বেলজিয়াম-এর অন্ধ পাখিরা আমি ঠিক মনে করতে পারি না আমরা যে পাখির বাজারটাতে গিয়েছিলাম সেটা কোন্ শহরে ছিল: ব্রাসেলস্, ঘেন্ট নাকি ব্রুজেস-এ। আমার আবছা মনে আছে এটা একটা গীর্জাঘেরা বড় চত্বরের মধ্যে ছিল এবং আমরা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছি ঠিক তখনই সেখানকার রাস্তা দিয়ে কোন এক ধর্মীয় নিদর্শনের শোভাযাত্রা হচ্ছিল। অন্তত এটুকু মনে আছে যে আমরা যখন সেগুলো দেখছিলাম আর প্রশংসা করছিলাম তখন কে একজন যেন আমাদের এই তথ্যটি দিয়েছিল যে অন্ধ পাখিরা ভালো গান করে। লোকটি আরো বলে যে সাধারণ রীতি হচ্ছে এদের চোখের তারায় একটা সুঁই ফুটিয়ে দেওয়া। ভালো গান গায় বলতে সেই ব্যক্তি বোঝাতে চেয়েছিলেন অধিকতর করুণ রসের সঙ্গে গাওয়া। এই মন্তব্য শুনে আমার ও আমার স্ত্রী ইভ এর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। বেলজিয়াম ভ্রমণের সময় আমরা যত আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখেছি তার সবই মুছে গেল এইসব অন্ধ পাখিদের স্মৃতিতে যারা তখন দেবদূতের মত গান গাইতে পারতো। অনেক রাতে ব্রাসেলস্ এ ফেরার পথে আমাদের গৃহকর্তা, যিনি লিমুজিন চালানোর দায়িত্বে ছিলেন, হঠাৎ করে ইভ-এর দিকে তাকিয়ে বললেন যে তিনি তাঁর গুনগুন করা শুনছিলেন এবং তাঁর কন্ঠের যাদুতে মুগ্ধ। তিনি আরো বলেন "আপনি কি আমাদের একটা গান শোনাবেন না?" এটা শুনে ইভ আর কথা না বাড়িয়ে তার গলা খোলে এবং আমাদের খুব প্রিয় একটা গান 'অলওয়েজ' গাইতে শুরু করে। কিন্তু এবার আমার মনে হলো তার কন্ঠে একটা নতুন সুর লতিয়ে উঠছে। এটা সেই অন্ধ পাখিদের বিধুরতা। গাড়িতে আমরা মোট ছয়জন ছিলাম কিন্তু আমাদের কেউই তার সঙ্গে গলা মেলায় না। এক ধরনের চাপা নীরবতা বিরাজ করছিল গাড়িতে যেন বা জীবনে প্রথমবারের মত কোন অস্বাভাবিক কিছু একটা শুনছিলো সবাই। গান শেষ করার পর আমাদের গৃহকর্তা তাকে বলে সে এটা আরেকবার গাইবে কি না, ইভ তা আরেকবার গেয়ে শোনায়। আরো একবার সে স্রেফ তার গলা খুলে গানটাকে গড়িয়ে বেরিয়ে যেতে দেয়। সেটাও আমাদের আরেক প্রিয় গান "রোজেস অফ পিকার্ডি"। আবার সেই একই ঐন্দ্রজালিক প্রতিক্রিয়া হয়। সকলেই গভীরভাবে আলোড়িত বোধ করে। বর্হিপৃথিবী আমি বিশ্বাস করি অন্যান্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। মহাবিশ্ব তার প্রতিটি অংশেই খুব জীবন্ত। শুধুমাত্র আমরা এখনো অপর পৃথিবীর সঙ্গে…
আমি ঠিক মনে করতে পারি না আমরা যে পাখির বাজারটাতে গিয়েছিলাম সেটা কোন্ শহরে ছিল: ব্রাসেলস্, ঘেন্ট নাকি ব্রুজেস-এ [...]