আমাদের জীবন থেকে আরেকটি বছরের সূর্য বিদায় নিল। ২০০৮ সাল। বছরটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত বছর। এই বছরটিকে সাধারণ মানুষের জন্য একটি প্রতীক্ষার বছর বললে ভুল হবে না। সে প্রতীক্ষা ছিল, সব দু:শাসন, সব অশান্তি অবসানের। এই প্রতীক্ষা ছিল, একটি নতুন সূর্যের উষ্ণ উন্মেষের। শান্তিময় বিশ্ব নির্মাণের একটি দিগবলয় রচনার জন্যও ছিল সে অপেক্ষা। বছরটিতে বেশ শঙ্কাময় ছিল গোটা বিশ্বের মানুষ। ছিল চরম অর্থনৈতিক মন্দাবস্খা। জঙ্গিবাদী দানবতন্ত্রের হুমকি। সম্পূর্ণ বিনা কারণে বছরে শেষ মাসটিতে আক্রান্ত হয় ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাই। প্রায় কয়েকশ’ নাগরিক হতাহত হন। জঙ্গিরা কেন এই অহেতুক আক্রমণটি করল? বিশ্ববাসীকে তাদের অস্তিত্ব জানানোর জন্য? জঙ্গিতন্ত্র কি বিশ্বে কোনভাবে শান্তি এনে দিতে পারবে? তা যে পারবে না এমনটা সন্ত্রাসীরাও জানে। তারপরও তারা চোরাগোপ্তা আক্রমণ করে গোটা বিশ্বকে দু:শ্চিন্তার মুখোমুখি রাখছে প্রতিদিন। এ বছরটিতেই পরিবর্তন এসেছে বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বারাক হোসেন ওবামা। তার পিতা একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান বারাক হোসেন ওবামা সিনিয়র, ভাগ্যান্বেষণের জন্য এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হলেও তার পিতা ছিলেন মুসলিম। এটা জেনেশুনেই তাকে ভোট দিয়েছে কোটি কোটি মার্কিনি। আর এভাবেই হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। জয় হয়েছে মানবতার। পরাজিত হয়েছে বর্ণবৈষম্য। যুক্তরাষ্ট্রবাসী কেন এই পরিবর্তন চেয়েছে? তারা পরিবর্তন চেয়েছে শান্তির সপক্ষে। তারা রক্তপাতের অবসান চেয়েছে। চেয়েছে একটি শান্তির আবাস। দেখা গেছে তরুণ প্রজন্ম নিজ সাশ্রয়ের ডলার বিনা দ্বিধায় তুলে দিয়েছে বারাক ওবামার নির্বাচনী তহবিলে। তারপর ভোটের ক্যাম্পেইনে তারা রেখেছে বিশেষ ভমিকা। গোত্র-বর্ণ ভুলে গিয়ে নারী-পুরুষরা সমকণ্ঠে বলেছে­ ‘উই নিড এ চেঞ্জ’। আর ওবামাও দু’হাত উঁচিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভোট দাও। আমি তোমাদের নতুন আমেরিকা উপহার দেব।’ মানুষ কখন পরিবর্তন চায় এবং কেন চায়? যখন বাস্তবতার কঠিন দংশন মানুষকে নির্মমভাবে আক্রান্ত করে তোলে তখন নতুন জীবন, নতুন পথের সান মানুষকে করতেই হয়। বিশ্বে সন্ত্রাস দমনের নামে প্রেসিডেন্ট বুশ যে ত্রাসের পেশিশক্তি কায়েম করেছিলেন তার আদৌ প্রয়োজন ছিল কি না, কিংবা বিকল্প কোন উপায়ে এই সন্ত্রাস রোধ করা যেত কি না সে প্রশ্নটি এখন পর্যন্ত থেকেই যাচ্ছে। অসম্পূর্ণ এবং অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে এর উত্তরও। ইরাক-আফগান যুদ্ধে প্রতিদিন যে মিলিয়ন…

ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর ইসরাইল এবার আঘাত হেনেছে গাজা উপত্যকায়। স্ব-দেশে পরবাসীতে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনী জনগণ অসহায়ের মত গত সাতদিনের টানা ইসরাইলি হামলায় তাদের শত শত স্বদেশীর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে। গত কয়েকদিনের হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫১২ জন ফিলিস্তিনি যাদের অধিকাংশই বেসামরিক জনগণ বলে জানা গেছে। বাড়ি-ঘর, হাসপাতাল, ব্যাংক, সরকারি অফিস, স্কুল, রাস্তাঘাট ইত্যাদি কিছুই বাদ যায়নি ইসরাইলি হামলা থেকে। রক্ত লোলুপ দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ইতোমধ্যে স্থলপথে আক্রমণ শুরু করেছে। কার্যত গাজা শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে অবরোধ করে রেখেছে ইসরাইলিরা। শত শত শিশু ও নারী প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে। হাসপাতাল ভরে উঠছে আহতদের আহাজারিতে। গাজার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ নেই, নেই ব্যান্ডিজসহ পর্যাপ্ত মেডিক্যাল সরঞ্জাম। গত কয়েক মাস ধরে গাজায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। চাকরি বা জীবিকার জন্যও শহরের বাইরে বের হবার অধিকার নেই ফিলিস্তিনিদের। পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন এই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অধিকাংশ মানুষ ইসরাইল রাষ্ট্রের গোড়া পত্তনের পর উচ্ছেদ হয়ে পরিণত হয়েছেন উদ্বাস্তুতে। গাজা শহরের লক্ষাধিক লোক শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। ইসরাইল রাষ্ট্র এদেরই বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তথাকথিত হামাস দমনের নামে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বিশ্বের সবচেয়ে অসম ও সবচেয়ে নৃশংস এই যুদ্ধ। এ হলো দানবের মিসাইলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পাথর হাতে শিশুর যুদ্ধ। ফিলিস্তিনি শিশুরা এই ভয়াবহ পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ের কী কোনো পরিণতি নেই! দক্ষিণ আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছে কী ফিলিস্তিনিরা। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে ইসরাইল ইতিহাস ভুলে গেছে। নিজেদের উপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি হলোকাস্টের স্মৃতি তো তাদের ভুলবার কথা নয়। গণহত্যার মাধ্যমে যে কোনও জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা যায় না, আজকের শক্তিশালী ইসরাইল রাষ্ট্রই তো তার প্রমাণ। সুতরাং ইতিহাস বলে ফিলিস্তিনিরা এমন মৃত্যুর প্রত্যাঘাত দেবেই। এ মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শোনা যাবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এমন কী পৃথিবীব্যাপী। এখন যেটা প্রথমত প্রয়োজন তা হলো শান্তি, কেবলমাত্র শান্তি। ইসরাইলি ট্যাংক ও মিসাইলবাহী বিমান যে উদ্দেশ্য নিয়ে গাজায় ঢুকেছে সে উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। গাজার শিশুরা, যুবকেরা রাতারাতি ভুলে যাবে না নিজেদের হারানো ভিটে-মাটির কথা। এই যুদ্ধ তাদের ক্রোধের আগুনকে বরং বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবী…

কী করবেন বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনরা, জুতা যখন অস্ত্র হয়ে ওঠে? জুতা যখন মিসাইলের চেয়েও তীব্র বেগে গিয়ে আঘাত হানতে চায় যতটা না জর্জ বুশের শরীরে, তারও চেয়ে বেশি পুরো যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী কাঠামোর চোয়ালে? জুতা তো ছুরি নয়, পিস্তল নয় যে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সনাক্ত করতে হবে। এ হেন জুতা আর জুতা নয়, রীতিমতো অস্ত্র হয়ে উঠেছে। এ অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের যে-ক্ষতি করা হলো, তা থেকে বেরিয়ে আসার দায়ভার তো ওবামা-হিলারিদেরই নিতে হবে। কেননা তারাই তো এখন উত্তরসূরি বুশ-রাইসের ইরাকনীতির। মুনতাজার আল-জায়িদকে এখন মেরেকেটে কোটি টুকরো করে ফেললেও কি সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের চোয়ালের দিকে উড়তে থাকা ওই জুতার পাটিকে ফিরিয়ে আনা? সম্ভব নয়। এমনকি মার্কিন মুল্লুকেরই তুখোড় বিশ্লেষক ডেভিড সোয়ানসনকে বলতে শুনছি, একজন সাংবাদিক কেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির দিকে জুতা ছুঁড়ে মারার মতো অভব্য কাজটি করতে গিয়েছিলেন তারও চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ওই কক্ষটিতে উপস্থিত আর যারা ছিল তারা কেন এরপরও সাহস পায়নি পা থেকে জুতা খুলবার। ডেভিড সোয়ানসন উল্টো জানতে চেয়েছেন, ‘কেন যে-মানুষটি আমাদের রাষ্ট্রপতির গায়ে জুতা ছুঁড়ে মারে, সেই মানুষটি আমাদের রাষ্ট্রপতির চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে?’ এই প্রশ্নের জবাব খানিকটা দিতে পারেন বাঙালিরা, বাংলাদেশের মানুষেরা। কেননা অন্যায়কারীর দিকে সরাসরি জুতা ছুঁড়ে মারার রেওয়াজ এ-দেশটিতেও আছে। অনেকেরই মনে আছে, স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জনসভা করতে গেলে সিলেটবাসী জুতা দেখিয়েছিলেন আর সিরাজগঞ্জের জনগণ শুধু জুতা দেখিয়ে বা ছুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, w`M¤^i হয়ে প্রচণ্ড রোষে ছুটে গিয়েছিলেন সামরিক জান্তার দিকে। আরও একটি ঘটনাও অনেকের মনে আছে, জামায়াতে ইসলামীর গোলাম আযম নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন বায়তুল মোকাররমে। হয়তো চিন্তা করেছিলেন, জনগণ সব ভুলে গেছে। কিন্তু না, গণরোষের শিকার হয়েছিলেন তিনি, এবং শোনা যায় তার মাথায়ও দু’চারটে জুতা-স্যান্ডেল বসিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ মানুষ। চারপাশে যখন মিথ্যার বোঝা জমে ওঠে, একেবারে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে যখন মিথ্যুকেরা অম্লান বদনে প্রচণ্ড আস্থার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলতে থাকেন, তখন সুন্দর ও সত্য কদর্য হয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়। কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তাঁর ‘কিংবদন্তীর কথা বলছি’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের কণ্ঠস্বর কর্কশ/ কেননা বিকৃতির প্রতি ঘৃণা মানুষকে অসুন্দর করে দেয়।’ ইরাকে সাংবাদিক মুনতাজার আল-জায়িদী যে এই অভব্য কাজটি করতে…

দু’হাজার আট-এর ডিসেম্বর মাসটি বাঙালির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে জিতে কারা ক্ষমতায় যাবেন তা নিয়ে সর্বত্র জল্পনা। ইতোমধ্যে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নিচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট, আর বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি। সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের এই দলটি অনেক দরকষাকষি শেষে ৪৯টি আসন নিয়ে মহাজোটে থাকতে পেরেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাবেক স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের জাতীয় পার্টির ঐক্য আদৌ হওয়া উচিত ছিল কি না তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। কারণ এই এরশাদ শাহীর অবৈধ ক্ষমতায় থাকার নয় বছরে দেশে গণতন্ত্রকে হত্যার ব্যাপক তৎপরতা লক্ষণীয় ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য আদালতে মামলা হয়েছিল এরশাদের বিরুদ্ধে। সেলিম, দেলওয়ার, ডা. মিলন, বসুনিয়া, নূর হোসেন প্রমুখ শহীদদের বুক ঝাঝরা করা হয়েছিল এই স্বৈরশাসকের মসনদ বাঁচাবার জন্যই। ব্যাপক রক্তপাতের মাধ্যমে সৃষ্ট নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন এরশাদের পতনের সূত্রপাত করে। তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। জাতির জীবন থেকে এই যে একটি দশক অবৈধভাবে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ এর কোনো কৈফিয়ত তিনি কি রাষ্ট্রের জনগণকে দিয়েছেন? না, দেননি। বরং আজ তিনি আরেকটি প্রধান দলের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে রাষ্ট্রের নিয়ামক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আছেন। এ দুর্ভাগ্যটি গোটা রাষ্ট্রের মানুষের। অন্যদিকে বিএনপি এমন একটি দলের সঙ্গে মোর্চা করে নির্বাচন করছে, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা জাতির স্বপ্নের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। গণহত্যা, ধর্ষণ, নারীর সম্ভ্রমহানি, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ কোন হীন কাজটি রাজাকার আলবদররা করেনি? সেই বদর বাহিনীর প্রধান কর্ণধারদের মন্ত্রীত্ব দিয়ে বিএনপি তাদের মসনদ পাকাপোক্ত করার কাজটি সম্পন্ন করেছিল বিনাদ্বিধায়। ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই রাজাকার চক্রের সঙ্গেই ঐক্য করে মেনিফেস্টো দিচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন আওয়ামী লীগ জাপার সঙ্গে ঐক্য না করেও নির্বাচনে ভালো ফলাফল পেতে পারতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে সংশয়বাদী বলেই মনে হয়েছে। অনেকেই মনে করেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে এরশাদের জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করে দেশে বড়জোর দশটি আসন পেতে পারে। বিষয়টি শেখ হাসিনা তার বিভিন্ন জরিপ-সমীক্ষায় জানতে-বুঝতে পেরেছেন বলেই আমি বিশ্বাস করি। তারপরও পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে মহাজোট…

বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙতে শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তারা তাদের এই ভাঙনের কাজে সাধারণ মানুষকেও টেনে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বয়ান দিয়ে। ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী ব্যাপার,- একবাক্যে বলতে গেলে এটি তাদের মূল যুক্তি এবং নিছক আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, এই যুক্তি সঠিক। কিন্তু মানবজাতিকে যারা যুগে যুগে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা ঈশ্বরপ্রেরিতই হন আর সামাজিক সংগঠক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা শিল্পী-সাহিত্যিক যে-ই হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের এ কথাই বলে, ইতিহাস ও আদর্শকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। তার জন্যে প্রয়োজন হয় যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতির [...]

বাংলাদেশে ভাস্কর্য ভাঙতে শুরু করেছে ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তারা তাদের এই ভাঙনের কাজে সাধারণ মানুষকেও টেনে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে ধর্মীয় বয়ান দিয়ে। ভাস্কর্য ধর্মবিরোধী ব্যাপার,- একবাক্যে বলতে গেলে এটি তাদের মূল যুক্তি এবং নিছক আক্ষরিকভাবে বলতে গেলে, এই যুক্তি সঠিক। কিন্তু মানবজাতিকে যারা যুগে যুগে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁরা ঈশ্বরপ্রেরিতই হন আর সামাজিক সংগঠক, রাজনীতিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা শিল্পী-সাহিত্যিক যে-ই হন, তাঁদের অভিজ্ঞতা আমাদের এ কথাই বলে,  ইতিহাস ও আদর্শকে আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে সমাজের বিকাশ সম্ভব নয়। তার জন্যে প্রয়োজন হয় যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতির। মৌলবাদীদের (তা ধর্মীয়ই হোক আর রাজনৈতিকই নয়) আমরা মৌলবাদী বলি কেন? বলি, এই কারণে যে এরা সব কিছুকেই আক্ষরিক অর্থে বিবেচনা করার পক্ষপাতি। ইতিহাস, ভূগোল ও রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতা থেকে শুরু করে সময়ের পরিবর্তন কোনওটিকেই এরা বিকাশের ধারা ও যুক্তির আওতায় নিতে চায় না। তাই এরা সময়ের সত্যকে হারিয়ে ফেলে, সত্যের উদ্বোধন ঘটাতে ব্যর্থ হয় এবং উটপাখির মতো মুখ গুঁজে থাকে অতীতের বদ্ধ কাঠামোতে। ইসলাম ধর্মের উত্থানপর্বে মূর্তি-বিরোধিতা খুব সুস্পষ্ট। কেননা, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একটি নিরাবয়ব ও একেশ্বরবাদী ধর্ম প্রচার করেছিলেন। মূর্তি-পূজা এই একেশ্বরবাদিতা ও নিরাকারবাদিতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিল। কিন্তু কালক্রমে মূর্তি তৈরির বিষয়টি আর ধর্মচর্চার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেনি, বরং তা ধর্মসাধনার পরিধিকে অতিক্রম করে শিল্পভাবনা ও শিল্পসৃষ্টির ধারাকেই বড় করে দেখেছে। এইভাবে মূর্তিপূজা থেকে, মূর্তি তৈরির পর্ব থেকে ভাস্কর্য চর্চা এবং ভাস্কর্য তৈরিও প্রক্রিয়াও আলাদা হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেকেই আছেন, যারা এই সহজ ঐতিহাসিক সত্যকে গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের কাছে ভাস্কর্যের ঐতিহ্যিক প্রেরণা ও আবেদন এবং এর সঙ্গে শিল্পের যোগ খুবই তুচ্ছ মনে হয়। তারা মনে করেন, এর মধ্যে দিয়ে আসলে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। কিন্তু ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের প্রতি মমত্ব, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আর ঈশ্বরের জন্যে নৈবেদ্যর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। এই প্রসঙ্গে টেনে আনা যায় হযরত মোহাম্মদের প্রথম জীবনীকার আরবের ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাকের বইটির কথা। অনেক আগের লেখা তাঁর বই ‘দ্য লাইফ অব মোহাম্মদ’-এ তিনি কাবা শরীফ থেকে ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে নেয়ার সময়ের একটি বর্ণনাও তুলে ধরেছেন। তাতে লেখা হয়েছে, মূর্তি অপসারণ এমনকি দেয়ালের সব ফ্রেসকো মুছে…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.