কিশোর-সংশোধনাগারের বাইরে অনন্ত সবুজে চোখ রেখে আমাকে একজন গৃহায়ন ব্যবস্থাপক বলেছিলেন- “আপনি জানেন, যুক্তরাজ্যের জেলখানাগুলিতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ? সব জেলখানায়ই একই চিত্র?” আমি তাতে সংকুচিত হই, আমার চোখে বারবার ধরা পড়তে থাকে- আলজেরিয়ানরা ফিন্সবুরিপার্কের বাসস্টপে মারপিট করছে, সোমালিরা স্টোক নিউয়িংটনে পকেট মারছে, তুর্কি কসাই হ্যারিংগেতে মাংস বিক্রির সময় ওজনে কম দিচ্ছে। আমার অবস্থা কুড়োল হারানো ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল হারানোর পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটার সব গতিবিধি সন্দেহজনক লাগে।
ইয়া-দাড়ি (বুলবুল চশমেদার দাড়ি…) আর জোব্বা পরা পাকিস্তানি এক আইটি এক্সপার্ট খিঁচিয়ে ওঠেন, ক্রিশ্চিয়ানরা গাড়ির বুটে লাশ ফেলে রাখলে কোনো অসুবিধা নাই, একটা মুসলিম ছেলে মার্ডার চার্জে ধরা পড়লে সেইটা দুই-ইঞ্চি বড় হেডলাইন এ ছাপা হয়!” আমি মনে মনে বলি, তাইতো! মুসলিমরা কি মানুষ না? তাদের কী নরহত্যা করার অধিকার নাই?তাদের কী নারীধর্ষণের অধিকার নাই (যেখানে জীবজগতে প্রাইমেটদের মধ্যে মনুষ্যনারী ছাড়া কেবল আর একটিমাত্র স্পিসি শারীরবৃত্তীয়ভাবে ধর্ষোপযোগী)? তাদের কী মসজিদে আশ্রয় নেয়া আর্তমানুষকে কচুকাটা করার অধিকার নাই? আছে, সকল পাপে তাদের সম-অধিকার আছে, অতএব সকল শাস্তিতেও।
সুমেরীয়-আক্কাদীয়-এসিরীয় এইরকম পাঁচখানা আদি সভ্যতার সকল চিহ্ন গুঁড়িয়ে ফেলবার পরে আমেরিকা আর বৃটেন যখন হাত মুছতে মুছতে জগতের কাছে সাফাই দিতে থাকে, তখন যুক্তরাজ্যের অনেকের অবস্থা আবার কুড়োল ফিরে পাওয়া ঐ লোকটার মত হয়, কুড়োল ফিরে পাবার পরে তার প্রতিবেশীর ছেলেটিকে আর সন্দেহজনক লাগেনা, রীতিমত সজ্জন মনে হয়। কেন লিভিংস্টোন ট্রাফালগার স্কোয়ারে গলা কাঁপিয়ে অসভ্য যুদ্ধকে অভিশম্পাত করেন। আমরা আহা-উহু করি। যেন আমাদের কুড়োলই খোয়া গিয়েছিল, অফেরতযোগ্যভাবে হারিয়ে যায়নি লক্ষলক্ষ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশু, ক্যালাইডোস্কোপের অফেরতযোগ্য নকশার মত।
আমার আরেক বন্ধু ভবঘুরেদের আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করেন- হাসতে হাসতে বলেন – “জেলখানায় মুসলিম বেশী কেন হবেনা? একে তো মুসলিমরা স্বল্পপ্রজ একথা শত্তুরও বলতে পারবেনা, তায় খাওয়াদাওয়া ভাল দেয় – উপাসনার জন্যে বারবার সেল থেকে বেরুতে দেয় এইজন্যে জেলে গেলেই লোকে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়।”
ধর্মাচরণকে সামনে রেখে আড়ালে প্রাকৃতিক সম্পদ দোহনের এই পন্থা নতুন নয়, এই পন্থার বলি ছিল মায়াসভ্যতার লোকেরা, ইনকারা, রেড ইন্ডিয়ানরা, এখন মুসলমানরা। অ্যাজটেকরা নরবলি দিতে পারে, নরমাংসের স্বাদ নিতে পারে, তা বলে তার জমিন-জল-হাওয়া তার সোনালী সুর্যাস্ত তার পুর্বপুরুষের ভিটা দখল করবার অধিকার আর কারো উপর বর্তায়না – এ’কথা কি সেকালের ঔপনিবেশিক শক্তিরা জানতো? ঢের জানতো। তাতে কী! ভেড়া জল ঘোলা না করলে ভেড়ার মা করেছে! ভেড়ার মাংস গন্তব্য কীনা!
ক’বছর আগে সম্ভবতঃ বিবিসিতে একটা বিতর্ক দেখবার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার, একজন মুসলিম বক্তা সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক বিতর্ককে সামনে রেখে বলেছিলেন – আপনি আমায় লাথিও দেবেন, আবার লাথি খাবার পরে কেমন সুব্যবহার করা উচিত তাও শিখিয়ে দেবেন – তাই কী হয়?” কথাটা আমার খুব মনে ধরেছিল।
রেডইন্ডিয়ানরা আইদাহোতে ছোট্ট গ্রামে থাকে এখন, সকালে ভস্মাহুতি দিয়ে প্রার্থনা করে- ‘সকলের সমাপ্তি সৌন্দর্যে’, লোকে তাদের জিজ্ঞেস করলে খুব সহজ সংকেতে তারা একলাইনে তাদের ইতিহাস বলে দেয়- “শাদালোকে এসেছিল, এসে আমাদের সব জমি নিয়ে গেল”।
Have your say
You must be logged in to post a comment.
১১ comments
স্নিগ্ধা - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৩:১২ পূর্বাহ্ণ)
সাগুফতা শারমীন তানিয়া – লেখার ধরন পছন্দ হলো খুব! তবে, পুরো লেখাটা পড়ে একটু অসম্পূর্ণ লাগলো। ঔপনিবেশিকতা প্রধান বিষয় হলেও আরও বেশ কিছু ব্যাপার প্রাসঙ্গিক ভাবেই আলোচনায় চলে এসেছে, কিন্তু তারপর আর বিস্তৃত হয় নি। তারপরও, সব মিলিয়ে পড়তে ভালো লাগে। বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা!
তানবীরা - ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ)
পড়তে ভালো লেগেছে সাগুফতা, আপনার উপলব্ধিটা জানতে পেরেও ভালো লেগেছে।
নিজের জীবন থেকে কিছু শিক্ষা অর্জন করছি সাম্প্রতিককালে তাহলো, কিছু ধর্মের সমালোচনা করা হলো “প্রগতিশীলতা” আর কিছু ধর্মের সমালোচনা করা হলো “সাম্প্রদায়িকতা”।
ভালো থাকবেন আরো নিয়মিত লিখবেন।
kheyalimon - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ)
আপনার উপলব্ধিটা এবং আপনার লেখা দুটোই ভাবনার ছাপ রেখে যায়
ধন্যবাদ সুন্দর একটা লেখা উপহার দেবার জন্য
ফারুক ওয়াসিফ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১২:২২ অপরাহ্ণ)
আপন ভঙ্গিতে সুন্দর লেখা।
গ্লোবালাইজেশন বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও ধর্মকে পরস্পরের অঞ্চলে পাঠিয়েছে বাণিজ্য, অভিবাসন ও যুদ্ধের মাধ্যমে। এগুলোই টেনশন তৈরি করছে। মুসলমানের বোরখা, মিনার, মসজিদ, শিখের পাগড়ি-দাড়ি, অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় ইত্যাদি নানান ফেরকায়ই অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে। এগুলো বিশ্বব্যাপী নতুন ধরনের ধার্মিকতার বিস্তারের আলামত। মুশকিল হচ্ছে, কেবল ইসলাম বা মুসলিমকে সমস্যা ভাবা হচ্ছে। কারণ তারা আজকের দুনিয়ার আফ্রিকা-ক্যারিবিয়া-ল্যাটিন আমেরিকা, যাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে পাশ্চাত্য সভ্য ও সুন্দর হবে। ক্রুসেডের সময় এভাবে মুসলমানদের এভিল বানানো হয়েছিল,
মিনার তৈরির বিরুদ্ধে গণভোট কিংবা আইন করে বোরখা নিষিদ্ধ করাও কি সাম্প্রদায়িকতা নয়? ভারতে বিজেপি এখন শাহরুখ নিয়ে যা করছে বা ভারতে রাষ্ট্রের মদদে যেভাবে হিন্দুয়ানিকরণ চলছে, (এ নিয়ে উইলিয়াম ডালরিম্পলের নিবন্ধ দেখুন) কিংবা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী ইসরায়েলের অস্তিত্ব স্বয়ং, মার্কিন সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে ইহুদীবাদী ও খ্রীস্টবাদীদের প্রতাপ কি কম? সেগুলো আড়ালে পড়ে যায় খ্রীষ্টিয় ঐতিহ্যে রঞ্জিত লিবারেলিজমের আড়ালে।
মুসলিম দেশগুলোতে নিজস্ব এক এনলাইটেনমেন্ট প্রয়োজন। কিন্তু সেটা বাইরে থেকে চাপিয়ে দিয়ে হওয়ার নয়। মূলত অর্থনৈতিক অবিকাশ_ সাবেক উপনিবেশিত দেশ হওয়ার জন্য_ এসব দেশে সনাতন মূল্যবোধগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য দায়ি। তবে আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক ইসলাম বলে যা দেখা যায় তার জন্ম ও বিকাশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদী মদদে। বাঙলাদেশের জেএমবি বা পাকিস্তানের লস্কর ইত্যাদির পেছনে যতটা না জেহাদি জোশ তার থেকে বেশি নানান গোয়েন্দা মদদ। বরং তাকাতে হবে তাদের দিকে, তানিয়া যাদের ক্ষোভ বা অসূয়ার কথা তুলে ধরেছেন। বাস্তবে দরিদ্র মাদ্রাসা ছাত্র, বেকার যুবক, আহত মনের শোষিত জনগোষ্ঠী, নির্যাতিত ফিলিস্তিনী বা ইরাকি কিংবা লন্ডনের রাস্তায় বর্ণবাদের শিকার শিক্ষিত মুসলিম যুবক আছে। এদের দিয়েই সমস্যার মণিকোঠায় প্রবেশ করা যাবে। লাদেন বলে কেউ আছে কি না সন্দেহ। বরঙ আজ তার দু-চারটা বেয়াড়া হয়ে গেলেও মূলত এরা পরাশক্তির খেলার ঘুটি হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
যাহোক, কথা অন্যদিকে না নিয়ে বলি, ইসলামোফোবিয়া একসময়কার এন্টিসেমেটিজমের আকার নিচ্ছে। চলছে নতুন হলোকস্ট, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া আর এখন ইয়েমেনে তার তোড়জোর শুরু হয়েছে। একটি জনগোষ্টীকে স্টিগমাটাইজ করে ভিক্টিম করার বিরুদ্ধে এখনই সতর্ক না হলে, একদিকে পশ্চিমা বর্ণবাদ অন্যদিকে তার ইসলামী রিঅ্যাকশন এড়ানো যাবে না।
এ নিয়ে ভাল কিছু লেখা
Is There an Islamic Problem?By M. Shahid Alam
Letter to a Young MuslimTariq Ali
শামীম আহমেদ - ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১১:৪১ অপরাহ্ণ)
রাজনৈতিক ইসলাম কিন্তু একসময় মোটেও প্রতিক্রিয়াশীল ছিলনা। আলজেরিয়াতে স্যালভ্যশন ফ্রন্ট ও মিশরে ইসলামী ব্রাদারহুড কিন্তু মেইনষ্ট্রিম রাজনৈতিক দলই ছিল। কিন্তু আলজেরিয়ার সেনাবাহিনীতে ফরাসী ইন্টিলিজেন্স ইনফেল্ট্রিয়েট করে যে মৃত্যুযজ্ঞ ঘটায় বা মিশরে মোসাদ-সি আই এর চরদের সহায়তা যে দমন পীড়ন চলছে তা ঐ সব দলগুলিকে প্রতিক্রিয়াশিল হতে বাধ্য করেছে। আল-কায়দার সেকন্ড ইন কমান্ড আয়মান জাওয়াহেরী ঐ প্রক্রিয়ারই ফল।
সোভিয়েত পতনের পর যুদ্ধ অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার আপ্রান প্রয়াসে ও শত্রু খোজার তাগিদে ইসলামী মৌলবাদের জন্মদেয় পাশ্চাত্যের দেশ সমূহ। যে ‘আল কায়দা’ ছিল সোভিয়েত বিরোধী মুজাহিদদের হিসাব রাখার জন্য সি আই এ ডাটাবেজ প্রোগ্রাম তাকেই বানানো হয় আপাত দৃষ্টিতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বিশ্বসন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক হিসাবে। সোভিয়েত পতনের পর ত্রাতা হিসাবে যখন পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদদের অবস্থান খুইয়ে চলছিল, জনগনকে নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা যখন ম্লান হয়ে যাচ্ছিল তখন শত্রুর ভয় দেখিয়ে নিজেদের ত্রাতা হিসাবে রাজনীতিবিদদের পূন প্রতিষ্ঠা জরুরী হয়ে পড়ে। মুসলিম সন্ত্রাস ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ইসলাম তাদের সেই সুযোগ করে দেয়।
ফারুক ওয়াসিফ - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১০:৫২ পূর্বাহ্ণ)
আজকেও হামাস বা হিজবুল্লাহ যতটা না ইসলামী তার থেকে বেশি জাতীয়তাবাদী। একসময় যেমন লাল পতাকা দিয়ে লাল পতাকা ঢাকা হয়েছিল, এখন তেমনি জাতীয়তাবাদী সংগ্রামগুলিকে ঢাকা হচ্ছে শরিয়াবাদীদের দিয়ে।
ব্রাদারহুড বা অন্য কেউ যতদিন না শরিয়ার দাবি ছাড়বে ততদিন তাদের পক্ষে কার্যকর প্রতিরোধ গড়া সম্ভব না। শরিয়া উপনিবেশকালের এক আজব ও আত্মঘাতী সৃষ্টি।
মোহাম্মদ মুনিম - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (১:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
কয়েক বছর আগে BBC ওয়েবসাইটে একটা বিতর্ক হয়েছিল ব্রীটেনে জন্ম নেয়া ভারতীয় এবং পাকিস্তানীরা ইংল্যান্ডের সাথে ভারত বা পাকিস্তানের খেলা হলে ইংল্যান্ডকে সমর্থন না দিয়ে ভারত বা পাকিস্তানকে সমর্থন দেয় এই ব্যাপারে। সেখানে মার্কিন প্রবাসী ভারতীয় বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া ভারতীয় ও পাকিস্তানীদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই। তার কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী সন্তানদের বৃহত্তর মার্কিন সমাজে খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটা ব্যবস্থা আছে। আর ব্রীটেনে multiculturalism এর নামে মুসলিম অভিবাসীরা যে পশ্চাৎপদ সমাজ থেকে আসে মানসিকভাবে সেই সমাজেই থেকে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়। আমার এক রুমমেট লন্ডন ঘুরে এসে বললো সেখানকার এক পাকিস্তানী পাড়ায় মুসলিম শিশুরা কোন এক পথচারীকে ‘jew, jew’ বলে বিদ্রুপ করছে। পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানী বাবা মা রাও নিজেদের ছেলেমেয়েদের এই বর্ণবাদী শিক্ষা দেননা। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও অবস্থাটা ব্রিটেনের মতোই। প্যারিসের বিভিন্ন বস্তিতে থাকা মুসলিমরা ফ্রান্সের অতি উচ্চমানের স্থাপত্যশৈলী, কবিতা, চিত্রকলা, চলচ্চিত্রের কোন স্বাদই পায় না। স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে হিজাব পড়ে যেতে পারাটাই তাদের জীবনের একমাত্র চাওয়া পাওয়া। ইউরোপের দেশগুলো মুলত জাতিরাষ্ট্র, আবার অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসী ছাড়াও তাদের চলে না। কিন্তু অভিবাসীদের বৃহত্তর সমাজে আত্তিকরণের কোন সফল প্রক্রিয়া তাদের জানা নেই। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকের ইংরেজী, ফরাসি, জার্মান না জানা অভিবাসীরা দুটো পয়সার জন্য রাতদিন কাজ করেছে আর সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছে। তাদের ছেলেমেয়েরা ইউরোপে জন্ম নিয়েছে বটে, কিন্তু লন্ডন আর প্যারিসের ঘিঞ্জি পাড়াতে তারা মানসিকভাবে পাকিস্তানী, আলজিরিয়ান বা সিলেটি হিসাবেই তারা বেড়ে উঠেছে, ব্রিটিশ বা ফরাসী হিসাবে নয়। তারা সংখ্যায় অনেক, পাকিস্তানে বা আলজিরিয়াতে তারা ফিরে যাবে না, আবার ইউরোপীয় বৃহত্তর সমাজেও তাদের কোন ঠাঁই নেই। তাই তারা উদভ্রান্ত এবং ক্রুদ্ধ। কখনো multiculturalism এর নামে মাথায় হাত বুলিয়ে, কখনো জেলে পুরে তাদের সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এভাবে কতদিন সামাল দেয়া যাবে কে জানে। ইউরোপের কিছু কিছু চরমপন্থী নেতার কথা শুনে মনে হয় তাঁরা এক ধরণের ‘final solution‘ চাচ্ছেন।
সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ)
আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। একে তো কাউন্সিল প্রথম থেকেই ‘মাইগ্রেন্ট’ দেখলেই তাকে কাউন্সিলের ‘গেটো’তে পাঠিয়ে দেয়, সেখানে মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানোদের সাথে, শারীরিকভাবে অসহায়দের সাথে, পাঁড় মাতালদের সাথে এরা ক্রমাগত যুঝতে যুঝতে দেশান্তরী হবার দাদন দেয়- তার ওপর আছে যেকোনো আবাস-যেকোনো চাকুরির জন্যে লালায়িত হবার জন্যে বিলিতিদের ঘৃণালাভ। অতএব ধরা যায় আর একটা ফাইনাল সলিউশনের চেষ্টা সুদূর নয়।
সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৩:৫১ পূর্বাহ্ণ)
আরেকটা কথা, গৌরকিশোর ঘোষ সম্ভবতঃ ‘প্রতিবেশী’ তে লিখেছিলেন- একজাতের ঘরের দরজা আরেক জাতের জন্যে না খুললে জাত নিয়ে হানাহানি কখনো যাবেনা। এক জা্তের প্রতি আরেক জাতের ঘৃণা কখনো যাবেনা। যেসব মুসলিম দেশ ছেড়ে পশ্চিমে আসেন, তাদের জন্যে কোনো দরজা খুলে যায়না, তাদের দরজাও নানান সংস্কারবশে আর খোলেনা, ফলে দেশেও যতটা না ধার্মিক ছিলেন তাঁরা তার চেয়ে অনেক বেশী ধর্মপালন (বর্মধারণ আসলে) করেন তাঁরা, যা কিছু ফেলে এসেছে তাকে আবার তুলে এনে বসান।
সাগুফতা শারমীন তানিয়া - ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৪:০১ পূর্বাহ্ণ)
“মুশকিল হচ্ছে, কেবল ইসলাম বা মুসলিমকে সমস্যা ভাবা হচ্ছে। কারণ তারা আজকের দুনিয়ার আফ্রিকা-ক্যারিবিয়া-ল্যাটিন আমেরিকা, যাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে পাশ্চাত্য সভ্য ও সুন্দর হবে।”
একদিন যেভাবে বৃটিশ এসেছিল উপমহাদেশে, যেকারণে রাশিয়াকে দখল করতে গেছিল হিটলার, শুধুই সে কারণে- ছাই হয়ে যাচ্ছে ইরাক।
যুদ্ধে যারা গেছে তাদের সকলেই কি যুদ্ধ চায়? তাদের অনেকের পরিবারেই কি এমন মানুষ নেই যারা অপরের সাথে ঐকমত্যে না পৌঁছতে পারলেও অপরের মত প্র্কাশের জন্যে জীবন দিতে জানে?
দিগন্ত - ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ)
আপনার কিছু কিছু মন্ত্যবের বিরোধিতা করি। প্রথমত, পৃথিবীর ইতিহাসে যখনই যে শক্তিশালী ছিল সে অপরকে শোষণ করেছে, এর কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ কার্যত দেশ দখল করে উপনিবেশ বানানোর শেষ প্রচেষ্টা, এখন আমেরিকা কিন্তু স্বছন্দে দেশ দখল না করেই উপনিবেশের মত করে অন্য দেশ চালাতে পারে। কিন্তু ব্রিটিশদের আগে মধ্যপ্রাচ্যের আরবরা বা আরো আগে রোমানরা যা করত, তাও সাম্রাজ্যবাদই বটে, কোনো ব্যতিক্রম নেই। সুতরাং, সাম্রাজ্যবাদের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের অবস্থান মূলত “জোর যার মুলুক তার”। সুতরাং কোনো এক বিশেষ জাতিগোষ্ঠীর ওপর উপনিবেশবাদের দায় চাপিয়ে দেওয়া একপেশে ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টা বলেই মনে হয়।
দ্বিতীয়ত, উপনিবেশবাদের শুরু থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এশিয়া বা আফ্রিকার সব প্রান্তই কমবেশী এর শিকার হয়েছে। কিন্তু সবাই এর ফলাফলটা একভাবে নেয়নি। আপনি যদি তাইওয়ানের, ভিয়েতনাম, চিন ও লাইবেরিয়ার তুলনা করেন, এরা উভয়েই কিন্তু বহুকালের উপনিবেশবাদের শিকার। কিন্তু এই দুই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে আজকে তুলনা করে দেখুন। স্পষ্টত বোঝা যায় উপনিবেশবাদ পশ্চাদপদতার একমাত্র কারণ নয়, প্রধান কারণ তো নয়ই।
তৃতীয়ত, সার্বভৌমত্বের চেতনাও একেকরকম। জাপানে এখনও মার্কিন সেনা রয়েছে, গত পঞ্চাশ বছর ধরেই আছে, তাতে কি তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠিত হয়ে গেছে? আমি নিশ্চিত এরকম প্রস্তাব কোনোদিন ভারতে উঠলে লোকজনে হাঁহাঁ করে উঠবে সার্বভৌমত্বের অবমাননার দায়ে পড়ব। মার্কিন সেনা দেশে ঢুকলে তাকে দখলদার বলেই দেখা হবে। অথচ লোকে ভারত ছেড়ে জাপান/কোরিয়া চলে যেতে দ্বিধা করে না।
সমস্যাটার অনেকটাই আমাদের মধ্যেও আছে। সেটাও স্বীকার করে নেওয়া ভাল। বলতে পারেন এগুলোর বীজ ছিল ওই উপনিবেশবাদের মধ্যেই, কিন্তু তাই বলে এখনও?