বাংলা ব্লগোস্ফেয়ারের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্লগ 'আমার ব্লগ' গত বাইশে মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) 'আমার ব্লগ' কর্তৃপক্ষকে কিছু ব্লগারের একাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে [...]

বাংলা ব্লগোস্ফেয়ারের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্লগ 'আমার ব্লগ' গত বাইশে মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) 'আমার ব্লগ' কর্তৃপক্ষকে কিছু ব্লগারের একাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে এবং সেসব ব্লগারের নাম, ঠিকানা, আইপি ইত্যাদি জানতে চেয়েছে। 'আমার ব্লগ' এই আদেশ অগ্রাহ্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। BTRC কয়েকমাস আগেই গুগল কর্তৃপক্ষকে মহানবীকে কেন্দ্র করে তৈরি অত্যন্ত আপত্তিকর একটি চলচ্চিত্রের ক্লিপ সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল এবং গুগল কর্তৃপক্ষ এই চিঠির কোন জবাব দেয়নি, ফলশ্রুতিতে BTRC বাংলাদেশে ইউটিউব ব্লক করে দেয় এবং এখনো পর্যন্ত (আমি যতদূর জানি) এই ব্লক বলবৎ আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আমার ব্লগের ওয়েবসাইটটিও হয়তো অচিরেই ব্লক করা হবে। এটাও ধরে নেওয়া যায় যে মুক্তাঙ্গন সহ অন্যান্য ব্লগেও BTRC-র চিঠি শিগগিরই যাবে। BTRC 'আমার ব্লগ’-এর উপর চড়াও হবার পিছনের কারণ আমরা অনেকেই জানি। শাহবাগের আন্দোলনের পরপরই 'আমার দেশ' সহ অন্য কয়েকটি পত্রিকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে এই আন্দোলনের পিছনে নাস্তিক ভাবধারার কিছু ব্লগার কলকাঠি নাড়ছে। একজন ব্লগারকে খুনও করে ফেলা হয় এবং মহানবী এবং আল্লাহ সম্পর্কে কুৎসিত কিছু কথাসহ তাঁর 'ব্যক্তিগত ব্লগটি'ও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হয় (এই ব্লগার খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর এই ব্লগ সম্পর্কে কেউই কিছু জানতো না)। শাহবাগের আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ব্লগিং করছেন, এত দিন পর্যন্ত তাঁদের 'নাস্তিকতাপূর্ণ' লেখায় কেউ আঘাত না পেলেও দেখা গেলো অতি অল্প সময়ে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম এইসব ব্লগ পড়ে মানসিক ভাবে 'আহত' হয়েছেন। সুদূর যুক্তরাজ্য থেকেও কিছু আহত মুসলমান নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে যোগ দিতে বাংলাদেশে চলে আসেন। শাহবাগের আন্দোলনকারীরাও আহত মুসলমানদের মন রাখতে প্রতি সভার আগে কোরান তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করলেন, নামাযের সময়ে 'গান বাজনা' বন্ধ রাখলেন। সরকারও এই ব্যাপারে পিছিয়ে থাকলো না, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির জন্য ব্লগ এবং ফেসবুককে দায়ী করলেন। এই সংসদীয় কমিটিতে সৈয়দা আশিফা আশরাফী নামে বিএনপির একজন মহিলা এম.পি. আছেন, যিনি সংসদে এবং বিভিন্ন টক শোতে আওয়ামী লীগকে অতি অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তবে এই মিটিংয়ে তিনি এবং আওয়ামী লীগের নেতারা রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে ফেসবুক…

যখন “তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিউ ওয়াতাব্ব” পড়তে শিখেছিলাম আমরা, তখন আমরা আবু লাহাবকে ঘৃণা করতে শিখেছি, চৌদ্দশত বছর আগের অপকীর্তিকে ক্ষমা না করে অভিশাপ দিতে শিখেছি। [...]

যখন “তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবিউ ওয়াতাব্ব” পড়তে শিখেছিলাম আমরা, তখন আমরা আবু লাহাবকে ঘৃণা করতে শিখেছি, চৌদ্দশত বছর আগের অপকীর্তিকে ক্ষমা না করে অভিশাপ দিতে শিখেছি। যখন অযুর সময় আমরা পড়ি “আল ইসলামু হাক্কুন ওয়াল কুফরু বাতিল/আল ইসলামু নুরুন ওয়াল কুফরু জুলমাত” তখন আমরা মুসলিম নরনারী, মু'মিনিনা ওয়াল মু'মিনাআতি, মুসলিম বস্তি-শহর-নগরকে আপনার ধরে বলি, আমরা জ্যোতির্ময় তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন। তখন কি আমরা অমুসলিমদের অমুসলিম হবার সুবাদে ক্ষমা করে দিই? এই সবই ধর্মের কথা, যা আমাদের অত্যন্ত যত্নের সাথে ছোটবেলায় শিক্ষা দেয়া হয়, পরিণত বয়েসে আমরা কেউ কেউ এর থেকে বের হয়ে আসি, কেউ কেউ স্মৃতিকাতরতা-অভ্যাস-বিশ্বাস ইত্যাদি বহু কারণে বের হই না। এই ব্যক্তিগত জায়গাটা নিয়ে তর্কের কিছু নেই, তর্কের হাত হৃদয় অব্দি পৌঁছে না। মানুষ কেন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে পড়তে না গিয়ে দেশের জন্যে বস্তাবন্দী হয়ে মার খেতে খেতে মরে যায় তা নিয়ে যেমন তর্ক চলে না। শিখাইবে/পারিবে না করিতে প্রয়োগ ফেইসবুকে ফাহাম আবদুস সালাম একটি নোট দিয়েছেন। তিনি শুরু করেছেন এইভাবে, ক্ষমা করুন এজন্যে না যে ক্ষমা দুর্বলের সান্তনা, বরং ক্ষমা শক্তিমানের শ্রেষ্ঠ রায়। ক্ষমা করে দেখুন আপনার ভাল লাগবে। নতুন ট্যালকম পাউডার ব্যবহারের অনুরোধের মতন করে ক্ষমা করবার অনুরোধ শুনে আমার ভাল লাগে। আমি আরেকটু পড়ি -- জামাতের যে ছেলেটা মাত্র বিশ বছর বয়েসে মারা যাচ্ছে তাকে বাঁচার সুযোগ দিন- চল্লিশ বছর বয়েসে সে হয়তো বুঝতে পারবে যে সহিংসতায় কোনো আদর্শবাদ মানুষের মনে জায়গা পায় না। যে পুলিশ গতকাল ঘরে ফেরেনি, সে হয়তো আগামী বছর বুঝতে পারতো- অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। রাজীব হয়তো আর পাঁচ বছর পরেই বুঝতে পারতো মুহাম্মাদ (সঃ)কে এভাবে তার আক্রমণ করা উচিত হয়নি। জামাত দিয়ে শুরু করে ভারসাম্য আনবার জন্যে ব্লগার রাজীবের প্রসঙ্গ আনাটা বেশ মজার, আমিও এইভাবে মনে মনে লাইন জুড়তে থাকি- ইয়র্কশায়ার রিপার তার চৌদ্দ নম্বর খুনের বেলায়ই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো, আহা মেয়েটার চোখে কত মায়া, ওকে না মারি...ইত্যাদি। এইসব খুনিয়াদের নামধাম লিখে অবশেষে অকালে মরে যাওয়া লোরকা বেঁচে থাকলে কি হতেন তা দিয়ে শেষ করলেই হবে! পুরোটাই শুনতে হবে এমন যে আমি কেবল মানুষের মরে যাওয়ায় বিচলিত।ভুলে গেলেই চলবে যে জামাতের বিশ বছরের…

সামাজিক বিষয়ে কখনো লিখতে হবে ভাবিনি। তবে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমরা একটা দারুণ সংকট কালে এসে পৌঁছেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই এরকম একটা সময় পাড়ি দেয়। তারপর আবার নতুন করে সব শুরু করে।[...]

সামাজিক বিষয়ে কখনো লিখতে হবে ভাবিনি। তবে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমরা একটা দারুণ সংকট কালে এসে পৌঁছেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই এরকম একটা সময় পাড়ি দেয়। তারপর আবার নতুন করে সব শুরু করে। আমরা একে ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তন’ বলি বা ‘সামাজিক উত্তরন’ যাই বলি না কেন, সময় পার হলে দেখা যাবে আমরা একটা নতুন পরিবেশে চলে এসেছি। সেটা খারাপও হতে পারে, আবার ভালোও হতে পারে। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে, আমাদের চলমান প্রস্তুতির উপর। গত সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া ‘আরব বসন্ত’ আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখি, পরিবর্তনের পর সেখানে দেখা গেলো, প্রগতিশীলদের হটিয়ে ইসলামীপন্থীরা নির্বাচনে জয়লাভ করে। ফলে লাভ কি হল তা আরব বসন্তের পতাকাবাহীরা বলতে পারবেন। আমাদের দেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তেমনি একটি সময়কাল। আমরা একটি পরিবর্তন চাইছিলাম ; ধর্ম-বর্ণ– জাতি নির্বিশেষে সাম্য, সামাজিক মর্যাদা এবং স্বাধীন সার্বভৌম ভাবে বেচে থাকার নিশ্চয়তয়ার জন্য লড়াই। আমরা ছোটবেলার পাঠ্যবইয়ে পড়লাম ‘ স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’ । একদল মানুষ নয়মাস সংগ্রাম করেছিল ‘স্বাধীনতা’ অর্জনের, স্বাধীনতা এলো। এরপর আমাদের ৪২ বছর কাটল। কিন্তু আমরা কি স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে নিয়োজিত ছিলাম বা আছি ? ঠিক মনে হয় না । কারণ তাহলে সাধারণ, একেবারে নিত্য নৈমত্তিক কিছু সভ্য, সুস্থ ও নিরাপদ মানসকিতা আমদের মধ্যে তৈরি হতো। যা একজন আধুনিক মানুষের সমাজে বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। আমরা সেই সংগ্রাম করেছি বলে মনে হয় না। আমি বলছিনা এর জন্য প্রতিদিন রাজনীতি করতে হয়। রাজনীতি করাটা যে বিশাল বিপদজনক কাজ, আমার মনে হয় ১৯৭২ থেকে এখন পর্যন্ত যত রাজনীতিবিদ আছেন, ভালো বলতে পারবেন। রাজনীতি আমরা অনেকেই করিনা, কিন্তু ‘রাজনৈতিক সচেতনতা’ হারিয়ে যাওয়াটা শুভ কিছু নয়। আমরা ভাবছি - আমি সবকিছু উপেক্ষা করে, অর্থ, সম্পদ আর ক্ষমতা’র চর্চা করলাম, সন্তান-পরিবারের দিকে তাকিয়ে, কিন্তু সেই সন্তান উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, উগ্র কোন আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত। আমি নিজে আদর্শগত ভাবে দারুণ অসাম্প্রদায়িক, কিন্তু আমার সামাজিক, অর্থনৈতিক চর্চার দুর্বল ফাঁক-ফোকর গলে আমার সন্তানদের মধ্যে হয়তো সাম্প্রদায়িক বীজ বুনে যাচ্ছে। আবার দেখা গেলো, আমি খুবই ধার্মিক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। এদিকে ঘুষের টাকায় বিশাল সম্পদ গড়ে তোলার পর,…

...শাহবাগের এই আন্দোলন উৎস থেকে এখনও প্রতিষ্ঠানবিরোধী। এই আন্দোলন সরকারি ভূমিকার বিরোধিতাজাত, বিরোধী দলগুলোর ব্যর্থতারও বিরোধিতাজাত। কি সরকার, কি বিরোধী দল উভয়েই চেয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সীমিত করতে, সংকুচিত করতে কিংবা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে। কিন্তু তারুণ্যের উত্থান তাদের ওই উদ্দেশ্যকে নসাৎ করে দিয়েছে। এই তারুণ্যকে ধারণ করার শক্তি যাদের নেই, তারা এখন নিজেদের ধারণশক্তির ব্যর্থতা ঢাকতে আওয়ামী সরকারের অপশাসনের ভূত দেখিয়ে তরুণদের থমকিয়ে দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে, নিজেদের গতিহীনতাকে যৌক্তিক প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

...নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস শান্তির ললিতবাণী শুনাইবে ব্যর্থ পরিহাস- যাবার আগে তাই ডাক দিয়ে যাই দানবের সঙ্গে সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হতেছে যারা আজ ঘরে ঘরে সত্যি কথা বলতে গেলে, শান্তির ললিতবাণী এখন ব্যর্থ পরিহাসই বটে। গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে জামায়াত-শিবির চক্রের অব্যাহত সশস্ত্র সন্ত্রাসের মূল লক্ষ্যবস্তু পুলিশ; আর ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সেই সশস্ত্র আক্রমণের লক্ষ্য কেবল রাষ্ট্র, সরকার কিংবা পুলিশ নয়- সাধারণ জনগণও। সুপরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় তারা সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, রেলপথ উপড়ে ফেলছে, আগুন দিচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন ও বাসে, হামলা চালাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে- মানুষ বাঁচবে না মরবে, তাতে কিছুই আসে যায় না তাদের। তারপরও, স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর উন্মুক্ত মুখপাত্র বিএনপির নেতাদের কাছে শাহবাগের তরুণরা যত ‘বখাটে’ই হোক না কেন, শাহবাগের আন্দোলন পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আছে। প্রজন্ম চত্বরে গত এক মাসে আনুমানিক একশ’ জনেরও বেশি জামাত-শিবির চক্রের গুপ্তচর ধরা পড়েছে- কিন্তু তাদের গায়ে সামান্য আঁচড়ও পড়েনি। জামায়াতে ইসলামী তাদের কথিত ‘গৃহযুদ্ধে’র প্রস্তুতি তো আজ থেকে নিচ্ছে না। ২০১০ সালেই এরকম ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন একটি বিদেশি পত্রিকাতে যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান। কথিত সেই ‘গৃহযুদ্ধের’ জন্যে এখন মরিয়া তারা। গত কয়েকদিন ধরে হত্যা কিংবা মানুষমৃত্যুর যেসব ঘটনা ঘটেছে, যত রক্তপাত ঘটেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন- কিন্তু তাই বলে আমরা আমাদের চোখে এত বড় ঠুলি পরিনি যে তাকে আমরা ‘গণহত্যা’র সঙ্গে গুলিয়ে ফেলব, কিংবা এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে সম্মিলিত জাতীয় সংলাপ, জরুরি অবস্থা কিংবা জাতিসংঘের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠব। বাংলাদেশের পুলিশ অনেক আগে থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দুষ্ট, বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক ও সামরিক সরকারের সময়ে তো বটেই, বিভিন্ন নির্বাচিত সরকারের শাসনামলেও তারা বার বার সমালোচিত হয়েছে তাদের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্যে, পুলিশি হেফাজতে সাধারণ কয়েদির মৃত্যুর জন্যে, বন্দি নিপীড়নের জন্যে, রাজনৈতিক কর্মী দলনের জন্যে, নারী ধর্ষণের জন্যে। কিন্তু তাই বলে, এমনকি সামরিক শাসনামলেও গণতন্ত্রের জন্যে আন্দোলনকারীদেরও প্রয়োজন হয়নি তাদের সশস্ত্র আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা- যা গত কয়েক মাস ধরে জামায়াত-শিবির করে আসছে। ট্রেনে-বাসে কারা চড়েন? সাধারণ মানুষ। জামায়াত-শিবির সেসব যাত্রীবাহী পরিবহনে আগুন দিচ্ছে। তারা রেলপথ উপড়ে ফেলছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা…

...কাদের দেয়া এসব স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে আজ শাহবাগ থেকে শুরু করে সারা বাংলা? এসব তো পরিণত হয়েছিল মৃত স্লোগানে, পরিণত হয়েছিল দলীয় স্লোগানে- আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ তাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আর সহিংসতার মধ্য দিয়ে তো ‘জয়বাংলা’ স্লোগানকে করে তুলেছিল মূর্তিমান আতঙ্কে। তাহলে রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতির কোন বাস্তবতা আবারো ফিরিয়ে এনেছে এসব স্লোগানকে?...

জয়বাংলা- আবারও জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই স্লোগান, যেটি ছিল বাংলাদেশের জীবনদায়িনী স্লোগান; আরো ফিরে এসেছে তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা, ফিরে এসেছে তুমি কে, আমি কে/ বাঙালি, বাঙালির মতো স্লোগানগুলোও। রক্তের বন্যায় অন্যায়কে ভাসিয়ে দেয়ার স্লোগানে, লড়াই করে বাঁচতে চাওয়ার স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে আকাশ-বাতাস। কাদের দেয়া এসব স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে আজ শাহবাগ থেকে শুরু করে সারা বাংলা? এসব তো পরিণত হয়েছিল মৃত স্লোগানে, পরিণত হয়েছিল দলীয় স্লোগানে- আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগ তাদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি আর সহিংসতার মধ্য দিয়ে তো জয়বাংলা স্লোগানকে করে তুলেছিল মূর্তিমান আতঙ্কে। তাহলে রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতির কোন বাস্তবতা আবারো ফিরিয়ে এনেছে এসব স্লোগানকে? একটি দিন-৫ ফেব্রুয়ারির দিনটি আমাদের ইতিহাসকে পাল্টে দিতে চলেছে। মানুষ জেগে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত হয়ে একাত্তরের সময় সংঘটিত ম্যাসাকারের জন্য অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে। না, একদিনে তৈরি হয়নি ৫ ফেব্রুয়ারি, তৈরি হয়েছে তিলে তিলে এবং তার প্রকাশ ঘটেছে একটি দিনে- ৫ ফেব্রুয়ারিতে। এ দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই ঐতিহাসিক কথাটিকে, ইতিহাসে কখনো কখনো এমন বন্ধ্যা সময় আসে যখন ১ দিনের কাজ ১শ দিনেও সম্পন্ন হয় না, আবার এমন উর্বর সময় আসে যখন ১শ দিনের কাজ একদিনেই সম্পন্ন হয়। শাহবাগ ফিরিয়ে আনতে চলেছে ইতিহাসের সেই উর্বর সময়। আর এজন্য আমরা আজ শ্রদ্ধায় নত হয়ে আছি তারুণ্যের এ শক্তির কাছে, তারুণ্যের এ উত্থানের কাছে- কেননা বিস্ময়কর তাদের এ জাগরণ। কেননা মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভিন্নমুখী করার, বিকৃত করার নানা চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধে বাম সংগঠনগুলোর অবদানকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভিন্নমুখী করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। পরে মুক্তিযুদ্ধের এমনকি সাধারণ তথ্যগুলোও বিকৃত করা হতে থাকে মৌলবাদী-ডানপন্থী রাজনীতির স্বার্থে। বছরের পর বছর ধরে আমাদের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক মিথ্যা তথ্য পড়েছে, এক বছর একরকম পড়েছে তো অন্য বছর পড়েছে আরেকরকম, স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছে একরকম আবার ঘরে ফিরে মা-বাবার কাছে শুনেছে অন্যরকম। এত পরস্পরবিরোধিতার মধ্য দিয়ে কারো পক্ষে সত্য জানা প্রায় অসম্ভব- কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই অসম্ভব কঠিন কাজটিই করেছে, তারা অসত্যের নিরেট দেয়াল ভেঙে সত্য জেনেছে। কোনো কোনো সংগঠন এজন্য নিরন্তর কাজ করেছে বটে, কিন্তু তারপরও…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.