ফিলিস্তিনীরা কি মুছে যাবে ইতিহাস থেকে?

gazagaza-2
ফিলিস্তিন জাতিকে ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর ইসরাইল এবার আঘাত হেনেছে গাজা উপত্যকায়। স্ব-দেশে পরবাসীতে পরিণত হওয়া ফিলিস্তিনী জনগণ অসহায়ের মত গত সাতদিনের টানা ইসরাইলি হামলায় তাদের শত শত স্বদেশীর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে। গত কয়েকদিনের হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫১২ জন ফিলিস্তিনি যাদের অধিকাংশই বেসামরিক জনগণ বলে জানা গেছে। বাড়ি-ঘর, হাসপাতাল, ব্যাংক, সরকারি অফিস, স্কুল, রাস্তাঘাট ইত্যাদি কিছুই বাদ যায়নি ইসরাইলি হামলা থেকে। রক্ত লোলুপ দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ইতোমধ্যে স্থলপথে আক্রমণ শুরু করেছে। কার্যত গাজা শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে অবরোধ করে রেখেছে ইসরাইলিরা। শত শত শিশু ও নারী প্রতিদিন হতাহত হচ্ছে। হাসপাতাল ভরে উঠছে আহতদের আহাজারিতে। গাজার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ নেই, নেই ব্যান্ডিজসহ পর্যাপ্ত মেডিক্যাল সরঞ্জাম। গত কয়েক মাস ধরে গাজায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। চাকরি বা জীবিকার জন্যও শহরের বাইরে বের হবার অধিকার নেই ফিলিস্তিনিদের। পশ্চিম তীর থেকে বিচ্ছিন্ন এই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অধিকাংশ মানুষ ইসরাইল রাষ্ট্রের গোড়া পত্তনের পর উচ্ছেদ হয়ে পরিণত হয়েছেন উদ্বাস্তুতে। গাজা শহরের লক্ষাধিক লোক শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। ইসরাইল রাষ্ট্র এদেরই বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তথাকথিত হামাস দমনের নামে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বিশ্বের সবচেয়ে অসম ও সবচেয়ে নৃশংস এই যুদ্ধ। এ হলো দানবের মিসাইলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পাথর হাতে শিশুর যুদ্ধ। ফিলিস্তিনি শিশুরা এই ভয়াবহ পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াইয়ের কী কোনো পরিণতি নেই! দক্ষিণ আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছে কী ফিলিস্তিনিরা। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে ইসরাইল ইতিহাস ভুলে গেছে। নিজেদের উপর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি হলোকাস্টের স্মৃতি তো তাদের ভুলবার কথা নয়। গণহত্যার মাধ্যমে যে কোনও জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা যায় না, আজকের শক্তিশালী ইসরাইল রাষ্ট্রই তো তার প্রমাণ। সুতরাং ইতিহাস বলে ফিলিস্তিনিরা এমন মৃত্যুর প্রত্যাঘাত দেবেই। এ মৃত্যুর প্রতিধ্বনি শোনা যাবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এমন কী পৃথিবীব্যাপী। এখন যেটা প্রথমত প্রয়োজন তা হলো শান্তি, কেবলমাত্র শান্তি। ইসরাইলি ট্যাংক ও মিসাইলবাহী বিমান যে উদ্দেশ্য নিয়ে গাজায় ঢুকেছে সে উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। গাজার শিশুরা, যুবকেরা রাতারাতি ভুলে যাবে না নিজেদের হারানো ভিটে-মাটির কথা। এই যুদ্ধ তাদের ক্রোধের আগুনকে বরং বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবী আর কোনো আত্মঘাতি ফিলিস্তিনি দেখতে চায় না। এত কিছুর পরও ইসরাইল নিবৃত্ত হলে শান্তির পথে হাঁটতে রাজি আছে ফিলিস্তিন। তাদের নতুন রাষ্ট্রকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে যে স্বপ্ন সে স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্যই শান্তি প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভবন গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের স্বপ্নকেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনিদের প্রকারান্তরে চরমপন্থিই করে তুলছে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত কূটনৈতিক অবস্থানের অভাবে আজ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই পক্ষপাতের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে লাদেন ও আল-কায়দার মত সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যা যতদিন জিইয়ে রাখবে ততদিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধও থামবে না। নতুন মার্কিন প্রশাসন যুদ্ধবাজ বুশ প্রশাসনের চেয়ে কতটা ভিন্ন সময়ই সেটা বলে দেবে। ইরাক কিংবা ফিলিস্তিনের দিকে নতুন দৃষ্টিতে তাকাতে না পারলে ওবামার পরিবর্তনের বুলি কথার কথাই থেকে যাবে।

সাবস্ক্রাইব করুন
অবগত করুন
guest

7 মন্তব্যসমূহ
সবচেয়ে পুরোনো
সাম্প্রতিকতম সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
7
0
আপনার ভাবনাগুলোও শেয়ার করুনx
  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.