নরমান মেইলার একজন নেশা-ধরানো, মজার মানুষ। ইস্পাতের ফাঁদের মত মন তাঁর।

ওয়াল্ট হুইটম্যান আমার বন্ধু অ্যাবে রাটনার আর আমি যখন আমাদের আমেরিকাব্যাপী এয়ারকন্ডিশন্ড নাইটমেয়ার যাত্রা শুরু করি তখন আমরা ছিলাম লং আইল্যান্ড-এ, ওয়াল্ট হুইটম্যান যে খামারে জন্মেছিলেন সেটা থেকে খুব একটা দূরে নয়। আমরা ঠিক করি যাত্রা শুরু করার আগে তাঁর জন্মস্থানের পাশ দিয়ে গিয়ে আমাদের শ্রদ্ধা জানাবো। কথামত তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা গাড়ির গতি কমিয়ে মাথার টুপি খুলে নিই, তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে, মৃদু হেসে আমাদের অভিযান শুরু করি। আমার আমেরিকা পুনরাবিষ্কারযাত্রাটি এভাবে শুরু করাটাকেই সবচেয়ে সমীচীন বলে মনে হয়েছিল, এটা শুধু ওয়াল্ট হুইটম্যান হাড়েমজ্জায় একজন খাঁটি আমেরিকান ছিলেন বলেই নয়, গণতন্ত্রের প্রথম ও শেষ প্রতিভূ, একজন জনগণনন্দিত প্রকৃত জনগণের মানুষ, জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন বলেও। আমি হুইটম্যানকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম লেখক বলে মনে করি, এমনকি ইউরোপের যে-কোন শ্রেষ্ঠতমর চেয়েও শ্রেষ্ঠ । লীভ্স্ অভ গ্রাস একটি সত্যিকারের মাস্টারপীস, আত্মার সংগীতবিশেষ। তাঁর কবিতা সং অভ মাইসেল্ফ-এ স্বাধীনতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। এই মানুষটির তাঁর নিজের ও নিজের লেখার ওপর এতটাই বিশ্বাস ও আস্থা ছিল যে তিনি গেরস্থালি সামগ্রীর ফেরিঅলার মত দরজায় দরজায় ঘুরে তাঁর কবিতা ফেরি করতেন। আমি যখন প্রথম লেখা শুরু করি তখন তাঁর সাহসই ছিল আমার আত্মপ্রকাশের প্রেরণার উৎস। তিনি তাঁর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছিলেন যে অনাহার ও জীবনসংগ্রামও গৌরবময় হয়ে উঠতে পারে যদি আপনি এর কাছে পরাজিত না হন। হুইটম্যানকে প্রায়শই সমকামী বলা হয়ে থাকে কিন্তু পুরুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল স্রেফ ভ্রাতৃসুলভ, তা কখনোই যৌনতাময় ছিল না। যৌনতার জগৎ থেকে তা অনেক উর্ধ্বে ছিল। তাঁর ছিল এক অদ্ভূত বিকিরণী ক্ষমতা, ভালোবাসার ও দান করার ক্ষমতা ছিল তাঁর এক কথায় সীমাহীন। তিনি ছিলেন একজন উল্লসিত মহাজাগতিক সত্তা- মানুষের কী হওয়া উচিৎ, কীভাবে চিন্তা করা ও বাঁচা উচিৎ তার সুন্দরতম দৃষ্টান্তবিশেষ। নুট হামসুন/এজরা পাউন্ড দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে নুট হামসুন ও এজরা পাউন্ড দুজনকেই উন্মাদাশ্রমে যেতে হয়েছিল তাঁদের কিছু মন্তব্যের কারণে। তাঁদেরকে হয়তবা জেলেই যেতে হতো, যদি না তাঁরা বৃদ্ধ এবং সম্মানিত লেখক হতেন। নুট হামসুন সবসময় তাঁর বইয়ে নরওয়েবাসীদের নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতেন, ঠিক আমি যেরকম আমার বইয়ে মার্কিনিদের নিয়ে হাসি তামাশা করে থাকি। তিনি…

চিত্রশিল্পীদের বিষয়ে আমার কিছু স্থির পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে।[...]

চিত্রশিল্পীরা চিত্রশিল্পীদের বিষয়ে আমার কিছু স্থির পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার আছে। এ-কথা সত্য সঙ্গীত-রচয়িতাদের ব্যাপারেও। যেসব শিল্পীকে গণ্য করা হয় তালিকার সবচেয়ে ওপরের বলে তাদেরকেই আমার কাছে সবচে কম আকর্ষণীয় মনে হয়, যেমন লেনার্দো দা ভিঞ্চি, মিকেলেঞ্জেলো, রেমব্রান্ট প্রমুখ। অল্প কজনের নাম বলি, আমার ভালো লাগে রেনোয়া, ভ্যান গঘ, মাতিস্, স্যুরা, গগ্যাঁ, হিয়েরোনিমাস বশ্, ব্র্যুগেল, ভ্যান আইক প্রমুখের কাজ। অনেক সময় এদের চাইতেও কম নামী ও অচেনা অজানা সৌখিন শিল্পীদের কাজও আমার বেশি ভালো লাগে। আমি রেনোয়াকে পূজা করি। ছবি আঁকার প্রতি তাঁর ভালোবাসা এত তীব্র ছিল যে তুলির প্রথম টান দেবার আগে তিনি শূন্য ক্যানভাসে চুমু খেতেন। আমি এটাকেই বলি ভালেবাসা! তাঁর আঁকা নারীচিত্রগুলো ছিল অত্যন্ত স্বাদু, যেন মাংসের জয়গান। আমি ভ্যান গঘকেও শ্রদ্ধা করি, যেমনটা করি বিখ্যাত চেলোবাদক পাবলো কাসালকে। তিনি একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন যিনি জানতেন ভালোবাসা কাকে বলে। নারীদের প্রতি তাঁর মনোভাৰ এত শ্রদ্ধাভরা ছিল যে তিনি একটি গরীব মেয়েকে বিয়ে করে বসেন যেন তার যত্নআত্তি করতে পারেন, যতটা না ভালোবাসা তার চেয়েও বেশি তার প্রতি দরদ ও উদ্বগের কারণে। তাঁর কাজে এক ধরনের আলোর উদ্ভাস লক্ষ্য করি আমরা যদিও তাঁর নিজের জীবন ছিল নানাকারণে একটি ট্র্যাজেডি বিশেষ। হিয়েরোনিমাস বশ্ সমস্ত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন সবচেয়ে রাহসিক ধরনের। তাঁর কাজ তীব্র রকম উর্বর ও অত্যাশ্চর্য কল্পনার ফসল। তিনি তাঁর কল্পনা ও স্বপ্নের দানবীয় উপাদানসমূহ দ্বারা আচ্ছন্ন ছিলেন, আবার একইসঙ্গে তাঁর দানব ও দৈত্যরা দেবতার মত পাখা মেলতেও পারতো। তাঁর দৃষ্টি ছিল অদ্ভুত ও সুন্দর। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্র্যুগেল কৃষকজীবনের ছবিগুলোতে তাঁর সময়ের আত্মাটিকে ধরতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁর বাসনাময়তাকে বর্ণনা করেছেন। বাঁচা, কাজ করা, খাওয়া, পান করা, নাচা ও হুল্লোড় এটাই ছিল তাঁর ছবির মূল উপজীব্য। বিষয়ের প্রতি তুমুল উৎসাহ তাঁর পরিশীলন ও কৌশলের খামতিকে পুষিয়ে দেয়। আমার বিবেচনায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রকর্ম হচ্ছে বেলজিয়াম-এর ঘেন্ট শহরে রক্ষিত ভ্যান আইকের অ্যাডোরেশন অভ দ্য ল্যাম্ব। পৃথিবীর চোখে আমি হচ্ছি একজন অধার্মিক মানুষ আর আমি কিনা এই অতিধার্মিক একটি ছবির প্রেমে পড়েছি! এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন চিত্রটির ঠিক কোন বিষয়টা আমাকে এরকম আপ্লুত করে। হয়তবা এ ছবির ক্যানভাস থেকে যে অনুভূতিটুকু বিচ্ছুরিত হয় সেটা অপূর্ব…

আমি যখন পারী-তে থাকতাম তখন একদিন বিনা নোটিশে ব্লাইজ সেন্দ্রা এসে হাজির [...]

ব্লাইজ সেন্দ্রা আমি যখন পারী-তে থাকতাম তখন একদিন বিনা নোটিশে ব্লাইজ সেন্দ্রা এসে হাজির। "মঁসিয় সেন্দ্রা" এই বলে আমি তাঁকে অভ্যর্থনা করি। "না" তিনি মাথা নেড়ে বলেন "আপনার কছে মঁসিয় কক্ষনো নয়, স্রেফ সেন্দ্রা!" আমার জন্য এটা খুব সম্মানের বিষয় ছিল যখন তিনি একটা ফরাসি ম্যাগাজিনে ট্রপিক অফ ক্যান্সার বইখানার প্রথম আলোচনা লেখেন। এর শিরোনামটা আমার এখনো মনে আছে 'আন এক্রিভাঁ নুজ এ নে', 'আমাদের মাঝে এক লেখকের জন্ম হয়েছে।", যা আমাকে পৃথিবীর শিখরে তুলে দেয়। আমরা দুজনই দুজনের সম্পর্কে কিছু না কিছু লিখেছি। ফরাসি পাঠককে তাঁর অস্তিত্ব বিষয়ে সচেতন করার জন্য আমিও অংশত দায়ী। অদ্ভুত ব্যাপার, এই অসাধারণ লেখকের দুর্দান্ত বইগুলো ব্যাপকভাবে পঠিত হয় নি। তাঁর দেশবাসী তাঁকে কঠিন মানুষ বলে গণ্য করতো। আমি তাঁকে দেখিয়েছি একজন সংস্কৃতিবান মানুষ হিসাবে যদিও তিনি সাহিত্যকে ঘৃণা করতেন। তিনি ফরাসি সাহিত্যজগতের প্রতি ন্যূনতম আত্মীয়তা অনুভব করতেন না। তিনি ছিলেন একজন সম্পূর্ণ স্বশিক্ষিত মানুষ যিনি চোদ্দ পনেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির মূল্যবান সামগ্রীসমূহের যতটা সম্ভব চুরি করে- রূপার বাসনকোসন, গয়নাগাঁটি, যা কিছু পকেটে ভরতে পেরেছিলেন। তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছিলেন যে তিনি তাঁর পারিবারিক উত্তরাধিকার ভাণ্ডার লুট করে ভেগেছিলেন। বন্ধকির দোকানে সবকিছু বিক্রি করে তিনি যে টাকা পেয়েছিলেন তা দিয়ে ট্রান্স সাইবেরিয়ান-এর টিকিট কেটে তিনি সাইবেরিয়া থেকে বেজিং চলে গেলেন। বেজিং-এ নেমে তিনি একটা বড় হোটেলের বয়লার রুমে ফার্নেসে কয়লা ঠেলার কাজ নিলেন। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের খাতিরে আর রোমাঞ্চের তাড়নায় তিনি নানারকম লোমহর্ষক কাজ করেছিলেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিনি হাতে গুলির আঘাত লেগে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি নিজেকে আরো একগাদা রোগীর সঙ্গে মেঝেতে শায়িত দেখতে পান ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে। তিনি তখন উপলব্ধি করলেন তিনি নিজেই যদি নিজেকে সাহায্য না করেন তাহলে রক্তক্ষরণেই মারা যাবেন। তিনি কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরবন্ধ থেকে পিস্তলখানি বার করে সোজা অপারেশন রুমে চলে যান। অপারেশনরত ডাক্তারের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি বলেন "ঠিক আছে, এর পরেই আমি, তা না হলে আপনি জানে বাঁচবেন না।" তিনি জানতেন তাঁকে প্রাণে বাঁচতে হলে এরকম সাংঘাতিক কিছু একটাই করতে হবে, যদিও ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল কেন না তাঁর…

আমি ঠিক মনে করতে পারি না আমরা যে পাখির বাজারটাতে গিয়েছিলাম সেটা কোন্ শহরে ছিল: ব্রাসেলস্, ঘেন্ট নাকি ব্রুজেস-এ [...]

বেলজিয়াম-এর অন্ধ পাখিরা আমি ঠিক মনে করতে পারি না আমরা যে পাখির বাজারটাতে গিয়েছিলাম সেটা কোন্ শহরে ছিল: ব্রাসেলস্, ঘেন্ট নাকি ব্রুজেস-এ। আমার আবছা মনে আছে এটা একটা গীর্জাঘেরা বড় চত্বরের মধ্যে ছিল এবং আমরা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছি ঠিক তখনই সেখানকার রাস্তা দিয়ে কোন এক ধর্মীয় নিদর্শনের শোভাযাত্রা হচ্ছিল। অন্তত এটুকু মনে আছে যে আমরা যখন সেগুলো দেখছিলাম আর প্রশংসা করছিলাম তখন কে একজন যেন আমাদের এই তথ্যটি দিয়েছিল যে অন্ধ পাখিরা ভালো গান করে। লোকটি আরো বলে যে সাধারণ রীতি হচ্ছে এদের চোখের তারায় একটা সুঁই ফুটিয়ে দেওয়া। ভালো গান গায় বলতে সেই ব্যক্তি বোঝাতে চেয়েছিলেন অধিকতর করুণ রসের সঙ্গে গাওয়া। এই মন্তব্য শুনে আমার ও আমার স্ত্রী ইভ এর শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে গেল। বেলজিয়াম ভ্রমণের সময় আমরা যত আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখেছি তার সবই মুছে গেল এইসব অন্ধ পাখিদের স্মৃতিতে যারা তখন দেবদূতের মত গান গাইতে পারতো। অনেক রাতে ব্রাসেলস্ এ ফেরার পথে আমাদের গৃহকর্তা, যিনি লিমুজিন চালানোর দায়িত্বে ছিলেন, হঠাৎ করে ইভ-এর দিকে তাকিয়ে বললেন যে তিনি তাঁর গুনগুন করা শুনছিলেন এবং তাঁর কন্ঠের যাদুতে মুগ্ধ। তিনি আরো বলেন "আপনি কি আমাদের একটা গান শোনাবেন না?" এটা শুনে ইভ আর কথা না বাড়িয়ে তার গলা খোলে এবং আমাদের খুব প্রিয় একটা গান 'অলওয়েজ' গাইতে শুরু করে। কিন্তু এবার আমার মনে হলো তার কন্ঠে একটা নতুন সুর লতিয়ে উঠছে। এটা সেই অন্ধ পাখিদের বিধুরতা। গাড়িতে আমরা মোট ছয়জন ছিলাম কিন্তু আমাদের কেউই তার সঙ্গে গলা মেলায় না। এক ধরনের চাপা নীরবতা বিরাজ করছিল গাড়িতে যেন বা জীবনে প্রথমবারের মত কোন অস্বাভাবিক কিছু একটা শুনছিলো সবাই। গান শেষ করার পর আমাদের গৃহকর্তা তাকে বলে সে এটা আরেকবার গাইবে কি না, ইভ তা আরেকবার গেয়ে শোনায়। আরো একবার সে স্রেফ তার গলা খুলে গানটাকে গড়িয়ে বেরিয়ে যেতে দেয়। সেটাও আমাদের আরেক প্রিয় গান "রোজেস অফ পিকার্ডি"। আবার সেই একই ঐন্দ্রজালিক প্রতিক্রিয়া হয়। সকলেই গভীরভাবে আলোড়িত বোধ করে। বর্হিপৃথিবী আমি বিশ্বাস করি অন্যান্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। মহাবিশ্ব তার প্রতিটি অংশেই খুব জীবন্ত। শুধুমাত্র আমরা এখনো অপর পৃথিবীর সঙ্গে…

বন্ধুদের প্রতি আমার মনোভাবের যে দিকটার ওপর আমার জোর দেয়া উচিৎ সেটা হচ্ছে দ্বৈততা [...]

[হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ১, হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ২, হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ৩, হেনরি মিলারের ‘ভাবনাগুচ্ছ’ : ৪] বন্ধুত্ব বন্ধুদের প্রতি আমার মনোভাবের যে দিকটার ওপর আমার জোর দেয়া উচিৎ সেটা হচ্ছে দ্বৈততা। ভালো বন্ধু হবার জন্য আমার প্রশংসা জুটলেও, ক্ষেত্রবিশেষে আমি প্রচণ্ড অবিশ্বস্তও হতে পারি। আমি তাদের পেছনে কথা বলি, তাদের সমালোচনা করি এবং তাদের দোষ ও দুর্বলতা নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করি। বস্তুত যে জিনিসটা আমি সবার আগে খেয়াল করি সেটা তাদের খুঁতসমূহ। অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে, তাদের খুঁতগুলিই আমাকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে। আমি দুর্বিনীত ও বদমাশ স্বভাবের লোকদের বেশি পছন্দ করি কেননা আমার স্বভাবচরিত্রও যে তাদেরই মত! আমি সেই মানুষগুলোকে সহ্য করতে পারি না যারা আমার ব্যাপারে বেশি উদ্বিগ্ন, যারা সরাক্ষণই আমার শরীর-স্বাস্থ্যের খবর নিতে থাকে। অথবা যারা আমাকে এজাতীয় প্রশ্নে বিরক্ত করে যে, "হেনরি তুমি আমার সঙ্গে দেখা করো না আজকাল, তুমি কি আমাকে আর পছন্দ করো না, আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি কোনভাবে ?" আমাকে তাদের কাছ থেকে চিরতরে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। একজন প্রকৃত বন্ধুর এজাতীয় প্রশ্ন করার দরকার পড়ে না। তোমার প্রয়োজনের মুহূর্তে সে ঠিকই তোমার পাশে থাকে আবার একইসঙ্গে নিজেকে কীভাবে সম্মানজনক দূরত্বে রাখতে হয় তা-ও তার অজানা নয়। একজন খাঁটি বন্ধু ঠিক সেই মুহূর্তটি থেকে শুরু করতে পারে যখন তোমার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল, তা সেটা এক সপ্তাহ, এক মাস কী কুড়ি বছরই হোক না কেন! আমার এমন একজন বন্ধুও ছিল না আমি যার কাছ থেকে ভিক্ষা কিংবা ধার নিই নি, আমি এমনকি চুরিও করেছি তাদের কাছ থেকে। একবার আমি আমার ভালো বন্ধু আলফ্রেড পের্লে সম্পর্কে একটা প্যাম্ফলেট লিখি যার নাম দিই 'আলফ্রেড সম্পর্কে তুমি কী করতে যাচ্ছো?' আমি তাকে ইবজা পাঠানোর জন্য তহবিল সংগ্রহ করছিলাম, যেখানে গিয়ে তার ধারণা সে সস্তায় জীবনযাপন করতে পারবে এবং যে বইটা লিখছিল সেটা সহজে শেষ করতে পারবে। এই প্যাম্ফলেটখানি অসংখ্য লেখক ও শিল্পীর কাছে পাঠানো হয়েছিল যাদের অনেককেই আমরা চোখেও দেখি নি কোন দিন। যাঁরা টাকাসহযোগে আমাদের চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন আঁদ্রে জিদ ও আল্ডাস হাক্সলি, আপনারা…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.