে নেন নিজের জীবনের লক্ষ্য – সাহিত্য আন্দোলনের মাধ্যমে চীনা জাতির ভাগ্য পরিবর্তনকে নিজের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৩৬ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে পঞ্চান্ন বছর বয়সে শাংহাই-এ তাঁর মৃত্যু হয়। জীবদ্দশাতেই তিনি স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন আধুনিক চীনা সাহিত্যের স্থপতি রূপে। যুবসমাজকে তিনি কতটা অনুপ্রাণিত করতে পেরেছিলেন তার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যাবে এই তথ্য থেকে – যুবকদের কাছ থেকে মোট ১২০০টি চিঠি তিনি পেয়েছিলেন এবং উত্তরে লিখেছিলেন ৩৫০০-এরও বেশি চিঠি। তাঁর যুব-সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। পরবর্তীকালে মাও সেতুং তাঁর সম্পর্কে বলেন : চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তিনি ছিলেন প্রধান সেনাপতি। তিনি শুধু একজন মহান সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি একজন মহান চিন্তাবিদ ও মহান বিপ্লবীও ছিলেন। লু স্যুন ছিলেন প্রস্তরের মতো দৃঢ়, সকল রকমের মোসাহেবি ও আজ্ঞানুবর্তিতা থেকে তিনি মুক্ত ছিলেন। তাঁর এই চরিত্র বৈশিষ্ট্য ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশের জনগণের এক অমূল্য সম্পদ। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে, সমগ্র জাতির বিরাট সংখ্যাধিক্যের প্রতিনিধি হিসেবে লু স্যুন শত্রুর দুর্গ বিদীর্ণ করেন এবং তার উপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছিলেন; এতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে নির্ভুল, সবচেয়ে নির্ভীক, সবচেয়ে দৃঢ়, সবচেয়ে সত্যনিষ্ঠ, সবচেয়ে উৎসাহী জাতীয় বীর, আমাদের ইতিহাসে এই বীরের কোনো তুলনা নেই। লু স্যুন-এর পথ চীনা জাতির…

এ বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হেয়ার্টা ম্যুলারের একটি বিখ্যাত উপন্যাস 'সবুজ কুলের দেশ'। গ্রন্থটি জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে 'দ্য ল্যান্ড অব গ্রিন প্লাম্‌স্' নামে। ম্যুলারের এই উপন্যাস নানা কারণেই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। [...]

এ বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হেয়ার্টা ম্যুলারের একটি বিখ্যাত উপন্যাস সবুজ কুলের দেশ। গ্রন্থটি জার্মান ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে দ্য ল্যান্ড অব গ্রিন প্লাম্‌স্ নামে। ম্যুলারের এই উপন্যাস নানা কারণেই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর এই উপন্যাসের পাঠোত্তর প্রতিক্রিয়া লিখেছিলেন ল্যারি উল্ফ। উল্ফের সেই নাতিদীর্ঘ সমালোচনার সারাংশ থেকে ম্যুলারের সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে একটা সহজ ধারণা আমরা পেতে পারি। হেয়ার্টা ম্যুলারের এই উপন্যাসটির পটভূমি রচিত হয়েছে রুমানিয়ার বিগত কমিউনিস্ট শাসক নিকোলাই চসেস্কুর শাসনামলে। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র ছাত্রী লোলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসের কক্ষ থেকেই এর কাহিনীর সূত্রপাত। একটি উইমেন ইউনিভার্সিটির রুশ ভাষার ছাত্রী লোলা এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। লোলা এবং হোস্টেলে তার সহপাঠী রুমমেটরা বালিশের নিচে সাজসজ্জার সরঞ্জাম রাখে অতি গোপনে। চোখ কালো করার মাশকারা লাগিয়ে গোপনে রূপচর্চা করে তারা। লোলার নগরজীবনটা শুরু হয় দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে। শৈশব গ্রামে অতিবাহিত হয়েছে তার। নগরজীবনের জন্য নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুতও করে তোলা হয়নি। তার আগেই তাকে এসে পড়তে হয় দুঃস্বপ্নের নগরীতে। এখানে এসেই মর্মান্তিক যৌন নিপীড়নের শিকার হয় সে। এ ঘটনায় কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না। বরং তাকে বহিষ্কার করা হয় কমিউনিস্ট পার্টি থেকে। পুরো উপন্যাসটি বয়ান করা হয়েছে লোলারই এক রুমমেটের মুখ দিয়ে। কমিউনিস্ট পার্টি হতে বহিষ্কৃত হবার পর লোলার ওপর নজরদারি চলছিল। সন্দেহের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল সে। যার পরিণামে নিজের মাশকারার শিশি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়েছিল সে। লোলার বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাবার পর তার রুমমমেট বিছানা উল্টাতে গিয়ে অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখতে পায়। সে দেখে বিছানার ঠিক মাঝখানে সেঁটে আছে একটা শূকরের কান। কোনোভাবেই ছাড়ানো যাচ্ছে না কানটাকে। যেন আঠা দিয়ে কেউ লাগিয়ে দিয়েছে। মেয়েটি বুঝতে পারে কানটি এখানেই থাকবে। অন্তত তাদের পাহারা দেওয়ার স্বার্থে। রুমানিয়ার গোপন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সীমাহীন অত্যাচার এভাবেই শূকরের কানের ঘটনার মধ্য দিয়েই প্রকাশ করেছেন হেয়ার্টা ম্যুলার। সবুজ কুলের দেশ সম্পর্কে এককথায় বলতে গেলে একে নিপীড়িতের কবিতা বলাই শ্রেয়। এই কবিতার মধ্য দিয়ে রুমানিয়ার কমিউনিস্ট জমানার আধ্যাত্মিক ও জাগতিক অবস্থার করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক। জীবন সেখানে কেমন নিষ্ঠুর ও কুৎসিত ছিল তা অনুধাবন করানোই ছিল লেখকের লক্ষ্য। বইটি রুমানিয়ার লেখা হলেও প্রকাশিত হয় জার্মানি থেকে।…

পিতাপুত্র একই নারীর প্রেমে পড়েছে। এরকম সফল উপন্যাস খুব বেশি নাই বিশ্ব সাহিত্যে। ফরাসি উপন্যাসিক ফ্রাঁসোয়া মোরিয়াকের এই উপন্যাসটি এই ধরনের একটি সফল উপন্যাস বলা যায়। এ উপন্যাসে নায়িকা মারিয়া ক্রস মসিয়ে ভিক্তর লারুসেলের রক্ষিতা। তার ছেলের অসুখ হলে ডাক পড়ে শহরের জাদরেল ডাক্তার মঁসিয়ে কোরেজের [..]

আমি একজন মেটাফিজিশিয়ান। মূর্তের ওপর কাজ করি। পাপময় ক্যাথলিক বিশ্বকে দৃশ্যগোচর, স্পর্শগ্রাহ্য আর গন্ধবহ রূপ দিতে চাই। ধর্মশাস্ত্রবেত্তারা পাপী সম্বন্ধে আমাদের বিমূর্ত ধারণা দেন মাত্র। আমার কাজ তার সঙ্গে রক্তমাংস লাগানো। উপরোক্ত কথাগুলো পারী রিভিউ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বয়ান করেন। এই হচ্ছেন মোরিয়াক। গড়পড়তা ফরাসি ঔপন্যাসিকদের থেকে একেবারেই আলাদা। নিজেকে একজন ক্যাথলিক হিসাবে সবসময় দাবি করেন। সবাই তা জানে। কিন্তু তাঁর উপন্যাস যে-কোনো আধুনিকের চাইতেও আধুনিক। একটা সময় তিনি লেখা শুরু করবার আগে নাকি ঘণ্টাখানেক বাইবেল পড়তেন, তিনি ভাবতেন এতে গদ্য ভাল হবে। কিন্তু পরে তিনি মত বদলান যে বাইবেলের গদ্য সবধরনের লেখার জন্য উপযুক্ত নয়। তাঁর যে বইটি নিয়ে আলোচনা করতে চাই সেটার নাম "ডেজার্ট অব লাভ" (Le Désert de l'amour)। ফরাসি থেকে এটি ইংরেজী অনুবাদ করেন জন মরিস । প্রকাশক ম্যাকমিলান। পিতাপুত্র একই নারীর প্রেমে পড়েছে। এরকম সফল উপন্যাস খুব বেশি নাই বিশ্ব সাহিত্যে। ফরাসি উপন্যাসিক ফ্রাঁসোয়া মোরিয়াকের এই উপন্যাসটি এই ধরনের একটি সফল উপন্যাস বলা যায়। এ উপন্যাসে নায়িকা মারিয়া ক্রস মসিয়ে ভিক্তর লারুসেলের রক্ষিতা। তার ছেলের অসুখ হলে ডাক পড়ে শহরের জাদরেল ডাক্তার মঁসিয়ে কোরেজের। ছেলেটাকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেনা ডাক্তার। ফলে মাঝে মাঝে মারিয়াকে দেখতে আসতেন ডাক্তার। মারিয়া ছিল অদ্ভুত রূপসী আর সাক্ষাত প্রেম দেবী যেন। ধীরে ধীরে কোরেজ প্রেমে পড়ে মারিয়ার। মারিয়ার দিক দিয়ে অবশ্য ব্যাপারটা অন্য রকম। ডাক্তার আসলে সমাজে তার সম্মান বাড়ে এই তার পাওয়া। এমনিতে সে মনে মনে বিরক্ত হয়। কেননা ততদিনে স্পস্ট হয়ে যায় কেন ডাক্তার ঘনঘন তার কাছে আসে। ইতিমধ্যে মারিয়ার সাথে পরিচয় হয় ডাক্তারের ছেলে রেমন্ডের ঘটনা মোড় নেয় অন্য দিকে। রেমন্ড স্কুলের ছাত্র। টগবগে রক্ত। একদিন মারিয়াকে বিছানায় টানলে তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় মারিয়া। রেমন্ডের জীবনে এটা ছিল প্রথম ব্যর্থতা কোনো নারীর কাছে। রেমন্ড বুঝতে পারে তার পিতা কেন এত অসুখি। রেমন্ড বোর্দো ছেড়ে পাড়ি জমায় পারিতে। এদিকে লারুসেল মারিয়া ক্রসকে বিয়ে করে পারিতে নিয়ে যায়। লারুসেল অসুস্থ হয়ে পড়লে মারিয়া চিঠি লিখে ডাক্তারকে নিয়ে যায় পারিতে। এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি আছে এ উপন্যাসে। শেষে ডাক্তার এবং রেমন্ড দুজনই বুঝতে পারে না…

ডলু নদীতে এখন অনেক পানি, অথবা হয়তো পানি তেমন নাই, তবু ঐ দিক থেকে ভিজা হাওয়া বয়ে আসে, এবং এই হাওয়ার সঙ্গে আসে নদী পাড়ের বাঁশ ঝাড়ের ভেতরকার গুয়ের গন্ধ; তখন আহম্মদ তৈমুর আলি চৌধুরি তার বাসার সামনের রাস্তার পাশে একটা নিচা ইজি চেয়ারের ভিতরে পোটলার মত ঝুলে বসে থাকে। হয়তো সে রোদের ভেতর ঘুমিয়ে পড়ে, অথবা ডলু নদীর সকালের শুকনা গুয়ের গন্ধ সত্ত্বেও আরামে এমনি তার চোখ বন্ধ হয়ে আসে। তখন সে তার ডান পা বাম পায়ের হাঁটুর ওপর তুলে দেয়, ফলে লুঙ্গি নিচের দিকে নেমে হাঁ হয়ে থাকে এবং ফাঁক দিয়ে বড় তালের আঁটির মত তার প্রাচীন হোলের বিচি দেখা যায়! সাতকানিয়ার লোকেরা, যারা বাজারে যায় অথবা বাজার থেকে বোয়ালিয়া পাড়া কিংবা সতী পাড়ার দিকে ফেরে, তারা মসজিদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখে যে, তৈমুর আলি লুঙ্গি ফাঁক করে রেখে ইজি চেয়ারে বসে ঘুমায়, তাদের হয়তো মনে হয় যে, কত বড় বিচি, অথবা তারা হয়তো কিছু দেখে না, হয়তো ভাবে একই জিনিস প্রত্যেক দিন দেখার দরকার কি, তারা হয়তো কেবল ইজি চেয়ারের খোলের ভিতরে কুঁজো হয়ে বসা তার কাত হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকায়, সেখানে হয়তো একটা/দুইটা নীল কিংবা কালা মাছি বসে গালের লালা খায়; তারপর রোদ গরম হয়ে উঠলে সে ইজি চেয়ার ছেড়ে বাড়ির ভিতরে যায়, সেখানে তার স্ত্রী, বুড়া সমর্ত বানু নাস্তা বানিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করে। […] এ বিষয়ে তৈমুর আলি আর কিছু বলে না, এবং তখন মনে হয় যে, গোলেনুর হয়তো বিষয়টা জানে; তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে পুনরায় তার বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করে, তারপর শুয়ে থেকে বলে, আঁর বৌয়ের কথা পুছাললদ্দে না, বা’জি? ওর মায়তো মগ আছিলদে, আঁরা বার্মায় আছিলাম, কিন্তু আঁরা মগ ন আছিলাম। তখন তাকে হীরার আংটির কথা কথা জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে যে, সে হীরার আংটির কথা জানে না, তবে বোঝা যায় সে সমর্তের উপরে খুশি না। এক শালিখ দেখার পর এইসব শুরু হয়, সেদিন তৈমুর আলির কথা শুনে ইউসুফ অথবা নুরে আলম রাস্তা থেকে নেমে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে গিয়ে সমর্ত বানুকে ডেকে আনে, গরীবের মেয়ে…

পৃথিবীতে যে-ক'জন লেখক একেবারে মাটির কাছাকাছি, তাঁদের মধ্যে নুট হামসুন অন্যতম।

পৃথিবীতে যে-ক'জন লেখক একেবারে মাটির কাছাকাছি, তাঁদের মধ্যে নুট হামসুন অন্যতম। নুট হামসুনের এই উপন্যাসটি মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। পড়তে পড়তে অবশ হয়ে যেতে হয়। নরওয়ের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের বর্ণনা পড়তে পড়তে প্রকৃতির ভেতর ডুবে যেতে হয়। এ-উপন্যাসের নায়ক আইজাক যেন আদম। এই বনাঞ্চলে সে-ই যেন প্রথম মানবসন্তান। এই অবারিত প্রকৃতির ভেতর সে গড়ে তুলতে চায় তার বাসস্থান। এই অনাবাদী জমিতে সত্যি সত্যি সে একটা ঘর বানায়। বাস করতে থাকে। ফসল হতে থাকে তার মাঠে। আর একদিন সে নিঃসঙ্গ হতে থাকে। তার ক্ষুধা এক নারীর । পথ দিয়ে যাবার সময় দু'-এক জনকে বলেছেও তার জন্য যেন একটা মেয়ে দেখে তারা। খুব সুখের জীবন তার। একদিন অপরাহ্ণে হাজির হয় এক আগন্তুক নারী। নাম তার ইঙ্গার। প্রথম দিকে বোঝা যায় না । পরে বোঝা যায় তার উপরের ঠোঁট চেরা। এ-কারণে তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে জীবনে। ঠোঁট চেরার কারণে তার বিয়ে হয়নি এতদিন। রাতে তাকে গ্রহণ করে আইজাক। এভাবে তারা বাধা পড়ে যৌথজীবনে। ইঙ্গার কর্মঠ নারী। তারা গড়ে তোলে খামার। গরু-ছাগল নিয়ে একটা ভরান্ত পরিবার। আবাদী জায়গাটার একটা নামও দিয়ে দেয় তারা : সেলেনারা। তাদের কোল জুড়ে আসে ইলিসিমা আর সিভার্ট। আইজাক আর ইঙ্গার এখন দুই পুত্রসন্তানের জনকজননী। তৃতীয় সন্তান পেটে । ইঙ্গারের একটাই ভয় -- তার উপরের ঠোঁট চেরা। এখন ছেলে-মেয়ে হলে যদি তারও ঠোঁট চেরা হয়? ইঙ্গার নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছে অঙ্গহীন জীবনের দুঃখযন্ত্রণা। এজন্য তার বিয়ে হয়নি। কাউকে ভালোবাসার সাহস হয়নি তার -- যদি তার প্রেমিক তাকে ঘৃণা করে? তৃতীয়বারের মতো তার একটা মেয়ে হয় এবং তার উপরের ঠোঁট চেরা। প্রতিবেশীরা এল দেখতে। কী লজ্জা! সকলে চলে যেতে ইঙ্গার একটা ভীষণ কাণ্ড করে বসল। সে যেমন সারা জীবন ধরে উপহাস আর যন্ত্রণা পেয়েছে, তার মেয়ে যেন তা না পায়। মেয়েটাকে গলা টিপে হত্যা করে বনের ধারে পুঁতে রেখে আসে। এক নিষ্পাপ শিশুর নির্জন কবর। ওদিকে আইজাক ব্যস্ত থাকে খুব কাজে-কর্মে। কিন্ত এক প্রতিবেশিনী কবর থেকে মেয়েটার লাশ নিয়ে সদরে ইঙ্গারের বিরুদ্ধে মামলা টুকে দেয়। এতে আট বছরের সাজা হয়ে যায় ইঙ্গারের। এভাবেই এগোতে থাকে এ-উপন্যাসের কাহিনী। শেষে জেলে ইঙ্গারের আরেকটা মেয়ে হয়।…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.