যতদিন ছুটুমা-সোনাপিসে খালিশপুরের বাড়িতে ছিলেন, ১৪ ডিসেম্বর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে হাদিস পার্কে সারা রাত অনুষ্ঠান হত। এক রাত আমি ওই বাড়িতে ছিলাম, অনুষ্ঠান শেষে। এই রাত্রিদিন গুলি আমার জন্য রক্তের আখরে আঁকা। ছুটুমা বলতেন, ‘ওরা আসবে,’ — ‘ওরা দেখতে পাচ্ছে। তোর মনে হয় না?’ [. . .]

১ আমার পিসিদের তিনজনকে আমি ছোটবেলা থেকে আমি মা বলতে শিখেছি — রাঙামা, ফুলমা, ছুটুমা। সম্ভবত, তাঁদের জৈবিক অর্থে কোনো সন্তান ছিল না বলে, অন্য পিসিরা এবং আমার মাবাবা এই শিক্ষাটা দিয়েছিলেন। মার মতোই আমার পিসিরা, সবাই। মমতায় কাছে টেনেছিলেন তাই নয়, মানুষও করেছিলেন। যে যেভাবে পেরেছেন। প্রত্যেকের হাতেই দেয়ার মতো অজস্র সম্পদ ছিল যে! শেষের জন, মুক্তি মজুমদারের সান্নিধ্যে এসেছি অনেক ছোটবেলা থেকেই, তবে প্রবাস থেকে ফেরার পর সাড়ে দশ বছরের আমি থেকে পরিণত বয়েসি আমি পর্যন্ত আমার প্রত্যেক দিনই ইনি আমার চেতনার অংশীদার হয়ে রয়েছেন। ভালোবাসায়। ২ আসলে ছুটুমাই বোধ হয় আমাকে রবীন্দ্রনাথ, শান্তিনিকেতন চিনিয়েছেন, আর চিনিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের গান, নতুন করে, নতুন আঙ্গিকে। আমার যৌবনকে করেছেন টালমাটাল, অপূর্ব। শান্তিনিকেতনের পরিবেশের আভা তাঁর জীবনে, তাঁর ব্যক্তিত্বে; এটা তাঁর খোলস নয়, তাঁর ধাতু। আবার বাংলাদেশের সচেতন, সাহসী, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশের পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর সুবাস। আমি ওই সুবাসে আসক্ত হয়েছিলাম ছোটবেলায়, তাই ছুটুমার বাড়ি যেতে চাইতাম সুযোগ পেলেই। গেলেই বাবার আনা লংপ্লেতে ভারতীয় রাগসঙ্গীত, অথবা চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, অথবা নানা রঙের স্বাদের পুরনো রেকর্ড আমাকে শুনতে দিতেন। আমি সেই সব গান মন্ত্রের মতো বসে বসে শুনেছি, জয়নুল আবেদিন অথবা নন্দলাল বসুর স্কেচের বই হাতড়েছি। অদূরে ধানক্ষেত তখন সবুজ আভায় টুসটুস করছে। ‘আমার যায় বেলা বয়ে যায় বেলা কেমন বিনা কারণে’, শুনতে শুনতে সময় থমকে থেকেছে। সেসব দিনে ছুটুমার গলায় শুনেছি মায়াবী ব্যঞ্জনার গান, নিভৃতে, সেই গ্রামীণ বাংলাদেশের নির্জন, নিরালা সুস্বাদু পরিবেশে, ‘কী সুর বাজে আমার প্রাণে, আমিই জানি, মনই জানে’। উনি জেনেছেন, আমিও বোধ হয় জেনেছি তখন, সেই ছোটবেলাতেই। কেউ বাধা দেয়নি। বরং ছুটুমার কাছে গান শিখতে আসা প্রাণের মেলায় মিলতে আসা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের ভিড়ে আমিও মিশে গিয়েছি, শিখেছি এমন সব গান যা আমি আগে শুনিনি, ‘মোরা সত্যের 'পরে মন আজি করিব সমর্পণ’ অথবা ‘জাগো নির্মল নেত্রে রাত্রির পরপারে, জাগো অন্তরক্ষেত্রে মুক্তির অধিকারে’ — প্রবাসে চার বছর কাটিয়ে আসার পর গান, বাংলা ভাষা আর সুমধুর পরিবেশের এই বন্যা, আমার কৈশোরকে, যৌবনকে কোনো বিশাল স্বপ্নকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর একটা কারণ বোধ হয় আমার জীবনের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে, অর্থাৎ আমার প্রাক-বয়ঃসন্ধির সময় থেকে শুরু…

[...] ব্যথার সীমা দিয়ে এইভাবে দেশও চেনা যায়, বাংলা নামের দেশ, বাংলাদেশ। এই এত্তটুকুন নাম, অর্ধশতকও হয়নি তার স্বাধীনতালাভের, এত্তটুকুন দেশ (ফুলবাতাসা-পালের নাও-তেঁতুলতলা-শাপলাপুকুরের দেশ), কিন্তু হাজার মাইল দূরের কত ছেলেমেয়েদের মনে চুপচাপ বসে থাকে এই দেশ। আওয়াজ করে না, নড়াচড়াও না, শুধু মাঝে মাঝে ভিতরে মুচড়ে দেয় ব্যথার সীমানা, আমরা বুঝতে পারি ঐ যে আমার দেশ, ঐ যে আমার দেশের ইতিহাস, ভয়াল গণহত্যার আর গণধর্ষণের এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়ানোর। [...]

আমার ছোট্ট ছেলে জন্মাবার পর জীবনের একপর্যায় থেকে নিজের শরীরের নানান অংশ নিজেই টেনে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিত, এমন করে সে চিনেছিল নিজের শরীরের সীমা। কোথায় লাগলে নিজের শরীরে বাজে এমন করে। এইভাবে মানবশিশু হাতড়ে হাতড়ে ব্যথার সীমানা দিয়ে নিজের আকার আবিষ্কার করে সেটা দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমি। ব্যথার সীমা দিয়ে এইভাবে দেশও চেনা যায়, বাংলা নামের দেশ, বাংলাদেশ। এই এত্তটুকুন নাম, অর্ধশতকও হয়নি তার স্বাধীনতালাভের, এত্তটুকুন দেশ (ফুলবাতাসা-পালের নাও-তেঁতুলতলা-শাপলাপুকুরের দেশ), কিন্তু হাজার মাইল দূরের কত ছেলেমেয়েদের মনে চুপচাপ বসে থাকে এই দেশ। আওয়াজ করে না, নড়াচড়াও না, শুধু মাঝে মাঝে ভিতরে মুচড়ে দেয় ব্যথার সীমানা, আমরা বুঝতে পারি ঐ যে আমার দেশ, ঐ যে আমার দেশের ইতিহাস, ভয়াল গণহত্যার আর গণধর্ষণের এবং তারপর আবার উঠে দাঁড়ানোর। কমলা কালেকটিভের ‘বীরাঙ্গনা’ দেখতে গিয়েছিলাম, মরিয়মের গল্প, পরে খুশি-মায়া-মেহেরের গল্প, আরো পরে কালো পর্দা জুড়ে এক এক করে ফুটে ওঠা টকটকে লাল হরফে বীরাঙ্গনাদের নাম, বাহাতুন-জয়গুন-শামসুন্নাহার-রাজুবালা-গুরুদাসীদের নাম... সেই নামগুলোই বিধুর গল্প। আহা, পানির নিচে জোঁকের—জলজ ফুলের মৃণালের—মাছের ভাই ভাই হয়ে নাক ভাসিয়ে থাকা গর্ভিণী নারীর গল্প। শুকনো পুকুরে লুকাবার চেষ্টা করা নারীর গল্প। মায়ের গায়ে আগরবাতির মিষ্টি গন্ধ শোঁকা মেয়েশিশুর গল্প। তেঁতুলগাছে উঠে দুরন্তপনা করতে গিয়ে প্রেম আবিষ্কার করা কিশোরীর গল্প, মাথায় চালের বস্তা আর কাঁখে শিশুসন্তান নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করা নারীর গল্প। লোককাহিনীর রাজকন্যা কমলার শুষ্ক সরোবরে জল আনতে গিয়ে আত্মাহুতি দেবার গল্প। শো’র উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বনামধন্য বৃটিশ-বাংলাদেশী নৃত্যশিল্পী আকরাম খান স্মরণ করেন মার্টিন লুথার কিং-এর অমোঘ বাণী — “দেয়ার কামস আ টাইম হোয়েন সাইলেন্স ইজ বিট্রেয়াল”, এর চেয়ে সংক্ষেপে বাঙালি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতাকে বোধহয় তুলে ধরা যায় না। বীরাঙ্গনারা ফিরে এসেছিলেন পাকবাহিনী ও তার দোসরদের পরিখা থেকে — ক্যাম্প থেকে, যেমন করে ফিরে এসেছিলেন যুদ্ধজয়ী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। বীরাঙ্গনাদের কাউকে কাউকে তাঁদের পরিবার ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেছিলেন — তাঁরা চলে গেছেন অজানার পথে—অচেনা গ্রামে—পতিতালয়ে, আর কাউকে কাউকে তাঁদের পরিবার গ্রহণ করেছিলেন একটিমাত্র শর্তে, সে শর্তের নাম নৈঃশব্দ্য। জন্মান্ধ যেমন আমৃত্যু অন্ধকার এক পৃথিবীতে সাঁতরে ফেরে, বীরাঙ্গনাদের অনেকে তেমনি এক অন্ধকার নৈঃশব্দ্যে সাঁতরে ফিরেছেন, তাঁদের মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁদের…

বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার এই বিধ্বস্ত পটভূমিতে এ বারের বিশ্বনাট্য দিবসের বাণী দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান নাট্যকার আগস্তো বোয়াল। লাতিন আমেরিকার কঠিন আবহে বয়সে, ভাবনাবৈচিত্রে ও আপসহীন প্রতিবাদে বিশিষ্ট হয়ে ওঠা ৭৮ বছরের এই তেজি নাট্যকার সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ান তার ‘নিপীড়িতের থিয়েটার’ বা ‘থিয়েটার অফ দ্য অপ্রেসড’-এর তাত্ত্বিক ভাবনা আর নিত্যনবীন পরীক্ষামূলক নাট্য পদ্ধতির শিক্ষণ নিয়ে। ১৯৬১ সালে ‘দক্ষিণ আমেরিকার বিপ্লব’ নাটকটির সূত্রে রাজনৈতিক প্রতিবাদে থিয়েটারে নতুন এক পদ্ধতির দরজা খুলেছেন বোয়াল। মঞ্চ থেকে মঞ্চের বাইরে থিয়েটারকে নিয়ে এসে অনির্দিষ্ট দর্শককে অনির্দিষ্ট অভিনয়স্থলে অনির্দিষ্ট নাটকীয় দ্বন্দ্ব ও প্রশ্নের সামনে নিয়ে আসে বোয়ালের নাট্যপদ্ধতি। মার্কসবাদে বিশ্বাসী এ বারের বিশ্বনাট্য দিবসের বাণীতে বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দা আর তার পেছনে ধনতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদের জনবিরোধী ভূমিকাকে চিহ্নিত করে দৃপ্তকণ্ঠে ডাক দিয়েছেন নাট্যকর্মীদের সমাজটাকে বদলে দেয়ার কাজে থিয়েটারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে। বিশ্বনাট্য দিবসের বাণী ২০০৯ দৈনন্দিন জীবনে যা আমাদের এত চেনাজানা তাকেই থিয়েটারে অচেনা-অদেখা মনে হয়। থিয়েটার মানে আমাদের যাপিত জীবনের উপর সঞ্চায়িত আলোকসম্পাত। গত সেপ্টেম্বরেই আমরা একটা গোপন সত্য প্রকাশের নাটকীয়তায় চমকে গিয়েছিলাম। আমরা এতকাল ভেবে আসছি চারিদিকের এত যুদ্ধ সঙ্ঘাত, গণহত্যা, খুন আর অত্যাচার সত্ত্বেও নিজেরা বেশ এক নিরাপদ দুনিয়াতেই বাস করছি, কারণ ওসব ঘটনা ঘটে আমাদের সুখী গৃহকোণের অনেক দূরে আরণ্যক সমাজে। আমরা এতকাল নামী ব্যাঙ্কে টাকা জমিয়েছি, শেয়ার বাজারে টাকা খাটিয়েছি, বিশ্বস্ত এবং সৎ সঞ্চয় কর্মীদের হাতে টাকা জমা দিয়েছি,—সেই আমাদের হঠাৎ বলা হল, তোমাদের এত সাধে ও কষ্টে জমানো অর্থের আর কোনো অস্তিত্ব নেই এবং হঠাৎই অর্থনীতিবিদরা এই ভয়ঙ্কর উদ্ভট সত্যকে আবিষ্কার করলেন। বোঝা গেল, এর পেছনে যারা, তারা আর বিশ্বাসযোগ্য নয়, সম্মানীয়ও নয়, এটা খুবই খারাপ থিয়েটারের মতো ছিল গোটা ব্যাপারটা। এটা ছিল একটা নোংরা নাট্যকাহিনী যে কাহিনীতে কিছু লোকের ভাগ্য চকমক করে হাসিতে। কিন্তু অধিকাংশ লোকের ভাগ্যেই নেমে আসে অন্ধকার। গেল গেল রব তুলে ধনী দেশগুলোর কিছু রাজনীতিবিদ সভা করলেন, শলা করলেন এবং কিছু জাদুকরী টোটকার সন্ধানও পেলেন। আমরা যারা ওদের কাজ আর সিদ্ধান্তের হতভাগ্য শিকার তাদের ব্যালকনির শেষ পংক্তিতে বসে নীরব দর্শক হয়ে সব দেখতে হল। বিশ বছর আগে আমি রাসিনের(Racine) ফেদ্রে (Phedre) মঞ্চস্থ করেছিলাম রিও-ডি-জেনিরোতে। মঞ্চ ছিল দরিদ্র।…

টিভি তেমন দেখা হয় না। আন্দোলন, নির্বাচন, ঘটনা-দুর্ঘটনার গরম থাকলে টিভির সামনে বসি, নয়তো বসা হয় না। একই রকম খবর, একই রকম চিত্র, একই রকম সাক্ষাৎকার ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মুখ দিয়ে নির্গত হয় নানান নামে প্রতিটি চ্যানেলে। সবগুলো চ্যানেলকে জীবন্ত কপি-পেষ্ট মনে হয়, কপি-পেষ্টে আমার চির অরুচি। তবে হালকা বিনোদনের জন্য মাঝে মধ্যে দুটি সিরিজ দেখতাম একসময়। এনটিভির ‘হাউসফুল’ আর চ্যানেল আইয়ের ‘দৈনিক তোলপাড়’। এখন বিরক্ত হয়ে এগুলোও দেখি না। বিরক্ত হবার কারন নির্বিচার বিজ্ঞাপন অত্যাচার। আমি কোন সিরিয়াস দর্শক না। খুব সামান্য সুড়সুড়ি দিয়েই আমাকে আনন্দিত করা যায়। তোলপাড় বা হাউসফুলে যা দেখানো হয় তাতে সিরিয়াস কিছু থাকেও না। আমার দরকারও নাই। আমি সামান্যতেই তৃপ্ত ছিলাম। কিন্তু দিনের পর দিন বিজ্ঞাপনের বাড়ন্ত উৎপাতে আমার নাটক দেখার রুচিই চলে গেছে। প্রথম প্রথম সহ্য করেছি, তারপর পালাতে হয়েছে টিভির সামনে থেকে। এক সময় বিটিভি ছাড়া আর কোন চ্যানেল ছিল না বাংলাদেশে। একটা নাটক শুরু হবার আগে বিটিভি আমাদের কমপক্ষে পনেরো মিনিট বিজ্ঞাপন গিলিয়ে তারপর এক ঘন্টার নাটক দেখাতো। আটটার খবর শেষ হতো সাড়ে আটটায়। তারপর পনের মিনিটে বিজ্ঞাপন। পৌনে নটায় নাটক শুরু হতো - পৌনে দশটায় শেষ হতো। মাঝখানে একবার দুবার বিজ্ঞাপন থাকতো যদি স্পনসরড নাটক হতো। সেই বিজ্ঞাপনের দৈর্ঘ্য দুই মিনিটের মতো। তাতেই আমরা কত বিরক্ত ছিলাম। একুশে টিভি চালু হবার পর বিজ্ঞাপনের একটু মার্জিত ধারা দেখতে পেয়েছিলাম। একুশে যখন জোট সরকারের হাতে খুন হলো, তারপর বাংলাদেশে চ্যানেলের বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু আর কেউ একুশকে ছুতে পারেনি। এখন আবার একুশে ফিরে এসেছে, খোলসটাই আছে কেবল, সেই একুশে আর নেই। আজকাল অনেক চ্যানেল। অনেক বিজ্ঞাপন। অনেক নাটক। নাটকের বন্যা। নাট্যশিল্পীরা এখন পেশাজীবী। ভালো, খুব ভালো। কিন্তু সেই নাটকগুলো আমাদের কিভাবে গেলানো হয়। একটা নাটক কিভাবে গেলাতে হবে তার কোন নীতিমালা কি সরকারের আছে? নামী নাট্যকার নামী পরিচালক হলে ঠাসা ঠাসা বিজ্ঞাপন, কমদামী নাট্যকার হলে কম কম বিজ্ঞাপন। এরকম একটা অলিখিত নিজস্ব নিয়ম বোধহয় আছে চ্যানেলগুলোর। বিজ্ঞাপন ছাড়া ফ্রী কোন অনুষ্ঠান কী আছে? এমনকি সংবাদও তো বিজ্ঞাপন ছাড়া হয় না। তাও একজন নয়। কয়েকজন মিলে একটা সংবাদকে ভাগ করে নেয়। কোরবানীর ভাগা…

হ্যারল্ড পিন্টার (১০ অক্টোবর ১৯৩০ - ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮) ইহুদি বংশোদ্ভূত দর্জি পিতার সন্তান হ্যারল্ড পিন্টার ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রাম করে আটাত্তর বছর বয়সে মারা গেলেন। আটাত্তর বছর কম বয়স নয়। তবে তাঁর সমসাময়িক ও বয়োজ্যেষ্ঠ অন্যান্য লেখকদের অনেকেই এখনও লেখালেখিতে সক্রিয়। একসময় পিন্টার বলেছিলেন, 'আমি ২৯টি নাটক লিখেছি এবং মনে করি তা আসলেই যথেষ্ট।' সব মিলিয়ে তাঁর নাটকের সংখ্যা ৩২। [...]

ইহুদি বংশোদ্ভূত দর্জি পিতার সন্তান হ্যারল্ড পিন্টার ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রাম করে আটাত্তর বছর বয়সে মারা গেলেন। আটাত্তর বছর কম বয়স নয়। তবে তাঁর সমসাময়িক ও বয়োজ্যেষ্ঠ অন্যান্য লেখকদের অনেকেই এখনও লেখালেখিতে সক্রিয়। একসময় পিন্টার বলেছিলেন, 'আমি ২৯টি নাটক লিখেছি এবং মনে করি তা আসলেই যথেষ্ট।' সব মিলিয়ে তাঁর নাটকের সংখ্যা ৩২। উপন্যাস রয়েছে ১টি, ১৯৯০-এ প্রকাশিত দ্য ডোয়ার্ফ্‌স্ এবং চিত্রনাট্য -- ২২টি। যথেষ্টই বটে। কিন্তু তাঁর লেখকসত্তা ছাপিয়ে প্রগতিশীল, মানবদরদী সত্তাটির অস্তিত্ব আরো কিছুদিন থাকলে বিশ্বের মঙ্গল হতো। ২০০৫ সালে নোবেল কমিটি তাঁর পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণার সময় বলেছিল যে, পিন্টার থিয়েটারের মৌলিক উপাদানগুলো ফিরিয়ে এনেছেন। অসুস্থতার কারণে পিন্টার তাঁর নোবেল বক্তৃতা রেকর্ড করে পাঠিয়েছিলেন, যাতে বুশ ও ব্লেয়ারের ইরাক আক্রমণকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করতে ছাড়েননি। তিনি বলেছিলেন, 'ইরাক আক্রমণ এক ন্যাক্কারজনক বর্বরতা, এক জঘন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, যাতে আন্তর্জাতিক আইনের ধারণার বিরুদ্ধে এক চরম ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে।' 'গণহত্যাকারী আর যুদ্ধাপরাধীর বিশেষণ পাওয়ার জন্য আর কত লোককে হত্যা করবে তোমরা? ১ লাখ?' কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এই ছিল তাঁর প্রশ্ন। বুশকে উদ্ধত যুদ্ধবাজ বলার পাশাপাশি স্বদেশী ব্লেয়ারকে বুশের অনুগত এক ভেড়া বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি। ওই নোবেল বক্তৃতায় তিনি আমেরিকাকে পৃথিবীর সকল ডানপন্থী সামরিক একনায়কের সমর্থক অভিধা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধগুলো প্রথাবদ্ধ, বিরামহীন, ভ্রষ্টাচারপূর্ণ ও নির্দয়, তবে খুব কম লোকই এ বিষয়ে কথা বলে।' যে-ক'জন হাতে-গোনা লোক বলে, তাদের মধ্যে একজনকে আমরা হারালাম। নাট্যকার বা লেখক হিসেবে তাঁর মূল্যায়ন অনেক হয়েছে, আরো হবে। তাঁর মৌলিকত্ব হচ্ছে নাটকে 'নীরবতা'র নাটকীয় ব্যবহার। নীরবতা যে কত বাঙ্ময় হতে পারে তা পিন্টারের নাটকগুলো পড়লে বোঝা যায়। দ্য বার্থডে পার্টি, দ্য কেয়ারটেকার কিংবা কিছুটা অ্যাবসার্ডধর্মী নো ম্যান্'স্ ল্যান্ড-এর (অ্যাবসার্ডধর্মিতা তাঁর অনেক নাটকেই লক্ষণীয়) চরিত্রগুলো যেমন এক একজন একক ব্যক্তি, তেমনি তাদের কেউ কেউ বিশ্বজনীন ব্যক্তিরও প্রতীক। যেমন, দ্য কেয়ারটেকার-এর ডেভিস। ডেভিস বিশ্বের সকল আশ্রয়-অন্বেষী লোকের প্রতিভূ। নাট্যকার ডেভিড হেয়ার (যাঁর নাটক রাজনীতিপ্রধান) পিন্টারের মূল্যায়ন করেছেন এইভাবে : 'পিন্টার যে তাঁর সময়ের কিছু অসাধারণ নাটক লিখেছেন কেবল তা নয়, প্রচলিত ইংরেজি সাহিত্যের বদ্ধ চিলেকোঠায় কিছু তাজা বাতাসও ঢুকিয়েছেন তিনি। কেননা তিনি যা করেন তাতে রয়েছে গণসম্পৃক্ততা ও…

  • Sign up
Password Strength Very Weak
Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
We do not share your personal details with anyone.