কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- "আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে [...]

কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- "আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে, তুর্কি কসাই হ্যারিংগেতে মাংস বিক্রির সময় ওজনে কম দিচ্ছে। আমার অবস্থা কুড়োল হারানো ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল হারানোর পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটার সব গতিবিধি সন্দেহজনক লাগে। ইয়া-দাড়ি (বুলবুল চশমেদার দাড়ি…) আর জোব্বা পরা পাকিস্তানি এক আইটি এক্সপার্ট খিঁচিয়ে ওঠেন, ক্রিশ্চিয়ানরা গাড়ির বুটে লাশ ফেলে রাখলে কোনো অসুবিধা নাই, একটা মুসলিম ছেলে মার্ডার চার্জে ধরা পড়লে সেইটা দুই-ইঞ্চি বড় হেডলাইন এ ছাপা হয়!” আমি মনে মনে বলি, তাইতো! মুসলিমরা কি মানুষ না? তাদের কী নরহত্যা করার অধিকার নাই?তাদের কী নারীধর্ষণের অধিকার নাই (যেখানে জীবজগতে প্রাইমেটদের মধ্যে মনুষ্যনারী ছাড়া কেবল আর একটিমাত্র স্পিসি শারীরবৃত্তীয়ভাবে ধর্ষোপযোগী)? তাদের কী মসজিদে আশ্রয় নেয়া আর্তমানুষকে কচুকাটা করার অধিকার নাই? আছে, সকল পাপে তাদের সম-অধিকার আছে, অতএব সকল শাস্তিতেও। সুমেরীয়-আক্কাদীয়-এসিরীয় এইরকম পাঁচখানা আদি সভ্যতার সকল চিহ্ন গুঁড়িয়ে ফেলবার পরে আমেরিকা আর বৃটেন যখন হাত মুছতে মুছতে জগতের কাছে সাফাই দিতে থাকে, তখন যুক্তরাজ্যের অনেকের অবস্থা আবার কুড়োল ফিরে পাওয়া ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল ফিরে পাবার পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটিকে আর সন্দেহজনক লাগেনা, রীতিমত সজ্জন মনে হয়। কেন লিভিংস্টোন ট্রাফালগার স্কোয়ারে গলা কাঁপিয়ে অসভ্য যুদ্ধকে অভিশম্পাত করেন। আমরা আহা-উহু করি। যেন আমাদের কুড়োলই খোয়া গিয়েছিল, অফেরতযোগ্যভাবে হারিয়ে যায়নি লক্ষলক্ষ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশু, ক্যালাইডোস্কোপের অফেরতযোগ্য নকশার মত। আমার আরেক বন্ধু ভবঘুরেদের আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করেন- হাসতে হাসতে বলেন - “জেলখানায় মুসলিম বেশী কেন হবেনা? একে তো মুসলিমরা স্বল্পপ্রজ একথা শত্তুরও বলতে পারবেনা, তায় খাওয়াদাওয়া ভাল দেয় - উপাসনার জন্যে বারবার সেল থেকে বেরুতে দেয় এইজন্যে জেলে গেলেই লোকে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়।” ধর্মাচরণকে সামনে রেখে আড়ালে প্রাকৃতিক সম্পদ দোহনের এই পন্থা নতুন নয়, এই পন্থার বলি ছিল মায়াসভ্যতার লোকেরা, ইনকারা, রেড ইন্ডিয়ানরা, এখন মুসলমানরা। অ্যাজটেকরা নরবলি দিতে পারে, নরমাংসের স্বাদ নিতে পারে, তা বলে তার জমিন-জল-হাওয়া তার সোনালী সুর্যাস্ত তার পুর্বপুরুষের ভিটা দখল করবার অধিকার আর কারো উপর বর্তায়না…

এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, বেইজিং এখন বিশ্ব শিল্পকলার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেইজিং-এর গুরুত্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। পৃথিবীবিখ্যাত বড় বড় মিউজিয়ামের ট্রাভেলিং এক্সিবিশন-এর তালিকায় বেইজিং-এর নাম অনেক আগেই উঠে গেছে। বেইজিং-এর মিউজিয়ামগুলোর অবকাঠামোগত ভাবেও হয়েছে ঈর্ষণীয় উন্নতি। দু হাজার আট সালের অলিম্পিক অবশ্য বেইজিং শহরটিকেই যেন এনে দিয়েছে অন্য এক মাত্রা। ইতিমধ্যে এই শহরে ঘুরে গেছে রদ্যাঁ, দালি সহ আরো সব বিখ্যাত শিল্পীরা (মানে তাঁদের শিল্পকর্ম)। কয়েক মাস আগে দেখলাম জার্মান শিল্পী রিখটার-এর সারা জীবনের কাজ। আর এই সব প্রদর্শনীর মূল আয়োজক চীনের জাতীয় প্রদর্শনশালা "ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব চায়না", আগে যার নাম ছিল চায়না আর্ট গ্যালারি। এই মিউজিয়ামটিই এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানামুখী শিল্প-কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। সম্প্রতি প্রদর্শিত হলো বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী টার্নারের সারা জীবনের চিত্রকর্মের এক দুর্লভ সম্ভার। টেট ব্রিটেনের সংগ্রহ থেকে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। বেইজিং-এ বসে টার্নার! এ যেন অকল্পনীয়। এ যেন এক অসম্ভব এক স্বপ্নপূরণ। কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইছিল না। তবে চীনা বন্ধুদের প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বুঝতে পারলাম বেইজিং-এ একটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে। বেইজিং এতো বড় শহর -- এই প্রান্ত থেকে বোঝার উপায় নেই ওই প্রান্তে কি ঘটছে। তবে টার্নারের প্রদর্শনী যথেষ্ট প্রচার পেয়েছে, টিভি চ্যানেলগুলোতে বেশ কয়েকবার ফলাও করে এই প্রদর্শনীর খবর প্রচারিত হয়েছে। এবং রেকর্ড সংখ্যক চীনা দর্শক এই প্রদর্শনী উপভোগ করেছে। টার্নার আমারও খুবই প্রিয় শিল্পী। আমরা যখন চারুকলার প্রথম দিককার ছাত্র, তখন প্রায়ই কানে বাজতো টার্নার ও কনস্টেবল -- এই দুটি নাম। রোমান্টিসিজম শিল্প ঘরানার ব্রিটিশ মানিকজোড়। টার্নার বাস্তবিকই শিল্পকলার ইতিহাসে এক মহান অমর শিল্পী, যাঁর ক্যানভাসে প্রথম দেখা যায় এক অন্য রকমের বর্ণিল উচ্ছ্বাস। ভেসে ওঠে আধ্যাত্মিকতার ছবি, অন্তরের ছবি, আমরা দিব্যদৃষ্টিতে যা দেখি তাকে ছাপিয়ে অন্যরকম ছবি। ক্যানভাস যেন অনেক বর্ণিল হয়ে ওঠে। রঙই সর্বস্ব। ছবি মানেই রঙ, সেই ফবিস্টদের কথা – তার সূচনা কোথায় ছিল, হয়তো-বা এই টার্নারেই ছিল। যাকে বলে শিল্পের পরম্পরা। আর ইম্প্রেশনিস্টরা এতো বর্ণময় আভা কোথা থেকে পেল। কোনো কিছুই তো ভুঁইফোড় নয়, একটা যোগসূত্র তো থাকে। ব্রিটিশরা সবসময় দাবি করে আসছে, টার্নারই ইম্প্রেশনিজমের জনক, হয়তো এই ঘরানার তিনি নিঃসঙ্গ পথিক,…

৭৮৯ আর্ট জোনের প্রতীকচিহ্ন 'সেভেন নাইন এইট' একটি কারখানার নাম -- একসময় শ্রমিকের কোলাহলে মুখরিত হতো, কারখানার বাঁশি বেজে উঠলে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাজে যেত, ইঞ্জিনের ঘড়্ ঘড়্ শব্দ ছিল অতি পরিচিত, হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে উঠত শ্রমিকের দল। সে ছিল এক অন্য রকম সময়। আজ আর এই চত্বরটি কারখানার শ্রমিকের পদধ্বনিতে মুখরিত হয় না, অনেক আগেই থেমে গেছে কারখানার বাঁশি। তবে এই পরিত্যক্ত চত্বরটির পুনর্জাগরণ ঘটেছে অন্যভাবে -- এখন এটি চারুশিল্পের এক অভাবনীয় জগৎ। বিশ্ব জুড়ে পরিচিত একটি নাম : 'বেইজিং আর্ট জোন সেভেন নাইন এইট।'

যখন থেমে গেল কারখানার বাঁশি 'সেভেন নাইন এইট' একটি কারখানার নাম -- একসময় শ্রমিকের কোলাহলে মুখরিত হতো, কারখানার বাঁশি বেজে উঠলে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাজে যেত, ইঞ্জিনের ঘড়্ ঘড়্ শব্দ ছিল অতি পরিচিত, হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে উঠত শ্রমিকের দল। সে ছিল এক অন্য রকম সময়। আজ আর এই চত্বরটি কারখানার শ্রমিকের পদধ্বনিতে মুখরিত হয় না, অনেক আগেই থেমে গেছে কারখানার বাঁশি। তবে এই পরিত্যক্ত চত্বরটির পুনর্জাগরণ ঘটেছে অন্যভাবে -- এখন এটি চারুশিল্পের এক অভাবনীয় জগৎ। বিশ্ব জুড়ে পরিচিত একটি নাম : 'বেইজিং আর্ট জোন সেভেন নাইন এইট।' ১৯৫১ সালে গড়ে উঠেছিল কারখানাটি, মূলত সামরিক সরঞ্জামাদি ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে। বিশ্বব্যাপী তখন সমাজতন্ত্রের জয় জয়কার, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বন্ধুত্ব যেন লৌহকঠিন দৃঢ়তায় আবদ্ধ। বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন পৃথিবী গড়ার। এটি সেই সময়ের কাহিনী। তদানীন্তন পূর্ব জার্মানি ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল কারখানাটি। আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পূর্ব জার্মানির। কারখানার নকশা তৈরি হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বাউহাউস স্কুলের প্রেরণায়। খোলামেলা চত্বর এবং সর্বত্র আলোর আধিক্য – এই হচ্ছে মূল বৈশিষ্ট্য। কারখানার র্কমকাণ্ড থেমে গেলেও স্থাপত্যর্কমটি এখনো অক্ষুণ্ণ আছে, তাও যেন এক র্দশনীয় বিষয়। সত্তরের দশকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে এই কারখানাটি বিপ্লব র্চচার একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, এখনো তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন দেয়াল-লিখনে। এখনো চোখে পড়ে মাও স্তুতির বিভিন্ন স্লোগান। যেমন, ‘মাও টুশি ওয়ামেন দা থাইয়াং’ (চেয়ারম্যান মাও আমাদের সূর্য)। এই দেয়াল-লিখনগুলো মুছে ফেলা হয়নি, বরং সংরক্ষণ করা হয়েছে অতীত স্মৃতি হিসাবে। আশির দশকে যেন সমস্ত পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যায় -- পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ঘটে নতুন পালাবদল, পতন ঘটে বিশ্ববিখ্যাত বার্লিন প্রাচীরের, পূর্ব জার্মানি থেকে বিদায় নেয় সমাজতন্ত্র। আশির দশকে চীনও নতুন যুগে প্রবেশ করে। তেং শিয়াও পিং (চীনাদের উচ্চারণে ‘তেং শিয়াও ফিং’)-এর নেতৃত্বে শুরু হয় অর্থনৈতিক সংস্কার ও খোলা দুয়ার নীতি। ধীরে ধীরে ৭৯৮ কারখানাটির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে লাগল। এবং একসময় পুরো কারখানাটি যেন অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। গড়ে উঠল শিল্পের ভুবন গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষার্ধে এবং নব্বই দশকের শুরুতে চীনদেশে নানা ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়; মূলত তেং শিয়াও পিং-এর অর্থনৈতিক…

স্মৃতিকে হাতড়ে বেড়ানো্র মতো কষ্টকর বিষয় আর নেই, আর তা যদি হয় বেইজিং-এর মতো শহরে। কারণ এই শহর এতটাই বদলে গেছে যে এক যুগ আগে যিনি এই শহরে এসেছেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন ধাঁধা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন। যাকে বলে খোলনলচে পালটে যাওয়া। অবশ্য এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে দু’ হাজার আটের অলিম্পিক আয়োজন। পৃথিবীর কাছে একটি ঝকঝকে শহর উপহার দেয়ার বাসনা। সে চেষ্টায় চীনারা যেন অনেকটাই সফল, অলিম্পিকে আগত বিদেশী অতিথিরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখলো বেইজিং-এর এই নব রূপ। অলিম্পিক একটি উপলক্ষ মাত্র, এমনিতে চীনাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, তারই প্রতিফলন রাজধানী বেইজিং-এ। চীনাদের আয় উন্নতি যে যথেষ্ট হয়েছে তার ছাপ সর্বত্র। আজ থেকে বিশ বছরের বেশি সময় আগে বেইজিং শহরে এসেছিলাম। [...]

স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানোর মতো কষ্টকর বিষয় আর নেই, আর তা যদি হয় বেইজিং-এর মতো শহরে। কারণ এই শহর এতটাই বদলে গেছে যে এক যুগ আগে যিনি এই শহরে এসেছেন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন ধাঁধা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করা কঠিন। যাকে বলে খোলনলচে পালটে যাওয়া। অবশ্য এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে দু’ হাজার আটের অলিম্পিক আয়োজন। পৃথিবীর কাছে একটি ঝকঝকে শহর উপহার দেয়ার বাসনা। সে চেষ্টায় চীনারা যেন অনেকটাই সফল, অলিম্পিকে আগত বিদেশী অতিথিরা সত্যিই মুগ্ধ হয়ে দেখলো বেইজিং-এর এই নব রূপ। অলিম্পিক একটি উপলক্ষ মাত্র, এমনিতে চীনাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, তারই প্রতিফলন রাজধানী বেইজিং-এ। চীনাদের আয় উন্নতি যে যথেষ্ট হয়েছে তার ছাপ সর্বত্র। আজ থেকে বিশ বছরের বেশি সময় আগে বেইজিং শহরে এসেছিলাম। তখন বেইজিং-এর সাইকেলের যুগ, শহর জুড়ে শুধু সাইকেল আর সাইকেল। বড় বড় রাস্তাগুলো যেন খাঁ খাঁ করতো। কিছু ট্যাক্সি, পাবলিক বাস আর সরকারি গাড়ি -- এই ছিল পথের সাথী। বরং সাইড লেন-ই ছিল জমজমাট, সারি সারি সাইকেলের মিছিল। তখন এটিই ছিল একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বাহন। উঁচু-নিচু ভেদাভেদ নেই, সবারই এক বাহন -- সাইকেল। আর এই সাইকেলের কত গুণগান। আমার মনে আছে, আমাদের চীনা ভাষা শিক্ষা ক্লাসে সাইকেল চালানোর সুফল নিয়ে একটি প্রবন্ধ ছিল। তাতে শরীরচর্চা থেকে শুরু করে পরিবেশ-বান্ধব হিসাবে সাইকেলের নানান গুণপনার বিবরণ ছিল। এখনো অবশ্য কিছু লোককে সাইকেল চালাতে দেখা যায় কায়ক্লেশে, যারা প্রথম সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি, ধরতে পারেনি সম্ভাবনার প্রথম ট্রেনটি। প্রায় পনেরো বছর পর বেইজিং-এ এসে যখন এক চীনা বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম তখন তার আচার-আচরণে দেখি বিশাল পরিবর্তন, চালচলনে বন্ধুটি এখন পুরো বুর্জোয়া, গাড়ি ছাড়া এক পা-ও চলতে পারে না, অথচ আগে দেখেছি তার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল একটি ভাঙাচোরা সাইকেল। যে-বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় অধ্যয়ন করেছি তার সামনে মোটরগাড়ির সারি, আগে যেখানে শোভা পেত শুধু সাইকেল আর সাইকেল। চীনারা যে-দিকে ঝোঁকে একেবারে বিপ্লব করেই ছাড়ে, এখানেও ঘটে গেছে এক মোটরগাড়ি বিপ্লব । চীনারা তাদের উন্নতির যে-তরিকা, তার নামকরণ করেছে সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি। অর্থাৎ পুঁজিবাদি ঘুড়ি যত উপরেই উঠুক তা নিয়ন্ত্রিত হবে সমাজতান্ত্রিক লাটাইয়ে। এক দেশ দুই নীতি – সমাজতন্ত্র আর…

শীত গ্রীষ্মের পার্থক্য মোটা দাগে অনুভব করা যায় এই বেইজিং-এ বসে। শীতকালে হিমশীতল পত্রপুষ্পহীন-বৃক্ষময় রুক্ষ এক প্রকৃতি, আবার গ্রীষ্মে পত্রপল্লবে উষ্ণতায় এক অপরূপ সবুজ পৃথিবী -- এই বৈপরীত্য আমাদের কাছে বিস্ময়কর। কারণ আমরা এমন এক দেশ থেকে এসেছি যেখানে শীতের প্রকোপ নেই বললেই চলে। সারা বছর গরমে দগ্ধ হতে হতে ডিসেম্বর জানুয়ারিতে আমরা যতটুকু শীতের পরশ পাই, তা আমাদেরকে একটু স্বস্তিই এনে দেয়। আমাদের দেশে এই শীতটুকু ভীষণ উপভোগ করি। পিঠে-পুলি তৈরির ধুম পড়ে যায়, সর্বত্র উৎসব উৎসব ভাব। শীতের শাক-সবজির স্বাদই যেন আলাদা, শীত মানেই আমাদের দেশে এক ধরনের সতেজতা, কি খাবারদাবার কি জীবনযাপনে যেন এক আরামদায়ক সুখী সুখী ভাব। শীতের সময় সদ্য-ওঠা ফুলকপির সাথে কই মাছের ঝোল যেন অমৃত সমান। অথচ এই বেইজিং-এ যেন সম্পূর্ণ উল্টো, এখানে শীত মানে বিভীষিকা, মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রায় আর যাই হোক শীতকে উপভোগ করা যায় না। আর প্রকৃতি এত রুক্ষ হয়ে যায় যে মনটা কেমন যেন ভার ভার ঠেকে, গাছের পাতা সব ঝরে যায়, মৃত গাছগুলি দাঁড়িয়ে থাকে সটান। শীতের সাথে সাথে উত্তুরে বাতাস আর ধুলিঝড়, ঝড়ো বাতাসের আঘাতে পত্রপুষ্পহীন গাছগুলি যেন আর্তনাদ করে ওঠে। আর এই বৃক্ষের আর্তনাদ শুনতে শুনতে কাটাতে হয় পুরো শীতকাল। তবে রক্ষা -- হিটিং-এর ব্যবস্থা থাকায় ঘরটা উষ্ণ থাকে; রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে বেইজিংবাসী এই উষ্ণতাটুকু উপভোগ করে। বাইরে শীত, ঘরে উষ্ণতা। আবার ঘর থেকে বাইরে বেরুতে হলে রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বেরুতে হয়, শীতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। গায়ে গলাতে হয় পরতের পর পরত পোশাক, শীতের ব্রহ্মাস্ত্র পোশাকের ঢাল ভেদ করে হাড়ে যেন কাঁপন ধরাতে না পারে। আবার ঘরে এসে ভারী পোশাকগুলো খুলে রাখতে হয়, তা নাহলে ঘরের উষ্ণতার সাথে সমন্বয় হবে না। সেই তুলনায় আমাদের দেশে আমরা যথেষ্ট আরামে থাকি, গায়ে কোনো রকমে একটি পুলওভার চাপালেই হয়ে যায়, বড়জোর একটি শখের জ্যাকেট। জুতো পরারও কোনো বালাই নেই, শীতের সময়ও আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ জুতো পরে না, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, দু ফিতার স্যান্ডেলই সম্বল। উত্তরাঞ্চলের মানুষগুলোকে অবশ্য দারিদ্র্য ও শীত দুটোর সাথেই লড়াই করতে হয়। চীনদেশ এ পর্যায় অতিক্রম করে এসেছে অনেক আগেই, তবে এক পর্যায়ে চীনকেও নানান প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.