যখন থেমে গেল কারখানার বাঁশি
‘সেভেন নাইন এইট’ একটি কারখানার নাম — একসময় শ্রমিকের কোলাহলে মুখরিত হতো, কারখানার বাঁশি বেজে উঠলে শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাজে যেত, ইঞ্জিনের ঘড়্ ঘড়্ শব্দ ছিল অতি পরিচিত, হাতুড়ির তালে তালে গান গেয়ে উঠত শ্রমিকের দল। সে ছিল এক অন্য রকম সময়। আজ আর এই চত্বরটি কারখানার শ্রমিকের পদধ্বনিতে মুখরিত হয় না, অনেক আগেই থেমে গেছে কারখানার বাঁশি। তবে এই পরিত্যক্ত চত্বরটির পুনর্জাগরণ ঘটেছে অন্যভাবে — এখন এটি চারুশিল্পের এক অভাবনীয় জগৎ। বিশ্ব জুড়ে পরিচিত একটি নাম : ‘বেইজিং আর্ট জোন সেভেন নাইন এইট।’
১৯৫১ সালে গড়ে উঠেছিল কারখানাটি, মূলত সামরিক সরঞ্জামাদি ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী তৈরির লক্ষ্য নিয়ে। বিশ্বব্যাপী তখন সমাজতন্ত্রের জয় জয়কার, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বন্ধুত্ব যেন লৌহকঠিন দৃঢ়তায় আবদ্ধ। বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন পৃথিবী গড়ার। এটি সেই সময়ের কাহিনী। তদানীন্তন পূর্ব জার্মানি ও চীনের মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল কারখানাটি। আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পূর্ব জার্মানির। কারখানার নকশা তৈরি হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত বাউহাউস স্কুলের প্রেরণায়। খোলামেলা চত্বর এবং সর্বত্র আলোর আধিক্য – এই হচ্ছে মূল বৈশিষ্ট্য। কারখানার র্কমকাণ্ড থেমে গেলেও স্থাপত্যর্কমটি এখনো অক্ষুণ্ণ আছে, তাও যেন এক র্দশনীয় বিষয়। সত্তরের দশকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে এই কারখানাটি বিপ্লব র্চচার একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, এখনো তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন দেয়াল-লিখনে। এখনো চোখে পড়ে মাও স্তুতির বিভিন্ন স্লোগান। যেমন, ‘মাও টুশি ওয়ামেন দা থাইয়াং’ (চেয়ারম্যান মাও আমাদের সূর্য)। এই দেয়াল-লিখনগুলো মুছে ফেলা হয়নি, বরং সংরক্ষণ করা হয়েছে অতীত স্মৃতি হিসাবে।
আশির দশকে যেন সমস্ত পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যায় — পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে ঘটে নতুন পালাবদল, পতন ঘটে বিশ্ববিখ্যাত বার্লিন প্রাচীরের, পূর্ব জার্মানি থেকে বিদায় নেয় সমাজতন্ত্র। আশির দশকে চীনও নতুন যুগে প্রবেশ করে। তেং শিয়াও পিং (চীনাদের উচ্চারণে ‘তেং শিয়াও ফিং’)-এর নেতৃত্বে শুরু হয় অর্থনৈতিক সংস্কার ও খোলা দুয়ার নীতি। ধীরে ধীরে ৭৯৮ কারখানাটির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে লাগল। এবং একসময় পুরো কারখানাটি যেন অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
গড়ে উঠল শিল্পের ভুবন
গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষার্ধে এবং নব্বই দশকের শুরুতে চীনদেশে নানা ক্ষেত্রে এক ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়; মূলত তেং শিয়াও পিং-এর অর্থনৈতিক সংস্কার এবং খোলা দুয়ার নীতির ফলস্বরূপ এই পরিবর্তন। চীনদেশ তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক খোলস ছেড়ে ক্রমশ নিজেকে মেলে ধরে বিশ্বের কাছে, শুরু হয় এক অভূতপূর্ব আদানপ্রদান। তার প্রভাব যেন শিল্পক্ষেত্রেই বেশি। চীনা চারুকলা বলতেই যে চিরাচরিত দৃশ্য চোখে ভাসে তা হচ্ছে — শ্রমিকের ঘাম-ঝরানো ছবি কিংবা বিস্তীর্ণ গমক্ষেতের উপর ট্রাক্টরের সারি, আর আকাশে এক ঝাঁক বলাকা উড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই প্রেক্ষাপট যেন ধীরে ধীরে পালটে যেতে শুরু করল। একদল সাহসী তরুণ শিল্পীদলের প্রচেষ্টায় আশির দশকের শেষের দিকে চীনা চারুকলায় শুরু হয় এক নতুন ধারার, সহসাই যেন চীনা চারুশিল্পের চেহারাটা পালটে যায়। পুরনো ধ্যান-ধারণার বিপরীতে নতুন শিল্পের আন্দোলন শুরু হয়। একদল সাহসী তরুণ শিল্পীর উদ্যোগে শুরু হয় নব শিল্পধারা, চীনা পদ্ধতির স্থাপনাশিল্প এবং পলিটিকাল পপ, সমস্ত বিশ্বের আধুনিক শিল্পধারায় বেশ আলোড়ন তোলে, শুরু হয় অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক আদানপ্রদান। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য শিল্পী সু পিং (Xu Bing), তাঁর বিখ্যাত স্থাপনাশিল্প ‘The Book from the Sky’ দেশে-বিদেশে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়। গত শতাব্দীর আশির দশকের শেষার্ধে এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুর সময়টিকে চীনদেশের চারুকলার নবতরঙ্গের (New Wave) সূচনাপর্ব হিসাবে অভিহিত করা হয়। এই সময় থেকে যেন চীনা চারুকলা নানামুখী আধুনিক শিল্পকর্মকাণ্ডে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। এই সময় একদল শিল্পী তাঁদের কাজের জায়গার অভাব অনুভব করলেন, অতঃপর তাঁরা পরিত্যক্ত কারখানাটিতে খুঁজে পেলেন যেন তাঁদের শিল্পের ভুবন। একে একে শিল্পীদের স্টুডিও গড়ে উঠলো কারখানার পরিত্যক্ত কক্ষগুলোতে। এই উদ্যোগটি যেন চীনা শিল্পের নবতরঙ্গের চেতনার সাথে একাকার হয়ে গেল। সরকারও বোধহয় অনুভব করলো কারখানাটি পরিত্যক্ত থাকার চেয়ে সেখানে কিছু একটা গড়ে উঠলে মন্দ হয় না, এবং খুব কম ভাড়ায় শিল্পীদেরকে বন্দোবস্ত করে দিল। এ যাত্রায় ভাস্কর্যশিল্পীরাই ছিলেন পথিকৃৎ। অতঃপর এখানে শিল্পরসিকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছু গ্যালারিও গড়ে ওঠে। কালক্রমে এখন এটি পুরোপুরিই গ্যালারিপাড়া। পর্যায়ক্রমে শিল্পীদের স্টুডিওর সংখ্যা কমে গেছে, অনেক শিল্পী তাঁদের স্টুডিও সরিয়ে নিয়ে গেছেন আরো দূরে, শহরতলি এলাকায় আরো সস্তা বাড়িতে ।
দশ-পনেরো বছরে এই 798 কারখানা চত্বরটি একটি জমজমাট আর্ট জোনে পরিণত হয়েছে। এখানে গড়ে উঠেছে কয়েকশ গ্যালারি, প্রতিদিনই যেন শিল্পের উৎসব, পুরো এলাকাটি দর্শনার্থী, শিল্পরসিক এবং শিল্পীদের পদচারণায় মুখরিত। সমস্ত বিশ্বেই এখন একটি পরিচিত নাম 798 আর্ট জোন। চীনা গ্যালারির পাশাপাশি এখানে বেশ কিছু বিদেশী গ্যালারিও তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। গ্যালারি ছাড়াও এই চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কফি শপ, স্যুভেনির শপ, শিল্প বিষয়ক বইয়ের দোকান, কারুপণ্যের সমাহার, ফ্যাশন বুটিক ইত্যাদি।
798 আর্ট জোনে একক প্রদর্শনীর আয়োজন ও বাংলাদেশের একটি দিন
বেইজিং-এ আসার পরই কানে বাজছিল 798 শব্দটি। অবশেষে একদিন চলে গেলাম সরেজমিনে ঘুরে দেখতে। প্রথম দেখাতেই বিস্ময়ে অভিভূত; আমাদের মতো বঙ্গসন্তানদের অভিভূত হবারই কথা। বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই চারু চত্বর, কারখানার বড় বড় ফ্লোরগুলো স্থাপনাশিল্পীদের দখলে, সারি সারি বাড়িগুলো সব গ্যালারি হয়ে গেছে, চত্বরের এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা আভাঁগার্দ ভাস্কর্য, কারখানার চিমনিগু্লো দাঁড়িয়ে আছে সটান। সব মিলিয়ে একটি শিল্পিত কোলাজ। দারুণ লাগছিল প্রথম দিনটি, হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম — কোনো একটি গ্যালারিতে যদি একটি প্রদর্শনী করা যেত মন্দ হতো না, দেশ থেকে নিয়ে আসা কাজগুলো চীনা দর্শকদের দেখানো যেত। এর কিছুদিন পরেই পরিচয় হলো ‘কে স্পেস’ গ্যালারির কর্ণধার ছাই চিং-এর সাথে, ওর স্বামী চিয়াং চি আন একজন বিশিষ্ট শিল্পী। ওরা আমার কাজ দেখে প্রদর্শনী করার ব্যাপারে সম্মত হলো। বেইজিং আসার পর পরিচয় হয়েছিল বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব ফাইয়াজ মুরশিদ কাজির সাথে, ফাইয়াজ সংস্কৃতিমান সজ্জন ব্যক্তি, ছায়ানটের ছাত্র ছিলেন, শিল্প সাহিত্যের দারুণ অনুরাগী। ওঁর ইচ্ছা আমি বেইজিং-এর 798-এ একটি প্রদর্শনী করি, এবং সেই অনুযায়ী সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিলেন। এখানে প্রদর্শনী করতে গিয়ে এই চত্বরটিকে আরো ভিতর থেকে দেখার সুযোগ হলো। এখানে নানা ধরনের টিম গড়ে উঠেছে, খুবই পেশাদার ভাবে। কেউ-বা ডিসপ্লে করে, কেউ-বা ছাপাখানার কাজ। এভাবে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই চত্বরে। প্রচার প্রপাগান্ডা সব ইন্টারনেটে। এখানেও ইন্টারনেটের ব্যবহার চোখে পড়ার মতো।
২০০৮-এর নভেম্বরের এক তারিখে 798 আর্ট জোনে ‘কে (k) স্পেস’ গ্যালারিতে আমার প্রদর্শনীর উদ্বোধন হলো। প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, উপস্থিত ছিলেন সেন্ট্রাল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর অধ্যাপক কোয়াং চুন, ইউএনডিপি-র পরিচালক সুবিনয় নন্দী, দূতাবাসের কাউন্সিলার নাজমুল ইসলাম। উদ্বোধনী দিনে প্রচুর দর্শক সমাগম হয়েছিল, বাংলাদশী কমিউনিটির সম্মানিত সদস্যরা সবাই উপস্থিত ছিলেন, আমার চীনা সহপাঠী, শিক্ষক, চীনদেশের শিল্পীবৃন্দ, বিদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিদেশী ছাত্ররা।
ঐ দিন অতিথিদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ‘কে (k) স্পেস’ চত্বর। রবীন্দ্র সঙ্গীত সহযোগে ক্যামেলিয়া শহীদের নৃত্যানুষ্ঠান ছিল চীনা দর্শকের কাছে একটি বাড়তি আকর্ষণ। সব মিলিয়ে ঐ দিনটি ছিল 798 আর্ট জোনে একটি বাংলাদেশের দিন — এই চত্বরে প্রথম কোনো বাঙালি শিল্পীর একক প্রদর্শনী। তবে দুঃখের বিষয় ছিল যার একান্ত উৎসাহে এই আয়োজন, সেই ফাইয়াজ মুরশিদ কাজি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তত দিনে তিনি চলে গেছেন জেনেভায় তাঁর নতুন কর্মস্থলে।
দু সপ্তাহ ব্যাপী এই প্রদর্শনীতে ভালেই দর্শক সমাগম হয়েছিল। আমার সুযোগ ঘটেছে চীনা দর্শক-শিল্পীবৃন্দ এবং সমালোকদের সাথে মতের আদানপ্রদান ঘটানোর। আমার ছবি সম্পর্কে তাঁদের মতামত আমাকে যথেষ্ট প্রেরণা দিয়েছে, উন্মোচিত হয়েছে নতুন চিন্তার দিকদর্শন ।ভালোমন্দের 798
এই চত্বর নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনা, কেউ কেউ বলছে — এটি তার আগের আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে, এখন হয়ে গেছে একটি বাজার । এখানে ভালো-মন্দের বাছবিচার নেই। তবে নিন্দুকেরা যাই বলুক না কেন, এটি এখন বেইজিং-এর প্রধান পর্যটন আকর্ষণ । প্রচুর বিদেশী পর্যটক এখানে আসে। চীনদেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনি ও রবিবার। ঐ দু দিন প্রচুর চীনা দর্শকরাও ঘুরতে আসে এই চত্বরে। তবে গ্যালারির মালিকরা খুব একটা খুশি নয়। ক্যামেরা কাঁধে এই দর্শককুল অনবরত ছবি তুলতে পারদর্শী, তবে ছবি কেনার ব্যাপারে উদ্যোগী নয়। তাই এখন দেখা যায় অনেক গ্যালারিতে লেখা থাকে — ‘নো ফটো প্লিজ’।
কী ধরনের কাজ সাধারণত প্রদর্শিত হয় গ্যালারিগুলোতে? মূলত মূর্ত-বিমূর্ত, আভাঁগার্দ, কনসেপচুয়াল, স্থাপনাশিল্প সব ধরনের কাজই প্রদর্শিত হচ্ছে। আধুনিক শিল্পের দিকেই ঝোক বেশি। উলেন্স সেন্টার নামে এক গ্যালারিতে হয়ে গেল ব্রিটিশ শিল্পী মোনা হাটেম-এর প্রদর্শনী। কন্টিনিউয়া গ্যালারিতে অনেকদিন চললো আনিশ কাপুরের কনসেপচুয়াল প্রদর্শনী। এই চত্বর যেহেতু একটি আধুনিক চিন্তার ফসল, সর্ব্ত্রই তার ছাপ স্পষ্ট।
বলা যেতে পারে আমার একটি শখে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসা পরিচিত জনদের একবার এখানে নিয়ে আসা। এই তালিকায় আছেন শিল্পী রফিকুন্নবী, শিল্পী ফরিদা জামান, শিল্পী রণজিৎ দাস। সাম্প্রতিক কালে ঘুরে গেলেন বিশিষ্ট নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, শিমুল ইউসুফ ও তাঁদের কন্যা এশা।সবাই এই এলাকাটি ঘুরে খুবই উচ্ছ্বসিত। শিল্পী রফিকুন্নবী তো বলেই ফেললেন, ‘ইশ্, আমাদের দেশের আদমজীটা যদি একবার শিল্পীদের দিয়ে দিত!’
Have your say
You must be logged in to post a comment.
৮ comments
তনয় - ২৫ জুন ২০০৯ (১২:০৮ অপরাহ্ণ)
অনেক কিছু জানা গেল ৭৯৮ বিষয়ে আপনার লেখায়, আমিন ভাই।
রশীদ আমিন - ২৬ জুন ২০০৯ (১:৩৪ পূর্বাহ্ণ)
ধন্যবাদ, তনয়।
তুমি তো জায়গাটা দেখেছো, তাই আরো বেশী অনুভব করতে পারবে।
আবদুর রব - ২৫ জুন ২০০৯ (৩:৫৬ অপরাহ্ণ)
আপনার লেখা পড়ে চীনের আরেকটা দিক জানার সুযোগ হল। অনেক ধন্যবাদ।
রশীদ আমিন - ২৬ জুন ২০০৯ (১:৪৬ পূর্বাহ্ণ)
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ রব ভাই।
অনেক দিন যাবৎ এই জায়গাটা নিয়ে লিখতে চেয়েছি …
এই জায়গাটা আমার বেশ প্রিয়…।
চীনদেশ সম্পর্কে আমার আরো দুটি লেখা আছে এই ব্লগেই, সম্ভব হলে পড়বেন।
ভাল থাকবেন।
ইমতিয়ার - ২৯ জুন ২০০৯ (১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
কারখানাটি কেন অকার্যকর হলো বুঝতে পারলাম না, আমিন ভাই। সমাজতন্ত্রের পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনৈতিক যাত্রায় কি চীনের সমরাস্ত্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে? না কি আরও বাড়ছে? যতদূর শুনেছি, সামরিক খাতে ব্যয় আরও বাড়িয়েছে চীন, বিশেষ করে এ বছর যে ব্যয় রেখেছে তা অনেককেই বিস্মিত করেছে।
যাই হোক, শ্রমিকদের অন্তরের অনুভূতি প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ অনুভব করার সুযোগ শিল্পীরা হারাবেন না, আশা করি।
আপনার প্রদর্শনীর বিবরণ পরে ভাল লাগল, আর অনেকদিন পর রনবী স্যারকেও দেখলাম আপনার কল্যাণে।
আপনার আঁভাগার্দ চিত্র দেখে মনে পড়ছে, দুর্ধর্ষ এক প্রদর্শনী দেখেছি বার বার ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে,- ওই আন্দোলনের যাবতীয় প্রকাশনা, শিল্পী ও সংগঠকদের নোটবুক, লিফলেট, বিভিন্ন ছবি ইত্যাদি নিয়ে। ছয়মাস লম্বা প্রদর্শনী আর মাঙনা পয়সায়; সুযোগ কে ছাড়ে বলুন? মাঝেমধ্যেই চলে যেতাম, কাগজে এলোমেলো নোটও নিয়েছিলাম, কিন্তু আমার রুমটা এত ছোট (ছোট বলিয়া অবহেলা করি না, তবে সে তুলনায় কাগজপত্র বেশি), এখন আর হিসাব মেলাতে পারছি না।
যাই হোক, কনসেপচুয়াল আর্ট আর স্থাপনা শিল্প কেমন লাগছে, আরও ভালো করে জানাবেন কোনও এক সময়, আশা করছি।
রশীদ আমিন - ২৯ জুন ২০০৯ (৪:৩০ অপরাহ্ণ)
আবার উৎসাহিত বোধ করলাম আপনার মন্তব্যে।
আসলে এই কারখানাটির অর্থায়নে ছিল তদানীন্তন পূর্ব জার্মানি, পরে নতুন বাস্তবতায় তারা হাত গুটিয়ে নেয়। কারখানাটি পরিচালনার দায়িত্বেও ছিল জার্মানরা, একসময় প্রচুর সাদা চামড়ার জার্মান এই এলাকায় বসবাস করতো। পরে একসময় তারাও চলে যায়। কী ধরনের সামরিক সরঞ্জাম তৈরি হতো তা এখনো রহস্যাবৃত, তবে নানা জার্মান প্রযুক্তিতে উন্নত ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি হতো বলে শোনা যায়, যা সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য ছিল।
চীনের শিল্পকলার নবতরঙ্গ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে, সময় সুযোগ পেলে লিখবো।
আশা করি সব মিলিয়ে ভালো আছেন। শুভেচ্ছা …
রেজাউল করিম সুমন - ৩ জুলাই ২০০৯ (১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ)
বেইজিং ৭৯৮ আর্ট জোন-এর নাম আগে কারো কাছে শুনিনি। নতুন এক শিল্পভুবনের সঙ্গে পরিচিত হলাম! আর আমাদের একজন শিল্পীও যে সেখানে প্রদর্শনী করেছেন, এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে!
সু হং-এর একটি লেখা পড়ে চীনের সাম্প্রতিক শিল্পচর্চা সম্পর্কে নিজের অজ্ঞানতা দূর করার চেষ্টা করছিলাম। ভদ্রমহিলা বেইজিং-এ অবস্থিত ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম অব চায়না-র রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিরেক্টর। কে জানে, হয়তো আপনার পরিচিতই! সাম্প্রতিক শিল্পচর্চায় সরকারি ও বেসরকারি/প্রাইভেট গ্যালারিগুলোর ভূমিকা নিয়েও তিনি সবিস্তারে লিখেছেন, কিন্তু লেখাটিতে ৭৯৮ আর্টজোন-এর কোনো উল্লেখ চোখে না-পড়ায় কিছুক্ষণ মন খারাপ হয়ে রইল। অবশ্য এই আর্টজোন সম্পর্কে আরো জানা গেল এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে (উইকিপিডিয়া, http://www.798world.net, http://www.798art.org/about.html ইত্যাদি)।
আমিন ভাই, চীনের শিল্পকলার নবতরঙ্গ নিয়েও আপনি লিখবেন জেনে ভালো লাগছে। সময় পেলে পরে কখনো সু পিং এবং গু ওয়েন্দা-র কাজ নিয়েও লিখুন-না। এঁদের সম্পর্কে আরো জানতে চাই।
রেজাউল করিম সুমন - ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৯ (৫:৫১ অপরাহ্ণ)
এই শিল্পপাড়া নিয়ে সম্প্রতি আরো একটি লেখা পড়ার সুযোগ হলো। সংবাদ-এর ঈদ সংখ্যা ২০০৯-এ (২ আশ্বিন ১৪১৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯) প্রকাশিত ‘পরিত্যক্ত কারখানায় গড়ে ওঠা পেইচিং আর্টজোন-৭৯৮’-এর লেখক সেন্ট্রাল একাডেমি অব ড্রামা-র ছাত্র কবির হুমায়ূন। স্বাভাবিকভাবেই কিছু তথ্যের পুনরাবৃত্তি আছে যা রশীদ আমিনের লেখায় আগেই উঠে এসেছে, আছে তাঁর প্রসঙ্গও। সেই লেখাটির অংশবিশেষ :