ভাষার জন্য আলাদা কোনো মাস থাকতে নেই, ক্ষণও নেই। প্রতিটি মুহূর্তেই মানুষ আসলে ভাষামুখর এক প্রাণী। তবু ফেব্রুয়ারিতেই ভাষার প্রতি ভিন্ন এক আমেজ আমরা অনুভব করি। কারণ এর সাথে সংযুক্ত আছে আমাদের সাংস্কৃতিক এক ইতিহাস। আবার এর সাথে- ’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি? …’ এও তো আসলে এই ইতিহাসেরই অংশ। সেই গানটির অমর স্রষ্টা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি ওই সূত্রে ভালোবাসারও কমতি নেই আমাদের। কিন্তু তিনি যখন তার অবস্থান থেকে বিচ্যুত হন বলে আমাদের কখনও কখনও মনে হয়, তখন আমাদের কষ্টের আর শেষ থাকে না।
গত ৮-০২-২০১০ খ্রীষ্টাব্দে জাতীয় প্রেসক্লাবে তিনি ফেনীর রাজনীতিবিদ জয়নাল হাজারীর একটা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন! তা তিনি করতেই পারেন। তবে ভাষার এই মাসে এ প্রোগ্রামটি একুশে মেলায় না করে তথায় কেন তারা করলেন, এ প্রশ্ন অবশ্য করাই যায়। যাই হোক, কথা কিন্তু তাও নয়। তিনি তার বক্তব্যে তখন জয়নাল হাজারীকে সন্ত্রাসী বলতে নিষেধ করেন। কারণ তাকে সন্ত্রাসী বলা যায় না! তাকে সন্ত্রাসী বলা বন্ধ করতে হবে। এবং তিনি এও জানান, সাংবাদিক টিপুর উপরও তার কর্তৃক কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া যেমন পরবর্তীকালে প্রেসক্লাবে দেখা যায়, তেমনি ‘ফেনী জেলার নির্যাতিত পরিবারবর্গ’-এর পক্ষ থেকে ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করা হয় এবং গাফ্ফার চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এখন কথা হচ্ছে, জয়নাল হাজারীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ব্যাপারে সারাদেশেই ব্যাপক প্রচার আছে। তার দলীয় ফোরামেও অদ্যাবধি তিনি বহিষ্কৃত একজন নেতা। তাহলে গাফফার চৌধুরী এমন এক প্রচারণায় কেন নামলেন! তাহলে কি তিনি সন্ত্রাসবাদের আলাদা কোনো রূপরেখা দিতে যাচ্ছেন?! তাও তো হতেই পারে। সন্ত্রাসবাদ, নৈরাজ্যবাদ ইত্যাদির ব্যাপারে পজেটিভ ফিলসফি সম্পর্কেও তো আমরা জানতে পারছি। এক্ষেত্রে জয়নাল হাজারীর মতো বহুল আলোচিত সন্ত্রাসমুখর একজন ব্যক্তির বিষয়ে কোন্ কোন্ জ্ঞান বা কাণ্ডজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তিনি এসব বললেন, তা জানার প্রচণ্ড ইচ্ছা রইলো।
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
কথাসাহিত্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত। পেশায় চিকিৎসক। মানুষকে পাঠ করতে পছন্দ করি। আমি মানুষ এবং মানব-সমাজের যাবতীয় অনুষঙ্গে লিপ্ত থাকার বাসনা রাখি।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৬ comments
মাসুদ করিম - ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৫:৩৬ অপরাহ্ণ)
গত আওয়ামী লীগ আমলে তার ছিল ইকবাল প্রীতি। এবার শুরু থেকেই দেখছি মহিউদ্দীন চৌধুরী প্রীতি, জয়নাল হাজারী প্রীতি। আবার শেখ মুজিব কে নিয়ে ছবি বানানোর কাজ নিয়ে ঢাকা কলকাতা বোম্বে লন্ডন করছেন নাকি নিয়মিত। তিনি ছবির প্রযোজক কি না জানতে চাইলাম তার এক ঘনিষ্টজনের কাছে, তার কাছে শুনলাম তিনিই হবেন ছবির পরিচালক। সত্যমিথ্যা জানি না, কিন্তু গাফফার চৌধুরী হবেন ছবির পরিচালক! জানি না আমাদের সমাজে পরিমিতি বোধের চেয়ে আমরা পেত্নিমিতি বোধে কেন এমন এগিয়ে থাকি!
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:১২ পূর্বাহ্ণ)
আসলেই তো, তাঁর পরিমিতিবোধের বড়োই অভাব; তা না হলে তিনি এমনিতেই আমাদের অনেক শ্রদ্ধার পাত্র, তিনি কেন এইসব বিতর্কিত বা তাঁর কর্মপরিধির বাইরের বিষয় নিয়ে থাকবেন!
আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসা।
মোহাম্মদ মুনিম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৮:০৭ পূর্বাহ্ণ)
আবদুল গাফফার চৌধুরীকে কোন কালেই আমার এমন কিছু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি মনে হয়নি। তিনি ‘অন্নচিন্তা চমৎকারা’ এই জাতীয় একটা শ্লোক দিয়ে অনেক কাল থেকেই বিতর্কিত কথাবার্তা বলে আসছেন। প্রাক্তন মার্কিন যুদ্ধমন্ত্রী রামসফিল্ডের সাথে সাদ্দাম হোসেনের আশির দশকের তোলা ছবি নব্বইয়ের বলে চালিয়ে পত্রিকায় ইরাক বিষয়ে গাল গল্পে ভরা “বিশ্লেষনধর্মী” এক কলাম লিখেন। লন্ডনে বিভিন্ন ইংরেজী পত্রিকার সাংবাদিকদের সাথে তিনি নিয়মিত আড্ডা মারেন বলে প্রায়ই দাবী করেন। একবার তিনি মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে দেশে আসছিলেন, সেই এয়ারলাইনসে কেবিন ক্রু তাঁর কাছে বাংলাদেশীদের অসভ্যতার ব্যাপারে নালিশ দেন। তিনি যেখানেই যান, সেখানেই তিনি আসরের মধ্যমণি।
রায়হান রশিদ - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৭:১৮ অপরাহ্ণ)
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভে এই বিষয়ে আরও তথ্য রয়েছে। এখানে। এখানেও।
গৌতম - ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৪০ অপরাহ্ণ)
গাফফার চৌধুরী আসলে ফুরিয়ে গেছেন- তিনি নিজেও টের পাচ্ছেন। ফুরিয়ে যাওয়ার আগে মানুষ হয়তো হিতাহিত হারিয়ে ফেলে। তিনিও বোধহয় সেই স্টেজে আছেন এখন।
…নিজের স্বর্ণসময়ের প্রতি সারাজীবন ধরে সুবিচার করতে পারে খুব কম মানুষই। দুঃখজনকভাবে গাফফার চৌধুরী তা নন।
কামরুজ্জমান জাহাঙ্গীর - ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৭:১৪ পূর্বাহ্ণ)
আপনার মন্তব্য সংক্ষিপ্ত, কিন্তু প্রেনণাদায়ক।
ধন্যবাদ।